জার্মানিতে শিক্ষারত এবং বর্তমানে চাকুরীরত, আমার ছাত্র জার্মানির নানান গল্প শোনায়। তার কাছে শুনেছিলাম এঞ্জেলা মর্কেলের জয়ের নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা নেয় জার্মানির বামপন্থীদের গ্রীন মুভমেন্ট সংগঠন। এই সংগঠনের সমর্থন পুষ্ট হয়ে মর্কেল জয় নিশ্চিত করেন। সে কথা শুনে আশ্বস্ত হয়েছিলাম। এমনকি "সহমন" এর দেয়ালে পোস্ট করেছিলাম, এই সম্পর্কিত লেখা, যে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক বামপন্থীরা পরিবেশ আন্দোলনকে চোখের মণি করে এই বাংলায় নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে। এই তো সেদিন সেই ছাত্র অল্প সময়ের জন্য মাত্র পাঁচ দিন হাতে নিয়ে দেশে ফিরেছিল। এসেছিল দেখা করতে। তাকে এবার পাল্টা প্রশ্ন করলাম, এবার মর্কেল কেন হারলো? গ্রীণ মুভমেন্টের বামপন্থীদের সাপোর্ট কি মর্কেল পায়নি? নাকি মর্কেল গ্রীণ মুভমেন্টের বেসিক প্রিন্সিপলস থেকে সরে গেছে? নাকি জার্মানিতে গ্রীণ মুভমেন্ট নিজেই দুর্বল হয়ে গেছে? এই তিনটের একটা তো হতেই হবে।
উত্তরে আমার সেই ছাত্র ভারী উৎসাহ ব্যঞ্জক কিছু কথা শোনালো। ও বলল গ্রীণ মুভমেন্ট যদি খুব চরম গোঁড়ামির একটা অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে সেই গোঁড়া আন্দোলন আরেকটি গোঁড়ামীর নিকটস্থ - ঘনিষ্ট হয়। মানে ধরুন, পরিবেশ রক্ষা, সাবেক জীবন যাপন, আধুনিকতা বর্জন, এই সূত্র ধরে আপনি কিন্তু তপোবনের জীবন চর্চা, বৈদিক জীবন, মনুবাদী জীবন চর্চা, এর মধ্যে প্রবেশ করে যেতে পারেন সহজে। গৌরবময় অতীত, "সবই ব্যাদে আছে"। জার্মানিতে শক্তিশালী বামপন্থী গ্রীণ মুভমেন্ট কার্যত উচ্চবিত্ত অভিজাত জীবন যাপনে মানুষকে টেনে নিয়ে যায়। ফলে মানুষ থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উচ্চবিত্ত জীবন যাপন বলতে গ্রীন মুভমেন্টের নেতারা গরুর বা কোনো পশুর দুধ খান না। পশু পাখির মাংস খান না। পরিবর্তে সোয়াবিনের দুধ খান। এক কথায় এরা হলো শুদ্ধ শাকাহারি বা ভেগান। ভেগান বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি নিরামিষভোজী এবং একই সাথে প্রাণীজ উৎস থেকে তৈরি কোনো খাবার বা পণ্য ব্যবহার করেন না, যেমন - মাংস, ডিম, দুধ, মধু, চামড়া, পশম ইত্যাদি।
অন্যভাবে বলা যায়, ভেগানরা খাদ্য, পোশাক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে প্রাণীদের শোষণ এবং নিষ্ঠুরতা যতদূর সম্ভব এবং বাস্তবসম্মতভাবে এড়িয়ে চলে। ভারতে ভেগান জীবন যাপনের অন্যতম প্রধান প্রতিনিধি বিরাট কোহলি। এমনই জীবন যাপনের জন্য বিশেষ উল্লেখযোগ্য ফ্যাব ইন্ডিয়া। যেখানে বলা হয়ে থাকে রুচিসম্মত, দেশের ঐতিহ্যসম্মত, গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সাবেক জীবন যাপনের রীতি সম্মত, উপাদান পাওয়া যায় ফ্যাবইন্ডিয়া স্টলে। টেকসই এবং নীতিগত ফ্যাশনের প্রতি প্রতিশ্রুতির জন্য আলাদা , গ্রামীণ ভারতের কারিগরদের দ্বারা তৈরি, সমসাময়িক জাতিগত পণ্যগুলি উপস্থাপন করে এবং ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প সংরক্ষণ এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান প্রদানের উপর তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। এই জীবন-যাপন কার্যত সাধারণ মানুষের জীবন চর্চা থেকে এক মহাসমুদ্র ব্যবধান।
একবার ভেবে দেখুন, দিল্লির পরিবেশ দূষণ নিয়ে কথা বলতে গেলেই, চাষীদের খড় পোড়ানোর কথা বলা হয়।অথচ রাজধানী দিল্লির লক্ষ কোটি এসি মেশিন, লক্ষ কোটি টু হুইলার ফোর হূইলার, আধুনিক শিল্প, এসবকে প্রশ্নের আওতায় আনা হয়না। কৃষকরা খড় পোড়ায়, সেটাকেই প্রধানত কাঠগড়ায় তোলা হয়। বনবাসী মানুষ তো জঙ্গলের ক্ষতি করে না। তারা বেছে বেছে জঙ্গলের শুকনো ডাল পাতা এসব সংগ্রহ করে। বড় বড় বৃক্ষ ছেদন করা হয় মূলত কাঠের ব্যবহারের জন্য।রেল লাইনের শ্লিপারের জন্য, নামিদামি বিলাসবহুল প্রাসাদ, হোটেল, অতিথি শালার জন্য, আসবাবের জন্য, দরজা জানালার জন্য। দেয়ালে কাঠের কারুকার্যের জন্য। কিন্তু বনবাসী জঙ্গলকে রক্ষা করে, তার ক্ষতিসাধন করে না। কারণ তার জীবন যাপন নির্ভর করে আছে ওই জঙ্গলের ওপর। অথচ বনাঞ্চল অরণ্য রক্ষার অজুহাতেই জঙ্গলের ওপর বনবাসীর অধিকার লুপ্ত হয়। এভাবে একটি পরিবেশ আন্দোলনের চরম মুর্খামির মূল্য চুকাতে হয় সাধারণ দরিদ্র জনতা কে।
কথাগুলো শুনলেই মনে পড়ে যাচ্ছিল, বিংশ শতকের গোড়ায় স্বদেশী আন্দোলনের কথা। যেখানে প্রধানত উচ্চবিত্তের নেতৃত্বে স্বদেশী আকাঙ্ক্ষার একটি আন্দোলন শুরু হয়েছিল। যে স্বদেশী জীবন-যাপন বাস্তবিকই ছিল সাধারণ জনজীবন থেকে ঢের ঢের দূরে। ফলে জনসমর্থন না পেয়ে এই আন্দোলন শেষাবধি ব্যর্থ হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ঘরে বাইরে উপন্যাসে নিখিলেশের মুখ দিয়ে এই স্বদেশী আন্দোলনের দুর্বলতা গুলি বিশ্লেষণ করেছেন। এক কথায় বলা যায় স্বদেশী ভান্ডারের উৎপাদন ও সরবরাহের ক্ষমতা, অত্যন্ত সীমাবদ্ধ হওয়ার কারণে এর দাম ছিল মাত্রাধিক। ফলে চালু প্রবাদ ছিল "খদ্দর পরে ভদ্দর লোকে"। সাধারণ গরিব গুরবো, হাসিম শেখ, রামা কৈবর্তরা মিলের মোটা কাপড় পেতো অনেক সস্তায় এবং সাধ্যের মধ্যে। স্বদেশীরা সেই মিলের বস্ত্র পুড়িয়ে দিয়ে সাধারণের চোখে অন্য - অপর ও শত্রু হয়ে উঠেছিল। আর এই ব্যর্থতার একটা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে এসেছিল নিহিলিস্ট, গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি, ব্যক্তিগত অ্যাডভেঞ্চার, সশস্ত্র গুপ্ত বিপ্লবী সমিতির যুগ।
গ্রীন মুভমেন্টের মৌলিকত্ব ও গোঁড়ামি ক্রমাগতই বাস্তবতা বর্জিত ও জনজীবন বিচ্ছিন্ন আন্দোলনে পরিণত হয়। পুঁজিবাদ অপরিমিত সীমানাহীন মুনাফার আকাঙ্ক্ষায় অপরিমিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস সাধন করে। এর অর্থ তো এটা নয় যে, কোনরকম প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করব না। আসলে জীবজগৎ তার জীবন ধারণের প্রয়োজনে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করবে। হরিণ গাছের কচি পাতা খেয়ে তৃপ্ত হবে। আবার বাঘ নিতান্তই খাদ্যের প্রয়োজনে হরিণের পিছে ধাইবে। এতে কোন অন্যায় দেখিনা। আসলে গোলমাল তো অন্যত্র, অপ্রয়োজনে, ভরা পেট থাকা সত্ত্বেও বাঘ যদি তিনটি হরিণকে মেরে এনে গুহায় সঞ্চয় করত। সেটা হতো প্রকৃতি ধ্বংস ও অন্যায়। কোনও প্রাণীই সেটা করেনা, মানুষ ছাড়া। প্রকৃতির ন্যূনতম ক্ষতিসাধন করে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে, প্রকৃতি থেকে আহরণ করে, যে টিঁকে থাকা, সেটার নামই তো সার্থক অভিযোজন। কিন্তু বামপন্থী গ্রীন মুভমেন্ট কোন প্রকার প্রাণিজ সম্পদ আহরণ করার বিরোধী।
আলডাস হাক্সলি ১৯২৬ সালে বোস ইনস্টিটিউট পর্যবেক্ষণ করে বলেছিলেন, যে সমস্ত মানুষ প্রাণ হত্যা করবেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, প্রাণী হত্যায় কষ্ট পান ও ফলতঃ নিরামিষাশী, তারা এই ইনস্টিটিউটে এলে দেখতে পেতেন, উদ্ভিদের প্রাণ কতটা সংবেদনশীল। সামান্য উৎসেচক প্রয়োগ করার ফলে উদ্ভিদের মধ্যে কি প্রবল উত্তেজনা যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়। সেগুলো দেখলে বোঝা যায় প্রাণী হত্যার অপেক্ষা উদ্ভিদ হত্যাও কম অপরাধ নয়। তিনি লিখেছেন, " The spectacle of a dying animal affects us pain-fully; we can see its struggles and, sympatheti-cally, feel something of its pain. The unseen agony of a plant leaves us indifferent. To a being with eyes a million times more sensitive than ours, the struggles of a dying plant would be visible and therefore distressing. Bose's instrument endows us with this more than microscopical acuteness of vision. The poisoned flower manifestly writhes before us. The last moments are so distressingly like those of a man, that we are shocked by the newly revealed spectacle of them into a hitherto unfelt sympathy." অতএব নিরামিষাশী বা আমিষভোজির প্রশ্ন নয়। প্রশ্নটা হল কত কম প্রাকৃতিক শক্তি ও সম্পদের ধ্বংস সাধন করে টিঁকে থাকা যায় । প্রকৃতির খাদ্যশৃংখল কে মেনে নিয়েই, ন্যূনতম চাহিদা সম্পন্ন জীবন যাপন। এটাই যথার্থ ও সার্থকভাবে প্রকৃতির সাথে অভিযোজন।
পরিবেশ আন্দোলনে পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে বায়ো ফুয়েলের ব্যবহার নিয়ে খুব চর্চা চলছে। পেট্রোলিয়াম অর্থাৎ ফসিল অয়েল এর ক্রমবর্ধমান চাহিদার সামনে বিকল্প ফুয়েল বা জ্বালানি সন্ধান করা পুঁজিবাদের পক্ষে একান্ত জরুরী শর্ত। কারণ আধুনিক যুগে পেট্রোলিয়াম হল জ্বালানি ও শক্তির অন্যতম উৎস। পরিবেশ আন্দোলনকারী দের অনেকেই মনে করেন, পেট্রোলিয়াম বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। সেই বিচারে বায়োফুয়েল ইথানল অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এই ধারণা বেশ কিছু পরিবেশ আন্দোলনকারীর ভাবনায় ঢুকে গেছে। ফিদেল কাস্ত্রো এই ধারণার ভ্রান্তি গুলি দূর করতে বেশ কিছু নামিদামি অধ্যাপক গবেষকদের লেখা পত্র ও মতামতের সাহায্য নিয়েছিলেন। লক্ষ্যণীয় পরিবেশ কর্মীর চিন্তা ও দাবি গুলি কিভাবে পুঁজিবাদের স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়।
প্রথমত বায়ো ফুয়েল থেকে প্রাপ্ত ইথানল জ্বালানি হিসেবে কিছু কম কার্বন নিঃসরণ করলেও, আখ ও খাদ্য শস্য থেকে ইথানল প্রস্তুত এই পুরো পর্বে, প্রক্রিয়াগত কারণে, ভূপৃষ্ঠে অনেক দূষণ সৃষ্টি হয়। জলের উৎসে নাইট্রেট, হারবিসাইড, পেস্টিসাইড, মিশ্রিত হয় এবং সর্বোপরি বিপুল পরিমাণ বর্জ্য সৃষ্টি হয়। বাতাস অ্যালডিহাইড এবং অ্যালকোহল দূষণ হয়। যা কিনা ক্যান্সারের কারণ। বাস্তবিক "গ্রীন এন্ড ক্লিন ফুয়েল" একটা ছেলে ভোলানো চমক ছাড়া কিছুই নয়।
এছাড়াও মীনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপক C Ford Runge এবং Benjamin Senauer তাদের লেখা বইয়ের নামকরণ করেছেন How Biofuels Could Starve the Poors. নামকরণ থেকেই এটা স্পষ্ট যে উত্তর গোলার্ধের দেশ গুলিতে ভৌগোলিক কারণেই জনসংখ্যা অত্যন্ত কম। ফলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ অনেক বেশি। দক্ষিণ গোলার্ধে মাথাপিছু জমির পরিমাণ অনেক কম বলা যায় উত্তর গোলার্ধের প্রায় অর্ধেক কিন্তু এতদঅঞ্চলে জনসংখ্যা ও কৃষি সমৃদ্ধি অত্যন্ত বেশি। যদি বেশি বেশি ইথানল উৎপাদনের জন্য বায়ো ফুয়েলকে চোখের মনি করে আখ চাষে অধিক দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়, তাহলে অন্যান্য খাদ্যশস্যে উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। তাছাড়া বায়ো ফুয়েল এর উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধির ফলে কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য বনাঞ্চল ধ্বংস করা হবে। Deforestation হবে পরিবেশ দূষণের শর্ত।
Lester Brown দেখিয়েছেন ২০০৬ সালে ২০ মিলিয়ন টন শস্য উৎপাদনের ১৪ মিলিয়ন টন বায়ো ফুয়েল উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। মাত্র ৬ মিলিয়ন টন মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়। Brown concluded that a scenario is being prepared where a head on confrontation will take place between the a handful of prosperous car owners and the numerous food consumers. মুষ্টিমেয় ধনী সম্পদশালী গাড়ির মালিক এবং অসংখ্য কাতারে কাতারে ক্ষুধার্ত মানুষ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। একটি নিপাট, আপাত নিরীহ, পরিবেশ বান্ধব স্লোগান, আসলে কি ভয়ংকর ভাবে মানবতা বিরোধী হয়ে উঠতে পারে, তার নিদর্শন এই বায়ো ফুয়েল তত্ত্ব।
The land and its products, the rivers and the mountains, the jungles and the forests became the target of its irrepressible pillage. Foodstuffs of course, could not escape this hellish dynamic. Capitalism turns everything that crosses the path into merchandise. জল, জমি, জঙ্গল, পাহাড়, মাটির ওপরে, মাটির নিচে, যা কিছু সব পুঁজিবাদের করায়ত্ত হতে হবে। সে নিজেই পেট্রোলিয়াম উত্তোলন করে কার্বন নিঃসরণ করে প্রকৃতি ধ্বংস করবে। আবার প্রকৃতি বাঁচানোর ধুয়ো তুলে পুনরায় প্রকৃতিকে আরেক প্রস্থ ধ্বংস করবে।
এ পর্যন্ত ভাবনা-চিন্তায় জট পাকায়নি। কিন্তু সবকিছু গোল মেলে ঘেঁটে গেল আমার ছাত্রের কথা শুনে। জার্মানিতে ওই বামপন্থী গ্রীন মুভমেন্টের শোচনীয় পতন ও অবক্ষয়ের বিপরীতে, নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান, যাদের হাতে মর্কেল সরকারের পতন ঘটল। এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো দড়ির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার ব্যালেন্সের খেলায় দেখেছি, যখনই একটু ব্যালেন্সে অভাব ঘটে, তখন খেলোয়াড় একটা চরম বাঁদিকের বা ডানদিকের ঝোঁক নিয়েই পুনরায় চরম ডানদিকে বা বাঁদিকের ঝোঁক নেয়। এভাবে বার কয়েক ডান এবং বাঁদিকে ঝোঁকের মধ্য দিয়ে সে একটি ভারসাম্য ফিরে পায়। ফলে ঐতিহাসিক ঘটনার বিচারে চরম দক্ষিণ পন্থা ও চরম বাম পন্থা কার্যত একে অপরের পরিপূরক। ফ্যাসিবাদ এর ইতিহাস তো তেমনই বলে। বিপ্লবী পরিস্থিতির মাহেন্দ্রক্ষণে পরিস্থিতির সদ্ব্যবহারে বিপ্লবী শক্তি ব্যর্থ হলে, প্রতি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ফ্যাসিবাদ একটি প্রতি বিপ্লব।
তাছাড়া স্বাধীনতার অনতিবিলম্বে আমাদের দেশের প্রথম তিনটি নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করে বলা যায়, দ্বিতীয় স্থানে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টি, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর কার্যত শূন্যের পথে এগিয়ে চলেছে। আর বিপরীতে যে আরএসএস বা হিন্দু মহাসভা ছিল আণুবীক্ষণিক শক্তি তারা ক্রমেই বাড়তে বাড়তে আজ দেশের এক নম্বর রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ এর নির্বাচনে আমরা দেখেছি কিভাবে একটি বামপন্থী দলের ৩০ থেকে ৩৪ শতাংশ ভোট সরাসরি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের দিকে ঢলে পড়েছে। তাহলে কি অন্তর্নিহিত ভাবে কোথাও কমিউনিস্ট এবং ফ্যাসিস্ট এর মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যে বৈশিষ্ট্য অতি সহজেই একটি থেকে অপরটিতে হস্তান্তর হতে পারে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ও বিশেষভাবে শিল্প উৎপাদনের পথ কি হবে, এই প্রশ্নে লেনিন বলেছিলেন, বিসমার্কের যুগে জার্মানির দ্রুত অগ্রগমনের মডেলটি এক্ষেত্রে আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণযোগ্য।To make things even clearer, let us first of all take the most concrete example of state capitalism. Everybody knows what this example is. It is Germany. Here we have “the last word” in modern large-scale capitalist engineering and planned organisation , subordinated to militarist Junker-bourgeois imperialism. Cross out the words in italics, and in place of the militarist, Junker, bourgeois, imperialist state put also a state, but of a different social type, of a different class content—a Soviet state, that is, a proletarian state, and you will have the sum total of the conditions necessary for socialism. Socialism is inconceivable without large-scale capitalist engineering based on the latest discoveries of modern science. (Lenin, “‘Left Wing’ Childishness…”)।
তাই প্রশ্ন জাগে কোথাও কি সাংগঠনিক কাঠামোগত ভাবে বা দার্শনিক চিন্তার চরমতার দিক থেকে, এই দুটি ধারণা পরস্পর বিপরীত, আবার খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ ?কারণ সরলরেখা আর বক্ররেখার পার্থক্য আমরা স্কুল শিক্ষা পর্বে উপলব্ধি করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একটু বিশদে ভাবতে গিয়ে দেখেছি প্রতিটি সরলরেখা আসলে একটি বৃহত্তর বক্ররেখার একটি ক্ষুদ্র অংশ বিশেষ। অর্থাৎ যা কিছু আপাত বিপরীত, তা কিন্তু সবই প্রকৃত অর্থেই বিপরীত নয়।
এইখানে মনে পড়ে গেল সেই পূর্ব আলোচিত বৌদ্ধ চতুর্দশ নির্দেশিকার প্রথম টি। Do not be idolatrous about or bound to any doctrine, theory or ideology, even Buddhist ones. Buddhist systems of thought are guiding means ; they are not absolute truth. কোন বিশেষ তত্ত্ব, আদর্শ বা নীতিকে আরাধ্য আসনে স্থাপন কোরো না। এমনকি সেটা যদি বৌদ্ধ সূত্র হয়, তাকেও আরাধনা করোনা। বৌদ্ধ ধর্মমত চিন্তার একটা তরিকা মাত্র। কিভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে, সেটাই শেখায়। বৌদ্ধমত গুলিও চরম সত্য নয়। কোন মতান্ধতা নয়।