পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

মোনাজাত

  • 04 June, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1076 view(s)
  • লিখেছেন : আয়েশা খাতুন
পলাশ শিমুলের সাথে রক্ত কেনো মিশে যায়! সে রঙ বসন্তের গানে ফিরে আসে। দেশে দেশে দুর্বলদের রক্ত নিঃশব্দে পলাশে শিমুলে লুকিয়ে থাকে। এই সব কথাই বলে যাচ্ছেন কালকেতুকে এক বিবেকবান মানুষ। যার নাম প্রাণতোষ। কথা গুলো ভালো লাগছিলো না কালকেতুর। কয়েকদিন হলো কালকেতু এসেছে এই বঙ্গে। দলিত হলেও তাকে আজ কাল দলের লোকেরা খুব মান্যতা দিয়েছে। তার হাতেই জমা হয়েছে রামনবমীর মিছিলের অস্ত্ররাশি। দলিত, আদিবাসীদের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে দেশপ্রেম। বিষিয়ে দিতে হবে তাদের মনকে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণায়। সে পথেই হাঁটছে কালকেতু।

আর এরই মাঝে এসে হাজির হয়েছে প্রাণতোষ প্রামানিক। সে ধর্ম পালনের ধারধারে না। এদিকে কালকেতু নতুন করে হিন্দু ধর্মের খুঁট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে-তাই সে নিজেকেও খুব দাম দিতে শুরু করেছে।

দুজনে মনের দিক থেকে দুই মেরুর মানুষ হলেও প্রাণতোষ আর কালকেতু দুজন দুজনের পরম বন্ধু।  প্রাণতোষ এই খবর পায়নি যে কালকেতু এক গুরুদায়িত্ব পালন করতে এ বঙ্গে এসেছে। সে জানে  কালকেতু সন্যাসী না তবে সন্যাসীর মতো। তার পাখির প্রতি প্রেম,ময়ূরের পিরিতি, সাপের প্রতি প্রগাঢ় অনুভব। তা-ই ভালোলাগে তাকে। এজন্যই  দেখা কর‍তে এই জঙ্গলে আসা। কিন্তু একি শুনছেন কালকেতুর মুখে! কালকেতু কি করে এক কালাচ কেউটে সাপের ভূমিকা পালন করছে! প্রাণতোষ সিদ্ধান্ত নেন- এক্ষুনি  কালকেতুকে ত্যাগ করা উচিৎ। আর তখনই কালকেতু তার দুহাত ধরে অনুরোধ করে -একটি কাহিনি শোনার। প্রাণতোষ জানে এই কাহিনি হয়তো হবে সোমনাথের মন্দির ধ্বংসের অথবা আওরঙ্গজেবের কাশীর মন্দির ধ্বংসের অথবা তাজমহল ছিলো কালাচাঁদের মন্দির এই সব মিথ্যে দিয়ে সাজানো। সেগুলোকেই সত্যি করবে। ভাবতে ভাবতে কালকেতুর কথা এদিকেই এগিয়ে যাচ্ছিলো। প্রাণতোষ তুলনায় কালকেতুর চেয়ে কম মনযোগী ছিলো ক্লাসে কিন্তু কারো চাতুর্য ধরতে অসুবিধা হতো না।

কালকেতুর মনের ভিতরে ঢুকানো হয়েছে অকারণ সন্দেহ! যুক্তিহীন অনুমান! নির্বোধ ইতিহাসের গল্প! একটি মুসলমান মেয়েকে বলাৎকার করে হিন্দুত্বকে শক্তিশালী করবে! কালকেতু কী পেয়েছে এসব করার জন্য! বিস্মিত প্রাণতোষ। 

প্রাণতোষ প্রশ্ন করে-আচ্ছা কালকেতু তুই কি অজান্তেই এই রক্ত নদীর ঘাটে বসেছিস? নাকি তুই এখন স্বচেতন অভিভাবক ঐ অস্ত্রগুলোর?

কালকেতু অট্টহাসি হেসে বলতে চেয়েছিলো আরো কিছু নোংরা কথা মুসলমান মেয়েদের নিয়ে কিন্তু কোথায় যেন একটা আটকায় তার এই সব কথা বলতে। ঠিক এই খাঁজটা ধরে ফেলে প্রাণতোষ। তুই কি জানিস কালকেতু একটি মানুষের আচরণ একটি গোটা জাতির আচরণ হতে পারে না!

কালকেতু ঠোঁট টান করে বলে- হাঁড়ির ভাত একটি টিপলেই বোঝা যায় যে ভাত এখন হয়েছে কি না। সব ভাত টিপতে হয়না! প্রাণতোষ দেখাতে পারবি একজন মুসলমানও অন্যের ধর্মকে ভালোবাসে? সমীহ করে? একটি পুরুষ কিংবা একটি মহিলার কাজে- কর্মে দেখাতে পারবি তাদের ভারতের প্রতি প্রেম আছে? একটি প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা আছে?

প্রাণতোষ ঠিক এই সুযোগটা হাতছাড়া করতে নারাজ। একটি চ্যালেঞ্জ ধরে নেয়।

সে বলে- যদি দেখাতে পারি তাহলে তোর কথায় ফিরে যাবো একটি ভাত টিপে জানতে হয় গোটা হাঁড়ির ভাত হয়েছে কি না। প্রাণতোষ হাতটা বাড়িয়েছে কালকেতুর দিকে। কালকেতু তার হাতটা ধরে - চল আজই এই সময়ে এক গ্রামে যাবো। এক মুসলমান চাষির ঘরে। কেবল শুনবো আর কেবল একটি নতুন বীজ বুনবো- ওরা দুজনে চলে যায়  গ্রামে- গ্রামটি মুসলমান মানুষের বাস।

 

মুসলিমগ্রাম গুলোতে রমজান মাসের গভীর রাতে এক তাপহীন সূর্য ওঠে ক্ষণকালের জন্য। এমন ঘর নেই যারা ওই সূর্য দেখে না। সেহেরি করতে হয় যে ওদের রোজা মাসে। মানে রমজান চলছে এখন। মসজিদের মুয়াজ্জিন রাত একটা বাজলে ঘণ্টা নিয়ে পাড়ায় ঘন্টা দেয় ঢননন ন ন ন--! কি মজার কথা দেখ কান পেতে শোন, ঘণ্টা কি বলছে! প্রাণতোষ কালকেতু এখন সে বাড়ির অতিথি। প্রাণতোষের বাবার বন্ধুর মেয়ের বাড়ি এটা। চারিদিকে সাম্প্রদায়িক বিষ যত ছড়ায় এই পরিবারের সম্পর্ক তত নিগুঢ় হয়। যখন তখন আসা যাওয়া হয় এই দুই বাড়ির ভিতর। এই বাড়িতে এক ১৬ বছরের কিশোরী আছে। সে ইলেভেনে পড়ে সাইন্স নিয়ে। সে কতই না স্বপ্ন দেখে। যদিও আজ ২৭ শে রোমজান। শবেকদর রাত। আজ রাতের মাঝে গাছ পালা, সবুজ ভূমি, নদী - পাহাড় সকলেই আল্লাহর বশ্যতা স্বীকার করেছে আর সেজদা করেছে, কোরানের বাণী এসেছে আজকের রাতেই।"পড়ো পড়ো পড়ো - পাঠ করো পাঠ করো পাঠ করো!"  আজকের রাতেও  যদি এমন জিবরাইলের আগমন ঘটে উপহারের চেঙ্গারি নিয়ে। এমন ঘটনা যদি ঘটেই যায়! এই বিশ্বাসের সাথে দুহাত তুলে জায়নামাজ বিছিয়ে রয়েছে আর মোনাজাত চেয়ে যাচ্ছে এই কিশোরী -

"আয় আল্লাহ তুমি আমার  মৃত বড়োমাকে ভালো রেখো। তুমি আমার মৃত কালো বড়োমাকে ভালো রেখো। তাদের গোর আজাব মাফ করে দিও।

এই দোয়া পৌঁছালো আল্লাহর দরবারে। এমন শব্দ শুনে ফেরাস্তা কিছুতেই বুঝতে পারে না। কেই বা বড়ো মা আর কেই বা কালো বড়োমা! ওদিকে দোয়ার শব্দের অর্থ সহ জমা করার সময় দিয়েছে মাত্র এক আলোকবর্ষ।

মেয়েটি নামাজের পাটিতে বসে দুহাত অঞ্জলি করে পেতে আছে আকাশের তলে। সাদা মেঘেরা জিজ্ঞেস  করলো- তোমার কে বড়ো মা আর কেই বা কালো বড়োমা? তাদের মায়ের, বাবার  নাম কি ছিলো? আর তারা কি-ই বা  কাজ করতো?

মেয়েটি তার দোয়ার শব্দে আবার বললো, আমার বড়োমা কে জান্নাত দান করবেন। আর কালো বড়োমাকে বেহেস্ত।

আচ্ছা তোমার বড়ো মা কে? আর কালো বড়োমাই বা কে? এক অহি প্রকাশ হলো।

মেয়েটি মেঘের মতো সাদা দাঁত বের করে বললো- ও-মা! আমার বড়োমাকে চেনো না! তা চিনবে কেনো! আহা আমার বড়ো মা-মানে আমার মায়ের নানী। যে কিনা সারাদিন ফসল কুটো গুচ্ছিয়ে রাখতেন,একটি শস্য দানাও  নষ্ট হতে দিতেন না।

তিনি যখন বেঁচেছিলেন তখন তিনি খোদার দরবারে  দোয়া চায়তেন  এই বলে " খুদা তুমি দেখতেই বা কেমন  আর তুমি কি ই বা ভালোবাসো! তুমি পাখিদের আনাগোনা করাও আসমানের তলে! ওদের ডানায় ক্ষমতা দিও  খোদা। ব্যাধের তীর থেকে  ওদের রক্ষা করো। কারণ তুমি রক্ষাকারী বলে জানান দিয়েছো। "

তিনি বলতেন - কাকগুলো খাবার পাচ্ছে না আজ কাল। কারণ গ্রামের চালা ঘর বদলে গেছে, রান্নাঘরের খোলা দরজাটার ফাঁক থাকে না, হাঁসকল ডোমনি দিয়ে আর দুয়োর বসাচ্ছে না। তাই কাক বসার জায়গা পাচ্ছে না। ওরা যদি খাবার না পায় তাহলে চোর হয়ে যাবে যে। পেটের দায় বড়ো নিষ্টুর! তুমি কাকেদের আত্মসম্মান দিয়ে বাঁচিয়ে রেখো আল্লা!"

হ্যাঁ  আমার বড়ো মা  আর একটি কথা বলতেন - -প্রজাপতি, শুঁয়োপোকা আর গুটি এই তিনটে কিছুতেই বুঝতে পারিনি। শুঁয়োপোকা দেখলেই গা চুলকায় মন কুঁচকায়। পাতা খেয়ে যখন ওরা নিজের লালায় নিজেকে গোপন করে গুটির ভিতর ঢুকে আত্মমগ্নতায় নিজেকে নিজেই রূপ দেয় দেখলে মনের ভিতর থুম মেরে যায় আর কি বলব্যো! যেনো নাটকের  গ্রীনরুম! সুবহান-আল্লাহ! যেই দেখি গুটি কেটে বাতাসের সাথে ঢেউয়ে ঢেউয়ে মিসে গ্যালো একটা নেচেওঠা রঙ! রঙ রঙ! হ্যাঁ হ্যাঁ রঙ! রঙিন প্রজাপতি! এই আসছে এই যাচ্ছে! এই ধরি ঐ ধরি! ধত্তে আর পারিনা! আমার এই বুড়ো বয়সটা ক্যামুন বাল্যিকা হয়ে যাই! ভুলে যাই শুয়োপোকার বেলা! আল্লাহ তুমি  কেবলই  রঙে রঙের উথালি-পাথালি ! "

আচ্ছা বলো তো এর পরেও বলবে কি, যে তোমরা আমার বড়োমাকে চেনো না?

মেঘের আড়ালে ফেরস্তা দাঁড়িয়ে ছিলো, সে বললো-আরে এমনি করে বললে হবে না। তোমার বড়োমার দোয়া শুনলে কাজ ভুলে ঐ বনে বাদাড়ে ঘুরতে যেতে হবে। এখন -বলো, তোমার বোড়োমা  কত রাকাত নামাজ পড়েছে? ঠিকঠাক  রোজা রেখেছিলো তো ? মাথার ঘোমটা কতোটা টানতো? তাতে কপাল কি ঢেকে রাখতে পারতো! আচ্ছা নামাজ পড়তে পড়তে কপালে কি কালো দাগ দেখা গেছিলো?

এ প্রশ্ন শুনে আমি হাঁ করে আছি। ঘাড় নড়িয়ে বললাম – তিনি তো এসবের ধার ধারতেন না গো!  নামাজ পড়বে কি! তোমরা যে বলে রেখেছো - "শুচি বসনে নামাজে যেতে হয়।" তিনি শুচি বসন কোথায় পাবেন?  তাঁর একটি মাত্র কাপড় ছিলো তিনি বলতেন "এসেমা আমার মারকিনের লইথেট আনতো মা। এসেমা নামে যাকে ডাকতো সে আমার দিদি তার নাম অসীমা। ঠিক করে উচ্চারণ হতো না তাঁর। তাই তিনি  বলতেন  এসেমা।

আরে সে বারে সেই খরার সময়ে ও-ই যে গো যে বারে আখের আলসেতে আগুন লেগে গোটা গ্রাম আগুনে পুড়েছিলো। ওহ! তুমি কি মনে করতে পারছো না? তোমার হুকুম ছাড়া কি গাছের পাতা নড়তে পারে! যাই হোক যা বলছিলাম-ওই সময়েই একবার একটা খেঁকি কুকুরের কানে পোকা হয়েছিলো। সেই পোকা বার করতে গিয়ে তাঁর সেই মারকিনের লৈথ্যের শুচিতা আর থাকত না। ধোলো বড়োমা বলতেন- কি জ্বালার কতা গো! ক্যুক্যুরের কানে পোকা হলে আর কি সে শুনতে পাবে! বলো! এমুন তাজ্জুব কথা! ক্যুক্যুর তো ক্যান নিয়েই জগতের চারিদিকে পাহারায় বিখ্যাত। আর তার কানে পোকা!

একথা শুনে মেঘের আড়ালে ফেরেস্তা সহ মেঘ কড়কড় করে ডেকে উঠলে মেয়েটির মোনাজাতের হাত কেঁপে ওঠে।

মেয়েটি বললো -দেখো শব্দ শুনে প্রাণে কম্পন আসে। তা হবে না। ভয় দেখানো চলবে না। খোদা বলেছেন তিনি ক্ষমাসুন্দর। তাহলে আমার ধোলো বড়োমাকে জান্নাতে দেবে না কেনো?

সকলেই চুপ।ময়েটি আবার দোয়া চায়-"আয়আল্লাহ আমার কালো বড়োমাকে বেহেস্ত দেবে তো?

আবার সেই একই প্রশ্ন -আচ্ছা তোমার কালোবড়োমা তিনি কি রোজা রেখেছিলেন? আর আর যা খোদার হুকুম ছিলো  পালন করেছিলেন?

মেয়েটি হাত নামাচ্ছে না। অমনি করেই রেখেছে যেনো বেহেস্ত যাবার এক সোজা সিঁড়ি। মেয়েটি বললো-

কি যেন একটা কথা বললে? রোজা?

হা হা হা আমার খুব হাসি পাচ্ছে গো!  তাও জানো না! আমার কালো বড়োমার আকাশে রোমজানের চাঁদ উঠেই থাকতো। তখন মাটিকে ভাগ করেনি, মাটিতে বিষ দেয়নি, যুদ্ধে জমা করা ইউরেনিয়াম গুলো রাসায়নিক সার করে হ্যালিকপ্টারে কেউ ছড়ায় নি। মাটি থেকে দুচার শীষ কদোর টুং জড়ো করতে করতে বিকেল হয়ে আসতো। আর তা রাঁধতে রাঁধতে মাগরিব ছুঁই ছুঁই হয়ে যেতো। বলো তাহলে কি নতুন করে রোজা রাখতে হয়!

ফেরেস্তা একটু মেঘেদের পিছনে ঠেলে দিয়ে বললো

শোনো মেয়ে- তোমার কালো বড়োমাকে বেহেস্ত দেওয়া যাবে না।

তবে  তোমার ধোলো বড়োমার কথা বলো।

মেয়েটি তার অঞ্জলি জলছবি করে পাঠালো খোদার আরোশে। উঁহু! হবে না। আগে কালো বড়োমাকে বেহেস্ত দেবে কিনা বলো। তার পরে ধোলোবড়োমার কথা হবে। আমার কালো বড়োমা জল নষ্ট করেন নি, তিনি খুব কম খেতেন আর কম কথা বলতেন। জানো ফেরেস্তা -  আমার কালো বড়োমা শাড়ির গিঁঠে বীজ বেঁধে রাখতেন। মাটি খুঁড়ে সে সব বীজ রেখে দিতেন মাটির ভিতরে। নাকি তার এটা ছিলো একটা মস্ত কাজ। বরষা এলেই মাটি ফেড়ে সেই বীজ থেকে সবুজ পাতা আনতেন। পাতা ডাল পাখির বাসা আর ডাল ভরা ফুলেদের আকাশের দিকে আলতো করে তুলে দিতেন।কখনো কখনো তিনি নিজেই এক মাচানতলা হয়ে ঘাড় নিচু করে গাছেদের বাঁচাতেন-- হ্যাঁ  হ্যাঁ আমি সাক্ষী হিসাবে বলছি।

এ হেন সাক্ষীর সাক্ষাৎ ফেরেস্তার পচ্ছন্দ না। ফেরেস্তা বললো আচ্ছা তোমার কালো বড়োমা কি তাহাজুদের নামাজ পড়েছে কোনোদিন?

মেয়েটি তার দুহাত অমনিই রেখে বললো - তুমিই কি শেষ কথা বলবে? এখানে কি খোদা নেই? দয়া করে সপ্ত আকাশের দরজাটা খুলে দেবে গো! আজ যে শবেকদর রাত!

অসহায় ফেরেস্তা একটু মেঘেদের জলে ভরে দিয়ে বললো, বিশ্বাস করো জলেভরা মেঘ আমি কিছুই  বুঝতে পারছি না- মেয়েটি কেনো এতো জোর দিয়ে বলছে যে তার কালা-ধলা বড়োমার জান্নাত বেহেস্ত চায়! বলোতো মেঘ, কালা-ধলা বড়োমা বলে কি কারো জান্নাত বেহেস্তের দলিল হয়! তবু যদি তার ধলা বড়ো মার কথা বলে তবুও নাহয় কালো বড়োমাকে আড়ালে আবডালে ঢেকে রাখতে পারতাম। আচ্ছা তুমিই বলো এমন শবেকদর রাতে কেউ কি কালো বড়োমাকে নিয়ে ফেরেস্তার সঙ্গে তুয়ামুয়ি করে?

মেয়েটি নাছোড়বান্দা! সে একই কথা বলে যায় আমার কালো বড়োমাকে বেহেস্ত দিও আর ধোলো বড়োমাকে জান্নাত দান করো!

মোনাজাতের হাত পেতে আছে। সে আজ তার হাতকে করেছে খোলা ঝিনুক। সে পণ করেছে এ ঝিনুক হাতে মুক্তো নিয়ে তবে হাত চুম্ববে তার ঠোঁট।

ফেরেস্তা আবার প্রশ্ন করলো- তুমি নিজের জন্য নিজের জন্য কিচ্ছু চাইবে না? আমি যে ডালি নিয়ে বসে আছি শুধু দিতে।

রাত ভোর হয়ে আসে।সে হাত  সপ্ত আকাশে উঠে গেছে, মেঘেদের  সরিয়ে সরিয়ে খোদাকে খোঁজে- খোদা মোনাজাতের দুহাত ভরে একমুঠো বিষহীন মাটি আর একটি নতুন বীজ রেখে দিলে দুহাত ধীরে ধীরে ধরণীই নেমে আসে।

এই সব মোনাজাত, শবেকদর, জান্নাত বেহেস্ত- কুকুরের কানের পোকা, নাটকের গ্রীনরুম গুটির খোলায় প্রজাপতির রঙিন মুক্তি  আর কালোবড়োমার সারা আকাশ জুড়ে রমজানের চাঁদ জেগে থাকা দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে

কালকেতু কালকেতুর  মুখোমুখি এক আর্শিতে কলিঙ্গ যুদ্ধশেষের  অশোক কে দেখলো।

0 Comments

Post Comment