পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কুয়াশা ভালো লাগছে না

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 205 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস চক্রবর্তী
সফেদ বা সাদা রং এর কুয়াশা । একটা মৃদু ঘন কুয়াশা। তার ভেতর থেকেই ওরা বলছিল একটা নেকড়ে দুম করে বেরিয়ে আসতে পারে। যে কোনও মুহূর্তে বেরিয়ে আসতে পারে বিউটিফুল কুয়াশার ভেতর লুকিয়ে থাকা এক পিস সলিড হিংস্র নেকড়ে।

ওই কুয়াশার ভিতর থেকে আমি নেকড়ের গর্জন শুনতে পাচ্ছিলাম। হঠাৎই ছটফট করে উঠলাম। ঘুমটা ভোকাট্টা হয়ে গেল। মসৃণ গোলাপি নাইট ল্যাম্পের আলোয় দেখলাম- আমার শোবার ঘরটা ঠিক ঘরের মতই স্পষ্ট হয়ে রয়েছে এই মধ্যরাত্তিরে।

ঘড়িতে এখন রাত তিনটে পাঁচ। বাইরে ঝিঝির ডাক। মায়ের নাকে অক্সিজেনের নল। অক্সিজেন নিতে, নিতেই মা ঘুমোচ্ছে অঝোড়ে। মনেপড়ে গেল ছোটবেলায় আমি আর মা দুজনেই কুয়াশা দেখতে খুব ভালবাসতাম। মা তখন বলতো “বুঝলি বাবি শীতের সময় শীতের দেশে গেলে কবিতার মতই লা-জবাব কুয়াশা দেখা যায়। মায়ের লেখা কবিতা গুলোতেও আমি দেখেছি বারবার ফিরে,ফিরে এসেছে কুয়াশা এবং ওয়াটার কালার বা জলরং এর কোনও নিটোল গল্প।

কিন্তু ছোটবেলার কথা মনে পড়তেই মনে মনে বললাম- আজ পর্যন্ত তো কোনও সাধারণ কিংবা প্রখর এলোমেলো শীতে কোনও ঠান্ডার দেশে তো যেতেই পারিনি আমরা।

গত তিনদিন আগে ডাক্তার আমায় বলেছিল “প্রলয় ডোন্ট ওরি তোমার মা আস্তে আস্তে রিকভার করছে”। এরপরই এক্সরে প্লেটের দিকে চোখ রেখে বলেছিল-“লোয়ার লান্সের এই জায়গাটা এখনো সাদা হয়ে রয়েছে। এটাকে আরও কমতে হবে। নিউমুনিয়া একটু বেশি বয়েসে কমতে অনেক টাইম নেয়“।

আমার মনেহল ৭০-৭১ কি একজনের জীবনে খুব বেশি বয়েস? আমি দেখলাম মায়ের ঘরের দেওয়ালের ওপর আপন মনে ঝুলতে থাকা দেওয়াল ঘড়িটার ওপর এবার একটা টিকটিকি হয়তো টিকটিক করতে করতে এসেই সোজা বসে পড়লো। সাদা টিকটিকির স্লিম শরীর এবার দেখলাম খুব নীরব ছন্দেই সম্পূর্ণ আবৃত করে রাখেছে দেওয়াল ঘড়ির বড় কাঁটাটাকে। এখন ঘড়ি বলতে শুধুই ছোট কাঁটা।  একটু আগের স্বপ্নের কথাটা আবার মনে পড়লো।

স্বপ্নে যেমন দেখেছিলাম একটা সাদা কুয়াশার ভেতর একটা প্রকান্ড নেকড়ে বসে আছে। এমনিতে নরমাল এক্সরে প্লেটকে বিলকুল অন্ধকারময় কালো জঙ্গল মনে হয়তো হতেই পারে যে কারুর। সেখানে যখন সর্দি জমে তখনই ভয়। নিউমুনিয়া। তখন কারুর মনেই হতে পারে যে ওই লান্সে জমে থাকা সাদা কুয়াশার মত সর্দি গুলোর ভেতরেও হয়তো একটা নেকড়ে লুকিয়ে আছে। যার তান্ডবে তছনছ হয়ে যেতে পারে যে কোনও জীবন।

এসব ভাবতে ভাবতেই চূড়ান্ত অসহায় লাগছিল নিজেকে। হঠাৎই দেখলাম মা বাঁদিক ফিরে শুয়ে বলল-“ জল খাব”। মায়ের বোতল থেকে গ্ল্যাসে জল ঢালতে গিয়ে দেখি- ঘড়িতে একটু আগে বশে থাকা টিকটিকিটা এবার আলো মাখা টিউব লাইটের মাথায় উঠতে চাইছে। ও হয়তো শিকার ধরতে চাইছে। কিন্তু শিকার ফস্কে যাচ্ছে।

মায়ের জলের বোতলের পাশের বোতলটার ওপর এবার চোখ গেল। ওই বোতলটার শরীর জুড়ে একটা জঙ্গলের ডিজাইন রয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও কুয়াশা নেই। মাথায় এবার একটা স্বপ্ন চিকচিক করে উঠলো। মায়ের নেক্সট বুকের এক্সরেতেও যেন বিলকুল ওই বোতলে খোদাই ছবিটার মতই কালো জঙ্গল হয়ে ওঠে মায়ের লান্স। কুয়াশা মাখা জঙ্গল দেখতে আর ভাল-লাগছে না। ঘড়ির ওপর থেকেও টিকটিকির সাদা আবরণটা সরে গিয়েছে।  সময়ের দুটো কাঁটাক এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

0 Comments

Post Comment