সেই একজন বুঝলো জলপাই। "জলপাই এখন কোথায় পাবেন ? এ ত জলপাইয়ের সময় নয় । কাঁচা আম নিতে চান দিতে পারি‒।" পথিক বললো, আপনি ভুল বুঝেছেন‒ আমি জল চাচ্ছিলাম‒
π} হ্যাঁ, তখন লোকটা পথিককে বলল, জল চাচ্ছেন তো 'জল' বললেই হয়, 'জলপাই' বলবার দরকার কি ? জল আর জলপাই কি এক হল ? আলু আর আলুবোখরা কি সমান ? তো কি? অবাক জলপান বলতে শুরু করেছো কেন।
∆ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। শোনোই না। এরপর এক বৃদ্ধের প্রবেশ। বললো, কে গো ? গোপাল নাকি ? আজ্ঞে না, আমি পুবগাঁয়ের লোক‒ একটু জলের খোঁজ কচ্ছিলুম। বল কিহে ? পুবগাঁও ছেড়ে এখেনে এয়েছ জলের খোঁজ করতে ? ‒ হাঃ, হাঃ, হাঃ ।
π} হ্যাঁ জানি। সে তখন শোনালো খাসা জল, তোফা জল, চমৎকা-র-র জল। বলি ঘুমড়ি জল খেয়েছো কোনোদিন? ...... তুমি কি এখন সম্পূর্ণ নাটকটা শোনাবে?
∆ আরে না না শোনোই না। এরপর এক বৃদ্ধের প্রবেশ। আমি জল চাইছিলুম, তা উনি সে কথা কানেই নেন না- রেগে মেগে অস্থির ! - জলের কথা বলতেই কুয়োর জল, নদীর জল, পুকুরের জল, কলের জল, মামাবাড়ির জল, ব'লে ফর্দ শুনিয়ে দিলে। বৃদ্ধ বললো হুঁঃ ‒ ভারি ত ফর্দ করেছেন। ও যদি পাঁচটা জল বলে থাকে, তো আমি এক্ষুনি পঁচিশটা বলে দেবো। আচ্ছা শুনে যাও । বিষ্টির জল, ডাবের জল, নাকের জল, চোখের জল, জিবের জল, হুঁকোর জল, ফটিক জল, রোদে ঘেমে জ-ল, আহ্লাদে গলে জ‒ল, গায়ের রক্ত জ‒ল, ....... ।
π) ধ্যুত্তোর! সেই একই গল্প। সেই ছোটবেলায় ক্লাস ফাইভে পড়া কিশলয়ের গল্প। বিরক্তিকর।
∆ জানি। কিন্তু আমার বিরক্তি লাগছিল না। আমার নিজের আজ পথিকের দশা। একটু নিউজ শুনবো বলে টিভি ছাড়লাম। শুনলাম এখন অজস্র নিউজ চ্যানেল। তাই ভাবলাম সহজেই কোনো একটা নিউজ চ্যানেলে নিউজ শুনতে পাবো। সেই আগের মত দেবরাজ রায়, ছন্দা সেন খবর পড়বেন........ "আজকের বিশেষ বিশেষ খবর হলো"। বিশ্বাস করো একের পর এক নিউজ চ্যানেল সাফল করলাম। কিন্তু কোথাও নিউজ পেলাম না। সর্বত্র নিউজের পোস্টমর্টেম এবং সেই পোস্টমর্টেম রিপোর্টের ওপর কত না তর্কবিতর্ক ঝগড়া। কিন্তু আমার সমস্যা হল, আমি চাইছিলাম সংবাদ শুনতে। এই ৭০ বছর বয়সের দোর গোড়ায় পৌঁছে অপরের কাটা ছেঁড়া করা, চিবিয়ে দেওয়া খাবার খেতে মন চায় না। এখন একটা সংবাদ শুনে নিজের বোধ বুদ্ধি অভিজ্ঞতা দিয়ে সেটাকে আমার মত করে বুঝতে চাই। কিন্তু সে হবার জো নেই। সেই অবাক জলপানের পথিকের মত এ বলে ও ব্যাটা জানে কি, সে বলে এগিয়ে থাকে এগিয়ে রাখে। তো আর একজন বলে বাংলার মুখ বাঙালির ভবিষ্যৎ। কোথাও নিখাদ সংবাদ পরিবেশন নেই। মশাই একটু জল পাই কোথায়?
π) শোনো। ভালো ভালো সঞ্চালক কিছু ইন্টারভিউ নেন। সেগুলো দেখতে পারো। সেখানে অন্তত কলতলার ঝগড়া নেই। ইউটিউবাররা এরকম বেশ কিছু কুস্তি আলোচনা ছাড়াই সাক্ষাৎকার ধর্মী বিশ্লেষণ করে থাকেন। টিভিতেও এমন কিছু সাক্ষাৎকার হয়। ইউটিউবে অনেক বেশি পাবে। তবে মুশকিল হল ইউটিউবেও বিভিন্ন নিউজ চ্যানেল দখল নিয়ে বসে আছে। তবুও সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে সমাজ মাধ্যম ভালো। যেমন, না, না, এটা না এইটা দেখো .........।
বিরক্তির একশেষ, দেখলাম জনৈকা অ্যাঙ্কার মৌপিয়া নন্দী একজন বিখ্যাত ডাক্তার বাবু ডক্টর গোস্বামী কে প্রশ্ন করছেন। ভাবলাম শোনাই যাক কেমন কথাবার্তা হয়। জানলাম ওই ডাক্তার বাবুটি হলেন চলমান জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সিনিয়র। সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করছেন বেশকিছু জীবনদায়ী ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ওষুধের দাম কমানোর দাবিটা জুনিয়ার ডাক্তারদের আন্দোলনের দাবির ভেতরে অন্তর্ভুক্ত হয়নি কেন, ইত্যাদি।
∆ আচ্ছা, এই যে প্রশ্নটা করলো, এর জবাবে একজন বামপন্থী কি বলতে পারেন, অনুমান করো। তুমি তো বামপন্থী , তাহলে তোমার খুব সরাসরি উত্তর কি হবে?
π) ৩৫টি ওষুধ কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা ইলেক্টোরাল বন্ডে চাঁদা দিয়েছে। তারা তো এমনি এমনি দেয়নি। সেই অর্থ ছিল ফিক্সড ডিপোজিট। এবার তার সুদ আদায় করবে, করছেও। ওষুধের দাম বাড়িয়ে, ওষুধের গুণমান কমিয়ে। এটাই স্বাভাবিক, শুধু বাম কেন, বিজেপি বিরোধী যে কোন দলই এইরকম উত্তর দেবেন এটাই স্বাভাবিক।
∆ কিন্তু বামপন্থী দলের আরেকটি নতুন অংশ বিগত ২০২১ সাল থেকে জন্ম নিয়েছে, যাদের বিধি বাম। সেই ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল, যাদের কপালের লিখন পাল্টাচ্ছেনা, শূন্য শূন্য মহাশূন্য। তেমন বিধি বামপন্থী ডাক্তার কি উত্তর দিলেন শোনো, জিনিসপত্রের দাম বাড়ে বলেই তো কর্মচারীদের ডিএ বৃদ্ধি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ডিএ দিচ্ছেন না। এর ফলে মানুষের অসুবিধা হবেই। অর্থাৎ কিনা ওষুধের দাম বৃদ্ধি টা সমস্যা নয়, সমস্যা হলো রাজ্য সরকার ডিএ দিচ্ছেন না।
π) কথাটা একেবারে তো ভুল নয় মূল্য বৃদ্ধির সাথে তাল রেখে যদি ডিএ বাড়তো তাহলে সমস্যা অনেকটা কম হতো। আমার মনে হয় একেবারে অবান্তর যুক্তি ওই ডাক্তার বাবু দেননি।
∆ এই বিধি বাম পন্থীদের এটাই সমস্যা, যেকোনো বিষয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাজ্যের শাসক কে আক্রমণ করা। আচ্ছা যদি প্রশ্ন করা যায়, মৌপিয়া নন্দী যেটা করেননি, ওষুধ তো সবাই ব্যবহার করেন। কিন্তু ডিএ তো সবাই পান না। শুধু সরকারি ও সরকার পোষিত কর্মচারীরা ডিএ পান। তাহলে বাকিদের কি হবে? তারা কি বিনা ওষুধে মরবে? এখানেই বিধি বামপন্থী নেতাদের সমস্যা। তোমারও মনে হচ্ছে একই সমস্যা?
এরপর মৌপিয়া আবার প্রশ্ন করল, ডাক্তার বাবুরা তাদের প্রেসক্রিপশনে ওষুধের ব্র্যান্ডের নাম না লিখে কেন জেনেরিক নাম লিখছেন না? আপনারা এই দাবি টা করছেন না কেন? জবাবে ওই ডাক্তার জানালো, জেনেরিক নামের ওষুধ খেয়ে যদি রোগ না কমে, সেই ঝুঁকি ডাক্তারবাবু নেবেন কেন? ব্র্যান্ডেড কোম্পানির ওষুধ নির্ভয়ে দেওয়া যায়।
π) এই কথাটা ডাক্তারবাবু ভুল বলেননি। তাকে তো রোগীকে সুস্থ করতে হবে। সেখানে তিনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। ভালো ব্র্যান্ডেড কোম্পানির দামি ওষুধ দিতেই হবে। এটাতে তুমি দোষ ধরতে পারো না। এই প্রশ্নে আমি ডাক্তারবাবুর পক্ষে।
∆ আরে ধ্যুৎ। এই ডাক্তার বাবুদের একটা বড় অংশই জানে না, তার লেখা ওষুধগুলো শরীরে কিভাবে কাজ করে। কোন রিসেপ্টারে পৌঁছাবে, রোগ জীবাণু ব্যাকটেরিয়া রিসেপ্টারে বসার আগেই ওষুধ সেই স্থান দখল (pre occupy) করে নেবে। জীবাণু মিউজিকাল চেয়ারে ফাঁকা চেয়ার খুঁজেই পাবেনা। আবার কোন ওষুধ রিসেপ্টরের একটিভ সাইটে কাজ না করে, অ্যালস্টারিক সাইটে গিয়ে কাজ করে জীবাণুর বসার জায়গাটিকেই নষ্ট করে দেবে, এভাবে নানা পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন ওষুধ কাজ করে। এছাড়াও আছে ড্রাগ ইন হিবিশন একাধিক ড্রাগের মধ্যে কে কার উপর আধিপত্য করবে, ছাপিয়ে উঠবে, সেই সমস্যা। এসব ভালো করে ভাবেই না। আচ্ছা ব্র্যান্ডেড ওষুধ বলতে ঠিক কি বোঝো? কোনগুলো?
π) এই ধরো, জাইডাস, এবোট, লুপিন, সিপ্লা, ডাঃ রেড্ডি ইত্যাদি নামি কোম্পানি। আমি এক ডাক্তার বাবুকে প্রশ্ন করেছিলাম, জেনেরিক ওষুধগুলোর সমস্যা কি? ওটা কি জাল ওষুধ, ভেজাল? তিনি বললেন, না ঠিক তা নয়। তবে একটা ওষুধে যে সংখ্যক প্রতিষেধক মলিকুল থাকার কথা, অনামী কমদামি জেনেরিক ওষুধে সেই সংখ্যক মলিকুল থাকেনা, ফলে সস্তা। অর্থাৎ কিনা পাওয়ার কমে গেলো। ফলে ওষুধ কাজ করেনা, বিলম্বে কাজ করে। এটা আমি একজন ডাক্তারবাবুর কাছেই শুনেছি।
∆ ওই ডাক্তার বাবু নিজে প্রত্যেকটা কোম্পানির ওষুধ টেস্ট করিয়ে দেখেছেন? দামি ব্র্যান্ডেড কোম্পানির ওষুধের মলিকুলের সংখ্যা তিনি গুনে দেখেছেন? তাহলে? কোনটাই তিনি দেখেননি। তিনি শুনেছেন। কোথায় শুনেছেন? টরেন্ট সিপ্লা জাইডাসের এম আর বলেছে, তাই শুনেছে ও জেনেছে। অর্থাৎ নামিদামি ব্র্যান্ডেড কোম্পানি যা বলছে ও বোঝাচ্ছে ডাক্তারবাবু সেটাই বুঝছেন। যাতে ডাক্তার বাবু সহজেই বোঝেন তার জন্য বোঝানোর অনেক বন্দোবস্ত। অনেক আদর যত্ন, অনেক খাতির, অনেক উপহার, কত বিপুল আয়োজন, তবেই না ডাক্তারবাবু বোঝেন কোন ব্র্যান্ডের ওষুধ টা সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
π) এটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? তুমি কি বলবে ওষুধের গুণমানে ভালো মন্দ কিছু নেই। একটা বড় কোম্পানি, নামিদামি কোম্পানির সাথে, ছোট এলিতেলি কোম্পানির পার্থক্য থাকবে না? সবটাই ডাক্তারবাবুদের উপহার, খাতির, আদর যত্ন, বলে এভাবে দেগে দেওয়া যায় না।
∆ বেশতো দেগে না হয় দিলাম না। এবার আমায় একটা বিষয় বুঝিয়ে বলো -- কার্ডিয়াক পেইনের ক্ষেত্রে একটা ওষুধ যার জেনেরিক নাম নিকোরান্ডিল-৫ ; জাইডাস একটি নামকরা কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডের নাম জাইনিকোর-৫, টরেন্টের ব্র্যান্ড নাম নিকোডিউস-৫, আর লুপিন এর ব্র্যান্ড নাম নিকোস্টার-৫, এরা সবাই নানী কোম্পানি। তাহলে এই তিনটে নিশ্চয়ই ব্র্যান্ডেড ওষুধ। এবার শোনো টরেন্টের ওষুধের দাম প্রতি ট্যাবলেট ২৩ টাকা ৯৫ জাইডাসের প্রতি ট্যাবলেট ২১ টাকা ৮৫ , আর লুপিনের প্রতি ট্যাবলেট ১১ টাকা ৮৩ , এবার বলো ব্র্যান্ডেড মালের কোয়ালিটি যদি এক হয় দামের এত পার্থক্য কেন? দামও তো এক হওয়াই উচিত। আমি হলফ করে বলতে পারি, অধিকাংশ ডাক্তার বাবু লুপিনের ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন না। তারা টরেন্টের নিকোডিউস প্রেসক্রাইব করেন। দামের এই পার্থক্যের কোন যুক্তি দেখাতে পারবে? টরেন্টের মালের(২৪টাকার) পঁচাত্তর/আশি শতাংশ, আর লুপিনের (১২টাকার) পঁচাত্তর/আশি শতাংশ অনেক পার্থক্য।
π) আপনি কি বলছেন? এ তো রীতিমতো ডাকাতি। একটি ব্র্যান্ডের দাম ১২ টাকা আর অন্য ব্র্যান্ডের দাম ২৪ টাকা। দুটোই ব্র্যান্ডেড কোম্পানি?
∆ হ্যাঁ ডাকাতি তো। এই জন্যই তো ৩৫ টির বেশি ওষুধ কোম্পানি ইলেক্টোরাল বন্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। এই ডাকাতির স্বার্থে। মানুষ যতদিন থাকবে, তার অসুখ-বিসুখ থাকবে। শুধু তাই না নিত্যনতুন অসুখ-বিসুখের আবির্ভাব ঘটানো হবে কৃত্রিমভাবে। শুনছো না ডাক্তারবাবুরা বলছেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে অসুখ-বিসুখের জটিলতা খুব বেড়েছে। এগুলো কোভিডের কারণে, নাকি ভ্যাকসিনের কারণে বলা ভারি শক্ত। বিদেশে আমেরিকা - ব্রিটেনে এই ভ্যাকসিনের উপর নিষেধাজ্ঞা হয়েছে, মামলা হয়েছে। সেতো সকলের জানা। অতএব জটিল থেকে জটিলতর রোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
π) তাহলে তো কম দামের ওষুধ ডাক্তারবাবুরা লিখবেন না। সেই ওষুধগুলো চাহিদার অভাবে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। একসময় বাজারে ব্র্যান্ডেড দামি ওষুধটাই রাজত্ব করবে।
∆ একদম সত্যি কথাটাই বলেছো। তুমি জানো, এপিলেপসি রোগের জন্য ব্যবহৃত হলেও, নার্ভের যন্ত্রণায় ব্যবহার হয় একটি ওষুধ Tagretel. ওষুধটা কোথাও পাওয়া যায়নি। দোকানি বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করলো, কোন ডাক্তারবাবু লিখেছেন? কারণ ওষুধটা ডাক্তারবাবুরা আজকাল আর লেখেন না। ওষুধটা দামও নাকি খুব সস্তা। এখন এই লাইনে অনেক ভালো ভালো ওষুধ এসে গেছে। প্রেসক্রিপশন কম হলেই চাহিদা কমে যাবে। চাহিদা কমলেই যোগান কমবে। লেপ্রসির গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ শ্রীরামপুর চন্দননগর চুঁচুড়া কোথাও পাওয়া যায়নি। কারণ ওষুধটা এতই সস্তা যে কোন দোকানে পাওয়া যায় না। ১ হাজার ট্যাবলেটের দাম ৩৬০ টাকা। আমরা তো সেই কবেই শুনেছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আবিষ্কৃত মহা ধন্বন্তরি এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিনের কথা। উৎপাদন হতো আমাদের লাগোয়া শ্রীরামপুরে স্ট্যান্ডার্ড ফার্মাসিউটিক্যালস এ। আজ সেই কোম্পানি টাই বন্ধ হয়ে গেছে। পেনিসিলিন অত্যন্ত সস্তার ও কার্যকরী এন্টিবায়োটিক। কোন ডাক্তার তার প্রেসক্রিপশনে এই ওষুধ আর লেখেন না। কত নতুন নতুন নয়া প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিকের আগমন ঘটেছে।
π) বলো কি গো ওষুধের উৎপাদনে এবং ওষুধের দামে এত রাজনীতি ! এ তো একটা ৪০ পয়সার ওষুধ এরা এক টাকায় বিক্রি করে ! এতো লাভের বহর, বিশ্বাস করা যায় না। বুঝেছি, সেই কারণেই ডাক্তারবাবুদের প্রেসক্রিপশনে পৃথক করে অ্যাসপিরিন ৭৫ লেখেই না। কারণ ১৪ টা ট্যাবলেট সাড়ে চার টাকা। অন্য ওষুধের সাথে কম্বাইন্ড করে লেখে। লিপিনিস গোল্ড।
∆ শুধু দাম নয় ধরো তোমার পায়ে একটা অপারেশন হবে। বা দাঁত তুলবে। তখন অ্যাসপিরিন আর ক্লপি ডগরেল বন্ধ করতে হবে কি করে করবে রজু ফাসটেটিং তো বন্ধ করা যাবে না এখানেই সমস্যা। তাছাড়া ধরো রাজু ভাস্তা টিম টুয়েন্টি দিতে হবে তখন কি করবে লিপি নিস গোল্ড এ তো রোজুটিং দোষ থাকে এসব নানা সমস্যা আগে থেকে ভাবতে হয় তাই অনেক ডাক্তারবাবু কম্বাইন্ড ড্রাগ এভোয়েড করেন
π) মানুষের রোগ স্বাস্থ্য নিয়ে এত মুনাফার কারবার? এতো লালসা?
∆ কথাটা ঠিকই বলেছো, তবে ৪০ পয়সা না ১০ পয়সার ওষুধ টা এক টাকায় বিক্রি করে। কেন বলছি তবে শোনো, আমরা দুজন প্রতিবছর ইনফ্লুভ্যাক নামে একটা ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন গ্রহণ করি। অ্যাবটের ভ্যাকসিন। প্রথম বছর কিনলাম ওটা। বাজারে প্রতিটি ইনজেকশন ২২০০ টাকা দাম। রিটেলার, মানে খুচরো বিক্রেতা আমাকে ২০০০ টাকা করে ৪০০০ টাকায় বিক্রি করল। আমি তো অবাক প্রতি ওষুধে ২০০ টাকা ছাড় ! এরপর পরের বছর ওই ইঞ্জেকশন হাসপাতাল সংলগ্ন একটি রিটেলার থেকে আমার ছাত্রী এনে দিল। এমআরপি সেই ২২০০ , কিন্তু ছাত্রী পেল রিটেলার এর কাছে ১৩৪০ টাকা। ভাবতে পারছো রিটেলার এর কাছেই এই দাম। আরো বড় কথা ওই ফার্মেসি আমার ছাত্রীকে বলেছিল, আমি লাভ রেখেই আপনাকে দিয়েছি। আপনি আমার পরিচিত নার্সিং স্টাফ, তাই একটু কম লাভ রেখেছি। তাহলে বলো ওষুধের উৎপাদন ব্যয় কতো?
π) আচ্ছা, এবার একটা কথা স্পষ্ট হচ্ছে। সরকারি ফেয়ার প্রাইস মেডিসিন শপে ৭৫% ছাড় দিয়ে কেন ওষুধ বিক্রি করা সম্ভব হয়। মানে কোম্পানি ওষুধ বিক্রিতে যেখানে যত কমিশন দেয়, গিফট দেয়, সে সব কিছুই দিতে হচ্ছে না। সরাসরি সরকার ওষুধটা কিনে নিচ্ছে। তবে তো তার পক্ষে ২৫ শতাংশ দামে ওষুধ বিক্রি সম্ভব হবেই। পরন্তু এর মধ্যে ওই মেডিসিন শপের এস্টাবলিশমেন্ট কস্ট, কর্মচারীদের বেতন এসবও আছে।
∆ এই উদ্যোগের ফলে একজন পেশেন্ট এর ওষুধ খরচ ৭৫ শতাংশ কমে যাচ্ছে। এটা ডাক্তার বাবুদের অধিকাংশের সহ্য হচ্ছে না। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বেশ কিছু ডাক্তার বাবু স্পষ্ট বলে দেন বাইরে থেকে ওষুধ কিনবেন। ফেয়ার প্রাইস শপের ওষুধে কাজ হবে না। ভাবতে পারো বেলুড় স্টেশনের পাশে যে মহকুমা হাসপাতাল, সেখানকার ওষুধের দোকান টা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি ওখান থেকেই ওষুধ কিনতাম।শুনলাম চন্দননগরেও মহকুমা হাসপাতালে ফেয়ার প্রাইস শপ বন্ধ। একটা ভয়ংকর সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণ নামিয়েছে জনস্বার্থ বিরোধী ডাক্তাররা। যদিও অল্প কিছু সংখ্যক ডাক্তার বাবু এখনো বলেন, সরকারি ফেয়ার প্রাইস শপ থেকে কিনবেন। আমি নিজেও খাই। তবে এমন ডাক্তারের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। আমার বাড়িতে তিনজনের নর্মাল ওষুধ খরচ ছিল মাসিক ৯০০০ টাকা। এই সরকারি প্রকল্পের দৌলতে সেটা কমে মাত্র ২৫০০ প্রায়। বলতে পারো আমার উপার্জন ৬৫০০ টাকা পরোক্ষভাবে বেড়েছে।
π) হুম। এবার বুঝতে পারছি সরকারি ওষুধের দোকানগুলি চালু হওয়ার পবেই বাজারে খুচরো ওষুধের দোকানগুলোতে ১৫% থেকে ২৫% ছাড় দিতে শুরু করেছে। এটাও সরকারি ফেয়ার প্রাইস শপের অবদান। আলাউদ্দিন খলজির নিয়ন্ত্রিত বাজার নীতি সম্পর্কে পড়েছিলাম, তিনি মাত্র কয়েকটি নিয়ন্ত্রিত মূল্যের সরকারি বাজার চালু করেছিলেন। কিন্তু বাজারের আন্তঃ সম্পর্ক থাকার কারণে আশপাশের বাজার গুলিতে এই নিয়ন্ত্রণের প্রভাব প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। আরো বৃহত্তর ভৌগোলিক সীমায় বাজার নিয়ন্ত্রণ ছড়িয়ে পড়েছিল। বুঝতে পারছি কেন ফার্মা কোম্পানি ও বড় বড় ডাক্তারবাবুদের রাতের ঘুম ছুটে গিয়েছে।
∆ শুধু রোগী কল্যাণ সমিতি গঠন করলেই হবে না, প্রয়োজন রোগী সচেতনতা বৃদ্ধি। তা না হলে এই প্রতারণা চলতেই থাকবে। দরকার সভা, প্রচার পুস্তিকা, ইত্যাদি সামাজিক চাপ সৃষ্টি ও মনিটরিং। চুঁচুড়ার সদর হাসপাতালে এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এম ডি সি সি (মিনিমাম ডিমান্ডস অফ চিনসুরা সিটিজেন) ।