-ট্রেন বলেছে?
এটা ছিল যে পরে আসবে তার রুটিন প্রশ্ন। কখনো শৈবাল কখনো বীথি।
-আজকেও মনে হচ্ছে ট্রেনটা ভোগাবে।
এটা দুজনের কোনো একজন বলতো। অপরজন বলতো,
-একটা দিন যদি ট্রেনটা সময়ে ঢোকে।
-সত্যি! রোজ হাওড়ায় লেটে ঢুকছে।
-তার উপর ঢোকার আগে কারশেডের বাইরে দশ মিনিট দাঁড়ানোটা তো রুটিন হয়ে গেছে।
-তারপরে বেরিয়ে ভিড় ঠেলে বাস ধরতে ধরতে রোজ অফিস লেট।
-অফিসে আমার মতো আর কেউ তো এতদুর থেকে আসে না। ফলে বুঝবে কি করে! নানা টিপ্পনী কাটা চলবে।
বীথি বলে,
-ঘর সামলে, সব কাজ সেরে সকাল সাড়ে সাতটার মধ্যে স্টেশনে আসাটাই একটা বড় লড়াই।
শৈবাল জানতে চায়,
-স্টেশন থেকে আপনার বাড়ি কত দূর?
-অটোতে পনেরো মিনিট। আপনার?
-আমিতো বাইকে আসি, দশ মিনিট।
শৈবাল আড়চোখে দেখে বীথির নাকের ডগায় ঘামকণিকার অবস্থান। চকচক করছে। ব্লাউজের বগল এই সকালেও ঘামে সিক্ত। তৈলাক্ত ক্লিভেজ। বীথি ঈষৎ মোটা, তাই ঘামও বেশি। ঘামলে ওকে বেশি ভাল লাগে।
একদিন বীথি বিনা ভূমিকায় কথা বলতে বলতে শৈবালের সাথে জেনারেল কামরায় উঠে পড়ে।
-এ বাবা! কথা বলতে বলতে আপনার সাথে জেনারেলে উঠে পড়লাম যে!...
বীথি কি ঈষৎ ন্যাকা? সে তো সব মেয়েই অল্প বিস্তর।
তখন থেকে একসাথে যাওয়া শুরু। কখনো দুজনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, কখনো বীথি বসে শৈবাল দাঁড়িয়ে। আবার কপাল ভালো থাকলে দুজনে পাশাপাশি বা মুখোমুখি বসে কথা চলে। মুখোমুখি কথা বলতে বলতে শৈবাল মনে মনে আবৃতি করে, “থাকে শুধু অন্ধকারে, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন…”
এসব ক্ষেত্রে ডায়েরি লেখার মতো রোজনামচা না লিখে এটা বলাই যায় যে খুব শিগগির ওদের ফেরাটাও একসাথে হতে থাকল। বৈশাখ,জষ্ঠী গড়িয়ে আষাঢ় চলে আসে। যাতায়াতের মাঝখানে মাঝে মাঝে হাতে হাত ধরে দুজনের সবুজ ময়দান। শৈবাল বীথির থেকে শুনতে থাকে ওর জীবনের কাহিনী।
বীথি ডিভোর্সী। ওর আছে এক বছর পাঁচেকের স্পেশাল চাইল্ড। ওর নাম শুভ। জন্মের পরপর ওর মধ্যে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখে ডাক্তার ওর ক্যারিওটাইপ টেস্ট করান। রিপোর্টে জানা যায় শুভ ডাউন সিনড্রোমের শিশু। যাকে আমাদের সমাজ বলে এবনরম্যাল বেবি! ওর স্বামীসহ শশুর বাড়ির সকলে নিধান দেয় যে বীথির জন্যই এমন পাগল ছেলে হয়েছে। ওর কোনো সন্তানই স্বাভাবিক হবেনা। অত্যাচার বেড়ে চলে। বীথি শুভকে নিয়ে ফিরে আসে চন্দননগরে বাবা মার সংসারে। ওর বর ডিভোর্সের মামলা করে। বীথি কনটেস্ট করেনা। কোর্টে এক্সপার্টি অর্ডার হয়ে যায় । বীথিকে ওর বাবা মা ভেঙ্গে পড়তে দেয়না, মনোবল যোগায়। আবার ঘুরে দাঁড়াতে উৎসাহ দেয়। নতুন করে জীবন শুরু করতে বলে। বীথি আবার পড়াশুনো শুরু করে। সরকারী চাকরির পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু করে। পরপর পরীক্ষা দিতে শুরু করে। রেল, ব্যাংক, ক্লারিকাল পরীক্ষা দিয়ে চলে। দু’বছর আগে ক্লার্কের চাকরী পেয়ে যায়। এই চাকরী পাওয়া যতখানি না ওকে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাচ্ছন্দ দেয় তার থেকে বেশি ওর হারিয়ে যাওয়া মনোবল পুনরুদ্ধার হয়। ওর নিজস্ব আইডেন্টিটি তৈরি হয়।
শৈবাল নিজেও অনেক কিছু দেখেছে, ফেস করেছে এইটুকু জীবনে। সেসব ওর মুখেই শোনা যাকঃ
“আমি খুব গরীব পরিবারের ছেলে। আমার বাবা আমার জন্মের বছর চারেক পর রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। টাকা পয়সা বিশেষ রেখে যাননি। আমি এক ছেলে হওয়ায় বাঁচোয়া। মা ছাত্র পড়িয়ে আমার খরচ চালাতেন। কলেজ লাইফে আমার মাথায় ঢুকেছিল হোল টাইমার লেখক হবো। এই পোড়া দেশে এসব পাগলামো। বিশেষত আমার মতো গরীব পরিবারে। একসময়ে সেটা বুঝতে পেরে ঠিক করলাম ফটোগ্রাফার হবো। সেই শুরু। ছোটো খাটো প্রতিষ্ঠানে বেসিক ফটোগ্রাফিক কোর্স করে বন্ধুবান্ধবের ক্যামেরা ধার করে কাজ শুরু করলাম। দেখতে দেখতে দশটা বছর এই লাইনে হয়ে গেল। এখন নিজের এক গাদা ক্যামেরা, যন্ত্রপাতি হয়ে গেছে। প্রায় লাখ চল্লিশের মতো জিনিসপত্র টুকটুক করে হয়ে গেছে। আমার কাছে পাঁচ-ছজন ছেলে কাজ করে। পারিবারিক অনুষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানের ছবি তুলে বেরাই। এছাড়া সময় সুযোগ পেলে কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে একা একা বেরিয়ে পড়ি আপন খেয়ালে মনের আনন্দে। মা মারা যাবার পর থেকে আমি আরো মুক্ত বিহঙ্গ। আসা যাবার টাইম নেই, কৈফিয়ত চাওয়ার কেউ নেই। বিয়ে থা করিনি। প্রেমও তেমন কিছু এগোয়নি। শুধু মায়ের কথা মনে পড়ে কখনো সখনো। একটা স্বপ্ন শুধু মাঝে মাঝে দেখি মা’কে নিয়ে। একটা ছোটোবেলার মূহুর্ত। শীতের দুপুরে ছাদে রোদে পিঠ করে বসে মা আমাকে স্তন্যপান করাচ্ছে! আমার শুধ মনে হচ্ছে আমি খুব ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত! আগে এটা খুব ঘন ঘন দেখতাম। ইদানীং আর দেখিনা। মা ছিল আমার বন্ধু ও একমাত্র আত্মীয়। মা চলে যাবার পর আমি আক্ষরিক অর্থে একা হয়ে পড়ি। বীথিকে ভালবেসে ফেলেছিলাম প্রথম দিনেই। কেন জানিনা ওর ক্লান্ত চোখে আমার নেশা ধরে গেছিল মহুয়ার মতো। মহুয়া আমি খাইনি কখনো, শুনেছি সেটা এরকমই। মনে হয়েছিল এই সেই চোখ যার জন্য আমি এতো বছর অপেক্ষা করে আছি! বীথির লড়াইয়ের গল্প ওর মুখে শুনতে শুনতে আমি রোমাঞ্চিত হয়ে উঠি। মনে হয়েছিল মনের মানুষতো এমনিই হওয়া দরকার। শুভকেও আমি ভালবাসতে লাগলাম। শুভ তো বীথিরই বেঁচে থাকার নিদর্শন।
সরস্বতী পুজোর দিন বীথি শৈবালকে ওদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করল। বীথি একটা ছোট্ট প্রতিমা কিনে এনেছিল আগেরদিন, পুজো করবে বলে। ফেরার সময় প্রতিমা সমেত বীথিকে ওর বাড়ির গেটে নামিয়ে যায় শৈবাল। সেই প্রথম। শৈবাল ভিতরে ঢোকেনি। বীথি ডেকেছিল। আধ ঘন্টা পর বীথি ফোন করে শৈবালকে পরদিন আসতে বলে সরস্বতী পুজোর খিচুরি ভোগ খাবার আমন্ত্রণ জানিয়ে।
বীথির বাবা মার সাথে বীথি আলাপ করিয়ে দিল। শৈবাল ওদের প্রণাম করে। শুভর সাথে অনেক খুনসুটি করল। যাবার সময় শুভ শৈবালকে যেতে দেবে না কিছুতেই। ওর ছোট্টো মুঠি আঁকড়ে ধরল শৈবালের জামার হাতা। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শৈবাল বাড়ি থেকে বেরতে পারল। বীথি পিছনে এলো ছাড়তে। অন্ধকার সিঁড়িতে শৈবাল বীথিকে চকাস করে একটা চুমু খেয়ে দিল। বীথি বাঁধা দিল না। বাইকে স্টার্ট দিয়ে শৈবাল বলল,
-চলি, কাল থেকে আমার বাইকে স্টেশন যাবে, বুঝলে?
-বুঝলাম ,দুবেলা কড়া পাহারায় আসা যাওয়া শুরু হল। স্বাধীনতা বলে আর কিছু থাকল না!
-একদম।ঠিক বুঝেছো, টা টা।
বাইকে স্পিড তুলে শৈবাল চলে গেল। ফাঁকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই গমন দেখতে দেখতে বীথি ভাবতে থাকল, ভুল হচ্ছে নাতো!
ঘটা করে বিয়ে হয়ে গেল শৈবাল আর বীথির। বিয়ে হল সব রকম নিয়ম কানুন মেনে। গায়ে হলুদ থেকে রেজিস্ট্রি কিছুই বাদ গেল না। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুভ মায়ের পাশে সেঁটে বসে থাকল।
ইদানীং ও দিদার কাছে বেশি সময় কাটাতেই পছন্দ করত। কিন্তু এখন ও মাকে চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেনা। মন দিয়ে শুধু মাকে দেখে চলেছে! বীথির সিথির সিঁদুর নিয়ে ওর কৌতুহল সব থেকে বেশি। কেবল তাতে হাত দিতে চায়! আর ইশারায় জিজ্ঞেস করে,এটা কি?
বিয়ের পর ওরা হনিমুনে দার্জিলিং যাবে ঠিক করা ছিল। সে গল্প বীথির মুখেই শোনা যাক।
শৈবালের পছন্দের জায়গা দার্জিলিঙে আমরা বিয়ের পর যাব ঠিক হয়। প্রথমে শুভকে সাথে নিয়ে যাওয়ায় আমার কিছু অস্বস্তি ছিল। এক তো এজাতীয় বাচ্চাদের ফ্লু হবার একটা ট্রেন্ড থাকে। যখন তখন সেটা হয়ে যায় এবং হসপিটাল অবধি গড়ায়। সেক্ষেত্রে দার্জিলিঙের ঠান্ডায় ওর সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া শৈবালের ওর সাথে একঘরে হনিমুন করা কতটা হজম যোগ্য হবে জানিনা। সর্বোপরি শুভ কখনো আমাকে অন্য কারোর সাথে শুতে দেখেনি। কিন্তু শৈবাল নিজে থেকেই শুভকে নিয়ে যাবার আগ্রহ দেখালো। ওর বক্তব্য হল, এটা ওর ও শুভ উভয়ের ক্ষেত্রেই একরকম ট্রায়াল হয়ে যাক। মা বলেছিল শুভকে রেখে যেতে। ম্যানেজ করে নেবে। কিন্তু শৈবাল নিজেই তাতে রাজি হলনা। অতএব আমরা তিনজন মিলে একদিন রাতে চেপে বসলাম দার্জিলিং মেলে। শুভর এতটা জার্নি এই প্রথম। নানা ওষুধের কারণে ওর ঘুমটা বেশি। রাতে ঘুমিয়ে পড়ল ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথেই। আমি আর শৈবাল গল্প করে সারারাত কাটিয়ে দিলাম। কত গল্প! ছেলেবেলার গল্প। স্কুলের নানা স্মৃতি। শৈবালের মায়ের নানা গল্প। আমাদের বিভিন্ন দেখা না দেখা বন্ধুদের গল্প। শৈবালকে আগেও জিগ্যেস করেছি ওর প্রেম নিয়ে। শৈবাল বেশ মজার। ও সেই অর্থে এই প্রথম প্রেম করছে! অনেককে দেখে ভালো লাগলেও বেশি দূর এগোতে উৎসাহ পায়নি। বা, কোনো মেয়ে ওর প্রতি দুর্বল হলেও ওর কেমন ঘুম ঘুম পেয়েছে! শৈবাল বলে, আসলে এইসব মেয়েদের দেখে প্রাথমিক আকর্ষণ তৈরি হলেও কোথাও একটা লিংক ফেলিওর হয়ে যায়! আমি ওর বুকে মাথা রেখে বলি, তোমার কপালে আমি নাচছি যে, তাই অন্য কোথাও লিংক পাওনি।
দার্জিলিঙে ওরা তিনজনে খুব আনন্দ করল। একদম ম্যালের উপরে একটা হোটেলে উঠল। শৈবাল রুম নেবার সময় রুম হিটার আর গরম জল আছে কিনা বারবার চেক করে নিয়েছিল, শুভর যাতে কোনোরকম সমস্যা না হয়। শুভ গোটা ম্যাল জুড়ে পায়রাদের পিছু পিছু দৌড়াদৌড়ি করে বেরালো। ওকে এতো দৌড়ঝাপ করতে বীথি আগে কখনো দেখেনি। ফলে সারাদিন তিনজন হলেও সন্ধ্যের পর থেকে শুভ ঘুমে কাঁদা। তখন শুধু বীথি আর শৈবাল। কাঠের তৈরি হোটেল প্রতি পলে পলে কেঁপে উথছিল ওদের মিলনে। বীথির মনে কিছু অস্বস্তি ছিল। সে কুমারী নয়। শৈবালের কোথাও কখনো ঘেন্না হবে নাতো! কিন্তু যখন শৈবাল বীথির সারা শরীরে মুখ ঘষছিল পরম তৃপ্তিতে,তখন বীথির আশংকা অমূলক হয়ে পড়ে।
দার্জিলিঙ থেকে ফিরে আসার পর দুজনেই দুজনের কাজে আবার ফিরে গেল এবং স্বাভাবিক জীবন শুরু হয়ে গেল। দুজনের রোজ একসাথে স্টেশন যাওয়া। তারপর ট্রেনে চেপে হাওড়া। ওখান থেকে বীথি সল্টলেক, আর শৈবাল কোনোদিন ধর্মতলা কোনোদিন অন্য কোথাও। ফেরার সময় কখনো শৈবাল, কখনো বীথি আগে হাওড়া স্টেশনে বড় ঘড়ির তলায় অপেক্ষা করত একে অপরের জন্য। আবার কখনো ধর্মতলা মেট্রো বা একাদেমি চত্বরে দেখা করত ওরা। তারপর পুরনো দিনের মতো ঘোরাঘুরি, ফুচকা খাওয়া, সিনেমা দেখা।
কিন্তু দার্জিলিঙের মতো সন্ধ্যে থাকতে থাকতে শুভ আর ঘুমিয়ে পরতো না। সে জেগে বসে থাকত কখন বীথি ফিরবে। তারপর গভীর রাত অবধি চলত তার মায়ের সাথে আহ্লাদ, খুনসুটি। প্রথমে সে অনেকক্ষণ ধরে বীথির সিঁথি নিরীক্ষণ করত। সিঁদুর মুছে দেবার চেষ্টা করত। তারপর কোলে মাথা দিয়ে চুপ করে শুয়ে বীথির হাতের শাঁখা পলা নিয়ে আনমনে নাড়াচাড়া করে চলত। এভাবেই রাতের খাওয়া শেষ করত ওরা। শুভর খাওয়া আগেই হয়ে যেত অবশ্য। শুভর শোবার ব্যবস্থা ওর দাদু দিদার ঘরে করা হলেও যতক্ষণ না ও ঘুমাতো বীথিদের ঘরেই থাকত। তারপর ঘুমিয়ে গেলে ওকে কোলে তুলে দাদু দিদার ঘরে রেখে আসা হত।
কিন্তু এখন আর অত সহজে ও ঘুমায় না। বীথি শৈবালের মাঝখানে শুয়ে ওদের কথাবার্তা শুনে চলে। যদিও তার কিছু ওর বোধগম্য হয়না। প্রথম প্রথম এক দুদিন শৈবাল ওর সাথে গল্প খেলা চালাতো। কিছুদিন পর দেখা যেতে লাগল শুভ শৈবালের সাথে বেশি কথা বলতে চাইছে না। পুরো মনোযোগ ওর মায়ের প্রতি। মনোযোগ বলতে ওদের মায়ে ছেলের জন্মাবধি কিছু আহ্লাদেপণা। শুভ প্রথমে মাথার সিঁদুর নিয়ে ঘসাঘসি করে বীথির বুকে নেমে আসবে এবং ওর স্তন জোড়া নিয়ে খেলা করবে। যদিও এখন আর ওর ব্রেস্ট ফিডিং নেই। বীথির শুকনো বোটাদুটো নিয়ে ও চুষে যেত।
শুভকে পাসের ঘরে দিয়ে এসে শৈবাল বীথিকে কোলে টেনে নেয়। ওর ঠোঁট একটু একটু করে ভরে নেয় নিজের মুখে। নাইটি টেনে খুলে নেয় শৈবাল। বীথি চোখ বন্ধ করে ফেলে। শৈবাল ঠোঁট ছেড়ে গলা, গলা থেকে ক্লিভেজে জিভ চালাতে থাকে। তারপর কালচে করোলায় মুখ চেপে ধরতেই হঠাৎ করে গা গুলিয়ে ওঠে ওর। বীথির করোলায় লেগে থাকা চ্যাটচেটে লালা একজন এবনরম্যাল মানুষের, এটা ভেবেই গা গুলিয়ে ওঠে শৈবালের। প্রাচীন সংস্কার অজান্তেই জাগিয়ে দেয় ওর ঘেন্না। মনে হয় বীথির গোটা স্তন জুড়ে একটা পাগলের থুতু লালা মাখামাখি হয়ে আছে যেন! শৈবালের কাম শাটডাউন হয়ে যায় আপনাআপনি! নিজেকে বীথির থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিছানায় উঠে বসে ও। পাশে চোখ বন্ধ করা অবস্থাতে বীথি পোড়া গন্ধ অনুভব করে।
শৈবাল ব্যালকনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায়। কেন এমন হল! আগে তো হয়নি! এরকম কোনো ভাবনাও ও ভাবেনি। তাহলে?
বীথি এসে পিছনে দাঁড়ায়। কোনো কথা না বলে শৈবালের হাত শক্ত করে চেপে ধরে। শৈবাল ওর দিকে ঘুরে বলে,
-তুমি আবার উঠে এলে কেন? আমি সিগারেটটা খেয়েই যাচ্ছি।
বীথি ফ্যাকাশে চোখে ওর দিকে চেয়ে বলে,
-রাতে উঠে তোমাকে সিগারেট খেতে আগে দেখিনি।
-চলো ভিতরে।
শৈবাল বীথিকে জড়িয়ে ধরে ঘরে ঢোকে। ও বীথির মাথা বুকে চেপে ধরে বসে থাকে। শৈবালের বুকের ভিতরটা অশান্ত সমুদ্রের মতো উথাল পাথাল করে চলেছে। বীথির মাথাটা বুকে চেপে সেটা আটকাবার চেষ্টা করে শৈবাল।
বীথি শৈবালের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওর চোখে চোখ রাখে। শৈবাল দেখে বীথির চোখে জল। ও বীথির চোখে চোখ রাখতে পারেনা, চোখ নামিয়ে নেয়। বীথি শৈবালের মুখ নিজের চোখের কাছে তুলে ধরে বলে,
-তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে নাতো?
শৈবাল ওকে জড়িয়ে ধরে বা বলা ভাল ভেজা গামছার মতো সাপটে নেয় নিজের সাথে। ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। তারপর বীথির স্তনবৃন্ত চুসতে থাকে তীব্র আবেশে। বীথির ব্যথা লাগে। কিন্তু সে আটকাবার চেষ্টা করেনা। ওর নখ চেপে বসে শৈবালের খালি পিঠে। স্তন চুসতে চুসতে শৈবাল হারিয়ে যায় একটা জমাট বাঁধা মেঘের ভিতর। তার ভিতর ভাসতে ভাসতে সে পিছিয়ে পড়ে অনেক বছর আগের এক শীতের দুপুরে! তখন ও শিশু। মায়ের কোলে বসে ও মাতৃস্তন পান করছে। মা ছাদে, পিঠে রোদ লাগিয়ে বসে ছোট্ট শৈবালকে স্তন পান করাচ্ছে। এই মূহুর্তটা অনেক বড় বয়স অবধি শৈবালের মাঝে মাঝে মনে পড়ে যেত। বছর দশেক হল তা আর মনে আসেনি। আজ হঠাৎ সেই পুরনো ইষ্টম্যান কালার চোখের সামনে চলে এলো!
শৈবাল বীথির স্তন থেকে মুখ তুলে ওকে বলে,
-এটা আমার। ঠিক যতটা শুভর, ততটাই আমার ।