পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সাদা চাদর

  • 23 July, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 956 view(s)
  • লিখেছেন : সিদ্ধার্থ বসু
ঘরটা এমন কিছু বড় ছিল না। আবছা অন্ধকারের মধ্যে এমন কিছু দেখা যায় না। একটা ছোট্ট জানলা দিয়ে সামান্য আলো আসছে রাস্তার ল্যাম্প পোষ্ট থেকে। তা থেকে দেখা যাচ্ছে একটা চেয়ার আর টেবিল ছড়ানো। সামনের ফাঁকা মেঝেয় তখন শুকিয়ে যাওয়া কালচে দাগ।

সারা মেঝেয় ছড়িয়ে। শুকিয়ে যাওয়া রক্ত কি? আলোছায়ার মধ্যে দেওয়ালে লটকানো একটা ক্যালেন্ডারের মত কি যেন একটা একটু যেন নড়ে উঠল। নড়ার কারণ বাইরের দরজাটার একটা পাট বিকট শব্দ তুলে খুলে গেছে। বদ্ধ ঘরে ঢোকে এক ঝলক দমকা হাওয়া।

দরজাটা খুলেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। সামনের চেয়ার আর একটা ছোট্ট টেবিল। এতক্ষণে দেখা গেল একটা বিশালদেহী লোক বসে ঐ চেয়ারে। পোষাক আধো অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা। খানিকক্ষণ চারদিক শুনশান।হঠাৎ আবার সামনের দরজাটা খুলে গেল একটা বিরক্তিকর আওয়াজ তুলে। দুটো সন্ডা মার্কা লোক একটা লোককে টানতে টানতে দরজার সামনে নিয়ে এসে এক ধাক্কায় ঘরের ভেতরে ফেলে দিল। এমনভাবে ফেলল যেন একটা ভূষি  মালের বস্তা। তারপর লোকদুটো বেড়িয়ে গেল বিকারহীন ভাবে। দরজাটা আবার সেই বিশ্রী শব্দ তুলে বন্ধ হয়ে গেল। এবার লোকটা বেল বাজালো। একটা লোক দরজাটা খুলতেই চেয়ারে বসা লোকটা আঙ্গুল তুলে ঈশারা করল। লোকটা ঈঙ্গিত পেয়েই একটা সাদা চাদর পেতে দিল মেঝেতে।এবার লোকটা উঠল।তারপর এগোতে থাকল অন্ধকারে পড়ে থাকা মানুষটার দিকে। তখনও মেঝেয় লুটিয়ে পড়ে থাকা  মানুষটা তখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ছড়িয়ে থাকা হাত দুটোর উপর বুটশুদ্ধু পাটা তুলে দিয়ে রগড়াতে লাগল। লোকটা যন্ত্রণায় পরিত্রাহী চিৎকার করতে থাকে্। আশ্চর্য তার যন্ত্রণাবিদ্ধ মুখ দেখা গেলেও কোন শব্দ শোনা যাচ্ছেনা।এবার একটা লোহার ডান্ডা  নিয়ে এলো লোকটা। এবার সত্যিই ভয় পেয়ে যায় পড়ে থাকা মানুষটা। ওর ভয় পাওয়া চাহুনি দেখতে  দেখতেই আচমকা একটা মুখে বিকট শব্দ করে ওর পা দুটোর উপরে সজোরে মারে। তারপর পাগলের মত এলোপাথারী লোহার ডান্ডা দিয়ে মারতে থাকে। লোকটার চীৎকার করে কিছু বলার জন্যে কিন্তু সময় পায় না। লোকটা তাতেও থামেনা। টাটকা রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারদিক।একসময় মার থামিয়ে আবার চেয়ারের দিকে ফিরে যায়। হঠাৎ বেল বাজতেই লোহার দরজাটা আবার খুলে যায়। আবার সেই দুটো যমদূতের মত লোক এসে মেঝেয় পড়ে থাকা লোকটার পাদুটো ধরে টান দিতেই কোনরকমে ঝুলে থাকা পা দুটো প্রায় খসে পড়ার মত হলো।আচমকা ওদের একজন সাদা চাদরটা ধরে টান মারল। তারপর দুজনে মিলে চাদরটা পড়ে থাকা লোকটার গায়ে মুড়ে দেওয়ার আগে এক বার লোকটার নাকের নিচে হাত দিয়ে দেখলো। তারপর বেশ হাসিহাসি মুখ করে চেয়ারে বসে থাকা লোকটার দিকে ঈশারা করল। শেষ।তারপর পড়ে থাকা লোকটার মুখ সমেত দেহটা ঢেকে ফেলল। অবাক করে আচমকা দেহটা ছুঁড়ে ফেলে দিল বাইরের অ্ন্ধকারে। চেয়ারে বসে থাকা লোকটা টেবিলের ড্রয়ার থেকে এবার একটা মদের বোতল বার করল। ঘরের আলোটা হঠাৎ জ্বলে উঠল।

এই প্রথম একটা গলার স্বর শুনলাম। যেটা আমার বহুকালের চেনা। আজ কি উঠবি না? কটা বাজল খেয়াল আছে? উঠ। কলেজে যাবিনা?ভয়ঙ্কর দূঃস্বপ্ন থেকে জেগে ওঠার মত একরাশ বিস্ময় নিয়ে ঘরের দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলাম।দেওয়ালে মানচিত্রটা তখনও হাওয়ায় দুলছে।

 

0 Comments

Post Comment