পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

হরে - দরে কাশ্যপ গােত্র

  • 12 June, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1100 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস সরকার
- না স্যার! এটা আমার উইকিলি নিউজ পেপার। - অত টেকনিকাল পয়েন্ট ধরেন কেন? বেশ! উইকলি বুলেটিনই বলুন না হয়! - সে কি কথা? রেজিস্ট্রেশন আছে বই কি! না হলে করপােরেশনের অ্যাড ছাপছি কিসের জোরে? - না, ডেলি নয়। ছেচল্লিশ দিন বাদে করপােরেশনের ইলেকশন। আমাদের শহরে এখন খবরের হেভি ডিমান্ড! তাই আমার কাগজও ডেলি বেরােচ্ছে। পাবলিক নিউজ খেতে চাইছে সকাল বিকালে চায়ের সঙ্গে, আমিও সাপ্লাই দিচ্ছি! কিছু কামিয়ে নিই এই মওকায়! হাঃ হাঃ হাঃ!



- আজ্ঞে হ্যা! পাঁচজন রিপাের্টার আমার কাগজের। কি? বাব্বাঃ! সব, টেম্পােরারি। পার্মানেন্ট রিপাের্টার রাখবাে কোত্থেকে? তাহলে তাে শিল্পনগরী - বার্তা’ না হয়ে আনন্দ বাজার’ বা ‘আজকাল’ নাম হােত কাগজের। হ্যাঃ! পার্মামেন্ট রির্পোটার ! একে মা রাঁধে না, তার আবার পান্তা!
-না-না! ইলেকশান উপলক্ষে না, আমার কাগজ প্রথম থেকেই বারাে পাতার। আপনি কি ফলাে করেন? তবে এক কাজ করেন, ইলেকশনের দিন অব্দি এখানে আছেন যখন কিনুন, মাত্র তিন টাকা ত মােটে। রােজ পাঁচখানা করে ওয়ার্ডের হাল হকিকত নিয়ে লেখা থাকবে।
- বেশ বলছেন যা হােক! করপােরেশন ইলেকশনে কাগজের ভূমিকা নতুন করে কি আর থাকবে! সেই তাে আদ্যিকালের পুরনাে ট্রাডিশন! নাগরিক সুবিধা, সুযােগ ঠিকঠাক পেলাম বা পাচ্ছি কি না। এই তাে? এরই হিসাব মতাে রুলিং পার্টিই থাকবে নাকি বিদায় নেবে ঠিক করবে লােকজন। এই জনমতটুকু ত্রৈী করতে সাহায্য করে প্রিন্ট আর ইলেকট্রিনিক মডিয়া। নয় কি?
হা! সেটাই তাে স্বাভাবিক! কোলকাতা বেসড মিডিয়া আমাদের শহরের প্রতিটি ওয়ার্ড ধরে ধরে রিপাের্ট ছাপাবে কেন? তাদের পাঠকের কাছে এই বাংলার যে কোনাে শহরের মিউনিসিপ্যাল করপােরেশন ইলেকশান মেইন ফুড আইটেম নয়! জাস্ট একটা তরকারি মাত্র! হাঃ হাঃ হাঃ!
- ওঃ! বারবার বলছি খাবার, ফুড আইটেম। বুঝতে চাইছেন না? সামান্য তিন টাকার কাগজ বিক্রি করে খরচা বাদ দিয়ে ক পয়সা থাকে আমাদের। সে ভরসায় মাইনে দিয়ে রির্পোটার রাখা যায়। - কামাবাে না কেন? সন্ধে থেকে বাংলা নিউজ চ্যানেলগুলাে লক্ষ্য রাখুন, সব কটাই আমাদের এ শহরের কোন না কোনাে ওয়ার্ড নিয়ে আধঘন্টা ভ্যাজর ভ্যাজর করছে। এমনি এমনি! আবার, এ শহরে শুধু আমি নই, আরও দুখানা কাগজ গজিয়েছে। তারাও বাজারে নেমে পড়েছে।
- বােঝাই তাহলে! আমাদের শহরে এখন ন টাকা ওড়ানাের খেল শুরু হয়েছে। যে পারছে কুড়িয়ে নিয়ে পকেটে ভরছে। মাস দেড়েক পরেই এই খেলা শেষ, সুতরাং এই কটা দিনেই কামানাের মরশুম। এরপর লােকসভা, কে পোঁছে আমাদের ? দু’বছর বাদে বিধানসভা ভােট, সেখানেও পাত্তা পাই না।
- কি? আরে হেজিটেট করছেন কেন? ঝেড়ে কাশুন না! ও! এই কথা! টাকা কিভাবে আসে? স্পনসররা দেয়!
- হ্যাঃ হাঃ হাঃ। বােঝাচ্ছি। না দাদা! ক্রিকেটার বা ফুটবলারের জার্সিতে টিভি সিরিয়ালের আগে পিছে যেসব কোম্পানীর নাম লেখা থাকে তারা কি আমার কাগজে বিজ্ঞাপন দেবে? এই করপােরেশন ইলেকশনে যে সমস্ত প্রার্থী লড়ছে তারাই আমাকে বিজ্ঞাপন দেয়।
- এক দুজন কেন? সব্বাই!
-এখানে বিয়াল্লিশ খানা ওয়ার্ড জানেন তাে? চারটে পার্টির একশ আটষট্টি খানা ক্যান্ডিডেট। ফাউ হিসাবে আছে গােটা তিরিশের নির্দল, বটে তাে? হরেদরে দুশােখানা স্পনসর আমাদের, কি বিশাল বাজার, ভেবেছেন এর আগে?
- কোন লােকাল কাগজ এর আগে দেখেছেন পরপর বেশ কিছুদিন?
- ও বাবা! ভাল করে খোঁজ খবর না নিয়েই স্টোরি করতে নেমে পড়েছেন? বেশ! আপনি আগে অন্তত দিন দশেক আমার কাগজটাই কিনুন। রােজ সকালে চকবাজারের 'নন্দী বুক স্টলে’ পেয়ে যাবেন। লক্ষ্য থাকে বারাে পাতার কাগজটিতে যেন অন্তত তিন চারখানা ওয়ার্ডের কিছু না কিছু সমস্যা নিয়ে লেখা ছাপা থাকে। সঙ্গে যেন অন্তত চারটে করে কোয়ার্টার পেজে চারজন স্পনসরের অ্যাডটাও ছাপা হয়।
- হাঃ হাঃ হাঃ! সব পাখিপাড়া করে বােঝাতে হবে স্যার? দেখবেন, ছাপা আছে, “শিল্পনগরী বার্তার সমৃদ্ধি কামনা করি, আমরা নিশ্চিন্তিপুরে সর্বাঙ্গীন উন্নতির জন্যে দায়বদ্ধ, পরের লাইনে শ্রী বা কম অমুক, তমুক নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলার বা প্রার্থী। আপনার শহরকে আরাে উন্নতকরার জন্যে তমুক চিহ্নে ছাপ দিন।” এর সঙ্গে ক্যান্ডিডেটের দলীয় প্রতীক চিহ্ন।
-হ্যা! তাও থাকে এক দুটো। 'রাধারাণী বস্ত্রালয়’ কি ‘মামণি জুয়েলার্স’ ও বিজ্ঞাপন দেয় মাঝে মাঝে, তবে তাদের রেট ক'টাকাই বা আর। লােকাল কাগজের কোয়াটার পেজের রেট দু-তিন হাজার হলেই তা যথেষ্ট।
- হ্যা! এটা তাে অনুমান করাই যায়। অ্যাড পড়ে কোন কাষ্টমার কোনাে দোকানে কিনতে এসেছিল, আমি অন্তত শুনি নি! সিটিং কাউন্সিলার বলে দেয়, তাই অ্যাড দেয়। এটাকে কি টাকা কামানাে বলে নাকি?
– পাগল! ভােটের ময়দানে কজির জোর পরীক্ষা করতে নেমেছে যারা তারাই টাকা ওড়ায়। - তাও জানতে হবে? অন্যসব কাগজ বা নিউজ চ্যানেলগুলাে কে কে কত টাকা পায় বলতে পারি না, আমার কথা বলতে পারি। আপনি ইনকাম ট্যাক্স বা সিবিআইয়ের তাে লােক নন, হলেও আমার কিছু যায় আসে না, আমার তাে দুনম্বরী ইনকাম না, আমার শালীর আব্দার - আপনাকে হাঁড়ির খবর জানাতে হবে - যতটা পারি বলি ।
-নানান বদ্যি নানা দাওয়াই! সিটিং কাউন্সিলাররা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার দেয়, বাদবাকী তিনটে পার্টির ক্যান্ডিডেটগুলাে দশ পনেরাের বেশি উঠতে চায়না। স্পেস ফাকা থাকলে নির্দলগুলাের অ্যাড ছাপি। - ওরা? বেশি না, দুই থেকে পাঁচ হাজার। বারগেন করতে হয়, দর ওঠে।
- হাসালেন স্যার! আমি কি এই খোঁজ নিতে পারি? কোনাে কোনাে বিষয়ে নাক গলানাে বারণ আমাদের। আমরা তাে আর সিবিআই বা পুলিশ নই! টাকা কোত্থেকে আসচে কেউ বলে? আমার হাতে টাকা আসবে, তারপর ম্যাটার ডিটিপি হবে, ব্যস! আমার এরিয়া এইটুকু। - এটা যেমন আপনি আমি জানি, ওরাও কি জানে না ? আমার ইয়ের কাগজে ওদের বিজ্ঞাপন ছাপা হােল কিনা হােল তা দেখে কেউ ভােট দিতে আসে না। দেয় এই জন্যে যাতে ওদের রুিদ্ধে যেন কিছু লেখা না ছাপা হয়! একমাত্র মিডিয়াই তৈরী করে দেয় কে চেয়ারে বসবে এটা ওরা জানে।
- মানছি আপনার কথা খানিকটা। মানুষ তার চারপাশের জগত থেকে দেখাশােনা আর পত্র পত্রিকার রিপাের্ট পড়ে ভােট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এটা খানিকটা ঠিক।
- ইয়েস স্যার! খানিকটা, পুরােটা নয়। - শুনুন! আপনি আর আপনারা ক’জন জানেন যে, অমুক পার্টি যদি ভােটে জেতে ভালােই হবে। আমি আর আমরা বলবাে, অমুক না, তমুক পাটিই ভালাে। তাই তাে?
- বেশ, এবার আপনার আর মতের বাইরেও আর একটি মত আছে যেটি সমস্ত যুক্তিবাদী মানুষের মগজেও ফেনাতে থাকে একটানা, তার খোঁজ রাখেন কি ? মিডিয়ার জোরের জায়গা এখানেই!
- আপনারা লেখক মানুষ। মানুষের অন্তলােকের রহস্য নিয়ে মশগুল থাকেন, আমাদের বারবার চাক্ষুষ ঘটনা নিয়ে। আপনারা বলেন, “ব্ৰহ্মসত্য, জগৎমিথ্যা! এর বাইরে আর কিছু নেই। তাই তাে? আমরা বলি “জগৎকে যে মিথ্যা বলা হচ্ছে তার স্বপক্ষে যে সব যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে, সেগুলি এতই দুর্বল, যে জগৎ মিথ্যা নয় বলে মনেহচ্ছে। জগৎ তাে সত্যিও হতে পারে!” মানুষের আবেগ এই খাতেই বয়ে চলে স্যার! প্রিন্ট মিডিয়ার জোরের জায়গাটা এটাই! ট্রাম্প থেকে মােদি থেকে দিদি সবাই এটা জানে! হাঃ হাঃ হ্যাঃ ! - আহা। ইলেকট্রনিক মিডিয়া দুর্বল, সেটা কখন বললাম স্যার? সেটার বিষয়ে পরে আসছি -
- ও! শুধু কথার কচকচি চলছে বলচেন? তা হবে! বেশ! পুরনাে পাড়ায় ফেরা যাক- আপনি খবরের কাগজের হেঁশেল নিয়ে একটা লেখা তৈরী করার আগে সুলুক সন্ধান নিতে আমার কাছে এসেছেন তাে ?
- বলব! আপনার লেখা আমি পড়িনি কখনও, আমার গিন্নীকে আপনি চেনেন না, সে কিন্তু পড়ে আপনার লেখা। খবরের কাগজের সঙ্গে আপনাদের পত্রিকাটিও বাড়িতে আসে যে! ওতেই তাে আমার শালীর কবিতা ছাপা হল একবার, জানি না, আপনার সুপারিশেই কিনা, পড়েছেন সেটা? - আমিও না। বাঙালি ইয়ং জেনারেশন পুড়কি জাগলেই ওসব কবিতা ফোবিতা, গল্প টল্প লেখে কিছুদিন।
– কি? বেশ! থামা যাক! আমার শালী গত পরশু বলেছিল, আপনি আসবেন আজ খোঁজ খবর নেবার জন্য, ভালাে কথা! তবে আগে জেনেনিই, আপনি কি ওই খবরের কাগজটার এমপ্লয়ী লেখক? স্কুপ নিতে এসেছেন?
-জিজ্ঞেস করছি কেন তার কারণ আছে স্যার! কাগজের লােকেরা ভালােই জানে যে ভােটের বাজারে টাকা কেন ওড়ে, কে বা কারা ওড়ায় আর কারাই বা কুড়ােয়, হ্যাঃ! হাঃ! হ্যাঃ! সামান্য একটা করপােরেশন ইলেকশন জিততে পারবে পারবে না জেনেও এক একজন নির্দল ক্যান্ডিডেট দশ বিশ হাজার উড়িয়ে দিচ্ছে!
- আরে দাদা, শুধু বিজ্ঞাপন কেন, কোন কোন পার্টির ক্যান্ডিডেট হয়ে দাঁড়াতে গেলে পার্টি ফার্স্টে তিন চার লাখ টাকা ডােনেশন লাগে! জানতেন? - বিশ্বাস না হওয়ারই কথা! বেশ! ভেঞ্চার ক্যাপিটালিজম টার্মটা শুনেছেন?
- আরে! আমি কি পন্ডিত নাকি? কোথায় যেন পড়েছিলাম। এক একটা নির্বাচন প্রার্থীর জন্যে যে পুঁজি লাগানাে হবে, আগামী পাঁচ বছরে সেটার দশ বারাে গুণ রিটার্ন হাতে আসবে। এই উদ্দেশ্যে ভােটের বাজারে যে টাকা ওড়ে তার পােশাকি নাম এটা।
- কে বলছে হচ্ছেনা? রিটার্ণ কত হােল না হােল সেটা চোখে দেখতে পাচ্ছিনা বটে, তবে পুঁজি যে লাগানাে হয়, তা তাে সবাই জানে!
- যা বাবা! এটাও জানেন না? মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি গুলাে নানান পার্টি ফান্ডে টাকা দেয় না? অবশ্য আমাদের দেশের সব এমপি গুলােই একশ কোটি দুশাে কোটি টাকার মালিক, তারা নিজেরাই।
- ওঃ! আপনি শুধু এই করপােরেশন ইলেকশনের খুঁটিনাটি জানতে এসেচেন? বেশ! পার্টি ফান্ডে এক দুলাখ ডােনেশন, প্রচারের পেছনেও লাখ খানেক, এবার ভােটের দিনে বুথজ্যাম, ছাপ্পা ভােট এসবের জন্য লাখ দুয়েক, কমবেশি পাঁচ লাখ টাকা পুঁজি লাগে করপােরেশনের ভােটে লড়তে গেলে!
- আরে বাবা! মাত্র পাঁচ বছরেই ষাট সত্তর লাখের গ্যারান্টি যেখানে, সেখানে এই ইনভেস্টমেন্ট অনেকেই করবে। অন্য সব কাগজ কে কত পায়, বলতে পারি না। ভােটের মরশুমে এই বিজ্ঞাপন ছেপে চার পাঁচ লাখ টাকা পায় আমার কাগজ। ওই ইনকাম থেকেই আগামী পাঁচ বছর কাগজ ছাপা হবে।
-এই তাে মুশকিলে ফেললেন স্যার! আপনি জিজ্ঞাসাও করতে ছাড়ছে না, আবার এক কথায় বিশ্বাসও করতে চাইছেন না! কথার মাঝে এটা কি, ওটা কি কোশ্চেন করে লাইনের গাড়িকে রেললাইন করে দিচ্ছে বারবার। বিশ্বাস করতে আপনার আটকাচ্ছে কোথায়? শুনুন তাহলে একটা সত্যি ঘটনা। দিন পাঁচেক আগে আমার একজন রির্পোটার এসে বলল, “দাদা অমুক নম্বর ওয়ার্ডের কাউনলির বলল, ‘আমি কোনাে কাগজে বিজ্ঞাপন টিপন দেব না। গত পাঁচ বছরে আমার কাজ দেখে পাবলিক এমনিই আমাকে ভােট দেবে। ভেবে দেখলাম, বেশ বিপদ! পাবলিক যদি এমনি এমনিই ভােট দেয় তাহলে তাে বিপদ! আমরা খাওয়াবাে তবে তাে পাবলিক খাবে! গেলাম ওর বাড়ির পরদিন সকালে।
- আহা! আম খেতে এসেছে, আম খান যতখুশি, গাছ গােনার কি দরকার মশাই ? কত নম্বর ওয়ার্ড, কিনাম, জেনে কি লাভ? মালটা তাে প্রথমে দেখা করতেই পাইছিল না, পারলে গেট থেকেই বিদায় দেয়। - গেট মানে গেটই! দুটো লরি পাশাপাশি ঢুকে যাবে এতাে চওড়া! একতলার বাড়ির সমান উঁচু ভারি লােহার গেট। - হাসালেন স্যার। একতলা বাড়ির সামনে এ গেট মানায়? অট্টালিকা! -নয় কেন? এ তাে এখনাে মার্সিডিজ কেনেনি! গ্যারাজে মাত্র গােটা পাঁচেক - -না না গেট কিপারের হাতে কার্ড পাঠালাম। অনেক পরে এল গেটে। নেহাত সামনে ইলেকশন, তাই বােধহয় এল গেটে। -না, ভেতরে যেতে বলল না।
আমি আমার কাগজের নীতি বললাম, “যেহেতু পাবলিক নিউজ খেতে পছন্দ করে তাই ‘নিউজ মেকার’ হতে চাইলে বা পাবলিসিটি পেতে চাইলে খরচা করতে হবে। “ফ্যালাে কড়ি, মাখাে তেল! তুমি কি আমার পর?”
- অত সহজে হবে? সেই একই বুলি আওড়াল যা আমার রিপাের্টারকে বলেছিল। উত্তরে, মালটাকে হতভম্ব করে দিয়ে গেটে দাঁড়ানাে অবস্থাতেই ওর গােটা কয়েক স্ন্যাপ নিলাম প্রথমে। এরপর ওর গেটের বাইরে রাস্তায় বেরিয়ে সেখান থেকে ওর প্রাসাদের গােটা দুয়েক ছবি তুললাম। ওতাে বেশ ঘাবড়ে গিয়েই “অ্যাই। এধ্ব কি হচ্ছে? ফটো তুলছেন কেন?” চিৎকার করছিল
-নানা! কিসের ব্ল্যাকমেল বা ভয় দেখাবাে? রাজপ্রসাদের মতন বাড়ি? সামান্য পঞ্চায়েত মেম্বারও আজকাল দিল্লীতে বা কোলকাতায় তিন হাজার স্কোয়ার ফুটের ফ্ল্যাট বুক করছে। তােলা ছবিগুলাে ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে এনে ওকে দেখালাম সব। এবার বললাম মােক্ষম কথাটা!
- ওর চোখে মুখের ভাব দেখে বুঝলাম যে কথাগুলি বেশ পছন্দ হয়েছে ওর! ওকে জিজ্ঞেস করলাম, রাস্তা থেকে দাঁড়িয়ে বার আপনি দেখেছেন আপনার বাড়ি,এই গেটে আপনি এরকম বহুবার দাঁড়িয়ে থেকেছেন। এসব তাে নতুন কিছুনয় ? অথচ এই ফটোতে একটু অন্যরকম ভালাে লাগছে কিনা?” মালটা ঘাড় নেরে সায় দিল। তখন বােঝালাম, চিরপরিচিত বা বহুবার দেখা একটি দৃশ্যপট কে যখন দেখি, তখন সেটিকে একটি পারিপার্শ্বিকের ভেতর দেখি। কিন্তু যেই -
- হাসালেন স্যার! ওর কাছে এত ভালাে বাংলা বললে ও ঘােড়ার ডিম বুঝবে। আপনি লেখক মানুষ, তাই এভাবে বলছি। ওকে বললাম “বহু চেনা একটা জিনিসকে বা লােককে ভিড়ের মধ্যে দেখি, তখন সেটি একটি মামুলি দৃশ্য মাত্র। কিন্তু কখনই সেটিকে একটি ফ্রেমের ভেতরে রেখে দেখব, সেটি কিন্তু আর মামুলি বা সাধারণ দৃশ্য না হয়ে একটি চমৎকার দৃশ্য হয়ে উঠবে। ট্রেনের জানালার ফ্রেমের ভেতর দিয়ে একটি পুকুর আর তার পাড়ের দুটি তালগাছ চমৎকার লাগে দেখতে, কিন্তু যেই ট্রেন থেকে নেমে কাছে গিয়ে দেখবাে এমন কিছু আহামরি লাগবে না। আপনি ফ্রেমবন্দি হতে না চাইলে কোনাে দুঃখ নেই আমার, আপনার ওয়ার্ডেই তাে আরাে তিনটে ক্যান্ডিডেট লড়ছে! আমার কাগজে সপ্তাহে চারদিন মানে তিন চারে বারােশ’ শব্দের রেট বাহান্ন হাজার টাকা।” মালটা গুম হয়ে ভাবতে শুরু করল। আমার কার্ডটা ওর সামনে মাটিতে ফেলে দিয়ে ওর দিকে পেছন ফিরে হাঁটা লাগালাম।
- হ্যা! না হলে আর এত সাতকাহন করছি কেন? পরদিন দুপুরেই ফোন! আমি জানতাম, ফোনটা আসবে, দরাদরি করতে চাইছিল, স্রেফ না করে দিলাম।
- আরে দাদা। কোলকাতার নিউজ চ্যানেলগুলাে তাে একটা পনের মিনিটের স্লটের জন্যে এক লক্ষ টাকা নিচ্ছে।
- শুনুন দাদা ! আপনি মানুষের মগজের পুষ্টি বা বদহজম সাপ্লাই দেন, আমার কাজ মানুষের খবরের খিদে মেটানাে। আমার রান্নাঘরের হাঁড়িকড়াই উল্টে পাল্টে সবই দেখালাম আপনাকে, তাই তাে? আপনার হেঁশেল নিয়ে আমি কিন্তু কোনাে কৌতুহল দেখাইনি।
মরালিটির কথা বলচেন? হায় দাদা! আপনাদের বঙ্কিম, শরৎ চাটুয্যেরা এসব মাল মশলা দিয়ে তাঁদের নভেলের ভিত বানিয়েছেন। আপনিও কি ওই একই মাল দিয়ে –
- স্যরি! ঠিক আছে - ব্রেক কষলাম! আপনি চাইছে কাগজের রির্পোটার, এডিটররা প্রফেশনাল এথিক্স মেনে চলবে। মন্দ না! অন্য সবাই মানছে তাে? হাঃ হাঃ হাঃ।।
- ইয়েস স্যার! পাবলিকের সঙ্গে আমার খদ্দের - কনজিউমার , প্রােডিউসার - কাষ্টমার সম্পর্ক। ওরা খায়, আমি বানাই। ভেবে। দেখবেন, আপনিও তাই!
-নয় কেন? পাবলিকের চাহিদা আপনার ম্যাগাজিনের এডিটর বােঝেন। তাঁর রােলটা ঠিক রেস্টুরেন্টের ক্যাশে বসে থাকা মালিকের মতাে! পাবলিক এসে যেমন যেমন অর্ডার দেয়, আপনারা তেমন তেমন বানিয়ে গরমা গরম সার্ভ করেন। নয় কি? হ্যাঃ হ্যাঃ হাঃ!
- ওকি! মুখ গােমড়া হয়ে গেল কেন? তুলনাটা পছন্দ হলাে না? দাদা! হরে দরে সব একই গােত্রেরই, ঠিক আছে অন্য একটা তুলনা না হয়ে খুঁজতে হবে। ভেবে দেখ। আপনিও ভাবুন না হয়! ভাবুন! ভাবা প্র্যাকটিস করুন!

0 Comments

Post Comment