সপ্তাহে পাঁচ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছেন ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি। দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারমূল্যে রীতিমতো ধস নামে।সিএনএন ও রয়টার্সের মতো একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্যমতে, প্রতিবেদন প্রকাশের পর শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত মাত্র চার দিনে আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ারদর প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। তা ছাড়া আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড এবং আদানি টোটাল গ্যাসের মতো কিছু সহযোগী সংস্থা দৈনিক ২০ শতাংশ পতনের সীমা স্পর্শ করেছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আদানি ও তার কোম্পানির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ বেশ পুরোনো। কয়েক বছর ধরেই আদানি গ্রুপের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ সরব প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
আদানির দুর্নীতি ও জালিয়াতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই অনুসন্ধান করছিল বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দুই বছরের অনুসন্ধানের পর গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।আদানি গ্রুপ: হাউ দ্য ওয়ার্ল্ড’স থার্ড রিচেস্ট ম্যান ইজ পুলিং দ্য লার্জেস্ট কন ইন করপোরেট হিস্ট্রি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের থলের বেড়াল বের করে দেয় হিনডেনবার্গ রিসার্চ।
এই রিপোর্ট এমন সময় সামনে এলো, যখন বাজারে ফের কুড়ি হাজার কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহের তোড়জোড় চালাচ্ছে আদানি এন্টারপ্রাইজেস। চাঞ্চল্যকর ওই প্রতিবেদনের জেরেই ভারতীয় ধনকুবের আদানির করপোরেট সাম্রাজ্যে পতনের শুরু হয়েছে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের পর শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) সকালেই এই পতনের গতি আরও বেড়ে যায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, সবশেষ দুই সেশনে ৫০ বিলিয়ন তথা পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে আদানি গ্রুপ। হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই প্রতিবেদনের জেরেই এশিয়ার শীর্ষ ধনীর ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ব্লুমবার্গ। তার মূল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এরই মধ্যে তারা ২৫০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির কোম্পানিগুলো কারচুপি করে তাদের শেয়ারদর বাড়িয়েছে। মূলত কোম্পানিতে প্রোমোটর বা মালিকের কারসাজিতে স্টকের দাম বাজারে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনমতে, অন্য লোকের ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচুর শেয়ার কিনে নিজের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে আদানিরা, যা বিনিয়োগকারীদের চোখে ধুলো দেয়ার সমান। হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে প্রকাশ্যেই আদানি গ্রুপকে স্টকে তছরুপ ও হিসাবে জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত আদানির পাঁচ কোম্পানির নাম রয়েছে এই জালিয়াতির তালিকায়।হিনডেনবার্গের রিপোর্ট আরও বলছে, আদানি গ্রুপের পাঁচ বড় কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে 'ডি-লিস্টিং' তথা বাদ পড়তে পারে। এই পাঁচ কোম্পানির শেয়ারে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে।
বর্তমানে লিকুইডিটি ক্রাইসিস বা নগদের অভাবে ধুঁকছে এই কোম্পানিগুলো। যার ফলে বিপুল ঋণের বোঝা মেটাতে অপারগ আদানি গ্রুপ। সেই কারণেই এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে কোম্পানি। অতীতে এক মার্কিন কোম্পানিকে নিয়ে একই ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। দেখা যায়, ওই কোম্পানির ৯২ ডলারের শেয়ার ২ ডলারে নেমে আসে। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ডি-লিস্টিং হয়ে যায় সেই কোম্পানি।
সাম্প্রতিক পতনের আগে গত কয়েক বছর গৌতম আদানির জন্য ছিল শুধুই উত্থানের গল্প। গুজরাট রাজ্যে একজন ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন গৌতম আদানি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও একই রাজ্য থেকে রাজনীতিতে উঠে এসেছেন। বিরোধীরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, আদানি ও মোদির মধ্যে বহু বছর ধরে ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে।
স্বল্প সময়েই আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং তাঁর সম্পদ ফুলেফেঁপে ওঠে। শুরু থেকেই একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্য ছিল আদানির। এ জন্য সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর থেকে শুরু করে একে একে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, খনি, ভোজ্যতেল, জ্বালানি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করেন তিনি। সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সিমেন্ট খাতেও বিনিয়োগ করেছেন ভারতের সবচেয়ে ধনী এই ব্যক্তি। আদানির ব্যবসা সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দামও হু হু করে বেড়েছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে তাঁর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম দেড় হাজার শতাংশেরও বেশি বেড়েছে বলে বিভিন্ন খবরে বলা হচ্ছে। এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগও পেয়েছেন আদানি।
সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়ে যান আদানি। তার আগে ছিলেন বার্নার্ড আরনল্ট এবং ইলন মাস্ক। এ সময় তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৭ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে।এত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও একটা সময় পর্যন্ত ৬০ বছর বয়সী আদানি অন্যান্য শতকোটিপতিদের তুলনায় অনেক কম পরিচিত ছিলেন। আদানি নিজেই সক্রিয়ভাবে তাঁর সব কটি শাখার ব্যবসা পরিচালনা করেন। নিজের দুই ছেলে করণ ও জিৎকে এখন তিনি ব্যবসায় যুক্ত করেছেন। তাঁর স্ত্রী প্রীতি আদানি দাঁতের চিকিৎসক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ব্যবসায়িক সুবিধা পেয়েছেন—এমন অভিযোগ বিরোধীরা তুললেও তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন আদানি। ২০১৪ সালে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আদানি বলেছিলেন, রাজনীতির সব পক্ষের সঙ্গেই তাঁর ভালো সম্পর্ক রয়েছে, তবে তিনি নিজে রাজনীতি এড়িয়ে চলেন। মোদি সরকারও আদানিকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। মোদি আদানির করপোরেট বিমান ব্যবহার করার পর এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল। তবে আদানি জানিয়েছিলেন যে মোদি ‘পুরো টাকা পরিশাধ করেন’।
সম্প্রতি আদানি তাঁর ভাবমূর্তি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। এ জন্য তিনি দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন। ভারতের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম এনডিটিভির বড় অংশের শেয়ার কিনে নেওয়াও তার এমন কার্যক্রমের অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চ বলছে, আদানির ব্যবসাগুলো বিশ্বের নানা জায়গায় দেয়া কর অবকাশ সুবিধার অনুচিত ব্যবহার করেছেন। একই সঙ্গে আদানির বিপুল ঋণের বিষয়েও যে উদ্বেগ রয়েছে, তা–ও তুলে ধরেছে ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠান।আদানির জন্য বিতর্ক অবশ্য নতুন কিছু নয়। কেরালায় তাঁর ৯০ কোাটি ডলারের বন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে মৎস্যজীবীদের বিক্ষোভ হয়েছে, যার জন্য তিনি রাজ্য সরকার ও জেলে সম্প্রদায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় তাঁর কারমাইকেল কয়লা খনির বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।ভারতের ইমেজ গুরু হিসেবে পরিচিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পারফেক্ট রিলেশনসের সহপ্রতিষ্ঠাতা দিলীপ চেরিয়ান জানিয়েছেন, হিনডেনবার্গ রিপোর্টের প্রতিবেদন আদানির খ্যাতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে আদানি হয়ত সেই ক্ষতি সীমিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে এবং বিনিয়োগকারীদের নানাভাবে আশ্বস্ত করতে পারেন। তবে যে ধরনের উল্কাগতিতে আদানির উত্থান হয়েছে, তাতে তিনি যে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন, সে ব্যাপারে হয়তো খুব কম মানুষই দ্বিমত হবেন।
২০২২ সালে এশিয়ার সর্বোচ্চ মুনাফা লগ্নিকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।গত পাঁচ বছরের উত্থানে ইলন মাস্কের টেসলা ইনকরপোরেশনকেও পেছনে ফেলেছে আদানি এন্টারপ্রাইজ। ধীরে ধীরে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নিজের অবস্থান পাকা করেছেন গৌতম আদানি।
এমনকি গত সেপ্টেম্বরে কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসেন ভারতীয় এ ধনকুবের। কিন্তু সাম্প্রতিক পতনের ধাক্কায় ১০ হাজার কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে আদানির সম্পদ। বৃহস্পতিবার(২৬ জানুয়ারি) দুপুরে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্সে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা গত বুধবারের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম। হিনডেনবার্গ রিসার্চের ওই বিস্ফোরক প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় আদানি গ্রুপ বলেছে, শেয়ার বিক্রির উদ্যোগকে বানচাল করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যে প্রচারের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হচ্ছে। বলা হয়েছে, হিনডেনবার্গের এই প্রতিবেদন ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গবেষণাবিহীন। তারা প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবে। জবাবে হিনডেনবার্গ অবশ্য বলেছে, তাদের প্রতিবেদন পুরোপুরি সঠিক। এর বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ হবে অযৌক্তিক।গ্লোবাল সিআইও অফিসের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার গ্যারি ডুগান বলেন, ইস্যুটি ভারতীয় করপোরেট খাতের কেন্দ্রে আঘাত করেছে, যেখানে বেশ কয়েকটি পরিবার-নিয়ন্ত্রিত সংগঠনের আধিপত্য রয়েছে। স্বভাবগতভাবেই তারা অস্বচ্ছ। এ অবস্থায় বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের করপোরেট গভর্নেন্সের বিষয়গুলোতে আস্থা রাখতে হবে।আদানি ছাড়াও সামগ্রিকভাবে ভারতের শেয়ার বাজারের বিশ্বস্ততা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে’। তার মতে, এর অন্যতম কারণ কারণ হলো ভারতের শেয়ার বাজার এখনও একদিকে আর্থিক ব্যবস্থার বৈশ্বিকীকরণ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের ভেতরে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে। মি. মুখার্জি লিখেছেন, ‘জঞ্জাল দূর করার জন্য ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি রাস্তায় মানুষের ক্ষোভের জন্য অপেক্ষা করবে’?গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গোষ্ঠীর ফ্ল্যাগশিপ ‘আদানি এন্টারপ্রাইজেস’-এর শেয়ারের দাম তার বাজারে ছাড়ার সময়কার ন্যূনতম মূল্যেরও নীচে চলে গিয়েছে, যা গত মঙ্গলবার পর্যন্ত খোলা বাজারে ওই দামেই বিক্রি হয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে আদানিরা শেয়ারের ‘আস্কিং প্রাইস’, অর্থাৎ যে সর্বনিম্ন দামে তা বিক্রি করা যায় (২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া সম্ভব এমন ক্ষেত্রে), কমিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তাতেও পরের সপ্তাহে শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়া আটকানো যেত না। সমস্যা কোনও না কোনও ভাবে তৈরি হতই। এতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম আদানির বিড়ম্বনা যেমন প্রকট হয়ে উঠল, তেমনই এর পরোক্ষ প্রভাব পরবর্তী কালে তাঁর সংস্থা ছাড়াও পড়তে পারে বৃহত্তর শেয়ার বাজারেও।
৮০-র দশকের গোড়ায় শেষ বারের মতো শেয়ার বাজারের একদল ব্রোকার চড়া দামে রিলায়েন্সের শেয়ার বিক্রি হচ্ছে ভেবে এক বিতর্কিত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ‘বিয়ার অ্যাটাক’ (সাধারণত শেয়ারের দামে ২০ শতাংশ পতন) সংগঠিত করেন। সেই সংস্থার কর্ণধার কোনও সাধারণ শেয়ার ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি স্বয়ং ধীরুভাই আম্বানি। তিনি দ্রুত ‘ফ্রেন্ডস অফ রিলায়েন্স’ নামে এক ব্রোকার সংগঠন তৈরি করেন। সেই সংগঠনের সদস্যেরা ছিলেন মূলত বিদেশি। এবং সেই সংগঠন দিয়ে তিনি এক পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে বিয়ার-সংগঠকদের ছত্রভঙ্গ করতে সমর্থ হন।এরপর রিলায়েন্সের শেয়ারের দাম বাড়লে সেই সব ব্রোকার মুখ লুকোন। আম্বানির উপরে আর কোনও শেয়ার বাজারের খেলোয়াড় নজর দিতে চাননি। আম্বানির সে দিনের অবস্থার সঙ্গে আদানির আজকের অবস্থানের ফারাক রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অস্বাভাবিক রকমের তেজি থাকার পর আদানির শেয়ারের দাম কয়েক মাস ধরেই নিম্নগামী হয়ে রয়েছে। ২০২২ সালে গ্রুপ কোম্পানির শেয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায় শীর্ষ ছুঁয়ে ফেলে। তার পর থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ পতন লক্ষণীয় হয়ে ওঠে, কখনও তা ৪৫ শতাংশেও পৌঁছায়। শুক্রবারের(২৭ জানুয়ারি) ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি। সীমাবদ্ধ পাবলিক হোল্ডিং সম্পন্ন সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে খুব কম মূল্যের ব্যবসার কালেও শেয়ারের দামে বড় রকমের ওঠানামা ঘটতে পারে। সেখানেই ঝুঁকির বিষয়টি নিহিত। কিন্তু এখান থেকেই আদানিদের উদ্ধারের যাত্রা শুরু হতে পারত। অন্তত ধীরুভাইয়ের উদাহরণ তো সেই রকমই ইঙ্গিত দেয়। এ ক্ষেত্রে সমস্যা একটাই যে, এই বণিক গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে গলা ফাটিয়ে বলার মতো কিছু নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পর পর ৩ বছর তুলনামূলক ভাবে ঢিলেঢালা অবস্থা পার করে ‘আদানি এন্টারপ্রাইজেস’ ২০২১-২২ সালে ৭৫ শতাংশ রাজস্বের মুখ দেখেছিল। কিন্তু তার মোট লাভের পরিমাণ সেই বছরেই কমে আসে, মোট বিক্রির ১.৫ শতাংশ হয়ে দাঁড়ায়। গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত ৭টি সংস্থার ৬টিরই ২০২২-এর মার্চ পর্যন্ত কর প্রদানের আগের লভ্যাংশে সামান্য খামতি দেখা গিয়েছিল। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ‘আদানি পাওয়ার’, যা রাজস্বের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধি-সহ ১৮৭ শতাংশের বেশি লাভ ঘরে তুলতে সমর্থ হয়েছিল।প্রকাশিত খবর থেকে যা জানা যায় তা হল, আদানি গোষ্ঠীর মাঝারি মানের ব্যবসা এবং তার এক ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে করা মূল্যায়নের পিছনে মূল কারণ ছিল অধিকাংশ ব্রোকিং সংস্থার তরফে আদানিদের শেয়ারের বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান না করা। যদিও এ ধরনের কিছু গ্রুপ কোম্পানিই শেয়ার বাজারের সূচক হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।তবে ইকুইটি সংক্রান্ত চর্চাকারীরা আদানিদের মতো রাজনৈতিক সংযোগসম্পন্ন গোষ্ঠীর আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে চাননি, এমনও হতে পারে।
যে প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিক, সেটি এই— শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক এবং বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থা এই পরিস্থিতিতে কী করছিল? গত বছর দুয়েক ধরে সময় বিশেষে এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশ্যে এসেছে। তার বেশ কিছু হিনডেনবার্গ রিপোর্টে উল্লিখিত। বিক্ষিপ্ত কিছু অনুসন্ধান তথা তদন্ত শুরু হয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু সে সবই ধামাচাপা পড়ে যায়। কেন? সেই প্রশ্নটির উত্তর আমাদের সকলেরই প্রায় জানা।