পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

পাপবোধ

  • 03 March, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 833 view(s)
  • লিখেছেন : শ্যামলী আচার্য
ছুটে এসেই বাসটা ধরে অরণ্যা। আজ বেশ দেরিই হল। স্টপে পৌঁছনো মাত্রই নিজের গন্তব্যের বাস পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। লটারির টিকিট কাটলে হত।

অফিসের কাজ মিটতে সন্ধে গড়িয়েছে। একের পর এক কাগজপত্র, চিঠি, অর্ডার। টাইপ, সই, স্ক্যান, মেল। বাঁধা গতের কাজ বলেই সামান্য একঘেয়ে। আবার বাঁধাধরা বলেই এগিয়ে যায় বেশ দ্রুতগতিতে। কিন্তু এক-একদিন রুটিন লম্বা হয়ে যায়। ফুরোতেই চায় না। অথচ ঘড়ির কাঁটা হঠাৎ জানিয়ে দেয়, সময় শেষ। 

চট করে সন্ধে নেমে আসে আজকাল। সাড়ে চারটে বাজতে না বাজতেই আলো মরে যায়। ধূসর বিকেল ক্লান্তি মাখতে থাকে পরম আয়েসে। পাঁচটায় ভরপুর সন্ধে। সাড়ে ছটায় যখন অরণ্যা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে লোহার ছোট গেট ঠেলে বেরোয়, তখন চারদিকে ব্যস্ততা। ঘরে ফেরার তাড়া। ত্রিশূলে গাঁথা নিয়ন আলো ধাক্কা দেয় গাড়ির হেডলাইটকে। এত দেরি হবে ভাবেনি অরণ্যা। সাধারণত পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই বাস-স্টপে এসে দাঁড়ায় ও। বড়রাস্তার উল্টোদিকের ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা উদ্ধত শপিং মলের দিকে খানিকক্ষণ দু’চোখ মেলে তাকায়। বাস এলে উঠে পড়ে।  

আজ ভেবেছিল বাস পেতে দেরি হবে। বাড়ি ফিরতে আরও দেরি। সে ভুল ভাঙল। কিন্তু বসার জায়গা আজ দুর্লভ। সকলেই যে যার জায়গায় বসে। উদাসীন, নিঃস্পৃহ। দেখে মনে হয়, এখানেই যেন বসে থাকার কথা তার-- এখানেই সে বসে থাকবে অনন্তকাল। কোথাও ওঠা-নামার তাড়া নেই, তাড়া ছিলও না কোনোকালে। মাথার ওপরে রড পাকড়ে প্রত্যেকের মুখের ওপর চোখ বোলাতে শুরু করে অরণ্যা। বুঝে নিতে চায়, কে কতদূর। বাসে উঠেই এত অল্প সময়ে কোথায় কার সামনে দাঁড়াবে এই নিয়ে চিন্তা করার ফুরসত হয় না। কন্ডাক্টরের তাড়া ভেসে আসে-- দিদি, পেছন দিকে এগিয়ে যান। একটু দোনামনা করে বাসের সামান্য ভেতরে এগোয় অরণ্যা।

খিদে পাচ্ছে। টিফিনের রুটি তরকারি কবেই তলানি। পেটের মধ্যে অল্প চিনচিন। ফুচকা খেলে হত। আজ সঙ্গী পাওয়া কঠিন ছিল। উত্তমা আসেনি। শালিনীও না। একা একা মজা কম।

বাসের হঠাৎ ঝাঁকুনিতে বেশ খানিকটা হেলে পড়ে অরণ্যা। বাঁদিকে টাল সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ানো মানেই বেশ খানিকটা বাঁদিকে চলে যাওয়া। মানে আরও খানিকটা ভেতরে। পর পর সিট। দুজন পাশাপাশি। একজন জানালায়। একজন ধারে। ভিড় বাড়লে তার ওপরেই যত চাপ। ব্যাগ ধরার আবদার, ব্রেক কষার পরেই মারাত্মক এক ধাক্কা খাওয়ার প্রস্তুতি। ঠিক নাকের কাছে অন্য সহযাত্রীর হাত হ্যাণ্ডেল ধরে থাকে। এই সব নিয়েই কেউ কেউ অল্পে উত্তপ্ত। কেউ আবার পরম সহিষ্ণু। তাঁর ঠিক সামনে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর প্রতি সমবেদনা, সহমর্মিতা জাতীয় গালভরা শব্দ প্রয়োগ শেষ করা হয়েছে ক্লাস টেনের রচনা খাতায়। কার্যকালে ঢুঁ ঢুঁ। 

অরণ্যার কাঁধে একটা ব্যাগ। হাতে আর একটা। হাতের ঝোলায় জলের বোতল, টিফিনবক্স। টুকিটাকি। কখনো হালকা ওড়না। কখনো গল্পের বই। কাঁধব্যাগেই যাবতীয় দরকারি। লম্বা স্ট্র্যাপ সামনে টেনে আঁকড়ে রাখে। এক হাতে রড ধরা। মাঝে-মধ্যে ঝাকুনিতে বিপর্যস্ত হয়ে গেলেও মোটামুটি সামলে নেবার কৌশল জানা থাকে নিত্যযাত্রীর। এ এক আশ্চর্য প্রতিবর্ত ক্রিয়া। কাঁধে-হাতে দুই ব্যাগের ভার নিয়ে চলন্ত বাসে ভারসাম্যের খেলা।

অরণ্যার সামনেই একটি মেয়ে। কিশোরী। জিনস আর কুর্তি। ঢাউস ব্যাগ আঁকড়ে রাখা কোলে। একরাশ ক্লান্তি তার উড়ে যাওয়া একগুচ্ছ চুল নিয়ে জানালার বাইরে খেলা করে। অরণ্যা ভাবতে চেষ্টা করে কোথায় নামবে মেয়েটি। আশেপাশে যারা বসে আছে, তাদের কেউই তো খুব চটপট সিট ছেড়ে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না। মেয়েটির পাশেই এক বয়স্কা যেমন। গভীর বিরক্তি নিয়ে উসখুস। কিন্তু নামার তাড়া নেই। হাতের নখে রঙ চটে যাওয়া নেলপালিশে অযত্নের দাগ। তার পাশে মধ্যবয়সী। সবুজ সিনথেটিক শাড়ির সঙ্গে কালো-সবুজ-মেরুন মেশানো চমৎকার ব্লাউজটি বেশ চোখে ধরে অরণ্যার।

“দিদি, টিকিট”, যুবক কন্ডাক্টরের ক্ষয়াটে হাত এগিয়ে আসে।

“দিচ্ছি ভাই”। অরণ্যা প্রস্তুত। হাতের নাগালেই খুচরোর সম্ভার। ভাড়া মিটিয়ে চাপমুক্ত।

বসার সিট পেলে গান শোনা যেত। অফিসে আসার সময় যেরকম শোনে। ফুরফুরে হয়ে যায় মেজাজ।

বাঁদিকে পর পর তিনটে সিটে কানে হেডফোন গোঁজা। চোখ বন্ধ একজনের। অরণ্যার রাগ হতে থাকে। হিংসেও পায়! কিছুই জোটে না ওর। সামান্য বসার সিটও না।

বাসের জানালার বাইরে ছুটে যায় দোকান-পাট। শেষ হেমন্তে ভিড় কম। পুজোর মরশুম মিটেছে। মাসের অন্তে মানুষের হাতে টাকার জোগান ফুরিয়ে এসেছে। অরণ্যার নতুন শাড়ি কেনা হয়নি এ বছর। সাম্য যা টাকা হাতে দিয়েছে তাতে পছন্দসই ভাল শাড়ি হয়না। দুটো চুড়িদার-কামিজ আর নিজের টাকায় একটাই স্কার্ট। অফিস ছাড়া অন্য যে কোন জায়গায় পরা যায়। সামনে বসা কিশোরীটির স্লিভলেস টপটি ভারি সুন্দর। প্রসাধনের বদলে তার ক্লান্তি মাখানো চোখ-মুখ। মায়া হয়। বাসের জানালার রডে মাথা রাখছে মাঝে মাঝে আলগোছে। ওর দিকে তাকিয়ে কলেজে ফিরে যায় অরণ্যা।

অভাব তখন দাঁত-নখ বসায়নি। মোটামুটি যা চাইত, তা’ই পেত। বাবার কাছে আবদার, মায়ের কাছে অভিমান, দিদির সঙ্গে ঝগড়া। যেভাবেই হোক, হাতের নাগালে থাকা জিনিসগুলো হাতের মুঠোতেই আসত তখন। মুঠো গলে পড়ে যেত না। এখন যেমন যায়। একটুখানি চাওয়াও মেটে না কত সময়। এই যেমন, বাসে উঠে একটা সিট। এই তো সামান্য চাওয়া। খুব বেশি তো কিছু নয়। তবু পাবে না অর্ধেক দিন। জানালার ধার তো কোন ছার! সিটে বসা। ঝিমুনি। স্টপ এলে নেমে পড়া। এটুকুই চায় এক-একদিন। মেলে না। রাগ হয়। কোনও কোনও দিন অভিমান। কোমরের ব্যথা পা বেয়ে চারিয়ে গেলে কান্না পায়। দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে না। আর বাকি সব না পাওয়াগুলো ভিড় করে জমে ওঠে গলার কাছে।

পরপর সার বাঁধা বসার জায়গা। এদিক-ওদিক তাকাতে শুরু করে অরণ্যা। নাগালের মধ্যে থাকা প্রত্যেকের দিকে। খুঁটিয়ে দেখে বুঝে নেওয়া। কে, কোথায়, কীভাবে। এটা ওর প্রিয় খেলা। টাইমপাস। সহযাত্রীর চেহারা দেখে, নড়াচড়া দেখে তাদের পড়ে ফেলা। সময় সুযোগ পেলেই ......। এগিয়ে পিছিয়ে ড্রিবল করে নিজের শরীরটাকে ঠিক নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গলিয়ে দেবে সে। বসতেই হবে।

কানের লতির অসংখ্য ফুটোতে নানান মাপের রূপোলী রিং। ডান হাতে ট্যাটু। সূর্যের ছবি। খুবলে ছেঁড়া জিনস এঁটে বসেছে শরীরের নীচের অংশে। কেতাদুরস্ত কালো জামার ওপর ততোধিক স্টাইলিশ জ্যাকেট। পাথর কুঁদে বসানো নিখুঁত নাক-চোখ-ঠোঁটে ঔদ্ধত্য ভরপুর। তার পাশে তিনটে সিট পেরিয়ে এক মাসীমা। সাদা থেকে রঙ্গিন হয়েছেন সদ্য। বয়সকে একটু ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছেন। এরা কেউ নামবে না বাস থেকে। অনন্তকাল চলবে। চলেই যাবে। বাসের ডিপো ছাড়িয়েও চলতে থাকবে। এদের দিকে আর তাকায় না অরণ্যা। চুলোয় যাক এরা। বরং মেপে রাখে সামনের নবীনাকে। উসখুস করতে দেখেও স্বস্তি।

মেয়েটি উঠে পড়ে। যাক, নিশ্চিন্ত। পিঠের কিটব্যাগ কোল থেকে আলতো হাতে তুলে এক কাঁধে গলাতেই সামনে দাঁড়ানো অরণ্যার পায়ের ওপর পড়ে কিছু একটা। কী পড়ে গেল, দেখার জন্য ঝুঁকতে হবে। ভিড়ে সেই অবকাশ নেই। এদিক-সেদিক সরলে অন্য দলের খেলোয়াড় বলের দখল নেবে। অতএব, নিরাসক্ত। কিন্তু সত্যি পুরো নিরাসক্ত হওয়া যায় কি? পায়ের ওপর পড়ে থাকা একটি জড় পদার্থকে অনুভব করতে করতে তো ডাকা যায় মেয়েটিকে--

‘এই যে ভাই, কি যেন পড়ে গেল আপনার’—

নাহ। বলা হয় না। অরণ্যা তার পায়ের ওপর পড়ে থাকা নির্জীব বস্তুটিকে পায়ের পাতার ওপরেই বসে থাকতে দেয়। আড়চোখে দেখে নেয়, আশেপাশে আর কেউ......।

মেয়েটি বাসের দরজার সামনে। নামবে।

অরণ্যা বসে পড়েছে। কাঁধের পাশেই জানালা দিয়ে দেখে রাস্তায় ট্র্যাফিক সিগনালের আলো টকটকে লাল।

মেয়েটি নেমে পড়ল। ওই তো। নেমেই এক কাঁধ থেকে কিট ব্যাগ নামিয়ে নিয়েছে। চেন খুলে খুঁজছে কিছু। অরণ্যা জানে। অরণ্যা দেখতে পাচ্ছে স্পষ্ট। ট্র্যাফিকের লাল আলোর কাছে দাঁড়িয়েই মেয়েটি হাতড়াচ্ছে এবার। মরিয়া। ব্যাগ ঝেড়ে, আলো মেখে অন্ধকার উলটে-পালটে দেখছে সে। কি যেন খোয়া গেছে, কোথায় কীভাবে...

অরণ্যার ভয় হয়। লাল আলো সবুজে পৌঁছয় না কেন? দীর্ঘ পথ। এক রঙ থেকে আরেক রঙে। চট করে এক লহমায় আলো বদলে যায়। মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকে। উদভ্রান্ত ফুটপাথের আবছায়াতে তার আকুল খোঁজ দেখবে না বলে অরণ্যা হঠাৎ চোখ বুজে ফেলে।

আস্তে আস্তে নিচু হবার পালা। হাতে ঝোলানো বাড়তি ব্যাগ থেকে বের করে নিতে হবে তার এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় কোনও আপন বস্তু। উদাসীনতা মাখিয়ে সামান্য ঝুঁকে পড়ে অরণ্যা। একটা পার্স। লেডিস পার্স। হাতের আন্দাজেই বোঝা যায়। অরণ্যার মুঠোয় পুরোপুরি আঁটে না। একটু বড়সড় মাপের পার্সকে সে আলতো করে তুলে নেয় আর চট করে ঢুকিয়ে দেয় মুখ-খোলা হাতব্যাগে। কয়েক মুহূর্তের কাজ। নিখুঁত। মসৃণ মাখনের  টুকরোতে ছুরি ছোঁয়ানোর আগেই ন্যায়-অন্যায় দ্বিখণ্ডিত।   

কোথাও কোন কাঁটা নেই। শুকনো ঘাসজমিতে ছুটে বেড়ালে সামান্য যে ক’টি চোরকাঁটা টুক করে আঁকড়ে ধরে ফেলে জামার নীচের প্রান্ত-- ততটুকুও না।

সবুজ সিগনালের টানে বাস বেশ এগোয়। অরণ্যা ভাবে, পার্সের ভেতর থেকে যাওয়া জরুরি জিনিস, না খুচরো পয়সার সঙ্গে মাখামাখি হয়ে কুঁকড়ে থাকা নোট-- কোনটার জন্য ব্যাকুল হবে ঐ মেয়েটি। নামার জন্য ব্যস্ততা তৈরি হয়। ব্যাগের অন্দরে থাকা কুচো কুচো কৌতূহল টানতে থাকে অরণ্যাকে। বাসের গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া উত্তেজনা গলার কাছে জমাট। সশব্দে ফেটে পড়ার আগের মুহূর্তে যেমন বারুদঠাসা খোল টানটান হয়ে শক্ত করে রাখে তার যাবতীয় স্নায়ু।

বাস থামে। যেমন থামে রোজ। নির্দিষ্ট স্টপে দাঁড়ায়। অরণ্যা নামতে নামতেও ভাবে আশেপাশে কেউ কি দেখেছিল তার পায়ের ওপর টুপ করে পড়ে যাওয়া অনিচ্ছার অপরাধ? মেয়েটি কিছু বুঝতে পারল কি? স্মৃতি এগিয়ে-পিছিয়ে সে কি মনে করতে চাইবেনা কীভাবে কখন সে শেষ ছুঁয়েছিল তার নিজস্ব আর্থিক নির্ভরতার এক টুকরো বাস্তব চিহ্ন।

বাস থেকে নেমে বাড়ির রাস্তায় একটু জোরেই পা চালায়। নির্জনতা আজ বড় প্রয়োজন। আর সামান্য অন্ধকার। চটপট হাত চালিয়ে মেরুন ফোমের পার্স খুলে ফেলে অরণ্যা। ‘লেডিস ফ্যান্সি’র বিল। য্যাডমিট কার্ড। পুরনো। রূপরেখা বিশ্বাস। পাসপোর্ট ছবিতে বাসের জানালায় দেখা কিশোরীর ক্লান্ত মুখের আবছা মিল। লাইব্রেরি কার্ড। এক এক করে দলা পাকিয়ে যায়। একটার পর একটা চেন। কিছু খুচরো, কিছু ভাঁজ করা একশো-পঞ্চাশ। দাঁড়িয়ে পড়ে গুনতে শুরু করে অরণ্যা। ঘেমে যাওয়া হাতের পাতায় জড়ো হয়েছে মোট এগারোশো-সত্তর।

অকাজের কাগজগুলো রাস্তার আশেপাশে ঝরে পড়তে থাকে টুপটাপ। রূপরেখা বিশ্বাস তার অনেক রসিদ, ছাড়পত্র, পরিচয় আর খুচরো প্রয়োজন নিয়ে বেওয়ারিশ পড়ে থাকে কাঁচা ড্রেনের ধারে। গলির মোড়ের লালচে আলোয় হাঁটতে হাঁটতে অরণ্যা আশ্বস্ত হয় এই এগারোশো টাকায় নতুন হ্যান্ডলুম শাড়ির ভাঁজে সে নিশ্চিত আড়াল করে রাখতে পারবে তার পাপবোধ।  

এখনো ফেলে ছড়িয়ে দেওয়া গেল না রাস্তায়।

আর একটু সময় লাগবে।    

0 Comments

Post Comment