সে দৃশ্য দেখতে পেলে গ্রামে হয়ত গোস্তর খানা হয়ে যেত। লোকে বলে কুদ্দুছের গিঁটে গিঁটে যতটা মাংস তার ঢের বেশি শক্তি। বিলপাড়ার উস্তুমকে যখন খুন করেছিল কুদ্দুছ তখন নাকি পাশনির এক কোপেই তার গদ্দনটা আলাদা করে দিয়েছিল! মুরুব্বি লোকেরা বলে, কুফরি কাজ করার সময় কুদ্দুছের শরীরে শয়তান ইবলিশ ভর করেন! তখন শয়তান তার সব শক্তি কুদ্দুছের শরীরের ঢুকিয়ে দিয়ে মন্দ কাজ করান। দয়া আর মায়া, দুটো জিনিসই কুদ্দুছের জীবনে নেই। তার বদলে আছে কায়া আর ছায়া। যারা কুদ্দুছের বদনাম করে কথাটা তারাই বলে। একখানা মস্ত দেহ আর সে দেহের আরও মস্ত বড় একখানা ছায়া। আসলে এসবের একখানা গভীর ও গোপন অর্থ আছে। কায়া-ছায়া বলতে জান কবজের ফেরেশতা আজরাইলকে বোঝায়। কুদ্দুছ তার এই দুই কুড়ি এক পাঁচ বয়সে ক-খানা যে মানুষ খুন করেছে তার ইয়াত্তা নেই। মাঝের দশ বছর তো ভাড়াটে খুনি ছিল! তখন খুনের দেশ-কাল ছিল না। কখনও এপারের গঞ্জে তো কখনও বর্ডার পেরিয়ে ওপারের কোনও গাঁ-গেরামে। সে হিসেব শুধু দু দেশের মাঝের নদীখানা জানে। সে পদ্মা নদীতে জল কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে কুদ্দুছের দাপটও কমে আসে। তানাহলে তার নাম হয়ত মুম্বাইয়ের কোনও বড়সড় আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের সঙ্গে একসাথে উচ্চারিত হত। একবার তো সিনেমার হিরোর মতো বর্ডাররক্ষীদের সঙ্গে গোলাগুলি চালিয়েছিল কুদ্দুছ। পদ্মার পাড়ে মাস্কেট হাতে শুইয়ে শুইয়ে গুলি চালিয়েছিল। তার সে বীরত্বের কথা হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে গেছিল। সেই থেকে বর্ডাররক্ষীদের সাহেবসুবোরা তাকে সমীহ করতেন। গোরু পাচার নয়, কুদ্দুছ হল লাশ পাচারের মাস্টারমাইন্ড। ওপারের লাশকে এপারে, এপারের লাশকে ওপারে গায়েব করে দেওয়ার ওস্তাদ। এ হেন কুদ্দুছের গুরু ছিল হযরত। দুনিয়া যাকে ‘হযু মস্তান’ নামে চেনে। এ দুনিয়া দেশ-মহাদেশের সমান বড় না হলেও পদ্মা নদীখানার সমান বড়। দেবাইপুর বিএসএফ ব্রিজের কাছে যেখানে পদ্মার মরা অংশ মরা খোলের মতো পড়ে আছে, সেখান থেকে হযু মস্তানের তল্লাট শুরু। তারপর নদীখানা যেদিকে যেদিকে গড়ে গেছে সেদিকে সেদিকে হযু মস্তানের রাজত্ব। গুরুর দেখাদেখি লোকে কুদ্দুছকেও কখনও কখনও ‘কুদু মস্তান’ নামে ডাকে। কুদ্দুছ যত খুন করেছে তার প্রায় সবগুলোই হযু মস্তানের ইশারায়। রাত হলেই বর্ডারের দুই পার ‘হযু’ আর ‘কুদু’ তে কাঁপে।
এ হেন কুদ্দুছকে মাথায় সবসময় ফেজ টুপি পরে থাকতে দেখে সবাই তো অবাক! কেউ ঠেস মেরে বলছে, ওই টুপিখানা দিয়ে পাপগুলো ঢেকে রাখছে। আবার কেউ কেউ বলছে, ওর ওপর আল্লাহর হেদায়েত হয়েছে। শুধু কি মাথায় নামাজের টুপি পরে থাকছে কুদ্দুছ, তা নয়, যাকে দেখছে তাকে ‘সালাম’ দিচ্ছে! কুদ্দুছ পরের হিত চাইছে! কথাটা যে শুনছে সেইই আকাশ থেকে পড়ছে! গত রাতে তো আরও অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়েছে কুদ্দুছ। বকমারি চরের গোরুর রাখাল আব্বাস শেখের হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়ে এসেছে! যে আব্বাস কুদ্দুছের ছায়া দেখলেই ভয়ে সাত আশমান উপরে পালিয়ে যেতে চাইত সেই গোব্যাচারি হালাভোলা আব্বাসের হাত-পা ধরেছে কুদ্দুছ! এ যে দুনিয়ার তাজা-মরা কোনও মানুষই বিশ্বাস করবে না! অথচ সেটাই ঘটেছে। ঘটনা শুধু এতেই থেমে নেই। মসজিদে ঢুকছে আর একখানা কোরআনশরীফকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে! এমন লম্বা সিজদাহতে গিয়ে পড়ছে খাড়া হয়ে আর উঠতেই চাইছে না! যেন ইহকালের সমস্ত পাপগুলো যতক্ষণ সিজদাহ দিয়ে মাটিতে নেমে না যায় ততক্ষণ দুনিয়ার দিকে তাকাবে না! অথচ একসময় তাকে নামাজ পড়ার কথা বললে কুদ্দুছ বলত, ‘সময় নেই’। কখনও কখনও বলত, ‘দুনিয়ার কেউ বেহেস্তে যাবে না। সবাই পাপ কাজে ডুবে আছে। বেহেস্তখানা ফাঁকাই পড়ে থাকবে। শেষ বয়সে একটুখানি নামাজ-রোজা করে নেব। ওতেই যা নেকি পাব, তা দিয়ে ফুড়ুৎ করে বেহেস্তে ঢুকে যাব।‘ আবার এমন কথাও বলত কুদ্দুছ, ‘এত নামাজ-রোজা করে বেহেস্তে গিয়ে সেই লোকের দাসত্বগিরিই করতে হবে। তার চেয়ে বরং দুনিয়ায় যেভাবে মস্তানগিরি করছি পরকালে গিয়েও সেভাবে মস্তানগিরি করব। সে দোজখই হোক আর জাহান্নামই হোক।‘ সেই কুদ্দুছ এখন ‘দোজখের’ কথা শুনলেই থত্থর করে কাঁপছে! যে হাতে পিস্তুল আর বোম থাকত সে হাতে এখন থাকছে তসবিহ!
কুদ্দুছকে কে এমন জাদু করল! শুধু তার গ্রাম দেবাইপুর নয়, আশপাশের চরগোপালপুর, হিতানপুর, হরিরামপুর, কাকমারি চর, চিতলডাঙ্গা সব গাঁয়ের লোকের মুখে একই কথা। কুদ্দুছের এমন হঠাৎ বদলে যাওয়াতে তারা অবাক হলেও পক্ষান্তরে তাদের খুশির শেষ নেই। তারা এখন নাকে সর্ষে তেল দিয়ে ঘুমোলেও আর দুশ্চিন্তার কিছু নেই। একজন দাফন-কাফনে চলে গেছে আর একজন মাথায় নামাজের টুপি পরে নিয়েছে। এলাকার লোকে কতদিন আয়েশ করে ঘুম তো দূরের কথা পেটে জুত করে খেতে পারেনি ওই ‘হযু’ আর ‘কুদু’ মস্তানের ভয়ে। ওদের অত্যাচারে বাড়িতে হাঁস-মুরগি পোষা যেত না। হাঁস-মুরগিগুলো একটু দোপ হয়ে উঠলেই ওদের লোকেরা ‘হযু মস্তান’ খাবে বলে ধরে নিয়ে যেত। পোষা গোরুটা কখন যে চোরাবর্ডার পেরিয়ে ওপারে চলে যাবে তা কেউ বলতে পারত না। বাড়ির দোপ হয়ে ওঠা মেয়েদের ওপরেও হযুর কুনজর পড়ত। কেউ কেউ আবার এমন কথাও বলছে, ‘একজন গর্তে গেলেও একজন কিন্তু এখনও মর্তে আছে! অত পরনের লুঙ্গি তুলে নাচার কিছু নেই।‘ যদিও লোকে ও কথায় আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। লোকে বুঝে গেছে, কুদ্দুছ বোমে নয় এখন বোলে মছে আছে। বোল অর্থাৎ মুখে ‘আল্লাহর’ নাম। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই আটকে নেই, হপ্তাহ যেতে না যেতেই ‘জামাতে’ চলে যাচ্ছে এ গাঁ সে গাঁ। হেতু থাকলেও ‘রোজা’ রাখছে হেতু না থাকলেও ‘রোজা’ রাখছে। ‘বেনামাজি’ ‘শিরক’ করা লোকেদের উপদেশ দিচ্ছে, ‘যায়ই করো নামাজ ছাড়া উদ্ধার নেই।‘ বিলপাড়ার আরাফাত শেখকে তিনতলা মার্বেল-টাইলস বসানো মোজাইক করা বাড়ি বানাতে দেখে বলেছে, ‘দুদিনের বাড়ির জন্য এত কিছু করছ আরাফাতভাই, আর যে বাড়িটায় লক্ষ লক্ষ বছর থাকবে সে বাড়িটার জন্য তো কোনও কিছুই করছ না!’ আরাফাত কুদ্দুছকে ‘কোন বাড়িটার কথা বলছিস’ জিজ্ঞেস করলে কুদ্দুছ ‘কবর’এর কথা বলেছে। কুদ্দুছের মুখে সে কথা শুনে আরাফাতের তো মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম।
কুদ্দুছের মধ্যে এমন কী ঘটল যাতে কুখ্যাত মস্তান থেকে সে হঠাৎ ধার্মিক হয়ে উঠল! সেসব নিয়ে মাচানে, তাসের ফড়ে, চায়ের ঠেকে অনেকেই অনেক কথা গাহাগাহি করল। এক কান থেকে দশ কান হল। নানান গুজবও রটল। কিন্তু কেউই সাহস করে কুদ্দুছকে কারণটা জিজ্ঞেস করতে পারল না। আজ যখন জুম্মার নামাজ পড়ে মসজিদ সংলগ্ন মাচানে গিয়ে বসল কুদ্দুছ তখন মোয়াজ্জিন তৈয়ম শেখ সাহস করে বলে ফেলল, “তুমি কি স্বপ্নে কিছু দেখেচ, কুদ্দুচ?”
“কুন স্বপ্নের কথা বুলচ তৈয়মভাই? স্বপ্ন দ্যাখার কি শেষ আছে? এই তো ক-দিন আগেই স্বপ্নে দেখনু, তুমি আজান দিচ্ছ আর সে আজানের শব্দ আল্লার আরশ পর্যন্ত পৌছি যাচ্চে!” কুদ্দুছ বলল। মুখে হাসি। মুখখানায় সদ্য ছেড়ে দেওয়া দাড়িগুলো ফিনফিন করছে। খুঁট করে চাঁছা গোঁফ। কিছুদিন আগেও তার দুই পাশে শিং তোলা একখানা বাহাদুরি গোঁফ ছিল। দাড়ি রাখা সুন্নত, গোঁফ রাখা সুন্নত নয়, বলে দাড়িটা রেখে দিল আর গোঁফটা ছেটে ফেলল!
“আমি উসব স্বপ্নের কথা বুলচি নে। আমি বুলতে চাইচি, আল্লা বা আল্লার নবীর কাছ থেকি কুনু বারতাটারতা?”
তৈয়মের কথা শুনে কুদ্দুছ এবারও হাসল। মুখে সে হাসিখানা নিয়েই বলল, “সে ভাগ্য করি কি জন্ম লিইচি? সেসব তোমরা দেখবা।“
“তাহলে তোমার এমন হঠাৎ পরিবর্তন কেন?” মুখ ফসকেই কথাটা বের হয়ে এল তৈয়মের। কুদ্দুছ বুঝতে পারল কেন এতক্ষণ ফাংড়ি কেটে কথা বলছিল তৈয়ম। মুহূর্তে কুদ্দুছের মুখের হাসিখানা উবে গেল। চোখগুলো কেমন ঘুলঘুল করে উঠল। তারপর নড়ে উঠল ঠোঁটগুলো, “ভালো করে কখনও কবর দেখিচ?” কুদ্দুছ যখন কথাগুলো বলল তখন চোখগুলো এমন করল যেন সে চোখগুলো দিয়ে ভয়ঙ্কর কিছু একটা দেখতে পাচ্ছে! “কবর!” কেমন একটা হেয় করে কথাটা বলল তৈয়ম। এ আর এমন কী কথা, হদ্দিনই দেখছি, ভাবখানা এমন। “হ্যাঁ, কবর। শুধু দুয়া পড়ি, তিন মুঠ মাটি কবরে ছিটি দিলেই হবে না। চোখ-কান খুলি কবরটাকে দেখতে হবে। তাহলেই, বুঝতে পারবা।“ কুদ্দুছ বলল। “কী বুঝতে পারব?” তৈয়ম জিজ্ঞেস করল। কুদ্দুছ তেমন কিছুই বলল না। শুধু একটা কথাই বলল, “পরকাল।“ তারপর হনহন করে হেঁটে চলে গেল। তৈয়মের চোখগুলো হাঁ হয়ে গেল। কুদ্দুছ আসলে কী বলতে চাইল? কথাটার আগাপাস্তুলা অনেক কিছু ভাবল তৈয়ম। কিন্তু কিছুই ঠাহর করে উঠতে পারল না। মুখের দাড়িখানায় হাত বুলিয়ে মিনমিন করে শয়তান তাড়ানোর দোয়া পড়তে লাগল।
দুই
আজ দেবাইপুর গ্রামের আরও একজন মারা গেল। চকপাড়ার তালেব মিঞা বেশ কিছুদিন ধরেই অসুখে ভুগছিল। কবর খোড়ার ভার আবারও কুদ্দুছদের ঘাড়ে। গ্রামের কেউ মারা গেলে তার কবর খোড়ার দায়িত্ব যে দলের ওপর কুদ্দুছ সে দলের মাথা। গ্রামের সমাজই এ দল ঠিক করে দিয়েছে। তালেব মিঞার কাফনে মোড়া লাশটাকে কবরে নামানোর সময় হঠাৎ কাফনের গিঁটগুলো খুলে একটা হাত বের হয়ে গেল! মৃত তালেব মিঞার শূন্য হাতখানা দেখে হযু মস্তানের শূন্য হাতজোড়ার কথা মনে পড়ে গেল কুদ্দুছের! এ জীবনে কমজনের তো কবর কাটেনি কুদ্দুছ! সেই বিশ বছর বয়স থেকে কবর কাটছে সে। যেদিন পুলিশের ভয়ে এদিক ওদিক গা ঢাকা দিত সেই কটা দিন আর যে দিনগুলো জেলে ছিল সেই দিনগুলো ছাড়া বাকি সব দিনগুলোর যে যে দিনে গ্রামে মানুষ মারা গেছে তার কবর কেটেছে কুদ্দুছ। কিন্তু চিন্তাটা কোনও দিনও মাথায় আসেনি। সেদিন গুরু হযরতের লাশটাকে কবরে নামানোর সময়ই চিন্তাটা মাথায় আচমকা এসেছিল। লাশটা যেই কবরে শোয়ানোর জন্য নামানো হচ্ছিল অমনি লাশটার হাতদুটো কাফনের গিঁট খুলে ঝুলে পড়েছিল! ল্যালপ্যাল করে ঝুলছিল আঙুলগুলো! যেন শরীরের হাড়ের সঙ্গে লেগে থাকা মানুষের হাতের আঙুল নয় বাঁদর লাঠি ফল! কুদ্দুছের মাথাটা ঘুলিয়ে গেছিল, দোর্দণ্ডপ্রতাপ মস্তান, এলাকার ত্রাশ হযু মস্তান শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছে কবরে! এত দাপট, এত ক্ষমতা, এত হুঙ্কার কিচ্ছু নেই! তখন কবরের আযাবের(শাস্তি) কথা মনে পড়ে গেছিল কুদ্দুছের। দাফন-কাফন সম্পূর্ণ হয়ে গেলে কিছুক্ষণ হযু মস্তানের কবরের কাছে একা দাঁড়িয়ে ছিল কুদ্দুছ। কান পেতে শোনার চেষ্টা করেছিল কবরের ভেতর থেকে আযাবের কোনও শব্দ ভেসে আসছে কি না। না, সেসব কোনও শব্দ শুনতে পায়নি কুদ্দুছ। তার শুনতে পাওয়ার কথাও নয়। গাছপালা আর কীটপতঙ্গরা কেবল কবরের আযাবের শব্দ শুনতে পায়। কুদ্দুছ তো মানুষ। সে সেসব শুনবে কী করে? সেসব আযাব-গজবের শব্দ শুনতে না পেলেও কুদ্দুছ হযু মস্তানের শূন্য হাতের অর্থ বুঝতে পেরেছিল। দুনিয়ার মস্তানির এক বিন্দুও কবরে যাবে না। তারপর থেকেই কুদ্দুছ মাথায় পরে নিয়েছিল নামাজের টুপি।
আজ আবারও ভালো করে মৃত তালেব মিঞার ফাঁকা হাতখানা দেখল। পাশেই বাঁশের খাপাচি(বাঁশের কাটা অংশ) হাতে দাঁড়িয়ে আছে মোয়াজ্জিন তৈয়ম। কুদ্দুছ তৈয়মকে মৃত তালেব মিঞার কাফনের গিঁট খুলে বের হয়ে আসা শূন্য হাতখানাকে দেখিয়ে বলল, “তৈয়মভাই, সেদিন জিজ্ঞেস কচ্ছিলা না, আমার কেন হঠাৎ ধম্মে-কম্মে মতি হল?” “জী।“ মাথা হেলাল তৈয়ম। কুদ্দুছ বলল, “তার কারণ হল, এই ফাঁকা হাতগুলেন।"
ইত্তেফাক ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত।