আপনি কি মনে করেন ২০,০০০ সশস্ত্র সেনা, নাম করা পুলিশ বাহিনী, দাঙ্গাবিরোধী স্কোয়াড আর সি আর পি এফ মিলে কয়েকশো জোকারের লালকেল্লায় ঢোকা আটকাতে পারত না?
ভাবছেন যখন চাষীরা তাঁর খাস তালুকে ঢুকে গেল, তখন আপনাদের কড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ধ্যান করছিলেন?
বুঝতে পারছেন না কৃষকদের আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার জন্য এটা সবচেয়ে সাংঘাতিক ষড়যন্ত্র?
আমি ২৫ তারিখ রাতে সিঙ্ঘুতে ছিলাম, যখন চাষীদের একটা অংশ যারা চল্লিশটা কৃষক ইউনিয়নের 'সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা'-র সদস্য নয়, তারা হঠাৎ ঘোষণা করল যে প্রশাসন আর সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা মিলে যে ট্র্যাক্টর প্যারেড রুট ঠিক করেছে, তা ওরা মানবে না। ওরা আলাদাভাবে প্যারেড করবে।
বিজেপির চেনা টিকটিকি দীপ সিধু হঠাৎ মঞ্চে উঠে একটা অত্যন্ত প্ররোচনামূলক বক্তৃতা দিতে শুরু করল। কৃষক আন্দোলনকে সাবোতাজ করার জন্য সে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী বক্তৃতা।
আমরা কয়েকশো লোক নিজের চোখে ব্যাপারটা দেখেছি এবং ২৫শে রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি, কি ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে ভেবে। আতঙ্কে শ্বাসরোধ হয়েছিল প্রায়।
২৬শে সকালে ট্র্যাক্টর প্যারেড শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুরবেলা। কিন্তু আগের রাতেই আমার সাথে থাকবে এরকম একজন আমাকে বলেছিল যে সংবাদমাধ্যমের একজন লোক তাকে বলেছেন “সকাল সকাল অ্যাকশন শুরু হয়ে যাবে।”
এখন আমি অবাক হয়ে ভাবছি, ও সেটা জানল কী করে?
ওর সূত্রের কথামতই কৃষকদের একটা অংশ (যারা সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার অংশ নয়) সকাল আটটার সময় সীমান্তে হাজির হয়। কৌশল করে জায়গামত রাখা হয়েছিল ডিটিসি বাস আর অন্যান্য গাড়িঘোড়া, যাতে 'সরকারি সম্পত্তি' নষ্ট করা যায় আর সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করা যায়।
পয়সা খাওয়া টিভি চ্যানেলগুলো ঐ ফুটেজ অবিরাম দেখিয়ে চলেছে। তারাও একেবারে ঠিক সময়ে পৌঁছে গেছিল। আর একেবারে ফিল্মি কায়দায় বিজেপির চর দীপ সিধু লালকেল্লায় পৌঁছে গেল! তাও আবার সাধারণতন্ত্র দিবসে!
আমরা কি এত বোকা হাঁদা? এ কি নেটফ্লিক্সের ওয়েব সিরিজ নাকি? এরকম একটা ঘটনা সরকারি এজেন্সিগুলোর মদত ছাড়া কখনো ঘটতে পারে?
তারপর একটা ধর্মীয় পতাকা (নিশান সাহিব) লালকেল্লার একটা পোলে বেঁধে দেওয়া হল, যাতে প্রমাণ হয় চাষীরা খালিস্তানের সমর্থক। ঠিক যে কথাটা সরকার শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
সত্যি এসব আবর্জনা বিশ্বাস করেন নাকি?
দুঃখের বিষয় চল্লিশটা কিষাণ ইউনিয়নের সবকটা সরল মনে সরকারের সাথে ট্র্যাক্টর প্যারেডের যে রুট ঠিক হয়েছিল, সেই রুটে নির্ধারিত সময়েই প্যারেড শুরু করেছিল। একদল বন্ধুর সাথে মিলে আমি কয়েক ঘন্টা ধরে এই শান্তিপূর্ণ প্যারেড দেখেছি। দিল্লির মানুষ তাদের উপর পুষ্পবর্ষণ করছিলেন।
একটা ন্যাশনাল চ্যানেলও এই প্যারেডটা কভার করেনি। সোশাল মিডিয়া স্ট্রিমিং বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কায়দা করে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার চ্যানেল দেশের বাকি অংশে দেখা যাচ্ছিল না।
আমাকে ফেসবুকের যে কীটরা “হিংসার জন্য অভিনন্দন” বলে মেসেজ পাঠাচ্ছে, তাদের বলি, নিজের মেসেজ নিজের কাছে রাখো। সাধারণতন্ত্র দিবস তোমার দাদুর বিয়ে নয়।
দিনটা যতটা আমার, ততটাই অন্যদেরও। দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে যে বহু দূর থেকে আসা সরল চাষী, যারা নিজেদের ট্র্যাক্টর সাজিয়েছিল, নতুন জামাকাপড় কিনেছিল নিজেদের প্যারেডের জন্য, তাদের তোমাদের নোংরা রাজনীতির বোড়ে করে নিলে। তোমাদের নোংরা রাজনীতি ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের পবিত্রতা নষ্ট করল দেখেও খুব কষ্ট হচ্ছে।
তোমরাই অপরাধী, চাষীরা নয়।