যদি প্রথম থেকে থাকে তবে নিশ্চয়ই মাংসও খাওয়া হচ্ছিল আর সেই মাংস রান্নার গন্ধও নাকে এসে এসে ঢুকে যাচ্ছিল । নাকে মাংসের গন্ধ ঢুকলে মেজাজ খোলতাই হয় । আমার নিশ্চয়ই মেজাজও খোলতাই হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু এসব হয়েছিল কিনা কিছুই মনে পড়ছে । তবে পরের দিন মদনদার সঙ্গে দেখা হওয়ায় কথা দেখলাম ঠিক মনে আছে , মদনদা বলল, “এলি না কেন?” আমি উত্তর দিলাম না। তখন মদনদা আমাকে চা খাওয়াতে রাইটার্সের এফ ব্লকের চার তলায় ভোলার কাছে নিয়ে যায় । সেখানে গিয়েই আমি শিঙাড়ার গন্ধ পেলাম । ভোলা শিঙাড়া ভাজতে ভাজতে চোখ মারে আর আমাদের দুজনকে শাল পাতায় করে দুটো শিঙাড়া দিল । সেই শিঙাড়া খেয়ে, একটা টুকরিতে শাল পাতাটা ফেলে চা খেয়ে সেই ভাঁড়গুলোও ওই টুকরিতেই ফেলে তারপর আমরা চলে এলাম । যে যার কাজে ভিড়ে গিয়ে আগের দিনের কথা অনেকটাই ভুলে মেরে দিলাম । পুরোটা ভুলে মেরেছিলাম কি ? পুরোটা ভুলে মারা যে কোন কারণেই হোক সম্ভব হয়নি ,কারণটা কখনই তক্ষুনি তক্ষুনি বোঝা যায় না । আমিও বুঝিনি ।
আগের দিন হয়েছিল কি, রাইটার্সে হিলারি ক্লিনটন এসেছিল। ফলত লম্বা চেহারার গম্ভীর ইয়াংকি কম্যান্ডোগণ কালো কালো চশমা পরে সাতদিন ধরে ঘুরে ঘুরে ঠিক করল একটা গেটের কাছেই গাড়িরা আসবে আর সেটা হলো সেন্ট্রাল গেট । তবে সবার গাড়ি নয় মাত্র তিনটে গাড়িকে ওই গেট দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে । শুধু একটা গেট দিয়ে সিএম সিএস আর হিলারি ক্লিনটনের গাড়ি ঢুকবে। অন্য কোন গাড়ি রাইটার্স চত্বরে ঘেঁষবে না । তারা থামবে অনেক দূরে । অনেক দূরে গাড়ি থেকে নেমে হোমরাচোমরা আমির ও ওমরা অথবা মেয়েমদ্দ সব নেটিভের বাচ্চারা গাড়ি , বাস,মিনি থেকে নামবে। সারসার বাঁশ বাঁধা হবে আর সেই বাঁশের ফাঁক দিয়ে দিয়ে দিয়ে দিয়ে সব নেটিভের বাচ্চারা পা ঘষে ঘষে ঢুকবে। যেন তাদের পায়ে পরিয়ে দেওয়া হবে যাকে বলে জঞ্জির। একটা সিনেমা দেখেছিলাম জঞ্জির জঞ্জির সেখানে আমিতাভ জঞ্জির ভেঙেছিল। আমরা হাত তালি দিয়ে দিয়ে উঠেছিলাম গুরু গুরু গুরু। রাইটার্সের এটা সিনেমা ছিল না, ইয়াংকিরা সেদিন সবার পায়ে জঞ্জিরের মতো পরিয়ে দিয়েছিল তাই সার দিয়ে দিয়ে বাঁশের ফাঁক দিয়ে লোকে নেটিভেরা হেঁটেছিল অনেকটা । কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে পায়ে জঞ্জির পরানো আছে। আমি বুঝেছিলাম কি? আমিও বুঝিনি কিন্তু বাঁশের সারির ফাঁক দিয়ে দিয়ে ওভাবে পা ঘষে যেতে আমার ভালো লাগে না কোন কালে। ওই জন্য আমি কোন কালে ঠাকুর দেখতে যাই না। এককথায় বলা যায় কয়েক দিন ধরে দিনে -রাতে কাজ করে করে পোঁতা সেই সব বাঁশেদের আমার মোটে ভালো লাগেনি কিন্তু সেটা মদনদাকে বলিনি। বললে তার কোন মানেও দাঁড়াত না। কী বলতাম আমি? হ্যাঁ, বলতাম কি? বলতে পারতাম ,” ও মদনদা।“
--- বল ।
--- শুনছো ?
--- শুনছি ?
--- বলছি …
--- কি ?
--- বাঁশ আমার ভালো লাগে না । একদম ভালো লাগে না , বাঁশের ফাঁক দিয়ে পা ঘষে ঘষে যেতে একদম ভালো লাগে না ।
এটা বলা যায়? কেউ বলতে পারে? তখন কী করে বুঝব যে সার দিয়ে দিয়ে এর ওর পেছন পেছন যেতে যেতে , প্লেনের দিকে যেতে যেতে ফাঁকতালে ইয়াঙ্কি মুলুকে ঢুকে পড়া নেটিভদের জঞ্জির পরতে হয়। ঘাড় ধরে এটা আমাকে জানানো হলো । এটা জানার পর আমার ঘাড়ে দেখলাম টন টন টন টন করছে যেটা তাকে ব্যথা বলে । আমি ঘাড়ে হাত বোলাতে বোলাতে সব বুঝে যাই ।
আমি বুঝতে পারলাম কেন যেদিন হিলারি ক্লিনটন এসেছিল সেদিন রাইটার্সের ধার ঘেঁসে কোন নেটিভের বাচ্চার গাড়ি ভেড়ানোর আধিকার ছিল না শুধু সিএম মানে মুখ্যমন্ত্রী আর সিএস মানে মুখ্যসচিব ছাড়া। আমি সিএম মানে মুখ্যমন্ত্রী আর সিএস মানে মুখ্যসচিব কোনটাই ছিলাম না তাই আপিসই যাইনি। আর গেলে সেদিন আমার পায়ে নির্ঘাত জঞ্জির মানে শেকল পরানো থাকত। সেই শেকল বেঁধে বেঁধে আমাকেও সব নেটিভের বাচ্চার সঙ্গে, পরের পর সার দিয়ে দিয়ে যেতে হতো আর অনবরত আওয়াজ হতো ঝন ঝন ঝন ঝন। সেটা ইয়াংকি কম্যান্ডোরা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত। তারা সবাই লম্বা লম্বা কালো কোট পরা আর চোখে কালো কালো চশমা। তারা আওয়াজ শুনতেই থাকে ঝন ঝন ঝন ঝন। নেটিভদের পায়ে পরানো শেকলের আওয়াজ। শেকল পরার ব্যথার অবশ্য কোন আওয়াজ হয়না কোন কালে সেদিনও হয়নি ।