উত্তর আধুনিক সমাজে "ছোট পরিবার সুখী পরিবার" ধারণাটা জনপ্রিয় হলেও, সাবেক কালের সমাজে পরিবারটা বড় করে দেখানোটাই ছিল গর্বের ও কৃতিত্বের। সেই যে সুকুমার রায়ের ছড়ায় আছে না, "আমি আছি, গিন্নি আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে"। এই নয় ছেলে একটা গর্ব এবং দম্ভের প্রকাশ। আমার ঠাকুমা গল্প বলতেন, পোলাপান কয় খান? বেয়াই পুত নিয়া সাত খান"। সোজা কথায় বাড়িয়ে দেখানো। সম্প্রতি যখন প্রশ্ন উঠল হাসপাতালগুলো জুনিয়র ডাক্তারের কর্ম বিরতির ফলে অচল। তখন জুনিয়র ডাক্তাররা পাল্টা যুক্তি দিলেন মোট রেজিস্টিকৃত ডাক্তার ৯৩ হাজার, আর জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা মাত্র ৭৪০০, তাহলে কি করে জুনিয়র ডাক্তারের জন্য হাসপাতাল অচল হয়। আর এই জুনিয়র ডাক্তার তো শুধু সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাহলে বাকি হাসপাতালে তো তাদের দায় নেই। একটা যথার্থ নির্মম সত্য তারা তুলে ধরলেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে নির্মম সত্যটাকে তুলে ধরতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিলেন কেন? সত্য দাঁড় করানোর জন্য খুঁটির জোর লাগে না। কিন্তু এক্ষেত্রে লাগলো, কারণ এটা অর্ধসত্য। আর অর্ধসত্য মিথ্যার চেয়েও বিপজ্জনক।
পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিলের দেওয়া হিসেবে রেজিস্টিকৃত ডাক্তারের মোট সংখ্যা ৭৪০৫২ জন।মৃত, অথর্ব, অবসৃত সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৯৩ হাজার।এরা (৭৪০৫২) সবাই সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন না। রেলের হাসপাতাল, পোর্টের হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় ইএসআই, কোল ইন্ডিয়া, খনি, এয়ার পোর্ট ইত্যাদি নানা সংস্থায় চাকরি করেন। আবার একটি বিরাট অংশের ডাক্তার বাবুরা বেসরকারি নার্সিং হোম ও কর্পোরেট হাসপাতাল গুলিতে চাকুরীরত। এভাবে সরকারি হাসপাতালে সংখ্যাটা প্রায় ১৭৫০০ এসে দাঁড়ায়। এবার এই সংখ্যক ডাক্তাররা ছড়িয়ে আছে প্রাইমারি হেলথ সেন্টার থেকে শুরু করে ব্লক হাসপাতাল মহকুমা হাসপাতাল জেলা হাসপাতাল সর্বত্র। একটা রাফ এস্টিমেট অনুযায়ী ২৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের সংখ্যা দশ হাজারের কাছাকাছি। আর এগুলিতেই ইন্টার্ন, হাউস স্টাফ, পিজিটি এরা কাজ করেন। দশ হাজারের সাথে ৭৪০০ তুলনা করলে সংখ্যাটা কিন্তু অনেক। অতএব জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিশ্চিতভাবে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গুলিকে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন করবে, করছেও।
আমার অতি ঘনিষ্ঠ নৈহাটির একজন সিনিয়র স্পেশালিস্ট ডাক্তারবাবু বলেছেন, এই ডাক্তারদের মধ্যে একটা বিরাট অংশ আছেন নন ক্লিনিকাল। অর্থাৎ প্যাথলজিস্ট , রেডিওলজিস্ট, সোনোলজিস্ট, মাইক্রো বায়োলজিস্ট, এনাটমি ও ফিজিওলজির ডাক্তার, ফরেনসিক, ইত্যাদি। এরা কিন্তু রোগী সামলান না। যদিও তারা এই বিশেষ পরিস্থিতিতে ইমার্জেন্সি আউটডোর সামলাচ্ছেন। বলাবাহুল্য খুব এফিসিয়েন্টলি সেটা হবে না। তাহলে এদের সংখ্যাটাও কার্যত বাদ দিতে হয়। ওই ডাক্তার বাবুর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেল এডুকেশনাল সার্ভিস প্রদত্ত ২০২৩ - ২০২৪ রিপোর্ট অনুযায়ী অনুমোদিত পোস্ট ৫৮৫৭, বর্তমানে ৩৭৮০, অর্থাৎ শূন্য পদ ২০১৭ মানে ৩৫.৪৬ শতাংশ। এই তথ্যটি কে আমি বিশেষভাবে ভরসা করছি এই কারণে যে, ওই ডাক্তার বাবু বর্তমান জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের একজন সমর্থক, অত্যন্ত সৎ ও নিরপেক্ষ এবং নির্মোহভাবে তথ্যটি পরিবেশন করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন কেন, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শিক্ষক চিকিৎসকের ৩৫%শূণ্যপদ পূরণ করা হচ্ছে না। তবে এটা ঠিক, জুনিয়র ডাক্তারের ৭৪০০ সংখ্যাটা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তার সংখ্যার তুলনায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। একেবারে এলেবেলে সামান্য নয়। বলা যায় পঞ্চাশ শতাংশের আশেপাশে এরপরেও মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক আছে বলাটা অর্ধসত্য ও অসত্য।
আমার উদ্দেশ্য এটা প্রতিষ্ঠা করা নয় যে জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনে স্বাস্থ্যপরিসেবা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত। কর্ম বিরতি করার উদ্দেশ্যই তো স্বাভাবিক অবস্থাকে ব্যাহত করা। বরং আমি এটা জানি যে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারবাবুর সংখ্যা হিসেব করলে ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সেই কারণেই তো মেডিকেল কলেজগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর এত কাজের চাপ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডাক্তারের এই বিপুল ঘাটতির সত্যটি জুনিয়র ডাক্তার দের কর্মবিরতি হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দিলো। বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার তৈরি করার যে বিপুল ব্যয়ভার তা বহন করা রাজ্য সরকারের আর্থিক সামর্থ্যের পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে প্রাইভেট পুঁজি লগ্নী আনতেই হবে। প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে যারা পড়বেন, পাশ করবেন, তারা রাজ্যের জনগণের স্বাস্থ্যপরিসেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। এটা আসলে ভাবের ঘরে চুরি করা। আসলে স্বাস্থ্য ব্যবসায় কর্পোরেট পুঁজির আমদানিকে একটা খোঁড়া যুক্তির সাহায্যে মান্যতা দিতে চেয়েছেন। কালক্রমে এই ডাক্তারি পেশা থেকে মানবিক মুখ ক্রমশই অন্তর্হিত হবে, হারিয়ে যাবে। একটি বিত্তবান শ্রেণী ডাক্তারি পেশাকে সম্পূর্ণ করায়ত্ত করবে, এটাই হলো পরিকল্পনা। রাজ্যের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরিকাঠামোটা ও সরকারি লগ্নি ব্যবহার করে ভালো ডাক্তার তৈরি করা হবে ও তাদের প্রচুর টাকায় কর্পোরেট হাসপাতালের সেবায় নিয়োগ করা হবে। অন্যদিকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিকাঠামোয় কোনো খরচ না করে নিম্নমানের শিক্ষা দিয়ে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ডাক্তার তৈরি করবে। তারা সরকারি হাসপাতালগুলোতে চাকরি করতে ঢুকবে। সরকারি কোষাগার থেকে বেতন লাভ করবে। এভাবে একবার শিক্ষা দাতা হিসেবে পয়সা উপার্জন, আর একবার চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার বিনিময়ে উপার্জন। সরকারি মেডিকেল কলেজ হবে কাক পন্ডিত, কোকিল ছানাকে তালিম দেবে। উদ্দেশ্য এতটুকু জটিল নয় সহজ সরল। লাভজনক এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণ করা হবে, আর কর্পোরেট সংস্থা জলের দরে সেটা কিনে নেবে। তারপর সেই সংস্থায় মোটা অর্থের বিনিময়ে বিমান পরিষেবা বিক্রি হবে।
বাজার অর্থনীতির অনিবার্যতা স্মরণে রাখলে এ কথা বলাই যায় যে, বাজার অর্থনীতিতে সবই যেখানে পণ্য, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও হবে পন্য। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ১৯৭৭ এ বাম সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন খালি পদ ডাক্তার বা বেয়ার ফুটেড ডক্টরস তৈরি করে চিকিৎসা ব্যবস্থার এই সমস্যাকে প্রতিহত করার একটা প্রয়াস দেখা দিয়েছিল। ডাক্তারি পাস করে যারা গ্রামে যেতে চান না, সেই সমস্যাকে প্রতিহত করতে তিন বছরের একটি মেডিকেল কোর্স চালু করে তাদের সরকারি ডিপ্লোমা দিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসকের ঘাটতি পূরণ করার প্রচেষ্টা চলে। পার্টি সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত এই খালি পদ ডাক্তার কর্মসূচির অন্যতম সমর্থক ছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্টের প্রথম পাঁচ বছরের পরেই সরকারের মূল চেহারা ও চরিত্র স্পষ্ট হতে থাকে। প্রথম পাঁচ বছর বিশ্বাস ছিল বুর্জোয়া কাঠামোতে একটি কমিউনিস্ট সরকার কখনোই স্থায়ী হতে পারে না। তাই এই গেল, সেই গেল, করে কেটে গেল পাঁচ বছর। তারপর বোঝা গেল, না, এই সরকার স্থায়ী হতেই এসেছে। এর পরেই দলের মধ্যে বেয়ার ফুটেড ডাক্তার নিয়ে প্রবল আপত্তি তৈরি হয়। ইতিমধ্যে ডাক্তারবাবুরা দলের মধ্যে প্রভাবশালী হলেন। বহু নামিদামি ডাক্তার তারা পার্টির বৃত্তে চলে আসেন। ধীরে ধীরে বেয়ার ফুটেড ডাক্তার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে এই ডাক্তারদের কোথায় স্থান দেওয়া হবে ও কিভাবে, তা নিয়ে সরকার বিস্তর আলোচনা চালিয়ে, অবশেষে এদের আরেকটি রিফ্রেসার কোর্স করিয়ে হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।
সরকারি প্রকল্পের এই পরিণতি ছিল অনিবার্য। কারণ উত্তরবঙ্গ বা বর্ধমান লবি নয়, কলকাতা শহরেরই নামিদামি চিকিৎসকরা পার্টির ক্ষমতা বৃত্তের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে, এরাই স্বাস্থ্য নীতি কে নিয়ন্ত্রণ করত। ডাঃ ভাস্কর রায়চৌধুরী, ডাঃ আবির লাল মুখার্জী, ডাঃ গৌরী পদ দত্ত, ডাঃ দীপক চন্দ, ডাঃ অমিয় হাটি প্রমুখ গণ। স্বাস্থ্য বিভাগটিও আরএসপির হাত বদল হয়ে চলে এলো সিপিএমের হাতে। এদের অঙ্গুলিহেলনেই কর্মসূচি টি বাতিল হয়। কিন্তু অনুরূপ কর্মসূচি ও চিন্তাভাবনা এর পরেও মাথা চাড়া দিয়েছে। কারণ চিন্তা ভাবনা অবিনাশী। আর সাময়িকভাবে তা পর্যুদস্ত ও পরাস্ত হলেও, ঘুরে ফিরে আসে বারবার। প্রবাদ আছে Old ghost die hard. বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলেও একাধিকবার গ্রামের মফস্বলের তথাকথিত হাতুড়ে ডাক্তারদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা হয়েছিল। এমনকি ডাঃ সুব্রত মৈত্র র চিকিৎসা জীবনের অভিজ্ঞতা সম্বলিত বই "ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস" প্রথম প্রকাশের দিন মন্ত্রী মহোদয়া বলেছিলেন, এই বই মফস্বল ও গ্রাম বাংলার অসংখ্য ডিগ্রিহীন হাতুড়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের সহায়ক হবে। সরকারের পরিকল্পনা আছে, সর্বনিম্ন স্তরে প্রশিক্ষিত প্যারামেডিকেল স্টাফ নিয়োগ করে স্বাস্থ্য পরিষেবা কে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমি এই সংবাদে খুব আশান্বিত হয়ে ডক্টর সুব্রত মৈত্রের বইটি বাংলা অনুবাদ করতে সচেষ্ট হই। কা কস্য পরিবেদনা।
শুধু তো সরকারি পরিকল্পনা হতাশ করেনি। অনুরূপ পরিকল্পনা আরও আগে গ্রহণ করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হাসপাতাল। "আমরা নিজেদের স্বাস্থ্য নিজেরাই গড়বো"। হাসপাতালে মানুষের বিপুল প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশার চাপ সামলানোর জন্য বহু ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ দরকার। কিন্তু সামান্য ১১ টাকার ওপিডি, আর ততোধিক অল্প পয়সায় ইন হাউস সার্ভিস দিতে আসবে কোন ডাক্তার। আমাদের চেনা পরিচিত ডাক্তারি পাস করা ছাত্ররা প্রথম এক বছর দু বছর এসেছে, থেকেছে, সার্ভিস দিয়েছে, আবার চলেও গেছে। ফলে ডাক্তারের অভাব ও ডাক্তারের উপর অস্বাভাবিক চাপ কমানোর জন্য আমাদের দুটি কর্মসূচি গৃহীত হয়। (এক) চলো যাই রোগীর বাড়ি। (দুই) ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স।
চলো যাই রোগীর বাড়ি কর্মসূচিতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কিছু কিছু স্বেচ্ছাসেবক এনে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। কিছু সাধারন চিকিৎসা যেগুলো একেকটি অঞ্চল ভেদে এক এক ধরনের প্রাদুর্ভাব ঘটতো। সেই স্বেচ্ছাসেবকদের ১৫ দিনের ক্যাম্প হতো হাসপাতালে। ডাক্তার বাবুরা তাদের ক্লাস নিতেন। তারা সরাসরি আউটডোরে, ইন হাউসে ওই ১৫ দিন কাজ করতেন। তাদের বেশ কিছু মেডিকেল সরঞ্জাম সম্বলিত একটা ব্যাগ ও চলো যাই রোগীর বাড়ি শীর্ষক একটি বই ম্যানুয়াল হিসেবে দেওয়া হতো। এরপর তিন মাস বাদে পুনরায় এদের নিয়ে শিবির বসতো হাসপাতালে। তখন এই সেচ্ছাসেবকরা তিন মাসে কার্যক্ষেত্রে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হলেন, নতুন কি কি জানলেন, তার অভিজ্ঞতার বিনিময় হতো। সেই ভিত্তিতে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং এই ১৫ দিন তারা হাসপাতালে হাতে-কলমে কাজ করবে। এভাবে প্রশিক্ষণ - প্রয়োগ - পুনরায় প্রশিক্ষণ এই প্রক্রিয়া একদিকে স্বেচ্ছাসেবকদের যেমন দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে গড়ে তুলবে, অন্যদিকে আঞ্চলিকভাবে বহু স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান ঘটবে। সর্বোপরি অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর্মীর চোখে কোন বিশেষ রোগী চিহ্নিত হলে তাকে টার্সিয়ারি সাপোর্টের জন্য হাসপাতালে পাঠাবে।
দ্বিতীয় কর্মসূচি ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স। হাসপাতালে অনেকদিন ধরে কাজ করা অভিজ্ঞ এবং সুদক্ষ নার্সদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি করা হলো। এরা নিয়মিত নার্সিং এর কাজ করার সাথে সাথে তাদের প্রতিদিনই থিওরি ক্লাস করাতেন বিশিষ্ট চিকিৎসকরা, প্রেসিডেন্সি কলেজের একাধিক নামী অধ্যাপক, বরানগর আইএসআইয়ের অধ্যাপক, প্রমুখগন। এমবিবিএস কোর্সটিকে সামনে মডেল হিসেবে রেখে, তাকে আরেকটু সরলীকরণ করে এই নার্সদের সামনে হাজির করা হলো। অপ্রয়োজনীয় জটিলতর তত্ত্বগুলি বাদ দেওয়া হলো। এনআরএস, আর জি কর, পিজি, সাগর দত্ত, পোর্ট ট্রাস্ট, সমস্ত হাসপাতাল থেকে ডাক্তার বাবুরা আসতেন নিয়মিত বছরে দুবার করে পরীক্ষা হতো। ৮টি সেমিস্টারে বিভক্ত হলো পরীক্ষার ব্যবস্থা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। বাইরে থেকে শিক্ষকরা এসে পরীক্ষা নিতেন। কোন কোন ডাক্তার মন্তব্য করেন, এরা ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট নয়, এরা রীতিমতো এক একজন ডাক্তার হয়ে উঠেছে। কারণ একজন ডাক্তার নিজেও তো শেষ দিন পর্যন্ত একজন ছাত্র। সেই বিচারে এরা প্রত্যেকেই এক একজন ডাক্তার। খোদ চিকিৎসকদের মধ্যে বিরাট উৎসাহ উদ্দীপনা এদের ঘিরে।
চুঁচুড়া চন্দননগরের কয়েকজন স্পেশালিস্ট ডাক্তার। বছরের দু তিনবার উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য শিবির করে থাকেন। তারা বলেছিলেন ক্যাম্পে আমরা যা শিখিয়ে আসি সেটার হাতে-কলমে চর্চা না থাকলে, সেগুলো ওরা ভুলে যায়। আর সব সময় তো নির্দিষ্ট কেসগুলো সামনে হাজির হয় না। তাই যদি ওই সমস্ত ক্যাম্পের ছেলেমেয়েদের আমাদের হাসপাতালে নিয়ে এসে সরাসরি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দেওয়া যায়। ওরাও চলো যাই রোগীর বাড়ি আর ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স নিয়ে খুবই আগ্রহী হয়েছিলেন। ওদের মধ্যে ছিলেন একজন খ্যাতনামা অর্থপেডিক ডাক্তার, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ, একজন গাইনোকোলজিস্ট, একজন জেনারেল মেডিসিন বেশ বড় একটা দল। কিন্তু ওদের ইচ্ছে থাকলেও আমাদের দিক থেকে সেই আগ্রহ প্রদর্শন হয় নি। কেন হয়নি সেটা পরেই বোঝা যাবে।
আউটডোরে ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট আগে পেশেন্টের ভিড় সামলান। সেখানে অতি সাধারণ মামুলি বিষয়গুলিকে তারা advice দিয়ে ডাক্তারের কাছে পাঠালেন। ডাক্তারবাবু সই করে দিলেন। এরপর কিছু বিশেষ পেশেন্টকে তারা বাছাই করলো এবং সেগুলি ডাক্তারের কাছে পাঠানো হলো। এর ফলে ডাক্তার বাবুর ওপর চাপ কমে গেল। আউটডোরেও অজস্র রোগীর ভিড়ের অর্ধেকের বেশি এরাই কমিয়ে দিলেন। আউটডোরে ডাঃ নবারুণ ঘোষাল রোগী দেখছেন, একটা জটিল রোগের নমুনা পেলেই এক্সরে প্লেট টা নিয়ে সোজা হাসপাতালে কোনো ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট কে খুঁজে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন। প্লেট দেখে বলো, কি সমস্যা হয়েছে। ডক্টর সাহা, ডক্টর এইচ আর দাস মেয়ে গুলোকে ডাক্তার বানানোর জন্য পাগলের মত পরিশ্রম করতেন। একটা নমুনা দিলেই যথেষ্ট।
একজন পেশেন্ট এসেছিল বুকের ব্যথা নিয়ে। দেখা গেল বুকে ব্যথা হলেও, ব্যথাটা অনেক নির্দিষ্ট ভাবে পিঠের দিকে, শিরদাঁড়া থেকে একটু ডান দিকে সরে, এবং ডানদিকে বগলের নিচেও। ডাক্তারবাবু স্টেথো দিয়ে দেখে বললেন, একটা কার্ডিওলজিস্ট কনসাল্ট করুন। ক্লিনিক্যালি বোঝা যাচ্ছে এটা হার্টের ব্যথা। তবে আরেকটু নিশ্চিত হতে হবে। আমাদের ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাক্তার বাবুকে বললো, পেশেন্টের চেস্ট এক্সরে রিপোর্টটা একবার দেখুন স্যার। ওখানে সি ৭ হাড়টা অনেকটা এনলার্জড। সি ৭ হাড়ের লোকেশন প্রায় হার্ট এর কাছে। হতে পারে এই সি ৭ থেকে ব্যথাটা শুরু হয়। সেটাই রেফার্ড হয় হাতে। আপনারাই পড়িয়েছেন সি ৭ হাড়টা অনেক সময় ডাক্তারকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মিসলিড করে। ডাক্তার ওটাকে ভুল করে কার্ডিয়াক সমস্যা হিসেবে ভাবে। ডাক্তার বাবু তার কথার মান্যতা দিয়ে একটু হালকা ব্যথার ওষুধ প্যারাসিটামল খেতে বললো, বালিশ ছাড়া শক্ত জায়গায় শুতে বললো, আর ফিজিওথেরাপিকে রেফার করল। আর এসওএস হিসেবে সর্বিট্রেট ৫ ঘরে রাখতে বলা হলো। হ্যাঁ পেশেন্ট ভালো হয়েছিল, আমাদের ডক্টর অ্যাসিস্ট্যান্ট এর চিকিৎসাতেই।
করোনা কালেও আমরা দুজন সপরিবারে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। আমাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৮০ ও তার নিচে। ডাক্তার দুজনকেই এইচ আর সি টি, করতে বললেন। ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট বললো, বোঝাই যাচ্ছে এখন রিপোর্ট খুব খারাপ আসবে। সেক্ষেত্রে আমরা চরম খারাপ ধরে নিয়েই চিকিৎসা শুরু করিনা কেন? Ninetedanib চালু করি, পালমোনারি ফাইব্রোসিস তো আছেই। সুস্থ হবার পর বরং একটা এইচআরসিটি করে দেখা যাবে কতটা রিকভারি হলো। ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর আপত্তির কারণে আমাদের আইসিইউতে ঢোকানো হলো না ডাক্তার আইসিইউ তে ঢোকানোর জন্য খুবই ইচ্ছুক ছিলেন। কিন্তু ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট এর যুক্তি কোভিড ফুসফুসের সংক্রমণ, আইসিইউতে এমনিতেই সংক্রমণ বেশি হয়। বরং জেনারেল ওয়ার্ডের খোলামেলা পরিবেশ, মূলত ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল চিকিৎসার ভার। ডাক্তার রাত্রি দশটা থেকে সকাল আটটা একটানা অক্সিজেন চালু রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু ওই ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট মাঝ রাতেও আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এসে ১৫ মিনিট আধঘণ্টার জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে দিতেন। তার যুক্তি ছিল একটানা সাপোর্ট ফুসফুসকে সাপোর্টে অভ্যস্ত করে ফেলবে। তখন আর সাপোর্ট ছাড়া কাজ করবে না। এভাবে কার্যত একটা লস্ট কেস সারভাইভ করেছিল ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট এর হাতে। এর জন্য কোন কোন ডাক্তার বিস্তর গালমন্দ করেছিল। "নিজেরা ডাক্তার হয়ে গেছিস" .......... "নিজেদের ডাক্তার ভাবিস" ....... এসব শুনতে হয়েছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ওরা নিজেদের ডাক্তার না ভাবলেও আমি কিন্তু ওদেরই ডাক্তার বলে জানি এবং মানি।
গাইনোকোলজি আউটডোর চলছে। একজন পেশেন্ট পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে হাজির হয়েছে। প্রথমে দেখলো ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট। তার অনুমান টিউবাল প্রেগনেন্সি। ফেলোপিয়ান টিউবে ভ্রুণ জন্মে আটকে মারা গেছে। ডাক্তারবাবু হাসলেন, বললেন সদ্য ওই চ্যাপ্টারটা পড়েছিস, তাই তো? টিউবাল প্রেগনেন্সি হলে আপার অ্যাবডোমেনে এ ব্যথা থাকতো না। এরপর ডাক্তারবাবু ভালো করে দেখেছেন। দেখে অনুমান করছেন ইউটিআই। আপাতত ব্যথা কমার ওষুধ দিয়ে ইউরিন কালচারের স্যাম্পেল সংগ্রহ করতে বলেছেন। স্যাম্পেল নিলে কাল সকালে, তারপর অ্যান্টিবায়োটিক চালু হবে।
এদিকে পেশেন্টকে ভর্তি নেওয়ার পর পেইন কিলার দেওয়া সত্ত্বেও ব্যথা ক্রমবর্ধমান। সন্ধ্যায় পেশেন্টের সোনোগ্রাফি করা হলো এবং টিউবাল প্রেগন্যান্সি ধরা পরল। তাৎক্ষণিকভাবে এমার্জেন্সি কলে রাত্রেই গাইনোকোলজিস্ট এলেন । রাত্রেই অপারেশন হলো। পেশেন্ট সে যাত্রা রক্ষা পেলো। ডাক্তারবাবু তো প্রথমেই মুগ্ধ ও পুলকিত একথা ভেবে যে, তার স্টুডেন্ট আগেই এটা ডায়াগনোসিস করেছে। সারা হাসপাতালে এ নিয়ে আনন্দ ও চর্চা চলল। গাইনোকোলজিস্ট ছাত্রীকে জিজ্ঞেস করলো, আপার অ্যাবডোমেনে এত ব্যথা সত্বেও তুই কি করে এই ডায়গনোসিস করলি? ছাত্রীটি বলল আমি লোয়ার অ্যাবডোমেনে ফেলোপিয়ান টিউবের জায়গায় হাত ছোঁয়ানো মাত্র, পেশেন্ট যে সাংঘাতিক রিয়াক্ট করেছিল, তীব্রভাবে। তাতেই মনে হয়েছিল সমস্যাটা ওখানে। কিন্তু ব্যথাটা বেড়ে গিয়ে সমগ্র পেটে রেডিয়েট করে গেছে। তখন আর ব্যথাটা লোকালাইজ থাকেনি। কিন্তু আমি দেখেছি যথাস্থানে ও হাত দিতেই দিচ্ছিল না।
আরো একবার, যখন পেশেন্টের হার্টের সমস্যা পাওয়া যাচ্ছিল ক্লিনিক্যালি, কিন্তু তার টিএমটি রিপোর্ট ইন কনক্লুসিভ। সামান্য একজর্সন পেশেন্ট নিতে পারছে না। একজর্সনাল ইকোকার্ডিও করা হবে নাকি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হবে তা নিয়ে ডাক্তারের মতবিরোধ চলছে। সেই সময় এই ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট বলেছিল, স্যার ওগুলো তো সবই রোগীর পক্ষে এক্সপেন্সিভ, আবার কষ্টদায়কও বটে। তার চেয়ে আগে একটা পালমোনারি ফাংশন টেস্ট (পিএফটি) করে নিলে ভালো হয় না? পিএফটি করে দেখা গেল ফুসফুসের এয়ারওয়েস গুলি বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে ও ৫০% অক্সিজেন পৌঁছাচ্ছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই সামান্য এক্সারশনে হাঁফ ধরছে। ডাক্তারবাবু কিছু ইনহেলার, ডক্সোফাইলিন শ্বাসের ব্যায়াম করতে দিলেন। আর সেইসঙ্গে ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ এর প্রতিষেধক হিসেবে দিলেন এ্যাটোরভাসটাটিন, ফ্লপিডগরেল, ইকোস্পিরিন, নিকোরান্ডিল আর নাইট্রোগ্লিসারিন। বছর দশের বেশি সেই পেশেন্ট এখনো ঠিকই আছে।
এই ধরনের অসংখ্য ঘটনা ও নমুনা এই ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্টরা রেখে গেছে। কিন্তু সেই একই নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে বিরাট সংখ্যক চিকিৎসক এবং প্রশাসক তারা এই ডাক্তারদের সম্পর্কে অবজ্ঞার ভাব দেখালেন। হাসপাতালে এইচডিইউ সম্পূর্ণ সামলাতেন এই ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট রা। শুধুমাত্র মাঝেমধ্যে ডাক্তার এসে এডভাইসের নিচে সই করতেন। এরা সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা করতেন। কুড়িজনকে নিয়ে এই কোর্স শুরু হয় শেষ পর্যন্ত ১০ জন কোয়ালিফাই করে সাড়ে চার বছরে। এরা পরিপূর্ণ ডাক্তার হয়ে ওঠে। এদের ফাইনাল পরীক্ষাও হল। কিন্তু কি এক অজানা কারণে এদের ডিপ্লোমা অধরা থেকে গেল। এরা যত সহজ ভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বুঝেছিল, তা আশ্চর্যজনক। চলো যাই রোগীর বাড়ি কর্মসূচিও পরিত্যক্ত হলো। আসলে সরকারই বলি কি অসরকার, বাম বলি কি ডান, অতিবাম কি অতিডান, এসব তাত্ত্বিক বিতর্ক মাত্র। যখনই সেটা ক্ষমতা বা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়, তখন প্রতিষ্ঠান তার হাই হেড উচ্চ মাথা বিশিষ্ট একটি পিরামিড আকৃতি কাঠামো গড়ে তোলে। তার পক্ষে তখন ওই আকৃতির বাইরে অন্য কিছু আকৃতি খাপ খায় না। ফলতঃ কোন সরকার বা অসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকৃত জনস্বাস্থ্য কে সামনে আনে না। কারণ সেটা কাঠামো বিরোধী, কাঠামোর বিপ্রতীপ। নিরন্তর প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে চলা, কখনোই প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হওয়া, এক কঠিন পরীক্ষা। এখনো বইয়ের তাক গোছাতে গিয়ে "চলো যাই রোগীর বাড়ি" র ম্যানুয়ালটি ধুলো ঝেড়ে যত্ন করে রেখে দিই। ডক্টরস অ্যাসিস্ট্যান্ট দের কাছে শোনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহজ পাঠ গুলো শুনে শুনে লিখে রাখতাম। কোনও একদিন ছেপে বের করবো এই আশায়। সযত্নে রক্ষা করি। এক গভীর বিশ্বাস নিয়ে যে, কোন ভাবনাই সম্পূর্ণ হারিয়ে যায় না। চিন্তা অবিনাশী। আজও আমার চোখে, চলো যাই রুগীর বাড়ি ও ডক্টরস' অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক।
আরো বিশেষভাবে বলতে গেলে, আজ ডাক্তারি পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে মেধার প্রশ্নটি অনেক পেছনে চলে গেছে। প্রবেশিকা পরীক্ষায় সুযোগ পাওয়া মেধাবির পক্ষে সম্ভব নয়, যদি না লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে আকাশ ফিটজিতে অনুশীলন করা হয়। অর্থাৎ ডাক্তারি পড়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় পুঁজির দৌড়। অতএব আর আমাদের পক্ষে অগ্নিশ্বর মুখোপাধ্যায় বা জীবন ডাক্তার পাওয়া সম্ভব নয়। এই নিদারুন সময়ে জন স্বাস্থ্য আন্দোলন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু যতবারই এই আন্দোলনের সম্ভাবনা জেগে উঠেছে ততবারই তার অপমৃত্যু ঘটেছে। তবুও বিশ্বাস রাখি রাত্রি শাশ্বত হলেও, সূর্যোদয়ও অনন্ত। জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের ভাবনা কোন দিনই সম্পূর্ণ ভাবে শেষ হবে না, ফিরে ফিরে আসবে।