পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ঘুমের দেশ

  • 18 December, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1496 view(s)
  • লিখেছেন : সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়        
হাতে কাগজ। সকালবেলা, চায়ে চুমুক দেব, হাঁফাতে হাঁফাতে বুলান এল। গ্রিলের ফাঁকে দেখা যায় বুলানকে। মনে হয় কিছু খবর আছে। দরজা খুলতেই দুধের প্যাকেট দিয়ে বুলান সাইকেলের প্যাডেলে পা তুলেছে। খুব ব্যাস্ত। কী রে বুলান, এত ছটফট করছিস কেন? তুমি কিছু জান না? কী জানব? এই পাড়ার শেষে ঠিক বিনোদতলার মোড়েই তো একটা লাশ…। লাশ?

 

 

হ্যাঁ, কাল রাত থেকেই তো…।

কী হয়েছে বলবি তো।

আরে খুন! মিলপাড়ায় এই নিয়ে দুটো খুন হয়ে গেল।

কেন?

কে জানে? সকালে ঘাটের কাছে একটা, বিনোদতলার মোড়ে আর একটা। দু-দুটো লাশ…। আর দাঁড়াব না। দুধগুলো দিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। কার্ফু হতে পারে।

বুলান চলে যায়। দরজাটা খোলাই থাকে। অবসন্ন লাগছে কেমন।

এখনও পলা ওঠেনি। বুচাই বিছানায়। বাবা পুজোর ঘরে। মা, বোধহয় বাথরুমে।

দরজায় দাঁড়িয়ে দেখাছিলাম। ছুটির দিন সকাল সাতটা হবে। চারপাশে ঝলমলে রোদ। মোড়ের কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলে আকাশ প্রায় ঢাকা পড়েছে। রোদ্দুর মেখে রাস্তা যেখানে ঘুরেছে, সেখানেই পাকা ডাস্টবিনের সামনে আবর্জনার ডাই। দুটো গরুর পায়ের ফাঁক দিয়ে দৌড়ে যায় এক বেড়াল। বাড়িরা সব সার দিয়ে পরপর সাজানো। মাঝে মাঝে গাছপালা। উঁকিঝুঁকি মারছে। দরজাগুলো বন্ধ। একটা দরজায় একা আমি দাঁড়িয়ে। এইমাত্র দেওয়া বুলানের খবর এই পরিস্থিতিতে কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়। সব কিছু তো ঠিকঠাক, তবে? দুটো লাশ? খচখচ করছে ওই লাশ শব্দটা। মানেটা স্পষ্ট নয় যেন।

নিঃশব্দে পালটাই পাজামা। প্যান্ট গলিয়ে পুরোনো সাইকেল নিয়ে রাস্তায়। বিনোদতলার মোড় এ বাড়ি থেকে এমন কিছু দূর নয়। একবার ঘুরেই আসা যাক।

ওইখানে চায়ের দোকানটা হারুদার। অজুবাবু, আমার স্কুলের স্যার,  বোধহয় সকালের চা খেতে এসেছিলেন।

চিবুক ওপরে তুলে চশমার ফাঁকে তাকান। কে অপু না?

হ্যাঁ স্যার।

কী শুরু হল বল তো?

আপনি বেরিয়েছেন কেন? এই গোলমালে…।

আরে, আমি বুড়োমানুষ; আমাকে কে কী করবে? ভাবলাম ঘটনাটা একবার দেখেই আসি। সকালে অনেক লোক ছিল এখানে। আমি জানলা দিয়ে দেখেছি। আবার শুরু হল। সেই উনিশশো আটচল্লিশ সালে। তোমরা তখন খুব ছোট। তারপর আটান্ন, চুয়াত্তর।

ওসব ভাবছেন কেন? পুলিশ আসবে। ব্যবস্থা নেবে। থেমে যাবে সব।

না না, লক্ষণ ভালো নয়। দু-দিন অন্তর নির্বাচন। গণতন্ত্রের পায়াগুলোই নড়বড় করছে। এ দেশের আর কিছু হবে-টবে না। হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। যাও যাও। তুমি বাড়ি যাও। লাশটা খানিক আগেই তুলে নিয়ে গেছে।

চেনেন? হিন্দু? নাকি…?

শুধু একটা লাশ অপু। এর বেশি জানি না । কাল রাতে একটু ভোরের দিকে বোমার আওয়াজ পাই। তোমাদের মাসিমা জেগে ছিলেন। বুঝলাম কাছাকাছি কোথাও…। সকালে উঠে এই কাণ্ড!

হারুদার দোকানের সামনের চাতালটা জল দিয়ে ধোয়া। ওখানেই বোধহয় লাশটা…। আমি সাইকেল ঘোরাই। রাস্তা ফাঁকা। বাড়ি ফিরে যাওয়াই ভালো।

 বাড়ির ঘুম ভেঙেছে।পলা আমাকে দেখে থমকায়। ব্রাশ করছে। মুখের ফেনা ধুয়ে, তোয়ালে নিয়ে আমার পিছনে আসে। আমি কাগজ হাতড়াচ্ছি, ঘুম ভাঙার পরেই এমন বিশ্রী খবর না দেওয়াই ভালো। ব্রাশ করতে করতেই পলা হাসছে।

কী গো? সাতসকালে কোথায়…?

চা খেতে।

বাজে বোকো না তো। বলবে না তাই বল।

পলা সিক্সথ সেন্সের ধারালো চশমায় আমার মুখ দেখে। আমি হাসি।

সাদা ম্যাক্সির উপর ঘন নীল হাউসকোট।বাসি চুল উড়ে উড়ে পড়ছে মুখে। পলাকে তবুও ভালো লাগছে না কেন? তেতো হয়ে গেল মুখটা সাতসকালেই। বুচাইয়ের চটির আওয়াজ। বাবা, তুমি কোথায় গিয়েছিলে?

কোথাও যাইনি বাবা ।

বাঃ, আমি তোমায় খুঁজছি।

বুচাইকে জড়াই মন ভালো করতে। জানলা খুলতেই রাস্তায় এক শালিক।

বাবা, বাবা, ওয়ান ফর সরো।

বুচাই যাও, বিস্কুট খেয়ে এসো। মনে আছে তো আজ তোমার আঁকার ক্লাস।

বাগানে চলে যাই। গাছপালাদের দেখে মনে হয় ওরা কেমন নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে। জুঁই গাছটা একটু হেলে ছিল। একটা লাঠির সাপোর্ট দিই। উঠোনে বাসন মাজছে মীরা আর হাত নেড়ে নেড়ে মাকে কিছু বলছে যেন। বুঝলাম, খবর লিক হচ্ছে। মীরা অবাঙালি। মিলের ওদিকেই থাকে।

মীরা বলছে, বোরা মে চাউল ছিল। সবজি ছিল। ফেলে একদম ছুট লাগাল।

তুই দেখলি?

হাঁ মা। মছলি নিছিল। ডান হাত, বাঁ হাত কেটে নিল।

কী বলছিস? মার চক্ষু চড়কগাছ!  

ও মা, মা-চিৎকার করি। মীরাকে ইশারা করে থামতে বলি। এখন মা সারাদিন ভয় পাবে। আমার ছোটমামা, মানে মায়ের ছোটভাই, নকশাল মুভমেন্টের সময় থেকে ফেরার। মা এখনও ভাবে ফিরে আসবে।

নারায়ণ! নারায়ণ! হ্যাঁরে অপু, এসব কী হচ্ছে রে? রায়ট হবে নাকি?

# #

লালটুদের রকের তলাটা বেশ নিরিবিলি। ছায়া, ছায়া। জমাট ঘুমটা ভাঙছিল না ভুলুর। অনেক রাত অবধি লালটুদের বাড়ি খাওয়াদাওয়া হয়েছে। সবশেষে খেয়েদেয়ে ভুলু একটা লম্বা ঘুম দিয়েছে। ভোরবেলা গোষ্টাদের পোলট্রির মুরগিগুলোর আওয়াজও কানে যায়নি। একটু বেলা হতে রোদ্দুর ছড়িয়েছে সারা শরীরে। তবুও ঘুম ভাঙেনি ভুলুর। কতদিন বাদে এমন পেটভর্তি খাওয়ার ঘুম। এ কি সহজে যাবার!

খানিক আগেই পিঙ্কি গায়ে লেজ ঘষেছে। কানের কাছে দু-বার সুড়সুড়ি যে দেয়নি তাও নয়। তাতেও ঘুম ভাঙেনি ভুলুর। উঠল পিসিমার ডাকে। হারুর পিসিমা এই সাতকালে ভুলু, ভুলু রে করে পাড়া মাথায় না করলে ভুলুকে ওঠায় কার সাধ্যি।

ভুলু কুকুর হলেও ওর বান্ধবী পিঙ্কি জাতে বেড়াল, এই পাড়াতেই থাকে ওরা। মিলের কাছাকাছি এই জায়গায় অনেক ধরনের মানুষের বাস। তাদেরই একপাশে ভুলু আর পিঙ্কিও থাকে। দুজনের খুব ভাব। এত ভাব দেখে কতদিন নিমুদের বাড়ির বিদেশি কুকুরটা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে গলা বাড়িয়ে বলেছে, ভুলু তোমার লজ্জা করে না, কুকুর হয়ে বেড়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব কর। ভুলু উত্তর দেবে কী, তার আগেই নিমুর দিদি পলি চেঁচিয়েছে, অ্যালসেশিয়ানের বাচ্চা, দিশি কুকুর দেখে হ্যাংলামি করছিস! দেব দূর করে। বলতে বলতেই চেন ধরে হিড়হিড় করে নিয়ে গেছে ভেতর বাড়িতে।

ভুলুর গলায় কিন্তু কোনো চেন নেই। যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াল ভুলু। পিঙ্কির মতো লোকের বাড়ির ভেতর যায় না, অন্য পাড়াও বেড়ায় না। নিজের পাড়াতেই ঘোরাঘুরি। এ পাড়ায় আরও অনেক কুকুর আছে। কালু, লালু আরও কত কী নাম তাদের। কারুর কারুর আবার নাম নেই। ভুলুর সঙ্গে বিশেষ মেশে না ওরা। তাতে অবশ্য ভুলুর কিছুই যায় আসে না। ওদের জন্য পিঙ্কিকেও ছাড়ে না ভুলু। এ পাড়ায় নবাগত ভুলুকে পিঙ্কি ছাড়া কেই বা কাছে ডেকেছিল? ওই কালু-লালু সবাই কামড়ে আঁচড়ে অস্থির করে দেয়নি? পিঙ্কি তখন ওর দুর্দশা দেখে কত কিছু খাইয়েছে ওকে। জিভ দিয়ে চেটে চেটে ঘা সারিয়েছে। অত সহজে কি ভুলু পিঙ্কিকে ভুলতে পারে?

সকালেই পিঙ্কিকে নিয়ে মাছের বাজারে গেছিল ভুলু। মাছের বাজারের মিষ্টি আঁশটে গন্ধটা খুব ভালোবাসে পিঙ্কি। পেছন দিকে একটা মাংসের দোকানও আছে। মেঝেতে চর্বি, মাংসের ছাঁট পড়ে থাকে। যথারীতি বাজারে গিয়ে পিঙ্কি মাছের কাছে ঘুরঘুর করছে। ভুলু মাংসের দোকানের সামনে। ওখানে একটা কালো কুকুর থাকে। নামটা ভুলুর জানা নেই। ওকে দেখেই কালো কুকুরটা লেজ পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে গরর গরর করছিল। ভুলু পাত্তা দেয়নি। হঠাৎ দেখল পিঙ্কি দৌড়ে এদিকে আসছে।

কী হল?

পিঙ্কি হাঁফাচ্ছে। মাছ কিনছিল একটা লোক। দা দিয়ে লোকটার দুটো হাত আর একটা লোক কেটে নিল।

লোকটা কোথায়?

দৌড়েছে। পালাচ্ছে। পেছন পেছন ওই লোকটা।

বাকি লোকগুলো? কেউ কিছু করল না?

না রে। এরা সব ভিতুর ডিম! সবাই যে যার বাক্স গুছিয়ে ঝুড়ি তুলে পালাচ্ছে। মাংসের দোকানের লোকটাও বোধহয় খবর পেয়েছে। ঝাঁপ দেবার তোড়জোড় চলছে। কালো কুকুরটাও ওই খবর পেয়ে হতভম্ব।

পিঙ্কির সঙ্গে মাছের দোকানের সামনে গিয়ে ভুলু দেখে ভোঁ ভোঁ! একটা লোকও রাস্তায় নেই। শুধু ফোঁটা ফোঁটা রক্ত এগিয়েছে রাস্তা ধরে। এ রক্ত মাছের নয়। লোকটা কোথায় গেল?

# #

গতকাল সবশুদ্ধু চারটে মার্ডার হয়েছে। অফিস যাব কী করে! রাস্তাঘাট থমথম করছে। মারা গেছে তিনজন বাঙালি একজন বিহারি। র‍্যাফ নেমেছে। কার্ফু চলছে বিরাট এলাকা জুড়ে। হাত তুলে তুলে যেতে হচ্ছে।

ট্রেন যেতে যেতে খুব হাসাহাসি হল। রবিদের পাড়ায় হয়েছে কার্ফু। ওরা ক-জন রাস্তায় গুলতানি করছিল, পুলিশ দেখে দৌড় দিয়েছে।

রবি বলছিল, শালা সাইকেলগুলো সব পুকুরের জলে ফেলে দিল।

পেলি কী করে?

পরে আবার তুললাম। বেঁকে তুবড়ে একাকার!

জানিস ওদের মুখে ছিল সাদা কাপড়, মাথায় সাদা ফেট্টি।

ডাকাতদের মতো দেখাচ্ছে কি?

ঠিক তাই। সেই চম্বলের ডাকাতদের মতো। ইয়া ইয়া চেহারা।

চম্বলের ডাকাতদের তুই দেখেছিলি!

ফাজলামি হচ্ছে! দেখলে আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকি। তবে একেবারে দেখিনি বললে ভুল হবে। হিন্দি বইয়ে দেখেছি। ঘোড়ায় চড়ে এসে ট্রেন থামাল। নায়িকাকে তুলে নিয়ে হাওয়া।

আরে এরা সব র‍্যাফ পুলিশ। এবারে র‍্যাফ নেমেছে। বাই দি বাই, গ্লোবে টাইটানিক এসেছে, টিকিট পেয়েছিস!

না। খুব ভিড় হচ্ছে। এগারোটা অস্কার পেল বইটা। কাগজে দেখেছিলাম।

আমার গলা চুইয়ে নামছে ঘাম। পলাও টাইটানিক যাবে বলেছিল। টিকিট কী করে পাই?

পাশে অঞ্জন বসে উশখুশ করছে। কী রে, কিছু বলবি?

কী হবে বলো তো? আমাদের বাড়িটা তো মিল পাড়ার পাশেই। কাল চারটে মার্ডার হল। আবার দাঙ্গা লাগবে না কি?

ঘাটে পারাপার চলছে?

নাঃ। ঘাট অনেকদিনেই বন্ধ। মিলে মুসলমান মজুরগুলোও আসছে না।

মারা গেছে যারা, সব কি হিন্দু?

কী জানি ভাই। আমি ঠিক বলতে পারব না।

অঞ্জনকে কী বলব? আমার মাথাতেও ঘটনাটা ঠিকমতো ঢুকছে না। আগের বার দাঙ্গার সময় বয়স অনেক কম ছিল। আমরা যাইনি। পাড়ার ভূপেদা, কার্তিকদা, দৌড়েছিল।

ট্রেনের মধ্যে কত কী যে হয়! দরজার সামনে হঠাৎ রবির গলা, মামদোবাজি পেয়েছ? দোব শালাকে ঘাড় ধরে নামিয়ে। ভেন্ডারে উঠতে পার না! এক্ষুনি হচ্ছিল আর কি।

রোগা একজন মহিলা স্বামীর হাত টানছেন। ওগো চুপ করো। যা হবার তা তো হয়েই গেছে।

মালপত্র নিয়ে এক ভদ্রলোক ট্রেনে উঠছিলেন। সামনেই সবজির বস্তা ছিল। আর একটু হলেই হুমড়ি খেয়ে ট্রেনের তলায় যেতেন। রবি সময় মতো ধরে ফেলেছে।

বস্তাটা কার? রবি চেঁচায়। কোনো উত্তর নেই। বস্তাটা কার? গাড়ি হাওড়া ঢুকছে। অঞ্জন আর আমি উঠে দাঁড়াই। রবি কি খেপে গেল? এখনও চেঁচাচ্ছে, বস্তাটা কার? বস্তাটা কার?

# #

দে পাড়ার কিছু নতুন লোকের আমদানি হয়েছে। মুখ চাপা দেওয়া সাদা কাপড় তাদের মাথায় কাছে বাঁধা। কোমরে কীসব যন্তর। লোকগুলো কেমন অদ্ভুত। কাউকে একসঙ্গে দৌড়াতে দেখলেই তাড়া করছে।

ওদিকে নদীর ঘাটও বন্ধ। ওখানে বাজার বসে। মাছ থাকে সন্ধের সময়। পিঙ্কির সঙ্গে ভুলু এপাশের মাছ বাজারে যায়। ক-দিন সব ফাঁকা। লালুদের পাড়ায় চায়ের দোকানের সামনেও মানুষ পড়ে ছিল।  মরা মানুষ। ভুলু ঠিক বুঝতে পেরেছে।

অনেকদিন আগে পিসিমাদের পাড়ায় একটা মরা বেড়াল দেখেছিল ভুলু। ডাস্টবিনের কাছে। বেড়াল্‌টা চুপচাপ শুয়ে ছিল। নড়াচড়া নেই, লেজটা ছড়ানো। কিছুক্ষণ পরে গিয়ে আর দেখতে পায়নি। এখানেও মানুষটা তেমনি পড়ে। লোকজন আসছে, দাঁড়াচ্ছে, চলে যাচ্ছে। কেউ চেনে না। পাশের বটগাছ চুপচাপ। দোকান বন্ধ। ওখান থেকে চলে আসে ভুলু।

মানুষগুলো কেন এরকম হঠাৎ হঠাৎ মারা যাচ্ছে? কেন রাস্তায় পড়ে থাকছে কে জানে? পিঙ্কি বলছিল গতকাল চারটে মানুষ মারা গেছে। কাল নিমুদের বাড়ির উৎসবে সারারাত আলো জ্বলেছে, গান চলেছে। অনেক খাবার ওরা রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল। ভালোই ছিল খাবারগুলো। ভুলু অবশ্য পচা খাবারও খায়। পিঙ্কি খুঁতখুঁত করে। গোলমালের বাজারে হয়তো অনেক লোক আসেনি। তাছাড়া মিলপাড়ার বাচ্চাগুলোও খাবার চাইতে আসেনি।

লোকজন স্বাভাবিক এখন। তবে কুকুরদের মধ্যে ভালোই সাড়া পড়েছে। গতরাতেই খাবার খেতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে দেখা হল। সবাই বলছিল সাবধান। মানুষরা আগে কুকুর মারত এখন হঠাৎ নিজেদের মারতে শুরু করেছে। ব্যাপারটা গোলমেলে। সাবধানে থাকতে হবে। দিনকাল ভালো নয়।

পিঙ্কি অবশ্য অনেক কথা বলছিল। ও তো অনেক বাড়িতে যায়। বলছিল ভয়ের কিছু নেই। সব মানুষও এসব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। রেশনের দোকানের মজুমদার কর্তা নাকি গিন্নিকে বলেছিলেন চিন্তার কিছু নেই। আমাদের এদিকে কিছু হবে না। মিলের দিকে বেশি ভিড়। বাইরে থেকে আসা অনেক রকমের লোক নানা ধান্দা চালাচ্ছে ওখানে। কিছু মরে তো মরুক না।

মজুমদার গিন্নি বললেন, কর্তা, রেশনের দোকানটা আর রাতদুপুর অব্দি খোলা রেখো না। সাড়ে ন-টায় বন্ধ করে দিও। আমার বাপু ভয় করছে। ঝামেলা এদিকে ছড়াতে কতক্ষণ।

পিঙ্কিকে বললাম, ভয় করছে না?

পিঙ্কি বলল, একদম না। আমরা তো আর মানুষ নই। তবে মাছের বাজারগুলো খোলা থাকছে না এই যা।

পিঙ্কি তো বলবেই। ও তো কেবল মাছের বাজারে ঘুরে বেড়ায়।

# #

কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। ব্যাপারটাকে খুবই অদ্ভুত লাগাছে আমার।

মা আজ সকালেই বলছিলেন, হ্যাঁরে অপু দাঙ্গা কি থেমে গেছে? মা বেশ ভয় পেয়েছে।

দাঙ্গা তো হয়নি মা। কয়েকটা মানুষ মরেছে।

একে কি দাঙ্গা বলে না? বলা নেই কওয়া নেই ক-দিনের মধ্যে চারটে মানুষ খুন হল । ‘টাইটানিক’-এর টিকিট কিনেছি। পলাকে নিয়ে কাল যাব। আজ শনিবার। পলার দিদির বাড়ি থেকে রবিবার বিকেলের শোয়ে গ্লোবে যাওয়া যাবে। দারুণ হয়েছে। দুপুরে ভাত খেয়ে পান খেতে গিয়ে দেখি বুবলা আসছে।অপুদা আর একটা মার্ডার।

কবে রে?

আজ ভোরে।

চিনতে পারলি?

মোড়ে যে মুচিটা জুতো নিয়ে বসে ওর ছেলে। রাজমিস্ত্রির কাজ করে। রাতে বাড়ি ফিরছিল। ঘটনাটা ঘটে চারটে নাগাদ। সারারাত কাজ করেছে।

কারা মারল?

সেটাই তো ধরা যাচ্ছে না।

ধরা যাচ্ছে না বললে হবে? তোরা কিছু কর।

মিলন সংঘের ছেলেরা বলল এটা দে পাড়া, মিল পাড়ার কেস। আলাদা এলাকা।

সে কী রে! বড় রাস্তাটা ঘুরলেই তো মিলন সংঘের মোড়।

এদিকে যে ঝামেলা হবে না কে বলতে পারে?

হলে তখন দেখা যাবে। তোমার চাঁদাটা দাও তো।

কীসের চাঁদা? আমি বিরক্ত হই।

আমরা নবীন সংঘ থেকে সমানের রবিবার লঞ্চে বেলুড় যাব। শুধু ছেলেরা। ফ্যামেলি অ্যালাউ করা হচ্ছে না। ড্রিঙ্কস যাবে। নাচ-ফাচ হবে।

আমি যাব না।

যাবে না তো কী হয়েছে। ক্লাব মেম্বার, চাঁদাটা দাও।

বুবলা চলে গেল। প্রেস্টিজ রাখতে চাঁদার বিল নিলাম।

বাড়ি এসে পলাকে তৈরি হতে বলি। প্রচন্ড গরম। তবু টাইটানিক! কলকাতা যেতে হবে।

# #

পিঙ্কি এক অদ্ভুত খবর দিল। পাল পাড়ার এক মহিলাকে কারা বাড়িতে ঢুকে খুন করে গেছে।

পিঙ্কিকে বকলাম খুব। লজ্জাঘেন্না বলে কিছু নেই? অত দূরে পাড়া বেড়াতে যাস।

পিঙ্কি চুপচাপ। একটু মুচকি হেসে বলে, কী করব, মিল পাড়ায় বেশিরভাগ বাড়িতেই হাঁড়ি চড়ছে না। মাছ তো আসেই না। রান্নাও বন্ধ। আর আমার কেমন অভ্যেস হয়ে গেছে। দুপুরের দিকটা একটু ভালোমন্দ না হলে চলে না। তাই পাঁচিলে পাঁচিলে ঘুরতে ঘুরতে একটু পাল পাড়ায় ঢুঁ দিয়ে এলাম।

ওই বাড়িটাতে গিয়েছিলি নাকি?

একেবারে প্রথমে যাইনি। একটা রান্নাঘরে মাছের খুব গন্ধ পেয়ে উঁকি মেরে দেখি, থালার উপর মাছের মশলা মাখিয়ে বাড়ির গিন্নি বোধহয় ছাতে কাপড় তুলতে গেছে।

সব সাবাড় করলি তো?

নাঃ, নাঃ। তুই তো জানিস আমি সেরকম লোভী নয়। দু-একটা খেয়ে পায়ে পায়ে ছাতে গেছি, বাড়ির গিন্নি পাশের বাড়ির বউটার সঙ্গে খুব গল্প জুড়েছে। ওই খুনের গল্পই হচ্ছিল। আমাকে দেখে দুড়দাড় করে নেমে এসে চেঁচাতে লাগল। আমি ততক্ষণে পগার পার।

বাজে কথা রাখ তো। খুনের বাড়িটাতে গেলি?

নাঃ। পাশের বাড়ির পাঁচিল থেকে উঁকি মেরে দেখি, মোটাসোটা বউটা পাশ ফিরে বিছানায় শোওয়া। কে বলবে মারা গেছে। লোকেরা বলছে, এ নির্ঘাৎ কোনো কান্ড। এসব তো তুই ভালো বুঝিস। এখনকার খুনগুলোর সঙ্গে চেনা লোকের  কোন সম্পর্ক আছে কি?

আছে বই কী। এগুলো তো কোনো বদমাশ লোকের কান্ড। এটাও নির্ঘাৎ কোন লোকেই  করেছে।

তা হলে ওই সব লোকেদের অন্য লোকেরা কিছু বলছে না কেন বল তো?

পিঙ্কি থাবা দিয়ে নাকের নীচেটা ঘষছে। মন্টু ঢিল মেরেছিল। এখনও ওখানটা হাঁ হয়ে আছে।

সেটাই তো আমিও ভাবছি। মানুষগুলো এত চুপচাপ হয়ে গেল কেন?

# #

মিলপাড়ায় আপাতত খুন বন্ধ। যেখানে যেখানে কার্ফু, র‍্যাফ নেমেছে, সেখানে আর খুন হচ্ছে না। অন্য জায়গায় কিন্তু থামেনি। পাল পাড়ায় ওই মহিলা খুনের ব্যাপারটা বীভৎস। তারপরেই একটা আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেছে। সন্ধের পর পাড়াগুলো নিঝুম হয়ে থাকে। সিনেমা হাউসগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে। রাস্তাগুলো ফাঁকা। বাড়ি ফিরতেই মা দৌড়ে এসেছে। কে অপু এলি? অপু? এত রাত করিস না বাবা, বড় চিন্তায় থাকি।

মায়ের সেই রোগ আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। কারণে অকারণে ভয় পাচ্ছে।

রবিবার দিন একটু বেরোলাম। ক্লাবগুলো কিছু তো করল না। পার্টিগুলো কিছু করে কিনা দেখি।

মিটিং চলছে। তেঁতুলতলার মোড়ে একদল আর বটতলার মোড়ে একদল।

আপনারা এগিয়ে আসুন। দলে দলে সমবেত হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। দুষ্কৃতকারীদের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলতে হবে। আপনারা সকলে আমাদের মিছিলে যোগ দিন। মিলের মোড়ে, খাদনের মোড়েও দুটো মিটিং চলছে। কার্ফু এলাকা ছাড়া সব এলাকা দিয়েই মিছিলগুলো ঘুরল। লোক খুব কম। সবাই ছুটির দিনে নিজের নিজের ধান্ধায় ব্যস্ত। কে মিছিলে যোগ দেবে?

মিছিলগুলো সব একসঙ্গে জুড়ে গেলে অনেক লম্বা হত লাইনটা। নিজের চিন্তায় নিজেরই হাসি পেল। তা আবার হয় না কী?

মিছিলে, মিটিংয়ে কাজের কাজ কিছুই হল না। সন্ধেবেলা করালী পাড়ার মোড়ে লাইটপোস্টের কাছেই গুলি লাগল অবনীশ হালদারের। খুব জোর বেঁচে গেছে। সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিল। প্রথম গুলিটা পায়ে লাগে। দ্বিতীয় গুলিটাও ছোড়া হয়েছিল। সেটা একটা নিরীহ রাস্তার কুকুরকে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। অন্য কুকুরগুলো হইহই করে এগিয়ে আসায় আততায়ী পালিয়েছে। অবনীশ হালদার হাসপাতালে। প্রাথমিক বিপদ কেটে গেছে। ও তো ট্রেড ইউনিয়ন লিডার। পূর্বাচল ক্লাবের হর্তাকর্তা। প্রচুর চ্যালাচামুন্ডা! ব্যাপার অনেক দূর গড়াবে।

মারা গেছে কালু। বড়সড়ো চেহারা, দে পাড়ার কুকুরদের মাথাটাকে একেবারে শুইয়ে দিয়েছে। ব্যাপারটা কুকুররা কেউই মানতে পারছে না। রোজকার মতোই লাইটপোস্টের গায়ের কাছে কালু শুয়েছিল। অন্ধকারে দূর থেকে আসা সাইকেলটাকেও দেখেছে। তবু শুয়েছিল চুপচাপ। হঠাৎ মোড়ের কাছে আর একটা লোকের গন্ধ পায়। গন্ধটা ভয়ের। কেননা কালু লাফিয়ে মোড় বেঁকে। ঠিক সেই সময় সাইকেলটার দিকে প্রথম গুলিটা যায়। সাইকেল সমেত লোকটা শুয়ে পড়ে। ঠিক তখনই দ্বিতীয় গুলি, যেটা মোড় বেঁকা অবস্থায় কালুর গায়ে লাগে।

ভুলুর সব খবরই পিঙ্কির কাছে পাওয়া। পিঙ্কি ভুলুকে ছাড়া আর কারুকে বলেনি কথাটা। ভয়ে পিঙ্কি কেমন যেন হয়ে গেছে। সারাক্ষণ ভুলুর সঙ্গে সঙ্গেই আছে। কোথাও পাড়া বেড়াতে যাচ্ছে না। কেবল বলছে, চল অন্য জায়গায় চলে যাই।

কোথায় ছিলি তুই তখন?

মোড়ের ডাস্টবিনের কাছে।

এ সময় ওখানে কী করছিলি?

সামনের বড় বাড়ির ঝিটা ওই সময় রান্নাঘরের সব ময়লা ফেলে ডাস্টবিনে। কালুও তাই ওখানে বসেছিল। কালু চলে গেলে আমি যেতাম। কত কিছু ভালোভালো জিনিস থাকে। কালু তো সব খায় না।

ভুলুরও খুব ভয় করছিল পিঙ্কির কথা ভেবে।

কুকুরেরা সবাই ওখানে গিয়েছিল। লোকটাকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে গেছে। কালু পড়েছিল মাটিতে চুপচাপ। তারপর কালুকেও অন্য লোকেরা তুলে নিয়ে গেল।

ওখানকার গন্ধটা শুঁকছিল সবাই। সেই খুনে মানুষটার গন্ধ ওরা পেয়েছে। পিঙ্কি ওসব গন্ধ পায় না।

পিঙ্কি বলল, ওই গন্ধওলা লোকটাকে যদি তোমরা খুঁজে পাও কী করবে?

টুঁটি ছিঁড়ে নোব। কালুকে যে মেরেছে তাকে ক্ষমা করা যায় না।

# #

কুকুরগুলো হঠাৎ কেমন ফেরোসাস হয়ে গিয়েছে। খুন বন্ধ। পাড়াঘরে থমথমে ভাবটা কেটেছে। তবু শান্তি নেই। অবনীশ হালদার গুলি খাবার পর হইহই করে ছেলেরা কিছু দিন মিটিং মিছিল করল। কাগজে খবর বেরোল। সরকার জোর ব্যবস্থা নিয়েছিল। পাড়ায় জোরালো আলো লাগানো হয়েছে। পুলিশ পাহারা কমার পরও শান্তি নেই। কুকুরগুলো সব কেমন বেয়াড়া হয়ে গিয়েছে।

সন্ধের পর অন্য কোনো পাড়ায় যাওয়া যায় না। সাইকেল নিয়ে ঢুকলেও ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসে। সকালবেলা আবার সব ঠিকঠাক। রাত্রিবেলা ওদের যে কী হচ্ছে কে জানে। কুকুর কামড়ালে ইনজেকশান আছে। সেই ভয়ে কেউ অন্য পাড়ায় যাচ্ছে না।

সেদিন নিমুদের বাড়ি গেছি। ঢোকা মাত্র অ্যালসেশিয়ানটা চেনে বাঁধা অবস্থায় লাফাতে শুরু করল। নিমু বলল, দেখছি এই বিলিতি কুকুরটাও রাত্রিবেলা কেমন নেড়ি কুত্তাদের মতো খেপে যাচ্ছে। কোনো লোকের বাড়িতে ঢোকার উপায় নেই।

নবীন সংঘের মিটিংয়ে কথা হল পাড়ার কুকুরদের কিছু বিষ কিনে খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে কেমন হয়?

সবাই প্রায় অরাজি। বলে, দরকার নেই। চারিদিকের যা অবস্থা। ওরাও বোধহয় খেপে গেছে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু অপেক্ষা করেই দেখা যাক না।

# #

মানুষেরা সত্যি বোকা। কেমন নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে। ওরা সব সময়েই নিশ্চিন্ত থাকতে ভালোবাসে।

আবার গন্ধ ভাসছে হাওয়ায়! ভয়ের গন্ধ! কালু মারা যাবার পর যে গন্ধটা ছিল সেটা আবার ফিরে এসেছে। হারুদের চায়ের দোকানের কাছে, মাছের বাজারে, ওই গন্ধটা হাওয়ায় ভাসছে। এমনকী দে পাড়ার মোড়েও ওই একই গন্ধ!

পিঙ্কি দেখেছে বেশ কিছু লোক আবার জড়ো হয়েছে। তাদের কথাবার্তা সুবিধের নয়। তারা আবার মারার জন্য তৈরি হচ্ছে। মানুষ মারবে।

পিঙ্কি বলছিল, আমরা তো নিজেদের নিজেরা মারি না। ওরা কেন...? নিজেরাই নিজেদের মারবে?

ভুলু কোনো উত্তর দিতে পারেনি। সত্যিই তো, কেন যে ওরা এরকম উলটোপালটা। কালু মারা যাবার পরে কুকুরেরা সবাই এককাট্টা হয়েছে। এমনকী নিমুদের বাড়ির পালিত কুকুরটাও বলেছে কিচ্ছু ভেবো না। আমি তোমাদের সঙ্গেই আছি। যা খবর পাব সব দেব। ভোরবেলা উঠে পিঙ্কির সঙ্গে ঘুরছিল ভুলু। সারারাত জেগে ভোরের হাওয়ায় ঘুমোয় ভুলু। পিঙ্কি লেজ বুলিয়ে ঘুম ভাঙাল।

এগোতে এগোতে দেখে দে পাড়া ছাড়তেই বাতাসে সেই ভয়ের গন্ধ বেড়ে যাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়া গাছগুলো খুব জোরে মাথা দোলাচ্ছে। ওরাও বোধহয় ভয় পেয়েছে। গোলাপগুলো থমকে নিমুদের বেড়ার ভেতর থেকে দেখছে। লাইটপোস্টের আলো জ্বলছে। চাঁদের আলো নিভে গেছে। ভোর উঁকিঝুঁকি মারছে। আকাশের কালো ভাব কাটলেও মাটিতে সেই গন্ধ। গন্ধটা শুঁকতে শুঁকতে নদীর পাড়ে এল ভুলু।

গন্ধটা বাড়ছে ক্রমশ। চড়ার ধারে শুধু আমি আর পিঙ্কি।পিঙ্কি ভয় পাচ্ছে। আমাকে আটকাচ্ছে। তবু এগিয়ে যাই। জলের কাছেই একটা মানুষ। উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। নড়ছে না একদম। ঘুমোয় মানুষটা। মানে বরাবরের মতো ঘুমিয়ে পড়েছে।

গলা তুলে আওয়াজ করি। দূর থেকে সবাই আসছে। সবাই ছুটে আসছে। মানে আমাদের সবাই। এই ভয়ের গন্ধ পেয়েছে ওরা। আসার পথে এ ওকে খবর দিচ্ছে। দল ভারী হচ্ছে ক্রমশ। পিঙ্কি  একপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে।

একটা মানুষও খবর পায়নি।এদিকে আসেনি কেউ। ওরা সবাই ঘুমিয়ে আছে। জানি এখনই ওদের এ ঘুম ভাঙবে না।

# #

 

 

                                      

0 Comments

Post Comment