ফাকুঃ পরিস্থিতি কী বুজ্জিস টাকু?
টাকুঃ খুবই খারাপ। উনিশের চাইতেও বাজে। শুধু দেশে তো নয়, সারা দুনিয়া জুড়ে আমাদের তেড়ে গাল দিচ্ছে।
ফাকুঃ বাজে কথা বলিস না। গাল দিচ্ছে আমাকে। তুই দিব্যি আছিস। অথচ যা কিছু হচ্ছে, সবই তোর মসলা।
টাকুঃ আমি অমন দামি জামাও পরি না, অত লাখ টাকার খাবারও খাই না। আমাকে গাল দেবে কেন?
ফাকুঃ অমনি বুরা নজর দিলি? দুটো বিদেশি প্লেট রোজ আনাই বলে এত রাগ! তোর ছেলের থলেটা যে হু-হু করে ভরে যাচ্ছে তার বেলা? আমি না থাকলে ওকে দিয়ে তুই একটা আলুর দোকানও চালাতে পারতিস না। সে খেয়াল আছে?
টাকুঃ তা ঠিক, তা ঠিক। কিন্তু লোকজন এই সব নিয়ে প্রচুর গাল পাড়ছে।
ফাকুঃ কোথায়? খবরের কাগজে? টিভিতে?
টাকুঃ না না, ওখানে সব ঠিক আছে। দানি বানিরা সব কাগজ টিভি কিনে এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছে, ওরা কেবল আমাদের গুণগানই করে।
ফাকুঃ এটাও খারাপ হচ্ছে। একটু আধটু বিড়বিড় না করলে ওদেরও বিশ্বাস যোগ্যতাই চলে যায়। পাব্লিক ওসব নিয়েও হাসাহাসি করে।
টাকুঃ মুশকিল হচ্ছে, একটু ঢিলে দিলেই বিচ্ছিরি সব খবর বানাতে থাকে। ধর্ষণ-টর্ষণ, ডাকাতি জোচ্চুরি – সমস্ত খবর বের করে দেয়। তাই দানি বলেছে, নিরপেক্সতার দরকার নেই। গরু গণেশ আর হনুমান রোজ চালিয়ে যাও। আর ছিঁচকে চোরের কহানি শোনাও। আম জনতা যেন বড়ে বড়ে ডাকাত দলের দিকে না তাকায়।
ফাকুঃ কাজ হচ্ছে? খবর নিয়েছিস?
টাকুঃ হচ্ছে, ভালোই হচ্ছে। এই শেষের কাজটাতে আবার লাল শালু আমাদের খুব সুবিধা করে দিচ্ছে। ওরাও লোকাল চুরিফুরি নিয়েই ব্যস্ত থাকছে এবং ওদের লোকজনকে ব্যস্ত রাখছে। দানি বানির ব্যাপারে ওদের কোনো আগ্রহ নেই।
ফাকুঃ হ্যাঁ, নিরালায় ওদের বিজনকে যা টাইট প্যাঁচে ফেলেছি, ওদের এছাড়া কিচ্ছু করার নেই। দানিও নিয়মিত যাচ্ছে এবং কিছু না কিছু করে আসছে। একটাই সমস্যা, ওখানে বেশি আসন নেই।
টাকুঃ হ্যাঁ, বাহারটা আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেল। বিদর্ভও ভালো ঠেকছে না। যে ব্যাটাদের অত খরচা করে কেনা হল, একটু হাওয়া ঘুরলেই ওরাও যে চম্পট দেবে না, বলা যাচ্ছে না।
ফাকুঃ কলিঙ্গর খবর রাখছিস?
টাকুঃ তা রাখছি। সিডি ইবিআইকে বলে রেখেছি। কড়ী সে কড়ী নজর রাখছে। একটা ছোট্ট চুটকি দিলেই ওদের উপরও ঝাঁপিয়ে পড়বে।
ফাকুঃ দুএকটা কেস লাগিয়ে দে। স্লো চলুক। নইলে ---
টাকুঃ আমাদের অ্যালিকে বিপদে ফেলব? ঠিক হবে?
ফাকুঃ তুই বুঝতে পারছিস না। এই প্রবীন লোকটা খুব চালাক। ডেট ঘোষণা পর্যন্ত হয়ত আমাদের সঙ্গে থাকবে বলে ভাব দেখাবে। তারপর হাল খারাপ বুঝলে ঝপ করে অন্য শিবিরে চলে যাবে। তখন আর তোর হাতে কিছু থাকবে না।
টাকুঃ রিস্ক হয়ে যাবে কিন্তু। যদি বুঝে ফেলে আগেই বেগড়বাই শুরু করে দেবে। আমাদের আর যাওয়ার কোনো অপশনই থাকবে না। ওখানে কিন্তু লাল শালু তেমন নেই। আমরা কারও থেকে কোনো থার্ড আম্পায়ার বেনিফিট পাব না।
ফাকুঃ আরে দূর পাগল! আমি কি তোকে রেড করতে পাঠাতে বলছি? এই ধর, একটা টিম গেল, খোঁজ খবর করল, এর ওর হিসাব দেখার কথা বলল। কিন্তু চুপচাপ। যেমন করে তদন্ত করা হয় আর কি!
টাকুঃ চুপচাপ? এখন আর সে ওয়াস্তা নেই দোস্ত। সিডি বা ইবিআই যেখানে যাবে, প্রেস দৌড়বে। বাইট চাইবে। ফটো খিঁচবে। আগে আমরাই আমরা বলে দিয়েছিলাম, ক্ল্যাসিক্যাল অর্থে তদন্ত হবে না, ঢাক ঢোল পিটিয়ে জোর শোর প্রচারের মশাল জ্বালিয়ে কাজ করতে হবে। খুব যেন হইচই মচানো হয়। হেব্বি পাব্লিসিটি করতে হবে। ওরা তাই করেছে। কলখাতায় যেরকম করেছে, তার পর আর অন্য কিছু করলে আরও ডাউট বাড়বে। তাতেও প্রবীন সাবধান হয়ে যাবে। মাঝখান থেকে আমাদের আম ভি চলে যাবে, ছালা ভি চলে যাবে।
ফাকুঃ কী? কী বললি? এসব কী বোলচাল দিচ্ছিস?
টাকুঃ বঙালিরা এসব বলে। বহোত মজাক কি বাত।
ফাকুঃ তুই মজায় আছিস? আমি যখন চারদিক অন্ধেরা দেখছি, তোর মজার কথা মনে পড়ছে?
টাকুঃ মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। সেই জন্য মাঝে মধ্যে মস্তি উস্তি ভি করতে হবে। আমি তোকে ফির চালিশ ওয়াট আলোতে আনার জন্য ভেবেই চলেছি। কিছু একটা মতলব বের করে ফেলব। আবার একটা চমকানি দিতে হবে।
ফাকুঃ পুলওয়ামা দো? লোকে এবার ঠিক ধরে ফেলবে। তাছাড়া জওয়ানদের মধ্যেও বহোত ক্সোভ বিক্সোভ রয়ে গেছে। ওরম করলে এখনই করে নিতে হয়। ভোটের সময় করলে ---
টাকুঃ বুঝেছি। কিন্তু এখন করে নিলে গ্যাস পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ানো আভি সে পুরা এক সাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাতে ফির দানি বানি সাহাবরা অসন্তুষ্ট হবে। ভোটের সময় সব তরফ থেকেই এতরাজ দেখতে হবে।
ফাকুঃ অরুণাচল বর্ডার মেঁ চিনের উপর দুএকটা কালীপটকা ছুঁড়লে হয় না? সেটাকেই আঠারহ চ্যানেল মেঁ জোর প্রচার করে দেখালে হয়ত একটা দেশপ্রেমের হল্লা মচে যাবে!
টাকুঃ তা যাবে। কিন্তু তার পর যেটা হবে, তাতে সব ধুয়ে মুছে যাবে। ব্যাটাদের যা তেজ, বর্ডারে একটা রাস্তা বানিয়ে সেখানে বসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেবে। শান্তি বজায় রাখুন। অরনা আমাদের ট্যাঙ্ক রেডি। আমাদেরও তখন শান্তির জন্য হ্যান্ডশেক করতে হবে। পুরো গেম মাঠে মারা যাবে। সেই সব ছবি চার দিকে ভাইরাল হয়ে গেলে তোর এই ৬৫ ইঞ্চিকে ৬৫ সেন্টিমিটার সাইজ দেখাবে। ও রাস্তায় একদম যাব না।
ফাকুঃ পাকিস্তানে? ওদের উপর কিছু করা যায়?
টাকুঃ ওরা এখন প্রায় না খেয়ে মরার জায়গায়। শ্রীলঙ্কার দশায় পড়তে যাচ্ছে। এখন ওখানে আমরা কিছু ফাটালে সারা দুনিয়া থেকে এত বাজে কথা বলবে যে বলার নয়। প্লাস কি বল তো, দানি আর বানির আবার ওদেশে অনেক পুঁজি খাটছে। ওদেরও ইচ্ছে নয়, আমরা এমন কিছু করি যে সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
ফাকুঃ সারা বিশ্ব এমনিতেই প্রচুর আজেবাজে কথা বলছে। এই যে সিসিবি একটা ভিডিও বাজারে ছেড়ে দিল, তুই নিষিদ্ধ করার পরও সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ছেলেমেয়েরা দেখছে এবং দেখাচ্ছে, আমাদের তরবারিয়ালরা প্রায় কোথাও কিছুই আটকাতে পারছে না, সেখানে আমাকে কী সাজিয়েছে দেখেছিস তুই?
টাকুঃ সাজিয়েছে আবার কী? তুই যা করেছিস, সেটাই দেখিয়েছে।
ফাকুঃ আমি একাই সব করেছি? তুই কি সাধু সেজে মহল্লাগুলিতে শান্তি পানি ছেটাচ্ছিলি?
টাকুঃ আরে ইয়ার, গুসসা করছিস কেন? আমি তখন যে জায়গায় ছিলাম, সেখানে যা করার করে গেছি। আমাকে তখন চিনত কে? সেই জন্যই সেই ভিডিওতে আমার ছবিউবি বিশেষ নেই। তুই বে প্রথম থেকেই ভিআইপি, তাই তোকে ওরা বেশি করে দেখিয়েছে। হাঁ, সহি বলেছিস। ভিডিওটা আমাদের ঢের ক্সতি করছে।
ফাকুঃ ওদের পিএম দিসি ভয়ানককে বলেও কিসসু করা গেল না। চ্যানেলটাকে আটকাতে ওরা রাজিই হল না!
টাকুঃ বানি দানি কেউ ওটা কিনে নিতে পারে না?
ফাকুঃ আগে হলে কোশিস করা যেত। এখন যা বদনাম হয়ে গেছে, কিছু কিনতে গেলেই ওদের কোম্পানির ব্যাপারে এত তল্লাশি করবে যে বলার নয়। মনে হয়, চানাচুর কিনতে গেলেও এখন ওরা প্যান কার্ড দেখাতে বলবে। হিডেনগুর একটা রিপোর্ট বের করে আমাদের যা ক্সতি করে দিল না বলার নয়।
টাকুঃ তাও তো, খুব সময়মতো বাবুল পান্ধিকে বচন সভা থেকে নিকাল দেওয়া গেছে। না হলে ও আর বরুণা মিত্র মিলে যা যাচ্ছেতাই ভাষণ দিচ্ছিল খুব অসুবিধা হয়ে যেত। বুদ্ধিটা ভালো বের করেছিলি।
ফাকুঃ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওটাতেও আমাদেরই কেস খেতে হবে। ও পার্লামেন্টারি শহিদ বনে যাবে। বুলন্দ কাজির কাছে আবেদন করছে না। জেল যাত্রায় যেতে চাইছে। একবার ওকে জেলে ঢোকালে ভেরি পপুলার নেতা হয়ে যাবে।
টাকুঃ জেলে যদি আমরা না ঢোকাই? আমাদেরই তো হাতে কেসটা।
ফাকুঃ কাজি একবার শাস্তি ঘোষণা করে দিলে সেটা কার্যকর করতে হবেই। যদি না কাজিই আবার তা মকুব করে দেয়।
টাকুঃ তাই না হয় দিক। আমি না হয় সেরকমই ফরমান পাঠিয়ে দিই।
ফাকুঃ এরা যে সবাই আমাদেরই ক্যাডার সেটা কি তুই খুল্লমখুল্লা বলে দিতে চাস? তাতে আমরা দুনিয়ার কাছে আরও বেইজ্জত হয়ে যাব না?
টাকুঃ আর দুনিয়া! এখন আমাদের গা বাঁচাতে হবে, তাতে যে যা খুশি ভাবুক।
ফাকুঃ হ্যাঁ, আমাদের কোনো প্ল্যানই ঠিকঠাক কাজ করছে না। রাম প্যাঁচালিটাও ভেস্তে গেল। মিছিল কর্, হুল্লোড় মচা, একটু ইয়েও দে – কিন্তু তাই বলে এত গুলো মার্ডার করে দিবি? সিমের প্যাথিটা পুরোই ওধারে চলে গেল!
টাকুঃ যা বলেছিস। আমাদের ছেলেপিলেগুলো কোনো কিছুই প্ল্যান মাফিক করতে পারে না।
ফাকুঃ ভাগমোহনজি কী যে ট্রেনিং দিচ্ছেন কে জানে। চব্বিশে নাও পার করতে হলে সারা দেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে এক একটা হল্লা লাগাতে হবে। যাতে পাব্লিক গ্যাসের দাম পেট্রলের দাম, ওষুধের দামের ব্যাপারগুলো নিয়ে মাথাই না ঘামায়। দানি বানির চুরিচামারি নিয়ে গল্পটল্পও না করে রাস্তায় ঘাটে চায়ের দোকানে পাড়ার ক্লাবে। লাল শালু এটা খুব যত্ন করে চেষ্টা চালাচ্ছে। তুই একটু দ্যাখ্ ---
টাকুঃ তুই এমাসের মনের ক্যাচালে কী বলবি ভেবেছিস?
ফাকুঃ হ্যাঁ, আহত সারস বাঁচানোর বিষয়ে কথা বলব। গওতম বুদ্ধ্ কে জিকর দিয়ে একটু কেঁদে কেঁদে বলব।
টাকুঃ দারুণ হবে। স্ক্রিপ্টটা লিখছে কে?
ফাকুঃ সব কুছ তুঝে কিউঁ কহুঁ ম্যায়? সমঝ লে!
|||