পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আসল পুরস্কার, জনগণের ঘৃণা

  • 01 January, 1970
  • 0 Comment(s)
  • 207 view(s)
  • লিখেছেন : শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ
বাংলা ভাষায় পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, ফরাসী কিম্বা ইংরেজি প্রভাবের বিরুদ্ধে কিন্তু এঁদের বিপুল বিরোধ ছিলো না। ছিল সেই বাংলার বিরুদ্ধে যাতে তথাকথিত মুসলমানী মিশেল আছে। অর্থাৎ একথা বলা চলে যে আসলে মুসলমানী বাংলা ও হিন্দু বাংলা তৈরীর কাজটাতে এঁরা অগ্রপথিক। তারপরে নানা ঘাট দিয়ে নানা জল বয়েছে। এই বাংলায় আজও বাংলা সরকারি কাজের মাধ্যম হতে পারেনি পরের পর শাসকদের অনিচ্ছায় এবং ব্যর্থতায়।

একেকটা সময় আসে যখন অন্য সময় যাকে কৌতুককর বলে ভাবতাম, হেসে উড়িয়ে দিতাম, তার পরিবর্তে তাকে ভয়ানক এবং বিভৎস রসের বলে মনে হয়। যেমন মনে হচ্ছে বাংলার কিছু সাহিত্যিক, ভাষাবিদদের বাঙালি লাঞ্ছনা, বাঙালি তাড়না নিয়ে মন্তব্যগুলোকে। কেউ বলছেন আসলে বাংলা ভাষা নয়, কিছু শ্রমিকের উপরে আঘাত। কেউ বলছেন অনুপ্রবেশকারীরা আমাদের জনবিন্যাস পাল্টে দিচ্ছে আর শাসক দলের সংখ্যালঘু তোষণের জন্য এমনটা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা লেখা খুব প্রয়োজন বলে বোধ করছি।

সবার আগে বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রসঙ্গে আসা দরকার বোধহয়। বাঙালি একটি মিশ্রজনজাতি। বাঙালির রক্তে নিগ্রোবটু, আদি অস্ট্রাল, নর্ডিক, মঙ্গোলয়েড ইত্যাদিরা মিশে আছে। আদি অস্ট্রালরাই একদা বৃহৎসংখ্যক ছিল বলে বাংলায় দেশী শব্দ বলে যা পরিচিত তা বেশীরভাগই তাঁদের ভাষার শব্দ। কালে কালে আদি অস্ট্রালদের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরীয় জনগোষ্ঠী বা দ্রাবিড়দের মিলনের ফলে বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বনিয়াদ সৃষ্টি হয়।

তারপরে আসে নর্ডিকদের মধ্যকার সেই অংশটা যারা বেদ-পুরাণাদিতে ব্রাত্য বলে পরিচিত। বৌদ্ধধর্মগ্রন্থ বলেছিল বঙ্গদেশে বসবাসকারী তথাকথিত আর্যরা অসুর। আবার মহাভারত ও অন্যান্য পুরাণেও আছে অসুররাজা বলির ক্ষেত্রজ সন্তানেরা বঙ্গভূমির। বলা চলে আলপীয় জনগোষ্ঠীর উত্তর-পশ্চিমে আগত শাখাদের মধ্যকার ভিন্ন ভাষাভাষী অংশটা এখানে এসেছিল। মিশে গিয়েছিল আদি অস্ট্রাল এবং দ্রাবিড়িয়দের সঙ্গে। তথাকথিত রক্তের বিশুদ্ধতা থাকেনি।

অনুমান করা হয় একেবারে শুরুতে বাংলার সামাজিক সংগঠন ছিল কয়েকটি গোষ্ঠী নিয়ে তৈরী একেকটি কৌমের সমষ্টি, যাঁদের অন্যতম পুণ্ড এবং কর্কট। তাঁরা পরে পোদ এবং কৈবর্ত নামে পরিচিত হবেন। বাগদি, হাড়ি, ডোম, বাউড়ি প্রভৃতি কৌমভিত্তিক জাতি ছিল। বাগদিরাই ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি। পালযুগে জাতিভেদের কড়াকড়ি ছিল না বলে এঁরা সসম্মানে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তা নষ্ট হল দক্ষিণের কর্ণাট থেকে আগত সেনদের রাজত্বে। তারা উত্তরভারতের জাতিপ্রথাকে ততদিনে আপন করে নিয়েছে। বল্লালী বর্ণপ্রথা শুরু হল। কনৌজ থেকে ব্রাহ্মণ, কায়স্থদের আনালো এরা। বাংলার পূর্বকার জাতিদের সম্মান নষ্ট করে নীচু জাত করে দিল। এই বিষ আজও রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আপাতত এখানে থেমে চলে আসি আরেকটি প্রসঙ্গে। বাংলা ভাষার প্রসঙ্গে। এই সব নানা কৌম এবং নানা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মিলনের ফলে তৈরী হয়েছে বাংলা ভাষা। আগেই বলেছি বেশীরভাগ দেশী শব্দই আদি অস্ট্রাল। অন্যান্য নরগোষ্ঠীর শব্দও মিলেছে-মিশেছে। আর লক্ষ্যণীয় বাংলার আপাতত আদি নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সংগৃহিত চর্যাপদগুলিকে দশম সাধারণাব্দ থেকে দ্বাদশ সাধারণাব্দর মধ্যে রচিত বলে ধরা হয়। আবার একাদশ, দ্বাদশে সেনেরা শাসন করছে বাংলার নানা অংশ।

কিন্তু তারপরেও বাংলা রাজভাষা হয়নি। সে মর্যাদা পেয়েছে উত্তর ভারত থেকে আগত সংস্কৃত। বহু বহুকাল সংস্কৃত পণ্ডিতেরা দখল করে রেখেছিলেন রাজসভাগুলিকে। যাবতীয় রচনা তাঁদের সংস্কৃতে রচিত। কাব্য থেকে শাস্ত্র সবই। অর্থাৎ বৌদ্ধরা যে সহজে বাংলাকে গ্রহণ করেছিলেন, তাকে অপাংক্তেয় রেখে, সংস্কৃতকেই ধর্মের কারণে প্রধান করে তুলেছিলেন তাঁরা। তার ফলে বাংলাকে দুয়োরাণী হয়েই থাকতে হয়েছে।

এরমধ্যে ইসলামের আগমন ঘটলো এদেশে। সেই আগমনের ফলে বাংলা ভাষার ভাণ্ডারে আরবী-ফার্সী-তুর্কী-আফঘানি শব্দাদিও যুক্ত হতে থাকল। বিশেষ করে ফার্সী প্রধান দরবারি ভাষার ভূমিকা গ্রহণ করায় পণ্ডিতদের মধ্যে ফার্সী শেখার ঢল নামলো। বাংলাভাষায় ততদিনে পদাবলী, মঙ্গলকাব্য, পাঁচালি, রামায়ণ ইত্যাদি প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। যদিও রামায়ণ বাংলায় ভাবানুবাদ করার জন্য কৃত্তিবাস ওঝার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন ব্রাহ্মণ কিছু সংস্কৃত পণ্ডিতেরা। যাই হোক, এরপরেও বাংলা প্রধান ভাষার মর্যাদা পায়নি।

সে মর্যাদা ইংরেজ শাসনেও জুটলো না। ইংরেজরা ভারত বলে একটা রাষ্ট্র গড়ে তুললো ক্রমে ক্রমে। কলকাতাকে রাজধানী করল। কিন্তু রাজভাষা ইংরেজিই রইল। ফার্সীর দিন গেল। সংস্কৃত কোনোকালেই কথ্যরূপে প্রচলিত ছিল না আর। যা ছিল তা হলো তথাকথিত প্রাচ্যবিদদের হিন্দুত্ব আবিষ্কার অভিযানের সহায়করূপ। আসলে ব্রিটিশরা একদা রোমশাসিত ছিল। তারা যে সাম্রাজ্য গড়লো তা রোমের চেয়েও বিস্তৃত হলো বটে, কিন্তু বংশমর্যাদা কিঞ্চিত কম হচ্ছিল। জার্মানদেরও তাই। উভয়েই প্রাচীনকালে এদেশাগত ইন্দো ইউরোপিয়ানদের উত্তরসূরীরূপে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সে আমলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে। কারণ বেদের মতন প্রাচীন সৃষ্টি তাদের ছিলো না। আর বিশেষ করে ব্রিটিশদের জন্য দরকার ছিলো এইটা প্রতিষ্ঠা করা, যে একদা যে সুসময় (সেও তৈরী করা তাদের) ছিল তথাকথিত আর্যদের নেতৃত্বে তা তারা ফিরিয়ে আনছে।

এইটি খুবই আনন্দের বিষয় হয়ে উঠলো বাঙালী হিন্দুর সেই অংশের কাছে যারা এতদিন মুসলমান রাজত্বে তাদের সেবা করছিলো। সেই অংশটাই এবারে মুসলমান বিদ্বেষকে দৃঢ়ভাবে দেখাতে শুরু করলো আর ইংরেজ রাজত্বের অন্ধভক্তে পরিণত হলো। সঙ্গে যুক্ত হলো ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পক্ষ থেকে একদিকে বাংলাকে সংস্কৃতায়িত করার প্রবল প্রচেষ্টা এবং অন্যদিকে হিন্দিকে মান্য ভাষা রূপে উর্দুর পরিবর্তে উপস্থিত করা। এই প্রচেষ্টায় সানন্দে বাংলার সাহিত্যিক, ভাষাতত্ত্ববিদদের এক অংশ যোগ দিলেন। জয়গোপাল তর্কালঙ্কারের মত লোকেরা বাংলাকে আরবি-ফার্সি মুক্ত করার এবং সংস্কৃতায়িত করার কাজে প্রবল উদ্যোগী হলেন। যথেচ্ছ সংশোধন করলেন চণ্ডীমঙ্গল কাব্য, কৃত্তিবাসী রামায়ণ ও কাশীদাসী মহাভারতের। তাঁর ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরের কঠিন ভাষার ছাপ একদা বঙ্কিমে গিয়েও পড়লো। বিদ্যাসাগরের হিন্দুত্বের প্রবল অনুপ্রেরণা না-থাকলেও জয়গোপাল বা বঙ্কিমের ছিল। বাংলা ভাষা তার ফলে বাঙালি হিন্দুর ভাষা হয়ে গেল। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানের থেকে ঢের দূরে সরে গেল।

দেখার বিষয় বাংলা ভাষায় পর্তুগীজ, ওলন্দাজ, ফরাসী কিম্বা ইংরেজি প্রভাবের বিরুদ্ধে কিন্তু এঁদের বিপুল বিরোধ ছিলো না। ছিল সেই বাংলার বিরুদ্ধে যাতে তথাকথিত মুসলমানী মিশেল আছে। অর্থাৎ একথা বলা চলে যে আসলে মুসলমানী বাংলা ও হিন্দু বাংলা তৈরীর কাজটাতে এঁরা অগ্রপথিক। তারপরে নানা ঘাট দিয়ে নানা জল বয়েছে। এই বাংলায় আজও বাংলা সরকারি কাজের মাধ্যম হতে পারেনি পরের পর শাসকদের অনিচ্ছায় এবং ব্যর্থতায়। পূর্ব পাকিস্তান হওয়া বাঙালি অঞ্চলটি যখন বাংলাদেশ হলো মুখ্যত ভাষার প্রশ্নে তখন বাংলা সেখানে সরকারি মর্যাদা পেল।

হ্যাঁ সেখানেও কিছু অংশ চেয়েছে বাংলার মধ্যে আরো বেশী করে আরবী-ফার্সী ইত্যাদি শব্দ প্রবেশ করিয়ে এপারের মান্য করে তোলা নবদ্বীপ-শান্তিপুর-কলকাতার সংস্কৃতায়িত বাংলার বিপক্ষে দাঁড়াতে। তার যথাযথ সমালোচনাও করা উচিত। কিন্তু ভাষা তো সাধারণের। যদি কোথাও বাড়াবাড়ি হয়ে থাকে তাহলে তা সাধারণই বরদাস্ত করবেন না। যেমন এখানে বঙ্কিমি বাংলা আজ আর চলে না। বেশীরভাগ লোকে তার অর্থও বোঝেন না।

এইসবই বাংলা ভাষার ভিত্তি, যাকে বিজেপির লোকেরা নেই বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে। বিজেপি-র পুলিশ বলছে বাংলাদেশী ভাষা। দীর্ঘদিন ধরে গোবলয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুপ্রবেশকারী আর বাংলাদেশী এবং বাংলাভাষাকে সমার্থক করে তোলা হয়েছে। তার একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে। একটা কেন, একাধিক উদ্দেশ্য আছে।

তথাকথিত ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলোতে অর্থনীতির হাল কেমন? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পেটের খাবার, মাথার ছাদ কোনদিক দিয়ে তারা এগোচ্ছে? এগোতে পারছে না। মন্দির রাজনীতি আর মূর্তি রাজনীতি দিয়ে এগুলো হয় না। নীতিবোধ সম্পূর্ণ ধ্বস্ত যে তা সেখানে সংঘটিত প্রতিদিনের চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ থেকে বোঝা যাচ্ছে। দুর্নীতির তুঙ্গে অবস্থান করছে এই দলটি এবং তার নেতারা। অথচ তারা বড় বড় সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ক্ষমতায় থাকছে ভোটকে প্রহসনে পরিণত করে দিয়ে। এই অবস্থায় তাদের দরকার এক শত্রু যাদের বিরুদ্ধে মানুষের মনকে বিষিয়ে তুলে মত্ত করিয়ে রাখা যাবে। সেই শত্রু এখন বাংলাদেশী আর রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গারা রোহিঙ্গা ভাষায় কথা বলেন। তাঁরা মায়ানমার সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে উদ্বাস্তু হয়ে এসেছেন প্রথমে বাংলাদেশে। তাঁদের কেউ কেউ অবশ্যই ভারতে প্রবেশ করেছেন বা করার চেষ্টা করছেন স্রেফ জীবন্ত থাকার চেষ্টায়। যে কোনো উদ্বাস্তুর ক্ষেত্রে যে কোনো দেশে এটাই নিয়ম। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কত? নয় লাখ এসেছিলেন বাংলাদেশে। তারমধ্যে কতজন ভারতে আসতে পারেন বলে মনে হয়? শুধু উত্তরপ্রদেশের জনসংখ্যাই আনুমানিক চব্বিশ কোটি দশ লক্ষ। আনুমানিক কারণ কেন্দ্র সরকার নানা ভয়ে দেশে জনগণনা হতে দিচ্ছে না বহুদিন। তো নয় লাখের এক লাখও যদি গোবলয়ে ছড়ায় তাতে সিন্ধুতে ক'বিন্দু যোগ হয় যে তারা সব কাজ, খাবার, বাসস্থান কেড়ে নেবে সেখানকার অধিবাসীদের? বাংলাদেশী মানুষেরাও জীবিকার সন্ধানে এখানে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সংখ্যাই বা কত যে তারা সবকিছু কেড়ে নেবে ওখান থেকে?

আসলে সংখ্যাও প্রশ্ন নয়, বিষয়টা হলো বাংলাদেশের মানুষ মানেই মুসলমান এবং রোহিঙ্গারাও মুসলমান, অতএব দুই-ই এক, এমন একটা ইক্যুয়েশন খাড়া করা হচ্ছে। বাংলাদেশী হিন্দুরাও এদেশে আসেন, অনেক সময়, জীবিকার সুবিধের জন্য, অনেক সময় অত্যাচারের মুখেও। তাঁদের কথা কিন্তু বলা হচ্ছে না। অথচ ঐ সব রাজ্যের পুলিশ যখন গ্রেপ্তার করছে বাঙালী শ্রমজীবী প্রবাসীদের তারা হিন্দু-মুসলমান দেখছে না। তারা দেখছে শুধু বাংলা বলছে মানেই বাংলাদেশী অথবা রোহিঙ্গা। তারা তাদের আইনী অধিকারের বাইরে গিয়ে এই সব মানুষদের উকিলের সহায়তা না নিতে দিয়ে, কোর্টে না যেতে দিয়ে, ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে বা দুই দেশের মধ্যবর্তী নো-ম্যান্‌স ল্যান্ডে।

কিন্তু এখানকার কতিপয় সাহিত্যিক আর ভাষাবিদ মনে করছেন এ বাংলার উপর আক্রমণ নয়। কেন মনে করছেন? কারণ এঁরা যে শ্রেণীর অংশ সেই শ্রেণীটি এখনো সরাসরি আক্রান্ত হয়নি। যদিও কোন মাসে কী খাবে তা নিয়ে গোবলয়ে হুলিয়া জারী হচ্ছে বারংবার। এরপরে কেমন পোশাক পরবে বা কোন ভাষায় কথা বলবে তা নিয়েও হবে তাতে সন্দেহ নেই। তবুও এখনো তো সরাসরি বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে না। অতএব ভাষাবিদের মতে শুধুই শ্রমিকদের উপর আক্রমণ। অন্যান্য রাজ্য থেকেও গোবলয়ে প্রবাসী শ্রমিকরা কাজ করেন। তাঁদের কেন আক্রমণ করছে না? উত্তর দিতে পারবেন না। কারণ তিনি আসলে ভাবেন এগুলো করা হচ্ছে তৃণমূলকে নির্বাচনে সুবিধে দিতে। বুঝতে পারি না, অন্ধ-বিদ্বেষে ওঁর মাথা খারাপ হয়েছে, যে দলের নীতি মানেন তাঁদের মাথা খারাপ হয়েছে, নাকি বিজেপি-র মাথা খারাপ হয়েছে যে নির্বাচনে জয় নিজে না নিয়ে অন্যকে দেবে? কোথাও দিয়েছে? আর আপনি কেমন ভাষাবিদ, যাঁর ভাষা আক্রান্ত হলে বোধেও আসে না?

সাহিত্যিকরা আবার দেখতেই পাচ্ছেন না যে এমনটা হচ্ছে। দেখলে বলছেন ওরা বাংলাদেশী বলে তাড়াচ্ছে। বাঙালি মুসলমান শ্রমিক, হিন্দু মুসলমান শ্রমিক লিখতেও লজ্জা করে। তবু লিখতে বাধ্য হচ্ছি কথার খাতিরে। এই যে হিন্দু প্রবাসী শ্রমিকদের ধরছে বাংলা বলার জন্য, ঐ বিজেপি-র নেতা শান্তনু ঠাকুরের মতুয়া কার্ডকেও উড়িয়ে দিচ্ছে দেখতে পাচ্ছেন না? কতটা অর্থ-পুরস্কার ইত্যাদি লোভের বশ হয়েছেন যে এতো অন্ধ হলেন? অথবা আপনাদেরও শাসকদলের প্রতি বিদ্বেষ এতো তীব্র যে অন্ধ সাজতে হচ্ছে?

আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদি নথিই নয় নাগরিকত্ব প্রমাণের! তাহলে এসব কার্ড বানানো হয়েছিল কেন, এখনো চালু রাখা হচ্ছে কেন? স্কুলে কতজন দরিদ্র মানুষ যেতে পারেন যে সেখানকার সার্টিফিকেট থাকবে? দেশে এখনো শিক্ষার হাল কেমন যে সকলেই জানবে জন্মালেই বার্থ সার্টিফিকেট লাগে? আর বার্থ সার্টিফিকেট আবশ্যকীয় তো হোলো এই কিছু বছর আগে। তাছাড়া জানেন গরীব মানুষ থাকেন কেমন করে? বৃষ্টি, বন্যা, পোকামাকড়, ইঁদুর ইত্যাদি থেকে তাঁদের পক্ষে কাগজপত্র রক্ষা করা কতটা অসম্ভব জানেন? আপনারা সাহিত্যিক, জীবন জানেন না? না জানলে আপনাদের সাহিত্য কার কাজে লাগবে? অথবা আপনারাই অধুনাতন জয়গোপাল বা বঙ্কিম যাঁরা একচোখে দেখেন সবকিছু। আপনারা নানা মতে নানা পথে দিল্লীর দালাল মাত্র। আপনাদের জন্য শুধু অপেক্ষা করে আছে আসল পুরস্কার, জনগণের ঘৃণা!

 

0 Comments

Post Comment