পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

উচ্চাকাঙ্খা, কমিউনিষ্ট পার্টি এবং এই সময় (দ্বিতীয় ভাগ)

  • 06 February, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 1082 view(s)
  • লিখেছেন : শংকর
লেনিনের পরিষ্কার অভিমত ছিল, পত্রপত্রিকায় যদি বিতর্ক ছাপা না হয় তাহলে সেই পত্রিকা একঘেয়ে, শুকনো গোছের কিছু একটা হয়। লেনিন অভিযোগ করেছেন, যেহেতু কামেনেভ একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনায় লেখে তাই তোমরা ওকে কেটে ছোট করে দিয়েছ! এভাবে সব কিছুকেই যদি তোমরা কেটেছেঁটে "ইতিবাচক বিলোপবাদ"-এ নামিয়ে আনো তাহলে পত্রিকা একঘেয়ে তো হবেই। ব্যক্তি ও যৌথের সম্পর্ক এবং উচ্চাকাঙ্খার ভুল ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে.এই লেখাটি থাকলো।

লেখাটি লেখকের নিজস্ব মতামত। এই লেখার প্রসঙ্গে যদি কোনও বিতর্ক হয়, তাও সহমন ছাপবে।

 

 

পৃথিবীর অনেক দেশের মত ভারতেও কমিউনিষ্ট আন্দোলন গড়ে উঠেছে তার অব্যবহিত পূর্বেকার পেটি-বুর্জোয়া সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। রাশিয়ায় জারতন্ত্র বিরোধী নারোদ পার্টি থেকে ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা লোকজন সেদেশের মার্কসবাদী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের দেশে ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি থেকে বহু কমরেড কমিউনিষ্ট পার্টিতে যোগদান করেন। সর্বোপরি ভাবনাচিন্তা, ধ্যানধারণার ইতিহাসে এই দুই মতাদর্শ, সন্ত্রাসবাদ এবং মার্কসবাদ, ঐতিহাসিক বিচারে যেমন পরপর এসেছে, তেমনই তা একে অন্যেকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে। ব্যাপারটা শুধু একদিক থেকে ঘটে নি, অর্থাৎ এমন নয় যে শুধু মার্কসবাদ সন্ত্রাসবাদীদের প্রভাবিত করেছিল, উল্টোটাও সত্য। সন্ত্রাসবাদও মার্কসবাদীদের প্রভাবিত করেছিল, এবং এখনও করে। এর অনেকগুলি কারণ আছে যা আমাদের বর্তমান আলোচনার বিষয় নয়। কিন্তু একটা ব্যাপার খুব পরিষ্কার। দ্বন্দ্ববাদী দর্শনের ওপর খুব ভালো সমঝবুঝ থাকলে এবং কমিউনিষ্ট আন্দোলন কমিউনিষ্ট দর্শনের (দ্বন্দ্ববাদ) দ্বারা সম্পৃক্ত থাকলে এমন ঘটনা ঘটতে পারত না। মার্কসবাদীরা সন্ত্রাসবাদী ধ্যানধারণার বশ হতেন না, বরং সন্ত্রাদবাদী ভাবনাচিন্তার সাথে ছেদ এবং উল্লম্ফনকে সম্পূর্ণতা দিতে পারতেন। কিন্তু, যাই হোক না কেন, তা ঘটে নি। অন্তত ভারতে। দর্শনের সঙ্গে প্রায় কোনো সম্পর্ক না থাকা কমিউনিষ্ট আন্দোলনে বরাবরই সন্ত্রাসবাদী চিন্তার দাপট থেকেছে। সন্ত্রাসবাদী চিন্তাপদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হল তার একবগ্গা ভাব। সর্বদা কোনো না কোনো চরমে চলে যাওয়া। কোনো বিষয়কেই দ্বান্দ্বিকভাবে দেখতে না পারা। ফলে কমিউনিষ্ট পার্টি যখনই ব্যক্তি এবং যৌথের সম্পর্ককে বিচার করেছে তখন প্রায়শই একবগ্গাভাবে যৌথকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে ব্যাক্তিকে একেবারে দুরমুশ করে ছেড়েছে। আমাদের দেশে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈদিক-ব্রাহ্মণ্যবাদী ভাবধারার খুব শক্তিশালী প্রভাব যা হাজার হাজার বছর ধরে গোটা ভারতীয় সমাজে খুবই প্রধান্যকারী দর্শন-চিন্তা হিসাবে বিরাজ করেছে এবং করছে। কমিউনিষ্টরা কখনই বিষয়টা নিয়ে খুব একটা ভেবে দেখে নি। গভীরে বিচার করেনি। ফলে অচেতনভাবে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যক্তিপীড়নের ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শকে লালন করেছে, ধারণ করেছে এবং প্রয়োগ করেছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই এক সময়ে এসে ইতিহাস তার প্রতিশোধ নিয়েছে এবং সেই একই আন্দোলনের মধ্যে উলটো চরম শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিপেষণের মধ্যে দিয়ে একদা যে যৌথ গড়ে উঠেছিল সেখানে যদি উলটো চরম শক্তিশালী হয় তাহলে কী হয় সেটা সহজেই অনুমেয়। ব্যক্তির দাপটে যৌথের অস্তিত্বই বানচাল হয়ে যায়। কমিউনিষ্ট বিপ্লবী আন্দোলনের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া, এবং গত পঞ্চাশ বছরে কিছুতেই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারার পেছনে এটি একটি বড় কারণ।

 

আমাদের দেশে যাঁরাই গুরুত্ব সহকারে কোনো না কোনো কমিউনিষ্ট পার্টিতে কাজ করেছেন, বা এখনও করেন, তাঁরাই নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, পার্টিতে ভাবনাচিন্তার স্বাধীনতা ভীষনভাবে সংকুচিত থেকেছে। আজ থেকে যত পেছনের দিকে যাওয়া যাবে ততই এই প্রবণতার শক্তিশালী অস্তিত্ব দেখা যাবে। এর কারণ এটা নয় যে, কমিউনিষ্ট আন্দোলন অতীতের তুলনায় অধিকতর বিকশিত হয়েছে এবং ভাবনাচিন্তারও একটা উল্লম্ফন হয়েছে। তা নয়, বরং কারণটা উলটো। আসলে কমিউনিষ্ট আন্দোলন বর্তমানে অতীতের তুলনায় অনেক দুর্বল হয়েছে। এবং যতই আমরা তার গৌরবোজ্জ্বল সময়ের দিকে তাকাব ততই দেখব এই ব্যক্তিপীড়নের ফাঁস অনেক বেশি শক্তিশালী। আজ আসলে "বাঘ কাদায় পড়েছে"! ফলে অনেক কিছুই তাকে মেনে নিতে হচ্ছে, নিতান্ত বাধ্য হয়ে, অনিচ্ছায়। রসিকজনে তো বলেইছেন, অভদ্রা বর্ষাকাল/ হরিণ চাটে বাঘের গাল। কিন্তু ভাবনাচিন্তার মূল ভিত্তিটি বদলায় নি। আজ, কমিউনিষ্ট আন্দোলনের এই দুর্বল ছন্নছাড়া সময়ে, সেই একই অমার্কসীয় চিন্তার নানা প্রকার প্রতিক্রিয়া এবং প্রকাশ দেখা যাচ্ছে।

 

সংগঠন পরিচালনার কাজে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি যা ছাড়া একটা কমিউনিষ্ট পার্টি কোনো অবস্থাতেই কাজ করতে পারে না। কিন্তু গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার নামে আমাদের নেতারা কী করেছেন? তাঁরা সবাইকে নিজের ছাঁচে তৈরি করতে চেয়েছেন। নেতাটি যেমনভাবে ভাবেন, যেমনভাবে বলেন, যেরকম মতামত পোষণ করেন, অন্য যাঁরাই সেভাবে ভাববেন, সেভাবে বলবেন, সেই রকম মতামত পোষণ করবেন তাঁরাই নেতাদের "গুড বুক"-এ জায়গা পেয়ে যাবেন। তাঁরাই হয়ে দাঁড়াবেন, "খুব ভালো কমরেড", " প্রতিভাশালী" "দক্ষ", এবং "নির্ভরযোগ্য"! অন্যদিকে যাঁরাই একটু অন্যভাবে ভাববেন, অন্যভাবে চলবেন, অন্যভাবে বলবেন তাঁরাই হয়ে দাঁড়াবেন নেতাদের কাছে অনির্ভরযোগ্য। এমনকি ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনযাপনও ঠিক তেমন হতে হবে যেমন আছে নেতাটির। নেতা এবং ক্যাডার উভয় দিক থেকেই এই অভ্যাস এত শক্তিশালী যে সব সংগঠনেই নেতাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংস্করণ দেখতে পাওয়া যাবে। এমনকি বাচনভঙ্গী, হাঁটাচলার কায়দা, বক্তব্য রাখার ধরনও কপি করা। নেতারা এমনকি কর্মীদের ব্যক্তিগত জীবনকেও নিযন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন, এবং প্রায়শই নিজেদের ছাঁচে ঢালার চেষ্টা চালিয়েছেন। সুধাংশু দাশগুপ্ত তাঁর "আন্দামান জেল থেকে কমিউনিষ্ট পার্টিতে" শীর্ষক বই-এ একটা মজাদার ঘটনার কথা বলেছেন। অবিভক্ত পার্টিতে লেখক তখন দিল্লির কমিউনে থাকতেন এবং পার্টির পত্রপত্রিকায় লেখালিখি এবং প্রকাশনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেই সময়ে সেই কমিউনের দায়িত্বে ছিলেন কমরেড এস.ভি. ঘাটে। কমরেড ঘাটে পার্টির প্রথম সাধারণ সম্পাদক এবং যে সময়কার কথা লেখক লিখেছেন সেই সময়ে যদিও তিনি সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না তথাপি পার্টির পলিটব্যুরোর গুরুত্বপূর্ণ সিনিয়র সদস্য ছিলেন। সুধাংশু দাশগুপ্ত লিখেছেনঃ

 

"কমরেড ঘাটের নজর সব কমরেডের স্বাস্থ্যের দিকে। তাঁর এই নজরে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। একদিন রাতে তাঁর সাথে আমার বেশ খটামটি বেধে গেল।

রাত দশটার সময় তিনি সব ঘরে আলো নেভাতে বলতেন। অনেকসময় তিনি নিজেই সুইচ অফ করে দিতেন। মহা ফ্যাসাদে পড়লাম৷ আমাদের অভ্যেস রাত জেগে বই পড়া। সে-অভ্যেস বদল করা অসম্ভব। তাই একরাতে বেপরোয়া হয়ে কমরেড ঘাটেকে বললাম, 'আলো নেভাবেন না, পার্টি সংবিধানে ওরকম কোনো নিয়ম নেই। তিনি কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, —- পার্টি কমিউনের নিয়ম পার্টি সংবিধানে লেখা থাকে না। সে-নিয়ম পার্টি নেতারা তৈরি করে থাকেন।

আমি বললাম, —- আন্দামানের সেলুলার জেলে রাত দশটার পর আলো জ্বালানো নিষিদ্ধ ছিল, মুক্ত আবহাওয়ায় পার্টি কমিউনেও যদি সেই নিয়ম মেনে চলতে হয়, তবে আমাকে কলকাতা ফিরে যেতে হবে।

কমরেড ঘাটে বললেন, —- তা, তুমি যাও।"

 

এই লেখকের প্রথম পর্বের লেখার সূত্র ঃ  https://sahomon.com/welcome/singlepost/-recent-communist-party-debate-now-part-1

 

আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি ছোট এবং মজাদার ঘটনা। কিন্তু নেতাদের এই অভ্যাস ও মানসিকতা যখন পার্টিজীবনের সর্বত্র পরিব্যপ্ত হয়ে যায় তখন বিষয়টা আর ছোটও থাকে না, মজারও থাকে না। তখন পার্টির নামে, যৌথের নামে কতিপয় নেতা একটা জীবন্ত পার্টির বদলে একটা রোবট তৈরির যন্ত্র তৈরি করেন, যার দাপটে ব্যক্তির সমস্ত সৃষ্টিশীলতা, স্বকীয়তা এবং বিকাশ একেবারে দুরমুশ হয়ে যায়। ফলে পার্টিতে দক্ষ, স্বাধীন চিন্তাসম্পন্ন, নির্ভীক কিন্তু শৃঙ্খলা-পরায়ন কর্মীবাহিনী তৈরি হতে পারে না। তৈরি হয় নেতা অনুগত, অদক্ষ, ভাবনাহীন, স্বকীয়তাহীন কিছু রোবট যাদের কাজ হল সর্বত্র তথাকথিত পার্টি-লাইন ভ্যারভ্যার করে বকে আসা। এই ধরণের পার্টি স্বাভাবিকভাবেই জনতাকে আকৃষ্ট করতে, নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয় না। আর যাঁরা এই অবস্থার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন না তাঁরা পার্টির সঙ্গে সংস্রব ত্যাগ করেন। সক্রিয় পার্টিজীবনের অভিজ্ঞতা আছে এমন যে কেউ জানেন, কমিউনিষ্ট আন্দোলনে বিগত দশ দশকের ইতিহাসে এমন কত, হাজার হাজার, প্রতিভাশালী এবং সম্ভাবনাময় কর্মী পার্টি ত্যাগ করেছেন। নেতারা বহু সময়েই এঁদেরই উচ্চাকাঙ্খী বলে দেগে দিয়েছেন। কতিপয় নেতার রোবট বানানোর কলকে যাঁরা প্রশ্ন করেছেন এবং সেই কলে নিষ্পেষিত হয়ে নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে ধ্বংস হতে দিতে অস্বীকার করেছেন, নেতারা তাঁদেরই বলেছেন উচ্চাকাঙ্খী এবং এই বিদ্রোহকে চিহ্নিত করেছেন উচ্চাকাঙ্খা বলে। লেনিনকে উদ্ধৃত করে বলে দেওয়া হয়েছে, —- "বুদ্ধিজীবিরা আসলে শৃঙ্খলাকে শৃঙ্খল মনে করে। তাই এরা পার্টিতে কাজ করতে পারে না!" এঁরা "বুদ্ধিজীবি" কেন? না, এঁরা চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল, স্বকীয় এবং স্বাধীন-চিন্তক, তাই। তাই "বুদ্ধিজীবি" গালাগালিটা এঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। আর কারা "শ্রেণির লোক"? যারা অনুগত, অদক্ষ, মস্তিষ্কহীন! এইভাবে এক দীর্ঘকালীন দুর্বৃত্ত প্রক্রিয়ায় আজ যে পার্টিগুলি তৈরি হয়েছে তাতে সত্যিকারের কমিউনিষ্ট কর্মীদের খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে গেছে।

 

গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার অর্থ কী? গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা  হল কমিউনিষ্ট পার্টি পরিচালনার মৌল নীতি। কোন পার্টিই বা কোনো যৌথই কেন্দ্রিকতা  ছাড়া চলতে পারে না। এই কেন্দ্রিকতা  আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা  হতে পারে, আবার গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা ও হতে পারে। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা  বলতে বোঝায় কেন্দ্রিকতাটি আমলাতান্ত্রিক নয়, বরং গণতান্ত্রিক। "গণতান্ত্রিক" শব্দটি এখানে কেন্দ্রিকতাকে বিশেষ্যায়িত করে। কেন্দ্রিকতার  ধরণটিকে চিহ্নিত করে। ফলে, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা  থেকে গণতন্ত্রকে আলাদা করা করা সম্ভব নয়। যেমন ধরুন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা হিসাবে আমরা দুই ধরণের গণতন্ত্রের সন্ধান পাই। বুর্জোয়া গণতন্ত্র এবং প্রলেতারীয় গণতন্ত্র। এখানেও যেমনটা বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে ভেঙ্গে বুর্জোয়া আর গণতন্ত্রকে আলাদা করা সম্ভব নয়, কারণ, "বুর্জোয়া গণতন্ত্র" শব্দবন্ধে "বুর্জোয়া" শব্দটি গণতন্ত্রকে বিশেষ্যায়িত করে, "প্রলেতারীয় গণতন্ত্র"- এ "প্রলেতারীয়" শব্দটি গণতন্ত্রকে বিশেষ্যায়িত করে, তার চরিত্রকে চিহ্নিত করে, তেমনই গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা কেও এই ধরণের শব্দবন্ধ হিসাবে বুঝতে হবে। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার  তিন মৌল নীতি, যা তিন স্বর্ণালী সূত্র হিসাবে পরিচিত। ব্যক্তি সংগঠনের অধীন, নিম্ন কমিটি উচ্চ কমিটির অধীন, এবং সমগ্র পার্টি পার্টি কংগ্রেসের অধীন।

 

এখন, ব্যক্তি সংগঠনের অধীন, এই কথার মানে কী? ব্যক্তির ভাবনা-চিন্তা, কাজকর্ম সবকিছু সংগঠনের অধীন? মানে, আপনাকে সর্বদা পার্টি যেভাবে "বলে দেবে" সেভাবেই ভাবনাচিন্তা করতে হবে? সেভাবেই চলতে হবে? ব্যাপারটা ঠিক কী? ব্যাপারটা আসলে কিছুই নয়, ব্যক্তির কর্মকে পার্টির যৌথ সিদ্ধান্তের অধীনে রাখতে বলা হয়েছে। এর থেকে বেশি কিছু নয়। পার্টি সিদ্ধান্ত নিল উত্তরদিকে লং-মার্চ করবে, সেখানে আপনি দক্ষিণে লং-মার্চ করতে পারেন না। এই স্বাধীনতা যদি সবার থাকে তাহলে পার্টি কেন, কোনো যৌথই চালানো যাবে না। অকমিউনিষ্ট পার্টিতে কোনো এক সুপ্রীম নেতা কোন দিকে চলতে হবে তা বলে দেন, নির্দেশ দিয়ে দেন। তাই সেই কেন্দ্রিকতা  আমলাতান্ত্রিক। কমিউনিষ্ট পার্টিতে পার্টি এই সিদ্ধান্ত যৌথভাবে নেয়। তাই এই কেন্দ্রিকতার  চরিত্র গণতান্ত্রিক। কমিউনিষ্ট পার্টিতে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার  একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, ব্যক্তি সংগঠনের অধীন, বলতে এটাই বোঝায়। এর থেকে চার আনা কম নয়, চার আনা বেশিও নয়। সুতরাং, ভাবনাচিন্তার স্বাধীনতা পার্টিজীবনের একটি মৌলিক অধিকার, শুধু তাই নয়, একটা সত্যিকারের কমিউনিষ্ট পার্টি গড়ে তুলতে গেলে স্বাধীন চিন্তক ছাড়া সে পার্টি গড়ে তোলা যায় না। অথচ, দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিষ্ট পার্টিগুলিতে যেটা চলেছে তা হল যাঁরাই অন্যভাবে ভেবেছেন, নেতাদের চিন্তার বাইরে গেছেন, তাঁরাই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। তাঁদের বলা হয়েছে, ভিন্নমত তুমি তোমার মনের মধ্যে রেখে দাও, কিন্তু প্রকাশ কোরো না। ধরুন, কোনো একটি বিষয়ে আপনার ভিন্নমত আছে। আপনি আপনার কমিটিতে তা বলতে পারেন। কিন্তু যদি সেটা বড় ধরণের কোনো তাত্ত্বিক বিষয় হয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের কমিউনিষ্ট আন্দোলনের অনেক গভীর ও চর্চাসাপেক্ষ বিষয় তাতে যুক্ত থাকে তাহলে তো এক আধবার পার্টিকমিটিতে কথা বলে আপনি কিছুই দাঁড় করাতে পারবেন না। এর জন্যে চাই ধারাবাহিক প্রকাশ্য চর্চা, এবং বিতর্ক। পার্টি প্রেসে তার জন্যে জায়গা বরাদ্দ করার দরকার। আলোচনাসভা, এমনকি বিতর্কসভাও করার দরকার। তবে তো কমিউনিষ্ট পার্টি একটা বিকল্প জ্ঞানচর্চার জায়গা হয়ে উঠবে। বিকল্প জ্ঞানচর্চা ছাড়া, কমিউনিষ্ট পার্টির পক্ষে বিকল্প রাজনৈতিক লাইনকে জনতার মাঝে প্রতিষ্ঠা করা যাবে কী করে? সুতরাং, পার্টিপ্রেসকে অবশ্য অবশ্যই বিতর্ককে ধারণ করতে হবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার  নামে যা চলেছে তা হল সমস্ত প্রকাশ্য বিতর্ককে পরিহার করা। পার্টির নামে নেতারা শুধুমাত্র অন্যদের রাজনৈতিক কর্মকেই নিয়ন্ত্রণ করেন নি, চিন্তাকেও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছেন। এখন কেউ বলতে পারেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশও এক ধরণের রাজনৈতিক কর্ম। সুতরাং, তারও একমুখীনতা থাকা দরকার। যুক্তিটি ভুল। কোনো কোনো ধরণের মতপ্রকাশ অবশ্যই তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক কর্ম, কিন্তু সব ধরণের মতপ্রকাশ তা নয়। যেমন ধরুন, একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পার্টির নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আপনি যখন পার্টিপত্রিকায় প্রচার চালাচ্ছেন, তখন সেটি একটি তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক কর্ম। সেটি নিয়ে দশ রকম কথা পার্টি প্রেসে যাওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু আজকের দিনে আমাদের একটি কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক গড়ে তোলার কাজ হাতে নেওয়া উচিৎ কিনা, তা নিয়ে প্রকাশ্য বিতর্ক ও চর্চা খুবই জরুরী একটি কাজ। কারণ, এই বিতর্কের প্রধান লক্ষ্য হল আমাদের ভাবনাচিন্তার দিগন্তকে প্রসারিত করা, যাতে করে সঠিক কর্মটি সম্পর্কে একটি যৌথ ধারণা গড়ে তোলা যায়। অতীতের আন্তর্জাতিকগুলি কেমন ছিল, তাতে কোনটা ছিল তার জোরের দিক, কোনটা ছিল তার দুর্বলতা তা নিয়ে প্রকাশ্য চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রকমই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পার্টি প্রেসে বিতর্ক, আলোচনা প্রভৃতি হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে করে যেমন পার্টিকর্মীদের ভাবনাচিন্তার দিগন্ত প্রসারিত হয়, অন্যদিকে তেমনই মুখপত্র হিসাবে একটি পত্রিকাও পাঠকমহলে সমাদৃত হয়, কার্যকরী হয়।

 

কিন্তু বহুক্ষেত্রেই দেখা যাবে কিছু নেতা আছেন যাঁরা কিছুতেই পত্র-পত্রিকায় বিতর্ক করবেন না। পার্টির অভ্যন্তরের বিভিন্ন ভিন্নমত তাঁরা কিছুতেই প্রকাশ হতে দেবেন না। এতে তাঁদের ভীষণ ভয়। এর পেছনে আসলে আছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। লেনিন পত্রিকায় বিতর্ক এড়িয়ে চলার এই প্রবণতাকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন। ১৯১২ সালের জুলাই মাসে লেনিন "ঝভেঝদা"-এর (সেই সময়ে বলশেভিকরা " ঝভেঝদা", "প্রাভদা" প্রভৃতি পত্রপত্রিকা চালাত) সম্পাদকমন্ডলীর কাছে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চিঠি লেখেন, তাতে তিনি বলেনঃ

 

"Now for the main thing. You complain of monotony. But this will always be the case if you don’t print polemics— if, in particular, you cut down Kamenev (he writes in a different tone)—if you reduce everything to “positive liquidationism”." (Vol 35)

 

লেনিনের পরিষ্কার অভিমত ছিল, পত্রপত্রিকায় যদি বিতর্ক ছাপা না হয় তাহলে সেই পত্রিকা একঘেয়ে, শুকনো গোছের কিছু একটা হয়। লেনিন অভিযোগ করেছেন, যেহেতু কামেনেভ একটু ভিন্ন ব্যঞ্জনায় লেখে তাই তোমরা ওকে কেটে ছোট করে দিয়েছ! এভাবে সব কিছুকেই যদি তোমরা কেটেছেঁটে "ইতিবাচক বিলোপবাদ"-এ নামিয়ে আনো তাহলে পত্রিকা একঘেয়ে তো হবেই।

লেনিন পার্টির মধ্যস্থিত একটি বিলোপবাদী ধারার মুখপত্র "নেভস্কি গোলোস"-এর উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, দেখো ওরা বিতর্ককে ভয় না। তাই ওদের কাগজটা অনেক প্রাণবন্ত হয়।

 

"Just look at Nevsky Golos: it’s more lively. It is not afraid of polemics. It attacks. It boldly makes its point to the bitter end."

 

কিছু নেতা সর্বদাই বলে এসেছেন যে, পার্টির মধ্যেকার বিভিন্ন আলোচনা, বিতর্ক যদি বাইরে আসে তাহলে লোকে সেসব জেনে ফেলবে। ওগুলো লুকিয়ে রাখো। কে কী মতামত পোষণ করে তা লোককে জানতে দিও না। তাঁদের সবেতেই খুব ভয়। লেনিন তীব্রভাবে এর বিরোধী ছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিলঃ

 

"By avoiding “painful questions”, Zvezda and Pravda make themselves dry and monotonous, uninteresting, uncombative organs. A socialist paper must carry on polemics: our times are times of desperate confusion, and we can’t do without polemics….. Meanwhile Nevsky Golos is attacking briskly and takes a more challenging line. You can’t hide differences from the workers (as Pravda is doing): it’s harmful, fatal, ridiculous. You can’t leave it to the adversary, to Nevsky Golos, to open up discussion of differences. Pravda will perish if it is only a “popular”, “positive” organ, that is certain."

 

লেনিন বলছেন, আমাদের সময় মারাত্মক সংশয়ের সময়। এই সময় আমরা বিতর্ক বাদ দিয়ে এগোতে পারব না। শ্রমিকদের কাছ থেকে তুমি মতপার্থক্য লুকিয়ে রাখতে পারো না। এটা ক্ষতিকর, হননকারী এবং হাস্যকর হতে বাধ্য। লেনিন আশংকা প্রকাশ করেছিলেন যে, যদি "প্রাভদা" এইভাবে বিতর্ক পরিহার করে একটা মিষ্টি "ইতিবাচক" কাগজ হয়েই থাকে তবে তা ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। লেনিন এখানে গোটা আলোচনাটা একটা কমিউনিষ্ট পত্রিকা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে করেছেন এবং সেই সূত্রে "ঝভেঝদা" আর "প্রাভদা" কীভাবে কাজ করছে তা নিয়ে করেছেন। কিন্তু সেই সূত্রেই আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেয়েছি যা আমাদের শিখিয়েছে যে পার্টি এবং জনগণের মধ্যে ভাবনাচিন্তার দিগন্তকে প্রসারিত করার জন্যে আমাদের কীভাবে ভাবা উচিত। যা ছাড়া জনগণকে আকৃষ্ট করতে, নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, তাত্ত্বিক বলে বলীয়ান একটি সংগ্রামী পার্টি গড়ে তোলা যায় না। আমরা জানি, বলশেভিকরা  শুধুমাত্র মেনশেভিক বা বিলোপবাদী বা অর্থনীতিবাদী বা বৈধ মার্কসবাদী, RSDLP -এর মধ্যস্থিত অন্যান্য ধারার বিরুদ্ধেই প্রকাশ্য বিতর্ক চালিয়েছিলেন এমন নয়। বলশেভিকদের মধ্যেকার বিতর্কগুলোও সর্বদাই প্রকাশ্যে, পার্টিপ্রেসে চালানো হয়েছে। এমনকি তাঁরা আলাদা আলাদা বইও বের করেছেন। সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লেনিন বুখারিন বিতর্কের কথা আমরা জানি। এমন বহু বিষয়ে তাঁরা নিজেদের মধ্যেকার বিতর্ককে শ্রমিকদের কাছে, জনগণের কাছে হাজির করেছেন। লোকে জানত, পার্টির কোন নেতা কোন বিষয়ে কী মতামত পোষণ করেন, লোকেও তার ভিত্তিতে নিজেদের প্রশিক্ষিত করেছেন, পক্ষ নিয়েছেন। বলশেভিক নেতারা এটা করতে পেরেছিলেন কেন? কারণ তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং সততার কোনো অভাব ছিল না। যখন তাঁরা বিতর্ক করেছেন তখন আত্মবিশ্বাসের সাথে করেছেন। আবার যখন মনে করেছেন, তাঁদের ভুল হয়েছিল তখন তাঁরা নির্দ্বিধায় নিজেদের অবস্থান বদল করেছেন। ট্রটস্কি এবং লেনিনের দীর্ঘ সংগ্রামের পর ট্রটস্কি নির্দ্বিধায় লেনিনের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, আবার বুখারিন লেনিনের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হওয়া সত্ত্বেও লেনিন বুখারিনের ভুল অবস্থানের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম করতে কখনও দ্বিধা করেন নি। এসবই ছিল তাঁদের গুণাবলী যার ফলেই তাঁরা অমন একটা পার্টি গড়ে তুলতে পেরেছিলেন এবং বিপ্লব করতে পেরেছিলেন।

 

আর আমাদের নেতারা কী করেছেন? তাঁরা সবাইকে দুরমুশ করেছেন। পার্টির নামে, যৌথের নামে, শৃঙ্খলার নামে, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে তাঁরা ব্যক্তির বিকাশ হতে দেন নি, কর্মীদের ভাবনাচিন্তার দিগন্তকে বিকশিত হতে দেন নি, আর যেখানে তাঁদের বাধা গ্রাহ্য করে লোকে অন্যরকম ভাবে ভেবেছে, এগিয়ে গেছে তাঁদেরকেই উচ্চাকাঙ্খী বলে দেগেছেন, ব্যক্তিসর্বস্ববাদী বলে দেগেছেন, ইদানীং কালে হয়ত বলে দিয়েছেন "পোস্ট মর্ডান" ইত্যাদি। পৃথিবীতে সমস্ত ভালো জিনিসকে খারাপ কাজে ব্যবহার করা যায়। এই "লম্বা হাতওয়ালা নেতারা"ও পার্টি, যৌথ, শৃংখলা, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা প্রভৃতি ধারণাগুলিকে ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিপেষণের কাজে। এর পেছনে সক্রিয় থেকেছে তাঁদের সন্ত্রাসবাদী রাজনৈতিক বোধ যা পুরোপুরি অদ্বান্দ্বিক দর্শনপদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের দেশের ব্যক্তিপীড়নের ব্রাহ্মন্যবাদী মতাদর্শ (ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসবাদীরা প্রায় সকলেই ছিলেন বৈদান্তিক, এটা আপতিক নয়)। আর ঠিকঠাক যে বিশেষণগুলো প্রকৃতপক্ষে তাঁদের নিজেদের ক্ষেত্রে খাটে সেগুলোকে তাঁরা ব্যবহার করেছেন অন্যেদের ক্ষেত্রে। ফলে ব্যক্তিমানুষ হিসাবে এই নেতাদের অনেক ইতিবাচক উপাদান এবং ত্যাগস্বীকার থাকলেও তা কমিউনিষ্ট রাজনীতিতে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন তো করেই নি, বরং প্রচুর ক্ষতি করেছে। তাঁদের রাজনীতি একপ্রকার ভন্ড এবং আত্মবিশ্বাসহীন রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। এঁরাই কিন্তু আবার নিজেদের বেলায় দাবি করেছেন চরম গণতন্ত্র। এঁরাই কিন্তু যথেচ্চ দলিল বিলি করে বেরিয়েছেন। "তিন কমরেডের দলিল", "সাত কমরেডের দলিল", "বিকল্প দলিল" এসবই আমাদের খুব পরিচিত শব্দবন্ধ। ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রণদিভে লাইনের বিরুদ্ধে কমরেড ঘাটে, কমরেড ডাঙ্গে এবং কমরেড অজয় ঘোষ যথাক্রমে পুরুষোত্তম, প্রবোধ চন্দ্র এবং প্রকাশ নাম নিয়ে যে "তিন পি-এর দলিল" প্রচার করেন সম্ভবত সেই শুরু। তার পর থেকে নেতাদের দলিল দস্তাবেজের কোনো কমতি নেই! কিন্তু প্রকাশ্য আলাপ আলোচনা, বিতর্কে তাঁদের ভয়ানক আপত্তি। ব্যক্তিপেষণ অন্যদের ক্ষেত্রে চলবে। আর নিজেরা চালাবেন স্বেচ্ছাচার। নিজেদের ক্ষেত্রে চলবে চরম গণতন্ত্র, এমনকি উপদলীয় কার্যকলাপ। তাতে বাধা পড়লেই কিন্তু তাঁদের স্বমূর্তি প্রকাশিত হবে। তাতে পার্টি ভেঙ্গে টুকরো হলেও কোনো ক্ষতি নেই।

 

এভাবেই এগিয়েছে আমাদের আন্দোলন। সচেতন, নির্ভীক, অকুতোভয়, স্বাধীন-চিন্তক, সৃষ্টিশীল কমিউনিষ্ট কর্মীরা যদি এই আত্মহননকারী গতিকে রোধ করতে না পারেন, কমিউনিষ্ট আন্দোলনের নতুন দিশা তৈরি করতে না পারেন তবে আমাদের দেশে কমিউনিষ্ট আন্দোলনের কোনো ভবিষ্যত নেই।

 

সমাপ্ত।

 

 

 

0 Comments

Post Comment