পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

বাঁচব আমরা?... বাঁচবে আমাদের এই দেশ?

  • 13 April, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 998 view(s)
  • লিখেছেন : আজমল হুসেন
আর এস এসের ছুটির তালিকায় বড়দিনের, ঈদের বা মহরমের ছুটি থাকার কথা নয়, তাদের হিন্দু রাষ্ট্রে তো এটাই কাম্য। কিন্তু আমরা কজন জানি যে সেই কাঙ্খিত হিন্দু রাষ্ট্রে দোল উৎসব, দুর্গাপূজার সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী কিংবা লক্ষ্মীপুজোর ছুটিও নেই, কেননা সেগুলো আর এস এসের কল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রে হিন্দুদের উৎসব নয়। কী বোঝা গেল বাঙালি? ওরা না হয় মুসলমান, আপনারা তো বাঙালি! আর এস এসের রাজনৈতিক মুখ বিজেপি ক্ষমতায় আরেকবার এলে বাঙালির আরও কী কী উৎসব চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তার ইঙ্গিত রয়েছে এই বইয়ের বিভিন্ন ছত্রে, বিশেষ করে আর এস এসের ছুটির তালিকায়।

আমাদের দেশের, আমাদের সমাজের এক বিরাট অংশ এমনকি অনেক তথাকথিত সংস্কৃতিমনস্ক কবি-সাহিত্যিক আর সর্বোপরি আমার প্রিয়জনকে গত ২২ জানুয়ারিতে যেভাবে আনন্দিত-উৎফুল্ল হতে দেখেছি, তাতে আমি শিউরে উঠেছি। যে বাবরি মসজিদ আর রাম মন্দির নিয়ে দশকের পর দশক দাঙ্গা আর মৃত্যু মিছিল, আজ তাকে নিয়ে তথাকথিত সুশীল সমাজে এই নির্লজ্জ উল্লাস! একে ধ্বংসের সন্ধিক্ষণ বলব না তো আর কী বলব? আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি একা নই, এই দেশে ও সমাজে সমমনস্ক আরও অনেকেই সমকালীন কিছু ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন, কিন্তু লাজে-ভয়ে-ত্রাসে তাঁরা গুটিয়ে রয়েছেন। হয়তো তাঁরা ভাবছেন, চুপচাপ আছেন বলেই এখনও আছেন, নাহলে…!   দেশদ্রোহী তকমা পাওয়ার ভয়ে অধিকংশ সংবেদনশীল মানুষ গুটিয়ে রয়েছেন। যেচে পড়ে কেই বা চায় বিনা বিচারে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সুধা ভরদ্বাজ, ভারাভারা রাও, উমর খালিদ, সারজিল ইমাম, বা সেরকম আরও অনেকের মতো দেশদ্রোহী হওয়ার কষ্টকল্পিত অপরাধের অভিযোগে জেলবন্দী হয়ে থাকতে। এইসব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে, সমাজের চোখে ভদ্রলোক হয়ে থাকার হাতছানিকে উপেক্ষা করে হাতে গোনা যে কয়েকজন মানুষ  এই গভীর সঙ্কটের সময়ে কলম ধরতে সাহস করছেন, তেমনই একজন মার্কিন প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক এবং লেখক ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর মতো অতি ব্যতিক্রমী ব্যক্তিদের লাইমলাইটে যাঁদের নিয়ে আসার কথা, তাঁরা হয় ভীত সন্ত্রস্ত, আর না হলে বিরাট ইগোতে আক্রান্ত। তাঁরা চান না এমন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিদের কথা বেশি কেউ জানতে পারুক। মূলস্রোত মিডিয়া  তাঁদের এড়িয়ে চলে, রেডার স্ক্রীনের বাইরে রাখে তাঁদের।

হিন্দুত্ববাদীরা বলেন, তিনি মুসলমানপ্রেমিক, কারণ মুসলিম বিদ্বেষ বা যে কোনো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ঘোর বিরোধী তাঁর কার্যকলাপ। দেশে বিদেশে অগণন মুসলমানের সঙ্গে তাঁর গভীর সখ্য। আর মৌলবাদী মুসলমানরা বলতে পারেন তিনি বড্ড বেশি হিন্দু হিন্দু করেন। কারণ তিনি দুর্গাপুজোতে গিয়ে ছবি তোলেন, ফেসবুকে প্রোফাইল ফটো করেন। পান্নালাল ভট্টাচার্য্যের শ্যামাসংগীত শুনলেও তিনি কাজকর্ম ভুলে দাঁড়িয়ে থাকেন। তার ওপর তিনি আবার দীর্ঘদিনের ছাপ মারা আরএসএস। যদিও বেরিয়ে এসে ‘দানবের পেটে দু দশক’ নামে বই লিখেছেন, তাছাড়া ইংরিজি আসল বইটা - In the Belly of the Beast - তো আছেই, কিন্তু যাঁরা বলবার তাঁরা বলবেই। অথচ তিনি মনে করেন, আরএসএস বিজেপি এবিভিপিতে কৈশোর আর যৌবনের এক দীর্ঘ সময় কাটানো তাঁর জীবনের এক দুঃসহ লজ্জা। তিনি মনে করেন তাঁর লজ্জা বাংলায় থেকে রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ, নজরুল, বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদিকে ভালোবেসেও ওদের সঙ্গে এতগুলো বছর নষ্ট করার লজ্জা। আমেরিকায় দীর্ঘকাল অতিবাহিত করার পথেই লেখকের পরিচয় হয়েছিল নোম চমস্কি, ভিক্টর নাভাস্কি, জেমস ক্যারী এবং আরো কিছু এমন মানুষের সঙ্গে, যাঁরা তাঁর জীবনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন, চোখ খুলে দিয়েছেন বলে তিনি মনে করেন।  এই গতিপথেই বহু বছর কাটিয়েছেন  যথাসাধ্য মানুষকে শেখানো, ভাবানো, বিশ্লেষণ করানোর কাজ করে। এক সময়ে সুযোগ এসেছিলো আমেরিকার মূলস্রোত রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার। তিনি তাতে যোগ দেননি, কারণ মাথার মধ্যে ছিল দেশে একদিন ফিরে এসে এখানেই জীবনের অর্জিত সব জ্ঞান, বুদ্ধি, বিশ্লেষণ অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। দুটি দেশেই মাটিতে পা রেখে চলা, এবং দুটি দেশেরই আর্থসামাজিক বিষয়গুলিকে গভীরভাবে অধ্যয়নের চেষ্টায় এবং সমাজ ও পরিবেশের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকতে গিয়ে লেখকের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার নিরিখেই লেখা ওঁর প্রায় প্রতিটি বই, ঠিক যেমন সদ্য প্রকাশিত  বই ‘ভারত – শেষ ধ্বংসের সন্ধিক্ষণে’ । এই বইয়ের সূচনাটাই অভিনব । পান্ডুলিপি শুরু করার আগে লেখক সার্ভে করেন ফেসবুকে একটা পোষ্টের মাধ্যমে। উদ্দেশ্য ছিল আজকের ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কারা কী ভাবছেন সেটা তুলে ধরা। আর সেই সুত্র ধরেই বিভিন্ন সমকালীন বিষয়ের উপর আলোকপাত করার এক পরিশ্রমী প্রয়াস এই বই।  

পৃথিবী এবং মানবসভ্যতা আজ একেবারেই শেষ ধ্বংসের মুখোমুখি। আধুনিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা যেখানে আজ আমাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হওয়ার কথা ছিল, সেখানে আমরা ক্রমশঃ তলিয়ে যাচ্ছি ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও অশিক্ষার চোরাবালিতে। হিটলারের কায়দায় একটা শত্রুশ্রেণী চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা জার্মানির ইহুদিদের মতোই এখন বলির পাঁঠা। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ ও গরিব ইমিগ্রেন্টরা, ভারতে মুসলমান ও দলিতরা, ব্রাজিলে আমাজন আদিবাসী ও উপজাতিরা এই ‘ওরাই ক্রিমিনাল’ তকমা বহন করে নিয়ে চলেছে। বিশ্লেষণহীন আনুগত্য শুধু পার্টির প্রতি, বা কোনো প্রধানমন্ত্রী বা নেতা-নেত্রীর প্রতিই হয় না। হয় একটা স্থিতাবস্থার ধোঁকাবাজির পক্ষেও। যেখানে গুরুতর সমস্যার কারণগুলো মিডিয়াতে বিশ্লেষণ করা একেবারেই নিষেধ, সেখানে সাধারণ মানুষ শত্রু বলে চিহ্নিত করবে কাকে? ঠিক তেমনই একটা ভয়ঙ্কর স্থিতাবস্থায় রয়েছি আজ আমরা।  লেখকের আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে এই বিষয়টি বারবার এসেছে ।      

আজ আমাদের দেশে  চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে এক ঐতিহাসিক লুন্ঠন। কিন্তু মিডিয়াতে এই বিষয়ে কোনো বিশেষ বিতর্ক নেই, এবং এই ঐতিহাসিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে লড়াই করা কৃষকদের বিজেপি নেতা-নেত্রী ও সমর্থকরা দেশদ্রোহীর তকমা দিচ্ছে।   কীভাবে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে  দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্যতম বিজেপি নিজেকে দুর্নীতি বিরোধী দল হিসেবে জন মানসে প্রতিষ্টিত করে নিল? বিজেপি দুর্নীতি বিরোধী – এই কথাটা যে ডাহা মিথ্যে তার প্রমাণ তো আমরা পেয়েই চলেছি ।   দুর্নীতিকে রীতিমত আইনে পরিণত করেছে বিজেপি। ভুরিভুরি উদাহরণের সর্বশেষ হল ইলেকটরাল বন্ড । ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের অর্থনীতিবিদ  স্বামীর ভাষায়, এই স্ক্যাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। বিজেপির দুর্নীতির এরকম ভুরি ভুরি উদাহরণ ও তার যথাযোগ্য প্রমাণ সহ নথিভুক্ত আছে এই বইতে। আর প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই চোখ বন্ধ করে সব কথা বিশ্বাস না করে তাঁর লেখাকে চ্যালেঞ্জ করতে সকল পাঠককে আহ্বান জানিয়েছেন লেখক।             

আনুষ্ঠানিকভাবে – কিছুটা কাকতালীয়ও বটে - বই প্রকাশের দিনই জনপ্রিয় বিরোধী নেতা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল গ্রেফতার হলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির অন্যতম কাজ প্রতিপক্ষ রাজনীতিবিদদের শায়েস্তা করতে মিথ্যা মামলা দেওয়া। তারই এক উদাহরণ কেজরিওয়াল। বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে এরকম কার্যকলাপ চলতেই থাকবে, এমন ভবিষ্যদ্বাণী লেখক তাঁর এই বইতেই করেছেন। ফ্যাসিবাদকে পুরোপুরি কায়েম করতে আর কী কী করা হবে তার ভয়ঙ্কর উদাহরণগুলো বারবার এসেছে প্রসঙ্গ ক্রমে। এসব বুঝতে হলে জানতে হবে, জানতে হলে পড়তে হবে।    

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) একটা নিছকই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অস্ত্র নয়। CAA, এনআরসির মধ্যে দিয়ে লাখ লাখ নাগরিককে দ্বিতীয় শ্রেণির বাসিন্দা করে তাদের সস্তা শ্রমিক করা হচ্ছে, যাতে করপোরেট পুঁজির সুবিধা হয়। এ যে কারাগার অর্থনীতির এক দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ তা নিয়ে লেখক বারবার বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে সতর্ক করার চেষ্টা করে গেছেন। এই বইটাতেও তার অন্যথা হয়নি। আর এসবের জ্বলন্ত উদাহরণ আসাম তো আমাদের সামনেই রয়েছে। আসামে এনারসির বলি সিংহভাগই বাঙালি হিন্দু, যাঁদেরকে সাম্প্রদায়িকতার বিষটা এমনভাবেই গেলানো হয়েছে যে নিজের পরিবারের লোকজনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পচে মরতে দেখলেও তারা বিজেপিকেই ভোট দেবে । কারণ তাঁদেরকে এই ঘোল খাইয়ে রাখা হয়েছে যে তাঁদের জানা অজানা সকল সমস্যার জন্যই মুসলমানরা দায়ী, আর  মোদিজির নেতৃত্বে বিজেপিই একমাত্র ভরসা।         

ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে ভ্রান্তি ছড়ানোয় আজকের বিজেপি সরকার তথা তথাকথিত সুশীল সমাজের একাংশের তৎপরতার কথা নতুন করে কিছু বলার নেই। এই সেদিনই কংগ্রেসের প্রাক্তনী তথা বর্তমানে বিজেপির ফায়ারব্র্যান্ড নেতা আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন এদেশে থাকতে হলে মাদ্রাসায় না পড়ে ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া উচিৎ। প্রসঙ্গ ক্রমে আমার এক ভাই মাদ্রাসায় পড়ে এখন আসাম সরকারের সফল ইন্জিনিয়ার। আমার মামাও মাদ্রাসায় পড়েছেন অথচ বোধোদয়ের পর থেকেই নাস্তিক, তিনিও জীবনে যথেষ্ট ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত। আমার নিজের দিদিও মাদ্রাসায় পড়েছেন । পরে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে সফল শিক্ষিকা হিসেবে এখন অবসরের দোরগোড়ায় । আর এগুলোর একটাও ব্যতিক্রমী উদাহরণ নয়। লেখক  ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরার এক আন্তরিক প্রয়াস করেছেন একটা অধ্যায়ে। প্রয়োজনে তৃণমূল স্তরে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে তারপর পর্যাপ্ত  গবেষণা করে তবেই নিজের মতামত রেখেছেন।        

আর এস এসের ছুটির তালিকায় বড়দিনের, ঈদের বা মহরমের ছুটি থাকার কথা নয়, তাদের হিন্দু রাষ্ট্রে তো এটাই কাম্য। কিন্তু আমরা কজন জানি যে সেই কাঙ্খিত হিন্দু রাষ্ট্রে দোল উৎসব, দুর্গাপূজার সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী কিংবা লক্ষ্মীপুজোর ছুটিও নেই, কেননা সেগুলো আর এস এসের কল্পিত হিন্দু রাষ্ট্রে হিন্দুদের উৎসব নয়। কী বোঝা গেল বাঙালি? ওরা না হয় মুসলমান, আপনারা তো বাঙালি!  আর এস এসের রাজনৈতিক মুখ বিজেপি ক্ষমতায় আরেকবার এলে বাঙালির আরও কী কী উৎসব চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তার  ইঙ্গিত রয়েছে এই বইয়ের বিভিন্ন ছত্রে, বিশেষ করে আর এস এসের ছুটির তালিকায়।          

হিটলারের শাসনের প্রারম্ভে জার্মানিও কিন্তু এরকমই এক সন্ধিক্ষণে ছিল। ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থেকেও আজকে যেমন ভারতের তথাকথিত শিক্ষিত মহলের এক বিরাট অংশের কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই, জার্মানরাও কিন্তু সর্বনাশের আগে ঠিক এরকমই উদাসীন ছিলেন, এমনকি দীর্ঘকাল হিটলার নিরঙ্কুশ ক্ষমতাও দখল করে রেখেছিলেন। আর ঠিক কোন কোন জায়গায় আজকের ভারত আর ১৯৩৩ সালের সঙ্গে জার্মানির মিল? কী করেই বা আমাদের দেশে আজ ফ্যাসিবাদ এমন মাথাচাড়া দিচ্ছে? আমরা কী সেটা আটকে দিতে সক্ষম? যদি  সক্ষম হয়ে থাকি, আজ আমাদের কী করনীয়? এই বই একজন মুক্তমনা ও একনিষ্ঠ পাঠককে এরকম বহু প্রশ্নের মুখোমুখি এনে দাঁড় করায়।   

আমাদের দেশের অন্নদাতা কৃষকরাও কি দেশদ্রোহী? তাই যদি হয় তাহলে দেশপ্রেমিক কারা? দেশে বিদেশে দ্বেষ বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশ ও সমাজকে ধ্বংসের মুখোমুখি কারা দাঁড় করাচ্ছে? কেন অন্য সবার সঙ্গে তথাকথিত সুশীল সমাজেরও মোদীর প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য?  কী কী সর্বনাশ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, আর কী কী সর্বনাশ হতে পারে ২০২৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে? ধ্বংসের এই সন্ধিক্ষণে সচেতন এবং সংবেদনশীল নাগরিক সমাজের কী করনীয়? সবকিছুরই তথ্যসমৃদ্ধ এবং নীতিনিষ্ঠ আলোচনা রয়েছে ১৪৪ পৃষ্ঠার এই  বইয়ের প্রথম থেকে চতুর্দশ অধ্যায় জুড়ে।  লেখক যে শুধু আশংকার কথাই বলেছেন তা কিন্তু নয়। পরিত্রাণের পথ দেখানোরও এক নিরলস প্রয়াস রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে নানা চার্ট ও তথ্য ব্যবহার করে আসল পরিস্থিতি বর্ণনা করার চেষ্টা করেছেন লেখক। প্রবাদবাক্য হল, ‘এক ছবি একশো কথার চেয়েও বেশি দামী।’   বিজেপি ছাড়াও বিরোধী দলগুলোরও তথ্যনিষ্ঠ সমালোচনা রয়েছে এই বইতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে, তাই যে কোনো দলের কিংবা মতাদর্শের অন্ধ ভক্তদের পক্ষে এই বই পড়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা কিছু অপ্রিয় সত্য তাঁদেরকে নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলবেই, এটা হলফ করে বলা যায়  ।  তবে মুক্তমনা পাঠক নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ হবেন।           

পরিশেষে বলি, আমার এই প্রয়াসকে বইয়ের একটা পূর্ণাঙ্গ রিভিউ বলাটা ভুল হবে, বড়জোর আংশিক পাঠ প্রতিক্রিয়া বলা যায়। তবুও আশা করি এতেও কিছু মুক্তমনা পাঠক বইটা পড়তে আগ্রহী হবেন। এই বই নিয়ে আরও অনেক কথা লেখা যায়, কিন্তু এখানেই থামতে হচ্ছে। তার কারণ আমি চাই পাঠকরা ধৈর্যচ্যুতির আগেই বইটা হাতে নিয়ে পড়ুন, অন্যদেরও পড়ান, নিজেরাই বাকি অংশ বিশ্লেষণ করুন, বিবেচনা করুন আর ভেবে দেখুন তাঁদের এখন কী করণীয় ।    

 

প্রকাশক – অভিযান

যোগাযোগ - ৮০১৭০৯০৬৫৫

বইটা সরাসরি সংগ্রহ করার লিংক

https://www.haritbooks.com/product/bharat-sehe-dhongshe-partha-banerje/

0 Comments

Post Comment