পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

রেট চার্ট অথবা নিছক ভূতের গল্প

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 203 view(s)
  • লিখেছেন : রোহন রায়
[এক] "স্যার, রেট চার্টটা একটু দেখাবেন?" চমকে উঠলেন এমএলএ ফাল্গুনী চ্যাটার্জী। তাঁর টেবিলের সামনে ঝুঁকে আছে একটা লোক। পরনে একটা মলিন ফতুয়া আর ধুতি। কালোকুলো চেহারা, উস্কোখুস্কো চুল। প্রায় গলবস্ত্র হয়ে লোকটা বলল, "বলছি স্যার, রেট চার্টটা একটু দেখতে পারি?"

ফাল্গুনী খেঁকিয়ে উঠলেন, "কীসের রেট চার্ট? কে আপনি?"

লোকটা গুটিয়েই ছিল। খেঁকানি খেয়ে আরও গুটিয়ে গেল, "আমার নাম শিবতোষ মণ্ডল আজ্ঞে। রেট চার্টটা দেখতে এসেছিলাম।"

"কীসের রেট চার্ট?" 

"আজ্ঞে, চাকরির।" 

ফাল্গুনী একটু থতমত খেলেন, "কীসের চাকরি?" 

শিবতোষ নামে লোকটা একইরকম বিনীত ভঙ্গিতে বলল, “আমার ভাইয়ের একটা চাকরি দরকার। সেইজন্যই রেট চার্টটা দেখতে চাইছিলাম আজ্ঞে। প্রাইমারি ইস্কুল কত করে রেট যাচ্ছে এখন?"

“তোমার সাহস তো কম না!” ঘর কাঁপিয়ে গর্জন করে উঠলেন ফাল্গুনী, "অ্যাই নব! এই লোকটা এখানে ঢুকল কী করে?”

লোকটা মিনমিনে গলায় বলল, "নবকে এখানে পাচ্ছেন কোথায়? আপনি তো ঘুমোচ্ছেন।"

"ঘুমোচ্ছি মানে?" 

"মানে এখন যেটা হচ্ছে, সেটা আপনার ঘুমের মধ্যে হচ্ছে স্যার।"

খানিকক্ষণ লোকটার দিকে অপলকে চেয়ে থেকে ফাল্গুনী টেবিলে প্রচণ্ড এক চাপড় মেরে লাফিয়ে উঠলেন, "ইয়ার্কি হচ্ছে? অ্যাই নব! খোকনদা!"

শিবতোষ সভয়ে দু-পা পিছিয়ে গেল, "তারা তো নিজেদের ঘরে ঘুমোচ্ছে। আপনিও ঘুমোচ্ছেন, বলছি তো। ঘুমোচ্ছেন বলেই তো আমি আসতে পারলাম।"

ফাল্গুনী চ্যাটার্জী চেয়ার ছেড়ে উঠে শিবতোষকে এক ধাক্কায় সরিয়ে দরজার দিকে এগোলেন। দরজা ভেজানো থাকে। কিন্তু আশ্চর্য, ঠেলা খেয়ে খুলল না। ফাল্গুনী আরও কয়েকবার চেষ্টা করে অবশেষে হাল ছেড়ে বিভ্রান্ত চোখে তাকালেন, "কী মুশকিল! দরজাটা বাইরে থেকে দিয়ে দিল নাকি?"

শিবতোষের ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুটেছে, "ঘুমের মধ্যে সব দরজা খোলে না স্যার।"

"শাট আপ! একদম বাজে কথা বলবে না!" তর্জনি উঁচিয়ে গর্জে উঠলেন ফাল্গুনী।

শিবতোষ কিন্তু এবার আর সঙ্কুচিত হল না। তার ঠোঁটের হাসি এবার সারা মুখে ছড়িয়ে পড়েছে, "বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা, নিজের গায়ে চিমটি কাটুন দেখি!"

অনেক চেষ্টা করেও ফাল্গুনী কিছুতেই নিজের গায়ে চিমটি কাটতে পারলেন না। সর্বশক্তি দিয়ে বাঁ- হাতের কব্জিটা খিমচে ধরলেন, তবু গায়ে নখ বসল না। মানে বসল, কিন্তু কোনও অনুভূতি হল না। ফাল্গুনীর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল। 

শিবতোষ খিক খিক করে হাসল, "দেখলেন? বললাম না আপনি ঘুমোচ্ছেন?"

ফাল্গুনী কয়েক মুহূর্ত সময় নিলেন। তারপর গলাটাকে যথাসম্ভব গম্ভীর করলেন, "আমি কি স্বপ্ন দেখছি?"

"স্বপ্ন না স্যার। এটা সত্যিই ঘটছে।” শিবতোষ বিজ্ঞের মতো মাথা নেড়ে বলল, “তবে কিনা আপনার ঘুমের মধ্যে। এখন যদি কেউ আপনার গায়ে জোরসে চিমটি কেটে দেয়, বা মুখে জল ছিটিয়ে দেয় তাহলেই আপনি জেগে উঠবেন। কিন্তু আপনি তো একা মানুষ। নব আর খোকনদা তো নিচের তলায়। কে জাগাবে আপনাকে?"

"তার মানে কি এটা স্লিপ প্যারালিসিস?"

"অত কঠিন কঠিন ইংরিজি তো আমি বুঝি না। মোদ্দা কথা, আপনি যা দেখছেন সব নির্জলা সত্যি।"

ফাল্গুনী এতক্ষণে পুরোপুরি সামলে উঠেছেন। সত্যি, স্বপ্ন তো কতরকমেরই হয়। নানা অদ্ভুত কাণ্ডও স্বপ্নের মধ্যে ঘটে থাকে। তাতে অবাক হওয়া বৃথা। এবার তিনি চওড়া করে হাসলেন, "দ্যাখো ভাই শিবতোষ, তুমি বৃথাই আমায় ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছ। আমি বুঝতে পারছি আমি স্বপ্ন দেখছি। ফলে একটুও অবাক হচ্ছি না।"

শিবতোষ মুখটা ব্যাজার করে বলল, "আপনাকে অবাক হতে কেউ বলেনি। আমি শুধু কোন চাকরির কীরকম রেট সেটা জানতে এসেছি। ভাইয়ের রেজাল্টটা একটু কমতি আছে। তাই আপনার কাছে আসা।”

“কিন্তু আমার কাছে কেন?”

“দেখুন স্যার, আমি সোজাসাপটা হিসেব বুঝি। রেজাল্ট ভালো না হলে টাকা তো দিতেই হবে। তাই সোজা আপনার কাছেই এলাম। তাহলে দালালদের আর ভাগ দিতে হয় না। কাটমানিরও তো কাটমানি থাকে। জানেনই তো সব। একটু দেখবেন স্যার। অনেক জায়গায় টাকা দিয়েও চাকরি হচ্ছে না। আমি জানি আপনি সৎ। আপনার কথার দাম আছে। টাকা নিলে চাকরি আপনি দেবেনই দেবেন। সেইজন্যই আপনার কাছে এলাম। আপনি ভাইয়ের চাকরিটা করে দেবেন কথা দিলে টাকা তো দেবই, সঙ্গে ফাউ আপনার একটা উপকারও করব।"

ফাল্গুনীর মুখের রেখাগুলো সামান্য কঠিন হল, "তোমায় কে বলল আমি টাকা নিয়ে চাকরি দিই?"

ঠোঁট উপচে হলুদ, ময়লা দাঁতের সারি বেরিয়ে পড়ল লোকটার, "খবর তো আমারই মতো। বায়ুভূত। হাওয়ায় ভাসে।"   

"তুমি তাহলে ভূত?"

"আজ্ঞে, তা বলতে পারেন। খুব সদ্যই মরেছি। তা বলে ভয় পাবেন না। আপনার কোনও ক্ষতি আমি করব না। সত্যি বলতে কী, আমাদের জাতের ভূতেদের কারও কোনও ক্ষতি করার ক্ষমতা নেই। আসলে ভাইয়ের চাকরির ব্যবস্থা না করে মুক্তি পাচ্ছি না, বুঝলেন? ওপরে উঠতে গেলেই ঠেকে যাচ্ছি। তার মানে মায়া কাটেনি।"

রাগটা কেটে গিয়ে ধীরে ধীরে মজা লাগতে শুরু করছে। হাসি চেপে ফাল্গুনী জিগ্যেস করলেন, "তা ভাই শিবতোষ, তুমি ঘুমের মধ্যে এসে ভয় দেখাতে চাইছ কেন? এমনি সময় এলে তো তবু ভয় পাবার একটা চান্স থাকত। ঘুমের মধ্যে তো একেবারেই ভয় পাচ্ছি না।"

"এমনি সময় আসার ক্ষমতা আমার নেই, স্যার। আমি হচ্ছি ঘুমভূত। ঘুমের মধ্যে দিয়েই কমিউনিকেট করি।"

"ঘুমভূত!” ভুরু তুললেন ফাল্গুনী, “এরকম তো কিছু শুনিনি।"  

"কত কোটি দত্যিদানো, অপদেবতা আছে! কজনেরই বা নাম জানেন?” শিবতোষ একটু অবজ্ঞার সুরে বলল, “আমরা হচ্ছি বোবাভূতের সেকেন্ড কাজিন। বোবার নাম শুনেছেন তো? তারাও রাতেই মানুষকে ধরে। বোবায়-ধরা মানুষ গোঁ গোঁ করে।"

ফাল্গুনী হাত নেড়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, "যাক গে, অত খতেনে আমার কাজ নেই। তুমি কীভাবে মরলে সেটা বলো বরং!"

শিবতোষ সামান্য বিষণ্ণ হল, "সুইসাইড, স্যার। ওই টাকা জোগাড়ের টেনশনেই।"

"আহা রে!" কণ্ঠে ছদ্ম সমবেদনা ফোটালেন ফাল্গুনী।

"তবে এইবার লাখ দুয়েক জমিয়ে ফেলেছি স্যার," হাত জোড় করল শিবতোষ, "ভাইকে স্বপ্ন দিয়েছি। টাকা নিয়ে আসবে আপনার কাছে। দু-লাখে কি প্রাইমারি ইস্কুল হবে স্যার? তা না হলে বিডিও বা এসডিও আপিস হলেও চলবে। একটু দেখবেন স্যার।"

"এইত্তো! ফাল্গুনী এবার হা হা করে হেসে উঠলেন, “মিথ্যেটা ধরা পড়ে গেল! নাটকটা ভালোই হচ্ছিল!”

"কোনটা মিথ্যে স্যার? মিথ্যে তো কিছু বলিনি!"

"এই যে বললে, ভাইকে স্বপ্ন দিয়েছ! তার মানে তো এটাও স্বপ্নই! তুমি তাহলে কেন বলছ স্বপ্ন নয়?"

"আহা! ও তো কথার কথা!” শিবতোষ অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়ল, “আপনি আসল কথাটায় মন দিন না! বলছিলাম, আমার ভাইয়ের চাকরিটা যদি করিয়ে দেন, ওই দু-লাখ টাকার সঙ্গে আমি আপনাকে একটা গোপন খবরও দেব।"

ফাল্গুনী হাসতে হাসতেই বললেন, "ভালোই করেছ ঘুমের মধ্যে এসেছ। এমনি সময়ে এলে তোমায় আমি পুলিশে দিতাম। আমি টাকা নিয়ে চাকরি দিই? এটা মুখের ওপর বলছ? এত সাহস কোত্থেকে পেলে ভাই?"

শিবতোষ এবার হতাশ, "স্যার, আমি সব জানি। বিশ্বাস করুন।"

"কী জানো?"

"এ-বাড়িতে প্রচুর ওএমআর শিট, ক্যান্ডিডেট লিস্ট, চাকরির কাগজপত্র আছে না? হার্ড ক্যাশও আছে অনেক।"

ফাল্গুনীর শিরদাঁড়া বেয়ে হাজার ভোল্টের একটা শক নেমে গেল। স্খলিত গলায় তিনি বললেন, "তুমি কী করে…?"

"সোনাদানা আর বেনামী সম্পত্তির কাগজগুলোসব আপনার নিউটাউনের ফ্ল্যাটে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার মাল তো হবেই।"  

ফাল্গুনী বাকরুদ্ধ। শরীরে কাঁপুনি ধরছে। হাতের সামনে একটা পেপারওয়েট পেয়ে সেটাই শক্ত মুঠিতে চেপে ধরলেন তিনি।

এমএলএ সাহেবকে ঘাবড়ে যেতে দেখে শিবতোষের শরীরী ভাষায় আরও খানিকটা আত্মবিশ্বাস দেখা দিল। একটু গলা নামিয়ে সে বলল, "আপনার দারুণ বিপদ স্যার। সেজন্যই তো আপনাকে সাবধান করে দিতে এলাম।"

লোকটাকে ফাল্গুনী আর অগ্রাহ্য করতে পারছেন না। সতর্ক গলায় তিনি বললেন, "কী বিপদ?"

"ভাইয়ের চাকরিটা করিয়ে দেবেন তো? কথা দিন?"

"হ্যাঁ করিয়ে দেব। কোনও টাকাও লাগবে না। কী বিপদ সেটা বলো শিগগির।"

“আপনার মনটা খুব বড় স্যার,” শিবতোষের ছ্যাঁতলা-পড়া দাঁতের পাটি আবার বেরিয়ে পড়ল,  “ভাইয়ের রোল নম্বরটা তাহলে আপনাকে দিয়ে যাই?”   

ফাল্গুনীর অধৈর্য স্বরে বললেন, “বেশ। কী বিপদ সেটা বলো।”

শিবতোষ ফিসফিস করে বলল, "কাল সকাল ঠিক দশটায় আপনার বাড়িতে ইডি রেইড করবে। পাকা খবর। সব নিয়ে এই বেলা কেটে পড়ুন। আমি আপনার ঘুম ভাঙিয়ে দেবার ব্যবস্থা করছি দাঁড়ান। ওই একটাই ক্ষমতা আমার আছে।"  

ফাল্গুনীর বুকটা দড়াম করে কেমন ফাঁকা হয়ে গেল। ভিতরের চৌবাচ্চাটা কেউ যেন কেসি নাগের অঙ্কের মতো ফুটো করে দিয়েছে। এই উটকো লোকটাকে কি আদৌ বিশ্বাস করা চলে? কিন্তু যা-যা বলল তাতে তো অবিশ্বাসও করা যাচ্ছে না। লোকটা যে তাঁর সমস্ত হাঁড়ির খবর জানে। এ-কেমন অশৈলী ব্যাপার? ফাল্গুনীর মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। ঢোঁক গিলে কোনওক্রমে বললেন, "কিন্তু তোমার কথা যে সত্যি সেটা বুঝব কী করে? আমি যে সত্যিই স্বপ্ন দেখছি না তার প্রমাণ কী?"

“এত কিছু বললাম, আরও প্রমাণ চাই?” শিবতোষ ফোঁৎ করে একটা শ্বাস ফেলল, "বালিশের নিচে আমার ভাইয়ের নাম আর রোল নম্বর লেখা একটা চিরকুট পাবেন। তাহলে বিশ্বাস হবে তো? আমার ভাইয়ের নাম মহীতোষ। মহীতোষ মণ্ডল।" 

 

 

[দুই]

মধ্যরাতে হঠাৎ জানলার বাইরে কাকের বিকট চেঁচামেচি শুনে ফাল্গুনী চ্যাটার্জীর ঘুম চটকে গেল। চিরকুটটা বালিশের নিচেই পাওয়া গেল, ঠিক যেমনটি শিবতোষ বলেছিল।

নব আর খোকনদাকে ডেকে তুলে সব গুছিয়ে নিতে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগল। মালপত্র তো নেহাত কম না। খান দশেক বড় ব্যাগ হল। তাতেও সব আঁটল না। একটা মাঝারি ট্রাভেলব্যাগ ফাল্গুনী নিজেও নিলেন। তারপর ড্রাইভারকে ফোন করে গাড়ি বের করতে বলে সদর দরজা খুলতেই তিনি থ।

একদল ফর্মাল পোশাকের লোক দাঁড়িয়ে আছে। গেটের বাইরে দপদপ করছে সরকারি গাড়ির লালবাতির আভা।

সামনের ভদ্রলোক এগিয়ে এসে আইকার্ড উঁচিয়ে ধরলেন, "আমরা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট থেকে আসছি। আমি কলকাতা জোনের জয়েন্ট ডিরেক্টর বরুণ বিশ্বাস।”

ফাল্গুনী চ্যাটার্জীর মাথাটা বোঁ করে ঘুরে গেল। ক্যানভাসের ভারী ব্যাগখানা হাত থেকে বোঁটা-ছেঁড়া পাকা ফলের মতো খসে পড়ল ঝুপ করে। 

চিত্রার্পিত এমএলএ, তাঁর দুই শাগরেদ আর দরজার সামনে জড়ো হওয়া লটবহরের দিকে চেয়ে হাসলেন বরুণ বিশ্বাস। বললেন, “আমাদের অনেকটা পরিশ্রম বাঁচিয়ে দেবার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।”

ফাল্গুনী চ্যাটার্জী কিছুই বলতে পারলেন না। ভ্যাবলার মতো চেয়ে রইলেন। নব আর খোকনও বিভ্রান্ত। কোত্থেকে কী হচ্ছে আগাগোড়া কিছুই তারা বুঝে উঠতে পারছে না। ইডি-র অফিসাররা ততক্ষণে ব্যাগ খুলে জিনিসপত্র পরীক্ষা করতে শুরু করেছেন। দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে গুটিয়ে কেন্নো হয়ে যেতে দেখে বরুণ বিশ্বাস যে ভারি তৃপ্তি পেয়েছেন সে-কথা তাঁর চোখেমুখে স্পষ্ট ধরা পড়ছিল। ফাল্গুনীর কাঁধে হাত রেখে তিনি বললেন, “ভোররাতে ঘুম ভেঙে আমিও বালিশের নিচে একটা চিরকুট পেয়েছি, মিঃ চ্যাটার্জী। তাতে আপনার নাম এবং ডেজিগনেশন লেখা ছিল।” 

ফাল্গুনী এবার কিছু-একটা বলার চেষ্টা করলেন। তাঁর ঠোঁট কেঁপে উঠল। চোয়ালও নড়ল। তবে ‘ঘোঁৎ’ করে একটা অস্ফুট শব্দের চেয়ে বেশি কিছু শোনা গেল না।

“তিন দিন আগে বাগনান থানা এলাকায় বছর-পঁয়ত্রিশের এক ভদ্রলোক ফলিডল খেয়ে সুইসাইড করেছেন। ভদ্রলোক দেড় বছর আগে ভাইয়ের চাকরির জন্য জমি বেচে আপনাকে দু-লাখ টাকা দিয়েছিলেন। চাকরি হয়নি। বেরোনোর আগে বাগনান থানা থেকে কনফার্ম করলাম, ভদ্রলোকের নাম শিবতোষ মণ্ডল।” বলতে বলতে বরুণ বিশ্বাস একটা সিগারেট ধরিয়ে নায়কের উত্তমবাবুর স্টাইলে রিং ছাড়লেন। তারপর ফাল্গুনী চ্যাটার্জীর কাগজের মতো সাদা মুখটার দিকে চেয়ে ফ্যাক করে হেসে ফেললেন, “কী ভেবেছেন? টুপি কি শুধু আপনারা নেতারাই পরাতে পারেন?”

 

 

 

 

0 Comments

Post Comment