পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লিঙ্গসাম্যের পথপ্রদর্শক হবে জার্মানি-কোস্টারিকা ম্যাচ

  • 01 December, 2022
  • 0 Comment(s)
  • 1019 view(s)
  • লিখেছেন : দেবাশিস মজুমদার
বিশ্বকাপ মূলপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডের শেষ পর্বের খেলায় কাতারের আল-খোর শহরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হতে চলেছে জার্মানি আর কোস্টারিকার পুরুষ ফুটবল দল। আর এই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে চলেছেন মহিলা রেফারী ও ম্যাচ অফিশিয়ালরা। ম্যাচের তিনজন সরাসরি ম্যাচ অফিশিয়ালের তিনজনই হতে চলেছেন নারী।

ভারতে রাত সাড়ে-বারোটায় জার্মানি-কোস্টারিকা ম্যাচ প্রদর্শিত হবে তাই এখানে তারিখ ২রা ডিসেম্বর ২০২২ হয়ে গেলেও কাতারের বিশ্বকাপের মঞ্চে ১লা ডিসেম্বর ২০২২ তারিখেই এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে ঘটতে চলেছে ঐতিহাসিক ঘটনা। লিঙ্গসাম্যের নতুন ইতিহাস তৈরি হতে চলেছে ফিফা বিশ্বকাপের মঞ্চে।

২৫ নভেম্বর তারিখটি বিশ্বে সর্বত্র পালিত হয় নারীদের প্রতি হিংসা প্রতিরোধক দিবস হিসাবে। ১৯৬০ সালে ডোমিনিকান রিপাবলিকের তৎকালীন স্বৈরচারী রাষ্ট্রপতি রাফায়েল ত্রুজিও-র দ্বারা ঘটানো তিন প্রতিবাদী মিরাবেল বোনের নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটানোর প্রতিবাদ স্বরূপ ১৯৮০-র দশক থেকেই ওই তারিখটি নারীদের প্রতি হিংসা বিরোধী দিবস হিসাবেই পালিত হয়ে আসছে আর ১৯৯৯ সাল থেকে এই দিনটি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের স্বীকৃতিপ্রাপ্তও হয়েছে। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রসংঘের ততকালীন মহাসচিব ঘানার কোফি আন্নান নারীদের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নানা পদক্ষেপ গ্রহণের বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণের কথা বলেন। তারপর থেকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ যে বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন খেলার সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক নিয়ামক সংস্থাগুলি, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক ফুটবল নিয়ামক সংস্থা ফিফা অন্যতম। বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী নীতিগ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফুটবল মঞ্চে লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠা করাও ফিফার এক নৈতিক আদর্শ হিসাবে গৃহীত হয়েছে। ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর তারিখ পর্যন্ত এই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিকল্পনা রাষ্ট্রসংঘ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে কাতারে আয়োজিত দ্বাবিংশ ফিফা বিশ্বকাপের মঞ্চে এই লক্ষ্যে ফিফা রূপায়ণ করতে চলেছে এক অভিনব পদক্ষেপ।

বিশ্বকাপ মূলপর্বের প্রাথমিক রাউন্ডের শেষ পর্বের খেলায় কাতারের আল-খোর শহরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হতে চলেছে জার্মানি আর কোস্টারিকার পুরুষ ফুটবল দল। আর এই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকতে চলেছেন মহিলা রেফারী ও ম্যাচ অফিশিয়ালরা। ম্যাচের তিনজন সরাসরি ম্যাচ অফিশিয়ালের তিনজনই হতে চলেছেন নারী। ফরাসী রেফারি স্টেফানি ফ্র্যাপার্টের সঙ্গে এই ম্যাচ পরিচালনার ক্ষেত্রে সহযোগী লাইন-অফিশিয়াল হতে চলেছেন ব্রাজিলের নেউজা ব্যাক এবং মেক্সিকোর ক্যারেন ডিয়াজ মেদিনা। এদের সঙ্গে আরও তিন ম্যাচ অফিশিয়াল থাকতে চলেছেন আরও তিন নারী- রোয়ান্ডার সেলিমা মুকানসাঙ্গা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাথরিন নেসবিট এবং জাপানের ইয়ামাসিতা ওসিমি। এরা প্রত্যেকেই মেয়েদের ফুটবলের অভিজ্ঞ রেফারি এবং ম্যাচ অফিশিয়াল। মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপ এবং টোকিও অলিম্পিকে মেয়েদের ফুটবল প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এরা পালন করেছেন। এদের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সি ফরাসী রেফারি স্টেফানি ফ্র্যাপার্টের অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশী। ২০১৯ সালে ফ্রান্সে আয়োজিত মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলা পরিচালনার প্রধান রেফারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পুরুষদের ফুটবলের চ্যাম্পিয়নস লীগে প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০২০ সালে। ফরাসি পুরুষ ফুটবলের প্রথম শ্রেণীর প্রতিযোগিতা কৌ-দে-ফ্রান্সের ফাইনালেও ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন ফ্রাপার্ট। কাতার বিশ্বকাপেরই গ্রুপ-সি-এর পোল্যান্ড বনাম মেক্সিকো ম্যাচে ২২ নভেম্বর তারিখে প্রথম মহিলা রেফারি হিসাবে পুরুষদের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে রেফারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে ইতিমধ্যেই ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছেন ফ্র্যাপার্ট। এবারে সম্পূর্ণ মেয়েদের ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত দল নিয়ে প্রধান রেফারির দায়িত্ব পালন করতে মাঠন নামবেন ফ্র্যাপার্ট। মেয়েদের ফুটবল বিশ্বকাপে পুরুষ রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনা এর আগে অনেকবারই ঘটেছে। এমনকি মেয়েদের বিশ্বকাপে শুরুর দিকে পুরুষ রেফারিরাই থাকতেন ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে। তারপর ধীরে ধীরে উঠে আসেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলা রেফারিরা। এখন মেয়েরা ছেলেদের বিশ্বকাপ ম্যাচেও ম্যাচ অফিশিয়ালের দায়িত্ব পালন করছেন দুর্দান্তভাবেই। কাতার বিশ্বকাপে বিভিন্ন ম্যাচ অফিশিয়ালের দায়িত্বে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের। পোল্যান্ড-মেক্সিকো ম্যাচে কঠোর হাতে ম্যাচ পরিচালনার নজির তৈরি করেছেন ফ্র্যাপার্ট। এবারে আরও গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে সম্পূর্ণ মেয়েদের নিয়ে তৈরি ম্যাচ অফিশিয়াল টিমের ওপর। জার্মানি আর কোস্টারিকা দুটো দলেরই ফেয়ার-প্লে-এর ব্যাপারে খুব একটা সুনাম নেই। তবে ফ্র্যাপার্টের মত অভিজ্ঞ রেফারির নেতৃত্বে সহজে এবং সঠিকভাবে এই অল উইমেন ম্যাচ অফিশিয়াল টিম এই ম্যাচ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করবেন। সবদিক থেকেই তাই ঘটনার ঘনঘটা চলেছে কাতার বিশ্বকাপে। যে দেশে কিছুসময় আগেও পরিযায়ী শ্রমিকদের মানবিক অধিকারগুলো লঙ্ঘিত হয়েছে। যে দেশে সমকামী মানুষ উপেক্ষিত, যেখানে বিশ্বকাপের আসরে তাদের দেশের মেয়েদের অধিকারের প্রশ্নে জাতীয় সঙ্গীতে নীরব থেকে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ইরানের পুরুষ ফুটবলাররা, তাদের সহ্য করতে নানারকম মৌলবাদী ব্যঙ্গ, সেই কাতারেই মানবাধিকারের প্রশ্নে ঘটতে চলেছে লিঙ্গসাম্য সৃষ্টির এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এইরকম পদক্ষেপে লিঙ্গসাম্যের পাশাপাশি মানবাধিকারের বিষয়কেও আরও বেশী প্রতিভাত করে তোলে। মেয়েদের অধিকার আর নিরাপত্তা সুরক্ষিত হওয়া মানবাধিকার সুরক্ষিত হওয়ারই নামান্তর। তাই ফিফাকে এই পদক্ষেপের জন্য সাধুবাদ আর স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট আর তার অল ইউমেন ম্যাচ অফিশিয়াল টিমকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

0 Comments

Post Comment