তবে মাঝপথে নেমে পড়ে মনে হল খুব ভুল করেনি । অচেনা পৃথিবী দেখার মোহেই তো হুট করে বেরিয়ে পড়া ।
চারপাশে গভীর জঙ্গল , মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড় ,নানারকম পাখির ডাক । দেখলে মনে হয় যেন স্বপ্নলোকে এসে পড়েছে ।
মুশকিল যে হয়নি তা নয়। থাকার জায়গা পেতে ঘাম ছুটে গেল । খোঁজখবর করতেই গাঁওবুড়ো সোজা বলে দিল , “ আপনি চলে যান। এখানে কোন থাকার জায়গা হবে না । “ অগত্যা হাতেপায়ে ধরে একটা জায়গা জোগাড় করতে হল। জায়গা বলতে গ্রামের রঘু শর্মার বাড়ির একপাশে টিনের শেড দেওয়া ছোট্ট একটা ঘর । ঘরভর্তি আবর্জনা , হাঁড়ি কলসী, কাঠের বাক্স সব ডাঁই করে রাখা ।
গৃহস্বামীর প্রবল অনিচ্ছা স্বত্তেও সেখানেই থেকে গেল সমুদ্র। আর সব ঝামেলা মিটিয়ে যখন নদীর দিকে বেড়াতে গেল তখন পৃথিবী থেকে সূ্র্যালোকের রেখা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে । জঙ্গলের সবুজ রঙ আর নদীর জলে সূর্যাস্তের আলো মিলেমিশে এক অপার্থিব ছবি তৈরী করেছে। দেখতে দেখতে ঘোরে ডুবে গিয়েছিল সমুদ্র, হঠাৎ মনে হলো চারিদিকে কেউ যেন মুঠো মুঠো অন্ধকার ছড়িয়ে দিচ্ছে ।
তারপর ঘরে ফিরতে ফিরতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো। জমাট বাঁধা অন্ধকারে তখন শুধু ঝিলমিল করা জোনাকি আর একটানা ঝিঁঝিঁপোকার ডাক।
শব্দটা সমুদ্রকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ হিম জড়ানো বাতাসে ঠান্ডা লাগতেই ধড়মডিয়ে উঠে পড়ল। আর তখনই চোখে পড়ল দূরে কোথাও দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে ।
কী ব্যাপার রঘু ? ঘর থেকে একরাশ কৌতূহল নিয়ে বেরিয়ে এলো সমুদ্র ।
“ রাতের খাওয়ার সময় হয়ে গেছে ভাইয়া , “ মাঝপথে কথাটা থামিয়ে দিয়ে ধোঁয়া ওঠা মুরগীর ঝোলের বাটিটা একটা ছোট কাঠের টেবিলের ওপর রাখল রানী । ভাঙা ভাঙা হিন্দীতে বলল, “ আমাদের এখানে থাকার ভালো ব্যবস্হা নেই। আপনার অসুবিধা হচ্ছে জানি। তবু যা লাগবে বলবেন । “
মনে মনে খুশি হয়েছিল সমুদ্র। রঘুর আচরণ একটু অমার্জিত, কথাবার্তার ধরণও কাঠখোট্টা, জিজ্ঞেস করলে কাটাকাটা জবাব দেয় । কিন্তু ওর বউ রানীর ব্যবহারে কৃত্রিমতার চিহ্নমাত্র নেই ।
“ মেখলিঘাটে এই সময় অনেক পাখি আসে ভাইয়া। কাল সকালে আপনি আশেপাশে অনেক পাখি দেখতে পাবেন , উনুনে রুটি সেঁকতে সেঁকতে উঠে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল রানী ।
মন উশখুশ করা প্রশ্ন নিয়ে খাওয়া সারল সমুদ্র । অর্ধেক কথা শুনল , অর্ধেক শুনল না । আগুনের ব্যাপারটা সেদিন আর জানা হল না । নৈশভোজের পরে ঘরে চলে এসেছিল । থমথমে অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়া ঘরে অনেকক্ষণ জেগে বসে ছিল সেদিন ।
পরদিন সকালে সমুদ্র যখন ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে এল তখন সবে ভোরের আলো ফুটেছে । হিমজড়ানো বাতাস শরীর ছুঁয়ে যেতেই কেঁপে উঠছে সারা শরীর ।
কুয়াশা ভেজা পথটা দিয়ে পায়ে পায়ে জঙ্গলের দিকে হাঁটতে লাগল সমুদ্র ।
মনে হল ঠিক যেন একটা ক্যানভাসের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছে । চারিদিকে বন, শুধু বনের পর বন । স্তম্ভের মতো অসংখ্য গাছ , কেমন একটা মন কেমন করা প্রাগৈতিহাসিক গন্ধ ।
তারপর হাঁটতে হাঁটতে একটা অদ্ভুত দৃশ্যে তখন তার চোখ আটকে গেল । আপনা থেকেই দাঁড়িয়ে পড়ল সমুদ্র ।
ঠায় দাঁড়িয়ে দেখল জঙ্গলের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অসংখ্য মৃত পাখি পড়ে আছে । যেন পরিযায়ী পাখির মৃতদেহের স্তুপ। গ্রে গুজ, স্পুনবীল, পেলিক্যান ।
“ মেখলিঘাট মরা পাখির দেশ । ভোলেবাবার শাপে মরার সময় হলে পাখিরা এখানে চলে আসে …,” জঙ্গল ফুঁডে বেরিয়ে এসেছে একটা লোক । সমুদ্র চমকে তাকাল । লোকটার মুখের নির্বিকার হাসির অর্থ বোঝার জন্য ঠোঁটটা কামড়ে ধরল সে । বাকি কথাগুলো তার কানে পৌঁছাল না। মস্তিষ্কের কোষ তখন সজাগ হয়ে উঠছে ।
পরপর তিনদিন একই ঘটনা ঘটল । জঙ্গলের ভেতরে সেই একইরকম অসহ্য দৃশ্য । অজস্র পরিযায়ী পাখি হয় মুখ থুবড়ে মরে পড়ে আছে ,না হয় আধমরা হয়ে ধুকপুক করছে । অগণিত পোকামাকড় ভিড় জমিয়েছে শরীরের ওপরে । হয়ত পরে পাখিগুলোকে শেয়াল এসে ছিঁড়ে খাবে ।
প্রথমদিনের ঘটনাটা সমুদ্রর মনে একটা সন্দেহের চারাগাছ পুঁতে দিয়েছিল । তারপর অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সন্দেহটা বেড়েছে । সে যত ভেবেছে তত সন্দেহের গোড়ায় যুক্তি আর প্রতিযুক্তির সার দিয়েছে ।আর এভাবেই চারাগাছ ক্রমশ মহীরূহ হয়েছে ।
“তোমাদের গ্রামে এত পাখি মরছে কেন সেটা তোমার জানতে ইচ্ছে করে না ? “ বলব কী বলব না ভাবতে ভাবতে একদিন রঘুকেই প্রশ্নটা করেছিল সমুদ্র ।
“ পাখি নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না । যা হয় সেটা ভোলেবাবার ইচ্ছেয় হয় , “হাত দিয়ে বাঁশের খুঁটিটা চেপে ধরেছিল রঘু , ধূর্ত শেয়ালের মতো চাহনি ।
পরিবেশ তখন থমথমে, কারও মুখে কোনও কথা নেই । তারপর আগের মতোই প্রসঙ্গান্তরে ছিটকে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে রানী বলল, “আজ গ্রামের নামঘরে নামগান আছে ভাইয়া, আপনি আজ একবার নামঘরে ঘুরে যাবেন।"
সমুদ্র কোন জবাব দিল না । তার মাথার ভেতরে তখন উত্তাপ জড়ো হতে শুরু করেছে আর সেই উত্তাপ ক্রমশ ছেয়ে যাচ্ছে শরীরে । পাখি মরে যাওয়ার পেছনে যে একটা কারণ আছে সেই ব্যাপারে আর সন্দেহ নেই ।
ভাবনাটা ঘোরাতেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল । কার প্রতি , কী কারণে জানে না তবে একটা রাগ শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল । বিকেল হতেই জঙ্গলের দিকটা অস্বাভাবিক রকমের নিঝুম । ডালে বসে থাকা পাখি ছাড়া আর প্রাণের কোন চিহ্ন নেই ।
উদ্দেশ্যহীনভাবে, অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটু ঘুরপথে বাড়ির দিকেই যাচ্ছিল সমুদ্র , ঠিক তখনই একটা শব্দ তাকে চমকে দিল । কয়েক পা এগিয়ে যেতেই দেখল একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে । আর ট্রাকের জানলায় কনুই ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাঁওবুড়ো । আরো কয়েকটা লোক আছে সেখানে । টেনে হিঁচড়ে ট্রাকের ভেতরে বড় বড় কাঠের বাক্স তুলছে। এরকম বাক্স সে আগেও দেখেছে । রঘুর জঞ্জাল ভরা ঘরটায় ঠিক এরকমই অসংখ্য কাঠের বাক্স রয়েছে ।
সমুদ্রর বুকের ভেতর আবার অস্হিরতা জাগছিল । প্রকৃতির শোভা যত মুগ্ধতা সৃষ্টি করেছিল নিমেষে তা মুছে গেল । ততক্ষণে গাঁওবুড়োর সঙ্গে তার চোখাচোখি হয়েছে আর তাকে দেখেই দপ্ করে জ্বলে উঠেছে লোকটা । “ আপনি এখানে কী করছেন ? গাঁওবুড়োর মুখটা তখন ঠিক বুনো জন্তুর মতো দেখাল ।
সমুদ্র টের পেল প্রবল উত্তেজনা তার শরীরে হুঁল ফোটাচ্ছে । দ্রুতপায়ে বাড়ি ফিরছিল সে । আশেপাশের কিছুই তার চোখে পড়ছিল না । ভাবনার বোঝা তখন বুকের ভেতর অস্হিরতা বাড়িয়ে তুলছে ।
তারপর ঘরে ফিরতেই একটা স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতো একটা ঘটনা ঘটল । দরজা খুলে ফ্যাকাশে মুখে এক মূহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল রানী তারপর ঢোঁক গিলে বলল,
“ আপনি কাল ভোরের বাসেই ঘরে ফিরে যান ভাইয়া ।ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে, থরথর করে কাঁপছিল রানী । আশঙ্কায় রক্তশূণ্য মুখ, গলায় অকৃত্রিম মিনতির সুর ।
কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল কথাগুলো বুঝতে তারপরেই থমকে গেল সমুদ্র । সব ইন্দ্রিয় অসাড় হয়ে আসছে , বুকের মধ্যে দুপদুপ করছে ভয় ।
“ আমি এসে পড়ায় তোমাদের খুব অসুবিধা হল , সমুদ্র নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল ।
“ না ভাইয়া , তবু একজন ভালোমানুষের সঙ্গে আমার দেখা হল । রঘু লোকটা বাঘের মতো হিংস্র । তাছাড়া ওদের সবার অনেক ক্ষমতা । আর টাকার জন্য ওরা সব করতে পারে । ওদের কথায় রাজী হয়নি বলে আমার মরদটাকে খুন করেছে, কোনদিন হয়ত আমাকেও মেরে ফেলবে , “ রানীর চোখ ছলছল করছিল ।
“ আমি তোমাকে বাঁচাব রানী , “ সমুদ্রর ওপর এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি ভর করে বসেছিল । শরীর দিয়ে আগুনের স্রোত বইছে, ঢেউ ওঠা রক্তে তখন সম্ভব - অসম্ভব বোধটা আর নেই ।
“দরজাটা বন্ধ করে দিন । আজ রাতে কেউ ডাকলে আর দরজা খুলবেন না , “ সমুদ্রর কথা না শোনার ভান করে রানী দ্রুতপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ।
সমুদ্র স্হির । সেই মূহূর্তে চলমান ছবির মতো কিছু ঘটনা চোখের সামনে আসছে আবার সরে যাচ্ছে । গাঁওবুড়ো আর রঘুর রাগ, বিরক্তি, রানীর প্রসঙ্গ বদলের আপ্রাণ চেষ্টা সবটাই । তারপর ভাবনা ক্রমশ গতিপথ বদলাল ।
বন পাহাড়ের নির্জনতায় বাস্তবটা ভাবার চেষ্টা করতে করতে সমুদ্র বুঝতে পারল তার সন্দেহের ব্যাপারটা এখানে চাউর হয়ে গেছে । পেটের মধ্যে একটা ভয় পাক খেয়ে গেল । যা শুনেছে তাতে ভয় হওয়াই স্বাভাবিক । আলো নিভিয়ে বিছানায় উঠে পড়ল সমুদ্র । একটা কিছু করতে ইচ্ছে করছিল , এমন কিছু যা তাকে এই ঘন অন্ধকারের মধ্যেও আলো দেখাবে
২.
“তোমার কৌতূহল তোমাকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে গেছে । “ ফোনের ওপ্রান্ত থেকে এরকম প্রতিক্রিয়ায় সমুদ্র অবাক হয়নি । তবু আমতা আমতা করে বলল, “তুমিই তো বলতে অভিজ্ঞতা মানুষকে সমৃদ্ধ করে । “
“নিজেকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিতে নিশ্চয়ই বলিনি । বাই দ্য ওয়ে , তুমি কি আমার পরিচয় ওদের দিয়েছ ? “ না , সেটা হঠাৎ দিতে যাব কেন ? “সমুদ্র অবাক ।
“তবে আর কী, ওদের সঙ্গে সমঝোতা করে এবার মেখলিঘাটে জীবনটা কাটিয়ে দাও হে ভাগ্নে । “
বিষণ্নমুখে ফোনটা রেখে দিল সমুদ্র ।ছোট মামার কথায় রাগ করার মতো মনের অবস্হা ছিল না । কথাগুলোতে যথেষ্ট যুক্তি আছে। কিন্তু তার বুকের ভেতর সেই মূহূর্তে একটা ঢেউ দুলে চলেছিল । আর সেই ঢেউয়ের দোলায় এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল ওর যাবতীয় সাহস আর আত্মবিশ্বাস ।
সেদিন রাতটা অবশ্য আর রঘুর বাড়িতে থাকতে হয়নি । রাত ঘন হওয়ার আগেই বাড়ির সামনে গাড়ির আলো জ্বলে উঠল । আর কয়েকমূহূর্তের মধ্যেই সে বুঝতে পেরেছিল বাড়ির সামনে দাঁড়ানো গাড়িটা পুলিশের গাড়ি ।
“ এস পি সাহেব আপনাকে আজ এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার অর্ডার দিয়েছেন, গাড়ি থেকে নেমে যে ভদ্রলোক সমুদ্রর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন তিনি সম্ভবত স্হানীয় থানার প্রধান । এক ঝটকায় ভয় থেকে বেরিয়ে এসেছিল সমুদ্র । ফুরফুরে মনে বেরিয়ে আসার সময় রানীর সঙ্গে আর দেখা হয়নি । তবে ঘরভাড়া মিটিয়ে চলে আসার সময় রঘুর মুখটা আগুনের জ্বলন্ত শিখার মতো লেগেছিল ।
কতগুলো ব্যস্ত মাস তারপর কেটে গেল ।
ব্যাপারটা অবশ্য অনেক দূর গড়িয়েছিল । অপারেশন ফেদারস্টর্ম খবরের কাগজের শিরোনাম হল । গ্রামবাসীর সহায়তায় পরিযায়ী পাখির পালক মেখলিঘাট থেকে কী করে বাক্সবন্দী করে বিদেশে পাচার করা হয় তার বিস্তারিত বিবরণ সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা পেল ।
কলকাতায় ফেরার পরে সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পুলিশ অনঙ্গ বিশ্বাস একদিন ফোন করে সমুদ্রকে বললেন , “তুই একটা বড় কাজ করে ফেলেছিস রে ভাগ্নে । এই পালক পাচারকারী চক্রের পেছনে অনেক বড় মাথা আছে । একটা অর্গানাইজড ক্রাইম বলতে পারিস । গোটা গ্রাম এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । “
“রাতের ঠান্ডা হাওয়া আর চাঁদের আলো সাধারণত পরিযায়ী পাখিদের ক্রস কন্টিনেন্ট ফ্লাইটে সাহায্য করে । তাছাড়া লম্বা সফরে শরীরে যে অতিরিক্ত তাপমাত্রা উৎপন্ন হয় তার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখি রাতের দিকেই যাত্রা শুরু করে । মেখলিঘাটের লোকেরা রাতের বেলায় আগুন জ্বালিয়ে রাখত ।
পরিযায়ী পাখি সেই আগুনকে আলো ভেবে এসে ধরা দিত । এছাড়াও গ্রামের বেশ কিছু জায়গায় জাল পাতা ছিল । মিস্ট নেট জাতীয় জাল । এত মিহি সেই জাল যে পাখি তো দূরস্হান মানুষও চট্ করে ধরতে পারবে না ।
ব্যস্ আর কী । এবার পাখি ধরো , তারপর খাবার বা জলের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে পাখি মেরে ফেলো , আর তার পরে নিপুণ কসাইয়ের মতো পাখিগুলোকে ফালা ফালা করে কেটে তার পালক ছিঁড়ে নাও । নিঃশব্দ
, নির্বিঘ্ন খুন, সহজ পথে টাকা রোজগার , “ অনঙ্গ বিশ্বাসের গলায় রাগ ঠিকরে পড়ছিল ।
এই গল্প এখানেই শেষ হতে পারত । কিন্তু হল না । রানীর জন্য সমুদ্র আর কিছু করতে পারেনি । কতটুকু বা পরিচয় রানীর সঙ্গে ! নিতান্ত বলার জন্য কয়েকটা কথা বলেছিল ।
খালি মাঝেমাঝে যখন পুরোনো কথা ভাবতে ইচ্ছে করে তখন সে ভাবনার নৌকা বেয়ে মেখলিঘাটে চলে যায় । রাতের আঁধারে তলিয়ে যাওয়া গ্রাম , থমথমে নৈঃশব্দ্যের
মধ্যে জোনাকির ঝিকমিক , আর অন্ধকারে প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের পাশে সেই পাতকুয়োটা থেকে জল তুলতে থাকা একটা কাচের চুড়ি পরা বউ …।
এসব ভাবতে ভাবতেই মনের মধ্যে যেন বুদ্বুদ ওঠে । মনে হয় ভাল লাগছে না । কী যেন হল না , কী যেন হয়নি … ।
সুনসান নীরবতায় ডুবে থাকা মেখলিঘাটে তখন হয়ত বাতাসে মেঘ উড়ে যায় । উথালপাথাল হাওয়ায় দুলতে থাকা ডালপালার শনশন শব্দ তখন একটানা বেজে চলে ।