পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

এখানে বাতাসে বিষ নেই। শহর থেকে দূরে। চিমনির কালো ধোঁয়া,গাড়ির আওয়াজ কিচ্ছুটি নেই। রান্নাঘরের তাড়াও নেই। মনে পড়ল,আজ ধ্যানের ক্লাস আছে। নিয়ম মেনে। ঘন্টা খানেক। সবই নিয়মের। মেনে চলেন। মানিয়ে চলেন। জীবন। নতুন বাড়ি। নতুন পরিবার!

Read more


জোব বলল, " এককালে ছিল। সরকার‌ই সে সব অক্ষর পরিচয় ও অংকের ব‌ই ছেপেছিল। পরে সে সব ব‌ই ফুরিয়ে যাবার পর আর ছাপেনি। মহাকরণে পাঁচ-সাত বছর ধরে যাতায়াতের পরে‌ও কোনো সুবিধে করতে পারেনি। তারপর ব‌ইয়ের আশা ছেড়ে দিয়ে শ্রুতি আর স্মৃতির উপর বত্রিশটি রাত-পাঠশাল চলছে।"

Read more


বারোতলার উত্তর-পূর্ব কোনের ফ্ল্যাট অপরেশবাবুর। সূর্যাস্ত এখান থেকে দেখা যায় না। শুধু শেষ বিকেলের আলো কিভাবে আস্তে আস্তে কমে আসে চারপাশে - সেটাই অনুভব করা যায়। আলো কমে এলেই দেখতে পাওয়া যায়, আলো জ্বলে উঠেছে এই স‍্যাটেলাইট সিটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ - ঐ ফ্লাইওভারের মাথায় মাথায়। ঐ রাস্তা ধরে ঠিক সতেরো মিনিট এগোলেই - ব‍্যস্ত শহর, মাল্টিপ্লেক্স, শপিং মল আর হৈ-হুল্লোড়।

Read more


বাদামি রঙের কচুরিপানার শুকটি পাতাটা আধমরা ঢেউয়ের চাঁদি ধরে কখনও কোমর কখনও বুক কখনও মাথার টাক টিকি ডুবে জল খেয়ে খাবি খেয়ে যখন বটগাছটার ঝুলে থাকা নেঙ্গুট ঝুরিতে এসে মড়ার ছেঁড়া কাপড়ের মতো ঠেকল তখন কোল খালি করল শারাফন। কোল বলতে গেলে বাঁ কাঁখে জলের ঘড়া আর ডান কাঁখে আঁচল গুঁজে ঠেসে ধরা ভাত তরকারি বাঁধা গামলার একটা পুঁটুলি।

Read more


দক্ষিণ মৈশুন্দি, ভূতের গলির লোকেরা পুনরায় এক জটিলতার ভিতর পড়ে এবং জোড়পুল ও পদ্মনিধি লেনের, ওয়ারি ও বনগ্রামের, নারিন্দা ও দয়াগঞ্জের লোকেরা তাদের এই সঙ্কটের কথা শুনতে পায়; তারা, ভূতের গলির লোকেরা বলে:

Read more


দিবাকরের পিতামহ রাইচরণ শিউলির দাপুটে জমিদারের কাচারীতে ফাই ফরমাস খাটার কাজ করতেন। সেই সময় শিউলির জমিদার বাবুরা এতটাই দাপুটে ছিলেন, ঠিক যেন বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ানোর মতো ভয়ঙ্কর।

Read more


আমার নাম সোনু। আমি কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুতে থাকি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেছি। আপাতত ছুটি শেষ। আগামীকাল আবার আমি আমার কর্মস্থলে চলে যাব। এই খবর পেয়ে আমার দুই বাল্য বন্ধু এসে হাজির। একজনের বাড়ি পার্শ্ববর্তী বলরামপুরে। আর একজনের নলডহরী গ্রামে। তারা এসে বলল, কখন এলি সেটাই তো জানলাম না! কাল চলে যাবি মানে! তার আগে কি পার্টিশাটি হবে না?

Read more


বাসন্তী, যাওয়ার সময় পিঙ্কির ঐ খেলনা ঘোড়াটা নিয়ে যেও। বাইরে ফেলে দিও। বাসন্তী একথায় অবাক হয়ে বলে ওঠে, ওমা, এটা তো নতুন আছে গো বউদিমনি। আরে ঘর জোড়া হয়ে পরে আছে। এক একটা জন্মদিনে কম তো পায় না। রাখব কোথায় এত? ওটা অনেকদিনের তুমি বাইরে ফেলে দাও।

Read more


- না স্যার! এটা আমার উইকিলি নিউজ পেপার। - অত টেকনিকাল পয়েন্ট ধরেন কেন? বেশ! উইকলি বুলেটিনই বলুন না হয়! - সে কি কথা? রেজিস্ট্রেশন আছে বই কি! না হলে করপােরেশনের অ্যাড ছাপছি কিসের জোরে? - না, ডেলি নয়। ছেচল্লিশ দিন বাদে করপােরেশনের ইলেকশন। আমাদের শহরে এখন খবরের হেভি ডিমান্ড! তাই আমার কাগজও ডেলি বেরােচ্ছে। পাবলিক নিউজ খেতে চাইছে সকাল বিকালে চায়ের সঙ্গে, আমিও সাপ্লাই দিচ্ছি! কিছু কামিয়ে নিই এই মওকায়! হাঃ হাঃ হাঃ!

Read more


সর্বনাশ! সকাল সাড়ে আটটা। বিছানা ছেড়ে ধুড়মুড় করে উঠে পড়ল চিকু। অন্যদিন সাড়ে সাতটায় মা জোর করে তুলে দেয়। স্কুলের পুলকার নিয়ে লালাকাকু সোয়া আটটায় চলে আসে। টুথব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে মুখে ঠুসে দিয়ে মা বলে, যাও তাড়াতাড়ি টয়লেট সেরে দুধ খেয়ে নাও। মা ঢুকে যায় কিচেনে। টিফিন বানায়। টিফিন বানানো হয়ে গেলে চিকুর স্কুলের ব্যাগ গোছাতে শুরু করে দেয়। ব্যাগের ভিতর বই, রুমাল, জলের বোতল, পেনসিল বক্স, পেনসিল বক্সে পেন, পেনসিল, ইরেজার ঠিক আছে কি না, সেই সঙ্গে পেনসিলের অগ্রভাগ সঠিক ভাবে শার্প কিনা তন্ন তন্ন করে সবকিছু মা পরখ করে নেয়।

Read more


নিকুঞ্জ স্যার আত্মহত্যা করেছেন। এই খবরটা এলাকার প্রায় কেউই বিশ্বাস করতে পারছিল না। নিকুঞ্জ স্যারের মত প্রাণোচ্ছল একটা মানুষ কিভাবে এই কাজটা করতে পারেন। ছাত্রছাত্রী, পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাইকে যে মানুষটা সবসময় লড়াই করার কথা বলত, জীবনকে নিংড়ে নিয়ে জীবনের যুদ্ধে ফিরে আসার কথা বলত সেই মানুষটা এভাবে জীবন থেকে পালিয়ে গেল কেন? প্রশ্ন অনেকেরই মনে, আলোচনা, পর্যালোচনা, জল্পনা এই নিয়ে প্রতিনিয়তই চলছে। কিন্তু সঠিক কারণ কেউই বুঝে উঠতে পারছে না।

Read more


কিছু মানুষের মস্তিষ্কে গুজব আর ভুল বোঝাবুঝি, অজ্ঞানতা আর লাগামছাড়া আবেগ অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মত বিদ্যমান। শরীরে প্রতিটা বুলেট গেঁথে যাবার সঙ্গে সঙ্গে তার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বিপ্লবের প্রতি আনুগত্যের এক একটি স্মৃতি ......... স্বাধীনতার স্লোগানের জবাবে ছুঁড়ে দেওয়া মুষ্টিবদ্ধ হাত ...... গলার শির ফুলিয়ে বলা ‘আজাদী’ ......

Read more


সুধাময় বলল, আমার বড় দুঃসময় যাচ্ছে রে কুশী। বাবাকে বলিস আর ধারবাকি দিতে পারব না। সরু একফালি কুশী দোকানের কোণে জড়োসড়ো দাঁড়িয়ে। হাতে তেলের শিশি, টোলপড়া জার্মান সিলভারের কৌটো, আখের গুড় নিতে হবে। চাল ডাল মশলার ফর্দ, কুশী পথে আসতে তিনবার চারবার আওড়েছে। সুধাময় কলম ধরলেই ঝরঝর করে বলে দেবে।

Read more


স্বামী কেন আসামী । অসাধারণ পালা । সুযোগ জীবনে একবারই আসে । এখনও যারা টিক্যাট কাটেন নাই তাড়াতাড়ি আসেন ।আগামী চৌঠা মাঘ । রাত্রি দশ ঘটিকায় । কলীবাড়ির মাঠে । শীঘ্র শীঘ্র আসেন । মঞ্জুরী অপেরার নবতম যাত্রাপালা । কলকাতার সাড়া জাগানো যাত্রা । সারারাত্রি ব্যাপী…..।

Read more


ফোনটা অনেকক্ষন ধরে রিং হচ্ছে। বাথরুম থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে ফোনটা ধরল শ্রেয়সী। এত সকালে কে ফোন করল ? ভোরবেলা ফোন এলেই বুকের ভেতরটা ধক্ করে ওঠে। সোহমের মার্চেন্ট নেভীতে চাকরীর জন্য শ্রেয়সীকে সবসময় টেনশনে থাকতে হয়। বছরে ছ’মাস তো জলে জলেই কাটায় মানুষটা। সংসারের সব দায় দায়িত্ব শ্রেয়সীর ঘাড়ে। ‘হ্যালো…।’

Read more


ঘুম ভাঙ্গার পর থেকেই আমার কিছু মনে পরছেনা। হটাত ঘুমটা ভেঙে গেল।কিন্তু আমি উঠতে পারলামনা। মানে উঠতে চাইলামনা। হাট পা কিছুই নাড়াতে ইচ্ছে করল না। প্রথমেই মনে হল আমি এখন কি করব। ঘরটার জানালা,দরজা আটা,মোটা ভারি পর্দায় মোড়া,বন্ধ এসির ঠান্ডা আমেজ। এখন দিন না রাত সেটা বুঝতে বেশিক্ষণ লাগল না অবশ্য। কিন্তু এখন সকাল না দুপুর মনে করতে পারলাম না। আজ কি রোববার? ঠিক মনে পরছেনা।

Read more


পড়ার টেবিলের দিকে তাকালেই বুকটা কেঁপে ওঠে লিপিকার। টেবিলে খাতার পাহাড় জমে আছে। কিছুদিনের মধ্যেই প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম মীরাদি তাড়া দিলেন বলে। ঘড়ির কাঁটা বলছে নটা, আর কুড়ি মিনিটের মধ্যে স্নানে যেতেই হবে। কয়েকটা খাতা ঝটপট দেখে নিতে পারলেই ভালো হয়। হঠাৎ বেজে উঠলো ফোন।

Read more


ভারতের রাজধানী, নতুন দিল্লী। এখানেরই একটি পাঁচ-ছ'তলা বিল্ডিং। পুরো এলাকায় এরকম প্রচুর বিল্ডিং আছে। তো.....রাস্তার ধারে এটি। রাস্তার ওপাশে একটি বিরাট টেন্ট হাউস। প্রায়ই অনুষ্ঠান হয়। যখন হয় না তখন এটি পাড়ার খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তা..... এই বিল্ডিং-এর নীচের তলায় ওরা থাকে।

Read more


১ প্রতিদিনের মত পার্ক সার্কাস সিগন্যালে আমার গাড়িটা দাঁড়াতেই জানলাতে পরিচিত দুটো টোকা পড়লো। কাচটা অর্ধেক নামাতেই পুঁটির অভ্যস্ত হাসি। আজ একটা ডিপ সবুজ শাড়ি পরেছে ও, সঙ্গে রঙচঙে ব্লাউজ, বেমানান লিপস্টিক, চড়া মেকআপ। আমাদের সাড়ে তিন বছরের আলাপ বলতে কয়েক সেকেন্ডের এই দৃষ্টি বিনিময়, এটুকুই। রোজকার মতই দশ টাকা দিলাম পুঁটিকে, তারপরই সিগন্যাল গ্রীন, মিনিট পনেরোর মধ্যে কলেজ।

Read more


কান্টু রাতে ঘুমায় না। কান্টুর নাকি রাতে ঘুম আসে না! কান্টু সারারাত রাস্তা রাস্তা কান্টা কান্টা পাগলের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। কান্টু রাতের আঁধারে যার তার বাড়ির শোবার ঘরের দরজাজানালায় উঁকি মারছে। কান্টুর জন্য গাঁ-ঘরে কেউ ঘরের দরজাজানালা খুলে রাখতে পারছে না। কান্টু হয়ত পাগল হয়ে গেছে! কিংবা তাকে জ্বিনে পেয়েছে!

Read more


যেন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে সব কটা দেওয়াল। জানালার কাচ, সিঁড়ি। টিভির শাহরুক কিংবা কাজল পর্দা ছেড়ে ছিটকে বেরিয়ে যেন উড়তে শুরু করবে হাওয়ায়। যেন ভেঙে পড়বে যাবতীয় মেঝে, ছড়িয়ে পড়বে সিমেন্ট, বালি এমনকী অ্যাকোয়ারিয়ামের জলও। লাল নীল মাছগুলি ডানা মেলবে আকাশে। যেন ভেঙে টুকরো টুকরো হবে সেও।

Read more


চাদ্দিকে চোর চোর রব উঠলেও সোনাদার দিকে কেউ আঙুল তুলতে পারে না। প্রথমবার জিততে পারেনি, তবে পরের বার প্রতিপক্ষের উজ্জ্বল অধিকারীকে বিপুল মার্জিনে পরাস্ত করে এমেলে হয়েছে। সোনাদার দিকে আঙুল তোলা অসম্ভব। মাটির বাড়ি, খড়ের চালা, তক্তপোষ, সবচেয়ে কাছের টিউবকলটাও সদরদুয়ার থেকে পঁচিশ গজের তফাতে। কয়েক বিঘে জমি আছে, চাষবাস আছে, গরু-বাছুর, তাছাড়া ওই হাঁস-মুরগি। মেয়েটা বিয়ের পর জামাইএর সঙ্গে বনিবনা হয়নি ফিরে এসেছে, পেটে বাচ্চা নিয়ে। একটাই ছেলে। বিএসসি পাস করেছে। কাঠবেকার, চাষবাসেও ঘোর অনীহা তার।

Read more


ধিকালা রেঞ্জের ধনগড়ি গেট দিয়ে ববি চাঁদ সর্ফদুলির দিকে যাচ্ছিল। সে সময় তাকে ধরে ফেলে। ববি চাঁদের মটোর সাইকেল উল্টে যায়। ববি চাঁদ আট হাজার মাইনে পায়। তার ফুসফুস ফেঁড়ে গিয়েছিল। দুটো হাত দিয়ে সে নিজেকে আর তার পরিবারকে বাঁচায়। সাহেব বা সাহাবরা তাকে দিল্লীর এ্যাপোলোতে নিয়ে গিয়ে ফুসফুস ঠিক করে। কোনমতে পালিয়ে সে একটা জিপসিতে ওঠে যা ঠিক পেছু পেছু আসায় ববি বেঁচে যায়। তিনবার জিপসিকে আক্রমণ করে মানে ধরতে যায়। নেহাতই যন্ত্র হওয়ায় জিপসির কিছু হয় না ও সে ববি চাঁদকে বাঁচায়।

Read more


পাঁচদিন কাটল। ঠিক পাঁচদিন নয়, আজ এই দুপুর অবধি সাড়ে চার। বাড়ি ফিরে গেলে পুরো পাঁচ দিন হবে। চারপাশে বড় হট্টগোল। সবাই যে খুব চেঁচামেচি করে, তা’ নয়। সবাই উদ্বিগ্ন। অসম্ভব চাপা টেনশন সকলের চোখেমুখে। কেউ এখানে হা হা করে হাসে না, প্রাণ খুলে আড্ডা মারে না, ফোনে হই হই করে কথা বলে না, গান শোনে না, এমনকি মোবাইলে কোনও ছবিছাবাও দেখে না। পার্বতী অন্তত তেমনটিই লক্ষ্য করেছে এই ক’দিনে। সবাই বিপর্যস্ত হয়ে দৌড়য়। নানান জিনিসের জন্য ছুটোছুটি করে। বিরাট লাইন, বহু জিজ্ঞাসা। কত টানাপোড়েন।

Read more


সুর করে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়তে পড়তেই অযাচিত শব্দ কানে আসে ঊষারানির, যে-শব্দের উৎস নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন, যেন দূরের কোনও মন্দির থেকে ভেসে আসছে ঘণ্টাধ্বনি। হয়ত-বা পূজায় বা পাঁচালির সুরে তিনি এমনই বিভোর যে ঘন্টাধ্বনি ছাড়া অন্য কোনও শব্দের কথা মাথাতেই আসে না। সেই শব্দ বা শব্দের অনুরণন পাঁচালির সুরকে অতিক্রম করবেই এত নাছোড়, যদিও সেই শব্দ আপাতত তাঁর বিচলনের কারণ হতে পারে না, ফলত ঊষারানি পাঁচালি থামান না, অবিকৃত রাখেন সুরও, কেবল সেই সুরের মধ্যে, পাঁচালির মধ্যে ঢুকে পড়ে সেই ধ্বনি।

Read more


জন্মভূমির টানেই গ্রাম ছেড়ে একেবারেই যায়নি তবে আত্মীয়দের থেকে দূরে লুকিয়ে থাকে মেয়েটি-এ খবর জানতাম এবং ভাবতাম এমন এক মেয়ে তার একলা জীবনে এতো সমাজের এতো ‘গুণগুণা-না’ কি করে সহ্য করে! গ্রামের বাসিন্দারা কেউই তার গলার আওয়াজ পছন্দ করে না-এটাও জানতাম। ইচ্ছা করতো মেয়েটির স্যাঁতস্যাঁতে মাটির বারান্দার এক কোণে চুপ করে বসে থাকি। সারাদিন তার গতিবিধি দেখি। আমার প্রত্যাশার অভিপ্রায় একদিন বলেই ফেললাম। আপনার বাড়িতে একদিন যেতে চাই- আপনি কি আমাকে--?

Read more


গোলপার্ক ‘মৌচাকের’ সামনে যখন নামলাম, রোদ্দুর প্রায় নিভে এসেছে। আশেপাশের বাড়িগুলো, দোকানপাট, বিশেষত ফুলের দোকান, এক অদ্ভুত তামাটে অন্ধকার চাদরে মোড়া। মন বিষণ্ণ থাকলে আলোর অভাব চোখে পড়ে। সেন্টার থেকে বেরোনোর আগের মুহূর্তগুলো যতোবার মনে পড়ছিল, অক্ষম রাগ গুলিয়ে উঠছিল পেটের ভিতর। এরকম সময়ে যতোটা সম্ভব বাতাস টেনে নিতে হয় মগজে, শরীর হালকা করে দিতে হয়। আমিও সেটাই চেষ্টা করছিলাম। লোকটা অবশ্য হাত ধরেছিল, আর এগোয়নি। ওর অদৃশ্য আঙুল আমার বুকের আশপাশের শূন্যতায় কিছু খুঁজছিল। টের পেয়েছি আমি। মেয়েরা টের পায়।

Read more


ভট্টাচার্য বাড়িতে এক যুগ পরে উৎসব --- অরিন্দম ভট্টাচার্যের বিয়ে। শেষ খাওয়াদাওয়া হৈ হুল্লোড় হয়েছিল অক্ষয় ভট্টাচার্যের ছোট বোন খুশির বিয়েতে। এই প্রজন্মে অরিন্দমই একমাত্র ছেলে। তার বিয়ের জাঁকজমকও তেমন হওয়া চাই তো, তাই অক্ষয়বাবু উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন। একা হাতেই সব করতে হচ্ছে। ভাইরা সকলেই দূরে দূরে, এসে পৌঁছাবে ঠিক বিয়ের আগের দিন।

Read more


 রাতের কালচে নীল আলোয় রোহিত দেখে টিনার ঘুমন্ত মুখটা, কী নিষ্পাপ কোমল মুখ। পাশ থেকে মাথার বালিশ টেনে জোরে টিনার মুখের উপর চেপে ধরে, টিনা অনেকক্ষণ ধরে ছটফট করতে করতে একেবারে শান্ত হয়ে যায়। অথচ ঘন্টাখানেক আগেও দুজন শরীরী খেলায় মেতে উঠেছিলো। দুরন্ত আদরে ভাসিয়ে দিয়েছিলো টিনাকে।  

Read more


হাতে কাগজ। সকালবেলা, চায়ে চুমুক দেব, হাঁফাতে হাঁফাতে বুলান এল। গ্রিলের ফাঁকে দেখা যায় বুলানকে। মনে হয় কিছু খবর আছে। দরজা খুলতেই দুধের প্যাকেট দিয়ে বুলান সাইকেলের প্যাডেলে পা তুলেছে। খুব ব্যাস্ত। কী রে বুলান, এত ছটফট করছিস কেন? তুমি কিছু জান না? কী জানব? এই পাড়ার শেষে ঠিক বিনোদতলার মোড়েই তো একটা লাশ…। লাশ?

Read more


ক-২ তারপর সবার ঘর থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যেতে থাকল আয়না। নিজেকে নিজেই দেখা যায়। প্রতিবিম্ব। আলো ঝলকায়। কেউ কেউ সেটা দেখেই আবেগবিহ্বল। কেউ সহ্য করতেই পারত না। কিন্তু, সক্কলের বাড়িতেই থাকত। প্রত্যেকে ওটার সামনে দাঁড়িয়ে আরও ভাল, আরও নৈতিক, আরও বিনয়ী, আরও পরমনোলোভা হওয়ার অভিনয় করত। যার অভিনয় সবচেয়ে ভাল হত, সে হরষেবিষাদের সুন্দর বাড়িগুলোয় থাকতে পারত। কেউ কেউ লুকিয়ে রাখত, কিন্তু দেখত ঠিকই।

Read more


চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনের ছবি তুলতে চলে গিয়েছিলাম দুপুর দুপুর। মূল প্রসেশন শুরু হতে রাত হবে। এখন চলছে তারই প্রস্তুতি। সকালের দিকে বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন। তারপর যারা লাইটিং ছাড়া বিসর্জন করছে তারা নিরঞ্জন করবে। আমি দুপুরে গেছি কারণ দুপুর বিকেলের ছবিগুলো অধিকাংশ ফটোগ্রাফার তোলেনা। জানেও না তখন হয়। তারা রাতের বেলা ভিড়ভাড় আর লাইটিং সহ নিরঞ্জনের ছবি টার্গেট করে। কিন্তু গঙ্গা ধারের রাস্তায় দিনের আলোয় লাইন দিয়ে প্রতিমার মিছিলের যে ছবি তার মজাই আলাদা। আসলে আমি ডে লাইটে ছবি তোলা পছন্দ করি। এর কোনো বিকল্প নেই। আর আনুষঙ্গিক অনেক সাবজেক্ট যেগুলো আলো থাকতে থাকতে তুলে না নিলে সমস্যা। যেমন দুপাশের ভিড় করা দর্শনার্থী, ভাসানের নাচ, হকার প্রভৃতি।

Read more


ছেড়ে আসা খোলসে সাপ আর ঢোকে না। ঢুকতে পারে না। সেই সব খোলস , শরীরের মাপের সঙ্গে আর মেলে না, গভীর ক্ষতচিহ্ন ও তাতে লেগে থাকে কখনও। স্নান সেরে পাঞ্জাবি গলাতে গিয়ে মনে হ'ল। পাটেপাটে ইস্ত্রি করা সাদা পাঞ্জাবিতে সব ক'টা বোতামই লাগানো ছিল; তিনটে বোতাম খুলে মাথা গলাতেই কাঁধের দিকটা টাইট লাগল- টেনে টুনে বুক অবধি যাও বা গেল , পেটের দিকে নামতে গিয়ে পাঁজরে আটকালো।

Read more


(১) স্টেশনের ওভারব্রিজে ডাঁই হয়ে পড়ে থাকা একতাল কুয়াশার মাঝে একমুখ বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে সফিক। আজ কুয়াশাও পড়েছে তেমনি, চোখের পাতা ভিজে যায়। যেন স্বর্গে যত পাগলি বুড়ি আছে তারা সবাই তাদের ধূসর মলিন সাদা কাপড়গুলোকে একসাথে পৃথিবীর ছাদে মেলে দিয়েছে।

Read more


কে যেন বিলে ডিঙিতে চেপে টলটলে জল থেকে শাপলা তুলছে। আবির বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কিন্তু ভোরের কুয়াশা মাখা বিলে তেমন নজর যাচ্ছে না। তবু আবির দেখবার চেষ্টা করছে। চারপাশে পুজো পুজো গন্ধ। ছাতিয়ার বিলে জল বাঁধ ছাপিয়ে যাবে যেন। কতদিন পর তার আসা। আবির পুজোর সময় আসতে পারে না তার গ্রামে। শহরে তার বহু দিনের ব্যবসা । তার একটিই ছেলে। বাইরে থাকে। তার বউ ইরা সঙ্গে এসেছে। পুরনো বাড়িটা তেমনই আছে। ওর কাকার ছেলে অমিত দেখা শোনা করে।

Read more


দুখিরাম মূর্মু হাটে যাচ্ছে। কোথাকার হাটে? না জোড়া পাহাড়ির হাটে। কোথায় জোড়া পাহাড়ি? সে অনেক… দূর! প্রথমে পেরোতে হবে নদী, নদীর পর মাঠ, মাঠের পর জঙ্গল, জঙ্গল পেরিয়ে সেই যে যমজ পাহাড় দুটো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে,যেখান থেকে রোজ সূর্য উঠে,সেই পাহাড়তলীর নিচে। পাহাড় তো নয়,ওগুলো হল টিলা। দেবতারা ওই বড় বড় পাথরদুটো নিয়ে লোফালুফি খেলত,ভুল করে ওই জঙ্গলে পড়ে গেছে,আর তুলে নিয়ে যায়নি। তারপর ম্যাগ ডাকলেক, বৃষ্টি হলেক, পাখিতে বীজ ফেললেক, গাছপালা-বৃক্ষ জন্মালেক। উয়াদের কী পাহাড় বলা যায় গো! যায় না,যায় না। পাহাড় তো অনেক উঁচু! দুখিরামের দাদু কথাগুলো বলেছিল।

Read more


প্লাটফর্ম থেকে বাইরে এসেই একটু থমকে গেল আহেলী। স্টেশন রোডকে অন্ধকার পুরো গ্ৰাস করে রেখেছে। জল আর অন্ধকার ভেঙে ভেঙে কোনরকমে মেইন রোডে পৌঁছালো। লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। অটো স্ট‍্যান্ডও শুনশান। রাত দশটায় লাস্ট অটো।এখন তো ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁই ছুঁই।তার উপর সকাল থেকে নিম্মচাপের বৃষ্টি। দুপুরের পর থেকে ঝোড়ো হাওয়ার ঝাপটা উথাল পাথাল করে দিচ্ছিল চতুর্দিক।

Read more


টেবিলে খেতে বসার পরে মনে পড়ল জল নেই। এই হয়। জরুরি কথা মনে থাকে না। দুপুরেই জল ফুরিয়ে গিয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম বিকেলের মধ্যে ভরে ফেলব। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হয়েছে কখন। রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের পাশে ঝিম ধরা পোকার ঝাঁক। ওরা উড়ে উড়ে কী যেন পাহারা দেয়। আলোর চারপাশে ওদের ভিড়। দল বেঁধে থাকে। দল বেঁধে মরে যায়। তবু ওরা দলেই বাঁচে। দমবন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার জন্য হাজার কারণ এখন ছড়িয়েছিটিয়ে।

Read more


যে কুচিন্তা মাথায় পুরে রাস্তাভর জোরে ঘাই খেতে খেতে হাঁটছিল, তাই হল। এখন সারারাত মাথায় হাত চেপে নোনা গাঙের হাওয়া গিলে সটান রাস্তায় পড়ে থাকা। আর রাতভর রায়মঙ্গলের ঢেউ গুনে রাত জেগে পাঁড় মাতাল সাজা। কোথায় আর যাবে! এখানে চেনা পরিচিতও কেউ নেই। সেই পাটঘেরায়, ছোটো মাসিমার বাড়ি ছাড়া!

Read more


জুলাইয়ের মাঝামাঝি। ক'দিন ধরে থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। এক পশলা বৃষ্টির পরই রোদ। সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। এক এক সময় আকাশ মেঘে ঢেকে গুমোট হয়ে থাকছে। পলাশডাঙা ছোট একটা আদিবাসী গ্রাম। চারপাশে বিস্তৃত চাষজমির মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এক একটা জনবসতি। সেই সব গ্রামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে। গত ত্রিশ চল্লিশ বছরে গ্রামগুলোর জীবনধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। গ্রামীণ সড়ক যোজনায় প্রায় প্রতি গ্রামে রাস্তা হয়ে শহরের সঙ্গে জুড়ে গেছে।

Read more


হাওয়া যেদিকে থেকে বয়, সেদিকে পিঠ করে গেটের মাঝ বরাবর লোহার খুঁটি ধরে দাঁড়ায় ঝিল্লি। সক্কালবেলার ক্যানিংমুখী লোকাল বিলকুল ফাঁকা। দরজায় বসা মেছুনিরা ঠোঁট বাঁকায়, গা টেপাটেপি করে তাকে দেখে। ঝিল্লি পাত্তা দেয় না। ব্লাউজের ফাঁক গলে পিঠ বেয়ে ঝিরঝির বাতাস ঢোকে, মাইরি! কখনও এমন ঝামড়ে পড়ে হাওয়া যে, চুলগুলো সামনে উড়ে এসে মুখ ঢেকে দেয়। বড় মেছুনি কয়, 'চুল বেঁধে নে না মাগী।'

Read more


স্টেশনে ঢুকতেই, গেরুয়া পোশাক পরা একটা লোক সায়নের হাতে লিফলেটটা ধরিয়ে দিল।কোথায় যেন হরিনাম সংকীর্তন হবে । তারই লিফলেট।মুচকি হেসে নীলির দিকে তাকিয়ে সায়ন জিগ্যেস করল, “আমাকে কি খুব বুড়ো বুড়ো দেখাচ্ছে?” আঁড় চোখে সায়নের দিকে তাকিয়ে নীলি হেসে উত্তর দিল, না না,এক্কেবারে কচি খোকা দেখাচ্ছে। ট্রেনটা বেশ ফাঁকা । জানলার দুপাশে ওরা দুজন মুখোমুখি বসলো। হাতে ধরা লিফলেটটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল সায়ন।বেশ কালারফুল।বড় বড় করে তাতে লেখা আছে এ জন্ম ও পরজন্মের পাপক্ষয়।মৃত্যুর পর স্বর্গে স্থান।

Read more


শরৎ পেরিয়ে হেমন্ত শেষ লগ্নে দাঁড়িয়ে। আজ সতেরোই অগ্রহায়ণ। ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।এবার শীতে না বড়ো ভোগান্তি হয়। দিন ছোটো, রাত শেষ হতে চায় না।

Read more


পদ্মাপাড়ের একটা জীর্ণ কুটির। আঙিনার উদোম হেঁসেলে বসে আটা মেখে রুটি সেঁকছে বিশ বছর বয়সী কাবিরা। এপাশ ওপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ছেঁড়াফাটা মাছধরা জাল। হঠাৎ বোন শাবিরা হন্তদন্ত হয়ে বাইরে থেকে এসে প্রথমেই তার কাছে গেল। চুপিচুপি জিজ্ঞেস করল, বুবু- মা কোথায়? কাবিরা বলল, ঘরে শুয়ে আছেন। হয়তো ঘুমোচ্ছেন । আল্লা যেন তাঁকে শান্তিতে রাখেন। বলতে বলতে কাবিরা দেখল, শাবিরা তার আঁচলের আড়াল থেকে পলিথিন-মোড়া একটা পুঁটলি বের করছে। কাবিরা রুটি সেঁকতে সেঁকতে জিজ্ঞেস করল, কী ওটা- কিসের পুঁটলি?

Read more


টাকা আসছিল। আসছিল মানে দিচ্ছিল কেউ। রুমির মা ২ টাকা, শান্তির পিসি ১ টাকা, পলুর মাসি ৫ টাকা। শিওরতনের বাবা একদিন ১০ টাকাই দিল। এইরকম। সন্তুর ঠাকুমা কিছু দেয় না। চুপ করে বসে থাকে আর অতসীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে, যেন কিছু লক্ষ করে, যেন কিছু জরিপ করতে চায়। শুধু টাকাই না। শুভ্রা একদিন পেয়ারা এনে দিল, বলল, গাছপাকা। আপ্পা একদিন কাচকলা এনে দিল, বলল, আমরা কেউ কাচকলা খাই না। দেখাদেখি একদিন কমলালেবু এনে দিল বেণী, বলল, তার ভাই নাসিক থেকে এনেছে। তবে অবাক করে দিল পুন্যির মা, সে আনল আলু বেগুন আর আলোচাল।

Read more


গোসাবার হজরত আমাকে মৈপীঠের কথা বলল। বলল, ‘আমাদের এদিকে সব চব্বিশ পরগনার, কিছু বড়জোর দেশভাগের সময় যশোর-খুলনা থেকে আসা। মেদিনীপুরের লোক পাবেন আপনি পশ্চিমে। পশ্চিম মানে কুলতলি থেকে শুরু করে একেবারে কে-প্লট, এল-প্লট হয়ে সেই সাগরদ্বীপ পর্যন্ত। আর মেদিনীপুরেই তো সাংঘাতিক সেই ঝড়। ঝড়, নদী-গাঙের ঢেউ। একেবারে ত্রিশ-চল্লিশ হাতের উঁচু। একদিনেই হাজার হাজার লোক— ।’ বলতে গেলাম, ‘আমি তো দুর্ভিক্ষের লোকগুলির— ।’ মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ও জানাল, তারপরেই শুরু সেই দুর্ভিক্ষের।

Read more