পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

সরকারি খাতা - ১৪

  • 06 May, 2023
  • 0 Comment(s)
  • 917 view(s)
  • লিখেছেন : কৌশিক সরকার
অন্য দিকে বছরের পর বছর ধরে চলা বিশু পাসোয়ান এর বট গাছের নিচের চায়ের দোকান টা আসতে আসতে বন্ধ হয়ে যাবে। সে কদিন একটু সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবে, ওর মা লোকের বাড়ী বাসন মাজে, ও ভেবেছিলো ওর মা কে এবার আর লোকের বাড়ী কাজ করতে দেবে না কিন্তু সে স্বপ্ন কি সত্যি হবে?

অনেক অর্থ ব্যায় করে পরিবেশ বাঁচানোর নানা পোস্টার আজকাল দেখা যায় দেওয়ালে। কিন্তু দেখা যাবে সামনের কোনও একটি ঝড়ের পর দেওয়ালে সেই পোস্টার আর নেই। হয়তো আবার লাগাবে। টাকা থাকলে অনেক কিছু করা যায়, তোরণ করা যায়, মেলা, খেলা, দিবস উদযাপন করা যায়, আন্দোলন হাইজ্যাক করা যায়, পরিকল্পনা চুরি করা যায়, নকল করে আন্দোলনের নামে ইভেন্ট করা যায়। কিন্তু যেটা হয় না সেটা হোলো আন্দোলন। চোখে চোখ রেখে কথা বলা, সরকার ও প্রশাসন কে প্রশ্ন করার স্পর্ধা। সৃষ্টি হয় না নতুন নতুন ভাবনা। এগুলোকে একটু বুদ্ধি করে পাশ কাটালেই, দেখা যাবে সামনে দাঁড়িয়ে প্রজাপতি পার্কের মত প্রকল্প। যা নদী ও নদীকে ঘিরে স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্যের পরিপন্থী বলে বিশেষজ্ঞদের মত। খবর পাওয়া যাচ্ছে কৃষ্ণনগরে নদী কোলে খাস জমির ওপর হবে পার্ক। সেখানে বসে হয়তো কোনো সভা-উৎসব হবে।  পার্কে  বড় মাপের সংস্থার স্ন্যাক্স আর কফি,চা বিক্রি হবে।

 

অন্য দিকে বছরের পর বছর ধরে চলা বিশু পাসোয়ান এর বট গাছের নিচের চায়ের দোকান টা আসতে আসতে বন্ধ হয়ে যাবে। সে কদিন একটু সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবে, ওর মা লোকের বাড়ী বাসন মাজে, ও ভেবেছিলো ওর মা কে এবার আর লোকের বাড়ী কাজ করতে দেবে না, ওর সদ্য হওয়া ছোট শিশু কন্যা কে একটু ভালো ভাবে মানুষ করবে, বউ টা ওর সাথে হাতে হাতে ডিম টোস্ট, ঘুগনি, রুটি করতো। কিছু দিন পর এই বহুজাতিক কম্পিটিশনে নিজেকে না মানাতে পেরে শেষে হবে পরিযায়ী শ্রমিক। বয়েস হওয়া সত্বেও মা লোকের বাড়ীতেই কাজ করতে থাকবে, বউও লোকের বাড়ী কাজে ঢুকে যাবে, ছোট মেয়েটা ভূমিষ্ট হলো এবং বেড়ে উঠবে ঋণের বোঝা নিয়ে অনাদরে। বাবার স্নেহ কে সে সেই ভাবে অনুভবই করতে পারবে না। বাড়ীতে একজন পুরুষও থাকলো না, এদের সুরক্ষা দেওয়ার মত কেউ থাকলো না। কিন্তু নানা সংগঠন,বিশেষজ্ঞ রা  ঐ কর্পোরেট পরিচালিত রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে  মিটিং করবে। আবার পোস্টারও মারবেন নদী বাঁচানোর। আর তখনো হবে অধিকার রক্ষার লড়াই, স্ট্রিট কর্নার,মৎস্যজীবীদের গ্রামে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং, উঠে আসবে নদী বাঁধাল এর মত নির্মম অনৈতিক সিন্ডিকেট রাজের সত্য। মৎস্যজীবী ও প্রান্তিক চাষীদের হাহাকার, পেশা পরিবর্তনের যন্ত্রণার কথা, পরিযায়ী হয়ে ভিন্ দেশে পাড়ি দেওয়ার দুঃখ বেদনার নির্মমতার কথা। দিন প্রতি ৪৫০-৬০০ টাকার আয় কমে ৪৫ টাকা।  আয় এর অনিশ্চিত জীবনের কাহিনী। দিনের পর দিন জলঙ্গী নদী সমাজের নদীকর্মীরা নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে বিগত দিনে কাজ করেছেন। তাদের সাহস জুগিয়েছেন,গ্রামে গ্রামে আলোচনা করেছেন। পরিস্থিতির বুঝে , সবাইকে নিয়ে আলোচনা করে ঠিক হয় বাঁধল তুলতেই হবে।  একের পর এক প্রতিবাদ কর্মসূচি, গ্রামে গ্রামে প্রচার, তৈরি করা হোলো স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র, লিফলেট বিলি, ২৮ কিলোমিটার সাইকেল জাঠা, ১৪ কিলোমিটার পদযাত্রা, মাইকিং, স্ট্রিট কর্নার, মানব বন্ধনের মধ্য দিয়েইআন্দোলন তীব্র হল। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ডেপুটেশন। লাগাতার চিঠি ও মেইল, সরকারি দপ্তর গুলিতে এবং নেতা মন্ত্রীদের কাছে দাবী পত্র পেশ, পৌর সভাতে ও পরিবেশ দপ্তরে STP. গড়ে তোলা ও ঠাকুর বিসর্জনের পর ঘাট থেকে ক্রেন ব্যবহার করে কাঠামো তুলে নেওয়ার দাবী পত্র জমা দেওয়া। একাধিক বার বিভিন্ন ঘাটে জলের গুণগত মান পরীক্ষা করা।মিডিয়া বন্ধুদের পরপর সিরিজ লেখা।সমাজ মাধ্যমে হরেক রকমের পোস্ট। জলশক্তি মন্ত্রকে যোগাযোগ স্থাপন করে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া । বাইরে থাকা সংগঠনদের সাথে পরামর্শ এবং বিভিন্ন নদী ও পরিবেশ পরিস্থিতির কথা ওয়েবিনার এর  মাধ্যমে আলোচনা করে নেওয়া। এবং তাদের এই আন্দোলনে যুক্ত করা, সেলিব্রিটিদের বক্তব্য নিয়ে তাদের প্রচারে যুক্ত করা, নতুন নতুন স্লোগান তৈরি করে প্রচার চালানো। বিভিন্ন পরিবেশ রক্ষার ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে তাদের পাশে সমর্থন নিয়ে দাড়ানো ও পৌঁছে যাওয়া সেই বিধ্বস্ত সাথীদের পাশে, সরকার এবং প্রশাসন যখন বুঝতে পারলো এই কাজ টা এবার বন্ধ হওয়া দরকার তখন বন্ধ হয়ে যায়। ছবিতোলা, প্রচারের চাক পেটানো থেকে জলঙ্গী নদী সমাজ সর্বদা দূরে থেকেছে। সমসাময়িক প্রচার মুখী অসরকারী সংস্থা বা এনজিওর থেকে পার্থক্য রেখে প্রকৃতি পরিবেশ শ্রমজীবী মানুষের স্বঅধিকার ও ভারতীয় সংবিধানের উপর আস্থা রেখে মতাদর্শ, বস্তুবাদ কে নিয়ে চলা মানুষের প্রতি বিশ্লেষণ, একদিন মূল ধারায় আসবেই। দিকে দিকে নদী সমাজ ছড়িয়ে দেওয়ার ব্রতকে হাতিয়ার করে  প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে পরিবেশ রাজনীতিকে মূল ধারার রাজনীতি তে অন্তর্ভুক্তির জন্য অক্লান্ত  দরবার চলবে প্রতিদিন। আমাদের স্থির বিশ্বাস একদিন সেটা বাস্তব হবে। ইতিহাস এরকম অনেক সাক্ষ্য বহন করে চলেছে যুগ যুগান্তর।

0 Comments

Post Comment