এখন বললে কেউ কানে তোলে, কেউবা হেসে উড়িয়ে দেয়। সাপখোপ আজকাল মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তাছাড়া জলজঙ্গল কোথায় যে সাপ বসত গড়বে ! প্রাচীন ট্যাবুগুলো এখন সময়ের সঙ্গে এমনিতেই ভেসে যাচ্ছে।
রাবেয়া বেগমের পায়ের কাছে বসে ছোট্ট রুম্পি গল্পের বই পড়ছে আর ছুটে ছুটে যাচ্ছে বারান্দার জানালায়। মাঝে মাঝে সমবেত সুর ভেসে আসছে,
“ঘর বানাইও বিশ্বকর্মা
আমার নিষেধ নাই
কিন্তু লখার বাসরঘরে একখান
ছেন্দা রাখন চাই।”
পুজো শেষে এদের কেউ কেউ রুম্পিদের বাসায় আসে। লাল মাটির নতুন সরায় রুম্পির মার রেখে দেওয়া দুধ ওরাই বাগানের কোনো না কোনো গর্তে ঢেলে দেয়। পূজোর দিন বলে রুম্পির মা এদের চা নাস্তা খেতে অনুরোধ করেনা। ওরা ঘুরে ঘুরে রুম্পিদের বাগান দেখে। গাছে গাছে অসংখ্য ফোটা ফুল দেখে উচ্ছ্রসিত হয়ে ওঠে। কেউ কেউ লাল নীল নকশা পেড়ে আঁচল ভরে ফুল নিয়ে যায়। ওরা যাতে আরো বেশি করে ফুল নিতে পারে সে জন্যে মাঝে মাঝে রুম্পির আম্মু বা রুম্পি ডাল নুইয়ে ধরে। কিন্তু কখনও নিজের হাতে ফুল পেড়ে দেয় না। পুজোর ফুল যে ! এই ফুল ওদের ছুঁতে নেই সে কথা মুসলমান পাড়ার সবাই জানে এবং সম্মানের সঙ্গে স্পর্শ থেকে দূরে থাকে।
২
বাংলাদেশের সর্বত্র জাত বেজাত, ধর্ম বর্ণ কুল নির্বিশেষে হিন্দু মুসলিম, ক্রিশ্চান বৌদ্ধ সকলেই একসময় মনসাদেবীকে খুশি রাখতে তৎপর ছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জলজোলো, ঝোপঝাড় ছোট বড় নানান গাছগাছড়া, নদীনালা হাওর বাওর খাল বিল ঘেরা এই অঞ্চল ছিল সাপ খোপের অভয়ারণ্য। দিনের বেলাতেও যেখানে সেখানে সাপ দেখা যেত। গল্প সত্য, হাওড় খ্যাত বর্ণি গ্রামের এক নতুন বউ, দেওয়ালে ঝুলন্ত দড়ি ভেবে সাপের লেজ টেনে মশারি বাঁধতে গিয়ে ভির্মি খেয়ে দুই দিন জ্বরে ভুগেছিল। এ সব অঞ্চলে সন্ধ্যা হলেই কেউ আর তেনাদের নাম ধরে ডাকত না। সবাই বলত, লতা লতা। জোড় বা বেজোড় লতা কিম্বা একলা লতা। প্রাচীনাদের কেউ কেউ বলত জঙ্গুলি। তা উনাদের ছোবল থেকে রক্ষা পেতে সারা বছর ঘরে ঘরে ওঝা বৈদ্য, মোল্লা মুরশিদদের তাবিজ কবচ, ঘরবাড়ি, আগান বাগান, আদাড়পাদাড় বন্ধন রাখতে ঝাড় ফুঁকের সাথে সঙ্গে কার্বলিক এসিডের মচ্ছব লেগেই থাকত।
শ্রাবণ সংক্রান্তিতে মনসা পুজোর কোন খামতি থাকত না। তায় এ অঞ্চলে নমঃশূদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। আর মনসা তো এ বাঙ্গলারই মেয়ে। মাজা রঙ, উজ্জ্বল কাকচোখ। গহন কালো জলের মত এক মাথা ঘন লম্বা চুল। কোন রকমের অন্ধি সন্ধি ফন্দি টন্দির ধার ধারত না তেমন। যা বলত সটান সামনা সামনি বলে দিত। সোজাসাপ্টা হিসেবে বুঝে নিতে চাইত যতটুকু মনসার প্রাপ্য কেবল সেটুকু। অবশ্য প্রয়োজন পড়লে সোজা আঙ্গুল বর্শির চাইতে বেশী বাঁকা করতে পারত মনসা। তাই তো জন্মদাতা শিবকেও ছাড়েনি ও মেয়ে। শিরদাঁড়া সোজা করে জানতে চেয়েছে, ও বাপ, তোমার অন্য মেয়েরা দেবী হলে আমি তবে কি বাবা ? আমিও তো তোমার মেয়ে। তাহলে ? আমার কি অপরাধ ! আমিও লক্ষ্মীদি, সরস্বতী দিদির মতো দেবী হতে চাই। নট ছাড়ানছোড়ন। দাও দেবীত্ব।
দেবাদিদেব দেখেন মহাবিপদ। এ মেয়ে তো এর মায়ের দিকে যায়নি। বরং বাপ কা বেটি হয়েছে !
শিবকে দোনামোনা করতে দেখে বাপের হাত জড়িয়ে ধরেছে মনসা, ও বাবা ওরম ভড়কাচ্ছ কেন গো ! এই যে হলাহল বিষ শুষে তোমাকে বাঁচিয়ে তুললাম সে তো তোমার মেয়ে বলেই পারলাম। তবে ? আমিও ত তোমাকে ভালোবাসি বাবা। এখন ভড়কালে কিন্তু চলবে নাকো পিতা। দেবীত্ব আমাকে দিতেই হবে।
দেবাদিদেব চমকে ওঠেছিলেন তার অনাদৃতা এই কন্যা সন্তানের দাবীর জোর দেখে। হয়ত তার রুদ্র মনের কোথাও জেদি মেয়েটির জন্য তানিক মায়াও উছলে উঠেছিল।
কিন্তু স্বর্গসভায় দেবতাদের মুখ ভার হয়ে যায়। বিমাতা চণ্ডী তো প্রথম থেকেই বিমুখ ছিলেন। ছিলেন বিরক্ত। স্বামীর সঙ্গে কৈলাসধামে মনসাকে দেখে মহাদেবের উপপত্নী ভেবে ভুল বুঝেছিলেন। রাগে দুঃখে মনসার উপর ঝাঁটার বাড়ি মেরে এমন গার্হস্থ্য নির্যাতন করেছিলেন যার ফলে মনসার একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছিল। পরে সৎ মেয়ে জানার পরেও মনসার উপর থেকে চন্ডীর রাগ কমেনি। বরং ছিল অসূয়া জরজর। কিন্তু মনসাও নাছোড়, একগুঁয়ে। যতই তাকে কানি বলে উপহাস করা হোক না কেন, দেবীত্ব তাকে দিতেই হবে। দেবতাদের পার্সিয়ালিটি মানিনা। মানব না। তাই না দেবতা কুলে মনসাকে নিয়ে এত হ্যাঁটা ঘেন্না। ছোট জাতের মেয়ে বলে দূর দূর হেঁইয়ো ধুচ্ছাই বলে কায়দা করে পাতালপুরীতে ফেলে দেওয়া !
৩
কেনো কেনো ? রুম্পি চেপে ধরে ওর গৃহশিক্ষক বরুণ মাষ্টারকে।
বরুণ মাষ্টার গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, তুই কি আর বুঝবি মা ! বড় হলে বুঝতে পারবি, এ সব কিছু হচ্ছে বর্ণবাদ আর ছোট জাত নীচু জাতের খেলা। ক্ষমতার গুটি চালানো যাদের অভ্যস তারা কি অন্যকে মেনে নেয়, না ক্ষমতার ভাগ দেয় ! তবে শিরদাঁড়া আছে আমাদের মনসার। সরাসরি লড়াই দিয়ে দেবীত্বের মানসন্মান আদায় করে তবেই ছেড়েছে তাই না বড়ভাবী ?
রুম্পির মা মাথা নাড়ে, তাই তো করা উচিত। মানুষের আবার জাত বেজাত কি !
বরুণ চাচার বুকের কোথাও বেদনার সুর জেগে ওঠে। আজও অনেক হিন্দু বাড়ির ভেতর মহলে তার প্রবেশ নিষেধ। বিশেষ করে কিছু ব্রাম্মণ বাড়িতে। কি করে যেনো সবাই জেনে গেছে নীচু জাতের হিন্দু থেকে খৃষ্টান হয়ে আজ সে ইস্কুল মাষ্টার বরুণ গোমেজ হয়েছে।
এ শহরে আর কোন ভালো গানের মাষ্টার নেই। অথচ বিয়ের সম্বন্ধ করতে গেলে পাত্র পক্ষ প্রথমেই জানতে চায়, মেয়ে গান গাইতে পারে কিনা ! দু একখানা ঠাকুর দেবতার গানের সঙ্গে রবীন্দ্র নজরুল আধুনিক বা ছায়াছবির হিট গান শুনতে চায় পাত্র পক্ষের রসিক জামাইবাবু, পিসেমশাই বা মেশোঠাকুর। অগত্যা বরুণকেই ডাকতে হয়। বরুণই ভরসা। তবে বরুণ মাষ্টারকে বাড়িতে ঢুকতে দিলেও ছোঁয়াছুঁয়িটা বাঁচিয়ে চলে। এসব বাড়ীতে বরুণের জন্য আলাদা আসন, আলাদা কাপ পিরিচে চা নাস্তা এবং আলাদা গ্লাসে জল দেওয়া হয়। বরুণ চলে যাওয়ার পরে সেগুলো আবার তোলা হয় না। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কলতলার জালিঘরে রেখে দেয় বাড়ির কাজের লোকেরা। পরদিন হেনাতেনা করে ধুয়ে আবার খাবার দেয়। তাই দেখে আইবুড়ো বরুণ গোমেজ নিদারুণ কষ্ট পায় আর সব কষ্ট রাতদুপুরে সুরে সুরে ঢেলে দেয় ক্রুশবিদ্ধ পাথুরে যিশুর পায়ের কাছে। স্বজন পীড়নে দুজনেই ত আহত, ক্ষতাক্ত এবং রক্তাক্ত।দুজনেরই রক্ত ঝরেছে। প্রভু যিশুর রক্ত দেখা গেলেও মানুষ বরুণের রক্তাক্ত হৃদয় বাইরে থেকে দেখা যায় না।
তা মনুষ্যকূল এই সব জাত বেজাত, উঁচু নীচুর মান্যতা এবং অসাম্যে বিশ্বাসী হলেও, মনসার বংশধররা আবার কট্টর সাম্যবাদী। ধর্ম অধর্ম, ধনী নির্ধন, নারী পুরুষ, কালো ফর্সা, উঁচু নীচু জাত বিচার নিয়ে মাথা ব্যাথা করতে এদের ভারি বয়ে গেছে। কিন্তু সন্মানে আঘাত পড়লেই, ‘দেব-মূর্তি এড়িয়া কন্যা নাগ-মূর্তি ধরে’-- তখন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে লেজ ঝাপটে বডি খেলিয়ে ফোঁস করে মেরে দেয়, হিসস্স কুট্টুস। তারপর বোঝো মানুষ ! বিষের জ্বালার কেমন জ্বলন। মর কি বাঁচো তাতে বয়েই গেছে পন্নগকূলের।
৪
এখন দুপুর। রাবেয়া বেগমের হাতে আপাতত সংসারের কোনো কাজ জমে নেই। বেতের মোড়ায় বসে তিনি তাকিয়ে আছেন মন্দিরের দিকে। আজ তার গল্পের বই পড়ার নেশা টুটে গেছে। একমাত্র ননদ মমতা এসেছিল নিজের হাতে বানানো ক্রশ কাঁটার একটি টেবিল ক্লথ নিয়ে। পুরনো বেতের গোল টেবিলটি ঝকঝক করছে মমতার উপহার দেওয়া নতুন টেবিল ক্লথে। কিন্তু রাবেয়া বেগম মমতার বলে যাওয়া কথাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। বাঙ্গালী আচরণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে আরবীয় ঐতিহ্যের দ্বন্দ্ব হওয়াটা তো খুবই স্বাভাবিক। জাতি হিসেবে ওরা আরবীয়। রুক্ষ শুষ্ক মরুর ধূলি, বালি, লু ঝড়, আবহাওয়ার দিন ও রাতের ভয়াবহ পার্থক্য, অসংখ্য বৃক্ষহীন হুহু শুষ্ক জলবায়ু, নানাবিধ গোত্র আর নারী স্বাধীনতা বিহীন আরব দেশে শুধুমাত্র নবীজি জন্মেছিলেন বলে বাঙ্গালী মুসলিমদের আরবীয় হতে হবে কেন? কেন মেনে নিতে হবে আরবীয় সংস্কৃ্তিকে ? আরবীয় সংস্কৃতি মানেই কি ইসলামী সংস্কৃতি ? আরবে ত নানা গোত্র, ধর্মের জাতি উপজাতি বেদুঈন রয়েছে। তারাও তাদের নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতিকে পালন করে। নবীজী তো কখনও এ কথা বলে যাননি, বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমকে আরবের সংস্কৃতি মেনে চলতে হবে ? বরং তিনি মাতৃভূমির স্বাধীনতার কথা বলে গেছেন। স্বাধীনতা মানেই একটি জাতির নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাষা সংস্কৃতিকে রক্ষা করে সেই জাতিকে উজ্জীবিত করা। ইসলামের ইতিহাসে আছে, মদিনায় থেকে তিনি তার স্বদেশ মক্কার প্রতি মায়ের টান অনুভব করতেন। সুদুর মক্কার দিকে তাকিয়ে তিনি তার জন্মভূমির কথা ভেবে আকুল হতেন। অথচ মমতাদের কথা শুনে মনে হল বাঙ্গালীদের আরবীয়দের মতো করে ভাবতে হবে। তাদের স্বপ্নের ভেতরে থাকবে ধূধূ বালুরাশি, উটের রবধ্বনি, খেজুরপাতার মর্মর আর কোন বেদুঈনের রবাব বা দারবুকা ঢোলের মৃদু তাল? বাঙ্গালী জাতীয়তা বলে কিছু থাকবে না ? বাঙ্গালী সংস্কৃতির গান, নাচ, কবিতা, যাপিত জীবনে বাঙ্গালীয়ানা সব বাদ দিয়ে বদলে ফেলতে হবে আরবীয় সংস্কৃতিতে ? বাঙ্গালীর সবকিছু হতে হবে আরবীয় নিয়মে ! এ আবার কেমন রীতিনীতি ! এমন উৎকট ধর্মোউন্মাদনা তিনি পছন্দ করেন না। শাশ্বত বাঙ্গালী জীবনে তিনি স্বচ্ছন্দ অনুভব করেন তাতেই তার যাবতীয় সুখ।
তিনি শুনেছেন মমতার চেয়ারম্যান শ্বশুর সাহেব যুবককালে বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের বিপক্ষে চরম ভূমিকা নিয়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও মমতার শ্বশুর ছিল নিষ্ক্রিয়। কারণ তার বড় ছেলে, মমতার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেবে বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে বন্ধুদের নিয়ে ভারতের পথে রওনা হয়ে গেছিল। পাকিস্তানী বাহিনী এ অঞ্চলে এসেই এলাকার চেয়ারম্যানদের ডেকে আওয়ামী লীগ আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের ধরে আনতে মিটিং করেছে। মমতার শ্বশুর ছেলের কথা কিছুদিন লুকিয়ে রাখতে পারলেও কেউ না কেউ পাকিস্তানী আর্মির কাছে কানকুটনী করে দিয়েছিল। ব্যস, এক সন্ধ্যায় মমতার শ্বশুরের সঙ্গে তার কিশোর বয়েসি মেজো ছেলেকে ধরে এনে জেলে পুরে পাকিস্তানী কমান্ডার বলেছিল, তোমার বড় ছেলেকে এনে দাও, তোমাদের ছেড়ে দেব। জান কা বদলা জান। আল্লাহ মেহেরবান।
শেষ পর্যন্ত মমতার স্বামীর আর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠা হয়নি।
৫
ব্যক্তিগতভাবে রুম্পির মা উর্দু ভাষাকে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং মিঠি ভাষা হিসেবেই স্বীকার করে। কিন্তু মুসলমান বলে সবাই উর্দুতে কথা বলবে তা কি করে হয় ! একেকটি দেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে লালন পালন এবং ধারণ করে। দেবে আর নিবে, মেলাবে মিলিবে – সে তো আকছার হয়েই চলেছে। বাংলা ভাষা নিজেও তো মিশ্র ভাষা। বাংলা সংস্কৃতি সে তো সকল বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এক। যেমন পয়লা বৈশাখ। কিন্তু এদিন হিন্দুরা পূজা করে বলে মুসলমানদের কাছে পয়লা বৈশাখ শিরক্ হয়ে যাবে তাই মুসলমানদের পয়লা বৈশাখ পালন করা উচিত নয় -- এভাবে দেগে দেওয়াও তো ঠিক নয়।
কিন্তু আজ মমতা এবং মমতার মত কয়েকজন মহিলা পাড়ায় পাড়ায় অনেকগুলো বাড়ীতে গিয়ে জোর গলায় ষড়যন্ত্রের সুরে বলে এসেছে, মুসলমানদের মনসাকে দুধ দেওয়া হারাম তো হারাম—এটা করার অর্থ শিরক্ করা। এতে গুনাহ্ বা পাপ হবে। এই পাপের আজাব বা শাস্তি হিসেবে তাদের অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পোড়ানো হবে। বংশধররাও রেহাই পাবে না। তারাও অনন্ত আগুনে পু্ড়তে থাকবে।পরম মৃত্যু লাভের বদলে তারা পরলোকে কেবলই জ্বলবে, পুড়বে, কাঁদবে, চেঁচাবে। এ পোড়ার কোন শেষ হবে না। চৌদ্দ পুরুষ ধরে এই শাস্তির আগুন টানতে হবে। তাই সাবধান।
রাবেয়া বেগম ভাবেন, মানুষ বড় আশ্চর্য জীব। এই মমতাই ওর ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে এক হিন্দু কবিরাজের কাছে ছুটে গেছিল। হিন্দু গুণিনের দেওয়া রূপার তাবিজ, মুসলিম গুণিনের কাছ থেকে আনা রূপার তাবিজের সঙ্গে এখনও মমতার ছেলের হাতে কোমরে বাঁধা রয়েছে।
রুম্পির আব্বু ঠিক বলে, পৃথিবীতে শান্তি আনবে বলে যে ধর্মগুলো এসেছিল তারা এখন কিছু মানুষের উগ্র মানসিকতার জন্য হিংসার ধর্মে পরিণত হচ্ছে। যখন কোন ধর্ম মানবতাহীন ক্ষমতালিপ্সু খুনি চরিত্রে ঢুকে পড়ে তখন সে আর ধর্ম থাকে না। অধর্মের চূড়ান্ত করে মানুষ, আপনপর, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে শত্রু জ্ঞান করে কেবল নিজের জয় বজায় রাখতে চায়। এ জন্যেই স্বজনের রক্তে সিক্ত হয়ে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিল, এ কারণেই কারবালার প্রান্তর আর ফোরাতের পানি আপনজনের রক্তে লাল হয়ে গেছিল। প্রতিবেশীর বন্ধুতা আর মানবতাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ক্রুসেড চলেছিল এই ক্ষমতা চর্চ্চারই উদ্বাহু অসীম লোভে।
রুম্পির আম্মু জানে, মমতা একা নয়। বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে ধর্মীয় শকুনদের ঝাপটা শোনা যাচ্ছে। রুম্পিরা কি পারবে এই অস্থির সময়ের মুখোমুখি লড়তে !
--------------------------------