পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ভৈরবী

  • 30 June, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 573 view(s)
  • লিখেছেন : দীপক সাহা
ভট্টপাড়ার ভৈরবপাড়ের চন্দ্রিমা গাছে উঠে পেয়ারা পাড়ে। জলকাদা মাঠে ছেলেদের সঙ্গে খেলে। খড়ি কেটে জ্বালানি তৈরি করে। ভৈররের তীরের লকলকে নরম ঘাস কেটে আনে বুড়ি গাভীর জন্য। ভাগলপুরী এই গাইটি এককালে তার বাবা বড়-বাড়ির যজমানের গৃহপ্রবেশের সময় দানে পেয়েছিল।

 

এর একের পর এক বাছুর পোষানিতে দিলেও লক্ষ্মীকে তার মা কাছ ছাড়া করতে পারেনি মায়ার টানে। দাঁত পড়া গাইটি যেমনি শান্ত, মেয়েটি তার ততটাই দামাল। পাড়ার দাদাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সাইকেল চালায়। স্কুলের বিনোদ স্যার চন্দ্রিমাকে গেছো-চণ্ডী বলে ডাকে। গ্রামের সকলের কাছে চন্দ্রিমা মেয়ে নয়, ছেলেদের দাদা। সকলের মুখে একই রব 'বাপ রে মেয়ে বটে একটা !' এ সব অভিযোগে মায়ের মনে দুঃখ থাকলেও সাহস ভরা আছে প্রাণে, মেয়ে তার এ যুগের লড়াই ঠিক লড়তে পারবে দিনে দিনে। যদিও বাবার চোখের আড়ালে থাকে অনেক লুকোনো কথা আর অনেক ঘটনা। কারণ গীতা পাঠ আর পুজোর জন্য পুরুত মশাইয়ের সারা দিন কাটে এ গাঁ-ও গাঁ।
সকালে প্রাইভেট টিউশনি সেরে বাড়ি ফিরে তেল-গামছা নিয়ে এক ছুটে ভৈরবের  বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কেটে দুরন্তপনা শুরু হয় চন্দ্রির। গাঁয়ের কোলঘেঁষে কুলকুল করে বয়ে চলা ভৈরবের সঙ্গে সখ্য সেই ছোট্ট কালে। চন্দ্রিমার মা যখন নদীর পাড়ে বসে মাথায় সাবান ঘষত, সে তখন মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে দেখত কী অদ্ভুত দক্ষতায় হাঁসগুলো জলে মাথা ডুবিয়ে কী যেন খুঁজে চলেছে। আবার হঠাৎ হঠাৎ একঝাঁক টিয়ার বাবলা গাছের জঙ্গল পেরিয়ে নদীর উপর দিয়ে নীল আকাশ চিরে ট্যাঁ-ট্যাঁ করতে করতে দূরে কোন অজানায় হারিয়ে যাওয়া দেখত অবাক হয়ে। প্রতি বর্ষার উদ্দাম ভৈরবের উথাল-পাথাল ঢেউয়ের ভঙ্গি দেখতে দেখতে ঘোর লাগা এ মেয়ের মেয়েবেলায় পা রাখা। বাদল দিনের ঘন কালো মেঘের ছায়ায় ভৈরবকে আজকাল কেমন যেন জেদি ছেলে মনে হয়। একটা বেপরোয়া ভাব। দুকূল ছাপিয়ে তার উপস্থিতি জানান দেয় বাদলা হাওয়ায়। আবার শীতকালে অভিমানে কেমন যেন চুপসে গুটিয়ে, মনমরা উদাস হয়ে যায়।  

এ বার গ্রামের পোস্টঅফিসে এক নতুন ছেলে  এসেছে পুরুলিয়া থেকে। নাম মৃণাল মণ্ডল।  বয়স বছর বাইশ-তেইশ হবে। এখানেই তার প্রথম পোস্টিং। স্কুলের গায়ে লাগা মাঠটা তাকে খুব টানছে রোজ। বাঘমুণ্ডির ধারে তার গ্রামের কথা খুব মনে পড়াচ্ছে। মাষ্টারমশাই সুখেনবাবুকে জানাতে তিনি উৎসাহ দিয়ে বললেন, " যাও, যাও। অনেক বাচ্চা-কাচ্চার সাথে ভালোই সময় কাটবে।"

সেদিন বিকেলে চন্দ্রিমা মাঠে এসে দেখে একটা অপরিচিত ছেলে ফুটবল পায়ে  সাপের মত হিলহিল করে পেটানো শরীরের মজবুত দু'টি পা দিয়ে সবুজ ঘাসকে পিষে দিয়ে কসরত করতে করতে গোলপোস্টের দিকে চলেছে। দারুণ জোরে গোলপোস্টে এক শট। আর চোখের পলকে সেভ। অবাক-বাক্যহারা মৃণাল পড়ন্ত বিকেলের রোদ মুখে নিয়ে ভালো করে চেয়ে দেখে একটা মেয়ে গোলপোস্টের তিন কাঠির মাঝে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে বল হাতে। রীতিমতো পাকা গোলকিপারের মতো শটে তাকে বল ফিরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে মাঠ পেরিয়ে নিমেষে হারিয়ে গেল, গড়পড়তা আর পাঁচটা মেয়ের থেকে বেশ লম্বা মেয়েটি ।

আজ কেন ঘুম আসে না! মায়ের পাশে শুয়ে এপাশ-ওপাশ। " ঘুমিয়ে পড়। বুঝেছি, চিন্তা করছিস। বাবাকে শুধু বলেছি, তুই মাসির বাড়ি গিয়েছিলি। সন্ধের আগেই ফিরে এসেছিস বলে কিছু বুঝতে পারেনি। পড়াশোনাও তো এখনও  কিছুই শুরুই করিসনি। সারাদিন টোটো। এই ক'মাস আর ঘুরিস নে। সামনেই তোর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। মন দিয়ে পড়" —মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় মা। তবুও ঘুম আসে না আজ।

পড়ন্ত সূর্যের মায়ামাখা রোদে উদ্ভাসিত সহজ চোখের মিহিকালো সরল অবাক মুখটি মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠছে বার বার। ভাদ্রের গরমে খোলা জানালায় সুযোগ পেয়ে জোছনার আলো বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। নিশুতি রাতে ভৈরবের ছলাৎ -ছলাতের সঙ্গে দূর থেকে ভেসে আসে পাগলা বৈরাগীর গান—" ভাদর ও শ্রাবণ মাসে ভ্রমর বসে কাঁচা বাঁশে ...'
গান আর জোছনায়  মাখামাখি হতে হতে  কখন দু-চোখ বুজে আসে তার। এখন ভৈরবের অঙ্গে অন্য খেলা। ভরা বর্ষার তাণ্ডব রূপ আর নেই। আস্তে আস্তে দু'পাড়ে  কাশফুল ফুটে উঠছে। স্কুলে যাবার আগে রোজকার মতো স্নানে নেমে চন্দ্রিমা দেখে, সেই মিহিকালো সহজ সরল মুখের ছেলেটি সাঁতার কাটছে। জলের বুকে আঁকিবুকি চিহ্ন রেখে তরতর করে এগিয়ে চলেছে মাছের মত ওপারের দিকে। হঠাৎ দুষ্টুবুদ্ধি মাথায় কিলবিল করে ওঠে। চন্দ্রিমা জলে নেমে পড়ে। ডুব সাঁতার দিয়ে দ্রুত গিয়ে ছেলেটির পায়ে পাতায় সুড়সুড়ি দেয়। আচমকা পায়ে কিলবিলে স্পর্শ পেয়ে অজানা আতঙ্কে পা সরিয়ে নিয়ে আতঙ্কের উৎস খুঁজতে ভয়ার্ত মুখে এদিক-ওদিক খোঁজে। চিৎকার করে ওঠে প্রায়,
– সাপ!
ভুস করে ভেসে উঠে চন্দ্রিমা। চিৎ সাঁতারে তিমির মতো ফুঁ দিয়ে জল উড়িয়ে চোখমুখে হাসির ঢেউ খেলিয়ে বলে ওঠে,  
— আচ্ছা ভীতু লোক তো আপনি! মানুষের হাতের স্পর্শ বুঝলেন না? ছোট বাচ্চার মতো ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। হা ..হা ..হা ...আপনার সঙ্গে আর মশকরা করার সময় নেই। প্রেয়ারের পরে স্কুলে পৌঁছলে হেডস্যারের ডাণ্ডা পিঠে পড়বেই পড়বে।
এই বলে ভৈরবের জল ছিটিয়ে চন্দ্রিমা  তড়তড়িয়ে ডাঙায় উঠে ভিজে লেপ্টে যাওয়া চুড়িদারে গামছা জড়িয়ে দ্রুত পায়ে চোখের আড়ালে হারিয়ে গেল। নবযৌবনার সুঠাম চলনের দিকে বিস্ময়ে চেয়ে থাকে মৃণাল। মনে মনে সে ভাবে,"কাল বিকেলের সেই মেয়েটি না? ধুস,কী সব উল্টোপাল্টা ভাবছি! সম্বিত ফিরতেই জল থেকে উঠে লম্বা পায়ে হাঁটা লাগালো সে। অফিসে দেরি হয়ে যাবে যে!
সকাল-বিকেল ঘাটে-মাঠে দেখা হওয়া আর টুকরো কথা মৃণালের একটু বেশিই ভালো লাগে। পাগলি মেয়ে সেদিন একগোছা কাশফুল ভৈরব সাঁতরে ওপারে গিয়ে নিয়ে এসে বলল, "নিন ,পুজোর ছুটিতে বাঘমুণ্ডিতে নিয়ে যেতে ভুলবেন না যেন।"

ফেরার পথে মৃণাল এনে দিল আদিবাসী দম্পতির মুখোশ। মুখোশ উপহার পেয়ে গেছো মেয়ের মুখ লাজে রাঙা।  হেসে বলল," মুখোশের চেয়ে মুখই তো ভালো। " গোলপোস্টের তিন কাঠির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা চন্দ্রিমার মুখে তখন ঢলে পড়া রোদ যেন পূর্ণিমার আভা ছড়িয়ে পাটে যাচ্ছে।
দিনের সঙ্গে পট পাল্টায়। চুপিসারে মানভূমের এ ছেলে গাঙ-বাংলা চেনে দস্যি মেয়ের পাল্লায়। ভৈরবের পাড়ের এ গ্রামে মাঘী পূর্ণিমায় রাজরাজেশ্বরী মন্দিরে মায়ের পুজো হয় মহা ধুমধামে জমিদারি আমল থেকে, মেলা থাকে বারো দিন। দূরদূরান্তের লোকও ভিড় করে। মানত রাখে আপনজনের জন্য। সিঁদুর খেলা, বরণ শেষে শোভাযাত্রা করে দেবী চলেছে আজ ভাসানে, পোস্ট অফিসের গা ঘেঁষা পথ দিয়ে। গ্রামের এয়ো নারীদের হাতে হাতে সিঁদুরের কৌটো। দলছুট হয়ে হাতে লুকিয়ে রাখা সিঁদুরের তিলক কপালে কেটে দিয়ে, মুখে বরণের সন্দেশ গুজে দিয়ে, গালে আলতো চিমটি কেটে চন্দ্রিমা খিলখিলিয়ে বলে, "কালো মানিক আমার!" আচমকা এমন 'মধুর আক্রমণে' মৃণাল কিছু বুঝে ওঠার আগেই দস্যি মেয়ে দৌড়ে গিয়ে ভীড়ে মিশে যায়।
এই আপাত-নিরীহ সাদাকালো দৃশ্যটি দূরে থাকা পাড়ার দুই জেঠি-কাকির চোখে ফ্রেমেবন্দি হয়ে রঙিন হয়। যথাসময়ে। এবং যথাস্থানে ।
— চুল ছাড়ো বাবা ..খুব লাগছে ... ছাড়ো. ..ছাড়ো ... লাগছে ...বাবা...।
—যজমানি করে খাই। জানাজানি হলে কেউ আমাকে পুজোয় ডাকবে? বল বল হতচ্ছাড়ি।
খুব মিহি গলায় চন্দ্রিমার মা বলে,
— মেয়ে মানুষের চুল ধরতে নেই। ছেড়ে দেন। মেয়েটাকে আর কত মারবেন।  
মারতে মারতে ক্লান্ত মানুষটি হাপড়টানা বুক চেপে চেলাকাঠ ফেলে বলে," এই আমি খোঁজে বেরোলাম। মেয়ে সামলে রাখ। অন্যথায় ভৈরবের কালো জল ছাড়া মেয়ের হদিস আর কেউ জানবে না। এই বলে গেলাম।" হাঁপাতে হাঁপাতে বছর পঞ্চাশের পুরুতমশাই হাঁটা লাগালেন।
দরকাচরা হয়ে যাওয়া পিঠে, হাত-পায়ে হলুদ মাখাতে মাখাতে মা বলল, "চন্দ্রি রে কুলের মাথার কালি দিস নে মা, রাজরাজেশ্বরী মায়ের থানে অনেক মানত করে তোকে পেয়েছি।'' মেয়েকে যতনে টেনে নিয়ে পাথর রাখে ফাটা অন্তরে।
গোলপোস্টের পিছনের শিমুলগাছটার লাল টুকটুকে ফুলগুলো ফিকে হয়ে ঝরে গিয়েছে কবেই। গরম হাওয়ায় কিছু শাখাচ্যূত তুলো দিক বিদিক উড়ে চলেছে চড়কাবুড়ির খোঁজে।
গ্রামের পুরাতন পোস্ট অফিসের পলেস্তারা খসা, রং চটা দেওয়ালের ঘরটার সামনে টানা বারান্দা আর পরপর তিনটে জানালা। ডান দিকের জানালা ঘেঁষা চেয়ার-টেবিলে মৃণাল বসে। সকাল ১০টা বাজলেই লোকজনের আনাগোনা শুরু হয়। আজকাল মৃণালের অমনোযোগীভাব, চঞ্চলতা পোস্টমাস্টার সুখেন দত্তের চোখ এড়ায় না।
—শরীর, মন ঠিক আছে তো ভাই ?
– হ্যাঁ দাদা, সব ঠিকঠাক।
কাজে ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করে। জানালা দিয়ে চকচকে কঙ্কণ পড়া একটা হাত ভেতরে পাঁচ টাকার নোট বাড়িয়ে বলে, "ডাকটিকিট দিন তো।'' এ কণ্ঠ মৃণালের চেনা। চোখে চোখ পড়তেই মৃণাল বুঝতে পারে, তার ভুল হয়নি।  চোখে চোখ পড়তেই টিকিট নিয়ে চকচকে কঙ্কন নিমেষে হারিয়ে যায় বড়ো ছাতিম গাছগুলোর আড়ালে। কোনও বাক্যালাপের সুযোগ না দিয়েই ।

পরের দিন বিকেলে পোস্টম্যান ডাকবাক্স খালি করতে গিয়ে বলে, "মৃণালভাই তোমার চিঠি।" মৃণাল অবাক হয়। ভাবে, তাকে আবার কে চিঠি লিখলো! অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে খামটা  ছিঁড়ে দেখে ভেতরে হলুদ মাখা বিয়ের চিঠি। খুলতেই একটা গোলাপী কাগজের টুকরো ঝুপ করে পড়ল। তাতে লেখা কয়েকটি মাত্র শব্দ জ্বলজ্বল করে উঠল...

''জাত বড়ো বালাই। পয়লা বৈশাখ গোধূলি লগ্নে আমার বিয়ে, ভালো থাকবেন।"
—ইতি চন্দ্রিমা।

মৃণালের চোখের সামনে অন্ধকার ভিড় করে আসে। এক দলছুট টিয়া  ট্যাঁ ট্যাঁ করে মৃণালের মাথার উপর দিয়ে  উড়ে গেল। টিয়ার এই ডাককে মৃণালের হাহাকার মনে হল।

চৈত্রপূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে বাঁশবাগানের মাথায়। চাঁদও যেন আজ বিষণ্ণ। ভৈরবকে ভালোবেসে নিজের মেয়েবেলা  চিনেছে চন্দ্রিমা। ওই দিনগুলোতে কখনোই তার মা তাকে জলে নামতে দেয়নি। ভৈরবকে আজ যেন কেমন মনমরা পুরুষ মনে হচ্ছে ভরা পূর্ণিমার এই চকমকে আলোতেও। পাড়ে বসে পা ডুবিয়ে কী এক অচেনা আরাম আর নিশ্চিত আশ্রয় খোঁজে চন্দ্রি। মিঠে জলে মিশতে থাকে নোনা জল।

আচমকা পিঠে আলতো নরম হাতের ধাক্কায় ঘোর কেটে যাওয়া চোখ তুলে তাকায় সে। ‘'কী রে? তোরে খুঁজে খুঁজে হয়রান, সন্ধ্যে উতরে গেছে কখন।'' কানের কাছে মুখ এসে ফিসফিসিয়ে বলে সে, '' তুই পালাইয়ে যা চন্দ্রি। এই নে ব্যাগ। বেশি সময় নাই  হাতে। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজন সবাই জানার আগে তুই গাঁ ছাইড়া যা। তোর বাবা চড়ক মেলার পুজোপাঠ থেকে ফিরে তোকে  খোঁজার আগেই তুই যা।'' এক শ্বাসে বলে ফেলে মদিনা, মেহেরচাচার মেয়ে। ফের খেই ধরে মদিনা, ''আব্বা লছিমন নিয়ে অপেক্ষায় আছে কড়ুইতলায়। বড়ো রাস্তায় বাসে তুলে দেবে তোরে। কেউ জানতে পারবে না। কথা দিছে আব্বা। তার ধর্মের বোইনের মেয়ের কোনও ক্ষতি সে হতি দেবে না। ভোরে সীমানগর পৌঁছে যাবি। আর এই খামটা ব্যাগে রাখ। তোর মা তোকে সাবধানে পৌঁছে দিতে বলেছেন। তোর পুলিশের চাকরির ট্রেনিংয়ের  চিঠি। আজকের বিকেলের ডাকে এসেছে। পোস্ট অফিসের নতুন লোক গোপনে তোর মাকে দিয়ে গেছে। এবার একটুখানি হাস দেখি। তোর মা তোরে এগিয়ে যেতে বলেচে। বলেচে, এ দশ মাসের সব যাতনা  সহে নেবে। তোরে ভাবতি হবে না এখানের কথা। তুই যা. ..আর দেরি করিস নে।"
চৈতি ঝড় উঠেছে ভৈরবের শুকনো বুকে। পাগলা বৈরাগী গাইছে, "মিলন হবে কতো দিনে... আমার মনের মানুষের সনে ...।" চৈত্র-পূর্ণিমায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। জ্যোৎস্না মেখে এগিয়ে চলেছে মেহেরচাচার লছিমন গাড়ি।

0 Comments

Post Comment