কাশ্মীর নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনি, উপকথা। যে স্থান যত সমৃদ্ধিশালী তার পুরাণও তত সমৃদ্ধ। মনে করা হয়, মহাপ্লাবনের সময় নোয়া বা নুহ নবির বানানো সেই বিরাট নৌকায় অনেকে ঠাঁই পেয়েছিল।প্লাবন থেকে মুক্ত হওয়ার পর-- নুহ নবির তিন পুত্র ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকায় চলে যান।তাঁদের একজন হলেন হাম, যিনি এশিয়া মহাদেশে আসেন।হামের পুত্র কাশ।কাশ্মীরের মনুষ্যজাতি সেই কাশের বংশধর।আর একটি উপকথা হল, কাশ্মীরের আদি বাসিন্দারা নাকি ছিলেন নাগ, পিশাচ আর যক্ষ।আর্যরা যখন ওই উপত্যকায় যায়, তখন স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশ তাদের মেনে নেয়, বশ্যতা স্বীকার করে।ওই বাসিন্দারা হল ‘হনুমান’ ও ‘ বানর’ জাতি।আর এক পক্ষ আর্যদের বিরুদ্ধে ভীষণ প্রতিরোধ গড়ে তোলে।তাদের নাম হয় ‘নাগ’ আর ‘পিশাচ’।এরা সকলেই কাশের বংশধর।কশ্যপ নামের এক ঋষির নাম কাশ্মীরের সঙ্গে যুক্ত।পাণিনির ব্যাকরণের মহাভাষ্য রচয়িতা পতঞ্জলি ছিলেন কাশ গোষ্ঠীর মানুষ, যিনি চরকের আয়ুর্বেদ পুনর্লিখন করেন।কাশ্মীর শৈবচিন্তার পুরোধা বসুগুপ্ত, উৎপল, ক্ষেমরাজ, আনন্দবর্ধন, অভিনবগুপ্তরাও এই উপত্যকার মানুষ।
তবে পুরাণের সব গল্পকে হার মানায় ‘কাশ্মীরে যিশু’ আখ্যান।কী সেই আখ্যান?
ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার পর জীবন্ত যিশুকে কবরস্থ করা হয়।তিনদিন তিন রাত ভূগর্ভে ছিলেন তিনি।মথি বারো অধ্যায়ের চল্লিশ শ্লোকে বলা হয়েছে, ইউনুস নবি যেমন মাছের পেটে তিন দিন ছিলেন তেমনি ইসা তিন দিন তিন রাত ভূগর্ভে থাকবেন।কিন্তু ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় গেলেন?
বনি ইসরাইলদের দশটি গোত্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।বনি ইসরাইল হল ইসরাইলের বংশ।ইসরাইল হলেন ইবরাহিম বা আব্রাহামের পৌত্র।ইসরাইল অর্থাৎ ইয়াকুবের (ইয়াকুব ইসরাইলের আর একটি নাম) এগারোটি পুত্র ছিল।ইয়াকুবের বংশ হল বনি ইসরাইল বা ইসরাইলীয় বংশ।এই বনি ইসরাইলের দশটি গোত্র যাদের সালমানজের বাদশা শাহ অসুর বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিল, তারা শেষ অব্দি ঠাঁই পায় ভারতবর্ষে।সেই হারানো দশটি মেষের সন্ধানে যিশু বা ইসার ভারতে আসার প্রয়োজন ছিল।এমন কথা পাওয়া যায় যে এ দেশে বনি ইসরাইলীয়রা এসে বৌদ্ধ হয়ে যায় এবং নানা রকমের উপাসনায় লিপ্ত হয়ে পড়ে।আফগানিস্তান ও কাশ্মীরের বাসিন্দারা আদতে নাকি ইহুদি ছিল, শাহ অসুরের সময় তারা এ দেশে আসে।বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে ইসরাইলীয়দের হারানো মেষগুলোর কথা আছে।মথি অনুযায়ী, যিশু বলছেন আমি জীবিত হয়ে গ্যালিলিতে যাব।মৃত মানুষ আবার জীবিত হবে কী প্রকারে! অবশ্য ঈশ্বরের ইচ্ছা হলে তা ভিন্ন কথা।আর যিশুকে যে আসমানে তুলে নেওয়ার কথা বলা হল, তা হলে তিনি জীবিত হয়ে গ্যালিলিতে যাওয়ার কথা বললেন কেন! গ্যালিলি তো আসমান নয়! বারনাবাসের কিতাবে আছে, যিশু ক্রুসবিদ্ধ হননি এবং ক্রুসে তাঁর মৃত্যু হয়নি।মার্ক ইঞ্জিলে বলা আছে, যিশু অর্থাৎ ইসাকে কবর থেকে বের হয়ে গ্যালিলির রাস্তায় চলে যতে দেখা গিয়েছিল।
যিশু ওই লোকদের সঙ্গে খেতে বসলেন।তাঁর হাত ও পায়ের ক্ষতগুলি দেখে তাঁরা খুব চমকে গেলেন।তারপর এক আশ্চর্য মলমে সেরে যায় সব ক্ষত।যিশু জেরুজালেম থেকে যাত্রা শুরু করে নসিবাস ও ইরানের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানে পৌঁছন, সেখান থেকে কাশ্মীর।কাশ্মীরের পূর্ব সীমানা তিব্বতের লাগোয়া।তাই তিনি হারানো মেষের সন্ধানে তিব্বতও ঘুরে এসেছেন, এ রকম কথা শোনা যায়।এর পর তিনি কাশ্মীরে স্থায়ীভাবে বাস করার সিদ্ধান্ত নেন।তার আগে নাকি আফগানিস্তানে ছিলেন অনেক দিন।এখনও আফগানিস্তানে এক জাতির সন্ধান পাওয়া যায় যাদের নাম ইসা-খায়ল—এর অর্থ ইসার সন্তান।কাশ্মীরে এসে যিশু বিবাহ করেন।এখনও কাশ্মীরে এক দল মানুষ দাবি করেন, তাঁরা ইসার বংশধর।যিশু অর্থাৎ ইসা কাশ্মীরেই মারা যান এবং তাঁকে সমাহিত করা হয় শ্রীনগরে।শ্রীনগরে তাঁর সমাধি পর্যটকদের এক দর্শনীয় স্থান।ইসাকে যেখানে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছিল বলে জনশ্রুতি, সেই জায়গার নাম গিলগিট। ‘গিলগিট’হল মাথার খুলির স্থান।মথি, মার্ক, লুক এবং জনে সেই প্রমাণ পাওয়া যায়।আবার ‘শ্রীনগর-এর ‘ শ্রী’ শব্দটির হিন্দি-অভিধানে অর্থ করা হয়েছে মড়ার মাথা।আর ‘নগর’মানে স্থান।
শেষ যুগে, কেয়ামত আসন্ন হলে, যিশু দু জন দেবদূত কাঁধে হাত রেখে দামাস্কার মিনারার কাছে নামবেন।
(সমস্ত বিষয়টি পৌরাণিক আখ্যান থেকে নেওয়া।সত্য/মিথ্যা, বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের প্রশ্ন তাই ওঠে না)