পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

কোনো যুক্তিতেই বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষার্থী-অভ্যুত্থানকে বিরোধিতা করা যাবে না

  • 20 July, 2024
  • 1 Comment(s)
  • 1190 view(s)
  • লিখেছেন : শংকর
বাংলাদেশের এই আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে একেবারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন। বস্তুত তাঁরাই সংখ্যাগুরু। রয়েছেন বামপন্থী বা কমিউনিষ্ট ছাত্রছাত্রীরা। আর তার পাশে পাশেই রয়েছেন বিএনপি, জামাতের সমর্থকরাও।

এক অভূতপূর্ব শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানে কাঁপছে বাংলাদেশ। গত বাহাত্তর ঘন্টায় অসংখ্য শহীদ। প্রতি ঘন্টায় শহীদের সংখ্যা বাড়ছে। সঠিক অঙ্ক বলতে পারছে না কেউই। যত সময় যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষ। সরকার বেপরোয়া দমন অত্যাচার নামিয়ে এনেছে। গুন্ডা ছাত্রলীগ শুরুতে বেনজির হামলা চালাচ্ছিল ছাত্রছাত্রীদের ওপর। এখন শিক্ষার্থীদের পালটা আঘাতে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তারা ক্যাম্পাসছাড়া। ছাত্রছাত্রীরা লড়ছে, মরছে, পালটা রাস্তার দখল নিচ্ছে, কিন্তু বাড়ি যাচ্ছে না। গোটা বাংলাদেশ অবরুদ্ধ ও উত্তাল। গত চব্বিশ ঘন্টায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, ফোনও কাজ করছে না।

সব মিলিয়ে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। এপার বাংলার চিন্তাশীল মানুষরা যদিও এখনও আন্দোলনের পক্ষে খোলাখুলি দাঁড়াতে পারছেন না, অকুন্ঠ সমর্থন দিতে পারছেন না। তাঁদের মনে প্রশ্ন অনেক। সংশয় প্রচুর। তাঁহারা অথৈ জলে পড়ে গিয়েছেন যেন বা!

যেমন ধরুন কেউ দেখলাম বলছেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে কে ক্ষমতায় আসবে, জামাত? বিএনপি? রাজাকাররা? এটাই কি চাওয়া হচ্ছে? এখন মুশকিল হল, রেজিম যদি অত্যাচারী হয়, দুর্নীতিগ্রস্থ হয়, জনবিরোধী হয় তবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হবেই। এই প্রতিবাদ যদি ভয়াবহ দমনপীড়নের সম্মুখীন হয় তাহলে আন্দোলন বেড়ে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি একটা অভ্যুত্থানের জায়গাতেও চলে যেতে পারে। আন্দোলন, বিশেষ করে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন কখনও এই হিসাব করে চলে না যে, এর পরিণতি কী হবে? একটা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের তা চরিত্রও নয়, কাজও নয়। এই কাজ হল সচেতন শক্তির। সচেতন শক্তিকে এটা বুঝতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ফেটে পড়লে তার করণীয় কী? এখানে তার সামনে সাধারণত দুটো রাস্তা থাকে। এক, নিজেরা তৈরি নেই বলে নানা অজুহাতে আন্দোলনের বিরোধিতা করা, অথবা, দুই, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সচেতন অংশ নিজেকে প্রস্তুত করবে। যে কাজগুলি দশকের পর দশক করা হয় নি সেগুলি এক এক দিনে সমাধা হবে। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের সামনে তার নেতা হিসাবে উঠে আসবে। এইজন্যেই লেনিন বলেছিলেন, “There are decades when nothing happens, and there are weeks when decades happen.”

মুশকিল হল লেনিন সবাই নন। লেনিন মানে কী? এককথায় বলা যায় নেতৃত্ব! লেনিন মানে লিডারশিপ পারসনিফায়েড! নেতৃত্ব আকছার গড়ে ওঠে না। লেনিনের সাহস সবাই দেখাতেও পারেন না। তথাপি তাঁরাই নেতা, তাঁরাই বাগ্মী, তাঁরাই তাত্ত্বিক! ফলে দিকে দিকে পরামর্শের ঢেউ চলেছে, এই আন্দোলনের বিরোধিতা করো। আন্দোলন করছে জামাতিরা, প্রতিক্রিয়াশীলরা। সত্যিই কি তাই? এই আন্দোলন কি জামাতিদের আন্দোলন?

বাস্তব কিন্তু তা বলছে না। এই আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে প্রায় সকল ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে একেবারে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন। বস্তুত তাঁরাই সংখ্যাগুরু। রয়েছেন বামপন্থী বা কমিউনিষ্ট ছাত্রছাত্রীরা। আর তার পাশে পাশেই রয়েছেন বিএনপি, জামাতের সমর্থকরাও। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ‘রাজাকার’ বলার পর ক্ষোভের সঙ্গে স্লোগান ওঠে, ‘'আমরা কারা, আমরা কারা? রাজাকার রাজাকার!/ কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার!” দেখছি, আন্দোলনরত এক ছাত্রের পিতা ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, “আমি তো এখন রাজাকারের বাপ!” শ্লোগান উঠছে, “চেয়েছিলাম অধিকার/ হয়ে গেলাম রাজাকার!” এই সব শ্লোগানে, বক্তব্যে রাজাকার তকমা দেওয়ার বিরুদ্ধে আহত অভিমান ঝরে পড়ে। আবার আন্দোলনের অন্যত্র এমন শ্লোগানও উঠছে, “শেখ মুজিব ঘোড়ার ডিম/ জাতির পিতা ইব্রাহিম।” এখানে খেয়াল করবেন মুক্তিযুদ্ধের ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণাকে বাতিল করে ইসলামী মৌলবাদী বয়ান হাজির হচ্ছে। জামাতপন্থীরা যেমন আন্দোলনকে দখল করার চেষ্টা করছে তেমন আবার শিক্ষার্থী আন্দোলন থেকে জামাতপন্থীদের বহিষ্কারের ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কমিউনিষ্ট পার্টির সকল সদস্যরা, বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীযুবরা যখন আন্দোলনের সামনের সারিতে রয়েছেন তেমনই আবার কোথাও কোথাও কমিউনিষ্ট পার্টির অফিস ভাঙচুরও করা হয়েছে। অর্থাৎ, আন্দোলনে বিভিন্ন শক্তি রয়েছে, এবং অনেক সময়েই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী এবং দ্বন্দ্বী। প্রত্যেকেই নিজের ভাবনাচিন্তা অনুযায়ী আন্দোলনের গতিমুখ তৈরি করতে সচেষ্ট। স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন অভ্যুত্থানের ক্রান্তিলগ্নে এমনই ঘটে। পৃথিবীর কোনো বৃহৎ সংগ্রামই অমন সুশৃংখলভাবে দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ মেনে তৈরি হয় না, হয় নি। যাঁরা ভাবেন বুঝি একদিকে একদল থাকে যারা বলে ‘আমরা সমাজতন্ত্রের পক্ষে’, আর অন্যদিকে একদল থাকে যারা হাত তুলে জানিয়ে দেয় ‘আমরা সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে’ তাঁরা জানেনই না সমাজ পতিবর্তনের বৃহৎ সংগ্রামগুলি কীভাবে বিকশিত হয়। প্রগতিশীল সচেতন শক্তির প্রয়োজন হল এই সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়া, নিজেকে দ্রুত পালটে নেওয়া, উন্নত করা, যোগ্য হয়ে ওঠা। এই চ্যালেঞ্জ না নিয়ে যারা আন্দোলন থামানোর ওকালতি করে বা খোদ আন্দোলনেরই বিরোধিতা করে তারা কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজেরই যোগ্য নয়। পরিষ্কার কথা। 

 

সুতরাং, এটাও বুঝে নিতে হবে যে, আন্দোলনে যেহেতু নানা ধরণের শক্তি আছে তাই নানা ধরণের ঝোঁকও আছে যা দাবিগুলির মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে। আন্দোলনে প্রতিক্রয়াশীল বা অরাজনৈতিক শক্তির উপস্থিতির ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম পুরুষানুক্রমিক অন্যায় সংরক্ষণ (তাও আবার ৩০ শতাংশ) বাতিল করার (বা কমাবার) মূল দাবির পাশাপাশি আন্দোলনের কোনো কোনো অংশের মধ্যে থেকে মহিলাদের সংরক্ষণও বাতিল করা বা সামগ্রিকভাবে সংরক্ষণ ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়ার মত প্রতিক্রিয়াশীল দাবিও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এগুলি কখনই আন্দোলনের মূল দাবি নয় বা এমনকি মর্মবস্তুও (স্পিরিট) নয়। এগুলিকে বাহানা করে আন্দোলনের বিরোধিতা করা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়।

 

আমাদের দেশের কোনো কোনো চিন্তাশীল ব্যক্তি আবার হাসিনা সরকার পরে গেলে ভারতবন্ধু চলে যাবে এবং ভারতবিরোধীরা ক্ষমতায় আসতে পারে এই চিন্তায় বড় কাতর। বিস্তারিত আলোচনায় পড়ে কখনও যাওয়া যাবে কিন্তু আপাতত বলে রাখা যাক, হাসিনা ভারত সরকারের বন্ধু হতে পারেন কিন্তু ভারতীয় জনগণের বন্ধু নন। ভারতের শাসক শ্রেণির মিত্রকে নিজেদের মিত্র বলে ভেবে নেওয়া, ভারতের শাসক আর ভারতের জনগণকে মিলিয়ে মন্ড পাকিয়ে এক তথাকথিত অখন্ড ভারতের কল্পনা করে নেওয়া আর যাই হোক রাজনীতি সচেতনতার পরিচয় নয়। ভারতের জনগণকে একদিকে যেমন দাঁড়াতে হবে ভারতের শাসকের বিরুদ্ধে, তেমনই দাঁড়াতে হবে অন্যান্য দেশেরও শাসকের বিরুদ্ধে, সেদেশের জনগণের পক্ষে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরণের বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক জনগণের একটি আন্তর্জাতিক ঐক্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দেখা দিচ্ছে। ভারতের চিন্তাশীল মানুষের দায়িত্ব অনেক। তাঁরা নিশ্চয়ই সে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন।

1 Comments

Kripasindhu Samaddar

25 July, 2024

মোটামুটি হযবরল পোষ্ট হয়েছে। সব বলা হয়েছে কিন্তু কিছুই বলা হয়নি। এটিতে কোনো সমাধানের পরামর্শ।নেই। শুধু অরাজকতা সৃষ্টি করার প্ররোচনা রয়েছে। লেখকের হতাশার প্রকৃষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে লেখাটিতে।

Post Comment