পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

জগদ্ধাত্রী

  • 10 July, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 982 view(s)
  • লিখেছেন : বিমল গঙ্গোপাধ্যায়
সুধাময় বলল, আমার বড় দুঃসময় যাচ্ছে রে কুশী। বাবাকে বলিস আর ধারবাকি দিতে পারব না। সরু একফালি কুশী দোকানের কোণে জড়োসড়ো দাঁড়িয়ে। হাতে তেলের শিশি, টোলপড়া জার্মান সিলভারের কৌটো, আখের গুড় নিতে হবে। চাল ডাল মশলার ফর্দ, কুশী পথে আসতে তিনবার চারবার আওড়েছে। সুধাময় কলম ধরলেই ঝরঝর করে বলে দেবে।

সুধাময় যেন দেখেও দেখছে না কুশীকে। দোকানে খদ্দের বলতে নারান সাঁতরা আর বিটুর মা। বুড়ো মাংগীলাল উবু হয়ে বসে। তার সামনে থাক দেওয়া চটের বস্তা। মাংগীলাল চাল ডাল চিনি ময়দার খালি বস্তা কিনে নিয়ে যায়। বস্তাগুলি নাকি অনেক দূরে চলে যায়। সেখানে গরীব মানুষেরা এইসব বস্তা কেনে। তারা মাটির মেঝেতে বস্তার বিছানা পেতে শোয়। তাদের চেয়েও যারা গরীব, বস্তা কেটে জামার মতো করে পরে। সেলাই করে জুড়ে মেয়েরা শাড়ীর মতো করে কোমরে জড়ায়। শীতকালে চাদরের মতো বস্তা গায়ে দেয়।

কুশীর ভয় করতে লাগল, সুধাময় যদি আজ থেকেই ধারবাকি বন্ধ করে দেয়, দুপুরে রান্না হবে না। সুধাময় যেমনভাবে বলল, ব্রিকেট দেয় যে ছেলেটি, সেও যদি ওইভাবে বলে, ধারবাকি দিতে পারব না, ব্যারাক বাড়ির মালিক মহাদেব চৌধুরী যদি বলে, ভাড়া বাকি রাখতে পারব না, ছোট ভাইবোন দুটি পড়তে গেলে সুখেন মাস্টার যদি বলে, মাইনে মিটিয়ে না দিলে পড়াতে পারব না, সবাই যদি বলে পারব না, তখন কী হবে?

তখন মাংগীলালকে চুপিচুপি জিজ্ঞেস করতে হবে, বস্তা জুড়ে শাড়ির মতো করে পরে যারা, বস্তার জামা গায়ে দেয়, বস্তার চাদরে শীত আটকায়, তারা কোথায় থাকে? কত দূরে?

সব কাজেই সুধাময়ের 'হচ্ছে হবে' ভাব। 'কণক ভাণ্ডার'– এর মতো ভিড় হলে সুধাময় কী করত! এতেই থেকে থেকে কমবয়সী কর্মচারীটিকে তেড়ে যায়, হাঁ করে দেখছিস কী? ভিড় পাতলা কর।

কুশী গুণে দেখেছে তিন চারজনের বেশী খদ্দের একসঙ্গে সুধাময়ের দোকানে আসেনা কখনও। আজ মোটে দুজন। তাতেই সুধাময় দোকানময় ঘুরছে। এমনভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে যেন দরকারী কোন জিনিস খুঁজে পাচ্ছে না। বিটুর মায়ের জিনিসপত্র নেওয়া হয়ে গেছে। কেন যে ও টাকা মিটিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে না! নারান সাঁতরার দেরী হবে, কুশী জানে। সুধাময় ওকে একটি বিড়ি দেবে। ও সেটি ফরফর ঘোরাবে কানের পাশে। আগামূলে ফুঁ দেবে। বিড়িতে একটা করে টান দেবে আর তিনবার করে কাশবে। এ সবেতে অনেক সময় যাবে। তা যাক। নারান সাঁতরাকে নিয়ে কুশীর কোন সমস্যা নেই। আজ না হোক কাল সুধাময় ওকেও বলবে, ধারবাকি দিতে পারব না।

কিন্তু বিটুর মায়ের সামনে যদি আজ ফিরে যেতে হয় খালি হাতে, কুশী জানে হাওয়ার আগে সে খবর ছড়িয়ে পড়বে। এতটুকু কথা 'পারব না', তার আগে পিছে 'এই''সেই''অমুক''তমুক' জুড়ে জুড়ে খবরটা ইয়া বড় হয়ে যাবে। বিটুর মা চোখ সরু করে বার বার তাকাচ্ছে কুশীর মুখের পানে। এখনি হয়ত বলে বসবে, বাড়ি যাবি তো? চল। যেন কুশী পথ চলতে জানে না। বিটুর মায়ের হাত ধরে বাড়ি যাবে।

মাংগীলাল নতুন একটা বিড়ি ধরাল। সুধাময় তাকে কী যেন বলতে গেল, সে ঘাড় নেড়ে দুবার 'হাঁ-হাঁ' করে ইশারায় কুশীকে দেখাল, খুকুদিদির সওদা দিয়ে লাও।

সুধাময় এ কথার কোন জবাব না দিয়ে ক্যাশবাক্সের সামনে ছোট জলচৌকিটায় আরাম করে বসল। কর্মচারীটিকে নরম গলায় 'ইঁদুর ইঁদুর' করে ডেকে জল চাইল। কুশীর বয়স আর কয়েক বছর বেশী হলে সে সুধাময়ের এই নিষ্পৃহ আচরণের অর্থ ধরতে পারত।

বিটুর মা গা মুচড়ে উঠে দাঁড়াল। সুধাময়ের দিকে চেয়ে হাসল, বেলা হল, দোকান বন্ধ করবে কখন?

  • তা হল। সুধাময় জবাব দিল, এবার গোছগাছ শুরু করব।

কুশীর বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। সুধাময় কি তাকে সত্যি সত্যি জিনিস দেবে না? সে ক্ষীণ গলায় ডাকল, কাকা, আমার জিনিসগুলোন ....!

চার তেরে বাহান্ন, বাহান্ন আট ষাট, ষাট দশ সত্তুর, সাত সাতাত্তুর, নামতা পড়ার মতো সুর করে জোরে জোরে সুধাময় বিক্রিবাটার হিসাব করতে শুরু করেছে। আর মাঝে মাঝে বাঁ হাতের আলতো টোকায় নাকের ওপর ঝুলে পড়া চশমা ঠেলে তোলার ফাঁকে কুশীকে দেখছে। সাপের ছোবল মারার মতো নিমেষের ক্ষিপ্রতায়।

কুশীর কান্না পেল। খালি হাতে বাড়ি ঢুকলে বাড়িটার চেহারা যা হবে, এটা ভেবে তার ভয় করতে লাগল। বাবা শুয়ে আছে দরমা ঘেরা দাওয়ায়। কিছুদিন ধরে ওখানেই শুয়ে আছে বাবা দিন রাত। মাঝে মাঝে খকর খক করে কাশে আর দরমার ফাঁক দিয়ে পিছনের জঙ্গলে থুতু ফেলে। মা বলে, বাবাকে মরণ রোগে ধরেছে। মরণ রোগ জিনিসটা কী, কুশী জানে না। কিন্তু বাবা মরে যাবে ভাবলে তার খুব দুঃখ হয়। মা এমনভাবে বলে যেন মরে যাওয়াটা কোনও ব্যাপারই নয়। মা কিন্তু আর কারোর মরে যাওয়ার কথা বলে না। বাবা মাঝে মাঝে মাকে তেড়ে যায়, চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালে মাথা ঘষটে দেয় বলেই হয়ত, মায়ের অত রাগ বাবার ওপর। মা কেন যে ছুটে পালিয়ে যায় না! বাবার তো ঘাড় ঘোরে না। ময়দা কলে বস্তা বয় যারা, তাদের ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। কুশী জানে একে 'লকিং' বলে।

সুধাময়ের ঘাড়ে কোন লকিং নেই। কলের পুতুলের মতো ঘাড়টা কেমন উঠছে নামছে। বাঁ পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে সুধাময় ডাকছে, ছুঁচো? ছুঁটো কোথায় গেলি? পাল্লা নামা।

ডানপাশে ঘাড় ঘুড়িয়ে হাসছে, মাংগীলাল, আগের বারে বস্তার হিসেবে ভুল হয়েছিল। ঠিক কোরে গোণ।

নারান সাঁতরা বিড়িতে ফুঁ দিচ্ছে। এবার কাশি শুরু হবে। তবে, কুশী ভাবে, বাবার মতো কাশি নয়। বাবা যখন কাশে চোখ দুটো ঠেলে বেরিয়ে আসে। জিভ ঝুলে পড়ে মুখের বাইরে। মেঝেতে দুহাত চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে কাশে। কাশি থেমে গেলেও শরীরটা দুলতে থাকে। ঝড়ে যেমন বড় বড় গাছ দোলে ঠিক তেমনিভাবে। তখন শ্বাস পড়ে হ্যা হ্যা শব্দ করে। মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে। হয়ত ভাবে মরণ রোগ বাবার শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছে। কুশী তখন হাতের কাজ ফেলে দিয়ে বাবার পাশে এসে বসে। মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। লুকিয়ে লুকিয়ে মাকে দেখে। মা এটা করে ওটা করে। কোন কাজ না থাকলে দাওয়ার খুঁটি ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। পিছন থেকে পাশ থেকে মাকে তখন চেনাই যায় না। ঢ্যাঙা রোগা চেহারার মাকে পেত্নীর মতো দেখায়। শিরাওঠা কিলবিলে হাত পা। পেটটা ঝুড়ির মতো উঁচু। কুশীর মন খারাপ হয়ে যায়। বাবা কেন মাকে মারে। পেট পুরে ভাত খেয়ে বাবা আরাম করে বিড়ি ধরালে মা কেন ফিসফিস করে আপন মনে বলে, গুরুঠাকুর নিজেরটি ষোল আনা বোঝে। রোঁয়া ওঠা বেড়াল, এবার ছোঁক ছোঁক শুরু হবে।

বাবা যখন ডিউটিতে যায়, রাতের বেলায় গলা অব্দি মদ গিলে গোঁজ হয়ে বাড়ি ঢোকে। অর্ধেকদিন খেতে বসে ভাত নিয়ে নাড়াচাড়া করে। ভাতের থালা ছুঁড়ে ফেলে দেয় উঠোনে। মা দু এক কথা বললেই হাতের সামনে যা পায় তাই নিয়ে তেড়ে যায় মায়ের দিকে। একদিন ঘুমন্ত ভাইকে বিছানা থেকে তুলে মেরেছিল বাবা। এমনি এমনি। মা তখন ভাইকে কোলে তুলে নিয়ে নিজের বুক ভাইয়ের মুখে চেপে ধরেছিল। কুশী দেখেছিল দাওয়া থেকে বাবা হাঁ করে মায়ের বুকের দিকে তাকিয়েছিল। সেই অবস্থাতেই মা বুকের কাপড় ঢাকা না দিয়েই বাবার দিকে তেড়ে গেছিল, কাছে আসার চেষ্টা করবে না। ঘাড় মটকে দোব। তারপরেও বাবা ওইভাবেই তাকিয়েছিল। সেদিন মাঝরাতে হঠাৎ কুশীর ঘুম ভেঙে গেছিল মায়ের কান্নার শব্দে। মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। কুশী স্পষ্ট দেখেছিল বাবা বিছানায় শুয়ে বিড়ি খাচ্ছে। মা পাশ ফিরে শুয়ে কাঁদছে। ভয়ে কাঠ হয়ে জেগে শুয়ে থাকতে থাকতে কুশী একসময় আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল। পরদিন সকাল হতেই বাবা যথারীতি কাজে গেছিল। মা ঘরের কাজ করছিল। বোঝাই যাচ্ছিল না, আগের দিন রাতে বাড়িটার চেহারা অন্যরকম ছিল।

কিন্তু আজ যদি সুধাময় কুশীকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়! দুপুরে রান্না না হয়! বাবা চিৎকার চেঁচামেচি করেও ভাত না পায়! ছোট ভাইবোন দুটো স্কুল থেকে ফিরে খিদের জ্বালায় কাঁদতে শুরু করে ঘ্যানঘ্যান করে! মা হয়ত তখন দাওয়ার খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে চুপ করে। অঞ্জু সেপু কদমের মা দুপুরের এঁটো থালাবাসন মাজবে ব্যারাক বাড়ির পুকুরে। কলবল করে কথা বলবে। থেকে থেকেই কুশীকে ডাকবে, আয়রে কুশী। এখনও হোল না? হি হি করে হাসবে, কত খাচ্ছিস রে?

কুশীর দুচোখ জলে ভরে উঠল। ধরা গলায় সুধাময়কে ডাকল, কাকা? সুধাময় মাথা তুলে তাকাল, তুই এখনও...?

  • আমি তো অনেকক্ষণ এয়িচি। কুশীর কথাগুলো কান্নায় জড়িয়ে যাচ্ছিল, কখন থেকে দাঁইড়ে রইচি।

সুধাময় অল্পক্ষণ কুশীর মুখের পানে অপলক তাকিয়ে রইল। তারপর হাতের কলম পাশে নামেয়ে রেখে এদিক ওদিক তাকাল, 'এঁড়ে বাছুর' এদিকে শোন। ছোট কর্মচারীটি মালিকের কাছে এগিয়ে এল। সুধাময় লম্বা হাতে তার কান নিজের মুখের কাছে টেনে এনে ফিসফিস করে কিছু বলল। কর্মচারীটি কুশীর হাতের ব্যাগ ফাঁক করে ক-হাতা চাল ঢেলে দিল। শিশির মধ্যে সুরুৎ করে সরষের তেল খানিকটা। তোবড়ানো কৌটোয় এক খাবলা গুড়। মশলাপাতির কথা বলতে যাচ্ছিল কুশী, সুধাময় হাত নেড়ে বলল, এখন যা। দোকানে ঝাঁট পড়বে।

হতভম্ভ কুশী আস্তে আস্তে পিছন ফিরল। চাল তেল গুড় পাওয়া গেছে। বে-ওজনে। মশলাপাতি মিলবে না। সুধাময় সত্যি সত্যি দোকান বন্ধ করবে। মেঝেতে ঝাঁটার আওয়াজ খরর-খর। কুশী দোকানের ধাপি ছেড়ে নিচে নেমেছে, সুধাময় ডাকল, কুশী মনে আছে তো ? একটু থেমে বলল, বাবাকে কী বলবি, মনে আছে?

কুশী পিছন না ফিরেই মাথা নাড়ল, হ্যাঁ।

(দুই)

অন্যদিন সুধাময়ের দোকান থেকে যে পথে বাড়ি ফেরে কুশী, আজ সে পথ মাড়াল না। সরু গলি দিয়ে, মিত্তির বাড়ির ভাঙা পাঁচিলের গা ঘেঁষে, এঁদো পুকুরের পার ধরে কুশী ফিরতে লাগল। চলন রাস্তায় কত লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। বলা যায়, তাদের মধ্যে ব্রিকেটের ছেলেটি, ব্যারাক বাড়ির মালিক, সুখেন মাস্টার, এরা কেউ থাকবে না! কুশীকে কাছে ডেকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে, 'মনে থাকবে, বাবাকে কী বলবি', এমন কথা বলবে না!

এদিক ওদিক চেয়ে সাবধানে হাঁটছিল কুশী। চেনা ছাগল ছানার সঙ্গে দেখা হল। অন্যদিনের মতো কুশী তার গলা জড়িয়ে আদর করল না। পুকুর পারে ডানায় মুখ গুঁজে রোদ পোয়াচ্ছিল একপাল হাঁস। কুশী হুশ হুশ আওয়াজ করে তাড়া দিয়ে হাঁসের দলকে জলে নামিয়ে দিল না। ঝাঁকড়া চুলের একটি ছেলের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে গল্প করছিল মেরুন শাড়ি পরা একটি মেয়ে। কুশী ঘাড় ফিরিয়ে দেখলই না, ছেলেটি কে, মেয়েটি কাদের বাড়ির। কুশীর মুখটা থমথম করছে। ছোট কপালে দুটি তিনটি সরু সরু ঢেউ। বাড়ি গিয়ে বাবাকে কী বলবে? সুধাময়ের ধারবাকি বাবা শোধ করবে কী করে? কতদিন বাবা ডিউটিতে যায় না। দিনরাত শুয়ে থাকে আর শব্দ করে কাশে। বাবাকে মরণ রোগে ধরেছে। আজ সকালেও কুশী লক্ষ্য করেছে, মায়ের হাত-পাগুলো সাপের মতো কিলবিলে, পেটটা উঁচু ঝুড়ি।

চুপচাপ পথ চলতে চলতে কুশীর এক এক করে মনে পড়তে লাগল, ছাদের টালি ভেঙে গেছে। বৃষ্টি হলে ঘর ভেসে যায়। পাশ ফিরে কিছু দেখতে হলে বাবাকে পুরো শরীরটা ঘেরাতে হয়। ঘাড়ের চামড়া ফুঁড়ে হাড়ের গিঁট দেখা যায়। ঠিক যেন তেঁতুল বিচির লম্বা একটা সারি। রাত বিরেতে বাথরুম করতে গেলে মাকে ডাকতে হয়। দরমার ফোঁকর দিয়ে কারা যেন চেয়ে থাকে।

সুধাময় বলল, দুঃসময় যাচ্ছে রে কুশী।

দুঃসময় মানে তো খারাপ সময়। কুশী বোঝদারের মতো নিজের মনেই বলল, তাহলে তো আমাদেরও দুঃসময় যাচ্ছে।

দাওয়ায় পা রাখা মাত্রই মা তেড়ে এল, কখন গেছিস? কোথায় ছিলি এতক্ষণ?

কুশী চুপ করে রইল। চালের ব্যাগ নামিয় রাখল। তেলের শিশি, গুড়ের কৌটো।

বাবা কাশতে শুরু করল খকর খক। কুশী তাড়াতাড়ি এক গ্লাস জল নিয়ে বাবার পাশে বসে মাথায় পিঠে হাত বুলোতে লাগল। কাশি থামলে বাবা শুয়ে পড়ল।

মা ডাকল, কুশী উনুনটা ধরিয়ে ফেল।

কাঠকুটো জড়ো করে কুশী উনুন ধরাতে বসল।

ঘরঘরে গলায় বাবা বলল, বিকেলে একবার মোহনের বাড়ি যাস তো কুশী। গেট মিটিং-এর কোন খবর আছে কিনা জেনে আসবি।

কুশী রাজুর মায়ের থেকে একটু হলুদ চেয়ে আন।

কুশী এদিকে একবার। কুশী এখানে একবার। ... কুশী ...।

সদ্য ধরা উনুনে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তার সামনে চুপ করে বসে আছে কুশী। সে বেশ বুঝতে পারছে, কাল পরশু তার পরের দিন, কোন সময়েই এ বাড়ির চেহারা, এ বাড়ির মানুষজন কিছুই বদলাবে না।

তার বাবা ডাকছে। মা ডাকছে। কাজের জন্য বাড়ির সবাই তাকে ডাকছে। কারোর ডাকের জবাবে সে কিন্তু 'পারব না' বলতে পারছে না।

0 Comments

Post Comment