পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কাফেরের বাপ

  • 21 July, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 645 view(s)
  • লিখেছেন : নী হা রু ল ই স লা ম
গিয়াসসাহেব ইফতার সেরে সবে মাগরিবের নামাজে দাড়িয়েছেন, দুঃসংবাদটা তখনই এল। এমন একটা সংবাদ যে আসবে তা তিনি আগে থাকতেই জানতেন। তাই নামাজ থেকে আর সরে দাঁড়ালেন না। ছোট ছেলে রেহানের হাতে মোবাইল ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে খোদার কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেন। দিনরাত মিলিয়ে রোজ যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সমর্পণ করে আসছেন, তেমনি। যদিও আজ পর্যন্ত খোদার কাছে নিজের জন্যে কখনও কিছু চান না।

কিন্তু আজ এই মাগরিবের ওয়াক্তে কিছু চাইবেন। বড় ছেলে সুভানের জন্যে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবেন। বহরমপুর হাসপাতালে সদ্য যার মৃত্যু হয়েছে। যে সংবাদ ছোট ছেলে রেহানের মোবাইল ফোন মারফৎ এখনই এসে পৌঁছাল তাঁর কাছে।

ছোট ছেলে রেহান লেখাপড়া করে শিক্ষক হলেও বড় ছেলে সুভান সেই ছাত্র-জীবনে বাড়ি ছেড়েছিল। স্কুল-বোর্ডিঙে থেকে পড়াশুনা। তারপর কলেজ পাশ না দিয়ে একটা মেডিক্যাল ডিপ্লোমা যোগাড় করে লালগোলা টাউনে কোয়াক ডাক্তার হয়ে বসেছিল। খুব হাতযশ হয়েছিল। পাশ করা ডাক্তারদের থেকে বেশি পশার জমেছিল তার। সেই থেকে টাউনেই প্রথমে ভাড়াবাড়ি তারপর জায়গা কিনে নিজের বাড়ি করে সংসার নিয়ে বসবাস।

সেই বড় ছেলেকে নিয়ে খুব গর্বিত হয়েছিলেন গিয়াসসাহেবের। কিন্তু তকদীরের খেল! নিজের পছন্দে কাফের বন্ধুর ছেলের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল সেই ছেলে। সন্তানের এমন সাফল্যে যে কোনও পিতার গর্বিত হওয়ার কথা, কিন্তু গিয়াসসাহেব শেষপর্যন্ত গর্বিত থাকতে পারেননি। ছেলে তাঁর নাস্তিক হয়ে গিয়েছিল। আল্লাকে মানত না। নামাজ-রোজা করত না। চালচলন ছিল একেবারে কাফেরদের মতো। টাউনে কাফেরদের সঙ্গেই যে ছিল তার ওঠবোস। কেউ নামাজ-রোজার কথা বললে নাকি বলত, ‘নামাজ-রোজা করে নেকি কামিয়ে খোদাকে বিপাকে ফেলতে পারব না ভাই। খোদা তো আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে!’

‘তুমি কোথায় যাবে তাহলে?’

‘কেন, জাহান্নামে!’

‘জানলে কী করে?’

‘এটা আবার জানার কী আছে? নামাজ পড়ি না-রোজা রাখি না। এরপর জান্নাতের আশা করি কী করে?’

এই কারণেই বোধহয় যে বাড়িতে ছোঁড়া জন্মেছিল তার মৃত্যুসংবাদ এসে পৌঁছালেও সেই বাড়িতে কান্নার রোল নেই। অবশ্য কাঁদবে তেমন লোকই বা কোথায় এই বাড়িতে? সুভানের মা জামিলা বেগম সেই কবে জান্নাতবাসী হয়েছে। এক বোন বিবাহিত। সে তার ঘর-সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছোট ভাই আছে। তার বউ আছে। তাদের বাল-বাচ্চারাও আছে। কিন্তু তারাও সব কেমন চুপচাপ। ঠিক বাড়িটার মতোই। সবকিছু কেমন নিঝুম মেরে পড়ে আছে! অথচ সুভানের জন্মের সময় এই বাড়িতেই সে কী কোলাহল উঠেছিল! বিশেষ করে আস্মোতারা খালা, সে-ই চিৎকার করে করে ‘সুভানাল্লা- গিয়াসভায়ের বেটা হয়্যাছে কী সুন্দর!’, ‘সুভানাল্লা- গিয়াসভায়ের বেটা হয়্যাছে কী সুন্দর!’, ‘সুভানাল্লা- গিয়াসভায়ের বেটা হয়্যাছে কী সুন্দর!’ বলে গোটা গ্রামে ঢোল পিটিয়েছিল। সেই কারণে রীতিমতো গ্রামবাসীকে খানা খাওয়াতে হয়েছিল। শুধু কি তাই, গরু জভাই করে আকিকাও দিতে হয়েছিল পর্যন্ত। এ হেন সন্তানকে একদিন ত্যাজ্য করেছিলেন গিয়াসসাহেব। গ্রামবাসীর চাপে - সমাজের চাপে ত্যাজ্য করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ছেলেকে নিয়ে পরিচিত অপরিচিত মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছিলেন না আর!

 ‘গিয়াসভাই- আপনার ডাক্তারবেটাটো এমুন কেনি হুন গেল জী? একেবারে জাইতবাহির! নামাজ পড়হে না – রোজাও রাখে না, কিছু বুলতে গেলে আবার মুসলমানকেই গাইল পাড়ে!’

‘আচ্ছা বুলেন তো গিয়াসভাই- কত দূরদূরান্ত থেকি মানুষ ইদবকরীদের দিন নামাজ পড়হিতে গাঁয়ে আসে, তা কই- আপনার ডাক্তারবেটাটোকে তো কুনুদিন দেখতে পাই না!’

‘গিয়াসভাই- আপনার বেটা নাকি মাদ্রাসা-মহজিদের উন্নতিকল্পে চাঁদা দেয় না? আবার টাউনে হিন্দুদের পূজার চাঁদা নিজে থেকেই দিয়ে আসে! নিজের বাড়ির দূয়ারে পর্যন্ত পূজার প্যান্ডেল করে পূজা করে!’

এরকম আরও অনেক কথা - অনেক প্রশ্ন, যার কোনও উত্তর ছিল না গিয়াসসাহেবের কাছে। উত্তর থাকবে কী করে, লোকে যা বলত সবটাই ছিল সত্যি। হিন্দুপাড়ায় বাড়ি করেছিল। সেই পাড়ার পূজা কমিটির সভাপতিও ছিল সে। চাঁদার রশিদে তার নাম ছাপা থাকত। গিয়াসসাহেব নিজেও জানতেন এসব। অগত্যা তাঁকে চুপ করে থাকতে হয়েছে। তা দেখে সামনাসামনি না হলেও আড়ালে লোকে তাঁকেও যা খুশি বলত। সেটা তিনি টের পেতেন। তবু চুপ করে থাকতেন। নিশ্চয় ছেলে একদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবং খোদার ওপর ঈমান আনবে! এমন বিশ্বাস ছিল তাঁর। কিন্তু যেদিন সেই ছেলে ধুমধাম করে নিজের মেয়ের বিয়ে দিল তার এক কাফের বন্ধুর ছেলের সঙ্গে, সেদিন আর চুপ থাকতে পারলেন না।

খবরটা কে যেন এসে দিয়েছিল, ‘গিয়াসভাই- শুননু নাকি আপনার ডাক্তারবেটা তার বিটির বিহা দিছে হিন্দু ঘরে!’

সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে গিয়ে দশের সামনে ছেলেকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় গ্রামের লোক তাজ্জ্বব বনে গিয়েছিল। যারা এতদিন সন্দেহ করত যে ছেলের সঙ্গে তাঁর ভিতর ভিতর সম্পর্ক ঠিকই আছে, তাদের সন্দেহও দূর হয়ে গিয়েছিল। আর সাচ্চা মুসলমান হিসাবে তাঁর নাম গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল।     

মাগরিবের নামাজে দাঁড়িয়ে খোদার কাছে তাই গিয়াসসাহেব জানতে চাইছেন, ছেলেকে ত্যাজ্য করলেও ছেলের লাশকে এখন ত্যাজ্য করবেন কী করে? ছেলে যোগ্যতা বলে না হয় বিশাল জায়গা কিনে বাড়ি করেছিল টাউনে। কিন্তু মরার পর নিজের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গার ব্যবস্থা করেনি। পিতা হয়ে এ নিয়ে অনেকবার সতর্ক করেছিলেন কিন্তু ছেলে কান করে নি। কিছু বললেই বলত, ‘ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না আব্বা। আমার লাশ পড়ে থাকবে না। পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগে ঠিক কেউ না কেউ কোথাও পুঁতে দেবে।’ কিন্তু তিনি বেঁচে থাকতে তাঁর সন্তানকে কে কোথায় পুঁতে দেবে? ভাবছেন গিয়াসসাহেব। নামাজে দাঁড়িয়ে খোদাকে সেকথাই জিজ্ঞেসও করছেন।

 

দুই

নামাজ শেষ করে গিয়াসসাহেব দেখলেন তাঁর বৈঠকবাড়ির আঙিনায় অনেক মানুষের ভিড়। সবার জিজ্ঞাসা, গিয়াসভাই- যা শুননু তা কি সত্যি?

  • হ্যাঁ ভাই সত্যি। তিন দিন আগে অসুস্থ হয়ে বহরমপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আজ সন্ধ্যায় মৃত্যু হয়েছে।
  • এখুন কী করবেন তাহলে?

কী করবেন? তাই তো! মোনাজাতে বসে খোদাকে এতক্ষণ সেকথায় জিজ্ঞেস করছিলেন। কিন্তু খোদার কাছ থেকে কোনও উত্তর পাননি। অগত্যা গ্রামবাসীদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনারাই বলেন তাহলে এখন আমি কী করবো?

তাই তো, গিয়াসসাহেবের মতো লোক কী করবে তা বলে দেবে গ্রামের মানুষ! যে লোকের কথায় এতদিন গ্রাম, গ্রামবাসী, সমাজ ওঠবোস করেছে, তাঁকেই আজ শুনতে হবে গ্রামের মানুষের কথা। কেউ কেউ ব্যাপারটা দেখে মজা পাচ্ছে। বিশেষ করে গিয়াসসাহেবকে যারা খুব একটা পছন্দ করে না।

হঠাৎ কান্নার রোল ওঠে বাড়ির ভেতরে। বড় মেয়ে আয়েষা কাঁদতে কাঁদতে এসে হাজির হয়েছে। পাশের গ্রামে তার বাড়ি। তার কান্নার দমকে বাড়ির ছোটবউ নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, সেও কেঁদে ওঠে। দেখাদেখি বাচ্চারাও। বাড়ির কাজের মেয়ে হাসিনাও বাদ যায় না। বৈঠকবাড়ির বারান্দায় ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে গিয়াসসাহেব সবকিছু টের পাচ্ছেন।

আশ্চর্য- এতক্ষণ দম বন্ধ করা আবহাওয়ায় বৈঠকবাড়ির আঙিনার পেয়ারা গাছে দমকা হাওয়া আছড়ে পড়ে। শুকনো পাতা ঝরে পড়ে। তার মধ্যেই গিয়াসসাহেব অপেক্ষা করছেন ভিড়ের মানুষের রায় শোনার জন্যে।

কেউ একজন বলে উঠল, সুভানের লাশ গাঁয়ে লিয়ে আসতে পারবেন না আপনি!

তার কথার রেশ ধরে আর একজন বলল, গাঁয়ের গোরস্থানে হামরা ওই কাফেরের লাশ দাফন করতে দিব না।

ওই দুজনের কথার প্রতিধ্বনি হয় আরও অনেকের কন্ঠে।

এতক্ষণ এই আশঙ্কায় করছিলেন গিয়াসসাহেব। তবু ভেবেছিলেন, কেউ হয়ত মুখ ফুটে কিছু বলবে না! কিন্তু সেটা যে হবে না, তাঁর বৈঠকবাড়ির আঙিনায় ভিড়ের মতিগতি দেখে সেটা বুঝতে পারছেন।

প্রথম যারা মুখ খুলে এমন কথা বলল, সন্ধ্যার এই আলো-অন্ধকারেও তাদেরকে চিনতে অসুবিধা হয় না গিয়াসসাহেবের। একজন গ্রামের নাশু মোড়লের বেটা জেনারুদ্দিন। বাংলাদেশে গরু পাচার করে আজকাল প্রচুর পয়সার মালিক হয়েছে। রমজান মাস পড়া অবধি ফকির-মিশকিনদের দেদার টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় বিলোচ্ছে। আর একজন গ্রামের গ্রামের পঞ্চায়েত মেম্বার খলিল। এখন গ্রামে এরাই সব। এদের কথাই সমাজের শেষ কথা।

এ হেন জেনার ও খলিলের কথায় ভিড়ে আর যারা ছিল তারাও একে একে নিজের মত জাহির করতে শুরু করেছে। তার মধ্যে হঠাৎ কেউ একজন বলে উঠল, গাঁয়ের ছেল্যার গোর গাঁয়ে হবে না তো কুন্ঠে হবে? কী যা তা সব বুলছো তুমরা?

  • কে বে ওটা! জেনারভায়ের কথার ওপর আবার কথা বুলছে?
  • হামি হে- হামি, তুমারঘের জেনারভায়ের বাপ!

সত্যিই জেনারের বাপ নাশু মোড়ল। সবাই দেখল তাকে। অদ্ভূত ব্যাপার দেখামাত্র সবাই চুপ মেরে গেল। হাজার হলেও জেনারভায়ের বাপ বলে কথা! কিন্তু গিয়াসসাহেব চমকে উঠলেন। হঠাৎ নাশু মোড়ল তার হয়ে কথা বলছে কেন? ব্যাপারটা কী?

গিয়াসসাহেবের মনে পড়ে নাশুর সঙ্গে তার সম্পর্ক কোনওদিন ভাল ছিল না। সেই ছাত্র অবস্থা থেকে। স্কুলে  পড়াশোনা থেকে স্বভাবচরিত্রে নাশুর চেয়ে তিনি অনেক এগিয়ে ছিলেন। তাছাড়াও পরিবারগত বিবাদ তো ছিলই, তার ওপর গ্রামে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নাশু কোনওদিন মেনে নেয়নি। বিশেষ করে ডাক্তার হয়ে বড় ছেলে সুভানের টাউনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া – ছোট ছেলের মাস্টার হওয়াটা ছিল নাশুর কাছে সবচেয়ে বড় পরাজয়।

তাহলে সুভানের মৃত্যুতে কি সে শান্তি পেয়েছে? আর সেই কারণেই কি সহানুভূতি দেখাতে এসেছে?

গিয়াসসাহেব কেমন বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। না, তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত আসতে চান না তিনি। তাই অপেক্ষা করেন। এর মধ্যেই শুনতে পান, সুভানের পাপ সুভানের বাপ বহিবে কেনে? গিয়াস শুনো ভাই- তুমি বেটার লাশ লিয়ে এসো গাঁয়ে। গোরও দাও। তবে নিজের জায়গায়। পবিত্র গোরস্থানে তো অর জায়গা হবে না। আর হ্যাঁ, জানাজা পড়াও চলবে না! বেটা তোমার কাফের ছিল। কিছু মুনে করিও না ভাই। হাদিস-কোরাণ বুলেও তো কিছু আছে! তা না মেনি কি কুনু উপায় আছে হামাদের?

নাশু মোড়লের কথা শেষ হতে না হতেই কেউ একজন বলে উঠল, গাঁয়ে ওই কাফেরের লাশ হামরা ঢুকতেই দিতুম না। নেহাতই নাশুচাছা ভালো মানুষ তাই আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে এই বিধান দিয়াছে। ভালোই ভালো সেই বিধান মেনি কাম করেন। না হলে বুঝতে পারবেন!

একথা যে বললে, তাকেও খুব ভাল করে চেনেন গিয়াসসাহেব। জয়নাল ঘরামির বেটা মুস্তাক। একসময় পরের বাড়িতে রাখালি করত। তারপর রাজমিস্ত্রীর কাম। এখন হেরোয়িনের কারবার করে দু-দু’খানা ইটভাটার মালিক। সেই সুবাদেই জেনারের দোস্ত হয়েছে। যাকে বলে একেবারে গলায় গলায় দোস্তি।

আর একজন বলে উঠল, গিয়াসসাহেব- আপনি মানুষটা ভালো, কিন্তু আপনার বেটা মুটেই ভালো মানুষ ছিল না। সে দ্বীন-ইসলামের কুনু কামই করেনি। সেটা আপনি যেমুন জানেন তেমনি জানে গোটা দুনিয়ার লোক। তাই আপনার কাছে আর্জি হাদিসকোরাণ মেনি নাশুচাছা যেটো বুলছে, লাশ এনি চটজলদি সেটোই করি ফেলেন। আর হ্যাঁ, আত্মীয়স্বজনদের খবর দিবার কুনু দরকার নাই। জানাজা যখুন হবে না খবর দিনই বা কী করবেন?

আরও অনেকেই কিছু না কিছু বলে চলে গেল। গিয়াসসাহেব নিজের বৈঠকবারান্দায় ঠাই দাঁড়িয়ে রইলেন। ততক্ষণে অন্ধকার ঘনিয়ে ধরেছে আঙিনার পেয়ারা গাছটিকে। কোথাও কোনও শব্দ নেই আর। বাড়ির ভেতরে এতক্ষণ যারা কাঁদছিল, তারাও কেমন চুপ মেরে গেছে। কিন্তু কাঁহাতক আর এমন চুপ করে থাকবে পৃথিবী। হঠাৎ বাড়ির ভেতরে কুরবানির খাসিটা চেঁচিয়ে উঠল। নিশ্চয় খাসিটা তাহলে এখনও আঙিনায় বাঁধা আছে। তাকে বলে আজ আর কারও খেয়াল নেই। গিয়াসসাহেব বুঝতে পারলেন, ভর সন্ধ্যায় আকস্মিক এসে পড়া সংবাদে বাড়িটা আজ হঠাৎ কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। সেবলে তিনি এলোমেলো হলে চলবে কী করে?

বারান্দা ছেড়ে নামলেন তিনি। বাড়ির ভেতরে গেলেন। খাসিটাকে আঙিনা থেকে খুলে ছাগলের ঘরে বেঁধে রেখে আবার এসে বসলেন বৈঠক বারান্দায় পাতা জায়নামাজে। এষার নামাজের সময় হয়ে এল বুঝি! তারপর আবার তারাবির নামাজ।

ততক্ষণে ছোট ছেলের বউ সাবিহা এসে দাঁড়িয়েছে পাশে, আব্বা- আপনার খাবার!

  • না বিটি, আমি কিছু খাবো না। এক গেলাস পানি দাও খালি!

সঙ্গে সঙ্গে সাবিহা এক গেলাস পানি এনে দেয়। তিনি সেই পানি পান করে নামাজের ভঙ্গিতে জায়নামাজে বসেন। এক্ষুনি হয়ত এষার নামাজের আজান পড়বে।

 

তিন

সুভানের জন্ম হয়েছিল ঠিক এরকম রমজান মাসে। বাড়ির কাজের খালা আস্মোতারা বুবু আঁতুড় ঘর থেকে ছেলের মুখ দেখে বেরিয়ে এসে তাঁর সামনে চিৎকার করে বলে উঠেছিল, ‘সুভানাল্লা- কী সুন্দর বেটা জন্ম্যাছে জী ভাই তুমার! যেনি ফেরেস্তা!’ একথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি। এতই খুশি হয়েছিলেন যে, তাঁর কথার সুত্র ধরেই বেটার নাম রেখেছিলেন সুভান সেখ। হঠাৎ আস্মোতারা বুবুকে মনে পড়ে গিয়াসসাহেবের। খুব অল্প বয়সে তাঁর সন্তানেরা মাকে হারিয়েও মায়ের অভাব বুঝতে পারেনি কোনওদিন ওই আস্মোতারা বুবুর কারণে। আস্মোতারা বুবুকে ওরা খালা বলত। ওই খালাই ছিল তাঁর সন্তানদের কাছে সবকিছু। তিনি মাঠঘাট নিয়ে পড়ে থাকতেন। আর তাঁর সন্তানদের দেখাশোনা করত ওই আস্মোতারা বুবু। তাদের ঘুম পাড়ানো, ঘুম থেকে ওঠানো, নাওয়ানো, খাওয়ানো, স্কুল পাঠানো- সবকিছুর দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল নিজ হাতে। এমন কী, ওই আস্মোতারা বুবুর পছন্দের মেয়ের সঙ্গেই সুভানের বিয়ে হয়েছিল। আষাড়িয়াদহ গ্রামের বেলাল মুন্সীর মেয়ে জামিলা। সেই সময়ে লালগোলার হাইমাদ্রাসায় পড়ত। কী করে যে খোঁজ পেয়েছিল আস্মোতারা বুবু! তার কথা ছিল-  লেখাপড়া মেয়েরা নাকি মা হিসাবে ভাল হয়। ভাল সন্তানের জন্ম দেয়। তাঁকে এইসব কথা বুঝিয়ে পাঠিয়েছিল বেলাল মুন্সীর কাছে।

বাড়ির কাজের মেয়ে হলেও তাঁকে ভায়ের মতো স্নেহ করত আস্মোতারা বুবু। অগত্যা বোনের মান রাখতে তিনি গিয়েছিলেন বেলাল মুন্সীর কাছে। বেলাল মুন্সী না করেনি। পড়ে তো তার মেয়ে আর চাকরিবাকরি করবে না! তাছাড়া সুভান ভাল বাপের ভাল ছেলে। স্বভাব চরিত্রও ভাল। কলেজ পাশ করে টাউনে কোয়াক ডাক্তার হয়েছে। মেয়ে তার সুখে থাকবে।

খুব সুখেই ছিল বেটাবউ জামিলা বেগম। বিহাই বেলাল মুন্সী দেখে যেতে না পারলেও দুনিয়াজাহান দেখেছে। বেটা সুভান কোনওদিন কোনও রকম কষ্ট দেয় নি। যা বলেছে, শুনেছে। জামিলা সামলেছে ঘর-সংসার, আর সুভান সামলেছেন বাইরেটা। সম্পর্ক না থাকলেও বাপ হয়ে সব খবর রাখতেন গিয়াসসাহেব। গোপনে ছেলে সুভানের বাড়ি ঘুরে আসবেন ভেবেছেন কতবার! বউমা-নাতি-পুতিনদের দেখে আসবেন! ছেলে সুভানের মুখটাও একবার দেখে আসবেন! কিন্তু ওই যে সমাজের ভয়! ছেলে তাঁর কাফের, নাস্তিক ছিল। যে ভয় থেকে ছেলেকে একদিন ত্যাজ্য করেছিলেন, সেই ভয় থেকেই কোনওকিছু করতে পারেননি।   

তবু শেষরক্ষা হল না, বলতে গেলে সমাজ তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে হুমকি দিয়ে গেল।

এষার নামাজের আজান পড়ছে। উঠে দাঁড়ালেন গিয়াসসাহেব। নামাজের নিয়ত বাঁধলেন। তারপর শুরু করলেন নামাজ পড়তে।

সুভান সন্ধ্যা ৬টা ২০তে মারা গেছে। হাসপাতাল থেকে লাশ ছাড়বে তার ৩ঘণ্টা পরে, তার মানে রাত ৯টা ২০ নাগাদ। ততক্ষণে তাঁর এষার নামাজ - তারাবির নামাজ - বেতর নামাজ পড়া হয়ে যাবে। লাশের সঙ্গে বউমা জামিলা, আর নাতজামাই সুবীর আছে। সুবীরই জামিলার মোবাইল থেকে ছোট ছেলে রেহানের মোবাইলে তাঁকে ফোন করেছিল। হয়ত বউমা ফোনটা করতে বলেছিল। এমনিতে সুবীরের সঙ্গে তাঁর চেনাজানা নেই। শুনেছিলেন, টাউনের বড় ব্যবসায়ী ঘরের ছেলে নাকি! জীবনে এই প্রথম কথা। সুভানের মৃত্যু সংবাদ দিয়ে জানতে চেয়েছিল, তারা কী করবে এখন? তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন, পরে জানাচ্ছি। তারপর ফোনটা রেহানকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেটা নিয়ে রেহান সেই যে বেরিয়েছে তার কোনও পাত্তা নেই আর। বাইরে কোথায় কী করছে, কে জানে!

নামাজ পড়ার সঙ্গে এরকম আরও অনেক ভাবনা কিন্তু গিয়াসসাহেবের পিছু ছাড়ছে না। মাগরিবের নামাজে খোদার কাছে নিজেকে যেভাবে সঁপে দিয়েছিলেন, এখন সেটা পারছেন না। সুভানকে মনে পড়ছে। তাঁর সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে সুভান যেন ছড়িয়ে পড়ছে! আশ্চর্য, এতদিন ধরে নামাজ পড়ছেন, খোদা এভাবে কখনও ছড়িয়ে পড়েন নি!

আস্মোতারা বুবু নিয়ম করে ফজরের নামাজ পড়ার পর কোরাণ পাঠ করত। তা দেখে সুভান তার আস্মোতারা বুবুকে একদিন জিজ্ঞেস করেছিল, ‘খালা- তুমি যে রোজ রোজ কোরান পড়, মানে বোঝ কিছু?’

‘মানে বুঝবার কী আছে? খোদার কালাম! পড়লেই নেকি পাওয়া যায়।’

আস্মোতারা বুবুর একথা শুনে সুভান বলেছিল, ‘না খালা- এটা তোমার ভুল ধারণা। না বুঝে কিছু পড়লে, সে পড়া কোনও কাজেই লাগে না। শুধু শুধু ব্যাগার খাটা হয়।’

‘কে বুললে তোকে এই কথা?’

হা করে আস্মোতারা বুবু তাকিয়েছিল ছেলে সুভানের দিকে। কী বলছে ছোঁড়া? কথার কোনও মাথামুণ্ডু নাই! তাই হয়ত বলেছিল, ‘যা তো এখুন- বেশি বকবক করিস না। নিজের পড়া পড়গা! আর হামার কাম হামাকে করতে দে।’

গিয়াসসাহেবের মনে পড়ে ওই সময়ে বাড়ির কাজের ছেলে বদি আঙিনার টিউবয়েল থেকে গরুর জন্য পানি তুলছিল। কিন্তু টিউবয়েলে পানি উঠছে না। তার বদলে ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ উঠছে। সেই আওয়াজে আস্মোতারা বুবুর কোরাণ পাঠে বিঘ্ন ঘটছিল। তাই সে বলে উঠেছিল, ‘তখুন থেকি কী অমুন ক্যাঁচর ক্যাঁচর আওয়াজ তুলছিস? দেখছিস তো, পানি উঠছে না! বোধায় অসার পড়ি গেলছে। যা কলের মিস্ত্রী ডেকি নি আয় গা!’

আস্মোতারা বুবুর পাশেই বসেই সুভান তখন তার স্কুলের পড়া পড়ছিল। যা শুনে বলে উঠেছিল, ‘খালা- বদির কলে পানি তোলার অবস্থাও তোমার ওই কোরাণ পাঠের মতো। তোমার কোরাণ পাঠে কাজের কাজ কিছুই হয় না। শুধু আমার পড়ার ক্ষতি হয়।’

‘কী বুললি?’

 ‘ও কিছু না বুবু, তুমি তোমার কোরাণ পাঠ চালিয়ে যাও। আমি সুভানকে নিয়ে যাচ্ছি আমার বৈঠক বারান্দায়।’ বলে গিয়াসসাহেব ছেলেকে সেখান থেকে নিজের সঙ্গে নিয়ে এসে বসিয়েছিলেন এই বৈঠক বারান্দায়। না হলে ওদের খালা-বহিনবেটার তর্ক সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে যেত তবু হয়ত ওদের তর্ক চলতেই থাকত!

সুভানের কথা ভাবতে ভাবতে এষার নামাজ পড়া শেষ হয় গিয়াসসাহেবের। সুন্নত চার রাকাত, ফরজ চার রাকাত, নফল দু রাকাত- মোট নয় রাকাত নামাজ। কিন্তু ভিড় করে আসা সুভানের স্মৃতি যেন শেষ হতে চায় না।

এবার মোনাজাতের সময়। কিন্তু মোনাজাতে খোদার কাছে কী চাইবেন তিনি? মানুষের মঙ্গল ছাড়া কোনওদিন কিছু চাওয়ার ছিল না তাঁর। তবু মানুষের মঙ্গল হয়েছে কি? মানুষ দিনকে দিন সব কেমন হয়ে যাচ্ছে। তাঁর ছেলে সুভানও কেমন হয়ে গিয়েছিল! সমাজের গণ্ডি ডিঙিয়ে মানুষ হতে চেয়েছিল। সেটা সমাজের সহ্য হয়নি। তাই হয়তো গ্রামের লোক বাড়িতে এসে ফতোয়া দিয়ে গেল। কিন্তু যারা ফতোয়া দিয়ে গেল তারা কারা? মানুষ! নাকি মানুষের মতো অন্যকিছু? তাদের কথার সঙ্গে কর্মের কোনও মিল নেই কেন? যত রকম মন্দ কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকেও এরাই এখন এক একজন সমাজের মাথা, অভিভাবক। এদের স্বার্থ মতো - এদের কথা মতো সমাজ চলছে, দেশ চলছে।

এখনও বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া বাকি। তার আগে একটা ফোন করা দরকার বউমা জামিলাকে। হঠাৎ মনে হয় গিয়াসসাহেবের। স্বামীর লাশ নিয়ে জামিলা কী অবস্থায় আছে - কী করছে, কে জানে! কিন্তু রেহান কি বাড়ি ফিরেছে? মোবাইল তো তার কাছেই। মোনাজাত শেষ করে জায়নামাজে বসেই মুখ ঘুরিয়ে যেন অন্ধকারের কাছে জানতে চাইলেন, রেহান কি বাড়ি ফিরেছে?

বাড়ির কাজের ছেলে মনসুর কোথা থেকে ছুটে এল। বলল, চাছা- কুরবানির খাসিটোকে কতু ঢুঁড়ি পেছি না!

গিয়াসসাহেব বললেন, ঢুঁড়ে পেছিস না! আমি তো একটু আগে আঙিনা থেকে খুলে গোয়ালঘরে বেঁধে এলাম!

  • গোহিলে নাই খো চাছা।

বলে মনসুর যেমন ভেতরের দরজা দিয়ে ছুটে এসেছিল তেমনি ছুটে বাইরের দরজা দিয়ে কোথায় বেরিয়ে গেল। গিয়াসসাহেব আর কী করেন, নামাজ ছেড়ে মনসুরের পিছু ধরেন। খাসিটাকে তো তিনি নিজ হাতে গোয়াল ঘরে বেঁধে এসেছিলেন! কী করে খুলে গেল তাহলে? হয়ত সবই কপালের লিখন! কে জানে, ওই কপাল লিখনের ফেরে এই রাতবিরাতে কুরবানির খাসি খুঁজতে গিয়ে ছোঁড়া নিজেই আবার হারিয়ে না যায়!

 

চার

কিছুক্ষণের মধ্যে মনসুরের পিছু পিছু ছুটে এসে গিয়াসসাহেব হাজির হয়েছেন তাঁর নিজস্ব পারিবারিক বাগানে। কিন্তু কোথায় মনসুর? এদিক ওদিকে তাকান তিনি। গাছপালা ছাড়া কোনওকিছুই তাঁর চোখে পড়ে না। তখন ‘মনসুর’, ‘মনসুর’, ‘মনসুর’- বলে হাঁক ছাড়েন। না, তাও কোনও জবাব নেই। তবে এই অন্ধকারে দাড়িয়েও গোটা বাগানটা জ্বলজ্বল করছে তাঁর চোখের সামনে। কোথায় কীসের গাছ? কোথায় কীসের ঝোঁপ? কোথায় কীসের জঙ্গল? এক এক করে সবকিছু প্রত্যক্ষ করছেন তিনি। এমন কী, বাগানের মধ্যে তাঁর যে উঁচু পাড় বাঁধা পুকুরটা, সেটাও বাদ পড়ছে না।

গিয়াসসাহেবের মনে পড়ে যায় সেবারের সেই বন্যাকে। টানা পাঁচদিন পাঁচ রাতের বৃষ্টিতে বাসুমাটির বাঁধ কেটে তাঁদের এই অঞ্চলকে অঞ্চল যেবার ডুবে গিয়েছিল। গ্রামকে গ্রাম, মাঠকে মাঠ- সব পানির তলায়। কোনওকিছুর চিহ্ন ছিল না। কে যে কোথায় প্রাণ হাতে করে উঠে গিয়েছিল, কেউ কারও খেয়াল রাখতে পারেনি। তবে তিনি ও তাঁর পরিবার কোনও রকমে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁর এই বাগানের ওই পুকুরের উঁচু পাড়ে। বহু পুরাণো পুকুর একটা। যেটা বংশ পরস্পরায় তাঁরা আগলে রেখেছেন।

গিয়াসসাহেব পায়ে পায়ে এগিয়ে যান সেই পুকুরের পাড়ে। আর দেখেন শুকনো খটখটে পুকুরের তলা। এক ফোটাও পানি নেই। খালি কিছু আগাছা জমে আছে। পানি থাকবে কী করে? সেই বছরের ভয়াবহ বন্যার পর আজ ক’বছর বর্ষা নেই - বৃষ্টিও নেই। অথচ একসময় এই পুকুরটাই ছিল এই অঞ্চলের সবচেয়ে নামি পুকুর। নিজের গ্রাম বাদেও আশপাশের গ্রামের মানুষেরা ইদবকরিদের দিনে সখ করে আসত এই পুকুরে গোসুল করতে। নিজেদের পবিত্র করতে।

ভাবতে গিয়ে গিয়াসসাহেবের হঠাৎ মনে পড়ে, সেবারকার সেই ভয়াবহ বন্যায় এই পুকুরপাড়ে বাস করতে এসে সাপের কামড় খেয়ে আস্মোতারা বুবুর মওতের ঘটনাটা। কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। যোগাযোগ করার ইচ্ছে থাকলেও করার উপায় নেই। দিনে একবার শুধু দুপুরবেলায় সরকারি রিলিফের নৌকা আসে। খাবার-পানি দিয়ে যায়। আর আস্মোতারা বুবুকে সাপে কামড়ায় সন্ধ্যারাতে। আপদের ওপর বিপদ! গিয়াসসাহেব কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। সুভান ততদিনে টাউনের বাসিন্দা। রেহানের বিয়ে হয়নি, এস. এস. সি. পরীক্ষা দিয়ে সে তখন সদ্য চাকরী পেয়েছে, সঙ্গেই ছিল। আর ছিল বাড়ির কাজের ছেলে বদি। ওই বদি-ই সেদিন বলেছিল, ‘চাছা- কারু ভরসায় থেকি লাভ নাই। হামরা তিনজনা আছি। আসেন আস্মোতারা খালাকে হামরাই গোর দিই এই পুকুরপাড়েই। আপনি জানাজা পড়হান, হামি আর রেহান আপনার পিছে দাঁড়াইছি। তাছাড়া উপায়ও তো কিছু নাই দেখছি!’

‘কী বললি?’

বাপকে খুঁজতে খুঁজতে কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিল রেহান। সে বাপের অতীতচারণ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে, কিছু বলছেন আব্বা?

  • হ্যাঁ, একটা কাম কর তো! তোমার বড়ভাবিকে ফোন করে বল যে সুভানের লাশ যেন সরাসরি এই বাড়িতেই নিয়ে আসে।

রেহান বলল, কিন্তু গ্রামের সব যে বলে গেল বড়ভায়ের জানাজা পড়তে দেবে না!

গিয়াসসাহেব হাত তুলে ছেলেকে থামিয়ে বললেন, আমি যা বলছি সেটাই কর আগে। মনসুরকে সঙ্গে করে খান্দুয়াপাড়ায় যাও। বদিকে সুভানের মৃত্যুর খবরটা দাও। আর বল যে কাল সকাল দশটায় সুভানের কবর হবে আমাদের বাগানের এই বড় পুকুর পাড়েই, যেখানে তোমার আস্মোতারার খালার কবর আছে। তার ঠিক পাশে বদি যেন সুভানের কবরটা খুঁড়ে রাখে।

 

[নন্দন- শারদ ১৪২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত। ]

 

 

 

 

 

 

 

0 Comments

Post Comment