ব্যাস, কোয়েল কচর মচর করেধারা বিবরণী শুরু করে দেয়, প্রথমে মেয়ের কথা, তারপর বরের কথা, শেষে নিজের কথা। আর সহ্যকরতে না পেরে মধু ধমকের সুরে বলে, এবার থাম, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
কোয়েলের হাত আর মুখ একসঙ্গে থেমে যায়। দু’জনেই ভাবে ভুল হয়ে গেল। মধু ভাবে, না বললেই হতো, ওতো এমনিতেই না বকলে কাজ করতে পারে না। কোয়েল ভাবে, দূর সকাল সকাল বকুনি খেতে কার ভালো লাগে? তারচেয়ে আগে মৌরিদির বাড়ি গেলেই ভালো হতো। এই চিটপিটেগরমে, এসি ছাড়া কাজ করা যায়! মৌরিদি এসির ঠান্ডায় নরম বিছানায় নিজেকে কোয়েলের হাতেসঁপে দিয়ে ভঁরভঁর করে ঘন্টা দুয়েক নাক ডেকে নেয়। দুধ ফর্সা অবিবাহিত মৌরিদির বর্তুলাকারস্তন উঁকি দেয় তোয়ালে ঠেলে। সময়ে অসময়ে অসাবধান বশত গোপন অঙ্গেও হাত চালিয়ে দেখেছে কোয়েল, মৌরিদির ঘুম তাতেও ভাঙেনি। সপ্তাহে দু’দিন ম্যাসাজ করায় মৌরিদি। সেই দু’দিন কোয়েল বরকে সারা রাত মৌরিদির ফর্সা দেহ সৌষ্ঠব, সুঢৌল নিতম্বের বর্ণনা দেয়। আর কোয়েলের বর কানে শুনতে শুনতে চোখ বুজে আদর করে মাজা রঙের কাঠ শরীর বউকে।
মধুর মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জোরে জোরে আঙুল চালাচ্ছিল কোয়েল। ভেপার দিয়ে, মাথা আঁচড়ে, শুতে বলে মধুকে। এবার ফেসিয়ালের পর্ব। মধু স্কুল শিক্ষিকা। মাসে একবার ডায়মন্ড ফেসিয়াল আর হাত, পিঠ ম্যাসাজ, ব্যাস তাতেই হাজার দুই গলে যায়।
বেসিনে লিকুইড সোপ দিয়ে হাত ধুচ্ছে কোয়েল। মনটা উশখুশ করে কথা বলার জন্য। কিন্তু মধুদির গম্ভীর মুখ দেখে চুপই থাকে। মধুদি চাকরির নামে বাপের বাড়িতে থাকে বিধবা মায়ের সঙ্গে। বর ন’মাসে ছ’মাসে আসে। একবার মধুদির বর আসবে বলে কোয়েল, মধুদিকে মৌরিদির মতো বডি ম্যাসাজ করে দিয়েছিল। কিন্তু মধুদি মৌরিদির মতো ঘুমায়নি। হেসেই খুন। বলে নাকি ওর বডিতে হাত বোলালে সুড়সুড়ি লাগে। কোয়েল বলেছিল, তোমার বর আদর করলে কী করগো?
মধুদি কোয়েলের হাত ছানতা মেরে বলেছিল, বর কখনো হাতই দেয়নি। শয়তানটা বৌদির বুকে মুখ গুঁজে শোয় শুনেই তো অষ্টমঙ্গলায় এসে আর শ্বশুরবাড়ি যাইনি।
কোয়েল সাহস করে জিজ্ঞেস করেছিল, তবে যে বললে আজ আসবে?
মধুদি বলেছিল, ডিভোর্স পেপারে সাইন করাতে। সই দেবার আগে ব্যাটাকে একবার আমার সব খুলে দেখানোর খুব ইচ্ছে। তাই ম্যাসাজ করালাম। ঘেমো গন্ধের বৌদির বুকে মুখ গোঁজা ঠোঁটে একবার যদি না আমার স্তন রাখতে পারি তো আমার নাম মধু কিসে?
কুকারের ভেন্ট টিউব উড়িয়ে যেভাবে ভসভস করে বেরিয়ে পড়ে সেদ্ধডাল, সেভাবে এক নাগাড়ে কোয়েল বলে গেছিল, কীভাবে ব্লাউজের উপর শাড়ি ভাজ করতে হবে, সেন্ট শরীরের কোথায় কোথায় লাগালে গন্ধে মাতোয়ারা হবে পুরুষ, কোমরের কোথায় সায়ার দড়ি বাঁধবে,…
সেবার মধুর ডিভোর্স পেপার সই রদ হয়েছিল বইকী, তার সঙ্গে মধুদি প্রেগনেন্ট হয়েছিল। এখন মেয়ের বয়স চার, বর মাসে মাসে মেয়ের জন্য খরচ পাঠায়। বিয়ের তারিখ, মেয়ের জন্মদিন, পুজোয় বিজয়া করতে আসে মধুদির বর। সেই দিনগুলোয় বডি ম্যাসাজ করায় মধুদি। কোয়েল অবশ্য জোর করেই মধুদির শরীরের বিভিন্ন গোপন অঙ্গের অবাঞ্ছিত লোম রিমুভ করে দেয়। তাতে আখেরে মধু বরকে অন্তত একরাত ধরে রাখতে পারে বলে কোয়েলের কাছে মধুর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। মেয়ে বড়ো হচ্ছে, মাঝে মাঝে বাবার কাছে যেতে চায়। মধু ফোনে ডাকে বরকে। বর এখন মাঝে মাঝেরাতে না এলেও দিন কাটিয়ে যায় মা-মেয়ের সঙ্গে। রাতে না হোক দুপুরে আদর করে মধুর বর, মধুকে। লোমহীন বগল চাটে, পাছায় মুখ গুঁজে কাঁদে। মধু কৃতজ্ঞতা জানায় কোয়েলকে, পরের দিন টিপস দেয়।
সেদিন আর কথা বাড়ায় না কোয়েল। গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে সাইকেলে প্যাডেল ঘোরায়। দুপুরের খাবার টিফিন কেরিয়ারে আনে কোয়েল। লরিয়েল বিউটি স্যালোনে ঢোকারআগে গাছতলায় বসে খেয়ে নেয়। রাস্তার কলে হাত ধুয়ে ওড়নায় হাত মুছে স্যালোনে ঢুকে পপিতাকে ডেকে নেয়। পপিতা ওড়নার তলা থেকে প্যাকেটটা বার করে দিয়ে বলে, বলেছি না রাতে আসতে। কোয়েলপ্যাকেট নিয়ে ওড়নার তলায় লুকিয়ে বলে, কী করব ক্রিম শেষ গেছে যে।
এই চত্বরের বেস্টপার্লার এটা। মাঝে একবার ভিডিও পাচার হয় বলে বদনাম রটেছিল। তাই রীতা বৌদি, মৌরিদির মতো ভদ্রমেয়েরা পার্লার এভয়েড করে। এই সুযোগটাই নেয় কোয়েলরা। কোয়েলের কাস্টমাররা কেউ সাপ্তাহিক কেউ মাসিক কেউ ফ্লোটিং। আর পার্লারে কাজ করা পপিতা লরিয়াল, গার্নিয়ার, সুগারের ক্রিম, মাস্ক, পার্লার থেকে চুরি করে কম দামে সাপ্লাই দেয় কোয়েলকে। নাহলে কোয়েল আজ কোয়েল হতে পারতো না।
মৌরিদিদের দারোয়ান গেট খুলে দিতেই কোয়েল সাইকেলটা বাগানে স্ট্যান্ড করে সোজা উপরে উঠে যায়। দুপুরে এলে বেল বাজায় না। বারণ আছে। মাসিমার ঘুমের ব্যাঘাতঘটে। মৌরিদির বাবা বিশাল ব্যবসায়ী। দরজায় টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকতেই দেখল, মৌরিদি এক মনে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে দেখতে ব্রায়ের ক্লিপ খোলার চেষ্টা করছে। রেজিনা টাইপ ব্রা। পরনে স্লিপ লেস পাতলা নাইটি। মৌরিদি বোধহয় টের পায়নি কোয়েল এসেছে। একটা হালকা মিউজিক বাজছে সাউন্ড সিস্টেমে। অনেকখনের চেষ্টাতেও পেছনে হাত ঘুরিয়ে স্ট্র্যাপ খোলার প্রচেষ্টা সফল হল না। কোয়েল এগিয়ে গিয়ে বলল, খুলে দেব?
মোরিদি, পিছন ফিরে দাঁড়াল। কোয়েল নাইটির তলা দিয়ে হাত নিয়ে গেল নরম তুলতুলে পিঠে। মৌরিদি ব্রা খুলে ছুড়ে দিল বেডে। মৌরিদির শরীরে তখন শুধু প্যান্টি। নরম খাটে ঝাঁপিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। ডুবে গেল বিছানায়। হুকুমের ভঙ্গীতে বলল, পিঠটা চুলকে দাও তো কোয়েল।
কোয়েল মৌরিদির পিঠে প্রথমে আলতো করে হাত বোলাল। মৌরিদি চেঁচিয়ে বলল, চুলকাতে বললাম না?
কোয়েলের অচেনা লাগল মৌরিদিকে। তবু নখ দিয়ে ঘষে ঘষে চুলকায়। চুলকিয়ে যে আরাম সেটা যে মৌরিদি পাচ্ছে তা তার মুখ থেকে বেরোনো শব্দতেই বোঝা যাচ্ছিল। একসময় সম্বিত ফেরে মৌরিদির। কোয়েল পাশের ঘর থেকে তোয়ালে এনে মৌরিদির বুক ঢেকে দেয়। মৌরিদির নিজের বিদেশী দামী ব্যান্ডের ক্রিম দিয়ে শুরু করে ম্যাসাজ। মৌরিদি নাক ডাকতে শুরু করে। ক্রিম ভর্তি হাত নিজের বুকে জঙ্ঘার খাঁজে, বগলে বুলিয়ে নেয় কোয়েল। আজ বরের কাছে যাবার আগে চান করবে না কিছুতেই। এই গন্ধ ধরে রাখতে হবে রাত পর্যন্ত। মৌরিদির ঘুম ভাঙল যখনকোয়েল বাম পায়ের ম্যাসাজ শেষ করে ডান পা ধরল। উঠে বসল মৌরিদি। পা ফাঁক করে ছড়িয়ে বারবার ম্যাসাজ করতে বলল। ক’দিন প্রচুর কাজ করেছে কোয়েল। কোয়েলের কাস্টমাররা বেশী ম্যাসাজকরায়। তাই কোমরে, কব্জিতে, আঙুলে বেশ ব্যথা কোয়েলের। তবু মৌরিদির মতো কাস্টমারদের চটালে চলে না। কথা শুরু করে কোয়েল। শরীরে যেন শক্তি ফিরে আসে। খুব চমৎকার করে গোপন অঙ্গের ঠিক চার আঙুল নিচ থেকে থাইতে নিজের হাতের থাবা বসিয়ে আঙুল টেনে নেয় বারে বারে।
—তুমি বিয়ে করবে না দিদি?
—করব তো। আমার বর ফিলাডেলফিয়া থেকে ফিরলেই করব।
—বিয়ের পর তুমি ফিলাডেলফিয়া চলে যাবে?
মৌরিদি কথা ঘোরায়। জিজ্ঞেস করে, তুই সাজিস না কেন রে, কোয়েল?
কোয়েল বলে, মেক আপের কত দাম। রোজ সাজলে সংসার চালাবো কি করে?
—কেন, তোর বর কিছু করে না?
—ও তো পার্টির হোল টাইমার। এই যে ভোট আসছে দিনরাত পার্টি অফিসে পড়ে আছে…
ম্যাসাজের কায়দা কানুন ভালই জানে কোয়েল। কোয়েলের দাদা ফিজিওথেরাপিস্ট। দাদা বয়সে কোয়েলের থেকে বেশ বড়ো। ছোটোবেলা থেকেই দাদার চেম্বারে পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে কোয়েল দেখতো দাদার পেশেন্টদের দাদা কীভাবে ম্যাসাজ করে। মোটা মোটা ফর্সা ফর্সা মহিলারা হাঁটু ব্যথা নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চেম্বারে ঢুকতো। ম্যাসাজ করিয়ে বেরোনোর সময় বলতো, আহঃ খুব আরাম হলো।
তখন তো এখনকারমতো এতো যন্ত্রপাতি বেরোয় নি। দাদার কাছেই ম্যাসাজটা শিখেছিল কোয়েল। আর ফেসিয়াল, ভ্রূপ্লাগ স্টেট সেলফ হেল্প গ্রুপের উদ্যোগে মিউনিসিপ্যালিটিতে বিউটি পার্লারের কোর্স করেছিল। ম্যাসাজের গুণে আবার কখন ঘুমিয়ে পড়ে মৌরিদি, কোয়েল খেয়াল করে না। বকেই চলে। একসময় ম্যাসাজ শেষ হলে শুরু করে ফেসিয়াল, তারপর চুলে স্পা। নিজের মাশলগুলো ধরে আসে, ক্লান্ত লাগে। আরাম পেয়ে প্রতিদিনের মতোই ওর রেটের থেকে কিছু বেশি দেয় মৌরিদি। টাকা নিয়ে বেরিয়ে আসে কোয়েল। পথেই দেখা হয় পপিতার সঙ্গে। মালের জন্য টাকা চায়। কোয়েল রুমালে জড়ানো টাকা এগিয়ে দেয়। পপিতা টাকা গুণে আরো পাঁচশো টাকা এক্সট্রা চায়। বলে, দাম বেড়েছে মালের। তাছাড়া রিস্কও বেড়েছে। এখন পার্লারে আরো সিসি ক্যামেরা বসেছে। মালিক বাড়ি থেকে নজর রাখে।
কোয়েল বলে, এবার সম্ভব নয়, মেয়ের স্কুলে ভর্তি, ব্যাগ, বই, ড্রেসকেনার খরচ আছে।
পপিতা গলা চড়ায়। কোয়েল বলে, মাল ফিরিয়ে নে, অন্য মেয়ের কাছ থেকে নিয়ে নেব।
কোয়েল এই লাইনে এখন অনেক মেয়েকেই চিনে নিয়েছে। ফিরিয়ে দেয় প্যাকেট। পপিতা আরো চেঁচিয়ে গাল দেয়। প্যাকেট নিয়ে চলে যায় সেদিনের মতো। মনটা খিচড়ে যায় কোয়েলের। সন্ধেবেলা মেয়েকে পড়তে বসিয়ে বিনা কারণে পিটিয়ে দেয়। তবে রাতে মৌরিদির শরীরের গল্পের সঙ্গে মৌরিদির ক্রিমের গন্ধে মশগুল করে দেয় বরকে। বরও প্রতিদিনের মতো কোয়েলের মনের সব গ্লানি, শরীরের সব ব্যথা শুষে নেয়।
তবু কিছু একটা ক’দিন ধরেই খচখচ করছিল কোয়েলের মনে। দু’তিনটে ফিক্সডকাস্টমার ফোন করা মাত্র জানিয়ে দেয়, করবে না। ব্যাপারটা প্রথম প্রথম খুব একটা পাত্তা দেয়নি কোয়েল। পপিতা যে কাস্টমারগুলোর খোঁজ দিয়েছিল, তারা তো সরবেই জানতো কোয়েল। কিন্তু সেদিন শ্রদ্ধাদিকে ফেসিয়াল করতে করতে প্রতিদিনের মতো বকবক করে চলল কোয়েল। একথা সেকথার পর ভোট, তার জন্য জিনিসের দাম বাড়ার প্রসঙ্গ উঠল। কথায় কথায় বকতে বকতে বলে ফেলল ক্রিমের দাম বাড়া প্রসঙ্গে পপিতার সঙ্গে ঝগড়ার কথা।পপিতার সঙ্গে ক্রিমের কী সম্পর্ক সেটা প্রথমে বলতে না চাইলেও শ্রদ্ধাদি প্রশ্ন করে করে জেনে নিল সব। শ্রদ্ধাদিকে ম্যাসাজ করার পর বাড়ি ফিরেই রাত্রিদির ফোন পেল কোয়েল। রাত্রিদি বলল, তুই যা করলি ঠিক করলি না কোয়েল। আমরা অনেকগুলো করে টাকা তোকে দিতাম। পার্লারের সমান না হলেও খুব কমও না।
কোয়েল ব্যাপারটা ধাতস্থ হবার আগেই ফোন কেটে দিল রাত্রি। শ্রদ্ধাদিকে কেন যে অতশত কথা বলেছিল ভেবেই জিভ কাটলো নিজেই। এইসময় ফোন এল স্বাতীদির। পরিষ্কার বলল, কোয়েল তুই পার্লার থেকে ক্রিম নিস জানলে তোর কাছে আমরা কেউই কাজ করাতাম না। বলেই ফোনটা কেটে দিল স্বাতীদি।
কোয়েল নিজের গালে নিজে একটা চড় মারলো। স্বাতীদি, রাত্রিদি, শ্রদ্ধাদি ওরা বন্ধু তো! ইস, কী ভুল যে করেছে, বকবক করতে করতে।
ক্রমে কাজ কমে অর্ধেক হল। শুধু যারা নিজেরা ক্রিম দিত তারা কাজ করাচ্ছিল কোয়েলকে দিয়ে। নতুন কাস্টমারের খোঁজে একে ওকে ফোন করতে লাগল। একদিন মধুদির কাছে গিয়ে শুনল মধুদি অন্য মেয়েকে দিয়ে সে মাসে পার্ল ফেসিয়াল করে নিয়েছে। এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে মধুদিকে কোয়েল সামনের মাসে কাজ করানোর জন্য অনুরোধ করল। মধুদি হেসে বলল, তোর বদনাম হয়েছে মার্কেটে। সেটা আগে ঘোঁচা।
কোয়েল মধুদিকে বলল, আমি তো টাকা দিয়েই কিনতাম মাল। সামান্য কিছু কম হতো বলে পার্লারের মেয়েদের কাছে নিতাম কিন্তু ক্রিমটা আসল ছিল, দিদি। তাছাড়া শুধু আমি তো নই, আমাদের মতো যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে করে সবাইই নেয়।
মধু বিরক্ত হয়ে বলল, তুই জানিস আমরা যারা তোর কাছে ফেসিয়াল করাতাম তারা কেন পার্লারে যেতাম না?
কোয়েল বলল, পার্লারগুলোয় সিডি বানায় তো…
মধুদি কোয়েলকে থামিয়ে বলল, আজকাল পার্লারগুলোয় রাত বারলেই হিজরেদের ভিড় পড়ে যায়। ঘেন্না লাগে ওদের ব্যবহারের চিরুণি, এপ্রণ, ব্রাশ ব্যবহার করতে। আর তুই কিনা তাদের থেকেই ক্রিম এনে… বলতে পারতিস আরো কিছু বেশি দিতাম তোকে…
আর কোনো কথা বলতে পারলো না কোয়েল। সাইকেল চালিয়ে গঙ্গার ধারের রাস্তাধরে ঊর্মি কাকিমার কাছে যেতে যেতে ভাবছিল, সেও রাতের দিকে একদিন পার্লারে মাল নিতে গিয়ে দেখেছে ঘোমটা দিয়ে দুটো লম্বা চওড়া শক্তপোক্ত চেহারার মহিলা পার্লার থেকে বেরিয়ে টোটোয় উঠল। তাদের একজনের গলার স্বর ছেলেদের মতো। কিন্তু তাতে কী? ওদেরও তো পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকতে ইচ্ছা হয়। তাছাড়া ওরাও তো এখন ব্যাঙ্ক, ইন্সুরেন্স অফিসে কাজ পাচ্ছে! ওদেরও তো ফিটফাট হয়েই অফিসে যেতে হয় নাকি! পরক্ষণেই ভাবলো, কোনো হিজরে তাকে যদি ওয়াক্সিং আর ফেসিয়াল করতে ডাকে সে কী রাজি হবে? অনেক ভেবেও কুলকিনারা করতে পারলোনা সে কী করবে।
পরদিন মৌরিদির কাছে গিয়ে শুনলো দিদির বিয়ে সামনের মাসে। বিয়ের পর ফিলাডেলফিয়া চলে যাবে বরের সঙ্গে। সেদিন রাতে আর মৌরিদির শরীরের বর্ণনা করল না বরকে। বরং বরের সঙ্গে আলোচনা করল ওদের নিয়ে। বরের কাছে ওদের সম্বন্ধে আরো অনেক কিছু জানতে পারল। জানতে পারলো কারা ট্রান্সজেন্ডার, কারা নপুংসক, কাদের বলা হয় বৃহন্নলা, কেই বা গে… এখন নাকি অনেকেই আবার রূপান্তরকামী…
****
পার্লারটা পাশের শহরে। মাস গেলে ভাল স্যালারি। রাতে নাইট করলে উপরি। রোজ ভোরবেলা বাসে জানলার ধারে বসে যেতে বেশ ভালো লাগে কোয়েলের। শরীরে আঁটো পার্লারের ইউনিফর্ম। চুলটা লেয়ার করে নিয়েছে গত সপ্তাহে। বাসের কাঁচে নিজের মুখে চড়া মেক আপ, ঠোঁটে লিপস্টিক, চোখে লাইনার দেখে নিজেই চিনতে পারে না নিজের মুখকে।
বাসটা সিগনালে দাঁড়াতেই ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে আসছিল জিন্স আর টপ পরা দীর্ঘদেহী মহিলাটি। কাছে আসতেই দেখল যে, ওর ভ্রূ প্লাগ করা, হাত গাল গলা ওয়াক্সিং করা। টাকা নিয়ে তালি বাজিয়ে অন্য গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। বাইরে তখন, ঝকঝকে আকাশে শরতের সাদা মেঘের ভেলা। একটু পরেই বাসটা প্রবেশ করল সাজানো গোছানো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহরে, যেখানে সবাই সেজে গুজে ঘোরাফেরা করছে। চারিদিকে পুজো পুজো গন্ধ। এই সুন্দর মানুষগুলোকে যারা শরীরের অবাঞ্ছিত লোম তুলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দিচ্ছে তাদের দলে নিজে সামিল হতে পেরে সে বেশ গর্বিত হচ্ছিল মনে মনে।
নির্দিষ্ট স্টপেজে নেমে সে ঢুকে পড়লো পার্লারে, রণিতার চোখের ইশারায় এগিয়ে গেল শেষ চেয়ারটার দিকে, সেখানে এক কাস্টমার হেয়ার স্পা করবে বলে চুল এলো করে বসে আছে। কোয়েল হাতে গ্লাভস পরে চিরুণী তুলে নিয়ে বকবক শুরু করল,
—কত দামের স্পা করবে…
একসময় স্পা শেষ হয়। ততক্ষণে কথায় কথায় কোয়েলজেনে গেছে কাস্টমারটি তৃতীয় প্রকৃতির মানুষ। পার্লারের সেলস কাউন্টারের কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে, আকাশে ঝকঝকে দিনের আলো। ড্রায়ার রেখে কাস্টমারের নরম রেশমী গোল্ডেন চুলে ব্রাশ বুলিয়ে আনন্দে বুকটা ভরে ওঠে কোয়েলের।