জল। গম্ভীর শব্দ হল 'অপ'।
অপ নারায়ণ বলি মুনি নামে জলে।
তেজ। আলো। আলোকিত, দীপ্ত। আলো কৈল অঙ্গরুচি অরিষ্ট-আলয়।
সূর্য। ছট।
ছট পূজা সূর্যদেবতা ও তার পত্নী ঊষার (ছটী মাঈ) উদ্দেশ্যে। জগতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য সূর্য ও ঊষাকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
ঊষা হল ক্ষারমৃত্তিকা আবার অন্যত্র তিনি বাণরাজার কন্য, অনিরুদ্ধের স্ত্রী। অনিরুদ্ধ হল নিরোধহীন, অপ্রতিবন্ধ। তিনি শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের পৌত্র। ঊষার প্রেমিক। অনিরুদ্ধও অঙ্গ--অবাধ, রোধহীন। অঙ্গ হল অস্তিক। সেই অঙ্গ তো দেহও বটে। ঊষা তার মন। তাঁকে ধরা খুব কঠিন। অঙ্গদেশ হল বিহার। বিহারদেশে ছট হয়। ছটক হল প্রভা, ছটা।
গৌরবরণ সোনা, ছটক চাঁদের জোনা।
অঙ্গের পরের ভাই বঙ্গ। বঙ্গ মানে কার্পাস, আবার বেগুন গাছও। বলিপুত্র বঙ্গের ছোটো ভাই কলিঙ্গ --উড়িষ্যা। তার পর সুহ্ম ও পুণ্ড্র। তাঁরা পাঁচ ভাই। পিতা বলি। তিনি চিরজীবী। কিন্তু তিনি আসল পিতা নন। 'ক্ষেত্রজ' শব্দটি নারীর কাছে অপমানের।
অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গাদির ঔরস পিতা দীর্ঘতমা। বেদের ঋষি। অন্ধ। তাঁর জন্মকাহিনী অদ্ভুত। তিনি উতথ্য ও মমতার পুত্র। উতথ্যের ভ্রাতা দেবগুরু বৃহস্পতি। মমতা যখন গর্ভবতী তখন দেবর বৃহস্পতি তাঁকে ধর্ষণ করেন। গর্ভস্থ শিশু পা দিয়ে পিতৃব্য বৃহস্পতির রেত:পাতে বাধা দেন। বৃহস্পতি তাঁকে অন্ধ হওয়ার অভিশাপ দেন।
অন্ধ দীর্ঘতমা সুরভির কাছে গোধর্ম শিক্ষা করে প্রকাশ্যে সঙ্গম করতেন। এই জন্য তাঁর স্ত্রী তাঁকে ত্যাগ করেন। ঋষিকে পুত্ররা ভেলায় চড়িয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। রাজা বলি তাঁকে দেখতে পেয়ে বাড়ি নিয়ে যান। বলির স্ত্রী সুদেষ্ণার গর্ভে অন্ধ ঋষি অঙ্গ, বঙ্গ প্রভৃতি পুত্র উৎপন্ন করেন। অঙ্গের শাসিত দেশও অঙ্গ।
সেই অঙ্গদেশে বৃষ্টি আনার ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির কাহিনি, সে বড় শরীরী।
ঋষ্যশৃঙ্গ পিতার সঙ্গে একটি দ্বীপে থাকতেন।হরিণীর গর্ভে তাঁর জন্ম। তিনি সারা জীবনে নারী দর্শন করেননি। ওদিকে অঙ্গদেশে বৃষ্টি নেই, তীব্র খরা। ঋষিরা বললেন ঋষ্যশৃঙ্গ মুনিকে আনলে অঙ্গে বৃষ্টি হবে। কে তাঁকে আনবেন। এক বৃদ্ধা বারাঙ্গনা তরুণীদের নিয়ে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির কাছে গেলেন যখন তাঁর পিতা আশ্রমে ছিলেন না। সেই তরুণীর সঙ্গে পালিয়ে গেলেন মুনি। অঙ্গদেশে বৃষ্টি হল। অঙ্গদেশের রাজা লোমপাদ। দশরথের কন্যা শান্তাকে পালন করেন। শান্তার সঙ্গে বিয়ে হল ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির।
ঋষ্যশৃঙ্গ হলেন লোমপাদের জামাই, দশরথের কন্যা শান্তার স্বামী। ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি দশরথের পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করেছিলেন। রামের জন্ম হল।রামচন্দ্র ছটপূজা করতেন।এর পরে আছে মহাভারত। অঙ্গের অধিপতি সূর্যপুত্র কর্ণের গল্প। তাঁর সদ্য-শরীর মঞ্জুষায় আবদ্ধ, তিনি জলে ভাসমান সূর্যের টুকরো। মৃত্যুর জন্য তাঁর জননী তাঁকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। মৃত্যুকে জয় করে তিনিও সূর্যের আলোয় আবক্ষ দেহজলে প্রসাদ বিতরণ করতেন। তিনি সূর্যপুত্র কর্ণ। দাতাশিরোমণি।
অঙ্গ হল শরীর, দেহ। বঙ্গ হল কার্পাস, বেগুন। কলিঙ্গ হল ধুম্যাটপক্ষী, ফিঙা। অঙ্গ অঙ্গ, তোমার ডানা নাই দেহ?
শরীরে আলোর ছটা। শরীরে জল। জলে সূর্যের কিরণ।
কলা, আখ আর নারকেলের উপাখ্যান। সে বড় শারীরক, শরীরভব, জীবাত্মসম্বন্ধী।
বৈষ্ণব হইয়া যে শারীরকভাষ্য শুনে।
'সেব্য-সেবক' ভাব ছাড়ি আপনাকে 'ঈশ্বর' মানে।।