একটা ঘটনা বললেই বুঝবেন, সে দিন তখন সন্ধেরাত, এই ঘরে আমরা মাধবসহ তিন জন আর দুটো বিড়ালছানা, তারা ছুটোছুটি, খুনসুটিতে মেতে আছে; আমরা নানান কথায় মশগুল হঠাৎ নন্দিনী ভয়ার্ত বলে উঠল, 'ভিমরুল !' তার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমরা দেখলাম, মেঝেতে একটা ভিমরুল হাঁটছে, হাঁটাটা কেমন যেন। মাধব বলল, 'ও আহত।' বলে ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে তাকাল।তখন নন্দিনী বলল, 'বাচ্চাদুটো হুল না খায় !' মাধব বোধহয় নন্দিনীর মুখে আশঙ্কার রঙ দেখে বলল, 'হ্যাঁ, যদি শিকার ভেবে ধরতে যায়--' শিউরে উঠে নন্দিনী আমাকে বলল, 'কিছু একটা করো !' মাধব বলল, 'বিছানা ঝাড়ার ঝ্যাঁটাটা দাও !' ঝাঁটাটা নিয়ে ভিমরুলের মন্থর চলা নিরীক্ষণ করল কিছু সময়। তারপর এক বাড়ি ! নন্দিনী বলে উঠল, 'মেরে দিলে!' কেমন যেন অবিশ্বাস্য-- মাধব এমন নিষ্ঠুর পারল ! নন্দিনীকে কেমন যন্ত্রণাকাতর দেখে মাধব বলল, 'মুক্তি ভাবো !' বিস্ময় আর একই সঙ্গে না বুঝতে পারার দৃষ্টি লক্ষ করে আমি নন্দিনীকে বললাম, 'তোমার আশঙ্কা, ছানাদুটোর সম্ভাব্য বিপদ আর ভিমরুলের ট্রম্যা থেকে মুক্তি-- বোধহয় এ রকম কিছু...' বলার পর খেয়াল করলাম, নন্দিনীর মুখে আশ্চর্য প্রশান্তি--
হ্যাঁ, এই 'ট্রম্যা' থেকে একটা গল্প শুরু করা যায়।
একদিন মাধব যেমন আসে, এল। তাকে খুব অসুস্থ দেখাচ্ছিল, কী রকম যেন আমি তার বর্ণনা দিতে পারব না। মাধব খুব বিষণ্ণ মানুষ, তার মুখে বিষাদ খেলা করে-- সেই বিষাদের সঙ্গে কী যেন একটা মিশে আছে। আমি জানতে চাইলাম, 'তোর কি কোনও অসুখ করেছে মাধব?'
সে মাথা নেড়ে জানাল, না।
'তা হলে তোকে এ রকম দেখাচ্ছে কেন?'
কিছু না বলে মাধব যেন গভীর কোনও ভাবনার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। এক সময় বলল, 'বীভৎস সব ঘটনা ঘটছে চোখের সামনে, আর নিতে পারছি না--'
'কী হয়েছে?'
'একটা ঘটনা বলি-- দিন আগে আমি শিয়ালদা চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, পিক আওয়ার কল্পনা
কর-- মানুষের যাতায়াত... একটা বিস্ফোরণ-- ছিন্নভিন্ন হাত পা ধড় মুণ্ডু উড়ে যাচ্ছে আকাশে, শুন্য থেকে ঝরে পড়ছে-- স্মৃতি না দুঃস্বপ্ন-- আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কিন্তু ঘটছে-- জীবন্ত জ্বলছে মানুষ আর তাকে ঘিরে উল্লাস করছে মানুষই-- ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসছে, না কি ঘটছে এই সময়ে-- মনেও করতে পারছি না, এ রকম খবর সম্প্রতি পড়েছি কি না। ঘর পুড়ছে দাউদাউ, ভয়ার্ত মানুষ ছুটছে... একাত্তরের যুদ্ধের উদ্বাস্তু স্রোত না কি কাশ্মীর-গুজরাট ফাইলের দৃশ্যরা মাথা থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে চোখের সামনে--'
তারপর সে চুপ হয়ে গেল। আমার বলতে ইচ্ছে হল, এ হল দেশ-কাল সম্পর্কে মাথার মধ্যে নেগেটিভ তথ্য-সঞ্চয়নের ফল-- ইচ্ছে চেপে বললাম, 'এ তো আবহমান সময়ের ইতিহাস ! জৈব বিবর্তন, সমাজ-বিবর্তন, যা-ই বলিস না কেন, তার চালিকাশক্তি-- এর মধ্যে ঢুকছিস কেন তুই?' কথাটা শুনে মাধব বলল, 'আমরা তো ঢুকেই আছি-- এই বহমানতা থেমে যাওয়া উচিত ! কিন্তু কীভাবে !'
শেষ কথাটা যেন আমাকে নয়, সে নিজেকে শোনালো। তবু আমি অস্বাভাবিক জোর দিয়ে বললাম, 'ইম্পসিবল !'
মাধব আমার মুখের দিকে অদ্ভূত তাকিয়ে থাকল। বললাম, 'এটা তুইও জানিস বাট আনকন্সাস্লি-- আমার মনে হয়, এই জানাটা প্রকাশ পাচ্ছে তোর ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্নে, জাগ্রত অবস্থায় দুঃস্মৃতিতে--'
'তা হবে। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নও-কিন্তু দেখি! এমনকি, জেগে থেকেও ভাবনা আসে, কাল এটা ঘটবে, কাল না হয় পরশু অথবা তার পর কোনও দিন-- ঘটাটা অনিবার্য, এ রকম মনে হয়-- যুদ্ধ...'
শ্রোতাবন্ধু, আপনারা জানেন, এই মনে হওয়াটা-কিন্তু নতুন নয়। আমাদের যৌবনে, সেই যে 'বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারি দিকে'র সময়ে এক অনিবার্য 'ধর্মযুদ্ধ'-কে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম-- আমি এ কথা মাধবকে মনে করিয়ে দিতে গিয়েও পারলাম না। মনে হল ওই তত্ত্ব থেকে মাধব বেরিয়ে এসেছে বলেই সে এই বহমানতার থেমে যাওয়া উচিত বলে মনে করছে-- আমি বললাম, 'আচ্ছা ঘটতে দে, ঘটুক ! এবং আমরা ভাবতেও পারি, কীভাবে থামিয়ে দেওয়া যায়। তুই বরং একটা স্বপ্নের গল্প শোনা !'
সে যেন আমার আবদার মেনে নিলো, এবং একই সঙ্গে একটা স্বপ্নের কথাও যেন সে মনে করতে পারল, বলল, 'আরও একটা ব্যাপার ঘটছে-- চেনা মানুষকে অচেনা লাগছে, নাম-ধাম মনে পড়ছে না বা ভুল নামে ডাকছি কাউকে-- এ রকম একটা ব্যাপার, বাসের মধ্যে-- একটি মেয়েকে আমার খুব চেনা মনে হচ্ছে, এর আগে কোথায় দেখেছি-- মনে করতে পারছি না... এক সময় মনে হল, মেয়েটিও যেন আমাকে দেখছে, সেও কি আমাকে চেনা মনে করছে-- সেই মুহূর্তে আমার মনে হল কোনও এক বিস্মৃত স্পেস থেকে আমরা উঠে এসেছি...'
মাধব আবারও নিশ্চুপ হয়ে গেল। এক অন্য রকমের প্রেমের গল্পের আভাস পাচ্ছিলাম, ওর শেষ কথার পরে আমি সাবলীল ভাবতে পারলাম, আমরা কেউ কাউকে চিনতে পারছি না... গল্প শোনার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলাম, 'তার পর?'
'তার পর আমার আগেই মেয়েটি নেমে গেল।'
'গল্প শেষ?!'
'ন্না। গল্প চলছে। তবে স্বপ্ন না। চোখ বন্ধ করলেই তখনও আমি মেয়েটিকে দেখতে পাচ্ছিলাম। কান দুটো খোলা রেখে মাথাটা ওড়না দিয়ে ঢাকা। সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। যাতে আমি সহজে চিনতে পারি, যেন তার সুযোগ করে রাখা। তার চোখ দেখে মনে হল যেন সজাগ চোখের সতর্ক দৃষ্টি, স্থির। গোলগাল মুখমণ্ডলের নিরিখে ভাবলেশহীনও মনে হল।'
'মানে এটা তোর কল্পনা !'
'দেখাটা ফিরে দেখতে গিয়েও তো এ রকমই মনে হচ্ছিল !'
'তার পর?'
'তার পরের গল্প স্বপ্ন--'
আমি গল্প শোনার আগ্রহ নিয়ে মাধবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। কী যেন মনে করার চেষ্টা করছে সে বা কীভাবে বলবে তা গুছিয়ে নিচ্ছে। তার পর হতাশভাব ফুটে উঠল তার ঠোঁট জোড়ায়। মাথাটা না-ভঙ্গিতে নড়ে গেল মৃদু। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, 'আমাদের আবার দেখা হল কিন্তু মনে করতে পারছি না, দেখাটা হল কোথায়, এমনকি, কথা বলার জায়গা-- আমরা অনেকক্ষণ কোথায়ও বসে কথা বলেছি, মনে নেই। মনে পড়ছে আমাদের চারপাশে কোনও দৃশ্য ছিল না, ধরে নেওয়া যায়, সময়টাতে সূর্য ছিল না, তা হলে রাত, আলো থাকা স্বাভাবিক কিন্তু আলোও ছিল না অথচ আমি তার মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম ! আমি স্পষ্ট মনে করতে পারছি, আমাদের কথা শুরু করেছিল মেয়েটি, "তুমি আমাকে চিনতে পারনি !"
আমি বললাম, "ন্না, এখনও তুমি অচেনা হয়েই আছ। কে তুমি? নাম কী তোমার?"
"নাম-রূপে না চিনেও তো আমরা আন্তরিকভাবে কথা শুরু করেছি। কথা চলুক !"
"তুমি আমাকে চিনেছ?"
"হ্যাঁ-- তুমি আমার স্বামীর মতো সুবার্তা অনুসরণ করে চলা মানুষ রূপে চিনেছি-- নাম-রূপ নিয়ে আর-কিন্তু কোনও কথা না। কিন্তু আমরা কথা বলব, জানি না তোমার কী বলার আছে, আমি একটা গল্প বলব, সেই যে একটা গান আছে না 'কোনো এক গাঁয়ের বঁধুর কথা তোমায় শোনাই শোনো'-- সেই রকম একটা বঁধুমেয়ের গল্প-- তুমি গানটা শুনেছ তো ?"
আমি শুনেছি জানাতেই সে বলল, "সেই গানের গ্রামের মতো একটা গ্রামে এই মেয়েটিরকে তুমি কল্পনা করো-- এক কথায়, তুমি ভাবতে পারো তার বেঁচে থাকাটা সুন্দর ছিল, তার পর ভাবো-- ডাকিনী যোগিনী শত নাগিনী আসার অবস্থাটা !"
আমি তখন দুর্ভিক্ষের ক্যান্ভাস তৈরি করতে চাইছিলাম। মেয়েটি বলল, "কুটিলের মন্ত্রে শুরু হয়েছে নরমেধ, আমি দেখতে পাচ্ছি, আমাদের বঁধুমেয়েটি আত্মপরিজনদের সঙ্গে তার তিন বছরে মেয়ের হাত ধরে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য বেরিয়ে পড়েছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে... দু'-তিন দিন পালানোর সময় কোনও পিশাচের সামনে পড়তে হয়নি কিন্তু চার দিনের দিন কতকগুলো লোক তাদের সামনে দাঁড়াল। মেয়েটি দেখল সকলেই তাদের গ্রাম-প্রতিবেশী, একটু আশার আলো, প্রতিবেশী যে আলো জ্বালে, ঝলক দিয়েই নিভে গেল। চেনা মুখগুলো কেমন অচেনা হয়ে যাচ্ছে, বীভৎস হয়ে উঠল... আমি দেখতে পাচ্ছি ওরা কয়েকজন আমার মাকে টেনে নিয়ে গেল, অন্য মেয়েদের, তার মধ্যে রয়েছে মাত্র দুদিনের সদ্য মা হওয়া আমার খুড়তুতো বোন... আমি আমার মেয়েকে বুকে জাপটে ধরে দুদিনের বাচ্চাটার কথা ভাবতে গিয়ে দেখলাম কতকগুলো হাত আমাকে টেনে নিতে চাইছে আমার গায়ের জামা ছিঁড়ে যাচ্ছে, আমি মেয়েকে আরও আঁকড়ে ধরছি আমার খোলা বুকে... আমার বুক থেকে মেয়েটাকেও ছিঁড়ে নিয়ে একজন আছাড় মারল, আমি আর্তনাদ করে উঠলাম, মেয়েটির অন্তিম কান্নার সঙ্গে মিশে গেল আমার আর্তনাদ... আমি মিনতি করে বললাম, আমার পেটে পাঁচ মাসের বাচ্চা আমাকে রেহাই দাও !"
বেশ কিছু সময় চুপ থেকে বলল, "জানতাম, আমার স্বামীর মতো তুমিও জানতে চাইবে না 'তারপর'... # আমার কিচ্ছু মনে নেই তবু তারপর আছে-- যেন গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম, একসঙ্গে অনেকগুলো দৃশ্য-- নিজেকে উলঙ্গ দেখে, শরমবশত কেউ দেখছে কি না দেখতে গিয়ে, দৃশ্যান্তরে আরও কয়েকটা উলঙ্গ দেহ-- আমার মা, কাকিমা, বোন-- আমি তাদের গায়ে হাত দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করলাম, আদুরে সম্বোধনে ডাকলাম, কেউই ডাকে সাড়া দিল না... আমার মেয়েটাকে উদোম বুকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরে বুকফাটা আর্তনাদে কেঁদে উঠতে চেয়েও পারলাম না... "
মেয়েটি আবারও চুপ করে গেল। আমি তখনও শুনতে পাচ্ছি, একটা গোঙানি আর দেখছি বাচ্চা মেয়েটিকে নামিয়ে রাখছে পরম মমতায়, যাতে একটুও ব্যথা না পায় বাছা। তার পর সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল। তার তাকিয়ে থাকার দেখাদেখি আমিও কখন ঊর্ধ্বমুখী হয়েছি। মেয়েটি বলল, "মনে পড়ছে কিছু-- আমি 'ব্যথার পাষাণ' বয়ে বেড়ানো এক মা, চিনতে পারছ?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ, তুমি বিলকিস।" মেয়েটি তার মাথায় জড়ানো ওড়নাটির ধরন বদলে দিয়ে বলল, যদি আমাকে বিলকিস নামেই চিনে থাকো তা হলে শুধু বিলকিস না-- বিলকিস ইয়াকুব রাসুল, মনে রেখো !"
আশ্চর্য ! মেয়েটির মুখাবয়ব কেমন বদলে গেল। বদলে যাওয়া মুখটাকে এবার আর চেনা চেনা মনে হল না, আমি তাকে স্পষ্ট চিনতে পারলাম... যেন সেই চেনা মেয়েটিই বলল, "আমি এমন এক মা যে তার মাকে অত্যাচারিত হতে দেখেছে, দেখেছে চোখের সামনে সন্তানকে হত হতে, আর ভূমিতে পেড়ে ফেলার আগমুহূর্তে আমি গর্ভস্থ শিশুকে রক্ষা করার আর্তি জানিয়েছে-- এই আমাকেই কি তোমার চেনা-চেনা লাগছে ?" জানি না কেন আমি কোনও কথা বলতে পারলাম না। সম্ভবত আমি তখন বাকরুদ্ধ। কিন্তু শুনতে পেলাম, "আচ্ছা, বলো তো আমি তোমার কে?" বলে বিলকিস এমন স্নিগ্ধ হাসল, জানি তার জন্য কি না, আমি বললাম, "তুমি আমার সেই গানের ব্যথার পাষাণ !"
তারপর?
তার পর আমার ঘুম ভেঙে গেল অথবা ঘুম ভাঙেনি, ঘুম ঘুম ঘোরের মধ্যেই আমি শুনতে পেলাম, "বৃথা জমাট ব্যথা বয়ে কী হবে ! তুমি কি জানো আমাদের ধর্ষক ও হত্যাকারিরা স্বাধীনতা দিবসের দিন তাদের যাবজ্জীবন সাজা থেকে মুক্তি পেয়েছে?"
"জানি মানে খবরের কাগজে দেখেছি।"
"তাদের 'বীরের সম্মান' দেখানো হয়েছে রাজনৈতিকভাবে।"
আমি বললাম, "দিদিমণি, এটা এখন স্বাভাবিক।"
একটা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে যেন সামলে নিয়ে বিলকিস জানতে চাইল, "কী রকম?"
'তখন আমি কী বললাম বল তো!'
'কী'
'সেই যে আমরা বলতাম না, ইংরেজ তাড়ানোর লড়াইটা-- প্রথম দিকে হিন্দু-মুসলমান ছিল না কিন্তু বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার পর থেকে তা সাম্প্রদায়িক নেতাদের ক্ষমতা দখলের লড়াই হয়ে দাঁড়াল... তারপর হল হিন্দুস্থান-পাকিস্তান যুদ্ধ-- এটা জানিয়ে বললাম, "এখন লড়াইটা দেশের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে আমাদের দেশে-- হিন্দু-মুসলমানে যুদ্ধ চলছে-- আধুনিক যুদ্ধের নিয়মে হত্যার মতো নারীর প্রজননভূমি ধ্বংস করা যুদ্ধের অংশ... তিন বছরের মেয়েকে মেরে ফেলা ওই যুদ্ধেরই নেটওয়ার্ক-- নতুন জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনাকে শুরুতেই নিকেশ করা, যুদ্ধের নিয়মেই তা বীরের কাজ !"
বিলকিস বলল, "তা হলে আমরা-- কীভাবে যুদ্ধ করব-- আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আমি অপরাধীর ফাঁসি চাই কি না-- আমি না বলেছিলাম--"
"ঠিকই বলেছিলে !"
"কিন্তু সরকার আদালত-- এই যুদ্ধে তো হিন্দুদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে !"
"আদালতের বাইরে বহু মানুষ এই যুদ্ধকে রোখার চেষ্টা চালিয়ে যাছে, তুমি জানো, এক শো চৌত্রিশ জন আমলা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন রেহাই-রায়
বাতিল করার জন্য-- বিভিন্ন শহরে 'জাস্টিস ফর বিলকিস' আন্দোলন চলছে !"
'তারপর?'
'বিলকিসের দিক থেকে আমি আর কোনও কথা তৈরি করতে পারলাম না !'
মাধবের এই না পারার যন্ত্রণা আমি স্পষ্ট অনুভব করতে পারলেও কোনও উপশম-কথা ছিল না আমার কাছে।
বন্ধু, আপনারাই বলুন, এই যুদ্ধ কীভাবে রুখতে পারি আমরা !
ভাবনার অবকাশে কেবল নৈঃশব্দ্য গভীর হল। এক সময় নন্দিনী বলল, 'মাধবদা-কিন্তু একটা সূত্র রেখে গেছে-- ইংরেজ বিরোধী লড়াইটা আমরা-কিন্তু ঠিকভাবে করতে পারিনি-- আমাদের জাতিসত্তার দুটো ডানাই ভাঙা...'
কথাটা শেষ না করে নন্দিনী মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মনে পড়ল এমনই তাকিয়েছিল মাধব, মনে হল, নন্দিনী আহত ডানার ভিমরুল দেখছে। এক সময় মাথা তুলে সে বলল, 'লড়াইটা যদি আবার শুরু করা যায় !'