পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

আত্মকথা একজন আত্মসুখী মানুষের রোজনামচা

  • 11 May, 2020
  • 0 Comment(s)
  • 3083 view(s)
  • লিখেছেন : নীহারুল ইসলাম
করোনাকালের আগে ও পরে একজন আত্মমুখী মানুষের রোজনামচা.সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাগুলির খোঁজে আমার দিন-রাতের অনেকটা সময় নষ্ট হয়। এই ভাবেই একটু একটু করে আমিও নষ্ট হই এই পৃথিবীর আলো-অন্ধকারে।

~করোনাকালের আগে~

ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ঘুম ভাঙে আমার। ঘুম ভাঙলে আড়িমুড়ি ভাঙতে বিছানায় আর পড়ে থাকি না। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়ি। প্রাতকৃত্য-স্নান সারতে সকাল ছ’টা বাজে। একমুঠ মুড়ি সহযোগে চা পানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দিনযাপন। আগে সংবাদপত্র পড়তাম, এখন পড়ি না। তার বদলে নিজের পড়াশুনা নিয়ে কাটে সকাল দশটা পর্যন্ত। মধ্যে আধ ঘণ্টা বরাদ্দ থাকে বাজার করার জন্যে।

সকাল দশটায় রুটি খেয়ে স্কুল রওনা হই। বাড়ি থেকে আমার স্কুল মাত্র পনেরো মিনিটের পথ। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসি তিনটে সাড়ে তিনটে নাগাদ। ভাত খেয়ে ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম। তারপর বিকেল পাঁচটায় চলে যাই আমার লেখার ঘরে। বাড়ি থেকে মাত্র দু-আড়াই শো মিটার দূরে সেটা। সেখানে রাত নটা পর্যন্ত আমার লেখালেখির চেষ্টা। সঙ্গে উচ্চাঙ্গ সংগীত শ্রবণ। লিখতে ইচ্ছে না করলে পড়াশুনা করি। রাত নটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত চলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।

সাড়ে দশটায় বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খাওয়া। তারপর পরিবারের সঙ্গে একটু সময় কাটানো। সঙ্গে টিভি দেখা। মূলত খবর দেখি। রাত বারোটায় আবার বিছানায়।

নিত্যকার রুটিন এরকম হলেও মাসে অন্তত একটা মুভি দেখি। না, প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে নয়, সেটা আমার লেখার ঘরে বসে আমার ল্যাপটপে। বছরে গোটা পাঁচ-সাতেক থিয়েটার। এর জন্যে আমাকে কষ্ট করে বহরমপুর কিংবা কলকাতা যেতে হয়। গড়-পড়তা বছরে একবার পরিবার নিয়ে দেশ দেখে বেড়ানোর ব্যাপারটাও থাকে।

টেলিফোনে কথা খুব প্রয়োজন না পড়লে কখনোই বলি না। তবে অনলাইন থাকি দিনের অনেকটা সময়। সেটা পড়াশুনার খাতিরেই। মাঝে মধ্যেই ফেসবুকে ঢুঁ মারি। কে কী বলছে, কে কী করছে- জানবার কৌতুহল থাকে। নিজের ব্যাপারেও কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, বলি। অবশ্যই বিতর্ক এড়িয়ে। তাও যে কখনও কখনও বিতর্কে জড়াই না, তা নয়। তখন খুব খারাপ লাগে। তবে চ্যাট একেবারে ভালো লাগে না। আমার কাছে ওটা ভাব আদানপ্রদানের একটা বিরক্তিকর মাধ্যম।

আর লেখালেখির ব্যাপারটা যেন আমার সবসময়ের কাজ। ভোরে বিছানা ছাড়ার সঙ্গে সেটার শুরু হয়। শেষ হয় বিছানায় আবার ঘুমোতে যাবার আগে পর্যন্ত। ভুল বললাম, আমি হয়ত ঘুমিয়েও লিখি! লেখা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কিংবা আমিই লেখাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াই। একটা-দুটো লেখা কখনও আমাকে ধরে ফেলে, একটা-দুটো লেখাকে আমি কখনও ধরে ফেলি। যদিও বেশিরভাগ লেখা এই ডামাডোলের বাজারে মগজ থেকে কোথায় যে হারিয়ে যায়, আর খুঁজে পাই না।

সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাগুলির খোঁজে আমার দিন-রাতের অনেকটা সময় নষ্ট হয়। এই ভাবেই একটু একটু করে আমিও নষ্ট হই এই পৃথিবীর আলো-অন্ধকারে

~করোনাকালে~

এখনও ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ঘুম ভাঙে আমার। ঘুম ভাঙলে আগের মতোই আড়িমুড়ি ভাঙতে বিছানায় আর পড়ে থাকি না। সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়ি। প্রাতকৃত্য-স্নান সারতে সকাল ছটা নয়, সাতটা বেজে যায়। এক গেলাস লেবুজল তার কিছুক্ষণের মধ্যে একমুঠ মুড়ি, প্রেসারের ট্যাবলেট সহযোগে চা পানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দিনযাপন। আগের মতোই এখনও সংবাদপত্র পড়ি না। তার বদলে নিজের পড়াশুনা কিংবা লেখালেখি নিয়ে কাটে সকাল দশটা পর্যন্ত। সব দিন নয়, সপ্তাহে এক-দু’দিন আধ ঘণ্টা বরাদ্দ থাকে বাজার করার জন্যে।

সকাল দশটায় রুটি খাই কিন্তু স্কুল যাই না। করোনা-বিধিতে স্কুল বন্ধ। অগত্যা বাড়িতে গৃহবন্দি থেকে আমি নিজেই লেখাপড়া করি। মিড-ডে-মিল নয়, বউয়ের রান্না করা ভাত খাই ঠিক সময়মতো। তারপর ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম।

কিন্তু বিশ্রামের পর সময় যেন আর কাটতে চায় না। জানালা খুলে প্রকৃতি দেখি। প্রথমেই চোখে পড়ে চাচাদের কামিনী গাছ। কী সুন্দর! রাত্রে ফুল ফোটে। এমন সুগন্ধ ছড়ায়, নিজেকে বেহেস্তের বান্দা মনে হয়। তারপর নির্জন পথ! গাছপালা! পাখি! অদ্ভুত ব্যাপার বাইরে এখন প্রচুর পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির। আমার ঘরের জানালা খোলা পেয়ে তাদের কেউ কেউ আমার ঘরে এসে হাজির হয়। আমি অবাক হয়ে দেখি। ভাবি- এতদিন এই পৃথিবীটা শুধু নিজেদেরই মনে করতাম। কাউকেই পাত্তা দিতাম না। সেটা কত ভুল ছিল, টের পাই। সঙ্গে এটাও টের পাই- আজ বাদে কাল লকডাউন উঠে যাবে, পৃথিবী যেমন ছিল আবার তেমন হবে। কিংবা আরও নিষ্ঠুর। কেউ কাউকে জানবে না, কেউ কাউকে চিনবে না।

যাইহোক, বিকেলে চা খাওয়ার পর আমি যে চলে যেতাম আমার লেখার ঘরে, বাড়ি থেকে মাত্র দু-আড়াই শো মিটার দূরে যেটা, যেখানে রাত নটা পর্যন্ত আমার লেখালেখির চেষ্টা চলত, সঙ্গে উচ্চাঙ্গ সংগীত শ্রবণ, লিখতে ইচ্ছে না করলে পড়াশুনা করতাম, রাত নটা থেকে সাড়ে দশটা- এগারোটা পর্যন্ত চলত বন্ধুদের সঙ্গে তুমুল আড্ডা, এখন ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখতে সেটা আর হয় না। সময়টা আমার বাড়িতেই কাটছে। লেখাপড়া, গান শোনা সবই হচ্ছে। সঙ্গে যেটা জুড়েছে তা হল, বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা বলতে পারেন।

এখন নিত্যকার রুটিন এরকম হলেও মুভি দেখি। এই তো দেখলাম, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। না, প্রেক্ষাগৃহে নয়, YouTube-এ। আবু ইসহাকের ক্লাসিক উপন্যাসের কী অসামান্য চিত্ররূপ! থিয়েটার দেখার প্রশ্নই নেই। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ আর Samuel Beckett-এর ‘Waiting for Godot’ আবার পড়লাম।

আগের মতো ফোনে কথা বলার খুব প্রয়োজন না পড়লে বলি না। তবে আগের মতোই অনলাইন থাকি দিনের অনেকটা সময়। সেটা পড়াশুনার খাতিরেই। মাঝে মধ্যেই ফেসবুকে ঢুঁ মারি। কে কী বলছে, কে কী করছে, জানবার কৌতুহল থাকে। নিজের ব্যাপারেও কিছু বলতে ইচ্ছে হয়, বলি। অবশ্যই বিতর্ক এড়িয়ে। তাও যে কখনও কখনও বিতর্কে জড়াই না, তা নয়। আগের মতোই তখন খুব খারাপ লাগে। তবে চ্যাট একেবারে ভালো লাগে না। আমার কাছে ওটা ভাব আদানপ্রদানের একটা বিরক্তিকর মাধ্যম মাত্র।

আর লেখালেখির ব্যাপারটা আগে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। ওটা আমার সবসময়ের কাজ। ভোরে বিছানা ছাড়ার সঙ্গে সেটার শুরু হয়। শেষ হয় বিছানায় আবার ঘুমোতে যাবার আগে পর্যন্ত। ভুল বললাম- আমি হয়ত ঘুমিয়েও লিখি! লেখা আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। কিংবা আমিই লেখাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াই। একটা-দুটো লেখা কখনও আমাকে ধরে ফেলে, একটা-দুটো লেখাকে আমি কখনও ধরে ফেলি। যদিও বেশিরভাগ লেখা এই ডামাডোলের বাজারে মগজ থেকে কোথায় যে হারিয়ে যায়, আর খুঁজে পাই না।

সেই হারিয়ে যাওয়া লেখাগুলির খোঁজে আমার দিন-রাতের অনেকটা সময় নষ্ট হয়। এই ভাবেই একটু একটু করে আমিও নষ্ট হই এই করোনাকালে। করোনায় নয়, সময়ের নিয়মে।

0 Comments

Post Comment