বিজেপি সাংসদ দীনেশ শর্মা সম্প্রতি ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য উদ্ধৃত করে বলেন যে, ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৭২ শতাংশই পুরুষ। ২০১৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১০৭.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষরা আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পারিবারিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। আদতে তিনি গার্হস্থ্য হিংসা ও হেনস্থা সংক্রান্ত আইনকে লিঙ্গ নিরপেক্ষ করার জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানান। নজরটান সমাজে ক্রমশ নারীবাদের পাশাপাশি পুরুষবাদ মাথা চারা দিয়ে উঠছে। এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের দিনেই অন্তর্বাস-দহনের মাধ্যমে পুরুষদের প্রতিবাদের একটি সংবাদ প্রচারিত হয়, ঘটনাটি ভারতের পুরুষ অধিকার কর্মীদের একটি সংগঠনের তরফে সংগঠিত হয়েছিল। সুতরাং বিষয়টিকে আর উপেক্ষা করা যাচ্ছে না।
আসলে নারী আর পুরুষ হল সমাজে একে-অপরের পরিপূরক। মানুষের শরীরে ঠিক যেমন দুটি হাত, মানবসভ্যতার ক্ষেত্রে ঠিক তেমনই হলেন নারী ও পুরুষ। কিন্তু আজকাল কিছু উগ্র-মানুষ টেনে-হিঁচড়ে সমাজকে সার্বিকভাবে সব্যসাচী হিসাবে গড়ার খেলায় এমনই মেতেছেন যে, দুটি হাতই ক্রমাগত আহত হচ্ছে। আসল কথা হল, নারী আর পুরুষের সাম্য যদি আনতেই হয়, তাহলে আগে দরকার নারীর সঙ্গে নারীর সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠা। কেননা সমাজে যে-পরিমাণে শাশুড়ি-বৌমার কলহ সুবিদিত, শ্বশুর-জামাই কি তার সিকিভাগের কাছাকাছিও পৌঁছোতে পেরেছে? অর্থাৎ যতজন শাশুড়ি ও বৌমা, একে অপরকে যতখানি উৎপীড়ন করেছেন, শ্বশুর-জামাইয়ের বেলায় তো সেরকম ঘটনা খুবই নগন্য। একথা ঠিক যে, মেয়েরা বিয়ের পরে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে, অন্য বাড়িতে এসে প্রবেশ করে আগামী জীবন কাটাবে বলে। কিন্তু বক্তব্য হল, কাটায় ক-জন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো দেখা যায় মেয়ের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পর্ক চিরকাল বজায় থাকলেও, ছেলেটিকে তার বাড়ির সঙ্গে একপ্রকার সম্পর্ক বর্জন করে বউ-কে নিয়ে আলাদা জায়গায় বাসা নিতে হয় অথবা একই বাড়িতে হাঁড়ি আলাদা হয়ে যায়। এটা পুরুষের উপর একপ্রকার মানসিক নির্যাতন। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ কমিউনিটি মেডিসিনে প্রকাশিত ২০১৮ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, হরিয়াণার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১০০০ জন পুরুষে ৫২৪ জন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার যার মধ্যে ৫১.৬ শতাংশই মানসিক বা অনুভূতিগত হিংসা। এটা বহুদিনের ঘটনা। NFHS ২০০৫-০৬-এর তথ্য বলছে যে, ৬০ লক্ষ নারী বিনা প্ররোচনায় পুরুষের উপর অত্যাচার করে, আর যদি স্ত্রী ও তার পরিবারকে একসঙ্গে ধরা হয় তাহলে অত্যাচারিতের ঘটনা ৩ কোটি ছাড়িয়ে যায়। সম্প্রতি অতুল সুভাষের ঘটনা এখনও টাটকা।
এছাড়া দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে মেয়েরা বাপের বাড়ি ছেড়ে আসে ঠিকই কিন্তু বাপের বাড়ির পরিবার প্রায় কোনোদিনই ছাড়ে না। আর বিয়ের কিছু সময় পরেই ছেলেরা বাড়ি ও পরিবার দুইই ত্যাগে বাধ্য হয়। এরকম দম্পতিদের পরবর্তীকালের বিবিধ পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতদের তালিকা ও উপস্থিতি দেখলে দেখা যায় সেখানে কেবলই স্ত্রীর বাপের বাড়ির আত্মীয় ভর্তি, স্বামীর পরিবারের তরফে নেই বা থাকলেও হাতেগোনা। ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, তবে তা কদাচিৎ। আর এর একমাত্র কারণ হল, শাশুড়ি-বৌমা কলহ এবং বৌমার কানে তার গর্ভধারিনী মায়ের লাগাতার উসকানি। আর এর প্রভাব মেয়েদের কর্মস্থলেও এসে আছড়ে পড়ে। শাশুড়ি-ননদ এবং অন্য নারীদের নিয়ে নিন্দা-চর্চা হয়ে ওঠে গল্পগাছার মূল বিষয়। দুজন পুরুষ তাদের শ্বশুরকে নিয়ে নিন্দেবান্দা করছে, এমন দৃশ্য বিরল! অথচ, এক নারী অন্য নারীর কাছে যতটা-না পুরুষের সমালোচনা করে, তার চেয়ে ঢের বেশি করে আত্মীয়া-বান্ধবী-প্রতিবেশীনি-মহিলা সহকর্মীদের বিষয়ে ক্রোধসিক্ত গঞ্জনা, ফিসফিসানি। অনেক সময় তো পোশাক নিয়েও চলে মেয়েদের মধ্যে বিদ্রুপ। শাশুড়ি-বৌমা-গর্ভধারিনী মাতা যেদিন একে-অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন সেদিনই মেয়েদের প্রকৃত মুক্তি ঘটবে, আসল নেক্সাসটা ভেঙে যাবে।
তবে তারপরেও নারী-পুরুষের সাম্য প্রতিষ্ঠা কি হবে? মনে হয় না। এখন শিল্পকেন্দ্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একদিন তো মানুষ ছিল কৃষি ও শিকার নির্ভর। একজন নারী যেদিন গর্ভধারণ করলেন, তার তিন-চারমাস পর থেকে মোটামুটি পরবর্তী একবছর অব্দি, মেয়েদের পক্ষে কৃষিকাজ বা শিকার ইত্যাদি কোনোকিছুই করে স্বনির্ভরভাবে ক্ষুধার জ্বালা মেটানো সম্ভব ছিল না। তাকে মূলত পুরুষের উপর নির্ভর করতেই হবে। যে চাইবে আর যে দেবে, সেখানে দাতার কর্তৃত্ব গ্রহীতার উপর থাকবেই। সুতরাং, যে পুরুষ দায়িত্ব নেবে সে তো জোর খাটাবেই। আর আজও ক-জন নারী সরকারি চাকুরি করেন যে ছ-মাস বেতনপূর্ণ ছুটি পাবেন, সেখানেও তো পুরুষই মূল ব্রেডউইনার। সুতরাং পুরুষের উপর নির্ভরশীলতা নারীদের প্রকৃতিগত কারণেই রাখতে হবে। আজকাল তাই অনেক নারী তীব্র প্রতিবাদ করে বলছেন যে, ‘বিয়ে’ করবেন না। একদিক থেকে এর মতো সুখবর পুরুষের জন্য আর কিছুই হয় না।
তলিয়ে ভাবলে বোঝা যায়, ‘বিয়ে’ আসলে পুরুষের প্রাকৃতিক সত্তার বিরুদ্ধে একটা ব্যবস্থা। প্রকৃতি পুরুষকে সেকেন্ডে দেড় হাজার স্পার্ম তৈরির ক্ষমতা দিয়েছে, তাহলে তার বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা দিনে কতখানি আন্দাজ করা কঠিন নয়। অথচ পুরুষ বিয়ের মাধ্যমে সে একবার তার স্ত্রীকে গর্ভবতী করলে সন্তানজন্মের তিন বা চারমাস আগে থেকে সন্তানজন্ম-পরবর্তী অন্তত তিন বা চারমাস অর্থাৎ কমপক্ষে প্রায় ছ-মাস সঙ্গমহীন অবস্থায় দিনগুজরান করে। এবং সেটা প্রাকৃতিক বা শারীরিক বাধার কারণে নয়, আইন ও নৈতিকতার খাতিরে। সুতরাং, বিয়ে না থাকলে পুরুষ যে-স্বাধীনতা পাবে তা নেহাত মামুলি নয়।
আর এইখানেই যদি কোনো পুরুষ বলে যে, নারীবাদ তো টিকে আছে পুরুষের বিবেচনা ও বিচক্ষণতার উপর নির্ভর করে, তাকে খুব কটাক্ষ করা যাবে না। উদাহরণ দিই, ধরা যাক সমাজে নারীদের উপর পুরুষ-কর্তৃক কোনো অত্যাচার হল। যে-পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করবে তার মধ্যে পুরুষ সংখ্যাধিক, যে-উকিল কেস লড়বে সেখানে পুরুষ সংখ্যাধিক, যে-বিচারক বিচার করবেন সেখানে পুরুষ সংখ্যাধিক। আর এই সমস্ত ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় পুলিশ-উকিল-বিচারক লিঙ্গপরিচয়কে নয়, গুরুত্ব দেবে মানবতাকে ও লিঙ্গনিরপেক্ষতাকে। তারা পুরুষ হয়ে নয়, মানুষ হয়ে কাজ করবে। কিন্তু ধরে নেওয়া যাক, যদি এমন হত যে এরা পুরুষের লিঙ্গপরিচয়কে প্রথমে রাখলেন, সমাজে নারীদের কী দুরবস্থা হবে ভাবলে শিউরে উঠতে হয়! অনেকে বলবেন আইন কী করতে আছে? আইনব্যবস্থা – সেও তো পুরুষেরই নির্মাণ। নারীশিক্ষা, সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বিধবাবিবাহ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যতগুলি নারীদের জন্য আইন পাশ হয়েছে, তার বেশিটাই বা বলা যাক পুরোটাই তো করেছে পুরুষরাই। এটাকে কি পুরুষের বিচক্ষণতা বলা হবে না? অন্যদিকে গতবছর আন্তর্জাতিক নারীদিবসের পরেরদিন সামজমাধ্যমের দৌলতে দেখলাম কোনো-কোনো নারী শিবলিঙ্গে জল ঢালবে বলে উপবাস না করলে, অন্য নারীরা কী নির্মম মন্তব্য ছুঁড়ে দিয়েছেন। আরও আছে, টিভি সিরিয়ালগুলোর বিষয়বস্তুর দিকে তাকালে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারী কর্তৃক নারীর প্রতি বিবিধ সাংসারিক যাতনার চিত্রই সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে, এবং সান্ধ্যকালীন বিনোদনে বেশিরভাগ নারীই তার মুগ্ধ দর্শক। অস্বাভাবিক কিছু প্রদর্শিত হলে তো তার একটা প্রতিবাদ থাকত, কিন্তু থাকে না। অর্থাৎ এটা কোনো মিথ্যাচার নয়, যা ঘটে সেটাই তো মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি আগ্রহের বিষয় হয়। তাই সম্ভবত নারী-পুরুষে সাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মেয়েরাই হল মেয়েদের প্রধান শত্রু। এ কথা বেশিরভাগ নারীও স্বীকার করেন। তাই সব দায় পুরুষের উপর চাপিয়ে দিলে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়, কিন্তু সমাধান মেলে না। তাছাড়া হালআমলে মার্কিন মুলুক ও ইউরোপের দেশগুলোর একটি তথ্য বলছে যে, লেসবিয়ান বিবাহের ডিভোর্সের হার গে-বিবাহের থেকে প্রায় তিনগুণ বেশি। তাহলে কি সমযৌন চাহিদার ক্ষেত্রেও মেয়েরা বেশিদিন মেয়েদের সহ্য করতে পারছে না?
অন্যদিকে নারীবাদ ব্যাপারটাও তো শিল্পবিপ্লবের ফসল। বছরটা ১৮৪৮ সাল, ঢেউ উঠল। শিল্পবিপ্লবের মূল চাহিদাই ছিল অফুরন্ত শ্রমিক, সস্তার শ্রমিকের জোগান। এর জন্য দরকার ছিল নারীদের ঘর থেকে বের করে আনা। নারী-স্বাধীনতার ধুয়ো তুলে মেয়েদের প্রথমে শ্রমিক বানানো হল। এই অনুষঙ্গে মনে পড়ে যায়, ১৯৭০ সালের কেএফসি-এর একটা বিজ্ঞাপন। সেখানে কয়েকটা মুরগির ঠ্যাং রাখা একটা বাক্সের পাশে লেখা ‘Woman’s Liberation’। অর্থাৎ, মেয়েদের রান্নাঘর থেকে বের করে আনার জন্য নারীবাদকে কায়দা করে ব্যবহার করা হল। যেখানে বলা উচিত ছিল, নারী-পুরুষ উভয়ে বাইরে কাজও করুক আবার একসঙ্গে রান্নাও করুক, সেখানে বলা হল, মেয়েদের স্বাধীনতা হল রান্না ছেড়ে বাইরের খাবার খাওয়ানো। ফলে মেয়েরা দলে-দলে বেরিয়ে পড়ল পুরুষ-বিদ্বেষী হয়ে, স্লোগান তুলল, “Don’t Cook Dinner, Starve a Rat Tonight”। হা হতোস্মি! আজও দুনিয়ার বড়-বড় শেফরা তো পুরুষ, এমনকি আমাদের অনুষ্ঠানবাড়িতে অথবা রেস্তোরাঁয় যাঁরা রান্না করেন অর্থাৎ ঠাকুর, তাদের বেশিরভাগই পুরুষ। পুরুষ রান্না করতে পারে না-এমন ধারণা তৈরি করাই হয়েছিল নারীদের ঠকানোর জন্য। এভাবে নারীবাদকে মাধ্যম করে পুঁজিবাদ নারীকে বাজারের পণ্য তৈরি করে ফেলল। পুঁজিবাদের কাছে নারীবাদ হল নারীকে নিয়ন্ত্রণের ও পণ্যায়িত করার আয়ুধ। তাই সাম্য নামের বিষয়টা আকাডেমিক ও সুবিধাবাদী পরিবেশে তর্কের সীমানা ছাড়ালেও বাস্তবিক তা হওয়া অসম্ভব। তবে মেকি হলেও নারীবাদী হওয়াটা আজকাল প্রগতিবাদের ফ্যাশন, প্রকৃতি যতই নারী-পুরুষের সামাজিক, মানসিক ও শরীরগত তফাত রাখুক, নিজেকে ঘোর নারীবাদী প্রমাণ করে সাম্য-সাম্য বলে গলা ফাটাতে না পারলে বৌদ্ধিকতার বাজারে কল্কে মেলা ভার।
অথচ, ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ কী বলছেন?
“মনে করে দেখো, বহুদিন থেকে যত বেশি মেয়ে সংগীতবিদ্যা শিখছে এত পুরুষ শেখেনি। য়ুরোপে অনেক মেয়েই সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত পিয়ানো ঠং ঠং এবং ডোরেমিফা চেঁচিয়ে মরছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কটা Mozart কিংবা Beethoven জন্মাল ! এমন তো ঢের দেখা যায়, বাপের গুণ মেয়েরা এবং মায়ের গুণ ছেলেরা পায়, তবে কেন এ-রকম প্রতিভা কোনো মেয়ে সচরাচর পায় না ? আসল কথা, প্রতিভা একটা শক্তি (Energy), তাতে অনেক বল আবশ্যক, তাতে শরীর ক্ষয় করে। তাই মেয়েদের একরকম গ্রহণশক্তি ধারণশক্তি আছে, কিন্তু সৃজনশক্তির বল নেই।”
এই কথাগুলির হাতেগরম প্রমাণ তো এদেশেই আছে। যে দেশে লতা মঙ্গেশকরের পায়ে মাথা ঠেকায়নি এমন সঙ্গীতজ্ঞ পাওয়া যায় না, সেখানে মেয়েদের ভিতর থেকে সঙ্গীত পরিচালকের সংখ্যার এমন হাহাকার কি সকলকে চমকে দেয় না! যে দেশ লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, শ্রেয়া ঘোষালকে এত উচ্চমর্যাদার আসন দিল, সেই দেশ সঙ্গীত পরিচালিকার উত্থানকে গুরুত্ব দেবে না, এটা অযৌক্তিক তর্কের বিষয় হতে পারে, সত্য নয়।
আবারও, ১৮৯৫ সালে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন,
“মেয়েরা আপনার চতুর্দিকে সৌন্দর্যরক্ষার প্রতি পুরুষদের চেয়ে ঢের বেশি যত্ন করে, কিন্তু সত্যি-সত্যি পুরুষদের চেয়ে কি তাদের সৌন্দর্যপ্রিয়তা বেশি আছে?... সৌন্দর্যের প্রতি পুরুষের মনের ভাব কিছু যেন স্বতন্ত্র প্রকৃতির—আমাদের কাছে সৌন্দর্যের আকর্ষণ ঢের বেশি প্রবল, সৌন্দর্যের অর্থ ঢের বেশি গভীর।…সৌন্দর্য আমার কাছে প্রত্যক্ষ দেবতা। সৌন্দর্য্যের ভিতরকার এই অনন্ত গভীর আধ্যাত্মিকতা, এটা কেবল পুরুষেরা উপলব্ধি করতে পেরেছে। এইজন্যে পুরুষের কাছে মেয়ের সৌন্দর্যের একটা বিশ্বব্যাপকতা আছে।”
গুগলে গিয়ে যদি কেউ পুরুষের ও নারীর সৌন্দর্য বিষয়ে গান লিখে সার্চ করেন, তাহলেই রবীন্দ্রনাথের কথাটার যথার্থতা উপলব্ধি করা যায়, শত বছরের বলিউড যে পুরুষের সৌন্দর্য বর্ণনায় প্রায়-নিঃস্ব ও নারীর বিষয়ে সুজলা-সুফলা হয়ে থাকবে তা স্তব্ধবাক করে বইকী!
তাই আজ সাম্যের জন্য নারীকে ভাবতে হবে দুটো দিকে – এক, নারীর প্রতি নারীর আন্তরিক সহমর্মীতার দিকটি ও দুই, প্রতিভা হিসাবে নারীর কাছে রূপ ও শরীর ছাড়া সমাজকে দেওয়ার মতো কী কী আছে! যেদিন সমাজে একটি মেয়ে বিয়ের জন্য প্রত্যাখ্যাত হবে রূপ বা শরীরের জন্য নয়, ভালো চাকুরি করে না বলে – সেদিন একটা সাম্য ফিরলেও ফিরতে পারে, নতুবা সমাজে সাম্যের অবস্থাও ফিরবে বলে আমার অন্তত আশা নেই। পুনশ্চ সাম্য ভিক্ষে কিংবা ঝগড়া করে পাওয়া যায় না, অর্জন করতে হয়।