স্কুল থেকে এসেছে তরুণ বালকেরা রাহুলের যাত্রায় সামিল হতে। এই আনন্দে তারা বরফের উপরে ডিগবাজী দিয়ে চলেছে। আমাদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। মানুষের সংখ্যা যত বেশি বরফের সংখ্যাও তত বেশি। মানুষের মুখের হাসি তারাও যেনো বরফি। কি বলবো মানুষগুলো বরফের মতো সাদা। এমন বালকদের দেখে আমি তাদের বললাম তোমরা কতবার ডিগবাজী দিতে পারো? ওরা একথা শুনে হাসতে হাসতে চিৎকার করে আবার বারকয়েক ডিগবাজি দিলো। আমাদের দল তখন শ্লোগান মুখর,“কাশ্মীর সে কন্যাকুমারী ভারত মাতা এক হামারী” শ্লোগানে শ্লোগানে এগিয়ে যাচ্ছে মিছিল। আমি হিন্দির মাঝে বাংলা বলে শান্তি পাচ্ছিলাম না। এদিকে একদল তরুণ ক্যামেরা হাতে ছুটে এসে মারলো ধাক্কা। পড়লাম বরফের উপরে। সেকি এই বরফ তো জলের মতো নরম। কেমন যেনো তলিয়ে গেলাম। বন্ধু প্রমীলা টেনে তুলে বললো দৌড়ে চলো! আমাদের সিভিল সোসাইটির দল এগিয়ে চলেছে। দশ কদম চলার পরেই দেখলাম মিয়াও মিয়াও করে গাড়িগুলো ছুটে আসছে। রাহুল গান্ধীর গাড়িটা চলে গেল খুব জোর দিয়ে। এটা কি হল! কাশ্মীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে আর সে গাড়িতে পালালো কেনো?
আসলে এটাও পলিটিকাল চালাকি! কেন্দ্র সরকার রাহুলের সিকিউরিটির জন্য চিন্তিত। কাশ্মীর নাকি খারাপ জায়গা। মানুষ ভালো না তাই তাকে গাড়ি থেকে নামিয়েই পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে দৌড় দিয়েছে মাঠের দিকে। কি আশ্চর্য! ভারত রাজমুকুট পরে বসে আছে কাশ্মীরের, আর সেই তার নামে এত বজ্জাতি! কাশ্মীর কিছুটা মুষড়ে গেলো, মানুষের মন খুব খারাপ। সকলেই মুখ নামিয়ে বাড়ি ফিরছে। কোনো কোনো কাশ্মীরি মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলে। মুখ নামিয়ে চলছি আমিও। অনেক কথা আলোচনা শুরু হলো— কেউ বললো আসলে রাহুলের প্রতি খারাপ ধারণা তৈরি করার জন্য কেন্দ্র সরকার এমন করল। কাশ্মীরের মানুষ যতই অসহায় হোক না কেন কাশ্মীর এবারে সরকারকে বদলাবেই বদলাবে। আনবে রাহুলকে। একদিকে মানুষের সমুদ্র অন্যদিকে বরফের আকাশটা মাটিতে এসে পড়েছে। গাছ বলতে চিনার গাছ বিস্তির্ন আকাশ জুড়ে মেলে রেখেছে তার ডালপালা কিন্তু পাতা নেই— দেবদারু গাছের বন সারিসারি সে গাছেও পাতা নেই। পাতা ঝরা ডালেরা বরফ মেখে সাদাভুত। সেকি গো গাছে কি বরফ ফলে! মুহুর্মুহু বরফ ঝরে পড়ছে, মনে হচ্ছে যেন পাকা ফল টপ করে ঝরে পড়ল।
আমি আবার দলছুট। হয়েছি তো কি হয়েছে যে যতদূর যাবে। একাই হাঁটছি। রাস্তার লোকেরা হন ঘন করে হেঁটে যাচ্ছে। পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দল। এই মানুষটাও বরফের মতো সাদা। তবে চমকায় না। গুলো মাছের মতোই মনে হলো। খিদে পেয়েছে সবে দশ কিমি হেঁটেছি এখনো দশ কিমি হাঁটতে হবে। ভাবলাম পাশের দোকানের দিকে যাই ওখানে কাওয়া পাওয়া যেতে পারে। বেশ মজা হলো, যেতেই দেখলাম কাওয়া দিচ্ছে। দুই কাপ নিয়ে খেতেই অনেকটা বাঁচোয়া। টেবিলে লোকেরা এক ধরনের রুটি খাচ্ছে— মনে পড়লো রাম্বানে এই রুটিই দিয়েছিলো। একজন অপরিচিত যাত্রী আমাকে আধখানা রুটি এগিয়ে দিলে, চিবোতে চিবোতে রাস্তায় এলাম। দেখি কাশ্মীরি পরিবারগুলো বেরিয়ে এসেছে রাস্তায়। ওরা আমাকে ওদের ঘরে নিয়ে গিয়ে বাথরুম দেখিয়ে বললো যাও। আমি বাথরুম থেকে বেরোতেই এক কাপ কাওয়া দিলো আমি সেটা খেয়ে ফেললাম। এর পর কাগজের ঠোঙায় আমাকে বেশ কিছু আখরোট আর কিসমিস দিয়ে বললো, হামসব বদল দুঙ্গি, হামারা রাহুল আয়া। লেকিন মিলিটারিনে কাশ্মীরকো বারিমে গান্দাবাত বাতায়া। ফজরকা নামাজকা বাদ, গাঁও গাঁও সে আদমি আকে রাস্তামে আখরোট লেকর খাড়া হ্যায়। লেকিন পুলিশ রাহুলজিকো ভোড়কা দিয়া ম্যাম। দেখলিজিয়ে ২০২৪ মে হামে সব বদল দুঙ্গি। চাহে যো কুছভি হো যায়েগা”। এই রাস্তায় দেখেছি কাশ্মীরি যুবকদের, ওদের ফিরহানের হাত ঝুলছে, হাত ভিতরে ভরা। কি মজায় না হাঁটছে ওরা। কারো কারো বুকের কাছে বেশ উঁচু— আমি জানতে চাইলাম কি আছে? ওরা হেসে বললো, কাংড়ি। কাংড়ি কী? জামার ভিতর থেকে বের করে দেখালো জোনাকির মতো জুগজুগে আগুন ছাইয়ে ঢাকা আগুন। সেই তাপ তারা নিয়ে এমন বরফি ঠান্ডায় অবলীলায় হেঁটে যাচ্ছে। আমার কপাল, একা থাকতে কি দেয়। দেখি প্রমিলা দৌড়ে আসছে উল্টো দিক থেকে, “কিয়ারে তু কাঁহা খো গায়ি। হর টাইম এই সে খো যাতে হ্যাঁয়, হামারা নেতা নে হামকো বহোত ডাঁট দিয়া ডিয়ার, দৌড়কে চল।’’
আর কি বলা যায়, দৌড় লাগালাম। এই ভাবে দশ কিমি রাস্তা দৌড়ে এসে বসলাম একটা সেফ্রানের মাঠে। যাই হোক দৌড়াতে না পেরে কিছুটা জিরান নিতেই দেখি একটা বোর্ড তাতে লেখা আছে পুলওয়ামা – দেখেই মনটা মুষড়ে গেলো! চমকে উঠলাম সেই জোয়ানদের মেরেছিলো এই সরকার। কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়াতে হলো। আপনা আপনি চুপ হয়ে গেলাম। ভালো লাগেনি আবার দৌড় দিলাম এলাম পাঁপরে নামে আর একটি জায়গা। তার পরে পেলাম অনন্তনাগ। যদিও এই জায়গার নাম নাকি ছিলো ইসলামাবাদ কিন্তু নাম পালটে রাখা হয়েছে অনন্তনাগ। একটি ডিগ্রী কলেজে। মাটিতে দুই ফুট বরফ পড়ে জমে আছে আর এখানেই খাবারের টেন্ট টাঙানো হয়েছে। আমরা এই বরফের উপরে বসে দুপুরের খাবার খেলাম। এখানের তাপমাত্রা ছিলো মাইনাস। ভাবলাম আজ আর বেঁচে কাজ নেই। জমে যাচ্ছি। থাকার জায়গা নেই। কোথাও নাকি ঠিক করা যাচ্ছে না। সব জায়গাতেই এতো বরফ আর এতো মানুষকে কোথায় দেবে? শেষ পর্যন্ত এই ক্যাম্পেই থাকতে হবে। কলেজের বয়েজ ছাত্রাবাসে রাখার ব্যবস্থা হলে গিয়ে দেখি সে হোস্টেলের অবস্থা একেবারেই ভালো না। বাথরুম বলতে খুবই অপরিচ্ছন্ন। রাতের খাবার খেতে যায় নি । আর পেরে উঠিনি ঠান্ডার সঙ্গে। এখানে কিছু রেজাইয়ের ব্যবস্থা হলে কোনোক্রমে ঢুকে পড়লাম। এদিকে বাইরে কাঠ জ্বালিয়ে আগুন করা হয়েছে নিজেদের সেঁকে নিতে ডাক পড়েছে। নিচে আগুনের কাছে গিয়ে ভিজে জুতো মোজা কাপড় কিছুটা আঁচিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে আর নাস্তা খেতে যাই নি কারন সেই বরফের উপরেই খেতে হবে। বেরিয়ে পড়লাম অনন্তনাগ থেকে শ্রীনগরের পথে। আজকের যাত্রা খুব বেশি ছিলো না মাত্র দশ কিমি। কারন শ্রীনগর নাকি খুব কাছে এবারে। এই দশ কিমি হাঁটার পথেই পড়লো আবার সেফ্রনের মাঠ। মাঠে সেফ্রান নেই কারন এটা সিজিন না। কিছুদিন আগেই সেফ্রান উবলানো হয়েছে।
এই যাত্রার অন্যান্য পর্বগুলো পড়ুন নীচের সুত্রে।
https://sahomon.com/welcome/singlepost/jatra-katha:-one
https://sahomon.com/welcome/singlepost/jatra-katha:-2
https://sahomon.com/welcome/singlepost/jatra-katha-3
শ্রীনগর পৌঁছালাম রাতে। একটি সরকারি হল। সেখানেই থাকার ব্যবস্থা। কিন্তু সেখানে পৌঁছে জানতে পারলাম সরকার তো নারাজ এই যাত্রীদের থাকতে দিতে। শ্রীনগরের তুলনায় কিছুটা ঠান্ডা কম। দাঁড়িয়ে আছি রেডীও কলোনির সেই হলের প্রাঙ্গনে। স্থানীয় মানুষ অনেক চেষ্টা করলেন যাতে করে আমরা হলটা পাই কিন্তু সরকার দিলো না। ফারুকভাই নামে একজন শ্রীনগরের বাসিন্দা আমাদের কাছে এসে অনুরোধ করলেন তাদের বাড়িতে গিয়ে যেনো এক কাপ চা কফি পান করে আসি। মেয়েরা সকলেই যেতেই যেনো স্বর্গ হাতে এলো। মেঝেতে মোটা এবং নানা রঙের নয়নাভিরাম কারপেট পাতা আছে আরাম করে বসতেই এনে দিলেন আরো সুন্দর কম্বল এবং সেই আদরের কাংড়ী। কাংড়ী কি ভাবে ধরতে হয় কিভাবে এর উত্তাপ নিতে হয় ফারুকভায়ের বৌ শেখালেন। খাঞ্চা ভরে নিয়ে এলেন আখরোট কিসমিস কাওয়া। রুটি নানান মিষ্টি এবং পাউরুটি। একটি ছোট্ট মেয়ে বাচ্চি কি জানি এরাই সেফ্রন নাকি! ফারুক ভাই জানালেন তাঁরা একটি সন্তান নিয়েছিলেন কিন্তু সেটি পুত্র এবং সে বড়ো হয়েই টার্কিতে ডক্টরেট করতে চলে গেছে এবং সেখানেই একটি কলেজে পড়ায় সেখানেই সেটেলড তাই আমরা অনেক ভেবে একটি কন্যা নিয়েছি সে তাই এতো ছোটো মাত্র পাঁচ বছর বয়স। আমরা অনেকক্ষণ পরে খুব হাসলাম খুব মজা করলাম। ফারুক ভাই বললেন আমরা কংগ্রেস না, আপনাদের কি কোনো অসুবিধা হবে? আমরা বললাম আমরা সিভিল সোসাইটির মানুষ। ফারুক ভাই বললেন তবুও ২০২৪ সালমে বদলেঙ্গে। গল্প জমে উঠেছে এমন সময় ডাক এলো অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা হয়েছে আমরা ফারুক ভাইকে এবং তাঁর স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম। আজহার নামের একটি হোটেল সেখানে গিয়ে নিজের নিজের রুম নিয়ে বসলাম। রাতের খাবারের অসুবিধা হয় নি। সকালে উঠেই সাজসাজ রব আজ যাত্রার শেষ দিন। কাশ্মীরের শ্রীনগর শহরে ছুটি দিয়েছে কারন যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য। কতো যে পুলিশ মিলিটারি আধাসামরিক মানুষ! ছয়লাপ হয়ে আছে। যাত্রা শুরু হয়েছে সকাল ছয়টা পশ্চিমবঙ্গে সকাল ছয়টা সকাল হলেও শ্রীনগরে কিন্তু আঁধার। শুরু হলো জোড়োজোড়ো ভারত জোড়ো। যো দূর খাড়ি হ্যাঁয় পাশ চোলো আও হামারে সাথ চলো। হাম সংবিধান বাঁচানে নিকলি হ্যাঁয় –আও হামারা সাথ চলো। হাম আমান বাঁচানে নিকলি হ্যাঁয় আও হামারা সাথ চলো ইত্যাদি শ্লোগানে ভরপুর যাত্রা। এতো মানুষ কোথায় ছিলো ভাবা যায় নি। শতশত কাশ্মীরি মহিলা খাঞ্চা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে আখরোট, বাদাম, খেজুর, কিসমিস, চকলেট। দাঁড়িয়ে আছে থালা হাতে। ভালোবাসার প্রদীপ জ্বেলে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রা চলছে লালচকের দিকে। কিন্তু এক চৌমাথা আসতেই মানুষের বন্যা শুরু হয়ে গেলো।রাহুল গান্ধী কারো কথা শোনেন নি তিনি হাঁটছেন সারা রাস্তায় পুলিশ মানুষকে ধাক্কা মেরে মেরে ফেলে দিচ্ছে মানুষ উঠে আবার দৌড়াচ্ছে। শেষে রাহুল গান্ধী গাড়ীর ছাদে উঠে বসলেন গাড়ীটার চলার ক্ষমতা নেই। এক পাশে দাঁড়াতে হলো আমাকে- চললাম লালচক সেখানে উত্তলোন করা হলো জাতীয় পতাকা। এই যাত্রা সম্পূর্ণ করা হলো।র
এই যাত্রায় কতো কি যে শিখেছি- আগেও বলেছি এখানে অনেক শিখবার আছে। হোস্টেলে বা অন্যান্য ওয়ার্কশপে এক বিছানায় দু তিনজন মহিলা ঘুমালেও এক কম্বলে ঘুমায়নি কিন্তু এখানে পরিবেশ পরিস্থিতি সমস্ত বাধাকে কখন মুছে দিয়েছে। পাশ ফিরতে গেলে একজন কমান্ডারের দরকার ছিল। একজন ডানদিকে করোট ফিরলে একটা শ্রুতি যোগ্য কমান্ড আসলো ডাইনামোড়, অমনি ডান দিকে মোড় নিয়ে শুচ্ছি আবার বাম দিকে মোড় নিচ্ছি। এই ভাবেই চলছিল। এই চলা এক যুগান্তকারী ঘটনা। হটাৎ বৃষ্টির শব্দ আসে কানে। এমনিতেই ফোরকাস্ট ছিলো রাত ভর বৃষ্টি হবে। বুঝিনি সকাল হতেই অন্য গল্প হবে। ঠান্ডার পরিমান এতই বেশি যে ধর্ম বয়স পরিচ্ছননতা নাকি আবর্জনা নয় মানুষ কেউ আর দেখেনি এক বিছানা এক রেজাই নিয়ে ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে জিতে গেলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। সকাল হতেই বিছানা ছাড়া কিন্তু এই এত আদরের গরম ছেড়ে -১ ডিগ্রী তে ঝাঁপ দিতেই হবে। নিশ্চয়ই সেটাই করলাম। বাথরুম আছে এখানে,কিন্তু নলথেকে জল বার হচ্ছে না নলের ভিতরেই বরফ হয়ে আটকে আছে। স্নানের কথা আর বললাম না। জামাকাপড় বদলে নিয়ে রুম থেকে বেরোবার আগে একবার জানালার পর্দা সরাতে গিয়ে দেখি সেকি ! আকাশ থেকে কাটা তুলোর মতো ভাসতে ভাসতে কারা নেমে আসছে। জমিন আকাশ হয়ে আছে।এত বরফ পড়েছে সারা রাত ধরে স্নোফল হচ্ছে। স্নোফল দেখিনি কোনদিন। রাস্তা অন্যের ঘরের ছাদ গাড়ির চাল সব কিছুতেই বরফের আস্তরণ। আনন্দে নেচে উঠলো মন। নিচে নেমে এসেই বরফের উপরে ছুটে গেলাম - ওর বাস! ঠান্ডা কাকে বলে। বরফ মুঠো করতেই আঙ্গুলের মাথা ফুলে উঠোলো। সেকি ফেটে যাবে নাকি। তাড়াতাড়ি উলের গ্লাভসের ভিতরে ঢুকালাম। কাঁপুনি থামে না। পায়ের আঙুল অবশ হয়ে গেছে। দুটো উলের মোজা পরে আছি বরফে হাঁটার জন্য তুলোর প্যাদেড জুতো এসব কিছুই গরম করতে পারলো না। শেষে হোটেলের ম্যানেজার গ্যাস সিলিন্ডার জ্বালিয়ে হিটিং শুরু করলে কিছুটা আরাম পেলাম। তবুও কাঁপছি একজন এসে তার ফিরহানের ভিতর থেকে বার করে দিলো কাংড়ি। কি ভাবে নিতে হয় এই কাংড়ি কিভাবে রাখতে হয় সেটা আগেই শিখে নিয়েছি আমরা সেই ভাবেই রাখলাম কম্বলের ভিতরে। ধীরে ধীরে এক মিঠে তাপ ফিরে পেলাম। ৩০শে জানুয়ারি এক মেঘময় দিন ভারতের আকাশের। এক লজ্জার ঘোমটা টানার দিন ভারতের এক শ্রমে মাটিতে লুটিয়ে যাবার দিন ভারতের, মহাত্মা গান্ধীর রক্ত মেখেছিলো এদেশের মাটি। মাটি তাই আর বুঝি আজ দেখা দিলো না- শেরী কাশ্মীর মাঠে হবে উন্মুক্ত জনতার সামনে রাহুল গান্ধীর শওয়াল জবাব। রাহুল গান্ধী জম্মুতে ঢুকেই বলেছিলেন “হাম হামারা ঘর লট রাহিহু হামারা ঘরমে হামারা ভাই ব্যাহিন হ্যাঁয় হাম ঘরমে বাত করুঙ্গি।
বরফ ঝরার অন্ত নেই বিরামহীন বরফ ঝরা আকাশ কাঁদছে। এতো বরফের মাঝেও মাঠে মানুষের ভীড় কমছিলো না। সেদিন রাহুল গান্ধীকে দেখা গেলো একটি কালো বরশাতি আর একটি কালো টুপি পরতে। এসেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রশ্ন ছিল, এই যাত্রার মূল লক্ষ্য কি? রাহুলের জবাব সোসাল মিডিয়াতে সকলেই শুনেছেন। “এই যে ফোন সাত সকালে ফোন রিং হলে ভয় করে “কার খুন হয়ে যাবার খবর- চৌদ্দ বছরে দাদির খুন হবার খবর আমার বাইশ বছর বয়সে বাবার খুন হবার খবর, কাশ্মীরের ভাইয়েদের খুন হয়ে যাবার খবর পুলওয়ালামার জোয়ানদের নির্মম ভাবে খুন হয়ে যাবার রিং যাতে আর ঘরওয়ালিদের কাছে না আসে আমি সেই জন্য এই যাত্রা করেছি। কন্যাকুমারি থেকে কাশ্মীরের মাটি লাগাতার যাত্রীরা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেছে আর বলেছে ম্যায় আমান বাচানে নিকলি হ্যাঁয় আও হামারা সাত চলো”
ভারত জোড়ো যাত্রা এক আন্দোলনের নাম এই যাত্রা শেষ হয়নি বরং শুরু হলো। এই যাত্রায় রাহুল গান্ধী হেঁটেছেন ৩৫৭০ কিমি আমি হেটেছি ৪০০ কিমি। এই একটানা ৪০০ কিমি হাঁটার সুযোগ করে দিয়েছেন - রাহুল গান্ধী একটি ভারতে অসাধ্য সাধন করার আয়কন। এতো বড়ো রাস্তায় যাত্রা করার সাহস এবং সফল হয়ে ওঠা আর এতো ঠান্ডাতেও শুধুমাত্র টিশার্ট পরে যাত্রা করা এবং সফলতা পাওয়া। গান্ধীজীর মতই সংকল্প সুঠাম ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’। সফল জননেতা প্রমান করে দিয়েছেন।
এইগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে রাহুল গান্ধী যে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করেছেন এইটাই যথাযথ পথ। সঠিক পথ হিংসা মুছে ফেলা আর ভালোবাসা বিতরণ করা আর তাঁর পাশে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আঁচল পেতে। এইটা ভারতবাসীর মনে একটা দারুণ প্রভাব ফেলেছে।
এই যাত্রার রণনীতি যা দেখলাম সেটাও যথাযথ। মানুষকে আহবান জানিয়েছে পার্টিকে না। এই যে স্নোবলিং প্রোসেস, বরফের বল যে পথে গড়িয়ে যাবে সেই পথ থেকে কিছু বরফ জুড়তে জুড়তে একটি বিশাল বরফের বল হয়ে যায় যেমন এই যাত্রাটাও তাই। দেশের যত ছোটো ছোটো রাজনৈতিক দল আছে তাদের অনেকেই এই যাত্রার সঙ্গে জুড়ে গেছে। ভুলে গেলে চলবে না স্বরাজ তেমনি আর একটি দল যাদের বেশ দম আছে। অনেকেই দেখেছেন এয়ারপোর্টে একটা বিশাল উড়োজাহাজকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে যায় একটি ছোটো যন্ত্র। এই স্বরাজ পার্টি যেন সেই কাজটাই করছে। খেলোয়ার থেকে সিনেমার অভিনেতা অভিনেত্রী এই যাত্রাকে নিজেদের সঠিক রাস্তা বলে মনে করে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে যাত্রায় পা মিলিয়ে গেছেন। অসংখ্য সিভিল সোসাইটির মানুষ হেঁটে গেছেন-এই যাত্রায় ২০২৪ এ বিজয় দিবস অপেক্ষা করছে রাহুল গান্ধী তথা ভারতের মানুষের জন্য।
জয় নেতাজী
জয়হিন্দ।