পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ফেস্টুন

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 201 view(s)
  • লিখেছেন : এস. আজাদ
ওয়েলিংটন স্কোয়ার থেকে মিছিল বেরিয়েছে, বেশ বড় মিছিল। সাম্প্রতিককালে দেশজুড়ে ঘটে চলা নারী নির্যাতন ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী সমাজের মিছিল।


কাতারে কাতারে লোক, পুরুষ-মহিলা, ছাত্র-যুবা পা মিলিয়েছেন রাজপথে, মিছিল দীপ্ত পায়ে এগিয়ে চলেছে রাজভবন অভিমুখে। নানা কথার নানা স্লোগানে মুখরিত রাজপথ। সরকারি বেসরকারি নামি অনামী সব রকমের বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে ধন্য রাজপথ। মিছিলের মুড়ো পৌঁছে গেছে রানী রাসমণি রোডে। নির্ধারিত সূচি মত এখানেই একটা ছোট্ট মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। মিছিলের উদ্যোক্তারা বাম অবাম সব রাজনৈতিক দল থেকে কয়েকজন লড়াকু মুখকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। শ্বেত শুভ্র বসনে খুব আক্রমণাত্মক ভাষায় হাত ও মুখ ভঙ্গিমায় আন্দোলনের প্রতীক লড়াকু নেতা ধর্ষণের কারণ, ধর্ষণের শ্রেণিচরিত্র, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সাংস্কৃতিক অবনমন, ইত্যাদি ইত্যাদির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করছেন।

একজন সাংবাদিক ক্লোজ শট নিচ্ছেন- কলেজ শিক্ষিকা মায়ের হাত ধরে মিছিলে আসা সাত-আট বছর বয়সী কনভেন্টে পড়া শিশু কন্যার হাতে ধরা ফেস্টুন 'রাজনৈতিক রং দেখে নয়, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।'

মঞ্চে বক্তৃতারত নেতা এইমাত্র ঘোষণা করলেন তাদের দলের হাজার হাজার কর্মী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। হাত তালির সুনামি সারা রাস্তা জুড়ে। মিছিল শেষ হয়েছে তবুও দু-চার জন এদিক ওদিক থেকে আসছে। সভায় বক্তৃতা চলছে, ক্যামেরা চলছে। একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে যাই করুক ছোট-বড়-মেজ বুদ্ধিজীবী মুখে কালো কাপড় বেঁধে বসে আছেন রাস্তায়।

নারী নির্যাতনের যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ, দেশের জনতা, দেশের রাজধানী উদ্বেলিত হয়ে উঠেছিল তাও ধীরে ধীরে স্থিমিত হয়ে গেল। ধীরে ধীরে সব কিছু থিতিয়ে এল। আমরা আবার যে যার মতন ঘাস-বিচালি খুটে খেয়ে বেঁচে থাকতে লাগলাম। সংবাদ শিরোনামে ও সংবাদপত্রের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পাতায় জায়গা পেল ক্ষমতার হাত বদল, বদলার রাজনীতির নানা খবর, দুর্নীতি- নির্বাচন অবিবাহিত নায়িকার সদ্যোজাত সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে টালবাহানা... ইত্যাদি ইত্যাদি।

(দুই)

নেতা বসে আছেন পারিষদ সহ শক্ত কাঠের চেয়ারে মোমের মতো মোলায়েম কুশন।
আচমকা পিয়ানোর টুংটাং সুর মূর্ছনায় বাঙময় হয়ে ওঠে পরিবেশ। নেতা ফোন ধরেন ও প্রান্তের কথা শোনা যায় না, সকলেই নেতার মুখের দিকে মৃত মাছের মত স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে। পারদ উঠছে নামছে। কখনো বিরক্তির ঝাঁঝ কখনো উদ্বেগ কখনো আবার শাসনের মোলায়েম সুর। নাটকীয় স্বর ও পট পরিবর্তনে যা বোঝা গেল, মিঃ নিয়োগী, জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা, যাকে নিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে, সমাধান করতে হবে।

-না না, এখন নিয়োগীকে চটানো যাবে না। সামনে বড়ো কর্মসূচি।

ওদের বেশি করে দায়িত্ব দাও, নতুন কাজ দাও।

আমাকে ফোন করতে বলো। আমি কথা বলবো।

-না। কেউ কিছু বলবে না। আমি দেখছি বললাম তো।

মাঠ ভরাবে কে? নিয়োগী ছাড়া!

ওদের বল সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, বড়ো কর্মসূচির পর আমি সবাইকে নিয়ে একটা মিটিং করে জানিয়ে দেব।

(তিন)

নেতা কথা রেখেছেন তিনি মিটিং ডেকেছেন। মিটিং এর বিষয় মিঃ নিয়োগী নামের জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার অনৈতিক কর্মের শাস্তি ঘোষণা। জেলার প্রায় দুই শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে নিয়োগীর কৃত অনৈতিক কর্মের শাস্তি ঘোষণা হলো। তাকে তার বর্তমান পদ থেকে অপসারিত করা হলো, জেলা থেকে নিয়োগীকে সরিয়ে নেতার স্নেহ ছায়ায় আনা হলো সংশোধনের লক্ষ্যে। এ বিষয়ে অন্যত্র আলোচনা দল বিরোধী কাজ বলে গণ্য হবে এবং দল বিরোধী কাজের শাস্তি মারাত্মক হতে পারে বলে ঘোষণা করলেন নেতা স্বয়ং। তবুও সভায় চাপা গুঞ্জন শোনা গেল !!! নিঃশব্দে ভেসে বেড়াতে লাগলো কতগুলো অনৈতিক শব্দ শব্দগুচ্ছ 'ধর্ষণ'! 'কতই বা বয়স হবে ১৫-১৬'! 'সময়ে বিয়ে করলে এরকম একটা মেয়ের বাবা হতো'! 'কিভাবে এটা করতে পারল'! বিবেকে বাধল না... আজকের সভায় সেই শিশু কন্যাটি বাবার অনৈতিক কর্মের শাস্তি ঘোষণা শুনতে উপস্থিত ছিল, শুধু সেদিনের সেই ফেস্টুনটা ছিল না। যেখানে লেখা ছিল- 'রাজনীতির রং দেখে নয়, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।'

0 Comments

Post Comment