পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

পড়শি যদি আমায় ছুঁতো যম যাতনা সকল যেত দূরে: লালন সাঁই

hhhhhhhhhhhhhh

লোকাল ট্রেন চলবে কবে: ১ নগরায়ন,নিত্যযাত্রী ও গণপরিবহণ

  • 13 October, 2020
  • 2 Comment(s)
  • 1603 view(s)
  • লিখেছেন : পার্থ প্রতিম বিশ্বাস
লোকাল ট্রেন বন্ধ প্রায় ছ’মাস। নগর কেন্দ্রিক যাবতীয় রুজির উপায় বন্ধ। মফসসলের লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম বিপদের মধ্যে। কিন্তু অতিমারীর এই অবরুদ্ধ সময়ে লোকাল ট্রেন কবে এবং কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালানো যেতে পারে তা নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না রেল দফতর বা রাজ্য সরকার। এখানে তারই কিছু সুপারিশ। প্রথম পর্ব।

ভারতের মানচিত্রের মাত্র এক তৃতীয়াংশ জায়গা শহরাঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত হলেও দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জিডিপি তৈরি হচ্ছে সেখান থেকেই। আগামী দু’দশকে গোটা দেশের জিডিপি-র প্রায় তিন চতুর্থাংশ আসবে এই নগর কেন্দ্রিক জীবন থেকে, এমনটাই অনুমান। ফলে গ্রাম থেকে শহরের এই বিবর্তনে দেশের মানুষের আয়ের বিন্যাস পালটে চলেছে দ্রুত। একদা কৃষিনির্ভর দেশের মানুষের আয়ের সিংহভাগ এখন আসছে পরিষেবা ও শিল্প থেকে যেখানে কৃষির স্থান এই দুইয়ের বহু নিচে। আয়ের এমন বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে চলেছে দেশে নগরায়নের হাত ধরেই। আর নগরকেন্দ্রিক জীবন হয়ে উঠেছে পরিসেবা ও শিল্পের প্রাণকেন্দ্র। ফলে উন্নত আয়ের খোঁজে, উন্নত জীবনের টানে স্রোতের মতো মানুষ জড়ো হচ্ছে এই নগর জীবনে, যার অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে শহরের জনঘনত্বের ঊর্ধ্বমুখী চাপ। এই চাপের চোটে দেশের পুরানো শহরগুলো উচ্চতায় বাড়ছে তেমনই আড়ে বহরে বেড়ে চলেছে মুল শহরকে কেন্দ্র করে। শহরের এই বাড়তি আয়ের খোঁজে ভিড় করা মানুষের মাথা গোঁজার জায়গা প্রাথমিকভাবে শহরে জুটলেও, অর্থনীতির নিয়মে শহরে জীবনযাপনের খরচও বেড়ে চলেছে হুহু করে। ফলে কাজের খোঁজে শহরে এসে কাজ শেষে শহর ছেড়ে শহরের সীমানা ছাড়িয়ে শহরতলিতে মাথা গোঁজার উপায় আয়ত্ত করছে এমন লাখে লাখে শিল্প-পরিষেবার সাথে যুক্ত মানুষেরা। ফলে শহরের স্থায়ী বাসিন্দাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন শহরের অর্থনীতিতে অসংখ্য পরিযায়ী নিত্যযাত্রীর দল। এমন নিত্যযাত্রীদের শহরে আসা যাওয়ার বৃহত্তম গনপরিবহন হচ্ছে শহরের লোকাল ট্রেন। এমন নিত্যযাত্রীর সংখ্যা মুম্বাই বা দিল্লির মত মেগাসিটিতে এখন দৈনিক গড়ে যথাক্রমে ৭৫ লক্ষ এবং ২৫ লক্ষ।

একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে দেশের প্রায় প্রতিটি শহরের ক্রমবর্ধমান স্থায়ী জনঘনত্ব, করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষিতে হয়েছে সরকারের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথার বিষয়। দেশের গ্রামের তুলনায় এমন শহর বা শহরতলিতে লকডাউন কিংবা আনলকের বিভিন্ন পর্যায়ে সংক্রমণ সম্ভাবনা বাস্তব কারণেই বহুগুণে বেড়েছে। এখন যখন আনলকের চতুর্থ পর্যায়ে এসে জীবিকার প্রয়োজনে, শিল্প-পরিসেবার তাগিদে যখন অর্থনীতির তালা খুলছে তখন স্বাভাবিক কারনেই নিত্যযাত্রীদের গনপরিবহনের স্বার্থে আলোচনায় উঠে আসছে লোকাল ট্রেন চালু করার প্রশ্নটা। কোন সন্দেহ নেই যে নগরজীবনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর লক্ষ্যে লোকাল ট্রেনের ভুমিকা অপরিহার্য। কারণ করোনা সংক্রমণের প্রাথমিক ধাক্কায় বিপর্যস্ত দেশের নগরজীবনে আর্থিক কর্মকাণ্ড বন্ধের ভয়াবহ পরিণতিতে কুপোকাত দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার হয়েছে ২৩.৮% যা এদেশের অর্থনীতিতে বিরলতম। আবার পাশাপাশি দেশে বর্তমান করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার অথবা প্রত্যহিক মৃত্যুর হার প্রতিদিন বিশ্বে রেকর্ড গড়ে চলেছে। ফলে এমন বেনজির সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির বাজারে যেখানে করোনা প্রতিষেধকের খোঁজ দূরঅস্ত সেখানে লোকাল ট্রেন চালু হলে সংক্রমণের মাত্রা হাতের বাইরে যে চলে যেতে পারে এমন আশংকা অমুলক নয়। এর প্রেক্ষিতেই প্রয়োজন সুচিন্তিত ভাবনার ভিত্তিতে রাজ্যে রাজ্যে লোকাল ট্রেন চালু করার ঝুঁকির ব্যাপারে সদর্থক আলোচনা।

ভিড়ের ভারে সংক্রমণ

এ রাজ্যে লোকাল ট্রেন চলাচল করে মুলত শিয়ালদা এবং হাওড়া স্টেশনকে কেন্দ্র করে। পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলের হাওড়া, শিয়ালদা ও খড়্গপুর এই তিনটি ডিভিশন মিলিয়ে রাজ্যে লোকাল ট্রেনের জন্য পাতা ব্রড গেজ লাইনের ১৩৩২ কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে রয়েছে সাকুল্যে ৩৯৮টা স্টেশন। এই দুই স্টেশন কেন্দ্রিক রাজ্যের লোকাল ট্রেনের এই করিডোরে দৈনিক নিত্যযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লক্ষের কাছাকাছি। এই বিপুল সংখ্যক নিত্যযাত্রীদের সিংহভাগই হল কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে। নিত্যযাত্রীদের সিংহভাগের এমন পাঁচটি জেলা আবার সংক্রমণের নিরিখেও রাজ্যে প্রবল সংক্রমণ যুক্ত জেলা হিসাবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত। রাজ্যে স্বাভাবিক সময়ে লোকাল ট্রেনের বাদুড়ঝোলা ভিড় বাঙালীর স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে গত কয়েক দশক ধরেই। কিন্তু সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির সময়ে যদি লোকাল ট্রেন আবার চালু হয় সেই বাদুড় ঝোলা ভিড়কে সঙ্গী করে, তবে চোখ বন্ধ করেই বলে দেওয়া যায় সেক্ষেত্রে সেই লোকাল ট্রেনই এই করনাকালে হয়ে উঠবে সংক্রমণের নতুন আঁতুড় ঘর। কারণ ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে ভাইরাসের স্পর্শবাহী সংক্রমণের বিপদ যেমন একদিকে বাড়ে তেমনই সেই ভিড়ে ঠাসা ট্রেন যাত্রার মেয়াদ বাড়ার সাথে সাথে সংক্রমণ প্রসারের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। ফলে ট্রেনের কোচ থেকে শুরু করে ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম, প্রতিটি ক্ষেত্রেই দৈহিক দূরত্ববিধি মানা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ লোকাল ট্রেনের ক্ষেত্রে। যেহেতু লোকাল ট্রেনে কোন সংরক্ষিত আসনের সুযোগ নেই, পুরো ট্রেনটাই অসংরক্ষিত, ফলে কোন ভাবেই এমন লোকাল ট্রেনের বিভিন্ন কোচে যাত্রী সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের উপায় ছিল না করোনাপূর্ব কালেও। ফলে ‘জোর যার মুলুক তার’ এই ফর্মুলাতেই চলে এসেছে লোকাল ট্রেনে ওঠা নামা থেকে শুরু করে ট্রেনে বসার জায়গা দখল সবটাই! ফলে এখন জলের মত স্পষ্ট যে ‘নর্মাল’ সময়ের লোকাল ট্রেনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে আজকের এই ‘নিউ নর্মাল’ সময়ে লোকাল ট্রেন চালু কার্যত অসম্ভব।

এই বিষয়ে এই লেখকের অন্য লেখাটি পড়ুন

https://www.sahomon.com/welcome/singlepost/when-will-the-local-trains-run-again-part-2

ভিড় নিয়ন্ত্রণের পরিকাঠামো

সাম্প্রতিক কালে পশ্চিম রেলের এক সমীক্ষায় প্রকাশিত, সকাল সন্ধার অফিস টাইমে লোকাল ট্রেনের ভিড়ে জনঘনত্ব প্রতি স্কয়ার মিটারে গড়ে ১৫ জন যাত্রী। সুতরাং এই ভিড়কে সংক্রমণ বিধির প্রেক্ষিতে নিরাপদ দূরত্বের মাপকাঠিতে প্রতি স্কয়ার মিটারে পনেরো থেকে একজনে নামাতে গেলে হয় ট্রেনের সংখ্যা পনেরো গুন বাড়াতে হয় নতুবা যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় পনেরো গুন কমাতে হয়। বাস্তব কারণেই ট্রেনের সংখ্যা পনেরো গুন বাড়ানো কার্যত অসম্ভব। ফলে পড়ে রইলো যাত্রী সংখ্যা পনের ভাগ কমানোর উপায় অন্বেষণ। ফলে এই মুহূর্তে ট্রেনে নিত্য যাত্রীদের সংখ্যা কমিয়ে, ট্রেনে ওঠা-নামার ওপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করে ট্রেন চালানো ছাড়া তেমন কোন উন্নত বিকল্প হাতের কাছে নেই। সংক্রমণ সম্ভাবনাকে নিয়ন্ত্রনে রেখে ট্রেন চালু করার সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জ হল এখন যাত্রী নিয়ন্ত্রনের উপায়। ইতিমধ্যে কলকাতায় মেট্রো রেলে যাত্রী নিয়ন্ত্রনের জন্য চালু হয়েছে প্রযুক্তি নির্ভর ই-পাসের ব্যাবস্থা। সেই ব্যাবস্থায় পূর্ব নির্ধারিত উপায়ে ট্রেনের নিরাপদ ধারন ক্ষমতার নিরিখে ই-পাসে মিলছে পাতাল প্রবেশ ও ট্রেনে চড়ার অনুমতি। ফলে ঘণ্টা পিছু যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করে ট্রেন পিছু যাত্রী নিয়ন্ত্রন ভাবনা কার্যকর হচ্ছে মেট্রো রেলে। কিন্তু মেট্রো রেল স্টেশনে যাত্রীদের প্রবেশ বা প্রস্থানের যে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাবস্থা রয়েছে সেটি কার্যত অস্তিত্বহীন সাধারণ মানের শহরতলির স্টেশনগুলিতে। ফলে লোকাল ট্রেনের যাত্রী নিয়ন্ত্রণ ভাবনায় প্রথম প্রয়োজন স্টেশন প্ল্যাটফর্মে বৈধ যাত্রীদের প্রবেশ বা প্রস্থানের সুনির্দিষ্ট পথের পরিকাঠামো। এমন পরিকাঠামো শুধু আজকের ‘নিউ নর্মাল’-এর নিরিখে নয় তার প্রয়োজন রয়েছে আমাদের ‘নর্মাল’ জীবনেও বৈধ যাত্রীদের সুরক্ষার তাগিদে। এমন পথ পরিকাঠামো তৈরি যে দুঃসাধ্য বা সময়সাধ্য এমনটা নয়। কিন্তু তার জন্য চাই প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা যেটি এখনও দৃশ্যমান নয় রেলের তরফে। ইতিমধ্যে রেলের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে যে, লোকাল ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে যাত্রী ঘনত্বে প্রতি বর্গমিটারে চার থেকে পাঁচ জন। ফলে এক্ষেত্রেও প্রয়োজন প্ল্যাটফর্মে যাত্রীর সংখ্যা চার থেকে পাঁচ গুন কমিয়ে আনা। কারণ শুধু ট্রেনের কামরার ভেতরে নয়, উপরন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে যাত্রী সংখ্যার ওপর নিয়ন্ত্রণ করার প্রযুক্তি নির্ভর বিকল্প ভাবনা।

2 Comments

মেঘদীপ

14 October, 2020

অনেক প্রত‍্যাশা নিয়ে পড়তে শুরু করে শেষে চরম হতাশ হলাম, কেননা লেখাটি বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া। লেখক সমস‍্যা বুঝিয়েছেন বারো আনা জায়গা নিয়ে, এবং সমাধানের কথা গুঁজে দিয়েছেন শেষ চার আনায়। সেই সমাধান হলো যাত্রী সংখ্যা পনেরো গুণ কমানো, যেটা তাঁর মতে করা দুঃসাধ্য নয়। অথচ, নিরক্ষর সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত সবাইই বলছে এই যাত্রী সংখ্যা কমানোই সবচেয়ে কঠিন কাজ, বস্তুত অসম্ভব। কেননা, রেলপথে পর্যটক আসেননা, আসেন কর্মী ও শ্রমিকরা, তাদের প্রতি পনেরো জনে চোদ্দজনকে আটকানো যাবে কোন উপায়ে? কোন সুসাধ‍্য উপায়ে যাত্রী সংখ্যা পনেরো গুণ কমাতে চান সেটা ব‍্যাখ‍্যা না করেই লেখা শেষ করে বিদায় নিলেন। ভালো!

মেঘদীপ

14 October, 2020

অনেক প্রত‍্যাশা নিয়ে পড়তে শুরু করে শেষে চরম হতাশ হলাম, কেননা লেখাটি বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া। লেখক সমস‍্যা বুঝিয়েছেন বারো আনা জায়গা নিয়ে, এবং সমাধানের কথা গুঁজে দিয়েছেন শেষ চার আনায়। সেই সমাধান হলো যাত্রী সংখ্যা পনেরো গুণ কমানো, যেটা তাঁর মতে করা দুঃসাধ্য নয়। অথচ, নিরক্ষর সাধারণ মানুষ থেকে বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত সবাইই বলছে এই যাত্রী সংখ্যা কমানোই সবচেয়ে কঠিন কাজ, বস্তুত অসম্ভব। কেননা, রেলপথে পর্যটক আসেননা, আসেন কর্মী ও শ্রমিকরা, তাদের প্রতি পনেরো জনে চোদ্দজনকে আটকানো যাবে কোন উপায়ে? কোন সুসাধ‍্য উপায়ে যাত্রী সংখ্যা পনেরো গুণ কমাতে চান সেটা ব‍্যাখ‍্যা না করেই লেখা শেষ করে বিদায় নিলেন। ভালো!

Post Comment