সামনে থেকে একজন ভদ্রমহিলাও একইভাবে তার দিকেই হেঁটে আসছেন, মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না, এর কারণ কিছুটা অবশ্য সুগতর বয়সের সঙ্গে বাড়তে থাকা চোখের পাওয়ার। সম্মেলন থেকে ফিরেই একবার চোখ না দেখালেই নয়। ভদ্রমহিলা আরও কাছে এসে পড়েছেন। মুখটা যেন এবার চেনা লাগছে, হাঁটার ধরণ, তাকানোটা…………সুগত হাঁটা বন্ধ করে সোজা তাকিয়ে রয়েছেন ভদ্রমহিলার দিকে, ভদ্রমহিলাও এবারে খেয়াল করেছেন সুগতকে, তিনি স্পষ্ট দেখতে পেয়েছেন মানুষটাকে, একটা হতবাক করা মুখভঙ্গি, তারপরেই একটা অবিশ্বাসের দৃষ্টি, দ্রুত পায়ে ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন সুগতর দিকে, দুজনেই কিছু সময় নির্বাকভাবে তাকিয়ে রইলেন একে অপরের দিকে, অনেক কথা অনেক প্রশ্ন যেন বলা হয়ে গেল চোখের দৃষ্টিতেই, তারপরে ভদ্রমহিলাই প্রথম অস্ফুটে অবিশ্বাস ঢালা গলায় বলে উঠলেন, ‘সুগত, সুগত…………তু-তুমি এখানে? এভাবে তোমার সঙ্গে যে………এত বছর…………’
কথা শেষ করতে পারলেন না ভদ্রমহিলা, সুগত তার সমবয়সী নারীকে অবলোকন করতে করতে বললেন, ‘সাতাশ বছর, কয়েক মাস বেশিই হবে হয়ত, সাতাশ বছর বাদে আবার আমরা একে অপরের সামনে অনু, এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, অনু……অনুপমা তুমি আবার সামনে এসে দাঁড়িয়েছ’।
আবার কিছু মুহুর্তের নৈশব্দ, সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনগুলোই যেন দুজনের হয়ে অনেক কথা বলে দিয়ে যাচ্ছিল। অনুপমার চোখ যেন একটু সমুদের জল থেকেই নোনা জল নিয়ে একটু সজল হতে চাইল, কিন্তু এই মানুষটার সামনে এভাবে আবেগে ভেঙে পড়া চলে না, তাই কর্পোরেট পেশাদারিত্বের ভঙ্গিতে দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে অনুপমা বললেন, ‘সাতাশ বছর তিন মাস, সেদিন কোর্ট থেকে বেরনোর পর এত বছর বাদে আবার আমরা সামনাসামনি, এখানে কি কাজে?’
সুগতর মুখে একটা হাল্কা বাঁকা হাসি খেলে গেল, তিনি বললেন, ‘পার্টির সংগঠনের কাজে এসেছি, সম্মেলন আছে, পার্টির যুব নেতৃত্বকে কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব আমার কাঁধে, সেই কাজেই এখানে এসেছি’।
অনুপমা বললেন, ‘হ্যাঁ, টেলিভিশনে নিউজ চ্যানেলে মাঝেমধ্যে তোমার ইন্টারভিউ দেখি, রাজনৈতিক আলোচনায় তোমাকে ঝড় তুলতে দেখি, কিন্তু রাজনৈতিক জীবনে ত এত কিছুর পরেও সেই পার্টি সংগঠনেই রয়ে গেলে, ক্ষমতার অলিন্দে ত কোনওদিন দেখলাম না’।
‘পার্টিটা আমি কোনওদিনই নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য করিনি অনু, যাই হোক বাদ দাও, তুমি এখানে?’
অনুপমা বললেন, ‘আমিও আমার সংস্থার কাজেই এখানে এসেছি, আমার সংস্থার তরফে কিছু মেয়েকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই কাজের তদারকিতেই আমি এখানে এসেছি’।
সুগত বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি ত এখন একজন এন্ত্রেপ্রেনিওর, কনগ্র্যাচুলেশনস, অভিনন্দন, জীবনে সাফল্য পেয়েছ তুমি, যা চেয়েছিলে তা অর্জন করেছ, মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ওপর তোমার লেখা কয়েকটা নিবন্ধ আমি পড়েছি, ভেরি ইনসপায়ারিং আই মাস্ট সে’।
দুজনেই কিছুটা তীর্যক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকালেন। রোদের তেজ আস্তে আস্তে পড়ে আসছে, কিছু কিছু মানুষ বৈকালিক সমুদ্র সৈকতে আসতে শুরু করেছেন। একরাশ প্রাণোচ্ছ্বল ছেলেমেয়ে হয়ত বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর দল হুটোপুটি করে ছুটে চলল সৈকতের ওপর দিয়ে। তাদের মধ্যে প্রণয় যুগলও কেউ কেউ রয়েছে। অনুপমা আর সুগত তাকিয়ে রইলেন তাদের দিকে। হঠাতই কিছুটা নস্টালজিক হয়ে অনুপমা বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমরাও বোধহয় এদের মতই উচ্ছ্বল ছিলাম, তাই না সুগত?’
সুগত বললেন, ‘যৌবনের ধর্মই ত একটা অদ্ভুত প্রাণোচ্ছ্বলতা, আমরাও সেই মাদকতাতেই ভেসেছি, তবে আজকের এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মত এতটা দায়িত্বহীন হয়ত ছিলাম না, সমাজের প্রতি মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের তাগিদটা ছিল বরাবরই’।
অনুপমা সামান্য ঝাঁঝিয়ে বললেন, ‘দায়িত্ববোধের কথা তোমার মুখে এতটা মানায় না সুগত’।
সুগত আবার একটা শ্লেষ্মাত্মক বাঁকা হাসি হাসলেন, ‘দায়িত্ববোধ শব্দটা বেশ ওজনদার অনু, যাইহোক তোমার হাতে যদি কিছু সময় থাকে তাহলে আমরা হাঁটতে হাঁটতে কিছু কথা হয়ত বলতে পারি’।
অনুপমা একটু নরম হয়ে বললেন, ‘বেশ চলো, আমি আসলে একটু স্ট্রেস রিলিফ করতেই সৈকতে হাঁটতে এসেছিলাম’।
‘হাঁটা যাক তাহলে’, দুজনেই হাঁটতে শুরু করলেন সমুদ্র সৈকত ধরে সোজা দিগন্তরেখার দিকে, আকাশের যেদিকটা গোধূলির আবাহনে লাল হতে শুরু করেছে সেই দিকে।
একটু পরে সুগত বললেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমরা দুজনেই কিন্তু একে অন্যেকে বেছে নিয়েছিলাম। আমাদের ভালোবাসা কিছু ছিল উভয়দিক থেকেই, একতরফা ছিল না’।
সমুদ্রের ঢেউ এসে অনুপমার চটির ফাঁকে পায়ের আঙুল ছুঁয়ে আবার পিছনে ফিরে গেল, অনুপমা কিছুটা সুগতর দিকে সরে এসে বললেন, ‘তখন ত তোমাকে আদর্শ পুরুষ মনে হত, মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি, ছাত্র স্বার্থ রক্ষার জন্য নির্ভীক প্রতিবাদ, তোমার সততা, তোমার সাহস আমার মনে তোমার জন্য আলাদা একটা সম্ভ্রম একটা ভালোবাসার জায়গা তৈরি করে দিয়েছিল’।
সুগত বললেন, ‘তোমার স্বাধীনচেতা দৃষ্টিভঙ্গি, একজন মেয়ে হিসাবে গর্ব করার মানসিকতা, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মনোবাঞ্ছা, লড়াকু মেজাজ আমাকে মুগ্ধ করেছিল, সেইসময় তোমাকে ভালোবাসা থেকে আমি নিজেকেও আটকাতে পারিনি’।
পশ্চিম আকাশ ক্রমশ গাঢ় লাল হয়ে আসছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের ফেনা এসে ঠাণ্ডা হয়ে আসতে থাকা বালির ওপর নিজের অস্তিত্বের রেশ রেখে আবার ফিরে যাচ্ছে নিজের উৎসের দিকে, বালির বুকে সেই রেশও অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না।
অনুপমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় শেষে যখন দুই পরিবারের অমতেই আমরা সাংসারিক জীবন শুরু করলাম, তার কিছু পর থেকেই ত সব পাল্টে গেল। কঠিন রূঢ় বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমাদের সব আইডিয়ালিজমগুলো ঠিক যেন বালির ঢিবির মতই ভেঙে পড়ল’।
কিছু দূরে কয়েকটা নুলিয়া ছেলে খেলার ছলে বালির ঢিবি বানাচ্ছে আর ঢেউ এসে মুহুর্তে তাকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে, ছেলেগুলো আবার ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙার অপেক্ষায় আবার ঢিবি বানাচ্ছে। ছেলেখেলায় ভাঙাগড়ার খেলাতেই তাদের আনন্দ। অনুপমার কথা শুনে সেদিকে তাকিয়ে সুগত বললেন, ‘আমাদের সংসারের ভিতও বোধহয় ওই বালির ঢিবির মতই ছিল, ‘কি আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে’………গানের কলি গুনগুনিয়ে উঠে আবার মাথা নেড়ে নিজেই থেমে গেলেন সুগত।
ঠিক তখনই তাদের সামনে দিয়ে এক দম্পতি তাদের শিশু কন্যাকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে, বাচ্চাটিকে তার বাবা সমুদ্রের ঢেউয়ের কাছে কোল থেকে নামাতেই সে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। শিশুটিত মা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন, একটু পরেই বাবা আবার বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিলেন, মায়ের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটল, তিনজনে সমুদ্রের ধার থেকে সরে এসে বালির ওপর দিয়ে হেঁটে ঝাউবনের দিকে চলতে লাগলেন, সুখী দাম্পত্য জীবন স্পষ্টই পরিলক্ষিত হচ্ছে তাদের চলনে তাদের শরীরী ভাষায়। অনুপমা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন সন্তানসহ ঝাউবনের দিকে এগোতে থাকা দম্পতির দিকে।
সুগতও সেইদিকে তাকিয়ে অনুপমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘রুকুর কথা মনে পড়ে?’
অনুপমা বললেন, ‘তুমি হয়ত ভুলে গেছ যে রুকু আমার গর্ভেই জন্ম নিয়েছিল। ও আমাদের জীবনে আশায় একটা নতুন আশার আলো দেখেছিলাম, সবকিছু ভুলে গিয়ে, তোমার রাজনৈতিক জীবনের জন্য সংসারের অবহেলা, নিজের কেরিয়ারের চাহিদা সবকিছু ভুলে গিয়ে একটা নতুন প্রাণ একটা নতুন জীবনকে গড়তে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারও ত খুব তাড়া ছিল চলে যাওয়ার।
সশব্দে একটা বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে বালির বুকে ভেজা দাগ কেটে আবার ফিরে গেল জলধারায়।
অনুপমার কথাটাকে এড়িয়ে গিয়ে সুগত বললেন, ‘রুকুর তখন দুই বছর বয়স, মনে আছে, আমরা এখানেই এসেছিলাম বেড়াতে, সমুদ্রের জলরাশির উচ্ছ্বল দাপট দেখে কচি মুখে রুকুর কি অনাবিল হাসি, মনে পড়ে?’
অনুপমা সম্মতিতে মাথা নাড়লেন, তারপর বললেন, ‘তারপরই মনে পড়ে এখান থেকে ফিরে গিয়েই রুকুর অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা, ডাক্তার-বদ্যি হাজার টেস্ট আর তারপরই সেই ভয়ঙ্কর ঝড়ের রাত, যে রাতে আমরা জানতে পেরেছিলাম কি ভয়ঙ্কর মারণ রোগ রয়েছে রুকুর মধ্যে, ডাক্তার বলেছিলেন জন্মের সময়ই নাকি এই রোগের বীজ তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওর মধ্যে, দুই বছরের মাথায় সে তার মারণ ক্ষমতা দেখাতে শুরু করল, আরও আড়াই বছর, কত লড়াই আমরা লড়েছি, কিন্তু কি হল, তোমার রাজনৈতিক লড়াইয়ের মানসিকতা আমার জীবনযুদ্ধে কিছু করে দেখানোর মানসিকতা সব সেই বৃষ্টির রাতে ভেসে গেল, যে রাতে রুকু চলে গেল না ফেরার দেশে’। অনুপমা বিহ্বল হয়ে গেলেন, হাঁটতে ভুলে গেলেন, একটা পাথরের মত দাঁড়িয়ে পড়লেন, তার বুকের মধ্যে জমে থাকা কষ্টটা ঠিক ওই সমুদ্রের ঢেউয়ের মতই উথলে উঠে আছড়ে পড়তে চাইল, তবু শক্তভাবে নিজেকে সামলে নিলেন তিনি।
কিছুটা আবেগমোথিত হয়ে পড়লেন সুগতও, তিনিও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন, রুকুর মুখটা এত বছর পরে আবার ভেসে উঠল চোখের সামনে, তার জন্ম এবং মৃত্যুর মুহুর্ত যেন একসাথে ধাক্কা দিয়ে গেল সুগতকে। ধরা গলায় তিনি বলে উঠলেন, ‘দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপ চলেছে আমাদের মধ্যে, কেউ একে অন্যেকে আগলে রাখতে চাইনি, দ্বিতীয়বার নতুন করে নিজেদেরকে একজোট করতে চাইনি, আমার রাজনৈতিক জীবন, তোমার কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়া, আমাদেরকে দুটো আলাদা জগতে নিয়ে গিয়েছিল, আমরা থেকে আবার আমি আর তুমিতে ভেঙে গিয়েছিলাম, কেউই আর দ্বিতীয়বার একে অন্যেকে সুযোগ দিইনি, রুকুর চলে যাওয়াটাই আমাদের বিচ্ছেদের পটভূমিটা গেঁথে দিয়ে গিয়েছিল’।
গোধূলি আসন্ন সৈকতে, দিগন্তরেখা রক্তিম, আশেপাশের বাতিস্তম্ভগুলোতে বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে উঠেছে, আসন্ন সন্ধ্যের সৈকতে আবার মানুষের ঢল নামতে শুরু করেছে। সুগত বললেন, ‘একবার যেন শুনেছিলাম তুমি আবার বিয়ে করেছ?’
অনুপমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললেন, ‘আরও একজন মানুষকে সাহস করে বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু সেখানে বালির ঢিবিও তৈরি হয়নি, একটা দমকা হাওয়ায় কাঁচের পলকা বাক্সের মতই সবকিছু ভেঙেচুরে ছাড়খার হয়ে গিয়েছিল, আর তুমি?’
সুগত বললেন, ‘না, আর ভাঙাগড়ার খেলায় মেতে উঠিনি, যা কিছু করেছি রাজনীতিকেই আঁকড়ে করেছি, তার বাইরে ব্যক্তিগত জীবনে আর কিছু আলাদা করে কোনওদিন ভাবিনি’।
একটা বেশ জোরালো কাশির আওয়াজ শোনা গেল, সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনকে ছাপিয়ে সেই আওয়াজ কানে এল, দুজনেই সেই শব্দের উৎস সন্ধানে সেইদিকে তাকালেন, তাদের খুব কাছ দিয়েই এক বৃদ্ধ দম্পতি হেঁটে যাচ্ছেন কিছুটা তফাতে থাকা একটা পাথরের বেঞ্চির দিকে। বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি দমকে দমকে কাশছেন, তার বৃদ্ধা স্ত্রী পরমযত্নে তার হাত ধরে তাকে সেই বেঞ্চির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, বেঞ্চিতে বসার পরও বেশ কয়েকবার বৃদ্ধের কাশি উঠল, বৃদ্ধা তার বুকে হাত বুলিয়ে দিলেন, কাশির আওয়াজ আর আসছে না, কিন্তু কাশির দমকটা বোঝা যাচ্ছে, একটু পরে কাশির দমক কমলে এক প্রশান্ত হাসি দিয়ে বৃদ্ধ তার স্ত্রীর বলিরেখাযুক্ত হাতটা নিজের বুকের ওপর চেপে ধরলেন, সুগত আর অনুপমা সেইদিকে তাকিয়ে রইলেন বেশ কিছুক্ষণ, নিজেদের জীবনের অপূর্ণতাটা যেন খুব বেশি করে অনুভূত হচ্ছে এখন, হয়ত একে অন্যের হাত ধরার বাসনাটাও ভেতর থেকে উথলে উঠে আসতে চাইছে, দুজনে একে অপরের দিকে তাকালেন, দৃষ্টিতে একটা অদ্ভুত আকুতি ছিল একে অন্যের দিকে, কোথাও একটা ফিরে পাওয়ার আশা, বাসনা প্রতিফলিত হয়ে গেল দুজনেরই দৃষ্টি বিনিময়ে। কিন্তু সমুদ্র সৈকতের বুকে নেমে আসা সাঁঝের লগ্নে আকাশ থেকে বিদায় নেওয়া সূর্যের ফেলে যাওয়া কিছু লালরশ্মির ছটায় একটা অদ্ভুত বেদনাবোধ আচ্ছন্ন করে ফেলল দুইজনকেই, দুটো অপূর্ণ জীবনের হাতছানি যেন আবার একটা প্রাচীর তুলে দিল অনুপমা আর সুগতর মধ্যে। দুজনেই কিছুটা সরে এলেন একে অপরের থেকে। কেউ কাউকে তাদের যোগাযোগের মোবাইল নাম্বার জিজ্ঞেস করলেন না, এমনকি জানতেও চাইলেন না এই সমুদ্র শহরে তারা কে কোথায় আছেন, নিজেদের অপূর্ণতাকে সম্বল করেই একে অপরের থেকে বিদায় চাইলেন, আবার একসাথে হাঁটা থামিয়ে বিপরীতমুখে এককভাবে নিজেদের গন্তব্যের দিকে ফিরে চলতে থাকলেন দুইজনেই। সমুদ্রের ঢেউ সশব্দে বালুকাবেলায় আছড়ে পড়ে ফিরে যেতে থাকল, ভাটার সাগর যেন নিজের অজান্তেই কিছুটা পিছিয়ে গেছে সমুদ্র সৈকতের বালুকাবেলা থেকে। সুগত আর অনুপমাও একে অন্যেকে পিছনে ফেলে এগিয়ে চললেন নিজেদের একক অপূর্ণ জীবনধারাকে সাথে করে।