পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লকডাউনের খাওয়া দাওয়া

  • 03 May, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 1381 view(s)
  • লিখেছেন : হুতোম প্যাঁচা
এদানি সরকার বাহাদুরের ভারী মায়া দয়া হয়েচে। দেশ সুদ্ধ তালা ঝুলিয়েচেন, ছোটলোকে খেতে পাচ্চে না এ কতা যতক্ষণ নিন্দুকে বলেচেন ততক্ষণ কানে তোলেননি। কদিন হল বড়বাবু স্বপ্নাদেশ পেয়েচেন যে যে পথে আটকে পড়েচে সকলকে নিজ নিজ বাটীতে পৌঁচে না দিলে অমরাবতীর প্যাটেলের স্ট্যাচুতে চিড় দ্যাকা দেবে। তাই হেঁকে বল্লেন, এই, এদের সব যে যেকানে যাবে পাঠিয়ে দাও।
এদানি সরকার বাহাদুরের ভারী মায়া দয়া হয়েচে। দেশ সুদ্ধ তালা ঝুলিয়েচেন, ছোটলোকে খেতে পাচ্চে না এ কতা যতক্ষণ নিন্দুকে বলেচেন ততক্ষণ কানে তোলেননি। কদিন হল বড়বাবু স্বপ্নাদেশ পেয়েচেন যে যে পথে আটকে পড়েচে সকলকে নিজ নিজ বাটীতে পৌঁচে না দিলে অমরাবতীর প্যাটেলের স্ট্যাচুতে চিড় দ্যাকা দেবে। তাই হেঁকে বল্লেন, এই, এদের সব যে যেকানে যাবে পাঠিয়ে দাও।
তা মেজবাবু গোঁসা কল্লে। বল্লে পাঠানো যে হবে, বলি খরচ দেবে কে? এদিকে ফুটপাতের ফেকলু হতে অ্যান্টিলার অ্যান্ট অবধি সকলের দোকানে ঝাঁপ ফেলা, ওদিকে আমায় দশ দিকের সরকার কেনা বেচা কত্তে হচ্চে, এদিকের ত্যাঁদড়কে চুষি কাটি দিতে ওদিকের রাজপুত্তুরের খাঁই বেড়ে যাচ্চে, উনি সকলকে বাড়ি পাঠানোর কড়ার দিচ্চেন। রোজগার তো কত্তে হয় না, ইত্যাদি।
বড়বাবু মিঠে হেসে বল্লেন, চটচিস কেন মেজ? সকাল সন্দে প্রাণায়াম কচ্ছিস নে বোধ হচ্চে। আহা, আমি বলেচি ছোটলোকগুলোকে ঘরে পৌঁচে দিতে হবে। কে দেবে বলেচি কি? দেশে কত লোক আচে দয়ার শরীর। তারাই দেবে একন, তুই ভাবিস নে। কয়েকখানা রেলগাড়ীর বেওস্তা করে দে কেবল। একখানা জব্বর নাম রাকতে হবে সে গাড়ীর। কানে গেলেই লোকের ভক্তিভাব আসে এম্নি। ছোটলোকে গাড়িতে পেচন ঠেকিয়েই মাতায় হাত ঠেকিয়ে বলে, যার ভগমান নেই তার বড়বাবু আচেন এম্নি।
সম্পাদকের হাল ভালো নয়। গোড়ার দিকে রোগ চেপে রাকতে যেয়ে বারোটা বাজিয়েচে, একন ভেন্টিলেটরের খোঁজ পড়েচে। হুতোম সম্পাদকের তোয়াক্কা না করে যেদিকে সাধ উড়ে বেড়াচ্চিলেন, তা রাজধানীতে এসব চোকে পল্ল। এ রাজ্য সে রাজ্য অনেক ঘোরা হল। কোতাও পথে জনমনিষ্যি নেই, কুকুরে ভিখিরিতে একত্র খাচ্চে, ওদিকে রুগী দেকচি বেড়েই চলেচে। সরকার বাহাদুর ফি রোজ বলচেন কার্ভ ফ্ল্যাট করে দিয়েচি। ভাবলেম ফিলিমের কোন নায়িকার কার্ভের কতা হচ্চে। সম্পাদককে দেকেচি সানি বলে এক মা জননীর কার্ভ নিয়ে ভারী আহা উহু করে। একবার তো হুইস্কির ঘোরে বল্লে, হুতোমবাবু, অমনটি আর কারো নেই।
কলকেতায় ফিরে বিদ্যেসাগর মশায়ের নামে যে ব্রিজ করেচেন আপনেরা তার উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় চোকে পল্ল এক আজব কাণ্ড। এক বাড়ীর আঙিনায় মাংস পোলাও কালিয়া মণ্ডা মেঠাই দিব্য রান্না হচ্চে। সে পাঁপরভাজা দেকে হুতোমের ইশকুলের ঘন্টাটির কতা মনে পল্ল। এক সিড়িঙ্গে মার্কা ছোকরা কড়া থেকে রসগোল্লা ছেঁকে তুলচে। মনে হচ্চে উটপাখির ডিম একেকটি। এক মুষকো তদারক কচ্ছে। দুটি চাট্টি খ্যাংরা কাটি ছেলেপুলে ঘোরা ফেরা কচ্ছে। মুষকোর সবচে বড় কাজটি হচ্চে তাদের খ্যাদানো। ছেলেগুলির মুখ দেকলেই মালুম হয় অ্যাতো বাহারি খাবার জম্মে দ্যাকেনি। তারা মদ্যে মদ্যে মুষকো ওদিক পানে চাইলে দুটি আলুভাজা কি ল্যাংচা হাতিয়ে নেবার তাল কচ্ছে, তেমন সুবিধে হচ্চে না। অবিশ্যি ছেড়ে দেয়ার পাত্তর নয়। একখানা ইয়াব্বড় হাঁড়ির পানে চেয়ে দেখলেম ষড় কচ্ছে। সদ্দার মতন ছোঁড়াটা বল্লে, দেকচিস কত্ত বড় হাঁড়ি? ওতে ও বেলা বিরিয়ানি রাঁধা হবে। শুনে একজন বল্লে, বিরিয়ানি? কারা খাবে গো? সদ্দার জবাব দিলে, তা জানিস নে? ওই যে হোথায় বাবুরা আচে না? দুবেলা মিটিং কচ্ছে যে। কিসের মিটিং গো? আরে হাঁদা, লকডাউনে সব রেশন দিতে হচ্চে না? কাকে কত কেজি রেশন দেবে, কোন দোকান খোলা হবে, কোনটে বন্দ হবে এসব মিটিং করেই তো ঠিক কত্তে লাগে। তা অ্যাতো মিটিং হবে, বাবুদের ক্ষিদে লাগবে না?
দেকে শুনে হুতোমের মেজাজ বিগড়োচ্চে, এম্নি সময় কানের কাচে কে বল্লে, শালা বাবুদের ভোজ তো খুব জমেছে। যাবে নাকি মদন? আমরাও পাত পেড়ে খেয়ে আসব দুটো?
চেয়ে দেকি দুটো জ্যান্ত লোক ব্রিজের আরেক রডে বসে পা দোলাচ্চে আর বিড়ি টানচে। এরা অ্যাত উঁচুতে উঠল কী উপায়? হুতোমের মতন ভূত পীরেত যে নন পষ্ট দেকতে পাচ্চি! তা শরীর ধারণ করে শুধোলেম, কোন লোক থেকে আসা হয়? ইহলোকে তো অ্যাদ্দূর ওঠা হয় না বাপু।
ঢ্যাঙা মতন লোকটি দাঁত দেকিয়ে বল্লে, তা আপনিই বা কেমন ধারা? দেকে তো আবার ভদ্দরলোক মনে হচ্ছে, আমাদের মতন ছোটলোক তো নয়। এখানে পা দুলিয়ে হাওয়া খাচ্ছ কী করে চাঁদু?
বল্লেম, গত হয়েচি আজ দেড় শত বচ্ছর হল। তোমরা?
ঢ্যাঙা বল্লে আমরা জ্যান্তই আছি, তবে কিনা আমাদের কিছু স্পেশাল ক্ষমতা আছে। তাই দিয়ে আমরা লোকের পেছন মেরে বেড়াই। ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই।
পাশের লোকটি বল্লে, ভদ্দরলোকের ভূতকেও বিশ্বাস করতে নেই কতবার বলেছি। শালা অচেনা লোককে এত ইনফরমেশন দেয়ার কী আছে?
ঢ্যাঙা রুখে উঠে বল্লে, থামলি, মদনা? অমন অনেক দেখেছি। খোঁচড় টোচড় আমি মুখ দেখলেই চিনতে পারি। তাও কিচাইন কল্লে, শালা ভূতেরও ধুতি খুলে নেয়ার বিদ্যে আমার জানা আছে। এই যে কাকা, এখানে কী মতলবে? ঝেড়ে কাশো তো।
এদের কতা সে কালের সেয়ানাদের মতন হলেও একেলে সম্পাদকের চে খাঁটি হওয়ায় হুতোমের মনে ধল্ল। অতেব পরিচয় দেয়া হল। তিনজনের একজনে ক্ল্যাপ দিয়ে বল্লে, বিউটিফুল। আরে গুরু, তুমি তো ইনস্পিরেশন। ডি এসের দোষ নিও না। আজ থেকে আমরা তোমার স্যাঙাত। এই ডি এস, ওই মদন আর আমি পুরন্দর ভাট।
ঢ্যাঙা বিড়ি মা গঙ্গায় বিসর্জন দে বল্লে, কেন বাঁড়া? আমরা ওনার স্যাঙাত কেন? উনি আমাদের স্যাঙাত হলে দোষ কিসে?
ভাট কিচু বলার আগেই হুতোম বল্লেন আচ্ছা তাই হল। ডি এস তুষ্ট হয়ে বল্লে, আপনি ইন্টারেস্টিং লোক মনে হচ্ছে। আচ্ছা, দেখা যাবে। থাকবেন নাকি আমাদের আজকের অপারেশনে?
হুতোম বল্লেন, না ভায়া। আমি সেকেলে লোক হাজার হোক। তোমাদের সাথে পাল্লা দেয়া কি আমার কম্ম? তোমরা যেকানে যা পারো তচনচ করো গে। আমি দেকব আর আমোদ করে নকশায় লিকে দোব এখন। এদানি ভাল মন্দ সকলি পাব্লিসিটি নইলে জবর হয় না শুনচি।
শুনে তিনজনে ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই বলে উড়ে পল্লে।
তা অপারেশনটি মন্দ হয়নি। দুপুরে পেল্লায় আপিসে সবে বাবু বিবিরো পাত পেড়ে খেতে বসেচেন কি বসেননি, এ সি ডাক্ট ফুঁড়ে হুতোমের নতুন স্যাঙাতেরা হাজির। হাই ড্রেনের পাঁক, সরকার বাহাদুরের হাসপাতালের সার্জিক্যাল ওয়েস্ট, সালকের বস্তির ন্যাংটা পোটার বাহ্যি, টি বি রুগীর বমি আর লকডাউনের আগে রাঁধা ফুটপাতের ঘুগনির উত্তম মিক্সচার পোলাও কালিয়া মণ্ডা মেঠাইয়ের উপর ঢেলে ভোজের ছেরাদ্দির পাকা বেওস্তা কল্লে।
বাবু বিবিরা যকন পাগলের প্রায় চেঁচামেচি কচ্ছেন আর তেনাদের মনিব তদন্তের অর্ডার দিচ্চেন, তকন হুতোম আর তেনার নূতন স্যাঙাতেরা নিকটস্থ মলের ছাতে বসে নাহক হুল্লোড় কচ্ছেন। ততক্ষণ খবর হয়েচে রাজধানীর বড়বাবু ডাক্তার বদ্যিদের মাতায় মিলিটারিকে দিয়ে পুষ্পবৃষ্টি করাবেন। হুতোম স্যাঙাতদের এ সংবাদ দে বল্লেন, এই ধ্যাষ্টামিরও একটা বিহিত কত্তে হয়। ডি এস আর মদন মুখ খোলার পূর্বেই পুরন্দর ভাট বল্লে
ফুলে ফুলে ঢেকে আছে মগজের সমাধি
আহ্লাদে আটখানা বিচিটাও জমা দি।
তার পরে বড়বাবু চাপড়ালে পিঠ রে
ফেসবুকে ছবি দেব হবে মহা হিট রে।

0 Comments

Post Comment