উৎসবে ফেরার নিদান এসে গেছে। সিদ্ধান্তে হাতুড়িপেটা পড়তে না পড়তেই ম্যারাপ বাঁধা হচ্ছে শহর জুড়ে। বচ্ছরকার মতো আবারও বাঁশে-বাঁধা ফেস্টুনের বিজ্ঞাপনী ফ্লেক্সে মুখ ঢাকছে পথঘাট।আধখানা মন বলছে জমি ছাড়ব না, বাকি আধখানা বলছে রোশনাই দেখব না? এই যযৌ ন তস্থৌ-এর দাওয়াই দিয়েছেন মধ্যপন্থীরা, বিপ্লবের মধ্যে উৎসব অথবা উৎসবের মধ্যে বিপ্লবের ডাক উঠছে।
প্যালেস্টাইন ও লেবানন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমি দেশগুলো এক অমানবিক দ্বিচারিতায় লিপ্ত। একদিকে গাজা বা লেবাননে ইসরায়েলি সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করছে। অন্যদিকে ইসরায়েলকে অস্ত্র, বোমা, গোলাবারুদ সরবরাহ করছে, যা ব্যবহার করা হচ্ছে শিশু,নারী, পুরুষ নির্বিচারে হত্যা করতে। এই দ্বিচারিতায় এখন সামিল আমাদের দেশ ভারতও।
এই আন্দোলন একমুখী হয়ে ক্রমশ এক কানাগলির ভেতরে সেধিয়ে চলেছে। আরজি করের ন্যায়বিচার চাইতে চাইতে আমরা আরও চার দিকের যে সব ঘটনায় ন্যায় বিচারের দাবি তুলতে হবে, ভুলে যাচ্ছি। হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের বীভৎসায় আমরা মুখ বন্ধ রাখতে পেরেছি। হঠাৎ আমরা যেন “আমরা-বাঙালি” হয়ে উঠেছি। আমরা রাষ্ট্রকে চিহ্নিত করে আন্দোলনের মহড়া দিচ্ছি ভেবে শরীর গরম করছি, আর আসলে রাষ্ট্রের এক ছোট হাতলের বিরুদ্ধে লড়াই করে বড় কুর্সিটাকে যেন ছাড় দিতে বদ্ধপরিকর।
আসলে এটা একটা শুয়োরের পৃথিবী। কর্দমাক্ত, কালো জলের একটা সমতল ভুমি। পচা আবর্জনা স্তূপের ভেতর প্লাস্টিক, খৈনি পানবাহারের প্যাকেটের টুকরো, মদের ভাঙা বোতলের টুকরো, ঠান্ডা পানীয়র বোতল, হোটেলের পরিত্যক্ত খাবার, সারা শহরের উচ্ছিষ্ট, বাজারের পচাগলা আলু কুমড়ো পটল ভেন্ডি, রক্তমাখা স্যানিটারি নাপকিন, মরা কুকুর বিড়াল কখনো বা মানুষের ভ্রুণ।
২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে কটা লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পৌরসভা ভোট হয়েছিল তার মোট খরচ ছিল ১.৫ লাখ কোটি টাকা। এখন হলে সেটা ২ লাখ কোটি ধরা যায়। আমাদের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। সুতরাং মাথা পিছু ভোটের খরচ ১৫০০ টাকা। অন্যদিকে আমাদের দেশের মোট ঋণ হল ২০৫ লাখ কোটি, অর্থাৎ মাথা পিছু ঋণ হল প্রায় ১.৫ লাখ টাকা! তাহলে সঞ্চয়ের জন্য কোনটা কমানো প্রয়োজন সেটা পাঠকই বুঝে নিন! এক দেশ এক ভোট হলে একদিন দেখা যাবে, এক দেশ এক ফ্যাসিস্ট সরকার ছাড়া কিছু নেই।
দ্রুত গতির জীবনে শ্লথ গতি, টুংটাং বেল, ঘটাং ঘটাং করতে করতে ধীরে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া এই বাহনটি অনেকের মতে, গতির যুগে বড্ড বেমানান। শহরের বুকে বিরাট বপু নিয়ে ধীরে সুস্থে এগিয়ে যাওয়া এই বাহনে চড়ে সময় নষ্ট করার সময় কই আজকের মানুষের হাতে। তাই বুঝি ফুরালো ট্রাম-সফর। নাম উঠলো তার ইতিহাসের পাতায়। নাম লেখালো সে অবসরের খাতায়। যদিও সরকার থেকে এখনও সেই দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি, তবুও বিদায় ঘণ্টা তো বেজেই গেছে।
টাকা আছে হেলথ ইন্সুরেন্স কিনছি, শিক্ষা কেনার মতন। কিন্তু তারপর যদি হাসপাতাল আর না থাকে চিকিৎসা করার মতন, যেটা আমরা দেখেছি উন্নত দেশগুলোতে প্যান্ডামিক এর সময়। টাকা দিয়ে পড়িয়ে ছেলে মেয়ের কর্মসংস্থান হবে কোথায়? আতুপুতু করে বড় করা বাচ্চাগুলোকে যখন ২৪ ঘন্টার গাধা খাটুনিতে বেসরকারি কর্পোরেট পুঁজি সিস্টেম পিষে মেরে ফেলে দেবে কার বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড ধরবেন? আরজিকর নিয়ে আন্দোলন যে শিক্ষা দিয়ে গেল, তা বোঝার সময় কি এখনও হয়নি?
গত জুলাইয়ের ফ্রান্সের নির্বাচনে বামপন্থীরা ভাল ফল করলেও, স্থিতিশীলতার সঙ্কট জিইয়ে রেখে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর হাত ধরে দক্ষিণপন্থীরা ফের ক্ষমতা দখল করলো সেখানে। তার গতিপ্রকৃতি নিয়েই এই প্রতিবেদন।
তিলোত্তমার মৃত্যু ঘিরে যারা জাস্টিস দাবী করছেন, এই প্রাইভেটাইজেশনের ব্যাপারটাকে নজরের বাইরে রেখে জাস্টিসের কোন ধারনায় পৌঁছোতে পারবেন না তারা। পারবেন না, কারণ তারা নিজেদের কাছে সৎ। তাই প্রশ্নটা তোলা উচিত এখনই। কারণ ডাক্তাররা তো সিস্টেমের অঙ্গ। সাধারণভাবে সিস্টেম বদলে ফেলার বিপ্লবী অ্যাজেন্ডা এদের স্বাভাবিক জীবনদর্শনের অঙ্গ নয়। শ্রমিক কৃষকের ক্ষেত্রে হয়ত যা স্বাভাবিক, তা এদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নয়।
এ কথা আজ আর কেউই অস্বীকার করেন না যে শুধুমাত্র একটা বা দুটো পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ণ করলে তা কখনোই সঠিক হতে পারে না। এই সমস্যা দূর করার জন্যই নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ণের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সমস্যা হল ফর্মেটিভ মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে যে সূচক গুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না।
এ কথা আজ আর কেউই অস্বীকার করেন না যে শুধুমাত্র একটা বা দুটো পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মূল্যায়ণ করলে তা কখনোই সঠিক হতে পারে না। এই সমস্যা দূর করার জন্যই নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়ণের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সমস্যা হল ফর্মেটিভ মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে যে সূচক গুলো নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা বাস্তব অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কি না।
তিলোত্তমার মৃত্যু ঘিরে যারা জাস্টিস দাবী করছেন, এই প্রাইভেটাইজেশনের ব্যাপারটাকে নজরের বাইরে রেখে জাস্টিসের কোন ধারনায় পৌঁছোতে পারবেন না তারা। পারবেন না, কারণ তারা নিজেদের কাছে সৎ। তাই প্রশ্নটা তোলা উচিত এখনই। কারণ ডাক্তাররা তো সিস্টেমের অঙ্গ। সাধারণভাবে সিস্টেম বদলে ফেলার বিপ্লবী অ্যাজেন্ডা এদের স্বাভাবিক জীবনদর্শনের অঙ্গ নয়। শ্রমিক কৃষকের ক্ষেত্রে হয়ত যা স্বাভাবিক, তা এদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক নয়।
ঈদের সাত দিন আগে একদিন খুব ভোরে বউ আমাকে কনুই দিয়ে গুঁতিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে বলল, ‘তাড়াতাড়ি যাও।’ যে-লোক সকাল নটার আগে কোনোদিনই বিছানা ত্যাগ করতে পারে না, তার সঙ্গে এমন ব্যবহার অত্যাচার ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারি না, আপনাদের মতো আমিও বউকে ভয় পাই।
মিশেল ফুকোর কথা মিলে যাচ্ছে । হাসপাতাল মূলত রোগীর, তারপর, ডাক্তারের, তারপর কর্তৃপক্ষর, তারপর, স্বাস্থ্যকর্মীদের, তারপর গ্রুপ ডি কর্মচারীদের। এখন ঠিক উল্টো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরীক্ষিত স্থানে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার প্রাঙ্গণে রোগীর স্থান কিন্তু তলানিতে। আমাদের অতি প্রিয় স্থবির দাশগুপ্তও এমন করেই ভাবতেন, আজ অন্যরকমভাবে ভাবার মানুষদের অভাব হচ্ছে। আরজিকরের নির্যাতিতার বিচারের দাবীতে আন্দোলন চলছে, না ভিতরে ভিতরে দ্রুত বেসরকারিকরণের দাবী জোরালো হচ্ছে, সেটাই গুলিয়ে যাচ্ছে।
"আমাদের কর্মবিরতিতে কোন রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হয়নি"। তাহলে আপনাদের সারা বছর কাজ কি? বলার সময় তো বলেন আপনারাই হাসপাতালের মেরুদন্ড। নিট পরীক্ষার কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবার পর যথেষ্ট উপলব্ধি করতে পারছি আমাদের স্বাস্থ্যের ভবিষ্যৎ কি? গভীর কুয়াশাচ্ছন্ন। প্রবেশিকা পরীক্ষার শুরু থেকেই কোচিং সেন্টার চয়েস করা ও লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা, ঠিকঠাক প্রায় হুবহু প্রশ্নপত্রটি সাজেশন হিসেবে লাভ করা, এইগুলোও তো দুর্নীতি। তা নিয়েও কথা হোক।
এই আন্দোলন যে আলোর দিশা দেখাতে পারতো তা হল নারী পুরুষ সমতার পথ। পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ভোগবাদী ধারণার মূলোচ্ছেদ। রাত কেন, প্রত্যেক দিন পথে ঘাটে ঘরে বাইরে মেয়েরা যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়, তা নিয়েও কথা বলা দরকার। বাসে উঠলে কোথায় বসবো, সন্ধ্যা হলে কোন্ পথে ফিরবো, অদ্ভুত দৃষ্টির সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে চলবো এ তো প্রজন্মের পর প্রজন্মের গল্প। সমাজের এই গভীর অসুখ কীভাবে সারবে?