পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কোভিড নিয়ে বাদানুবাদ ও মানবাধিকার

  • 09 February, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 2188 view(s)
  • লিখেছেন : উত্তান বন্দ্যোপাধ্যায়
আশ্চর্যের কিছু নেই যে কোভিডকে উপন্যাস হিসাবে উপস্থাপন করার জন্য প্রতিটি প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবং তাই অভিনব ভ্যাকসিনের নিরাময় অনুসরণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য বিদ্যমান এবং জনস্বাস্থ্যের মূল নীতিগুলো দিয়েই নিরাপদ প্রতিকারের সম্ভাবনা যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাহায্য করতে পারত তা ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল এবং অপমান করা হয়েছে। কোভিড সুবিধাজনক অজুহাত হিসাবে এসেছে ক্ষমতার জন্য চিরন্তন বিজ্ঞান ও সমাজ মহামারী মোকাবেলায় বিশ্ববাসী ঐক্যবদ্ধ। আপনার স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুই হারানোর নেই!

ভ্যাক্সিন নেবার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে ৭০ হাজারেরও বেশি রিপোর্ট, জানুয়ারি পর্যন্ত ১,০১৩ জন মারা গেছে, কেন্দ্রীয় সরকার জানাচ্ছে ( সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ৫ ফেব্রুয়ারি,২০২২)। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ডেপুটি মন্ত্রী ভারতী পাওয়ার একটি লিখিত প্রশ্নের উত্তরে লোকসভায় এই কথাটি জানান। তারমানে, সরকার স্বীকার করছে ভ্যাক্সিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে , মৃত্যুও হতে পারে। যদিও ভ্যাক্সিনের ফলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে সরকার দায়িত্ব নেবে না, ভ্যাক্সিন কোম্পানিরও দায় থাকছে না। একথা সরকার ভ্যাক্সিন দেবার প্রথমেই কবুল করেছিল ২০২১ সালেই। যদিও ভ্যাক্সিনটি একটি 'ক্যান্ডিডেট ভ্যাক্সিন', 'এ্যাপ্রুভড ভ্যাক্সিন' নয়। যদিও এটি ট্রায়াল, কিন্তু অবহিত সম্মতি (informed consent) নেওয়া হয় নি, হচ্ছে না। যদিও ভ্যাক্সিনের ফ্যাক্টশীটে লেখা আছে যে "এটা আপৎকালীন ব্যবহারযোগ্য ও কিছু বাছাই করা কেসের" জন্য ব্যবহৃত; তারমানে, গণটীকাকরণ নয়। যদিও এটা অতিমারি, তথাপি জনসাধারণের একটি বড়ো অংশকে ভ্যাক্সিন নিজের পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে - সকলের জন্য সরকার বিনে পয়সায় ভ্যাক্সিন দিতে দায়বদ্ধ, কারণ ভাইরাসের এই সংক্রমণে বা অতিমারিতে জনগণের কোন দোষ নেই - সরকারের এ ঘোষণা নেই। অথচ 'লকডাউন', 'মাস্ক পরা', 'সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং' এর চাবুক শাসনের পরিণতিতে আর্থিক, সামাজিক ক্ষতির দায়ভার জনগণকেই নিতে হবে, এবং কড়া নজরে এবং যখন তখন যা খুশি তাই নিয়মে নিত্যনতুন কোভিড বিধি জনগণকে মেনে চলতে হবে, চলতেই হবে। যদিও ফ্যাক্টশীটে আরো কি কি মারাত্মক ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এনিয়ে কোন তথ্য নেই (বা, জানা নেই) - এ কথা কবুল করা আছে ; তার মানে ট্রায়াল বা রিসার্চ এখনো সেই পর্যায়ে এসে পৌঁছোয় নি, তবুও গণটীকাকরণ চলছে এবং মিডিয়ায় বার বার প্রধানমন্ত্রীর খুশির মন্তব্য চলছে যে "একশ কোটি" , বা, "দেড়শো কোটি" ভ্যাক্সিন দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে , ভ্যাক্সিন নিন নিন নিন বলে প্রচার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয়, রাজ্য, লোকাল গভরর্নমেন্ট সহ পঞ্চায়েত, অফিস কাছারি, পাঠশালা বিদ্যালয়ে - সর্বত্র। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক আর.টি.আই এর উত্তরে এবং সুপ্রীম কোর্টে হলফনামা দিয়ে পরিষ্কার লিখিত কবুল করেছে যে ভ্যাক্সিন নেওয়া বা না-নেওয়া ইচ্ছাকৃত। অথচ এই ভ্যাক্সিন গুলোর ট্রায়াল চলছে, এখনো শেষ হয়নি - তৃতীয় দশার ট্রায়াল নাকি গোটা ২০২২ সাল ধরেই চলবে, তারপর চতুর্থ দশার ট্রায়াল। লিখিত ভাবে সরকার কখনোই বলছে না যে বাধ্যতামূলক ভ্যাক্সিন, কিন্তু কার্যত তা চলছে নানান রকমের বাধ্যবাধকতার উপায়ে এক জোরজবরদস্তি।
এদিকে সর্বনাশ হলো ৯৯ শতাংশ জনগণের কিন্তু তাতে কি ! ১ শতাংশেরও ক্ষুদ্রতম এক ভগ্নাংশের মানুষের কাছে কোভিড পর্ব ও কোভিড পর্ব কোন না কোন ভাবে চালিয়ে যাওয়া হলো 'পৌষমাস'। তীব্র বেকারত্ব, চাকরি চলে যাওয়া, অন্যান্য অসুখকে কোভিডের নামে গ্রাহ্য না‌ করার ফলে অবহেলায় অচিকিৎসায় মৃত্যু (বাই চান্স যদি তার 'কোভিড' সংক্রমণ চলে আসে তবে কোভিডেই মৃত্যু)। সর্বত্র হাট করে খুলে দেওয়া,পর্যটন,হল,মল খুলে দেওয়া - তবু স্কুল খোলা যাবে না।‌ অথচ শিশুদের সংক্রমণ ভীষণ কম, কিম্বা হলেও তার প্রাবল্য কম, কিম্বা তা হলেও তার মৃত্যুহার আরোই কম বা নেই - এসব জানা স্বত্ত্বেও। শিশুদের কোভিড সংক্রমণে প্রাবল্য একেবারেই নেই, একথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কবুল করেছে। তবুও কড়া শাসন চলছে , কোন আইন প্রণয়নের দরকার হচ্ছে না - ভয়ে নিস্তেজ জনসাধারণের অধিকার অনায়াসেই বিনাবাধায় হরণ করা রাষ্ট্রের কাছে খুবই এলেবেলে ও বাচ্চাদের খেলনার মতনই সোজা। কোন সন্দেহবাতিক ও বিশ্বনিন্দুকদের চক্রান্ততত্ত্ব নয়, উক্ত এক শতাংশেরও কম মানুষের দুবছর ব্যাপী ধারাবাহিক 'পৌষমাস' এর কারুকলায় আসছে শিক্ষায় ফান্ডেড এনজিও, পিপিপি মডেল ও অনলাইনের জন্য আসছে নতুন বিদ্যালয়ের পাইলট মডেল ভাবনা । অনলাইনে পঠনপাঠন। শিশুদের বেড়ে ওঠা, মজা করা , দুষ্টুমি করা, এক্সপোজড হবার প্রাকৃতিক উপকরণের বদলে এখন 'এ্যাপ' নিয়ে মানুষ গড়ার খেলা। কিন্তু এসব তো স্বচ্ছলতার প্রতীক। তা হোক, নিউ নর্ম্যাল পৃথিবী এটাই। সেটারই মহড়া চলছে ও শুরু হয়ে গেছে আজ নানান প্যাকেজে। আর গণতান্ত্রিকতার জন্য গলার শির ফোলানো পাবলিক, মানবাধিকার ও বিজ্ঞান কর্মী বেশ কিছুজন কেউ কেউ বিজ্ঞান এটাই মনে করছেন ও তাই রাষ্ট্র বয়ানে এখনও বিশ্বাস রাখছেন, কোন রাষ্ট্রেরই কোন যে আর হাত নেই এই অতিরাষ্ট্রিক হেলনে - সেকথা তারা ভাবতেই পারছেন না।

এখন আমরা চিন্তায় অনেক জুবুথুবু। আমরা অ-সহজিয়া পর্বের দরবারে প্রবেশ করেছি। আর, পরস্পর পরস্পরের মন ও স্বার্থের উচ্চতা মাপছি। আমাদের বন্ধুতা দিনদিন মেকি হয়ে যাচ্ছে- আমরা পরস্পরকে দোষ দিচ্ছি - জানিনা, এর আগে কখনো নিজের টিকে থাকা নিয়ে মানুষ এতো নিরাপত্তার সঙ্কটে পড়েছিলো কিনা, যা মানুষেরই সৃষ্টি - মোটেই প্রকৃতির অন্য কোন অনুবাসিন্দার কারণে নয়।

পৃথিবীর সব কিছুকেই করতলে আনবো, দমন করবো , জয় করবো - স্বাভাবিক ভাবেই অতিমারি তাই বুঝতে গেলে কঠিন 'বিজ্ঞান' বুঝতে হবে- সরলমনা নাগরিকদের কাছে হুহুঙ্কার করে আসা বিজ্ঞান বুঝতে হবে - সে বিজ্ঞান কী?


জনসাধারণের জীবনে স্বস্তি আর শান্তির আয়োজন করে যে ''বিজ্ঞান" এখন তা প্রাচীন, অন্তরীণ; এখন বিজ্ঞান এক অধরা নতুন হয়ে আসবে শুকনো তথ্যের সম্ভারে ও চাবুকের শাসনে; প্রয়োজনে জনজীবনকে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার নামই নাকি "অতি-আধুনিক বিজ্ঞান"। জনতা জনার্দন কিন্তু একমাত্রিক নয়, বরং একটি অসমসত্ত্ব বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য। এই-ই তার পরিচয়, তাই সমস্ত সাধারণ নাগরিকই গবেষণার আধার যা প্রয়োজনীয়, এবং আকর্ষণীয়; এই মনীষাই ছিল বিজ্ঞানের প্রকৃতি ও দীক্ষা।- আজ ধারণাটি একেবারে তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্রীক হয়ে গেছে, তেমন বায়োলজি না জানলেও চলবে, জেনেটিক্স এর বায়োটেকনোলজিক্যাল এ্যাপ্লিকেশন হলেও চলবে - তা স্বস্তিদায়ক না-ই বা হলো!

প্রযুক্তি যখন বিজ্ঞানের প্রচুর রঙচঙ মেখে বিজ্ঞানবিধির দর্শনকে কার্যত অনেকটাই 'না' করে করে বাণিজ্য বিধির প্রলোভনে তঞ্চকতা করতে শুরু করে, সে প্রযুক্তি দেখতে বিজ্ঞান মনে হলেও আসলে সে এক লোভি তঞ্চক, তার পিছনে বাণিজ্যের সুস্থ অমোঘ নিয়ম নেই, বরং অসততা আছে, তাই সে ব্যাধি ও সংক্রমণের সংজ্ঞাকেও পাল্টে দেয়। ব্যাধি আসতে নাও পারে কিন্তু সংক্রমণ, ঝুঁকি আর সাক্ষাৎ সংক্রমণজনিত ব্যাধি - সব তফাৎ গুলো গোলগোল করে গুলিয়ে দেয়।
ব্যাধির ডিফারেনশিয়াল ডায়গোনিসিস এর কঠিন প্রস্তাবিত সংকল্পে অতিনির্ণয়ের পদ্ধতি সে বেছে নেয় - যেন যতক্ষণ ডায়াগোনিসিস না হয় ততক্ষণই ভালো , ঠিক তখনই অতিচিকিৎসাই বিজ্ঞানের থিয়োরি হয়ে যায়। জ্ঞান থেকে wisdom ছেঁটে যায়। এভিডেন্স বেইসড মেডিসিন তখন সংজ্ঞায়িত করতে চায় প্রযুক্তি আর তথ্যের উপর ভিত্তি করে। পরে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় এক বিজ্ঞান নামে জামাকাপড় পরে, এই ফারাকটা চেনা বড়ো মুশকিল। আর, জনমানুষের পক্ষে তা হয়ে ওঠে এক মর্মান্তিক, উঠতে-বসতে একথা ওকাথা বহু কথা, প্রচার ও মিডিয়ার কথায় সে রোগের ভয়ে যারপরনাই রিক্ত ও জীবনিক্লান্ত হয়ে পড়ে, আতঙ্কিত হয়ে পাশের মানুষটাকেই সন্দেহ করে ব'সে রোগভীতিতে, সেই দহনে তার মননে পতন শুরু হতে থাকে। আনন্দ সে ভুলে যেতে থাকে, শান্তির এই কবরখানার ফলকটি থেকেই স্পষ্ট হতে থাকে নিউ নর্ম্যালের যাত্রাপথ। দায়ী কে? দায়ী কি সেই সব্জীওয়ালা দরিদ্র লোকটি যে মাস্ক পরেনি বলে পুলিশ যাকে রাস্তায় কান ধরে উঠবস করায় তার সন্তানের সামনে তাকে অপমান করে? এই অতিমারি কি তাহলে পৌষমাসের ব্যক্তিদের - যা পীড়ন করে মানবতাবাদকে?


এসবের সমাধান করতে হয় বিপ্রতীপ উপায়ে। দেখতে হবে সহজ ভাবে: কোন্ নিয়মে কার, কতটা সুখ, কতটা অসুখ। দেখতে হবে, কতটা ছাড়বো, তার থেকে বেশি পাবো কি? স্থান ও কালে কোন রোগের ঝুঁকিতে কতটা বিপদ, রোগের চেয়ে প্রতিষেধক আগে নাকি তার নিরাময়ের উপায় বার করা , বা, রোগিটিকে সুস্থ করা - কোনটি বিজ্ঞানসম্পৃক্ত? কোনটিতে যন্ত্রণাযাপন বেশি ? কোনটিতেই বা কম?


এখানেই প্রশ্ন আসে জনস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যের দর্শন কি হাইজ্যাক হয়ে গেলো?

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া (PHFI) একটি ফান্ডেড এনজিও।
2006 সালে PHFI-এর সৃষ্টি ভারত সরকারের সমর্থন দ্বারা সক্ষম হয়েছিল এবং একাধিক স্টেকহোল্ডার দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল। প্রাথমিক তহবিল সহায়তা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক (MoHFW), বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং অন্যান্য ফাউন্ডেশন থেকে এসেছে। PHFI এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে একটি সত্যিকারের ‘জনউদ্দেশ্যের জন্য অংশীদারিত্বের’ প্রতিনিধিত্ব করে; PHFI জাতীয় ও রাজ্য সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক একাডেমিয়া, সুশীল সমাজ, গ্লোবাল ফাউন্ডেশন, স্বতন্ত্র নেতা এবং বেসরকারী খাত বহু স্টেকহোল্ডারদের সাথে সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছে। ঐ ওয়েবসাইটে দ্রষ্টব্য: "প্রকল্পের তহবিল জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার এবং কার্যপ্রণালীর জন্য গৃহীত, উদাহরণস্বরূপ, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি, টিকাদান, স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশন, অক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য। এই অনুদানগুলি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে আসে" (সূত্র: <https://www.phfi.org/collaborations>)।
ওয়েবসাইটটি পড়লেই বুঝতে পারঙ্গম হবো যে কিভাবে আন্তর্জাতিক অতিরাষ্ট্রিক বাণিজ্য মহল জনস্বাস্থ্যের ভিতর ঢুকছে এবং কেন সারা পৃথিবী সহ ভারতের জনস্বাস্থ্য কে করায়ত্ত করতে চাইছে। আমরা নিশ্চয়ই ভাববো যে দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রাইভেট ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো হু বা ইউনেস্কো কেও অসরকারি ব্যক্তি বা সংগঠণ হিসাবে অনুদান দেয় এই কারণেই যে জনস্বাস্থ্য বিষয়টাকেই করে তোলা হচ্ছে বাণিজ্য , আরো বাণিজ্য, আরো বাণিজ্যের স্বর্গে। কাজে কাজেই অনুদানের অর্থ এখানে জনমুখী নয়, বাণিজ্যমুখী। তাদের ইনভেস্টমেন্ট। কাজেই কর্মপদ্ধতি- থিয়োরি ও প্রাকটিস এর প্রণেতা মুখ্যত তারাই।
আজকে বিশ্বের বৃহৎ পুঁজি তার সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য জনস্বাস্থ্যকে একটি মুনাফার ক্ষেত্র তৈরি করার কাজে খুব দ্রুত তার রূপ পাল্টাচ্ছে। তাই জনস্বাস্থ্যের প্রকৃত ক্ষেত্রভূমিকে তারা চাইবেই সেই ওয়েলফেয়ারের জায়গায় আর ফেলে না রাখার জন্য। কিন্তু এসব এমনি এমনি হয়না। একটা অশান্তক্ষণ দরকার। আজ সেইসব কর্পোরেটরাই এর পিছনে আছেন যারা এই কোভিড কালে ক্ষয় হননি অন্য ব্যবসায়ীদের মতো। তাদের ব্যবসা বেড়েছে গাণিতিক প্রগতিতে নয় বরং সূচকীয় বর্ধনে।


প্রথমে কানাডা।কানাডার পর অস্ট্রেলিয়া l
হাজারে হাজারে মানুষ কোভিড ভ্যাকসিন বুস্টারের বাধ্যবাধকতা এবং অন্যান্য অত্যাচারের প্রতিবাদে রাজধানীর পথে ঘেরাও এর লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে l
আমাদের দেশে এতোটা প্রতিবাদ এখনই নেই , তবে আঁচটা আছে। ভয়ঙ্কর ব্যাধিগুলোকে অবহেলা করে যে-সংক্রমণে বিশেষ করে, সুস্থ মানুষজন আর যুবকদের মধ্যে মৃত্যুহার যৎসামান্য সেখানেই দেশের সম্পদ বিনিয়োগ করে যাচ্ছি। আমরা যেন ভুলেই যাচ্ছি যে, প্রতিটি দিন আমাদের দেশে অন্তত ২০০০ শিশু এমন এমন অসুখে মারা যায় যেগুলো প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি দিন অন্তত ১৪০০ ভারতবাসী টিবিতে মারা যায়। ডেঙ্গু, টাইফয়েড বা চিকুনগুনিয়ার মতো অসুখবিসুখ যাদের প্রাদুর্ভাব আমাদের দেশে বেশি তাদের উপর নজরদারির বন্দোবস্তই এদেশে নেই। নিজেদের তথ্যপ্রমাণ নেই বলেই যারা অনুদান দেয় আর অনুদানপুষ্ট গবেষণাগুলোর উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হয়।

এইরকম একটা অবস্থায় টিকাদানের পর কী কুফল হচ্ছে তার তথ্যপ্রমাণ যোগাড় করা যে আরও দুরূহ তা বলা বাহুল্য। তাই অনেকে যখন বলেন যে, টিকা-জনিত কুফলের কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই তখন বলতে হয় একজন প্রবীন চিকিৎসক জনস্বাস্থ্যবিদের কথায় – “তথ্যের অনুপস্থিতি আর অনুপস্থিতির তথ্য এক নয়। আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্যের জীর্ণ, কংকালসার পথঘাটের উপর দিয়ে সুপারফাস্ট ট্রেন-এর মতো কোভিডের গণটিকাকরণ চলছে। আমরা এখন শুধু ঈশ্বরের কাছে এইটুকু মিনতি জানাতে পারি, লাইনচ্যুত হয়ে যেন বিরাট কোনও দুর্ঘটনা ঘটে না-যায়।"

"ভাইরাস অসংখ্য, মিউটেশন-সৃষ্ট তাদের বংশধরও অগণন। তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে শয়ে শয়ে টিকা নেওয়াই আমাদের নিয়তি? অতএব আমরা ভাবতে পারি, ‘সক্কলের টিকা হয়ে গেল কিনা এটা উন্নত দেশের প্রমাণ না; বরং উন্নত দেশ তাকেই বলে যেখানে সক্কলের মাথার উপরে ছাদ থাকে, সক্কলে পুষ্টিকর খাবার পায়, স্বাস্থ্য পরিষেবা সক্কলের কাছে পৌঁছে যায়, নির্মল পরিবেশে সক্কলে পরিস্রুত,পানীয় জল পায়। সে এমন এক দেশ যেখানে টিকার ব্যবহারের পিছনে যুক্তি থাকে, বিচক্ষণতাও।’"
আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্যের বুনিয়াদি কাঠামোগুলোর অবস্থা মর্মান্তিক। এই সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রাখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে, আমাদের দেশে নতুন নতুন, অপরীক্ষিত টিকা চালু করে দিলে তার পরিণাম কী হতে পারে। জরাজীর্ণ, ক্ষণভঙ্গুর রাস্তার উপর নতুন নতুন গাড়ি চালু করে দিলে যা হয় তাই হবে। নতুন গাড়ির দরকার কতটা তা বুঝতে পারলে এও বুঝে নেওয়া যায় যে, কোভিড-১৯-এর মতো একটা ব্যাধি যেখানে সংক্রমণ-জনিত মৃত্যুহার ০.১ শতাংশেরও কম সেখানে টিকার দরকার ঠিক কতটা। জনস্বাস্থ্যের নীতি তৈরি হয় দেশ বা অঞ্চলের মানুষের চাহিদা অনুযায়ী। একই মাপের জুতো সকলের পায়ে মানায় না। যস্মিন দেশে যদাচরেৎ। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে অন্য দেশের প্রচলিত নীতি টুকে নিয়ে আমাদের দেশে চালু করে দিলে তা কার্যকরী হয় না, দেশের সম্পদও নষ্ট হয়।

জনস্বাস্থ্যর রক্ষণাবেক্ষণ রাষ্ট্রেরই কাজ। কিন্তু , এখন অন্যরকম।
সরকারি বয়ানের বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্যই হওয়া উচিত সাধারণের হাতিয়ার, কারণ, জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্র জনস্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে ও কর্পোরেটদের স্বার্থ পুষ্ট করে চলেছে। আপৎকালীন সরকারি নীতিগুলি আসলে সবই জনস্বার্থ বিরোধী,যার মূল সুর ,নাগরিকের অধিকার কেড়ে নেওয়া এবং এইভাবে একটা নতুন ধরণের কর্পোরেট সাম্রাজ্য, একটা নয়া বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করা। চিকিৎসার ধরণধারণও পাল্টে গেছে। পেশেন্ট সেন্ট্রিক চিকিৎসা আর নেই। তাই ক্লিনিক্যাল সেন্সও প্রায় অন্তরীণে। আরো আরো উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও এভিডেন্স, খালি এভিডেন্সের প'রে এভিডেন্স - এতে রোগিকে আর সমগ্রতা নিয়ে, আর্টফর্ম (art form) নিয়ে দেখার প্রয়োজন হয়ে উঠছে না। স্পেশালাইজেশনের যুক্তি আসছে ঠিকই , কিন্তু শেষপর্যন্ত রোগিটি কেমন থাকলো? তার কারণ এখন ডাক্তারি আর পেশেন্ট-সেন্ট্রিক নেই , সামনে রাখা হচ্ছে বিজ্ঞানের জয় ,আদপে হচ্ছে বাণিজ্যের স্বার্থ। বাণিজ্যের স্বার্থে চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ আর্টফর্ম থেকে সরে এসে এক কঠিন কঠোর সায়েন্স এভিডেন্স এর উপর শুধুই দাঁড়িয়ে আছে। ফলে Medicine is the politics and holistically an art form of treating patients with the tools of Biological Sciences - এই চিন্তা আর নেই , হারিয়ে গেছে। তাছাড়া যে বিদ্যা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে দিনকে দিন তার গতিপথ তো সমাজিক জনস্বার্থে জনস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে না। তাই চিকিৎসকদের মধ্যে বাণিজ্যিক ঝোঁক, এমনকি তঞ্চকতা - এগুলো যে অমানবতা - এ শিক্ষাই আর তাদের থাকছে না। তাই জনস্বাস্থ্য আজ সবথেকে ভুলুন্ঠিত। এখানেই কর্পোরেট সাম্রাজ্যের নতুন আধার।রাষ্ট্রই এখন সরকারি চিকিৎলয়তেও সমস্ত রোগির বিমাকরণের কথা ভাবছে। বিমাকরণের নামে 'শরীর' একটি বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে প্রবেশ করছে।


কর্পোরেট কে খাপ খাইয়ে খাইয়ে তাই অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয় সম্পূর্ণ জনস্বাস্থ্যের বয়ান পাল্টাতে। মাঝেমাঝে বড়ো ধাক্কা আসে। কোভিড 'আমদানি' না হলেও কোভিড অনেক সুবিধা‌ করে দিয়েছে তাদের গভীর রাষ্ট্রীয় বা অতিরাষ্ট্রীয়তাকে সক্রিয় করবার। কোভিড আবহে একটা কথা অনুচ্চারিতই রয়ে যাচ্ছে। হেলথ কেয়ার সিস্টেম যেভাবে আছে সেটা যে ওভাবে আর চলবেনা - তার আমূল পরিবর্তন দরকার যা কর্পোরেটের স্বার্থ দেখবে না - হেলথ এ বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো - এসব কথা পলিটিক্যাল পার্টিও বলছে না , বিজ্ঞানীমহলও সত্যটাকে আনতে চাইছেন না তাদের পজিশন ও ক্ষমতা থেকে চ্যুত হবার ভয়ে আর তৃতীয়পক্ষ মিডিয়া তারা তো চায়-ই আতঙ্ক আর ভয়টাকে সমাজমানসে আরো যুতসই করা যাতে 'বাণিজ্যপৃথিবী' এটাই বিশ্বাসে গ্রথিত হয়ে থাকে চিরকালীন । তাই মিথ্যেগুলোকে সত্যির মোড়কে বানানোর কারখানা দিবারাত্র চলছে। প্যারাডাইম বদলে গিয়ে নতুন 'মিথ' শুরু হয়ে গেল।চলছে তাই জনগণের উপর এক চাপের শাসন আর প্রতিদিন , প্রতিপল আপনার স্বাধীনতা ক্ষয় হচ্ছে আরো , আরো।

আর ভোরা কমিশন? ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার? সকলের জন্য স্বাস্থ্য? আলমা আটা ডিক্লেয়ারেশন? ন্যুরেমবার্গ কোড? - এ সব কথা এখন অন্তরীণে।‌ সরকার নিজেই এখন তার নিজের জনস্বাস্থ্যের অভিভাবকত্ব ঢিলে করতে চায়। সরকারি সেক্টরেই চলছে পিপিপি মডেল যা দুর্নিবার, বিমাকরণ চলে আসছে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অলিন্দেই। দুনিয়াজুড়ে স্বাস্থ্যে বিমাকরণের ব্যর্থতা প্রমাণিত। রিস্ক বেনিফিট রেশিও তে জল মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। শর্তহীন ভাবে একথাটাই বলা উচিত যে স্বাস্থ্য আপামর নাগরিকের অধিকার। কিন্তু ন্যায্য পাওনা হিসেবে তা আইন সম্মত হয়নি। শিক্ষা আর স্বাস্থ্য দুটোই এখন বাণিজ্যতুখোড় লোকজনের হাতে বন্দী। তারা বিভ্রান্তি তৈরি করে, বিভ্রান্তি বাড়ায়, লোকের মন বিষিয়ে দেয়।


বিল এ্যান্ড মিলিনডা গেটস ফাউন্ডেশন অবশ্য একটা ইউনিভার্সাল হেলথ সিস্টেমের কথা বলতে শুরু করেছে বেশ কিছুকাল থেকেই। কিন্তু সেটা তো কর্পোরেট কন্ট্রোলে ইউনিভার্সাল হেলথ এর বাসনা ! এ কি কখনো হয় ?
No Corporate Control Over The Public Health Policy - এই শ্লোগানটি থেকে আমরা এখন বেশ কয়েক যোজন দুরে। বিজ্ঞান যখন একটা ধর্ম হয়ে যায় তখন বিজ্ঞান সাধনা হয়ে যায় একটা ধর্মাচার। ধর্মাচার পালন করতে গেলে যতটুকু পড়তে হয় ডাক্তারি যা রান্নার বইতেও ততটুকুই থাকে। এর বেশি দরকারও হয় না। তাহলে প্রয়োগশাস্ত্র হিসেবে ডাক্তারির মান আর মূল্য রইল কোথায়? তাই মহৎ কান্ডজ্ঞান ছাড়া আমাদের হাতে আর কিছুই নেই।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এর শেষ একটি রিসার্চ এ (2021 এর জুলাই এর গোড়ায়) "সেরোসার্ভে" টিকা নেননি এমনই 62.3% ভারতীয় শরীরে অ্যান্টিবডির সন্ধান পেয়েছে। এটা কিন্তু ICMR আর WHO র যৌথ সার্ভে। অতএব সেই সার্ভের রিপোর্ট অনুসারে টিকা প্রাপ্তদের সংখ্যা যোগ করলে প্রায় 68 শতাংশ ভারতীয় শরীরে প্রয়োজনীয় এন্টিবডি রয়েছে। 2021 এর জানুয়ারির গোড়ায় যা ছিল 24%। "হার্ড ইমিউনিটি"র তত্ত্ব (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ নিয়ে সহমত) বলেছে রোগ-ভেদে জনসংখ্যার 50% থেকে 90% সংক্রামিত হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা হবে। তাই তো 'হু' এর প্রধান বিজ্ঞানী যিনি আবার ঘটনাচক্রে ভারতীয় সৌমা স্বামীনাথন বলেছিলেন যে কোভিড ভারতে এখন এন্ডেমিক স্টেজে চলে গেছে(জুলাই,২০২১)। সেই খবরটা WHO ও ICMR এর website এও দেওয়াও হলো আবার, কেন তবে নির্বিচারে সক্কলকে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন? কোন বিধানে?

সংক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় বলা হয়েছিল লকডাউন, মুখোশ পরা বা সামাজিক দূরত্ব মানা প্রয়োজন যাতে একসঙ্গে অনেকে আক্রান্ত হয়ে জন-স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর চাপ না সৃষ্টি হয়। এখন বলছে এসব না মানলে মিউটেট করে ভাইরাস আরও ভয়াল রূপ ধারণ করবে। তাই কি? (ধারাভি বস্তি - মুম্বাই তাই বলে কি? তাই কি কলকাতার মেটিয়াবুরুজের বস্তি, ভবানীপুরে উড়িয়া পাড়ার বস্তি, জগদ্দল- শ্রীরামপুরের বস্তি, বেলগাছিয়ার বস্তি, রাজাবাজারের বস্তি- এদের বাস্তবতা কি মূল নিদান-আখ্যানের সাথে মেলে?) কোনটি ঠিক?

আরেকটা কথা - ট্রায়ালে , যদি এটা ট্রায়ালই হয় , কখনো কোন ওষুধ বিপণন এ চলে আসতে পারে? UNESCO র Universal Declaration on Bio Ethics and Human Rights , October,2005, Art. 6 (Informed Consent) কী বলে? এবারে আসি Nuremberg Code , 1947 এ। Nuremberg Trial (Germany) : a set of research ethics principles for human experimentation as Nuremberg Trials at the end of World War II. That is the code of practice of human experimentation whenever it is being conducted। যুদ্ধ-দূর্বৃত্তায়ন (war Crime) কে আঁটকানোর জন্যই 1947 এ Nuremberg Code নামে গঠিত হয়। তার দশটি ধারার প্রথমটিই বলা আছে Voluntary consent এর কথা। Voluntary কথাটা খেয়াল রাখবেন।
এবারে, Helsinki Declaration, 1964 এর কথা। ফিনল্যান্ডের Helsinki শহরে বসেছিল এর রূপায়ণ -It is a set of ethical principles regarding human experimentation by the World Medical Association(WMA) - রোগির উপর বা volunteer মানুষের উপর bio medical experimentation করলে "higher standard of ethics" কে সবার আগে 'protect' বা 'ensure' করতে হবে, এবং , সেটি 'experimentation' এর আগে ও প্রতিটি পদক্ষেপে নিতে হবে , পরে নয়। এবারে, আমাদের দেশের কথায় আসি । MoH&FW (Ministry of health and family welfare),Govt of India "Patients' Rights' বলে একটা charter বানিয়েছিল 2018 এ। সেখানে ১ নম্বর ধারাতে বলা আছে Right to Information, ৩নং এ আছে Right to emergency medical care, ৪নং এ আছে Right to Informed Consent , ১৩নং এ : Right to protection for patients involved clinical trials ও ১৪ নং ধারায় : Right to protection of participants involved in biomedical and health research,
এগুলো থেকেই বোঝা যায় যে কোন ট্রায়ালে বিজ্ঞানে কী ধরণের কান্ডজ্ঞান থাকা দরকার। ইমার্জেন্সী তে সে কান্ডজ্ঞানের কি দরকার নেই? বেশ। তাহলে উক্ত নীতিমালাগুলো সংশোধিত হল না কেন? হলে , সবাই দেখতো যা দেখে 'বিজ্ঞান' রাষ্ট্রীয় নীতিবাগীশরা নিজেরাই হাসতেন- যাঃ, তা বিজ্ঞান নাকি! অতএব যা চলছে চলুক, লিখিত নীতি তো একই আছে! তাহলে বিজ্ঞান কি কান্ডজ্ঞান ছাড়া? ভাইরাসের সভ্যতা (history of virus) কয়েক হাজার কোটি বছরের। ভাইরাস হ'ল এই গ্রহের সবথেকে সিনিয়র সিটিজেন। তাই "যুদ্ধ করছি", "লড়াই করছি" ভাইরাস নিয়ে - এই আখ্যানটাই ভুল।
কোভিড বানানো বা মিথ্যে আতঙ্ক এসব কতোটা ঠিক-বেঠিক - এ বলা‌ কারুর পক্ষেই‌ সম্ভব নয়। চক্রান্ততত্ত্বের আমদানি নয় , তবে বিরোধীদের "চক্রান্ততত্ত্বের হিজিবিজি" বলে ফেলে দেবার একটা প্রচারশক্তি বিদ্যমান। যাইহোক, ওভাবে নয়। তবে কিভাবে? মহামারি কাকে বলবো ? অতিমারি কাকে বলবো ? ভ্যাক্সিন কাকে‌ বলবো? - যখন এই‌ definition গুলো পাল্টে দিয়েছে WHO তখন‌ এটা‌ মনে হতেই পারে, "কেন”?
কী তাতে লাভ হলো, কার ভাল হলো, কতোটা হলো?


অতএব, মহামারী মোকাবেলায় ভূশাসক ঐক্যবদ্ধ। এবং শাসনে বলনে চলনে আখ্যানে আপনিও ঐক্যবদ্ধ থাকুন, মানে গৃহকোণে থাকুন, কষ্ট করে থাকুন আর তাঁর বিধি মানুন। আপনি খারাপ থাকলে মেনে নিন, কারণ আপনি অন্যকে সাহায্য করছেন। অন্যেরাও খারাপ থাকুন আর অন্যকে সাহায্য করুন - সবাইকে একই কথা।
আমরা জানি ভাইরাল রোগগুলি সর্বদা দীর্ঘপর্বে ধীরে ধীরে সময়ের সাথে কম প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে কারণ রূপগুলি হালকা হয়ে যায়। রোগটি স্থানীয় হয়ে ওঠে এবং মহামারী শেষ হয়। এটি মিলিয়ন বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ইতিহাস। তবুও, আজ, বেশিরভাগ দেশে, বেশিরভাগ সামাজিক, বৈজ্ঞানিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে, আতঙ্ককে শান্ত করতে এবং ভয় কমাতে আগ্রহ নেই। কেন সেই উপলব্ধি ডুবতে দেওয়া হবে যখন শক্তিশালী স্বার্থ জলকে ঘোলা করতে কাজ করছে। এক গোষ্ঠী রাজনৈতিক লভ্যাংশ চাইছে, এবং অন্য গোষ্ঠী আতঙ্ক ও ভয়ের ডিভিডেন্ড চাইছে এবং তারা দুজনেই নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। এবং তৃতীয় পক্ষ যেমন মিডিয়া বা গবেষণা সম্প্রদায়গুলি ক্ষমতার কাছে সত্য কথা বলার পরিবর্তে ক্ষমতা এবং মুনাফার নৈকট্য লাভের জন্য লাইনে দাঁড়ানোকে ক্রমশ উপকারী বলে মনে করছে।
এমতাবস্থায় কে বা পারবে, বিড়ালকে ঘণ্টা বাঁধতে! আর এই উপলব্ধির বিরোধে কে এসে চিৎকার করে বলবে , যা হচ্ছে তা ঠিক নয়, ঠিক নয় ! এটা এতোদিনে পরিষ্কার হওয়া উচিত যে খুব কমই উঁচুতলার মানুষ ও সমাজনিদান দেওয়ার মানুষ কেউ কেউ কোভিড নিয়ে আগ্রহী। যে কারণে খুব কমই কোনো দেশ তাদের স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবার উন্নতি করতে সক্ষম বা ইচ্ছুক। প্রকৃতপক্ষে, যখন ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলি (রূপগুলি) হাল্কা এবং স্থানীয় হয়ে উঠছে, এবং হাসপাতালগুলি রোগীদের দ্বারা পূর্ণ হচ্ছে না, তখন অনেক দেশ তাদের স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নানান বিধিনিয়মে নিদান দিয়ে রাখছে, সত্যি কথা ভাবার দরজাটাও রূদ্ধ করে রাখছে সম্ভবত সঙ্কটের অনুভূতিকে দীর্ঘায়িত করার এবং আতঙ্কের অনুভূতিকে পুনরুদ্ধার করার। কোন এপিসোডের আতঙ্ক তেমন ক্ল্যাইম্যাক্স তৈরি করে উঠতে না পারলে পরক্ষণেই নতুন ভ্যারিয়েন্টের আতঙ্কের বয়ান আমদানি করা হচ্ছে।

আশ্চর্যের কিছু নেই যে কোভিডকে উপন্যাস হিসাবে উপস্থাপন করার জন্য প্রতিটি প্রচেষ্টা করা হয়েছে এবং তাই অভিনব ভ্যাকসিনের নিরাময় অনুসরণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য বিদ্যমান এবং জনস্বাস্থ্যের মূল নীতিগুলো দিয়েই নিরাপদ প্রতিকারের সম্ভাবনা যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে সাহায্য করতে পারত তা ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল এবং অপমান করা হয়েছে। কোভিড সুবিধাজনক অজুহাত হিসাবে এসেছে ক্ষমতার জন্য চিরন্তন বিজ্ঞান ও সমাজ মহামারী মোকাবেলায় বিশ্ববাসী ঐক্যবদ্ধ। আপনার স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুই হারানোর নেই! ভাইরাল রোগগুলি সর্বদা সময়ের সাথে কম প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে কারণ রূপগুলি হালকা হয়ে যায়।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এই প্রথমবারের মতো ফার্মা লবির বেসরকারী সংস্থাগুলি কোনও আইনি অনুমোদন বা সমস্যাটি মূল্যায়নের জন্য কোনও বিশেষ দক্ষতা ছাড়াই সেন্সরের ভূমিকা নিয়েছে। কোভিড প্রোটোকলের নামে সমাবেশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়েছে, এমনকি পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ব্যক্তিগত বাড়ি এবং সম্পত্তির মধ্যেও। স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তার ভিত্তিতে এই ধরনের অতুলনীয় ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সামাজিক অস্থিতিশীলতা, নাগরিক অবাধ্যতা বা জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে অনুরূপ ব্যবস্থা রোধ করা। আজ, আমরা বেশ ভালোভাবেই জানি যে কীভাবে ভাইরাল সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং কীভাবে মহামারী বেড়ে যায় এবং বিবর্ণ হয়, তবুও বিশ্বের প্রায় প্রতিটি নেতাই জনগণকে অনুগত করাতে এবং আত্মসমর্পণ করানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি একটি ট্র্যাজেডি, যেকোনো যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পূর্ববর্তী মহামারীর চেয়ে অনেক বেশি খারাপ।

তিনটি দেশ - জাপান, সুইডেন এবং তাইওয়ান। তারা ভয়কে নিয়ে মানুষকে জ্বালাতন করেনি, উৎপাত করেনি - যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে গেছে এবং মহামারী সবচেয়ে ভালোভাবে পরিচালনা করেছে। এমনকি সুইডেনও তার নাগরিকদের স্বাধীনতা ত্যাগ করতে ইচ্ছুক না হওয়ার জন্য খারাপ কিছু করেনি যাতে নাগরিকদের অধিকার খর্ব হয় হয়। মানুষের দুর্বীষহ অবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলেন না যে বিজ্ঞান কর্মী , লকডাউনের বিরোধীতা‌ করেন না‌ যে মানবাধিকার কর্মী ,স্কুল খোলার পক্ষে নন যে সুশীল বিদ্বজ্জন , নাগরিকদের উপর নির্বিচারে জোর খাটিয়ে যে বেআইনি ভ্যাক্সিনেশন - তার বিরোধীতা করেন না যে বিশিষ্ট সুনাগরিক, নীরব থাকছেন এবং নীরব থাকার দূর্বলতা পাছে লোকে বুঝতে পারে তাই প্রশ্নকারীকে এ্যান্টিভ্যাক্সার বলে অনেকক্ষেত্রেই দেগে দেন।
তাহলে , কোথায় যুক্তিবাদ ! বিজ্ঞান ! মানবাধিকার !

লেখক একজন রোগী আন্দোলন কর্মী ও প্রাবন্ধিক।

0 Comments

Post Comment