২০২৫ সালের ১৩ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে এবারের একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্স (এএফআই) বা শিক্ষায় স্বাধীনতা সূচক-এর তালিকা। এই সূচক থেকে যে কোনও দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার চিত্র স্পষ্ট হয়। সদ্য প্রকাশিত এই তালিকায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে শিক্ষায় স্বাধীনতা সূচকের মান উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে এই মান ছিল ০.৩৮, যা দ্রুত কমে ২০২৫ সালে ০.১৬-তে এসে দাঁড়িয়েছে – যা সাম্প্রতিককালের মধ্যে সর্বনিম্ন। সূচকের এই নিম্ন মানের কারণে ১৭৯টি দেশের যে তালিকা তৈরি হয়েছে তাতে ভারতের জায়গা হয়েছে ১৫৬ নম্বরে। গত এক দশকে যে ৩৪টি দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতার উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটেছে, ভারত তাদের অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলির মধ্যে এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান প্রায় তলানিতে। এই পরিস্থিতি শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নীতি নির্ধারকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। রাঙ্কিং-এর এই পতন থেকে বোঝা যায় ভারতে শিক্ষা ও গবেষণার অগ্রগতির হার একেবারে থমকে গিয়েছে।
সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভি-ডেম ইনস্টিটিউট’ গবেষণা ও শিক্ষাদানের স্বাধীনতা, জ্ঞান ও তথ্যের অবাধ আদান-প্রদান, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন, ক্যাম্পাসের অখণ্ডতা এবং একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এই সূচক নির্ধারণ করে। ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, কর্তৃত্ববাদী দলগুলোর নির্বাচনী সাফল্য একাডেমিক স্বাধীনতা হ্রাসের একটি প্রধান কারণ। গত ৫০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কর্তৃত্ববাদী দল ক্ষমতায় এলে একাডেমিক স্বাধীনতায় সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে ভারতের ক্ষেত্রেও সেই ছবি স্পষ্ট।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ
এবারের একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্স তালিকার শেষ ১০-২০ শতাংশের মধ্যে ভারতের জায়গা হয়েছে। এর জন্য মূলত দায়ী মোদী সরকারের শিক্ষানীতি। এই সরকারের আমলে উচ্চশিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ একটি নিয়মিত ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়মকানুন উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ অথবা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রায়শই যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কেরালা ও তামিলনাড়ুর রাজ্য সরকারগুলি অভিযোগ করেছে, কেন্দ্র তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে উপাচার্য নিয়োগে হস্তক্ষেপ করছে। শিক্ষা যেহেতু যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়, তাই বিভিন্ন রাজ্য সরকারও এই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে মতবিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পশ্চিমবঙ্গে উপাচার্য নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার, ঐতিহ্যবাহী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম যোগ্যতা সম্পন্ন এক অধ্যাপিকাকে দীর্ঘদিন উপাচার্য পদে বহাল রেখেছিল, শুধুমাত্র রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ওই উপাচার্যের পুনর্নিয়োগে রাজ্যপালের আপত্তি থাকায় রাজ্য সরকার তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসিয়েছে। এই ধরনের নিয়োগ একাডেমিক নীতি নির্ধারণ, পাঠ্যক্রম তৈরি এবং গবেষণার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারকে কমিয়ে দেয়। যেহেতু "প্রতিষ্ঠানের স্বায়ত্তশাসন" একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্সের অন্যতম নির্ধারক, তাই সূচকের মান কমে যাওয়া স্বাভাবিক।
একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রতিনিয়ত সরকারের হস্তক্ষেপ একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকারি নীতির সমালোচকরা প্রায়শই আইনি হয়রানি ও শাস্তির শিকার হচ্ছেন। এর ফলে শিক্ষাবিদরা স্পর্শকাতর বিষয়ে আলোচনা করতে দ্বিধা বোধ করছেন। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নিলে বেতন-পেনশন হারানোর আশঙ্কায় থাকেন। জুলাই ২০১৮ সালে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) উপাচার্যের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য ৪৮ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরানো হয়েছিল। তাঁদের অনেকেরই অবসরের পর পেনশন আটকে দেওয়া হয় – যা শিক্ষকদের ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতায় একটি স্পষ্ট বাধা। এই ধরনের অভিজ্ঞতা অন্যান্য শিক্ষাবিদদেরও সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করার সাহস কমিয়ে দেয়, যা শিক্ষামূলক আলোচনার পরিবেশকে সংকুচিত করে। লন্ডনভিত্তিক 'দ্য টাইমস হায়ার এডুকেশন সাপ্লিমেন্ট'-এর একটি প্রতিবেদনেও এই উদ্বেগের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। খবরটিতে বলা হয়েছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষকদের ভয় দেখাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সেই শিক্ষকদের ডেকে বলেছে যে, কারা কারা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, তা সরকার জানে। একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা তাঁকে সাবধান করে বলেছেন, ভবিষ্যতে সরকার বিরোধী কোনো বিষয়ে কথা বলার আগে যেন একবার চিন্তা করেন। এই ধরনের পদক্ষেপ শিক্ষকদের মধ্যে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে, যা তাঁদের স্বাধীন চিন্তায় এবং মতামত প্রকাশে বাধা দেয়। এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে ভিন্নমত প্রকাশ করলে শিক্ষকদের শাস্তি দেওয়া হতে পারে। ফলে, শিক্ষকরা তাঁদের নিজস্ব মত প্রকাশে ভয় পান। এই পরিস্থিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত চিন্তার পরিবেশকে ধ্বংস করে। শেষ পর্যন্ত এটি শিক্ষায়তনিক স্বাধীনতার সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্বাধীন গবেষণা ও শিক্ষাদানে তহবিলের অভাব ও নিয়ন্ত্রণ
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নিয়মিত তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থের অভাবে শিক্ষাব্যবস্থার গুণমান কমেছে এবং সকলের জন্য শিক্ষার সমান সুযোগের নীতি দুর্বল হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং গবেষণার সরঞ্জাম কিনতে পারছে না। পাশাপাশি বিদেশি অনুদান নিয়ন্ত্রণ আইন (এফ সি আর এ)-এর কঠোর প্রয়োগ স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করে চলেছেন, এফসিআরএ-এর কঠোর প্রয়োগের ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং গবেষণার জন্য তহবিল আসা বন্ধ হয়ে গেছে, যা তাদের গবেষণার কাজ ব্যাহত করছে। আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা ভারতে গবেষণা করার বিষয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
জ্ঞান ও তথ্যের অবাধ আদান-প্রদানে বাধা
কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতিনিয়ত একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পাঠ্যক্রম এবং গবেষণার বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সরকারের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে বিজেপির ছাত্র শাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভিন্ন মতাদর্শের প্রতি অসহিষ্ণুতা বাড়াচ্ছে। জাতীয় শিক্ষা নীতির পাঠ্যক্রমে ভারতীয় জ্ঞান ব্যবস্থার (আইকেএস)-এর উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়ে বিশেষ আদর্শকে প্রচার করবে বলে শিক্ষাবিদরা মনে করছেন। এই সমস্ত কিছুই একাডেমিক স্বাধীনতার পরিপন্থী। যা জ্ঞান ও তথ্যের অবাধ আদান-প্রদানকে সীমিত করছে।
ক্যাম্পাসের অখণ্ডতায় হস্তক্ষেপ
সাম্প্রতিককালে, নজরদারি ও নিরাপত্তার অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে সরকারি হস্তক্ষেপ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা শান্তভাবে প্রতিবাদ করতে বা তাঁদের আলাদা মতামত প্রকাশ করতে পারছেন না। এর একটি খারাপ উদাহরণ হলো জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের প্রতিবাদ বন্ধ করে দেওয়া, যা অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। এই প্রেক্ষাপটে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্নমত প্রকাশের সময় আন্দোলনকারীদের উপর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ন্যক্কারজনক ঘটনা একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্সের উপর একটি কালো দাগ। এই ঘটনা সরাসরি শিক্ষাঙ্গনে ভয় ও ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ফলে ছাত্র ও শিক্ষকরা ভবিষ্যতে স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে ভয় পাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একজন সরকারি কর্মকর্তার এই ধরনের আগ্রাসী আচরণ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা – এই দুটি বিষয়ই একাডেমিক স্বাধীনতার অপরিহার্য স্তম্ভ। যাদবপুরের এই ঘটনা উভয় স্তম্ভকেই দুর্বল করে দিয়েছে।
একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্সের শীর্ষে যারা
অন্যদিকে, একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্স তালিকার শীর্ষে রয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র। ২০২৫ সালে তাদের এই সূচকের মান ০.৯৪, যা বিশ্বের গড় মানের চেয়ে অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে যে দেশটির শিক্ষাক্ষেত্রে যথেষ্ট স্বাধীনতা রয়েছে। ১৯৯৮ সালের উচ্চশিক্ষা আইন অনুযায়ী, সেখানকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের নিজেদের মতো করে পঠনপাঠন নির্ধারণ করতে পারে, কাদের ভর্তি নেবে সেই নিয়ম তৈরি করতে পারে, কীভাবে গবেষণা করবে এবং তার অর্থ কীভাবে ব্যয় করবে – এই সমস্ত বিষয়ে তারা স্বাধীন। এই আইনি সুরক্ষা, একাডেমিক স্বাধীনতার একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। সেখানে শিক্ষাবিদ ও গবেষকরা কোনো সরকারি বা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাঁদের কাজ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, চার্লস ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এবং চেক টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি ইন প্রাগের মতো ছাত্র সংগঠনগুলোও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা এবং স্বাধীনভাবে চিন্তা করার পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করে। তারা ছাত্রদের জন্য লড়াই করে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুন তৈরির সময় তাদের মতামত জানায়। কর্তৃপক্ষ সেই মতামত গ্রহণ করে। এই স্বাধীন ও সক্রিয় ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে আরও খোলা ও সমালোচনামূলক করে তোলে, যা ফ্রিডম ইনডেক্সে ভালো ফল এনে দেয়। চেক প্রজাতন্ত্র ছাড়াও এস্তোনিয়া, বেলজিয়াম, লাটভিয়া ও সুইডেনের মতো দেশগুলিতেও দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র বিরাজ করছে, আইনের শাসন আছে এবং সবাই কথা বলার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তাই এসব দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে অনেকটা মুক্ত। শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থীরা মন খুলে গবেষণা ও মতামত দিতে পারেন। এই দেশগুলিতেও উচ্চ শিক্ষায় স্বাধীনতা নজর কাড়ার মতন। এমনকি ভারতের প্রতিবেশী দেশ - পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাও একাডেমিক স্বাধীনতায় ভারতের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। স্কলার্স অ্যাট রিস্কের ‘ফ্রি টু থিঙ্ক ২০২৪’ - রিপোর্ট বলছে, ভারতে একাডেমিক স্বাধীনতার অবস্থা খুবই খারাপ। জ্ঞান অর্জন, বিতরণ ও সমালোচনার মতো মৌলিক অধিকারগুলি শিক্ষাক্ষেত্রে এখন "পুরোপুরি সীমিত"।
পরিশেষে বলা যায়, যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী দল ক্ষমতায় আছে অথবা যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাত লেগেই থাকে, সেসব জায়গায় একাডেমিক স্বাধীনতা প্রায় নেই বললেই চলে। একাডেমিক ফ্রিডম ইনডেক্সে ভারতের এই অবস্থান ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণা এবং শিক্ষার গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য চিন্তার কারণ। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ক্ষমতা, শিক্ষকদের কাজের সুরক্ষা এবং ভিন্ন মতের প্রতি সম্মান দেখানো জরুরি। তা না হলে, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার স্বপ্ন এবং একটি প্রাণবন্ত গণতান্ত্রিক শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখা কঠিন হবে।