পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ক্যাপ্টেন আজ নিশ্চিন্তে ঘুমোবে

  • 31 December, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 858 view(s)
  • লিখেছেন : প্রবুদ্ধ ঘোষ
-এই ক্যাপ্টেন, দু’টো বিপি দাও। -কেমন আছেন? দেখিনি তো অনেকদিন। -অনেকদিন কোথায়? এই সপ্তাহ তিনেক। বাইরে গেছিলাম... জলদি দাও

ক্যাপ্টেন কাউন্টারে যাবে এরপর। রাখাল বা বুড়োকে বলবে বিপি-র দু’টো ৬০ এমএল গ্লাসে ঢালতে। তারপর টেবিলে এসে গ্লাস দু’টো রেখে তিনটে ক’রে আইসকিউব দেবে। এই টেবিলে ছোলাসেদ্ধ আর আদা দিতে হয় না। মানিকতলা বারে কমপ্লিমেন্টারি ছোলা-আদা দেওয়া হয় কাস্টমারদের। সকালে বড় গামলায় ভিজিয়ে রাখা হয়। আদা কুচিয়ে রাখে বুড়ো। নুন জারিয়ে দেয়। গুপ্তদা নেবেনা, ক্যাপ্টেন জানে। ক্যাপ্টেন একটা জলের বোতল দেবে। তিনটে আইসকিউব আর অল্প জল মিশিয়ে পেগ বানিয়ে দেবে ক্যাপ্টেন। লোহার বিজনেস করে গুপ্তদা। কাছেই থাকে। লোহাপট্টিতে। সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফেরার পথে দু’টো বিপির পেগ খাবে। ক্যাপ্টেন জানে কোনদিন তিনটে হবে। সেদিন সেদিন ফোন আসে একটা। প্রথমে রুখু গলায় তারপর গোলাপ-গোলাপ গলায় কথা বলবে গুপ্তদা। সেদিন বেশিক্ষণ বসবে, তাই তিন পেগ। তিন নম্বরটা টিচার্সের সিক্সটি। ক্যাপ্টেন এরপর ফাঁকা একটা চেয়ারে বসবে। ৬টা। এরপর কাস্টমার বাড়বে। খিদে পাচ্ছে। সাড়ে এগারোটার ডিমভাত হজম হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। থাক, আর কিছুক্ষণ পরেই খাবে। সন্ধ্যের দিকে মুড়িমাখা খায় ক্যাপ্টেন। কালেভদ্রে লিট্টি। টুক ক’রে বেরিয়ে, কোনওদিন রাখালকে বা ঝন্টুকে টেবিল দেখতে বলে কারবালা গলির মুখে দাঁড়ানো ভ্যানের সামনে চলে যায়। দু’টো লিট্টি চোখা আর লঙ্কা দিয়ে কুড়ি টাকা। তবে দশ মিনিটের বেশি সময় নষ্ট করার জো নেই। সিসিটিভিতে বাপিদা সব নজর রাখে। চ্যাঁচামেচি করে টেবিলে ওয়েটার না থাকলে। আজ খাবে? পকেটে হাত দিয়ে খচখচ ক’রে আবার বের ক’রে আনল ক্যাপ্টেন। তা’লে? মুড়িমাখা? নাঃ, চিঁড়েভাজা নিতে পারে আজ। এখন টাকা বাঁচাতে হবে।

-ক্যাপ্টেনদা, তোমার টেবিল কোনটা?

-‘কে আসবে? ইমরাজ’ আপাততঃ খাওয়ার চিন্তা সান্টিং মেরে ডানদিকের একটা টেবিল দেখিয়ে দেয় ক্যাপ্টেন, ‘বেশিক্ষণ ফাঁকা রাখা যাবে না, অন্য কাস্টমার...’

-‘আরেঃ, দাও না তুমি। আমায় দু’টো ওল্ড মঙ্ক দাও।’ প্রমিত চেয়ারে ব্যাগ রেখে বাথরুমে যেতে যেতে, ‘ইমরাজ দশ মিনিটে আসছে’

এই বারের নিয়ম পেগের অর্ডারের সাথেই টাকা দিয়ে দেওয়া। কিন্তু, রোজকার খদ্দেরদের থেকে অর্ডারপিছু টাকা নেয় না। একেবারে ওঠার সময় বিল দেয়। প্রমিত, ইমরাজ, প্রোজ্জ্বল, সায়ন্তনদের গ্রুপ একসাথে বসে। কোনও দিন ওদের অন্য কোনও ইয়ারদোস্ত আসে। হাজার-এগারশো বিল হয়। তিন ঘণ্টা প্রায় টেবিল জুড়ে থাকে। ওরা এলে একটা টেবিল সেই সন্ধ্যের মতো দখল হয়ে গেল। তিনটে টেবিল বরাদ্দ প্রত্যেক ওয়েটারের। তার মধ্যে একটা ঘন্টা চারেক দখল হয়ে গেলে... অবিশ্যি সত্তর-আশি টিপস দেয়। পর্তায় পুষিয়ে যায়। পুজোর পরে একটা নিবের দাম নেয় ক্যাপ্টেন। বারে তিনটে সিসিটিভি, গেটের বাইরেও একটা। এক্সট্রা টিপস্‌ দিলে বারের ভেতরে নেয় না। দু’পা এগিয়ে সিসিটিভি আড়াল ক’রে নেয়। সিগারেটও ওখানেই। বারের ভেতরে কেউ দিলে বা চেনা কারোর থেকে চেয়ে নিলে পকেটে রেখে দেয়। তারপর ওখানে গিয়ে ফুঁকে নেয়।

 

#

-তুই যে সিনেমাটা সাজেস্ট করলি সেদিন, দেখলাম। তবে, আমার ওই শর্ট ফিল্মটা বেশি ভাল্লাগলো। টপ অ্যাঙ্গেল থেকে কলকাতাকে দেখাচ্ছে। কলকাতার আন্ডারবেলির শেডস। কী দারুণ কালার প্যালেট...

-যতই ঝাঁ-চকচকে সিন থাকুক, গল্প তো সেই আমাদেরই। আর, এই যে এত নোংরা আমাদের গল্পে এত ছোট ছোট অসুখ আমাদের বেঁচে থাকায়, এগুলোই তো দেখাবে। তা’লে আর দারুণ ক্যামেরার কাজ বা কালার প্যালেটের অ্যাসটাউন্ডিং কাজ কী আলাদা কথা বলবে?

-তা ঠিকই। ফ্লাইওভারের তো দুঃখ থাকে না। ড্রোনদৃশ্যের ক্রাইসিস থাকে না। কখনও দেখেছিস ভিএফএক্স নিজের কাছে ছোট হতে হতে... যত ক্রাইসিস আর ছোট হতে হতে বেঁচে থাকা আমাদের শ্লা।

-আরেকটা পেগ নিই, নাকি?

-কিন্তু, আমার কাছে... আচ্ছা। আমি ক্যাপ্টেনকে টিপস্‌ আর বাইরে মোটকুকে দশ-পনেরো দিয়ে দেব। তুই এই পেগটা দিয়ে দে

ঠিকই বলেছে। যত ঝামেলা আমাদের। পেগ আর বিল আনতে আনতে ক্যাপ্টেনের চোঁয়া ঢেঁকুর ওঠে। টক জল নামে গলা দিয়ে। আজ আর ফেরার আগে নিব মারবে না। ওই টাকাটা বাঁচালে অনেক। কিন্তু সে আর কত? যতই হোক, সব লাগবে। ক্যাপ্টেনের চোঁয়া ঢেঁকুর আর রাগ বাড়তে থাকে। কেন টাকা জমাতে পারল না? কেন দিন দিন ভাড়াবাড়ির গুমোটটা আরও বাড়ছে? ক্যাপ্টেনের এই খারাপ লাগাগুলো কমে গেছিল বছর চারেক আগে। তখন বার উপচে পড়ছিল সন্ধ্যেয়। কামাই হচ্ছিল দিব্যি। মিনাকে চোদ্দ হাজারের ফোন কিনে দিয়েছিল। নিজেরটা যদিও আট মতো পড়েছিল। মিনা খুশি হয়েছিল। অনেকদিন পরে মিনার গালের ছুলি ঢেকে টোল পড়েছিল। সেই মিনাই এমন করল? করল, নাকি করছিলই? ফোনটা হাতে পেয়ে বরকেই ভুলে গেল? মিনার বাবা-মা বহুত হারামি। শুয়োরের বাচ্চা। তিন নম্বর খিস্তি ভাবার আগেই চটকা ভাঙল বরুণদার হাসিতে আর ঠেলায়।

-এই ক্যাপ্টেন, কখন থেকে ডাকছি। কার কথা ভাবছ? কোন মাগের কাছে ফাঁসলে?

বরুণদার চার নম্বর পেগের অর্ডার নিয়ে ইলাস্টিক হাসি দিল ক্যাপ্টেন। চার মানে আজ খবর আছে মালটার। তিন পেগের বেশি ওঠা মানেই বার থেকে বেরিয়ে খান্না। তারপর জোড়াবাগানের অটো ধরে বি.কে পালের মোড়ে নেমে বাঁ দিকের রাস্তা। বছর ছয়েক আগে গান্ডুটার সঙ্গে কোম্পানি বাগানে দেখা হয়ে গেছিল। ক্যাপ্টেন তখন ফিরছে। তখন শঙ্কর দারোয়ান ছিল। শঙ্কর শাটার ফেলেছে সাড়ে দশটায়। হিসেবপত্তর বুঝিয়ে দিয়েছে বাপিদাকে। ঝন্টু, রাখাল আর মতিউর বাইকে বেরিয়ে গেছে। সাড়ে এগারোটা। ‘আরেঃ, বাড়ি যাননি?’ ক্যাপ্টেনর অবাক মুখ থেকে, ‘বার থেকে তো অনেকক্ষণ...’ কথাটা মাঝপথে কেড়ে রুমাল ওড়ানো গলায় বরুণদা বলেছিল, ‘নাইট ইজ স্টিল ইয়ং ম্যান! অ্যান্ড দ্যাট স্প্লেন্ডিড পুসি কেপ্ট মি বিজি’। ট্যাক্সিতে উঠে পড়েছিল। তারপর আরও বার দু’য়েক বি.কে পালের মোড়ে আর বড় রাস্তার ওপরে দেখা হয়েছে। গেলবার ভোটের রেজাল্টের দিন সন্ধ্যেবেলা বরুণদা ক্যাপ্টেনকে ফোন করেছিল। ব্ল্যাকে মাল কিনবে। আর, কলকাতার সব পেঁচো মাতাল জানে, প্রেসিডেন্ট মরলেও বা পৃথিবী রসাতলে গেলেও সোনাগাছিতে ঠিক মাল পাওয়া যাবে। বার বন্ধ মানে টিপসটা মার গেল। ক্যাপ্টেন শেষদুপুরে থ্রিসাম দেখছিল। ব্রেজার্সের বাছাই করা ভিডিও, আগের রাতেই স্পেশ্যাল নেট প্যাক মেরে রেখেছিল। মিনা বোনের বাড়ি বেরিয়ে গেছিল সকালেই। রাতে ফিরবে না। বান্টি বন্ধুর জন্মদিনের নেমন্তন্নে গেছিল। বরুণদার ফোন পেয়ে গড়িমসি করেও উঠে পড়েছিল। আচ্ছা, মিনা কি বোনের বাড়ি যায়নি সেদিন? শ্লা আঙুলের লক দিয়ে রেখেছে নইলে ওয়াটসঅ্যাপ থেকে ঠিক... মিনাকে তখন থেকে সন্দেহ করলেই ভাল হত, ইশ! ক্যাপ্টেন বরুণদার সঙ্গে গেছিল মাসির দোকানে। খাম্বায় ৫০টাকা বেশি। দোকানে বিস্কুট রাখার ডাব্বার তলায় লুকোনো বাক্স থেকে পাঁইট বের ক’রে দিয়েছিল মাসি। বরুণদার সামনে হাত কচলাতেই একশ টাকার পাত্তি। হকের টাকা ক্যাপ্টেনের। ভোটের রেজাল্টের দিন মদ পেত কোথায়? ক্রাইসিসটা তখন থেকেই বাড়ছিল, নইলে একশ টাকার জন্যে ব্রেজার্সের চাম্পি থ্রিসাম ছেড়ে উঠত না। আচ্ছা, মিনা ওইজন্যেই সেদিন অমন মাখন মাখন ব্যবহার করছিল! চ্চু চ্চু, ভুল হয়ে গেল। সোনু কি তখন থেকেই?

-ইশ্‌! কী হয়েচে রে তোর? শরীল ঠিক নেই নাকি? কাউন্টারে বসবি? রাখালকে বলব?

-নাঃ। দ্যাখ না, সাত নম্বরে সেই কখন থেকে দু’টো বিয়ার নিয়ে বসে আছে। দেড় ঘণ্টা হতে চলল। রিপিট করবে কিনা দু’বার জিজ্ঞেস করলাম। বাল। বললো, পরে

-আর দশ মিনিট দ্যাক। বার তো ফাঁকাই। তুই খেইচিস কিচু?

-যাব। অম্বল হয়ে গেছে বোধহয়। পেট ফাঁপছে। কাস্টমারও আছে।

-তুই যা। আমি দেকে দিচ্চি কিচুক্ষণ। খেয়ে আয়। যা-

 

#

ক্যাপ্টেন ভোলার দোকান থেকে মুড়ি বাদাম কিনেছে। তেরো টাকা। এমনিতে পনেরো নেয়। ক্যাপ্টেন রোজের কাস্টমার বলে তেরো। বাদাম দু-চারটে কম দেয়। বাদামের দাম যা বেড়েছে! সব তো বেড়েই চলেছে। ওল্ড মঙ্কের পেগ ১০ টাকা বাড়ল। রয়াল স্ট্যাগ ২০ টাকা। ৮ টাকার অটোভাড়া ১০। বাইরে ওই সাতবাষ্টে চিকেন লিভার এখন ৬০। মাসির ওই পেয়ারা মাখা ২২। ক্যাপ্টেনর দামই শুধু বাড়ছে না। সতেরো বছর পেরিয়ে গেল মানিকতলা বারে। এখনও আট হাজারে আটকে। ছোট বার। টেবিল শেয়ার ক’রে কাস্টমার বসে। টিপস কুড়িয়ে-বাড়িয়ে দিনে ২০০-২২০। কপাল থাকলে কোনও দিন হয়তো পঞ্চাশ বাড়ল। সে আর বছরে ক’দিনই বা? ক্যাপ্টেনর দাম কমছে। মিনার কাছে কমছে। বান্টির কাছে কমছে। রিখিয়ার কাছেও কমছে?

বান্টির গড়নচড়নটা আলাদাই! ক্যাপ্টেনের বেশ গর্ব হয় ছেলের মাসলের দিকে তাকিয়ে। হিরো হিরো চেহারা। ছেলের মাথাভর্তি চুল। ক্যাপ্টেনের কিন্তু চাঁদির মাঝবরাবর বেশ টাক। পাঞ্জায় খুব জোর বান্টির। কাল্টুর সঙ্গে বাওয়ালের সময় ওর হাত চেপে ধরে টেনেছিল। কাল্টুর ঝগড়া করার শখ পোঁদ দিয়ে বেরিয়ে গেছিল। আঁ আঁ চেঁচিয়ে উঠেছিল। বান্টির হিরো হিরো... থু থু ইশ, নজর লেগে যাবে বান্টির। বান্টিটার হিল্লে হয়ে গেলেই নিশ্চিন্তি। হিল্লে? ইমরাজ তো ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছিল। প্রাইভেট অফিসের পিওন। “গ্র্যাজুয়েশনটা করা থাকলে বেশি দিতে পারতাম, বুঝলে? আমাদের ছোট ফার্ম তো, সবে শুরু। ও জয়েন করুক না। কাজ শিখে গেলে কয়েক বছরে কত উপায় হয়ে যাবে...” ক্যাপ্টেন মেনে নিয়েছিল। মাসে ৮-৯ মন্দ কী? এতদিন গাঁড় ফাটিয়ে খেটেও ও পায় ৮। কামাই করলে মাইনে কাটা। বান্টি ৯-১০ পেলে ভালই। সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি কাজ, খাটনিও নাকি বেশি না। ইমরাজ পরের সোমবার যেতে বলেছিল। ক্যাপ্টেন ওদিন ফেরার সময় চিলি চিকেন কিনেছিল। জগার ওই ছিবড়ে চিকেন না। কিম লং থেকে। এই এক দোষ ওর। মিনাও বলে। বলত। একটু ভাল কিছু খবর পেল কি না পেল, কাছা খুলে ছুটল। তবে, চিলি চিকেনে ক্যাপ্টেনের যে কী লোভ তা বাকিরা কী বুঝবে? বাবা খুব প্যাঁদাত। কারখানা থেকে ফিরে মাথা গরম থাকত। বজবজের সেন্ট্রাল জুটমিল। পার্মানেন্ট লাইনের না, তবে চলে যেত। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ক্যাপ্টেন আর ওর দাদা যেত। ওই মাংসে কী যে দিত! এখনও তালুতে গন্ধ লেগে। ওর জন্য দু’পিস কৌটোয় ভরে দিত মেহের কাকু। “বেটা, ঘর যা কে খাস”। লক-আউটের পরে বাবা আর বেশিদিন ঝুঁকি নেয়নি থাকার। মাতাল হলেও তালজ্ঞান ছিল। জমানো যা-কিছু টাকা আর দু-তিনটে গয়না বেচে ঘরবার উঠিয়ে রামচাঁদ ঘোষ লেনে ভাড়াবাড়ি। শহরে আসার বড্ড লোভ ছিল ক্যাপ্টেনর। তার আগে ট্রেনে ক’রে কলকাতা এসেছে। পুজোয় ঘুরতে। কতকিছুতে যে লোভ ক্যাপ্টেনর... নবমী ছিল কি? লেবুতলা, শিয়ালদা অ্যাথলেটিক দেখে রোল খেয়েছিল। এগ-চিকেন রোল। খুব ভাল লেগেছিল। ওদের মহল্লায় তখনও পাওয়া যেত না। পেটাই পরোটা আর ঘুগনি বেচত নেঙ্গুদা। রোল বানাতে বললে হাসত, ‘ফাস ফুড খাস নে, পেটে পোকা হপে।’ তবে, কলকাতার পুজোয় এসে এগ-রোল চিকেন খাওয়ার সোয়াদটা সেই... কলেজ স্কোয়ারে কী ভিড় কী ভিড়, ক্যাপ্টেন হারিয়েই যাচ্ছিল। কার একটা হাতের টানে এগোতে এগোতে হঠাৎ ওর দাদা ‘এই ছোট্টু’ বলে ডেকে টেনে না আনলে... রামচাঁদ ঘোষ লেনে চার ঘর এক উঠোন। বেলা কাকিমা কোনওদিন চিলি চিকেন রাঁধলে কী বাস বেরোত। ক্যাপ্টেন আশা ক’রে থাকত ওকে দেবে। লোভ লাগত না? শুরু শুরুতে দিত কিন্তু। তারপর ওর মায়ের সঙ্গে উনুনের কয়লা নিয়ে হেবি কিচাইন হল। তারপর থেকেই আর দিত না। ক্যাপ্টেন বেলা কাকিমার রান্নাঘরের সামনে পাক খেয়ে আসত। বারবার প্লাস্টিকের বলটা ড্রপ খেয়ে ওদিকেই যেত। তবু দিত না। বেলা কাকিমা নাকি বেবুশ্যে মেয়েছেলে ছিল। মা বলেছিল বাবাকে। বাবা তখন মহেশ বারিক লেনের একটা গেঞ্জিকলে কাজ নিয়েছে। ট্রামে ক’রে যেত। বস্তি ফেডারেশনের মিটিঙে যেত তো, তাই পদাকাকুর সাথে ভাব হয়ে গেছিল। পদাকাকু কন্ডাক্টর, সকালের ট্রামে ভাড়া নিত না। ক্যাপ্টেনর লোভ ছিল ফার্স্ট ক্লাসে চড়ার। একবারই পুজোর আগে ধর্মতলায় জামা কিনতে নিয়ে গেছিল, এমনিতে মানিকতলা হকার্স কর্ণার আর হাতিবাগানের ফুটপাথ থেকেই কিনত, ওই একবারই ধর্মতলায়। ফার্স্ট ক্লাসে উঠেই ড্রাইভারের দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে পড়েছিল ক্যাপ্টেন। ট্রামের ঘরঘর ঘরঘর আওয়াজ আর ড্রাইভারের দরজাটা পেছনদিকে খুলে এসে আবার বন্ধ হচ্ছিল। আহ্‌, অমন একটা ড্রাইভার হয়ে এর’ম একটা ট্রাম চালাতে পারলে... কী যে লোভ ছিল ফার্স্ট ক্লাসে ওঠার। হাসি পেল ক্যাপ্টেনের। অকারণেই একবার চাঁদির মাঝখান থেকে ডানকানের পাশ অবধি হাত বুলিয়ে নিল। চাঁদির চুল ফাঁকা হতে হতে লোভগুলো বদলে গেছে কবে। ধর্মতলায় একটা চিকচিকে আলোর রেস্তোঁরায় চিলি চিকেন আর রুমালি রুটি খেয়েছিল। খুব লোভ হত হররোজ ওখানে গিয়ে খাওয়ার। চিলি চিকেনের টকঝাল সোয়াদ, উফফ্‌! জিভে-তালুতে চ্চকচ্চক শব্দ উঠল। অল্প কাঁচা তেলে মুড়ি-বাদামটা আজ একঘর মেখেছে ভোলা

-কীহ্‌ ক্যাপ্টেন, আজ শুকনো মুড়ি প্যাঁদাচ্ছ যে?

-মুড়িভাজা উদাস লাগছে ক্যাপ্টেনের-

-শ্লা, লোকটা এই লাইনটা লিখেছিল বটে। উফফ! ‘চালভাজা উদাস লাগছে’। এর’ম একটা সেন্টেন্স লিখতে পারলে বাঁধিয়ে রেখে দিতাম পেনটা।

ক্যাপ্টেন হাসির ঢঙে ঠোঁটটা একটু বেঁকাল। কাস্টমারের কথায় ঝাঁট জ্বলে গেলে সেটা যখন কাস্টমারের সামনে উগরোতে পারে না, তখন এর’ম হাসি দেয় ক্যাপ্টেন। শানুদা এটা শিখিয়েছিল ক্যাপ্টেনকে। নেশার ঘোরে সাতানব্বইটা কাস্টমার ভাট বকে। আঁতেল হলে আরও চাপ। দুমদাম নাটুকে শব্দ বলবে, কবিতা আওড়াবে। এমন লাইন ঝাড়বে, তড়াং ক’রে তোর কেটলি গরম হয়ে যাবে। দু’একটা আটভাট লেখকের নাম জেনে যাবি, দেখিস! তবে, এই বারে কথার ত্যানা পাঁচানো কাস্টমার কম। অফিসফেরতা রেগুলার মোদো-মাতাল বেশি আসে। ভাঁট তারাও খুব বকে। আনশান প্রশ্ন করে। গাড়োয়ানি খিল্লি করে। মাথা গরম ক’রে পাল্টা কিছু বলবি না কিন্তু। এই এই দেখ, এর’ম ক’রে একটা ঢপের হাসি দিবি। তারপর বিলের টাকা নিয়ে আর টিপস্‌টা চেয়ে নিয়ে পকেটে ভরবি। দু’একটা ভাল কাস্টমার পাবি। বেশিরভাগই এক কাতারের। ধুস। শানুদা আরও অনেক কিছু শিখিয়েছিল ক্যাপ্টেনকে। কখনও কখনও ক্যাপ্টেনর টেবিল দেখিয়ে দিত কাস্টমারকে। ক্যাপ্টেনকে বলত, “নতুন কাস্টমার, আজ তোর টেবিলে বসা... জয়সলদা, আজ ক্যাপ্টেনকে টেবিল মে বৈঠিয়ে”। বার থেকে বেরোবার সময় কখনও শানুদাই পাঁইট কিনে ভাগ ক’রে নিত। বিয়ে-থা করেনি। সেই মিদনাপুর থেকে গাড়ি ধোয়ার কাজ করতে এসেছিল কলকাতায়। তারপর বাপিদার কাকার সঙ্গে আলাপ। গাড়ি ধুতে দিয়েছিল গ্যারাজে। গাড়ি আর শানুদাকে একসাথে নিয়ে ফিরেছিল। বারের দোতলার ছোট মেসঘরে শানুদার চৌকি ছিল। ক্যাপ্টেন এখনও মিস্‌ করে খুব... সেদিন ওর’ম বাপিদার মুখে মুখে তক্কো না করলে। অতদিনের সিনিয়র লোক তো, ভেবেছিল বাপিদার মুখের ওপরে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলে দেবে। বাইরে টেম্পোতে স্টক এসেছিল, শানুদা নিজে না গিয়ে রাখালকে পাঠিয়েছিল। সেই থেকেই ঝামেলা। কয়েকদিন পরে রাস্তা দিয়ে মিছিল যাচ্ছিল। মোমবাতি। পোস্টার। ‘বদলা চাই’ বলতে বলতে জনা পঞ্চাশ লোক। কাশ্মীরে না কোথায় সেনা মারা গেছিল। বাপিদা বাইরে সিগারেট টানতে টানতে মিছিল দেখছিল। “শান্তির ছেলে মানেই টেররিস্ট। একটা পাল্টা অ্যাটাকে শুয়োরের বাচ্চাদের পুরো জ্বালিয়ে দিক। আমরা চুড়ি পরে নেই।” আরও কীসব বাছা বাছা খিস্তি দিচ্ছিল। শানুদা বলেছিল, “গরমেন্টের দোষ নেই নাকি? সব জানবেন ভোট হাতানোর তাল। বেচারা সেনাগুলো মরল। আর আমরাও তেমন গাণ্ডু”। বাপিদা খুব ক্ষেপে গিয়ে, আসলে আগের দিনের রাগটা তো ছিলই, শানুদাকে বলেছিল দেশদ্রোহীরা এসব বুঝবে না। ব্যাস, শানুদাও দু-চারটে চোখা কথা শুনিয়ে দিল। দু’দিন পরেই শানুদা ফেটে গেল। নাঃ, মালিক সবসময় ঠিক। শানুদা নিজের শেখানো কথা নিজেই যে কী ক’রে ভুলে গেল

-পাঁচ নম্বরের বিলটা দিয়ে দে। ৫৮০।

-দু’টো বাদাম দিলাম। ঢোকালে?

-ওহ্‌ দু’টো, না? একটা লিখেছিলাম। দাঁড়া, পাঁচশ নব্বই, এই নে।

এরা নতুন খদ্দের। দুই দুই চার পেগ নিয়ে দু’ঘণ্টার বেশি বসল। কত দেবে কে জানে? দশ-বিশ ঠেকালেই মটকা গরম হয়ে যাবে।

 

#

-নাঃ, টাকাটা বড্ড কম হয়ে যাচ্ছে, বুঝলে। আর, বান্টি বলছিল ওর বডি, জিম এসবের একটা খর্চ্চা আছে তো। পনেরো না হলে...

-আরে, জয়েন করুক না। শুরুতে আট-নয় মানে এক দেড় বছর পরে বাড়বেই। প্লাস এটা-ওটা টাকাপয়সা তো আছেই

-নাঃ। ওর ইচ্ছে একটা ভাল সিকোরিটির চাকরি যদি পায়। কী বলছিল, বাউন্স না কি। হেব্বি মাইনে। ওই তো শারুখ খানের বাউন্স নাকি কয়েক লাখ কামায় মাসে। সালমানের নাকি আরো বেশি। এত খরচ-খরচা ক’রে মাসল বানাল, একটা রিটান পাবে না?

ক্যাপ্টেন আর ভাঙ্গেনি। তবে, ইমরাজের কথার টোকো ভাবটা টের পেয়েছিল। ক্যাপ্টেনরও মনে হয়েছিল সত্যি তো, আট-নহাজারে পোষায় নাকি? ওটা নিদেন চোদ্দো হলে ক্যাপ্টেন নিজেও বান্টিকে বুঝিয়েসুঝিয়ে রাজি করাত। খরচা হয় মাসল্‌ বানাতে। শুধু গরু খেলে কি মাসল্‌ হয়? কী বুঝবে ওরা? মনে মনে হেসেছিল। বান্টি অমন জম্পেশ একটা ফোন কিনেছে, সেখানেই দু-চারটা ছুটকো-ছাটকা কাজের খবর পায়। আট-নয়ে কী হয়? “আরে, ও টুয়েলভ পাস করল। গ্র্যাজুয়েশনও করেনি... তা’লে নাহয়” প্রমিত টিপ্পনি কেটেছিল, “ওসব বডি-টডি পরে বানাবে। গ্র্যাজুয়েশনটা করতে বল আগে।” ক্যাপ্টেন মাধ্যমিক পেরিয়েছে। দু’বারে। ইলেভেনে কলেজে ভর্তি হয়েছিল। তখন বাল কেন যে নিজের পড়াফরার দিকে নজর দেয়নি। ইশ্‌। খুশমেজাজেই থাকত। বড্ডা, রবি, কানা পঙ্কজরা তখন কলকাতা চেনাচ্ছে ক্যাপ্টেনকে। জোড়াবাগানের ঠেক। সোরাতলার গলি। কোন এরিয়ার মাগের কীর’ম রেট। ভিক্টোরিয়া কলেজের পাশের গলিতে ধুম নেশা। ক্যাপ্টেনকে প্রশ্রয় দিত দাদা। দাদা ফুটবল খেলত। সাদার্ন সমিতিতে। তবে আসল রোজগার ছিল খেপ খেলায়। টাকাও আনত। একবার টিভি এনেছিল। ওনিডা কোম্পানির। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। কিন্তু ঘরটা আলো হয়ে গেছিল। বাড়িঅলা ঘুনুবাবুর ঘরে টিভি ছিল। জননী না জন্মভূমি সিরিয়াল, ভাড়াটে পরিবারের বৌরা সবাই দেখতে যেত। মাও যেত। একদিন কী যে কথা কাটাকাটি হল ঘুনুবাবুর বৌয়ের সাথে। বাবা দু’টো চড় মেরেছিল সেদিন ক্যাপ্টেনকে। শম্ভুর পাড়ায় ওই খেয়ো-বাড়ির ধ্বসা-বারান্দায় মদ খেত ক্যাপ্টেন, কানা পঙ্কজ, শম্ভু, পার্থরা। লোকজন কেউ থাকত না, নিচের তলায় দু’টো আদ্দিকালের ফ্যামিলি। বাড়িটা রাঁড়পাড়ার ভেতরে বলেই ভদ্দরলোকেরা যেত না ওটায়। গাঁজাখোর আর শম্ভু-ক্যাপ্টেনরা যেত নেশা করতে। সেটাই দেখে ফেলেছিল ঘুনুর ছেলে। ঢ্যামনা শালা, ওই তো লেডিস লেডিস চেহারা, তেঁএটে ঢ্যামনা। লাগিয়ে দিয়েছিল ওর মাকে। মা আর সিরিয়াল দেখতে যায় নি। দুপুরে উশখুশ করত। তারপর গজগজ ক’রে বাবাকে গাল দিত- সারা জীবনটা তেতেপুড়ে ফুরিয়ে গেল বলে। দাদা ম্যাচ খেলে টিভিটা পাওয়ার পরে কী খুশি হয়েছিল মা। বেলা কাকিমা, ঘুনুবাবুর বউ ঠোঁট বেঁকিয়েছিল। কাঁচড়াপাড়ায় সেমি-ফাইনাল আর ফাইনালে জিতলে এমএলএ ফ্রিজ দেবে বলেছিল, স্পেশাল প্রাইজ। সেমি-ফাইনালের পরেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফিরল। উরুতে চোট। সাদার্ন সমিতি কয়েকমাসের মধ্যেই কিছু টাকা দিয়ে বসিয়ে দিল। অনেক টাকার অপারেশন। তখন ওর ২২ পেরিয়েছে। ক্যাপ্টেনের হাতখরচ আর সিগারেটের বরাদ্দ কমে গেছিল বলে মনখারাপ হয়েছিল খুব। ইলেভেনের টেস্টের আগে শম্ভু ডেলিভারির কাজটা ধরিয়ে দিয়েছিল। এদিক-ওদিক গেঁড়িয়ে কাঁচা টাকা মন্দ হতো না। তার কতদিন পরে এই বারের চাকরিটা। দাদা এখন নার্সিংহোমে সিক্যোরিটির কাজ করে। চলে গেছে এপাড়া থেকে। বাবার লিভার পচল। মায়ের রক্ত তৈরি হত না। ওই করেই হঠাৎ ফ্যাকাশে মেরে হার্ট অ্যাটাক। তখন এসেছিল দাদা, কিছু টাকা ঠেকিয়ে আবার নিজের খোপে ঢুকে গেছে। টিভিটা খারাপ হয়ে পড়ে ছিল ঘরের কোণে। বেশিদিন চলেওনি, সেকেন্ড হ্যান্ড মাল প্রাইজ বলে গছিয়ে দিয়েছিল। নিমু গোঁসাই লেনের বাড়িটায় ভাড়া যাওয়ার সময় ফেলে এসেছিল ওসব জঞ্জাল।

-নাড়ু, স্যায়নাবাজি করলি কেন? কাস্টমারটা আমার টেবিলের দিকে আসছিল, তুই টানলি কেন?

-চোখে কি ল্যাওড়া গুঁজেছো নাকি ক্যাপ্টেন? আমার টেবিলের দিকে পা বাড়াল আর

-ফালতু মুখখারাপ করিস না নাড়ু। তোর কাস্টমার টানি না কিন্তু আমি। সব দেখেছি

-ধ্যার, যাও তো। তোমার টেবিলে কেউ বসতে চায় না।

আটটা সাঁইত্রিশ। দু’টো টেবিল খালি। ঝণ্টুর সব ক’টা টেবিল ভরে গেছে এখনই। নাড়ুটা দিন দিন লোম হয়ে যাচ্ছে। দু’দিন এসে বেশি সেয়ানা হয়েছে। বুড়োদাকে তেল দেয়, আনশান ইয়ার্কিতে গাঁড় খুলে হাসে। বুড়োদাটাও ঝাঁট, ওতে গলে যায়। নাড়ু বিয়ে-থা করেনি। মন্দারমণি বেড়াতে গিয়ে রাঁড় খুঁজতে চলে গেল। ভালই আছে। ক্যাপ্টেনও গেছিল মন্দারমণি, বারের সবাই গেছিল। মোটকু বাদে। ফূর্তিফার্তা হয়েছিল দু’দিন। তবে নাড়ুর মতো আদেখলামি করেনি কেউ। ক্যাপ্টেনর এদিকে রোজ ফাটছে। দু’টো টেবিল এখনও খালি। যুগিপাড়ার গ্রুপটা এলে ওর আর ঝন্টুর টেবিল মিলিয়ে বসবে। এহ্‌, এখন টাকার বড্ড দরকার। বাড়ির জন্য খোঁজাখুঁজি কম হলো না। পাচ্ছে কই? নাগেরবাজারের ওই ছোট ফ্ল্যাট ২৮ লাখ চাইল। মুরারিপুকুরের ভেতরে পেয়েছিল ২২ লাখে, দরাদরি ক’রে হাজার পঞ্চাশ-ষাট কম হত বোধহয়, কিন্তু ঠিকা জমির ফ্ল্যাট। ব্যাঙ্ক ধার দেবে না। পালবাবুকে বলেছিল, ব্যাঙ্কে আছে পালবাবু। মানিকতলা বারে আসে। সপ্তায় তিনদিন তো বাঁধা। দেখব-দেখব ক’রে কাটিয়ে দিয়েছে। দু’টো ফিক্সড ভেঙে ফেলবে? বৃন্দাবন লেন থেকে বেরোতে না-পারলে সব ঘেঁটে যাবে। মিনার সঙ্গে ঝগড়াও সেই নিয়ে। এত বছর হয়ে গেল এ পাড়ায়, এখন মাগীর মনে হল এ পাড়ায় থাকা যায় না। ওর টিএলসিসি পার্লারের বস নাক কুঁচকেছে। “ও, ওই এলাকাটা রেড লাইট জোন না? থাকো কী ক’রে ওখানে? তুমি হ্যারাসমেন্ট ফেস করোনি?” ন্যাকা চোদন। যেমন বালের বিউটি পার্লার, তেমন তার ছোঁচা বস। তোর কী রে? কতটুকু চিনিস? এ পাড়ায় সবই কি রেন্ডিখানা নাকি? ভদ্দরলোকরা থাকে না? ক’টা ভদ্দরলোককে চিনিস তুই? ধোঁয়া দিতে ওস্তাদ। মিনা বলেছিল, পার্লারের অন্য মেয়েরাও নাকি আড়ালে ওকে নিয়ে কথা বলে, হাসে। সত্যি কিনা কে জানে। নাকি সোনুর কথায় নাচছে? মিনার সাথেই কাজ করে। সাইড বিজনেসও করে কীসব। বাপেরও টাকা আছে। নইলে উত্তরপাড়ার দিকে ফ্ল্যাট কিনল কী ক’রে? মিনার ফেসবুকে ছবি দেখেছে সোনু আর মিনা পাশাপাশি কোন হোটেলে বসে খাচ্ছে। নিজের ফেসবুক থেকে দেখতে পায়নি। ফেক আইডিটা থেকে দেখেছিল। এই তো পরশু। তখনই সিওর হয়েছে। মিনা আর সোনুর লটঘট টের পেল না অ্যাদ্দিন?

 

#

অনেক বছর পরে আবার ক্যাপ্টেনর পেটে গুড়গুড় হয়েছিল। অনেকদিন বাদে ক্যাপ্টেনর চোখ ক্যাপ্টেনর কথা শুনছিল না। বারবার ওর ঠাঁটানো বুকের দিকে, বাদামী ঠোঁটের দিকে চলে যাচ্ছিল। রিখিয়া। মদ কোম্পানির সেলসগার্ল। প্রমোশনাল ম্যানেজার না কী একটা বলত রিখি নিজেকে। কালো কোট। শার্ট আর প্যান্টের ওপর। ক্রিম রঙের শার্ট নয়তো সেক্সি গোলাপী শার্ট পরত। কোটের নিচের দু’টো বোতাম আটকে কাউন্টারের পাশে দাঁড়াত। ওদের কোম্পানির মদে তখন অফার চলছিল। ১৫০টাকা ক’রে দু’টো নিলে একটা ফ্রি। রিখির চোখের খয়েরি মণিতে কী একটা চুম্বক ছিল। বাবলু দাসের মতো কাস্টমার, যে পেগ নিয়ে ছ্যাঁচড়ামো করে, সেও অবধি রাজি হয়ে যেত। একটা কাস্টমার তো বলেই দিয়েছিল সিগনেচারের অফার নেবে। কিন্তু রিখি এসে ওই রকম রানি মুখার্জির গলায় যখন বলল, “স্যার, এটাতেও দু’টো নিলে একটা ফ্রি পেগের অফার। দেখুন না...” কাস্টমার সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার বদলে দিল। রিখির বাদামী ঠোঁটে জিতে যাওয়ার হাসি। কাস্টমারটা এই বারে নতুন। ঠোঁট চেটে রিখির বুক মেপে ক্যাপ্টেনকে বলেছিল, “তব ইয়েই দিজিয়ে... ইয়ে বেটার হ্যায়, না?” কেন যে রিখিকে পাঠাত ওর কোম্পানি। এরকম সাত মদ্দার ভিড় ঠাসা বারে, সেগোমারানি কাস্টমারদের সামনে রাত ন’টা অবধি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে পাঠাত কেন ওর কোম্পানি? ওর বাদামি চোখের দিকে তাকালেই ক্যাপ্টেনর মোদো ভুঁড়ি চুপসে যেত। শুকনো মুড়ি-বাদাম চিবোতে চিবোতে ক্যাপ্টেনর মুখের ভেতরটা রিখির চকচকে বাদামী ঠোঁটে ভিজে যেত। রিখিকে মনে পড়লে ক্যাপ্টেনর গলা শুকিয়ে আসে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ভুলে গিয়ে নরম বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ক্যাপ্টেন একদিন শ্যামবাজার থেকে ফিরবে। রিখিয়ার সঙ্গে দেখা। রিখিয়াই চিনতে পেরে এগিয়ে আসবে। পাঁচমাথার মোড়ের বাঁ-হাতে যে কফির দোকান, ওখানে বসবে দু’জন। ক্যাপ্টেন টাকা দেবে। সেদিন হলে গিয়ে একটা বই দেখবে। কতযুগ পরে বই দেখবে একটা। সিটি দেবে না। “শৈলেন, আমাকে রিখি বোলো। ওটাই শুনতে ভাল লাগে”। রিখি বাগুইয়াটিতে থাকে? এল-২৩৮ ধরে যে। না, না, কেষ্টপুর বোধহয়। বিরাটিতে? রিখিই বলবে বাড়িতে যেতে। ক্যাপ্টেন এখন অনেক হাল্কা। ওলা ডেকে রিখির বাড়িতে যাবে। গোলাপি গোলাপি বাড়ি। ক্যাপ্টেন, ওই চাম্পি পোজটা ট্রাই করবে নাকি? রিখি রাজি হয়ে যাবে। মিনা বলছে, “ঢ্যামনামি কোরো না। একটা ফ্ল্যাট কেনারর মুরোদ নেই। পোজ মারাচ্ছে।” রিখি হাসছে

-এই সাড়ে পাঁচ দেয়। আর, থাকাটা তো এই বাড়ির ছাদেই। দু’টো ঘর। আমরা চারজন। কোনও কোনও দিন কাত্তিকও থেকে যায় এখেনে দেরি হলে।

-আর, খাওয়া? তোমাদের নিজের খরচায়?

-হ্যাঁ, আবার কী! বেষ্পতিবার একটু দেরিতে বার খোলে। আমি বা ঝুনু রেঁধে নিই। রাত্তিরে ওই কানাগলির মুখের দোকানটা থেকে রুটি তরকা।

-বাড়ি যাও কবে? হুগলির কোন গ্রামে না?

-ওই সপ্তায় একদিন। তাও তো ছুটি ছিল না পুজোয়। রোজই বার খোলা ছিল

-সরকার বলেছিল তো, পুজোয় একদিন ছুটি দিতে পারে বারগুলো। তোমাদের বাপি মালিক দেয়নি?

-ধুর্‌। ওসব ছুটি-ছাটা আপনাদের। আমাদের রোজই কাজ

ন’টা চল্লিশ। ক্যাপ্টেন বাইরে বেরিয়েছিল আধখাওয়া সিগারেটটা শেষ করতে। আজ এমন ঝিম ধরছে কেন? চটকা লাগছে থেকে থেকে। দরজার বাইরে বেরোতেই মোটকুর সঙ্গে কাস্টমারের কথা কানে এল। নাম জানেনা, মাসে দু-চারবার আসে। ক্যাপ্টেনকে দেখে মোটকু ইশারা করল, মাঝপথে কথা থামিয়ে দিল। বাল। সাড়ে পাঁচ হাজারের সঙ্গে বাইরের টিপসের হিসেবটা বললি না যে? খালি দুঃখ চুদিয়ে বেশি পয়সা আদায়ের ধান্দা। দশ টাকা কুড়ি টাকা ক’রে কম কামায় মোটকু? গ্রামেও তো কত জমিজমা আছে। বাবা আর দাদা চাষবাসে কম কামায় নাকি? রাখালের দাদার চালনি তৈরির ব্যবসা। রাখালও হিস্যা পায়। নিজেদের বাড়ি। কীসের টেনশন? ক্যাপ্টেনরই শুধু টাকা শুকিয়ে যাচ্ছে। ওর গল্পগুলোর গায়ে কেমন সস্তা হুইস্কির দাগ। উঠছে না কিছুতেই ঘষে ঘষে। আগে বারে টিপসের টাকা ভাগ হতো। দু’বছর চলেছিল এই সিস্টেম। বাবুদার কাকা রোজ আসত বার দেখতে। এই সিস্টেম ক’রে দিয়েছিল। তারপর কবে চুকে গেছে সেসব পাট। চেনা কাস্টমারকে সামনে কম টিপস দিতে বলত, তারপর বার থেকে বেরিয়ে আড়াল ক’রে টিপসের বাকি টাকাটা নিত। ভাগের হিস্যা কম হতো। ক্যাপ্টেনও ওর’ম করেছে অবশ্য। না ক’রে উপায় কী? তখন বান্টি বড় হচ্ছিল। বাইক কেনার জন্য ঝুলোঝুলি। মিনার খাঁই বেড়েই যাচ্ছিল। ক্যাপ্টেন মিনাকে এত ভালবাসে কেন? নিট পেগের মতো। তবু বারবার জল মিশে যায়। নিট পেগে আইস কিউব চায় ক্যাপ্টেন। কিন্তু ক্যাপ্টেনের ভালবাসায়, গল্পে খালি জল মিশে যায়। মিনা বিউটি পার্লারের কোর্স করল। তখন টিএলসিসিতে যায়নি। চেনাশোনাদের বাড়ি গিয়ে ফেসিয়াল, মেকআপ ক’রে দিত। সোনু নিয়ে গেছিল টিএলসিসিতে। মিনাকে নিয়ে একটা ভয় কাজ করত বটে। মিনার বয়েস ৪৫ এখন, দেখে কে বলবে? মনে হয় সাঁইত্রিশ আটত্রিশ। মিনার বাবাও খালি ইন্ধন জোগায়। হাভাতে বুড়ো, ঘাটের সময় হয়ে এল। তবু জামাইকে হ্যাটা করার স্বভাব গেল না। মিনা নাকি বিয়ের এত বছর পরেও সুখে নেই। কীরকম থাকত বিয়ের আগে, ক্যাপ্টেন তো জানে। ওই বস্তির ঘর, ফুটো টালি দিয়ে জল পড়ে। ক্যাপ্টেন যে মিনাকে ভালবাসে, সেটা কেউ বোঝে না। আরও টাকা চাই বলেই ক্যাপ্টেন একটা উপরির চেষ্টা করেছিল। শম্ভু, বাজিদের সঙ্গে দোস্তি ছিলই। ছোটবাড়ির লাগোয়া বাড়িটার দোতলা তিনতলা ওরা দেখত। কেউ ক্যাপ্টেনকে বললে, বাজি বা শম্ভুকে বলে ব্যবস্থা ক’রে দিত ক্যাপ্টেন। নাচ আর শট। দু’হাজার। গ্রুপ গেলে আরও হাজার দেড় হাজার বেশি। ক্যাপ্টেন কমিশন পেত। বরুণদাকে ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছিল। কমিশন প্লাস বরুণদার থেকে একটা নিব। আরও কয়েকবার ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছে অন্য চেনাশোনাদের। তবু যা হোক, কমিশনের অল্প টাকা আসছিল। মিনাকে বলে নি এটা। বলার মতো কিছু নয়ও অবশ্য। বাজির হঠাৎ অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল। দু’টো পায়ের গোড়ালি থেকে বাদ। চিৎপুর রেলইয়ার্ডের পাশে মাল টানতে গেছিল। শম্ভু বলেছে কাউন্সিলরের ছেলের এনজিও-র সাথে বখরা নিয়ে বাওয়াল হয়েছিল। তাই এসব করিয়েছিল পার্টি থেকে। অবশ্য এনজিও থেকেই থোক টাকা দিয়েছিল। হুইলচেয়ারও। দুর্গানগরে চলে গেল বাজি। ক্যাপ্টেনেরও উপরি বন্ধ।

-কোথায় ছিলি? লাস্ট অডারের জন্য ডাকচে।

-যাচ্ছি। তুমি সাতের দু’টো বিল রেডি করো।

-তুই জিগেস কর। রেডি করচি।

-ওল্ড মঙ্ক রিপিট হবে তো? আর, আপনার? ভদকা যেটা খাচ্ছিলেন?

-হ্যাঁ, রিপিট। এই বারে লাস্ট অর্ডার দশটায়?

-লাস্ট পেগ তো জানোই। স্মারনফ নেব।

-হ্যাঁ, দশটায়। এটাই লাস্ট। একশো পাঁচ আপনার। চিপস লাগবে?

 

#

ক্যাপ্টেন। সেই কবে এক বুড়ো কাস্টমার দিল্লাগির মুডে বলেছিল, “শৈলেন? মান্না নাকি? আরেঃ, ক্যাপ্টেন”। দত্ত দেঁতো হেসে মাথা নেড়েছিল, “না না, কোলে।” সে বুড়ো ফুটবল বলতে অজ্ঞান। শৈলেন মান্নার খেলা দেখেছে মাঠে গিয়ে, মোহনবাগান ক্লাবের বড় মেম্বার ছিল নাকি। দত্তকে কেন যে ক্যাপ্টেন ক্যাপ্টেন বলে ডেকেছিল, ওর দাদার চোটের গল্পে আহা-উহু করেছিল খানিক। সেই থেকে ক্যাপ্টেন নাম হয়ে গেল। ফেসবুক খুললেই কত আনশান খিল্লির ছবি দেখে, ক্যাপ্টেন নামটাও সের’মই খিল্লি হয়ে গেছে। কীসেরই বা ক্যাপ্টেন? দম আটকে আসে। বান্টি গতকাল হাজার বস্তিতে ঝামেলায় ফেঁসেছে। ঝাড়পিট ক’রেছে। কনুইয়ের ওপরে আর কানের নিচে ভালই চোট। হাজার বস্তিটা ঝাঁটের এলাকা, সবক’টা গুন্ডা। এমনিতেই বস্তি উচ্ছেদের মামলা চলছে, তার মধ্যে ওখানে কাদের সঙ্গে ঝাড়পিট ক’রে এল। পুলিশ-ফুলিশের ঝামেলা হলে আবার গচ্চা যাবে একগাদা। কিছুতেই কথা শোনে না। কেউই শোনে না। বারেও ক্যাপ্টেন হতে পারল না। নাড়ু রোয়াব নেয়। ঝণ্টু বেশি টিপস কামিয়ে নেয়। গলাটা তেতো তেতো লাগছে। পদাকাকুকে ভুলেই গেছিল। চশমা পরা কাস্টমার ঝন্টুর টেবিলে বসল, ওকে দেখে মনে পড়ল। সেম টু সেম। দাদার পায়ে চোট লাগার পরে কীর’ম বদলে গেল। অত ভালবাসত দাদাকে, কিন্তু ওকেও কেমন দূরে সরিয়ে দিল। ক্যাশ পেত দাদা, কী ভাল খেলত। হঠাৎ এসব মনে পড়ছে কেন? গরম লাগছে বিচ্ছিরি রকম। বিনিবিনে ঘাম

-আজ এর’ম ডাউন কেন ক্যাপ্টেন?

-ভাল্লাগছে না শরীরটা। তোরা গুছিয়ে নে। আমি কাটি।

-বাপিদা ক্ষেপে যাবে কিন্তু। মালের পেটি এল, তুমি ছিলে না তখন। এখন কাটছ। খ্যাঁচাবে মালটা।

-আজ সামলে নে। রাখালও তো বেরিয়ে গেল। শরীরটা

-নিবটা মেরে যাও। চলো ওই বাংলাগলির ভেতরটায় যাই।

নাড়ু জোর করল বলেই। নইলে ক্যাপ্টেন আজ বেরিয়েই যেত। রাখালের ছেলেটা কলেজে ভর্তি হল। কমার্স নিয়েছে। বান্টি সেকেন্ড ডিভিশন। কলেজে পড়লে পারত। পড়লই না। জিম করছে। সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনল। লক্কাবাজি খালি। খোকনের ছেলে গুড্ডু বাইক নিয়ে ডেলিভারির কাজ করে। সকালে পাটোয়ার বাগান স্কুলে দু’টো বাচ্চাকে নিয়ে যায়, নিয়ে আসে। বান্টি এসব করবে না, বাবুর পেস্টিজে লাগে। শুধু বাপের ঘাড়ে বসে। ঘাড়ে সত্যিই যন্ত্রণা করছে খুব। কাঁধ থেকে হাতের পেছন দিকে নামছে ব্যথাটা। দালাল খোঁজ দেবে বলল একটা। শার্টের হাতায় কপালের ঘাম মুছল ক্যাপ্টেন। হাটখোলার ভেতরের দিকের গলিতে একটা বাড়ির দোতলার কোণে দু’টো ঘর, বারান্দা আর একটা বাথরুম ছেড়ে দিচ্ছে। অবশ্য প্লাস্টার-পুট্টি মেরে রঙ-টং ক’রে নিতে হবে। কিন্তু দোতলায় পাওয়া যাচ্ছে। জল-কলের সমস্যা নেই। ফোন করেছিল দালাল। ফাইনাল কথা বলে জানাবে। দরদাম ক’রে কুড়ির মধ্যে হলে নিয়ে নেবে? ফিক্সড ভাঙবে, একটা জয়েন্ট। মিনা রাগ করবে না, বুঝিয়ে বললে বুঝবে। কিছু ধার-ফার হবে, ও ঠিক আছে। বাঁ-হাতে বড্ড যন্ত্রণা তো, ভারী লাগছে খুব। কপালের শিরে এত দপদপ করছে। মিনা বামটা কোথায় রেখেছে? নিমুর ফাস্টফুডের দোকানটা খোলা পাবে না এখন? চিলি চিকেনটা বেশ টস ক’রে দেবে সস আর ক্যাপসিকাম দিয়ে। কত নেবে? একশ পঁচাত্তর, ন্না, ন্না, পঁচাশি? পকেটে হাত ঢোকাল ক্যাপ্টেন। হাত চলছে না। ফোন কাঁপছে। কে? মিন্টু? দালাল? তা’লে রাজি করাতে পারল দরদামে? ওহ্‌ না, মিনা ফুটে উঠেছে স্ক্রিনে। ঝাপসা লাগছে? জিভ জমে গেল নাকি, কত কথা বলার আছে

-হ্যালো শৈলেনদা, ঊনিশ লাখ বলছে। তোমার বাজেটের মধ্যে। হ্যালো, শুনছ? আমার কমিশনটা কিন্তু... শুনছ... হ্যালো... আচ্ছা আশি দিয়ো

-তুমি আসছ কখন? হ্যালো... আজ চিলি চিকেন রাঁধছি। নতুন বাজার থেকে চিকেন নিয়েছি। রাইস কিনে নেবে নিমুর দোকান থেকে। শুনছ? সোনু কী হারামি জানো না। বাড়ি এসো, বলছি। হ্যালো, রাইস জিরা রাইস নিয়ো, বান্টি ভালবাসে

উত্তর দিতে চাইছে ক্যাপ্টেন। খুশি খুশি লাগছে। দারুণ খুশি। হালকা লাগছে শরীর। আশ্চর্য হালকা। ক্যাপ্টেন আজ নিশ্চিন্তে ঘুমোবে। উত্তর দিতে পারছে না। জিভ ভারী। ঘরঘরে শব্দ-মাখা স্বর

 

 

 

0 Comments

Post Comment