দিল্লির "আপ" মন্ত্রীসভার মন্ত্রী রাজেন্দ্র পাল গৌতম খুব সম্ভবত জানতেনই না যে, তিনি আগুনে হাত দিতে যাচ্ছেন। জানলে হয় দিতেন না নইলে বিজেপি/ আর এস এস-কে মুখের মত জবাব দিয়ে লড়াইটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতই কেজরীওয়াল সাহেবও রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে কোনো আপসহীন লড়াইয়ে যেতে যে রাজি নন সেকথা সকলেই জানেন। বরং এঁরা সকলেই হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে একপ্রকার আপস করে এক ধরণের নরম হিন্দুত্ব অনুশীলন করতেই পছন্দ করেন। পথ দেখিয়ে গিয়েছিলেন বড়দা কংগ্রেস। মোটামুটি সেই পথেই প্রায় সকল অ-বিজেপি পার্টি এমনকি বামেরাও চলে থাকেন। সুতরাং, এসব করতে যাওয়ার আগে গৌতমের বোঝা উচিৎ ছিল যে, "আপ" মন্ত্রীসভার সদস্য হয়ে এতবড় লড়াইয়ে এমনকি একটু গা সেঁকতে যাওয়ারও পরিণাম খুব খারাপ হতে বাধ্য। গৌতমজীর মন্ত্রীত্ব গেছে।
"মিশন জয় ভীম" একটা সদ্যগঠিত দলিত সংগঠন যারা দশমীর দিনে দিল্লিতে একটি গণদীক্ষা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। সেখানে কয়েকহাজার দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যেই গৌতমজীর চাকরি গেছে। এখন আপাপবিদ্ধজনে দারুন অবাক হয়েছেন এই ভেবে যে, এর মধ্যে এমন কি 'আতঙ্কবাদ' দেখা গেল যে উপস্থিত মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে! বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে গেলে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, এর মধ্যে আমাদের দেশের দুইটি ঐতিহাসিক প্রধান প্রধান লড়াইয়ের সঙ্গম ঘটেছে। একটি হল ব্রাহ্মণ্যবাদ বনাম শ্রমনবাদ। অন্যটি হল ব্রাহ্মণ্যবাদ বনাম আম্বেদকরবাদ। ব্রাহ্মণ্যবাদ সাধারণ শত্রু হওয়ার ফলে শ্রমনবাদ এবং আম্বেদকরবাদ ইতিহাসের একটা সময়ে এসে এক বিন্দুতে মিলে যায়। যদিও সেই মিলে যাওয়ার মধ্যে কিছু গভীর সমস্যাও আছে। তবে এইটি এই মুহুর্তে আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য বিষয় হল ওই লড়াইদুটোর বর্তমান তাৎপর্য। যার কোল্যাটেরাল ড্যামেজ হিসাবে গৌতমজী মন্ত্রীত্ব খোয়ালেন।
ভারতে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং শ্রমনবাদের মধ্যে সংঘাত দেড় হাজারেরও বেশি সময় ধরে চলেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই লড়াইয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদ নির্ধারক বিজয় হাসিল করে। বাঙলায় পালবংশ অস্তমিত হওয়ার পরই প্রবল দমনপীড়নের মুখে শ্রমনবাদের অন্যতম প্রধান ধারা বৌদ্ধ আন্দোলন কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। অতঃপর বৌদ্ধ সাহিত্যের যা কিছু অবশিষ্ট ছিল ব্রাহ্মণ্যবাদীরা তা ধ্বংস করতে সমর্থ হয়। কিন্তু গৌতমের স্মৃতি সমাজের জনস্মৃতিতে থেকে যায়। কালে কালে ব্রাহ্মণ্যবাদীরা গৌতমকে বিষ্ণুর অষ্টম অবতার হিসাবে প্রচার করতে শুরু করে। ব্রাহ্মণ্যবাদের আধুনিক দার্শনিকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা মার্জিত এবং চতুর ব্যক্তির নাম সর্বোপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। তিনিও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই কাজ করেছেন। তাঁর বিভিন্ন লেখায় তিনি এমনভাবে বুদ্ধের কথা নিয়ে এসেছেন যাতে করে এটাই মনে হয় যে, বুদ্ধ একজন "হিন্দু দার্শনিক" ছিলেন। ভারতীয় শাসক শ্রেণির প্রধান প্রধান দলগুলি সর্বদাই মোটের উপর এই তত্ত্বায়নেই সিলমোহর দিয়ে এসেছে। বামপন্থীরাও কিছু ব্যক্তিমানুষের নিজস্ব কাজকর্ম বাদে, বিষয়টি নিয়ে সংগঠিতভাবে কখনই খুব একটা চর্চা করেন নি। ফলে আম্বেদকর যখন ১৯৫৬ সালে দলিত সম্প্রদায়ের পাঁচ লক্ষ মানুষকে নিয়ে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নিলেন তখন তা বৃহত্তর জনমানসে বড় একটা দাগ কাটতে পারে নি। আম্বেদকর যখন বললেন, "আমি হিন্দু হয়ে জন্মেছি কিন্তু হিন্দু হয়ে মরব না!" তখনও তাঁর এই কথার তাৎপর্য সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় নি।
কিন্তু বৃহত্তর জনমানসে অধরা থাকলেও দলিত সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশে বৌদ্ধবিচারধারা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিপ্রতীপে বৌদ্ধতত্ত্বকে স্থাপন করার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু সেটা হয় খুব দুর্বলভাবে। কিন্তু দলিত আন্দোলনে মাঝে মাঝে দেখা যায় যে, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিপ্রতীপে বৌদ্ধধর্মকে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টা বেগবান হয়ে ওঠে। যেমন এই বছর হল। তখন সাময়িকভাবে বহু মানুষকে অবাক করে দিয়ে মিথ্যার সযত্নলালিত আবরণ ছিন্ন করে চিরায়ত দ্বন্দ্ব আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। পুরনো প্রশ্ন আবার নতুন করে সামনে আসে। যেমন এই বছর হল। অনেকেই বুঝছেন না, বিজেপির এত তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণ কী? বৌদ্ধধর্ম যদি হিন্দুধর্মেরই একটা ধারা হয়, গৌতম বুদ্ধ যদি বিষ্ণুরই অষ্টম অবতার হন, তালে কিছু লোক বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নিলে এত 'গেল গেল' চিৎকারের কী কারণ?
ভারতীয় দর্শন এবং সংস্কৃতির ইতিহাসে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং শ্রমনবাদ দুইটি বিপরীতমুখী ধারা। সামাজিক সংঘাতের পৃষ্ঠভূমিতেই এই দুইটি ধারার উৎপত্তি। শ্রেণিহীন আদি-বৈদিক সমাজ যখন শ্রেণিতে শ্রেণিতে ভেঙ্গে গেল তখন শ্রেণি আত্মপ্রকাশ করল বর্ণের মধ্যে দিয়ে। এটি ভারতীয় সমাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মার্কস এবং এঙ্গেলস কমিউনিষ্ট পার্টির ইস্তাহার-এ যেমন লিখেছিলেন যে, সমাজের প্রথম থেকেই বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যেকার সংগ্রাম আমরা লক্ষ্য করি, প্লিবিয়ান এবং প্যাট্রিশিয়ান, জার্নিম্যান বা গিল্ডকর্তা তেমন কিন্তু আমরা ভারতীয় সমাজে দেখতে পাব না। আমরা এখানে প্রথম দেখতে পাই, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শুদ্রের মধ্যেকার বিভাগ। এই বর্ণবিভাগ কিন্তু প্রথম থেকেই ছিল না। আদি-বৈদিক যুগে সকল (বৈদিক) আর্যরাই একই শ্রেণিভুক্ত ছিল। প্রাক্-আর্য সভ্যতার কথা এখানে আনা হচ্ছে না নানা কারণে। আমরা মূলত বৈদিক ধারাবাহিকতা নিয়েই কথা বলছি। আদি-বৈদিক যুগ মূলত জীবন ধারণের সামগ্রীর অপ্রতুলতার সময়। আর্যরা কৃষিকাজ প্রথমে জানতই না, ধীরে ধীরে তারা তা শেখে কিন্তু ফলন ছিল অল্প এবং অনিশ্চিত। কমরেড সুকুমারী ভট্টাচার্য বিস্তারিতভাবে তা দেখিয়েছেন। সমাজে উদ্বৃত্ত উৎপাদন ছিল না। ফলে শ্রেণিভেদও ছিল না। বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্যে তাই বলা হয়েছে সেই সময়ে সকলেই 'ব্রাহ্মণ' ছিল। বৃহদারণ্যক উপনিষদে যেমন বলা হয়েছে, "ব্রহ্ম বৈ ইদমগ্রে আসীদেকমেব" [অগ্রে (আগে) ইদম্ (এই বিভিন্ন বর্ণগুলি) ব্রহ্ম বৈ (ব্রাহ্মণই) একম এব (একমাত্র জাতি) আসীৎ (ছিল)]।
কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে উৎপাদিকা শক্তির বৃদ্ধির ফলে সমাজে উদ্বৃত্ত উৎপাদন শুরু হল। শ্রেণিবিভাজন দেখা দিল। কিন্তু দৈব অনুমতি পাবার বাধ্যবাধকতায় তা দেখা দিল বর্ণবিভাজন রূপে। ফলত শ্রেণিসংগ্রামের যে রূপ গড়ে উঠল তা হল একদিকে শাসক শোষক শ্রেণি হিসাবে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় যুগলবন্দী এবং অন্যদিকে উৎপাদক ও শোষিতশ্রেণি হিসাবে বৈশ্য-শুদ্রের যুগলবন্দী। ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ের সাংস্কৃতিক, আদর্শনৈতিক এবং দার্শনিক অভিব্যক্তি হিসাবে দাঁড়াল ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বৈশ্য-শুদ্রের একই ধরণের হাতিয়ার হিসাবে গড়ে উঠল শ্রমনবাদ। সুতরাং, গোড়া থেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং শ্রমনবাদের মধ্যে সংঘাত বেশ তীব্র ও শত্রুতামূলক চেহারা নিয়েছে। শ্রমনবাদের নেতৃত্বকারী ধারা হিসাবে বৌদ্ধ আন্দোলন প্রায় সকল ব্রাহ্মণ্যবাদী সাহিত্যেই তীব্রভাবে আক্রমণের সামনে পড়েছে। অন্যদিকে বৌদ্ধ সাহিত্যেও একইভাবে শরীর অতিরিক্ত আত্মার ধারণা, বেদে বিশ্বাস, পরলোকে বিশ্বাস, বর্ণভেদের সামাজিক কাঠামো প্রভৃতিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, এই সংঘাত কি আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। আলোচনাটির দুইটি দিক আছে। প্রথম দিকটি হল ব্রাহ্মণ্যবাদের দিক। কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ব্রাহ্মণ্যবাদ কি এখনও টিঁকে আছে? এই প্রশ্নটি নিয়ে নাড়াচাড়া করলে আমরা এটাই দেখতে পাই যে, হ্যাঁ এখনও সন্দেহাতীতভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদ টিঁকে আছে। তবে বর্তমানে বৈশ্য সম্প্রদায় আর গোটাগুটিভাবে নিপীড়িত ও শোষিত শ্রেণির মধ্যে পড়ে না। বৈশ্যদের একটা বড় অংশ শুদ্রদের মধ্যে অঙ্গীভূত হয়ে গেছে (downward mobilization) আর একটা ক্ষুদ্র অংশ শাসকশ্রেণির অঙ্গীভূত হয়ে গেছে (socio-political upward mobilization)। অন্যদিকে আর্য সমাজের বাইরে যে বিপুল অবর্ণ (পঞ্চম বর্ণ) সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন শুদ্ররা তাঁদের সাথে মিশে গিয়ে একটা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ "পিছিয়ে পড়া জাতিবর্ণ" সম্প্রদায় (so called backward castes) গঠন করেছে। এঁদের নিজেদের মধ্যে আবার স্তরভেদ ও তৎসংক্রান্ত অসাম্য বৈষম্য আছে কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার এঁরা কেউই নন এবং বৃহৎ পুঁজি এবং সামন্তশ্রেণির হাতে এঁরা সকলেই নিপীড়িত। ব্রাহ্মণ্যবাদ এই তথাকথিত পিছিয়ে পড়া জাতিবর্ণের উপর তার মনুস্মৃতি নির্গত বর্ণবাদী নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে যা অর্থনৈতিক শোষণের একটা অন্যতম প্রধান রূপ। সুতরাং ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং শ্রমণবাদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বের একটা দিক ব্রাহ্মণ্যবাদ আজও বহু সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে।
অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে শ্রমনবাদ এবং নির্দিষ্টভাবে তার প্রধান ধারা বৌদ্ধ আন্দোলন ভারতবর্ষে তার শারীরিক উপস্থিতি মোটের উপর হারিয়েছে। কিন্তু, সাংস্কৃতিক, মতাদার্শিক এবং দার্শনিক স্তরে এই ধারা এখনও ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতের জমিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসাবে টিঁকে আছে। আম্বেদকরের বৌদ্ধধর্মে দীক্ষাগ্রহণ কোনো আকস্মিক ঘটনাও ছিল না, কোনো চমকও ছিল না। ভারতবর্ষের বিপুল দলিত মানুষের সাথে বৌদ্ধ আন্দোলনের নাড়ির যোগাযোগ রয়েছে সেকথা আম্বেদকর ভালই বুঝেছিলেন। কিন্তু বৌদ্ধ আন্দোলনের প্রকৃত তাৎপর্য তার থেকেও অনেক বেশি। গৌতমই পৃথিবীতে প্রথম দ্বন্দ্বতত্ত্বের প্রচারক ও প্রতিষ্ঠাতা। স্বাভাবিকভাবেই শ্রেণিবিভাগের বিরুদ্ধে প্রথম রাজনৈতিক সামাজিক এবং দার্শনিক সংগ্রামও গৌতমেরই সৃষ্টি। জাতিবর্ণের বিরুদ্ধে বৌদ্ধদের সংগ্রাম প্রকৃতপ্রস্তাবে শ্রেণিবিভক্ত সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধেই লড়াই। সেই লড়াই তখন জিততে পারে নি নির্দিষ্ট সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে। কিন্তু শ্রেণিবিভক্ত সমাজের সকল প্রাণশক্তি নিঃশেষিত হবার বর্তমান সন্ধিক্ষণে সেই লড়াই জয়যুক্ত হবার বাস্তব পরিস্থিতি বিদ্যমান। সেই হিসাবে ভারতে আজকের কমিউনিষ্টরা বৌদ্ধ আন্দোলকদেরই উত্তরসূরি। কিন্তু ভারতীয় কমিউনিষ্টদের ইউরোপ-কেন্দ্রিক যান্ত্রিক মার্কসবাদী দৃষ্টিকোণ তাঁদের কখনই এই সত্য উপলব্ধি করতে দেয় নি। ফলে কমিউনিষ্ট আন্দোলন শিকড়হীন ও ধারাবাহিকতাহীন এক বিজাতীয় আন্দোলন হিসাবেই বিরাজ করেছে। সুতরাং, শ্রমনবাদ শারীরিকভাবে অনুপিস্থিত থাকলেও সাংস্কৃতিকভাবে বিদ্যমান। এর ফলে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং শ্রমনবাদের সংঘাত আজও প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বন্দ্ব। একথা আর কেউ না বুঝলেও বিজেপি/আর এস এস ভালই বোঝে। তাই বৌদ্ধ আন্দোলন সামান্য গতিপ্রাপ্ত হলেই তারা রে রে করে ওঠেন।
সেই তুলনায় ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং আম্বেদকরবাদের লড়াই একেবারেই আধুনিক সময়ের ঘটনা। সুতরাং আজকের দিনে তার প্রাসঙ্গিকতা যে থাকবে তা একপ্রকার স্বতঃসিদ্ধ। যদিও এটা ঠিক যে, আম্বেদকরের মৃত্যুর পর থেকে আম্বেদকরবাদী আন্দোলন নানা ধরণের বিকৃতি এবং ভাঙনের মুখে পড়েছে। দলিত আন্দোলন নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। তার থেকেও বড় কথা হল আম্বেদকরের জাতি নির্মূল আন্দোলনের ধারণা থেকে সরে এসে জাতিব্যবস্থাকে টিঁকিয়ে রেখে সংরক্ষণের সুবিধা পাবার পক্ষে ওকালতি করা একটা বড় অংশের দলিত নেতৃত্বের মধ্যে বর্তমানে অত্যন্ত গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ধরণের আন্দোলনকে তাই আর আম্বেদকারবাদী আন্দোলন বলা যাচ্ছে না, বরং নয়া আম্বেদকরবাদী বলেই চিহ্নিত করা হচ্ছে। তথাপি ব্রাহ্মণ্যবাদীরা জানে যে, যে কোনো সময়ে দলিত আন্দোলনের ভেতরকার ডিনামিক্স আম্বেদকরবাদী আন্দোলনের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে দিতে পারে। তাই তারা সদা সতর্ক দৃষ্টি দলিত আন্দোলনের উপর রাখে। আম্বেদকরবাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর যে কোনো সম্ভাবনাকে তারা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চায়। এরই ফলশ্রুতিতে তারা যখনই দেখল আবার একটা গণদীক্ষা গ্রহণের ঘটনা ঘটছে তখনই তারা গাঝাড়া দিয়ে উঠল। "আপ" দলের মন্ত্রী তাদের নরম লক্ষ্যবস্তু কারণ এই দলটি অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলোর মতই নড়বড়ে, আপসকামী এবং রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদের প্রশ্নে নরম হিন্দুত্বের লাইন মেনে চলে। তারা যে ঠিকই ভেবেছিল তা প্রমাণ হয়ে গেল যখন দলের চাপে গৌতমকে মন্ত্রীত্ব খোয়াতে হল। "মিশন জয় ভীম" সংগঠনটির উপরও ভয়ঙ্কর চাপ তৈরি হবে তা বলাই বাহুল্য। এখন এটাই দেখার যে সেই চাপকে উপেক্ষা করে তাঁরা আম্বেদকরবাদী আন্দোলনের পুনর্জীবন ঘটাতে পারেন কি না!