পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

শ্বাসরোধের আইন

  • 29 July, 2021
  • 0 Comment(s)
  • 2604 view(s)
  • লিখেছেন : ঋতম মাজি
পেগাসাস স্পাইওয়ার, আরোগ্যসেতু, স্বাধীন সংবাদপত্রগুলির অফিসে ইডি-র তল্লাশি, সিনেমাটোগ্রাফি বিল – মতপ্রকাশের তথা নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্বকারী সমস্ত নীতি আসলে আমাদের চোখ ফেরাতে বাধ্য করে অতীতের দিকে। মতপ্রকাশের অধিকারের উপরে এই চূড়ান্ত আক্রমণের সময়ে তাই ফিরে দেখার প্রয়োজন রয়েছে ঔপনিবেশিক কাঠামোকে যার এক উন্নত রুপ আমরা আজ দেখছি প্রাত্যহিক জীবনে। কোম্পানির সময়ে নজরদারির বা বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে প্রচলিত হওয়া অন্যতম কুখ্যাত আইন হলো ‘দেশীয় সংবাদপত্র আইন’ বা ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’(১৮৭৮) লিখলেন ঋতম মাজি

সর্বোচ্চমাত্রায় শোষণ এবং শাসনের মাধ্যমে নিজের রাজত্ব টিকিয়ে রাখা এবং অবশ্যই ব্রিটিশ শাসক শ্রেণীর স্বার্থকে সুরক্ষিত করা কোম্পানি রাজের প্রাথমিক নীতিই ছিল – ‘অস্ত্রের জোরে পাওয়া সাম্রাজ্যকে ধরে রাখতে হবে অস্ত্রের জোরেই’! ১৮৫৭-র কুখ্যাত প্রকাশনা ও সংবাদপত্র সংক্রান্ত আইন ব্রিটিশ শাসন বিরোধী লেখাপত্রকে ‘সিডিশাস’ বলে এবং ১৮৭০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশোধনী যা ‘আইনের শাসন’ বিরোধী যেকোনো আন্দোলন বা কর্মকাণ্ডকেই ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ বলে চিহ্নিত করে তার লক্ষ্য ছিল বিরোধিতাকে যেন তেন প্রকারে স্তব্ধ করা। কিন্তু ‘স্বাধীনতা’-র ধারণাটাই খুব আবছা হয়ে যায় যখন ‘দেশদ্রোহিতা’ বা ‘ইউএপিএ’-র মতো আইনগুলির মধ্যে ঔপনিবেশিক এইসব ধারার নির্যাস পাওয়া যায়। আর এখন যেন সেই আইনগুলিরই পুনরাবৃত্তি চলছে ২০১৪ পরবর্তী যে আরএসএস- বিজেপির সরকার চলছে সেইখানে।

 শুরুর কথাঃ

পেগাসাস স্পাইওয়ার, আরোগ্যসেতু, স্বাধীন সংবাদপত্রগুলির অফিসে ইডি-র তল্লাশি, সিনেমাটোগ্রাফি বিল – মতপ্রকাশের তথা নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্বকারী সমস্ত নীতি আসলে আমাদের চোখ ফেরাতে বাধ্য করে অতীতের দিকে। মতপ্রকাশের অধিকারের উপরে এই চূড়ান্ত আক্রমণের সময়ে তাই ফিরে দেখার প্রয়োজন রয়েছে ঔপনিবেশিক কাঠামোকে যার এক উন্নত রুপ আমরা আজ দেখছি প্রাত্যহিক জীবনে। কোম্পানির সময়ে নজরদারির বা বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে প্রচলিত হওয়া অন্যতম কুখ্যাত আইন হলো ‘দেশীয় সংবাদপত্র আইন’ বা ‘ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট’(১৮৭৮)

ভারতবর্ষের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে প্রকাশনা ব্যবস্থার স্থাপনা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঔপনিবেশিক সময়ে এই ব্যবস্থার উপরে ভিত্তি করেই প্রাথমিকভাবে গড়ে ওঠে উপনিবেশবিরোধী চিন্তাভাবনা অর্থাৎ সংবাদপত্র, বই, ইস্তেহার এইসব কিছুই প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছে শুরু থেকেই। ১৮১০ পরবর্তী সময়ে শুরু হয় দেশীয় সংবাদপত্র প্রকাশনা এবং অচিরেই তা জনমানসে এক নতুন আলোড়ন তৈরি করে। ১৮১৬-সালে প্রকাশিত ‘বেঙ্গলি গেজেট’ এই সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দেশীয় সংবাদপত্র। চিতপুর রোড, শোভাবাজার সংলগ্ন অঞ্চলে স্থাপিত বিভিন্ন প্রেসের ‘বটতলা’-তেই শুরু হয় বিভিন্ন দেশীয় সংবাদপত্র ও জনপ্রিয় বইয়ের প্রকাশনা এবং পরবর্তীতে কলেজ স্ট্রিট হয়ে ওঠে অন্যতম কেন্দ্র।

নজরদারির কাঠামো বিস্তারঃ

তবে স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশনার এই জনপ্রিয়তা শাসকেরও দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। শুরু হয় প্রকাশনার উপর নজরদারি এবং নথিভুক্তকরণ। ১৮৫২ সালে আইরিশ মিশনারি জেমস লং প্রথম নিজস্ব চিন্তা থেকেই ‘গ্রন্থাবলী’ নামে সেই সময় অব্দি প্রকাশিত সমস্ত বাংলা বইয়ের এক নথিভুক্তিকরণ করেন, বিভিন্ন বিভাগে স্থান পায় বিভিন্ন বই, তবে প্রকাশক ও লেখকের নাম ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত। তার ঠিক এক বছরের মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তার অঞ্চলের সমস্ত প্রেস, দেশীয় সংবাদপত্র ও প্রকাশিত বইয়ের বাৎসরিক নথিভুক্তকরণের জন্যে নির্দেশ জারি করে।সরকারি নথিতে ১৮৫৭ সাল থেকে দেশীয় সংবাদপত্র এক আলাদা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে উঠে আসে।

১৮৫৭-র মহাযুদ্ধের সময়ে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে শুরু করে উপনিবেশ বিরোধী রাজনীতিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে।পরবর্তীতে অমৃতবাজার, সুলভ সমাচার, ভারত মিহির, হালিশহর সমাচারের মতো পত্রিকাগুলী দেশের কৃষক,আদিবাসী, শ্রমজীবী মানুষ এক অর্থে দেশের সাধারণ মানুষের উপর ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কর্তৃক অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ করার সাথে সাথেই স্বাধীনতার লড়াইয়ের প্রচার শুরু করে। তার পূর্বেই ‘নীল দর্পণ’- এর মতো নাটক সারা বাংলার জনসমাজে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলো। লর্ড ক্যানিংয়ের শাসনে ১৮৫৭ সালে ‘ছাপাখানার স্থাপনা ও সংবাদপত্র’ সংক্রান্ত যে আইন বলবত হয় তার মূল লক্ষ্যই ছিল স্বাধীন প্রকাশনার কণ্ঠরোধ করা। লর্ড ক্যানিং এই আইন প্রবর্তনের প্রেক্ষিতে সংবাদপত্রগুলির ঔপনিবেশিক অত্যাচারের বিরোধিতাকে ‘সিডিশন’ বা ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই আইনের মাধ্যমেই প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় ‘বেঙ্গল হারকারু ও ক্রনিকাল’ (Bengal Hurkaru and chronicles) পত্রিকার (১৮৫৭)। মামলা রজু হয় ‘দূরবীন’, ‘সুলতান-উল-আকবর’ প্রভৃতি কাগজের প্রকাশকদের বিরুদ্ধে। তৎকালীন মুম্বাই প্রেসিডেন্সীর লর্ড এলফিনস্টোন তখন দেশীয় সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন।১৮৫৭-র এই আইন এক বছরের জন্যে বলবত থাকলেও ছাপাখানা স্থাপনার জন্যে সরকারের দেওয়া লাইসেন্স যে আবশ্যক তা প্রথম এই আইনের মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এই আইনে এও বলা ছিল যে প্রয়োজনে যে কোনো কাগজ ও প্রকাশনা সংস্থার কাজ বন্ধ করতে পারে সরকার।

বিদ্রোহ পরবর্তী সময়ে একদিকে যেমন বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় সংবাদপত্রের প্রকাশনা সেরকমই ভারতীয়দের অধিকারের প্রশ্ন এবং উপনিবেশ বিরোধী রাজনীতি দেশীয় সংবাদপত্রগুলির মূল বিষয় হয়ে ওঠে, যা ব্রিটিশ সরকারের কাছে স্বস্তির বিষয় ছিল না।প্রশ্ন উঠতে থাকে উচ্চতর সরকারী পদে ভারতীয়দের চাকরি পাওয়ার অধিকারের। তাই প্রকাশনার উপরে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের লক্ষ্যে ১৮৬৭ সালে ‘ছাপাখানা ও সংবাদপত্র’ বিষয়ক নতুন আইন জারি করে বলা হয় এরপর থেকে যে কোন প্রকাশনার ক্ষেত্রে আগে রেজিস্ট্রেশন ও অনুমতি নিতে হবে সরকারের কাছ থেকে এবং সমস্ত প্রকাশনার একটি করে কপি আগে জমা দিতে হবে সরকারি দফতরে, অন্যথায় জরিমানা ও কারাবাস। সেই সময়েই ১৮৭০ সালে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের পরিবর্তনের ফলে ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’-র সংজ্ঞার মধ্যে স্পষ্ট করে দেওয়া হয় যে ব্রিটিশ রাজ বিরোধী কথা বা লেখা বা কার্যকলাপের শাস্তি হল দ্বীপান্তর, জরিমানা ও অনির্দিষ্টকালীন কারাবাস। এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী দেশীয় সংবাদপত্রগুলীকে সরাসরি রাষ্ট্রের নজরদারির আওতায় নিয়ে আসে।

দেশীয় সংবাদপত্র আইনঃ

১৮৭৮ সালের ১৪ই মার্চ ভারতের বুকে লাগু করা হয় এই আইন।তখন বাংলাতেই প্রায় ২৮-টির মতো সংবাদপত্র নিরন্তর প্রচার চালিয়ে চলেছে ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে, যা অবশ্যম্ভাবী সরকারী অফিসারদের মনে ভয় সৃষ্টি করেছিলো আরেক বিদ্রোহের।একমাত্র মাদ্রাস প্রেসিডেন্সী বাদে মুম্বাই-সহ অন্যান্য প্রদেশে কার্যকরী হয় এই আইন। ব্রিটিশরাজ বিরোধী রাজনৈতিক প্রচার সর্বোতভাবে বন্ধ করার উদ্দ্যেশেই লর্ড লিটন চালু করে দেশীয় সংবাদপত্র আইন। এই আইন অনুযায়ী - সমস্ত দেশীয় সংবাদপত্রকে তাদের সংখ্যা প্রকাশের পূর্বে তা সরকারের কাছে জমা করতে হবে এবং তাতে যদি এমন কোন লেখাপত্র থাকে যা রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী তাহলে তাদের ছাপাখানাসহ প্রকাশনার সমস্ত ব্যবস্থা বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং অবশ্যই প্রকাশকদের হবে শাস্তি ও জরিমানা।যেকোনো কাগজ, প্যামফ্লেট, ছাপার যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা যেতে বিচারের স্বার্থে এবং বিচারাধীনের ক্ষেত্রে তা প্রমান হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ নাগরিকের অধিকার, সমানাধিকার এবং স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করার অর্থ হলো ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’ এবং তার বিচারের পদ্ধতি হল মধ্যযুগীয় অবৈজ্ঞানিক প্রথা।

পূর্ববর্তী আইনগুলিতে দেশীয় ও ইংরেজি সব ভাষার সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে হলেও এবারের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট – দেশীয় সংবাদপত্র। জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রচারকে বন্ধ করা এবং জনচেতনার বিকাশকে স্তব্ধ করা সুপরিকল্পিত পদ্ধতি।সেই সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক এবং দ্য স্টেটসম্যানের প্রতিষ্ঠাতা( তার আগে টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র সম্পাদক ছিলেন) রবার্ট নাইট লর্ড লিটনের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরের চিঠিতে স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছিলেন জনগণের মধ্যে বেড়ে চলা ক্রোধ এবং ক্ষমতার শাসনের বিফলতার বিষয়ে। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভ কখনই যুক্তিকে গ্রাহ্য করতে পারেনা বোধহয়।

তবে সেই সময়েও শাসকের নীতির প্রচার করার গোদি মিডিয়ার অভাব ছিলনা। লন্ডনের ফোরথনাইট রিভিউয়ের সম্পাদকীয়তে দেশীয় সংবাদপত্র এবং সেইসব কাগজের লেখাপত্রকে অশ্লীল বলে আখ্যায়িত করা হয় এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে উল্লেখ করা হয়।শুরু হয় বিভিন্ন দেশীয় সংবাদপত্রের অফিসে হানা এবং জেরা, মামলা- সারাদেশ জুড়ে প্রায় দুশোর উপর দেশীয় পত্রিকা এই আইনের আওতায় চলে আসে এবং ‘সোম প্রকাশ’-এর মতো কাগজের প্রকাশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় অমৃতবাজার পত্রিকার বাংলা সংস্করণ।

পরবর্তীতে সারাদেশ জুড়ে এই আইনের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় যা অবশ্যই ভারতবর্ষে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়।দেশীয় সংবাদপত্রগুলির মধ্যে ঐক্য জোরালো হয় এই আইনের বিরোধিতার মধ্যে দিয়েই। এই পর্বেই ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হয় যারা ছিলেন এই আইনের বিরুদ্ধে সামনের সারির প্রচারক। পরবর্তীতে গণবিক্ষোভের চাপে ১৮৮১ সালে এই আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার।কিন্তু এই আইনের ফল ভারতীয় সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্ষেত্রে ছিল সুদুরপ্রসারী। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মতামত বা গণমাধ্যমের উপর নজরদারি ও ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করার কাঠামোগত অনুশীলনের সেটাই শুরু।

এটা বর্তমানে স্পষ্ট যে সঙ্ঘ পরিবার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে শুধু এই কারণে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি যে তার তৎকালীন স্বার্থ ছিল ব্রিটিশ রাজের সাথে যুক্ত বরং সঙ্ঘ পরিবার তথা আরএসএস ও বিজেপি-র চিন্তার অন্যতম উপাদান হল ঔপনিবেশিক চেতনা। তাই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত অধিকার, স্বাধীনতা সবটাকেই তারা মুছে দিতে মরিয়া।

সাম্প্রতিক সময়ের সিনেমাটোগ্রাফি বিলের সংশোধনীকে যদি একটু গুরুত্ব দিয়ে দ্যাখা হয় তো স্পষ্টভাবেই বোঝা যাবে যে সরকারের মূল নিশানা হলো তার বিরুদ্ধে বাড়তে থাকা বিক্ষোভ যাতে মানুষের কাছে পৌঁছাতে না পারে বা রাষ্ট্র বিরোধী প্রচার যাতে জনমানসে পৌঁছাতে না পারে তার জন্যে এক নজরদারি ব্যবস্থা ও সেই মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ তথা প্রয়োজনে বন্ধ করার এক নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে আইন হিসেবে লাগু করা। তবে এটা বিচ্ছিন্ন নয়, দেশদ্রোহিতা আইন বা ইউএপিএ–ও সেই একই কাঠামোর বিভিন্ন অঙ্গ যার পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কের মধ্যে দিয়েই তৈরি হয় এক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থা- মানুষ বিরোধী, সর্বগ্রাসী এবং একটি নির্দিষ্ট শাসক শ্রেণীর স্বার্থকে সুরক্ষিত করা যার লক্ষ্য।আর এই রাষ্ট্রব্যবস্থার বুনিয়াদে রয়েছে পুরনো ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার কার্বন প্রিন্ট।

আমাদের স্বাধীনতা তথা স্বনিয়ন্ত্রনের লড়াইও চলেছে এই ধরণের বিভিন্ন আইন তথা মানুষ বিরোধী নীতির বিরুদ্ধেই। এই লড়াই অবশ্যই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের সাথে সাথে আমাদের আধুনিকতা, গণতান্ত্রিক চেতনা, ঐক্য অর্থাৎ আমাদের নাগরিক অস্তিত্ব ও সমাজের অগ্রগতির দিকনির্দেশ করে। ভারতবর্ষে বর্তমানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে লড়াই চলছে তার ক্ষেত্রে একটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজ, চেতনার ঔপনিবেশিক কাঠামোকে ভেঙে চুরে প্রকৃত গণতন্ত্র হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। লড়াইটা অবশ্যই কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।

তথ্যসূত্রঃ

  • ফ্রম পলাশী টু পার্টিশন, শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়
  • রোল অব ভার্নাকুলার প্রেস ডিউরিং ব্রিটিশ রুল ইন ইন্ডিয়া, ডঃনজাকত হুসেন
  • সেন্সরশিপ অফ দ্য ইন্ডিয়ান প্রেস বিটুইন ১৮৫৭ অ্যান্ড ১৯৪৫, ভাগবত প্রসাদ সিং
  • ডিসিপ্লিনিং দ্য প্রিন্টেড টেক্সটঃ কলোনিয়াল অ্যান্ড ন্যাশনালিস্ট সারভেইলেন্স অফ বেঙ্গলি লিটারেচার, তাপ্তি রয়
  • বাংলাপিডিয়া

0 Comments

Post Comment