'মহাত্মা' সম্মাননাকে আমরা হিমালয়ের উচ্চতার মানুষের জন্য সংরক্ষণ করে রাখি। কিন্তু মাঠে ঘাটের ধুলোয় গণমানুষের জন্য কাজ করে চলা কর্মীকেও যে 'মহাত্মা' বলা যেতে পারে সেটা আজিজুল হকের জীবনটাকে দেখলে বিশ্বাস করতেই হয়। সব হারানোদের পক্ষ নিয়ে প্রথম বিপ্লবটা আপনি করেছিলেন নিজের জমিদারি বংশের মধ্যে। নিজের বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে জমিজমা বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন নিঃস্ব মানুষদের হাতে। আজিজুল হককে স্মরণ।
বাঙালি ছেলে মেয়ে, কোথাও ফোন করে রিং হবার সময় “আবে ইয়ার, উঠানা, জলদি উঠা” অবশেষে “ওহ্ শীট” বলতে শুনেছি। হোলি, দিওয়ালি, ধনতেরাস, বিয়ের অনুষ্ঠানে মেহেন্দি, রঙ্গোলি, জাঁকিয়ে বসেছে। ভাবুন “কেননা” শব্দটি এখন ব্রাত্য, “কিঁউ কি” সমাদৃত। “মোকাবিলা” শব্দটি এখন “মুকাবলা” হয়ে গেছে। ফলে এদের কাছে ঘটমান বাঙালি খেদা সমস্যাটা স্পর্শ করছেনা। কারণ মূলত নিম্নবর্গের পরিযায়ী শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ছোট খাটো হস্তশিল্পী, দিনমজুর, এরাই ভুক্তভোগী। কর্পোরেট সেক্টরে এটা প্রভাব ফেলে নি।
প্যাকিংবাক্সের কাঠ দিয়ে তৈরি ছোট একটা বাক্স গাড়ির টায়ার কাটা ফিতে কাঁধে ঝুলিয়ে আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে প্রায়ই হেঁকে যেতে দেখি লোকটাকে— জুতো সেলাই…পালিশ…। বেঁটেখাটো, রোদে পোড়া কালচে রোগাটে শরীর, মাথায় হালকা চুল মাঝবয়সী লোকটা। বর্ষা, শীত, এমন কী গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে রাস্তা যখন সুনসান, রোদ মাথায় নিয়ে হেঁকে যায় সে— জুতো সেলাই... পালিশ...৷
ফ্যাসিবাদ হল, “সমস্ত ধরণের বিমূর্ত, যুক্তিবাদী, অ-ধর্মীয়, এমনকি অস্বাভাবিক উদারতাবাদ ও যথেষ্ট মাত্রার বস্তুবাদী ফ্রি-ম্যাসন সৌভ্রাতৃত্ব ইত্যাদির সমস্ত ধরণ ও ব্যবস্থার” ঘোষিত জাতশত্রু। এখানে আমরা দেখি যে ছদ্মবেশ ছিন্ন করে আধ্যাত্মিকতাবাদ তার আসল চেহারায় প্রকাশিত হয়ে দাঁড়ায়। ফ্যাসিবাদ রিলিজিয়াস; তাই সে যুক্তিবাদকে বিপদ হিসেবে আর উদারতাবাদকে অনাসৃষ্টি বলে ঘোষণা করে। এই কথাগুলো লিখেছিলেন এম এন রায় ১৯৩৮ সালে। আজকের সময়ে ২০২৫ সালে ঐ লেখার অনুবাদ করলেন মলয় তেওয়ারি। আজ দ্বিতীয় অধ্যায়। ধারাবাহিকভাবে এই লেখা প্রকাশিত হবে।
একটি সুস্থ বাস্তুতন্ত্রে (ecosystem), অজগরের মতো শিকারী প্রাণী খাদ্যশৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা তৃণভোজী প্রাণীদের, যেমন হরিণের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদকুলকেও রক্ষা করে। এটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটি অংশ যেখানে দুর্বল বা অসুস্থ প্রাণীগুলি শিকার হয়, যা প্রজাতির সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
এ দেশে মেয়েরা অভিযোগ জানাবার সময় দ্বিতীয়বার ধর্ষিত হয়। এ আমার কথা নয়, বিচারপ্রক্রিয়ার সাহায্য চাইতে আসা জিয়ন্তে-মরা মেয়েদেরই ভাষ্য। পরিসংখ্যান বলছে, এ দেশে মাত্র কুড়ি শতাংশ ধর্ষণের অভিযোগ আইনি পদ্ধতিতে দাখিল হয়, দুই-তৃতীয়াংশ ধর্ষণের ঘটনায় নিগৃহীতা সারাজীবনে হয়তো একজনের কাছে মুখ খোলেন, আর বাকি অন্ধকার জুড়ে থাকে অবিচ্ছিন্ন স্তব্ধতা।
"Why do you need to speak in Bengali?" এই প্রশ্নটির মুখোমুখি আমিও হয়েছিলাম কয়েকমাস আগে। এক নেপালী ছাত্রের বক্তব্য ছিল—এটা ভারত। রাষ্ট্রভাষা হিন্দী। তোমরা বাংলাদেশিদের মতো বাংলা বলো কেন? হিন্দী আমাদের রাষ্ট্রভাষা নয়, তা অধিকাংশ মানুষই জানে না। একটা মিথ্যেকে সত্যি মেনে, ভুল ধারণাকে পাশবালিশ করে জড়িয়ে আমরা বেঁচে আছি নির্বিকারভাবে।
পলাশির যুদ্ধ ১৭৫৭ তে। এই যুদ্ধে পরাজিত হোন নবাব সিরাজ দৌলা। এই যুদ্ধের মেন খল নায়ক লর্ড ক্লাইভ। যাদের নিয়ে চক্রান্ত করেছিলেন। তারা হলেন মীরজাফর, ঘসেটি বেগম, জগৎ শেঠ, ইয়ার লতিফ, উমিচাঁদ।
ধর্মনিরপেক্ষ শব্দকে মুছে ফেললে ভারতবর্ষ মহাতীর্থের রূপ ভেঙে পড়ে কেবল ভারত হয়ে থেকে যাবে। সেটা আমাদের কাছে কোনো ভাবেই কাম্য নয়। ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ নীতি অনুসারে ভারতবর্ষে ব্যক্তিমালিকানা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত। মিশ্র অর্থনীতির মধ্যে দিয়েই সরকারি উদ্যোগের প্রসার এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছিলেন এক সময়ের রাষ্ট্রনায়করা। আজকে এই দুটো শব্দ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ কি এত সহজে মুছে ফেলা যায়?
ধর্মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট না। রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি, বিজেপি এবং তার চালিকাশক্তি আরএসএস'এর নেতা-কর্মীরা যেভাবে দিনের পর দিন রাজ্যজুড়ে তথা দেশজুড়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি অনুশীলন করছে, তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ প্রয়োজন। সেই লড়াইটা কীভাবে হবে ?
ধর্মের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট না। রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি, বিজেপি এবং তার চালিকাশক্তি আরএসএস'এর নেতা-কর্মীরা যেভাবে দিনের পর দিন রাজ্যজুড়ে তথা দেশজুড়ে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি অনুশীলন করছে, তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ প্রয়োজন। সেই লড়াইটা কীভাবে হবে ?
ধর্মনিরপেক্ষ শব্দকে মুছে ফেললে ভারতবর্ষ মহাতীর্থের রূপ ভেঙে পড়ে কেবল ভারত হয়ে থেকে যাবে। সেটা আমাদের কাছে কোনো ভাবেই কাম্য নয়। ‘গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র’ নীতি অনুসারে ভারতবর্ষে ব্যক্তিমালিকানা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত। মিশ্র অর্থনীতির মধ্যে দিয়েই সরকারি উদ্যোগের প্রসার এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে চেয়েছিলেন এক সময়ের রাষ্ট্রনায়করা। আজকে এই দুটো শব্দ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ কি এত সহজে মুছে ফেলা যায়?
৯ জুলাইয়ের সাধারণ ধর্মঘট আদতে একচেটিয়া লগ্নি পুঁজি নিয়ন্ত্রিত বৃহৎ পুঁজিপতি ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সকল অংশের জনগণের। এই সাধারণ ধর্মঘট নিজেকে বাঁচানোর, নিজের পরিবারকে বাঁচানোর, সন্তানদের স্থায়ী ভবিষ্যত সুনিশ্চিতিকরণের লক্ষ্যে। এটি এই মুহূর্তে ব্রাহ্মণ্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী হিংস্রতার কবল থেকে দেশকে বাঁচানোর স্বার্থের প্রকৃত জাতীয়তাবাদী, দেশপ্রেমিক কর্মসূচির ডাক; শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসাদার, ছোট পুঁজিপতি ইত্যাদি ব্যাপক অংশের জনগণের।
"একটু দাঁড়িয়ে যাবেন সুবোধদা, আজ গাড়ি আনা হয়নি। সারাতে দিয়েছি। ভাবছি আপনার বাইকেই আমাদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবো।" সাধারণত এমআর বা মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সামনে ডাক্তারবাবুরা বেশ গম্ভীর হয়েই থাকেন।
গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজন, এক্স - আর কেবল কর্পোরেশন নেই। এগুলি মনোযোগ আকর্ষণের পরিকাঠামো। আমরা যে প্রতিটি ক্লিক বা টাচ করি, একটি ছবির উপর চোখ থামিয়ে বুড়ো আঙুলের বিরতি নিই, অনুসন্ধান বাক্সে আমরা যে প্রতিটি প্রশ্ন টাইপ করি - এগুলি এই পরিকাঠামোতে কোনো অলস অঙ্গভঙ্গি হিসাবে গণ্য করা হয় না। এগুলি হল নতুন অর্থনীতির অবৈতনিক শ্রম। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলি কেবল আমাদের বিনোদিত করে না; তারা আমাদের অধ্যয়ন করে, খনন করে, আমাদের অনুকরণ করে। আর এটি করার মাধ্যমে, তারা একটি নতুন ধরণের উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি করে যা অদৃশ্য কিন্তু বিশাল।
অনুমান করা যায়, তারা কার্তিক মহারাজ, রাম রহিমদের মত ধর্ষকদের নিজের বাবার আসনে বসায়। তাই ধর্ষকদের দিয়ে তারা নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালায়। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে মেয়েরা, ক্যুয়াররা কথা বললে তাই এদের গাত্রদাহ হয়। যারা আদর্শগতভাবে নারী ও কুকুরকে সমার্থক ভাবে, যারা নারীদের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে চায়— সেই বিজেপি, আরএসএস-এর ধর্ষণের ঘটনার বিরোধিতা আসলে নিপীড়িতদের অভিজ্ঞতাকে ভোটের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টার বাইরে কিছুই নয়।