সে খাটিয়ায় উঠে বসল আর চিৎকার করে মোহলীকে ডাকিল, কাহেরে ? জলদি, জলদি শোন।
ঘাট ইস্টিশানের নিচে ইঁটের চওড়া থামগুলিকে ঘিরে ব্যস্ত জনপদ। মানুষের ঘর গেরস্থালি, গরু মোষের খাটাল, মদের ঠেক, সাট্টার পেনসিলার, চোর গুণ্ডা দালাল ফেরেবাজ সব মিলেমিশে রয়েছে।
ব্রিটিশ আমলে তৈরী দশটি বিশালাকার থাম, সমান্তরাল দুটি রেললাইনকে প্রায় এক কিলোমিটারের মতো পথ মাথায় বয়ে নিয়ে গিয়ে, দানবাকৃতি ব্রীজের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। থামের ওপর দিয়ে ট্রেন ব্রীজের ওপর উঠলে ঝমঝমাঝম শব্দটা গুমগুমাগুম-এ পাল্টে যায়।
খাড়াই সরু সিঁড়ি দিয়ে যাত্রীরা ওঠানামা করে, থুথু পানের পিক, সিঁড়ি থেকে সিঁড়ির মাথা থেকে অবলীলায় নিচে ফেলে। ব্যস্ত জনপদে সে সব কোন বিঘ্ন সৃষ্টি করে না। থিকথিকে কাদা, স্তুপাকৃতি গোবর, আবর্জনার স্তূপ, ভনভনে মাছি আর মশার ভিড়ে, যাত্রীদের বর্জ পদার্থ মিশে যায়।
মোহলী কোমরে সাপটে কাপড় জড়িয়ে অব্যর্থ নিশানায় থামের গায়ে ঘুঁটে দিচ্ছিল। নিখুঁত আলপনার মতো ঘুঁটের নকশা। মাপের ছোট বড় নেই। লাইনের হেরফের বা চোখে পড়ার মতো ফাঁক নেই কোথাও। কেবলমাত্র হাতের নিশানায় সুচারু বিন্যাস।
রামপূজনের 'জলদি শোন' ডাক মোহলীর কানে পৌঁচেছে। সে কিন্তু কোন ভ্রুক্ষেপ করল না। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো না অব্দি। রামপূজনের গলার স্বর বলে দিচ্ছে এ ডাকে ছল আছে। মোহলী ত্রস্ত পায়ে কাছে গিয়ে দাঁড়ানো মাত্রই, এই ফটফটে আলোর মধ্যে এমন একটা কান্ড ঘটাবে রামপূজন যেন চারপাশে কেউ নেই। যেন সময়টা সকাল নয়। চাঁদনি রাত। দরমা ঘেরা ঘুপচি ঘরটায় রামপূজন খাটিয়ায় একা শুয়ে। কুপীর তিরতিরে আলো পড়েছে মোহলীর শরীর জুড়ে। তাতে কপালের টিপ, চিবুকের ঘাম, জ্যালাজ্যেলে ব্লাউজ ফুঁড়ে বুকের ওঠানামা সব স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রামপূজনের দুচোখ জুড়ে মুগ্ধতা। শ্বাস ফেলছে তার কোন শব্দ নেই। আধশোয়া অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসছে খাটিয়ায়। ছায়ার মতন। অবয়বহীন শব্দহীন। আর তারপরেই মোহলীর হাত ধরে কাছে টানা মাত্রই, অসাবধানে কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে গেল, দুটো তিনটে, পুটপুট করে। তখন মোহলী নিচু, কিন্তু তীক্ষ্ণ গলায় 'আঃ' বলে উঠতেই রামপূজন ত্রস্ত হাতের চেটোয় মোহলীর মুখ চেপে ধরল। মোহলী বুঝতে পারছে তার হাত পায়ে রক্তের ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে। স্বল্প আলোকে সে রক্তের রং পাঁশুটে কালচে দেখাচ্ছে। কপালের টিপ ঝুলছে নাকের ওপর। সত্যি সত্যি কাঁদছে না, কিন্তু তারপরেও কাজল ধোওয়া কালো জল গড়িয়ে নামছে, গাল বেয়ে চিবুক বেয়ে।
রামপূজন সোহাগ করতে জানে। কিন্তু সবকিছুরই তো সময় আছে। স্থান কাল আছে।
মোহলীর দু হাত গোবরে মাখামাখি। ঘামে জ্যাবজ্যাব করছে শরীর। পানের ছিবড়ে মুখের মধ্যে, গালের একপাশে টোবা হয়ে আছে। ঘর গেরস্থালীর বিস্তর কাজ এখনও বাকি। টাইম কলে লাইন দিয়ে পানি ভরতে হবে। ঘর দুয়ারে ঝাড়ু দিতে হবে। কাঠকুটো জড়ো করে চুলা ধরাতে হবে। রামপূজন ডিবটিতে যাওয়ার আগে ভাতের ফ্যান ঝরাতে হবে। আলু চটকাতে হবে। লোটাভর্তি জল আর এক খিলি পান সাজিয়ে রাখতে হবে জানলার বেড়ে। তামাম অঞ্চলে রামপূজন একমাত্র লোক যে ডিউটিতে যায়। লিখাই পড়াই জানা বাবুদের সঙ্গে ওঠাবসা করে।
রামপূজন রাম ইমানদার আদমি।
রামপূজনের বাবা রামশরণ বলত, জেনানা আদমী বেয়াদব মানেই বেকুব।
বাবুজীর এই বাতচিতটুকু রামপূজন মান্য করে। মরদ ডাকবে তো আওরত চুহার মতো এগিয়ে আসবে। মর্জি খাট্টা থাকলে লাথি ঘুঁসি মারবে, মুখবুজে আওরত তাও সইবে। শান্ত সুশীলা আওরত আওয়াজ করে কাঁদবে না। কান্নার আওয়াজ শুনলে আসমান থেকে চাঁদ নেমে আসবে। সে বড় বেশরম ব্যাপার।
মোহলীর নিরুচ্চার ভঙ্গিমায় রামপূজনের রাগ চড়ে গেল ধাঁ করে। আওরত কি ভুলে গেছে রামপূজনের দৌলতেই তার পেটের ভাত ? পরণের কাপড় ? শরীরের ঠমক ঠামক দুলদুলে হাসি সব কিছু রামপূজন এক ধাক্কাতে ফর্সা করে দিতে পারে ? ধীরেসুস্থে নয়, রীতিমত শব্দ করে খাটিয়ায় উঠে বসল রামপূজন, আরে রেন্ডি কা লেড়কি, ডাক দিচ্ছি শুনতে পাচ্ছিস না ?
মুহূর্তে মোহলী পিছন ফিরে তাকাল এবং রামপূজনের গনগনে চোখের পানে চেয়ে তার শরীর অবশ হয়ে গেল। হাত থেকে গোবরের দলা পড়ে গেল আপনাআপনি। জবাব দিতে গিয়ে বুঝতে পারল, মুখের মধ্যেটা শুকনো খরখরে। জিভটাও কেমন ভারি ভারি। মোহলীর বুকের কাপড় সরে গেছে, হুঁশ নেই। কপালের বিড়বিড়ে ঘাম গড়িয়ে চোখে নামছে। চোখ জ্বলছে লবণে। চোখের পাতা ফেলতে ভুলে গেছে। অপলক রামপূজনের দিকে চেয়ে মোহলী, থকথকে কালো কাদার মধ্যে পায়ের পাতা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে। পাথরের মূর্তির মতো।
পোষা কুকুর বিড়ালকে যেভাবে ডাকে মানুষ, ঠিক সেইভাবে মুখের আওয়াজে নয়, হাতের ইশারায় মোহলীকে কাছে ডাকল রামপূজন। ভীত বিলম্বিত পায়ে মোহলী খাটিয়ার কাছে আসামাত্রই রামপূজন বসে বসেই অনায়াসে একটা চড় মারল তার গালে। বেশ জোড়ে। পেট লক্ষ্য করে লাথিও চালাল। ঠিকমত লাগল না। ছুটে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে মোহলী ঝপ করে মাটিতে বসে পড়ে, দুহাতে নিজের মাথাটা আড়াল করল। হয়ত সে ভেবেছে মুখ এবং পেটের পর রামপূজন এবার তার মাথায় আঘাত করতে পারে।
ওইভাবে অল্পক্ষণ বসে থাকার পর যখন সে দেখল, নতুন কোন আঘাত নেমে এল না, সাবধানে মাথা তুলে সামনে তাকাল। রামপূজন তখন ধস্ত মানুষের মতো খাটিয়ায় শুয়ে পড়ে অল্প অল্প হাঁফাচ্ছে এবং মাথার তেল চিটচিটে বালিশটার এধার ওধার এলোমেলো হাঁতড়ে বিড়ির কোটো খুঁজছে।
মোহলীর দুচোখে জল টলটল করছে। শ্বাস পড়ছে ক্ষীণ। পাছে কোন আওয়াজ বেড়িয়ে পড়ে মুখ দিয়ে, এই আশঙ্কাতে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট শক্ত করে কামড়ে ধরেছে। এপাশ ওপাশ ঘাড় ফিরিয়ে দেখল মোহলী। চারপাশের ব্যস্ত জণারণ্যে ছোট্ট এই ঘটনাটি হয়ত কারোর নজরেই পড়েনি। বা পড়ে থাকলেও ঘটনাটির গুরুত্ব আরোপিত হয়নি কারোর মনেই।
আটটা পঁচিশের লোকাল সরীসৃপের মতো থামের ওপর দিয়ে ব্রীজের দিকে এগিয়ে চলেছে। মোহলী জানে মাথার উপরে শব্দটা এখুনি পাল্টে যাবে। ঝমঝমাঝম থেকে গুমগুমাগুম হয়ে যাবে। অত উঁচু থেকেও চলমান ট্রেনের ছায়া পড়বে নদীর জলে। মাইকে গানের শব্দ, খৈনী পেটার তালির শব্দ, কিশোরী গলায় উচ্চারিত তীক্ষ্ণ অশ্লীল শব্দ, গরুর হাম্বা ডাক, শিশুর কান্নার শব্দ। শব্দের এই বৃষ্টির মধ্যেও মোহলীর কানে একটি শব্দই বাজতে লাগল। ভোমরার গুঞ্জনের মতো একটানা একসুরে। বড় কর্কশ গলায় রামপূজন ডেকেছে – রেন্ডি কা লেড়কি।
এমনিই। অকারণে।
মোহলী আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল। কোনদিকে না তাকিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে এসে থামের গায়ে ঘুঁটে দিতে শুরু করল। আলপনা দেওয়ার মতো বিচিত্র নকশায়, এক মাপে।
রামপূজন ঘাড় কাত করে কয়েকবার দেখল মোহলীকে। বড় সহজ সাবলীল দেখাচ্ছে। রামপূজনের অবাক লাগল, ঘটনার আকস্মিকতায় মোহলী দৌঁড়ে পালিয়ে গেল না বা কষ্টে দু হাঁটুর মধ্যে মুখ লুকিয়ে অনুচ্চারিত শব্দে কাঁদতে শুরু করল না। ঘাড় ফিরিয়ে রামপূজনের দিকে তাকাল না অব্দি। মোহলীর এমন ভয়হীন নির্লিপ্ততা রামপূজনের বিচারে সীমাহীন ঔদ্ধত্য বলে মনে হল।
(দুই)
সারাদিন কাজের ফাঁকে মোহলীর ভাবলেশহীন মুখটার কথা বেশ কয়েকবার মনে পড়ে গেল রামপূজনের। দুঃখ লজ্জা এবং ভয় অপেক্ষা ইচ্ছা-অপূরণজনিত মান অপমান বোধ তাকে বেশী বিচলিত করল। যদিও বেলা বাড়ার সাথে সাথে সকালের ঘটনার উত্তেজনা স্তিমিত হয়ে এল তার রক্তের ভিতরে। এমনকি প্রতিদিনের মতো রাতে বাড়ি ফেরার আগে মদের আখড়ায় ইয়ার বন্ধুদের সঙ্গে অশ্লীল বাক্যালাপ এবং কদর্য বিষয় নিয়ে জেদী একগুঁয়ের মতো ঝগড়া করতে করতে মোহলীর শক্তপোক্ত শরীরটার ছবি তার দু চোখের পাতায় ভর করে এল।
সে বাড়ি ফেরার জন্য ব্যাগ্র হয়ে পড়ল। টলমল পায়ে পথ হাঁটতে হাঁটতে একসময় নোংরা আবর্জনায় ভরা তার বাড়ির গলির মুখে পৌঁছে গেল। লম্বা সরু গলিটা কিছুটা পথ গিয়ে যেন হঠাৎই বড় করে হাঁ করেছে। সেই হাঁয়ের মধ্যে একটি ব্যস্ত জনপদ। ঘাট ইস্টিশানের ইঁটের চওড়া থামগুলিকে ঘিরে। থিকথিকে কাদা। গরু আর মোষের বিষ্ঠার দুর্গন্ধে বাতাস ভরে আছে। ঘাট ইস্টিশানের আলো ত্যারছাভাবে নিচে এসে পড়েছে। আলোর সীমারেখার বাইরে মরা মাছের চোখের মতো ফ্যাকাসে অন্ধকার। সেই অন্ধকারে নষ্ট কিশোরীর হাসি, চোরাইমালের ভাগ বাটোয়ারার চাপা হিসহিসানি, খাঁকি উর্দি গায়ে পুলিশ কনস্টেবলের ফাঁকা হম্বিতম্বি।
দমকা হাওয়ার মতো খুপচি ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে রামপূজন কুপীর স্বল্প আলোকে প্রথমে কিছুই ঠাওর করতে পারল না। চোখ সরু করে চারপাশে তাকিয়েও মোহলীকে দেখতে পেল না। তখন সে চাপা গলায় গর্জে উঠল, কাহে রে ?
ক্ষীণ আবছা আওয়াজ পাওয়া গেল, হাঁ।
রামপূজন নিশ্চিন্ত বোধ করল আওরত ঘরেই আছে। শ্যাওলা ধরা জলের কলসি, দড়িতে ঝোলানো ময়লা জামা কাপড়, টিনের ভাঙ্গা কালো সুটকেস, দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো দড়ির খাটিয়া, এ সবের মধ্যেই মিলে মিশে আছে আঁটসাঁট চেহারার মোহলী।
রামপূজনের মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করছিল। নেশার মাত্রা বেশী হলে যেমনটা করে। দড়ির খাটিয়াটি টেনে মেঝেতে নামিয়ে সে ঝপ করে শুয়ে পড়ল তার ওপর।
রামপূজনের নেশার খোয়ারি কাটল যখন, তখন রাত গভীর। খাটালে গরু মোষের পা ঠোকার এবং ভোঁসভোঁস নিশ্বাস ফেলার শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। কুপিটা জ্বলছে ঘরের কোণে। না জ্বলার মতো টিমটিম করে।
বেশ কয়েকবার মাথাটা নাড়াচাড়া করে, দুহাতের ভর দিয়ে রামপূজন খাটিয়ায় উঠে বসল। শিকারী বেড়ালের মতো অনুসন্ধানী চোখে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে মোহলীকে দেখতে পেল। দরজার কোল জুড়ে মাটিতে এক ফালি চট পেতে তার ওপর শুয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছে। পরণের ময়লা শাড়িটি পাকিয়ে মাথার বালিশ বানিয়েছে। অতি ক্ষীণ আলোতেও রামপূজন স্পষ্ট দেখতে পেল, মোহলীর তলপেট এবং বুক বেশ ভারি। তুলনায় দুই হাত এবং অনাবৃত পায়ের গোছ সরু। শ্বাস ফেলতে মোহলীর কষ্ট হচ্ছে। রামপূজনের মনে হলো। আর তাই মুখ অল্প ফাঁক।
রামপূজন সাবধানে কোনরকম শব্দ না করে খাটিয়া থেকে নামল। ঘুমন্ত মোহলীর সামনে উবু হয়ে বসল। নিবিড় চোখে অল্পক্ষণ দেখল তাকে। সিঁথির মেটে সিঁদূরের রেণু সারা মুখ জুড়ে।
রামপূজন আলতো করে ডাকল, মোহলী ?
মুহূর্তে চমকে উঠে বসল মোহলী। রামপূজনের অমন নিবিড় সান্নিধ্যে সে খুব ভয় পেয়ে গেল। তার দু চোখ বিস্ফারিত হয়ে উঠল এবং হঠাৎই তীক্ষ্ণ আওয়াজ করল মুখ দিয়ে। মেঝে থেকে লাফ দিয়ে উঠে, ঘরের এক কোণের দিকে ছুটে গেল। তার পায়ের ধাক্কায় চাপা দেওয়া রাতের খাবার, লোটা ভর্তি জল উল্টে গেল। ছড়িয়ে পড়ল ঘরের মেঝেতে।
মোহলীর এমন বিসদৃশ আচরণে রামপূজন প্রথমে খুব ঘাবড়ে গেল। পরমুহূর্তেই তার হাত পায়ের শিরা শক্ত হয়ে ফুলে উঠল। দাঁতে দাঁত ঘষে হিসহিসে গলায় বলল, চোপ।
তারপর যেন বহু প্রতীক্ষায় তার ইপ্সিত শিকারটিকে জালে জড়িয়ে ফেলতে পেরেছে এমনি কৌতুকে দু ভ্রু নাচিয়ে হাসল, ডর লাগছে ?
মোহলীর পিঠ ঠেকে গেছে দেওয়ালে।
রামপূজন মোহলীর একটু কাছে এগিয়ে গেল। হাতের ইশারায় ডাকল, আও। জলদি আও। নেহী তো .....!
- নেহি তো কেয়া ? মোহলী দৃঢ় গলায় বলল, তুম ফির ! ফির ...!
- কেয়া ফির ? হাসির ফাঁকে রামপূজনের ছ্যাৎলাধরা দাঁত দেখা গেল, কেয়া ফির চুহি ?
- তুম মরদ হো ? মোহলীর গলার স্বর স্পষ্ট এবং জোড়ালো।
- তো কেয়া ?
- লুটেরা। হোঁড়ার। একটু থামল মোহলী, মাত আও। নেহী তো ! বলে মোহলী দৌঁড়ে গিয়ে খাটিয়ার তলা থেকে বেঁটে মোটা একটি লাঠি টেনে বার করে আনল। যেটি প্রায়শই রামপূজন ব্যবহার করে মোহলীকে নির্দয়ভাবে প্রহার করার জন্য। লাঠিটিকে দুহাতে সাপটে ধরে গনগনে চোখে রামপূজনের দিকে স্থির চোখে চেয়ে রইল মোহলী।
উত্তেজনায় অল্প অল্প হাঁপাচ্ছিল। সেই অবস্তাতেই থুঃ থুঃ শব্দ করে থুথু ফেলল ঘরের মেঝেতে।
কুপীর আলো ক্ষীণ। কিন্তু রামপূজন মোহলীকে দেখতে পাচ্ছিল স্পষ্ট!
ভাঙ্গা টালি, ফাটা দরমার ফাঁক দিয়ে কোন ফাঁকে চাঁদের আলো ঢুকে পড়েছে ঘরের ভিতরে।
মোহলীর দুচোখে জল। কিন্তু কান্নার কোন শব্দ নেই। তা সত্ত্বেও কেমন করে আসমান ছেড়ে চাঁদ নেমে এসেছে। যেন নিজেকে নিঃশেষ করে চাঁদ তার সব আলোটুকু মোহলীকেই দিয়েছে।
জ্যোৎস্নালোকিত মোহলীকে অন্যদিনের চেয়ে অন্যরকম দেখতে লাগছিল। রামপূজনের মনে হলো এই নিশীথ রমণীকে সে চেনে না।