পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ঈদ-উল-আজহা ও কিছু কথা

  • 01 August, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 13902 view(s)
  • লিখেছেন : জাহাঙ্গীর মিঞা
খোদা বা ঈশ্বর কিন্তু কুরবানি হিসেবে পশু ছাড়াও আমার প্রিয় বস্তুটি গ্রহণ করেন। কোরআনে কুরবানি সম্পর্কে আছে- “মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌছায় না, পৌছায় তোমার মনের পবিত্র ইচ্ছা।” যদিও পশু কুরবানির একটা আলাদা গুরুত্ব আছে, বিশেষকরে আর্থিকভাবে গরীব মানুষদের কাছে। তবু আমার মনে হয় আত্মত্যাগই সব চেয়ে বড় কুরবানি । " বরষে এক ঈদ, বারোমাসই বকরীদ' অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মুসলমানের দুই ঈদ—ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা। রমজানের পর ঈদ-উল-ফিতর হয় এবং জিলহজ্জ মাসে হজের সময় হয় ঈদ-উল-আজহা, যাকে বাংলার গ্রামে বলা হয় ‘কুরবানি’। আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসি বা উর্দুতে ‘কুরবানি’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি দেয়। নবি আদম ও বিবি হাওয়ার সময় থেকেই নাকি কুরবানির প্রচলন। এই কথা রয়েছে কোরানের সুরা মায়িদা-য়।

পবিত্র কোরানে আছে, নবি ইব্রাহিম আল্লাহ-কে কতটা ভালবাসেন তার একটা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আল্লাহতালা। আল্লাহ স্বপ্নে ইব্রাহিমকে বললেন- তোমার সব চাইতে প্রিয় জিনিসটি আমাকে উৎসর্গ করো। পর পর তিন রাত ইব্রাহিম একই স্বপ্ন দেখলেন। এমন স্বপ্নসমূহ দেখবার পর তিনি চিন্তা করতে লাগলেন তাঁর সব চাইতে প্রিয় জিনিস কী হতে পারে! তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তাঁরই পুত্র ইসমাইল [ বাইবেলের মতানুযায়ী , ইব্রাহিম-এর অন্য ছেলে ইসহাক (সারা-র পুত্র)-কে কুরবানির জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল।] কারন তাঁকে তিনি তাঁর বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহর অনুগ্রহে পেয়েছিলেন। ফলে ইব্রাহিম তাঁর সন্তান ইসমাইলকে আল্লাহর নামে কুরবানি দিতে উদ্যত হলেন। কোরবানি দেওয়ার পর দেখা গেল ইসমাইলের জায়গায় একটা দুম্বা (মতান্তরে ছাগল) কুরবানি হয়ে পড়ে আছে। এর পর থেকে ইব্রাহিমের অনুসারীরা এই ঘটনার স্মরণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য চান্দ্র মাসের উক্ত দিনে পশু কুরবানি দেওয়া চালু করেন।

ওল্ড টেস্টামেন্টে (ইহুদিদের ধর্মপুস্তক) আদমের বংশধরদের ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে তারা যেন খোদার কাছে নৈবেদ্য উৎসর্গ করে, যাকে ওল্ড টেস্টামেন্টে বলা হয়েছে হোমবলি। সেই সময় পুত্রবলির রেওয়াজ ছিল আরবে। ভারতেও ছিল, সোমক রাজা শত পুত্রের লোভে তাঁর একমাত্র পুত্র জন্তুকে আহূতি দেন। এটাকেও বলা যেতেই পারে 'পশু কুরবানি' যা পুত্রবলি বা নরবলিকে রুখে দিয়েছিল।

এখন প্রশ্ন হলো :

১.

কুরবানি কি বাধ্যতামুলক ? এ বিষয়ে মুসলিমদের মাঝে দু‘টো মত রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে বাধ্যতামুলক মনে করেন [ ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানি কর ।’ - সূরা কাওসার ] তবে অনেকের সুর ভিন্ন [‘তোমাদের মাঝে যে কুরবানি করতে চায়, জিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানি সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নাখ না কাটে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৭৭)।] তাঁদের যুক্তি ‘যে কুরবানি করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝা যায় এটা ওয়াজিব (বাধ্যতামুলক) নয়।

২.

কুরবানির সময় সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে (সৎ বা অসৎ যে কোন ভাবে উপার্জিত পয়সায়) পশু যোগাড়ের ধূম পড়ে যায়। প্রতিযোগিতা চলে কে কত বেশি দামের পশু কুরবানি দেবে। মাঝে মধ্যে এটা নিয়ে পত্রিকায়ও কিছু কিছু খবর প্রকাশ করা হয়। কেউ আবার উট বা দুম্বা কুরবানি দেয়। উট হলো আরব দেশের জন্তু। ইসলামের জন্মও আরব দেশে। তাই কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে- উট কুরবানিতে বেশি নেকি (পুণ্য)।

আরজ আলী মাতুব্বর বেশ দারুন কথা বলেছেন - আল্লাহ ইব্রাহীমকে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু করতে আদেশ দিয়েছিলেন স্বপ্নে, বাস্তবে নয়। মনোবিজ্ঞান, ধর্ম, জ্যোতিশাস্ত্র সহ সকল শাস্ত্র বলে স্বপ্ন হলো রূপক বিশেষ। আর ইব্রাহিমের বেলায় সে রূপকটির অর্থ ছিল তিনি আল্লাহকে কতটা ভালবাসেন তা পরীক্ষা করা। তিনি সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমানে যারা কুরবানি করেন তাদের কি আদৌ আল্লাহর প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়? বিশেষ করে সে পশুটা যদি হয় আগের দিন হাট থেকে কেনা ?

Like our Facebook Page

অনেকেই শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পের মহেশ নামক গরুটির কথা জানেন। গ্রামে গ্রামে এখনও এরকম বহু মহেশের দেখা পাওয়া যাবে। এ ধরনের অতি আদরের পশুটাকে জবাই করা বরং উত্তম কুরবানি কারণ তখন সত্যি সত্যি একটা প্রিয় জিনিসকে আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হচ্ছে।

৩.

খোদা বা ঈশ্বর কিন্তু কুরবানি হিসেবে পশু ছাড়াও আমার প্রিয় বস্তুটি গ্রহণ করেন।

কোরআনে কুরবানি সম্পর্কে আছে-

“মাংস বা রক্ত কোনটাই আল্লাহর কাছে পৌছায় না, পৌছায় তোমার মনের পবিত্র ইচ্ছা।”

যদিও পশু কুরবানির একটা আলাদা গুরুত্ব আছে, বিশেষকরে আর্থিকভাবে গরীব মানুষদের কাছে। তবু আমার মনে হয় আত্মত্যাগই সব চেয়ে বড় কুরবানি ।

বকরীদের শুভেচ্ছা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তুলিতে।

0 Comments

Post Comment