পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

ডিফিট বিজেপি কথাটায় কার কার আপত্তি ?

  • 12 April, 2024
  • 0 Comment(s)
  • 1051 view(s)
  • লিখেছেন : উপল মুখোপাধ্যায়
বাংলায়, ইন্ডিয়া জোটের নির্বাচনী ঐক্য হয়নি। ঠিক যেমন হয়নি কেরালাতে। তাহলে ইন্ডিয়া জোটের কোনও শরিক, যদি বাংলায় বা কেরালায়, এই শরিকদলের কোনও একটি দলকে ভোট দিতে না বলে, জনগণের বিচারবুদ্ধির ওপর ছেড়ে দিয়ে বলে বিজেপিকে হারান, কাকে হারানো উচিৎ, তা যদি জনগণের প্রজ্ঞার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভুল কোথায়?

ইন্ডিয়া জোট তৈরি হয়েছে বিজেপিকে হারানোর উদ্দেশ্য নিয়ে। এই জোটে এ থেকে জেড সব মতের সবাই আছে। যারা আছে তাদের মধ্যে নানা রাজ্যের শাসক বা  কেন্দ্রের প্রাক্তন শাসক ও বর্তমানের অপেক্ষমাণ শাসক কংগ্রেস। আছে নানা ঘরাণার বামেরা। যারা আছে তাদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটির দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সে সব ঝগড়াঝাঁটির লিগ্যাসির বোঁচকাবুঁচকি নিয়েই সবাই জড় হয়েছে। এদের মধ্যে দুর্নীতির লিটমাস টেস্ট চালু হলে দেখা যাবে অনেকেই ফেল করবে কারণও পরিষ্কার- শাসক হলেই স্বজনপোষণ আর দুর্নীতি, জলে মাছের মতই স্বাভাবিক। এমনকি শাসনে দড় বামপন্থীদের বড় অংশের বিরুদ্ধে শাসনের পাঁক গায়ে লাগার অভিযোগ অস্বীকার করা যায় কি ? তাহলে ইন্ডিয়া জোটটা গড়ে উঠেছে কেন ? কোন আদর্শগত সমসত্ত্ব  তালমিল থেকে এটা যে গড়ে ওঠেনি তাতো বোঝা গেল কিন্তু গড়ে উঠল কেন ? সাত কাণ্ড রামায়ণ হয়ে যাবার পর এ প্রশ্ন যে বা যারা করবে তাদের পরিস্থিতির তাগিদ নিয়ে ধ্রুব রাঠির মতো উদ্দীপক ভাষণ শোনান উচিত। হ্যাঁ , ধ্রুব ঠিক এটাই করেছেন-উদ্দীপক ভাষণ দিয়ে বুঝিয়েছেন কেন বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গের শ্লোগান তোলাটাই জরুরি । নাহলে যে স্বাধীনতা বিপন্ন  হয়, গণতন্ত্র বাতিল আর সংবিধান ছিনতাই হয় হিন্দুত্বের , ফ্যাসিবাদের আস্ফালনে। ধ্রুবর রেফারাল পয়েন্টটাও ছোটখাট কোন আইকন নয়- আশাকচুম্বি আদর্শবাদের প্রতীক শহীদ এ আজম ভগৎ সিং আর নেতাজি সুভাষ। নাহলে ক্লিশে হয়ে যাওয়া সেই কথাটা ধ্রুব মনে পড়ালেন কেন। নেতাজির সেই কথাটা, সেই অমোঘ আহ্বান “ তোমরা আমাকে রক্ত দাও! আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব!” সত্যি কৌচের আরামে বসে স্মার্ট টিভিতে ধ্রুবর তানাশাহী বিরোধী ভিডিও দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল বেতো হাঁটু আর গোড়ালির ব্যথা যেন বেশ কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গেছি! গায়ের রক্তের থেকে স্বাধীনতার দাম, গণতন্ত্রের দাম যে সত্যিই অনেক বড়! ভগৎ সিং ,নেতাজি, নানা ধারার শহীদরা তো তাই শিখিয়েছিলেন! কত আর স্বার্থপর হব ! একটা কিছু করি। ! করি একটা কিছু। এবারের ভোটটা দিই বিজেপিকে হারানোর জন্য! যে হারাতে পারবে সেই পাবে ভোট! তার জন্য চাঁদ সদাগরের মতো দরকারে বাঁ হাতেই নয় দেব!  মনে মনে আউড়াতে থাকলাম ডিফিট বিজেপি! ডিফিট বিজেপি ! নো ভোট টু বিজেপি! এতটাই হাইপার হওয়াই কি পরিস্থিতির দাবি নয়?
কিন্তু পশ্চিম বাংলা এক আজব জায়গা । এখানে বাম আন্দোলনের ব্যাঙ্ক  ব্যালান্স ভাঙিয়ে  তিন দশক ধরে একটা বামফ্রন্ট সরকার চলে আর তারপর তৃণমূল আসে। তারাও তিনটে টার্মে যথেষ্ট পচে আর তার গন্ধও ছড়ায়। ফাঁক তালে বিজেপি ঢোকে। সবাই জানে বিজেপি যখন ঢোকে সে শুধু রাজনীতির বক্তৃতাবাজি, শুধু পলিটিক্যাল স্পেস নিয়ে খেলে না সে মন নিয়েও খেলে। ন্যারেটিভের পর ন্যারেটিভের পরত চড়ানোর সে খেলা মানুষকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়ে সেই টিনা থিয়োরি যে - বিজেপির কোন বিকল্প নেই। এখানেও তাই হয়। “তৃণমূলের  থেকে আরকি খারাপ হবে ?”- এই সাচ্চা  বিজেপি ন্যারেটিভটা  সব অ-তৃণমূল প্রধান দল ও সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশের মন জয় করে নেয়। তিন দশকের ক্ষমতা থেকে হটে যাওয়া বামফ্রন্টকেও প্রভাবিত করে। তারা ইন্ডিয়া জোটের রণ আহ্বান, এই সময়ের ফ্যাসিবাদ বলুন তানাশাহী বলুন, সবার বিরোধী রণ আহ্বান ডিফিট বিজেপি - বিজেপিকে হারান  বলতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে, ভাবে ফাঁক তালে তৃণমূল বেরিয়ে যাবে না তো! তাই তারা বলে বামেরা কত ভালো। বামেরা কত আদর্শবাদী। কত শিক্ষিত !  নিজেদের অস্তিত্ব ফিরে পাবার জন্য এই সব কথা নানা ভাবে তারা বলতে বলতে বিজেপির তৃণমূল বিরোধী ন্যারেটিভের বশেই থাকে। ইন্ডিয়া জোটে থেকেও  ডিফিট বিজেপি তারা বলতে পারে না।
এই দশা পশ্চিম বাংলায় শুধু বামেদের হয় না। ইন্ডিয়া জোটের  কংগ্রেসও বিজেপি বিরোধিতাকে পশ্চিম বাংলায় তৃণমূল বিরোধিতার ন্যারেটিভের অধীনে রাখে। ইন্ডিয়া জোটে স্থানীয় সবচেয়ে শক্তিশালী শরিক তৃণমূলও বিজেপির ন্যারেটিভ বাজি, মন জয় করার খেলার শিকার বনে যায়। তাদের শ্লোগানও ডিফিট বিজেপি থেকে ক্রমশ সরে এসে বিরোধীদের বিসর্জনে পর্যবসিত হয়েছে। এটা যে বিধানসভা নয় লোকসভার  ভোট আর তারা ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক সে তারা মনে রাখে কি ? সিপিএম আর কংগ্রেস তো ল্যাং মারামারির খেলা খেলতে গিয়ে তৃণমূলকে ইন্ডিয়া জোটের রাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করছে। তৃণমূলকে দেখেও মনে হচ্ছে তাদের একটাই লক্ষ্য আর তাহল নির্বাচনে মেরেকেটে যত বেশি পার আসন জেত, তারপর ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে দর কষাকষি কর।
দিনের শেষে পশ্চিম বাংলায় ইন্ডিয়া জোটের গুরুত্বপূর্ণ  শরিকরা বিজেপির ন্যারেটিভের অসহায় শিকার হয়েই যে সমস্বরে ডিফিট বিজেপি, বিজেপিকে হারাও বলতে পারছেন না তা কে বলবে! কাকস্য পরিবেদনা আরকি!

0 Comments

Post Comment