নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাস পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ পরম্পরা। কিন্তু এবারে তাতে একটা নতুন বিশেষত্ব যোগ হয়েছে। যেখানেই কোনো মারপিটের কথা শুনবেন, তার খুব কম জায়গাতেই তৃণমূল কংগ্রেসের নাম পাবেন। পশ্চিমবঙ্গের পরম্পরায় বিজয়ী পার্টি পরাজিতদের উপর সন্ত্রাস করে। আর এখন সর্বত্র শুনছি, 'মুসলমানরা বোম ফেলে গেল', 'মুসলমানরা বাড়ি ভাঙল' এই জাতীয় অভিযোগ। ভিডিও শেয়ার হচ্ছে, সেখানে ধারাভাষ্যকারের প্রত্যেকটা বাক্যের মধ্যে চারবার করে মুসলমান শব্দটা থাকছে। বাংলার আট থেকে আশি, মানুষ বহু নির্বাচন দেখেছেন এমন ধারাভাষ্য, এমন হুইসপারিং ক্যাম্পেইন, এত এত প্রমাণিত ফেক নিউজ, ফেক ভিডিও কেউ কেনোদিন দেখেছেন বলে মনে করতে পারবেন না। প্রচারের দৌরাত্ম্য এতই প্রবল, যে অনেক যুক্তি-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকেও মাঝে মাঝে ঘেঁটে যেতে দেখছি। গোয়েবলস্ - এর আত্মাও আঁতকে উঠবে নিজের এত ক্লোন দেখতে পেলে।
যদিও অশুভ শক্তি ৭৭ টা আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে, তবুও বাংলার মানুষ ওদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছেন, ওদের ক্ষমতায় আসতে দেন নি।
তবে, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। এই বছরের প্রথমেও কিন্তু রাজ্যের চিত্রটা এরকম ছিল না। ভোট যত এগিয়ে আসছিল, শাসক, বিরোধী দলের সুযোগসন্ধানী নেতাদের ঢল নেমেছিল বিজেপিতে ঢোকার। এমন একটা হাওয়া তৈরি করে ফেলেছিল বিজেপি, যে এ রাজ্যের শাসন তাদের হাতে তুলে দেওয়াই এ রাজ্যের বিধিলিপি। ঠিক সেই দুর্বিষহ মুহূর্তে একদল অসমসাহসী মানুষ শুধু দুটি মুষ্টিবদ্ধ হাতকে সম্বল করে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এই দিগ্বিজয়ীর অশ্বমেধের ঘোড়া রুখে দিতে। তাঁদের পরিশ্রম ও সততা ক্রমশ উলঙ্গ করেছে এই অপশক্তিকে, ফলে দোদুল্যমান, কনফিউজড ভদ্রলোক বাঙালি ক্রমশ ফিরে পেয়েছে তার আত্মবিশ্বাস, বাঁশি শুনে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেনি। এই অসমসাহসী মানুষের দল প্রমাণ করে দিয়েছেন সাহস আর সততা থাকলে শেষ পর্যন্ত দুর্দম শত্রুকেও নাস্তানাবুদ করা যায়।
তবে, আত্মপ্রসাদের জায়গা কিন্তু নেই। সামনে আরো কঠিন লড়াই। ওরা যত নোংরা ঘাঁটবে, মানুষ তত ওদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হবেন। আজ একদম স্পষ্ট, মাছ যেমন জল ছাড়া বাঁচে না, দাঙ্গা ছাড়া ওরাও অসহায়। বিভিন্ন রাজ্যে বারবার দাঙ্গা বাঁধিয়ে হাত পাকিয়ে এসে ওরা আমাদের রাজ্যকে কলঙ্কিত করতে চাইছে। লড়াই জারি রেখে মানুষ ওদের দাঙ্গার স্বপ্নকে চিরতরে ঘুচিয়ে দিন।